#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃতাসনিম
ফাংশন শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে সব মেহমানরা একে একে চলে যাচ্ছে। নীল অনেকক্ষণ ধরে লিজার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু তার কোনো খোঁজই নেই।শরীফা বেগম জাবিরকে বললো ফারাহকে নিয়ে আগে চলে যেতে তার ঔষধ খেতে হবে এজন্য জাবির আর ফারাহ আগে চলে গেল। নীলকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মিনারা বেগম এগিয়ে এসে বললেন,
“কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস,সবাই তো চলে যাচ্ছে চল আমরাও যাবো এখন”
“নাহ,মানে মামি আম্মুকে খুঁজচ্ছিলাম আমি”
“কি বলিস,আপা না একটু আগে তোর মামার সাথে গেল,তারা আমাদের জন্য গাড়িতে অপেক্ষা করছে আর তুই এখানে দাঁড়িয়ে তোর আম্মুকে খুঁজচ্ছিস”
“ওহহ আমি ভুলে গেছিলাম,আচ্ছা তুমি যাও আমি আসছি”
নীল মিনারা বেগম কে পাঠিয়ে দিয়ে পুরো বাংলো টা ঘুরে দেখলো কোথাও নেই লিজা,এভাবে আমার চোখে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল মেয়েটা।নীল তারপর গাড়ির দিকে চলে গেল।আজকে নীল আর তার মা ফাহিমদের বাসায়ই থাকবেন,কাল সকালে নিজের বাসায় যাবেন।
—–
“জাহরা,আম্মু আব্বু এখনো আসে না কেন,আমাদের শুধু শুধু এতো আগে পাঠিয়ে দিল”
“তুমি কি ক্লান্ত হও না,এক জায়গায় একটু বসে রেস্ট নেও,এতো চঞ্চলতা কেন তোমার মধ্যে,ডাক্তার বলেছে শুনো নি এই সময়ে রেস্টে থাকতে হয়”
“সারাদিন তো বসেই থাকি,ওখানে গিয়েও তো বসেইছিলাম তাহলে আমি ক্লান্ত হবো,কোনো কিছু করতে দেও না কিছু বলতে দেও না,সারাদিন শুধু এক কথা রেস্ট নেও আর খাবার খাও”
“যেটার একটাও তুমি করো না”
“হ্যা কিছুই করি না আমি,এজন্যই তো এমন মোটা হয়ে যাচ্ছি,খাবার গুলো অন্যকেউ এসে খেয়ে দিয়ে যায়”
“তুমি জানো তোমাকে এখন বেশি কিউট লাগে,দিন দিন যেন কিউটনেস বেড়েই যাচ্ছে”
“পাম দিবা না আমাকে,কথাই বলবা না আমার সাথে, এখন থেকে আমি সারাদিন এই বিছানা থেকে নামবোই না সবসময় এখানে বসে থাকবো,তাহলে তোমার শান্তি হবে”
“পারবে না তুমি”
ফারাহ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো।কিছুক্ষণ পরে জাহরারা চলে এলো,ফারাহ উঠে সেখানে চলে গেল।শরীফা বেগম বললেন,
“ফারাহ তুমি এখনো ঘুমাও নি,জাবির কেন তোদের আমি পাঠিয়ে দিয়েছি,ওকে ঔষধ খাইয়ে ঘুমানোর জন্য বলিনি আমি”
“আম্মু ও কি আমার কথা শোনে”
“শরীফা থাক,আমাদের জন্য ফারাহ মা বসে ছিল,এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়বে তাই না মা”
“হুমম আব্বু”
“ঠিক আছে জাবির যাও ওকে নিয়ে,আমরাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়বো সারাদিন ঝড়ের বেগে দৌড়াতে হয়েছে, জাহরা যাহ নিজের রুমে গিয়ে ফোন চালা”
জাহরা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে একটা হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল, ফারাহ আর জাবিরও রুমে চলে আসলো।
“তুমি না বিছানা থেকে আর নামবে না”
ফারাহ কিছু বললো না চুপ করে শুয়ে পড়লো।জাবির গিয়ে লাইট অফ করে দিল।তারপর সে বিছানার একপাশে বসে ফোনে কি যেন কাজ করতে লাগলো,ফারাহ একটু পরে উঠে বসলো,জাবির ওর দিকে তাকিয়ে বললো
“পানি খাবে”
“তুমি ঘুমাও কেন”
“আমি একটু কাজ করছি,তুমি ঘুমাও”
“নাহ এখনি ঘুমাবে”
“ফারাহ এতো জেদ করো কেন বলো তো”
“ভালো লাগে”
“আচ্ছা তুমি শুয়ে পড়ো আমি আসছি”
“কই যাও”
“আসছি রে বাবা,পানি নিয়ে আসি”
“তাড়াতাড়ি আসবে”
“ভয় পাও তুমি”
“লাইট অন করে যাও তাড়াতাড়ি আসো”
“আচ্ছা আচ্ছা”
জাবির বাইরে থেকে পানির বোতল এনে ফারাহর মাথার কাছে রেখে লাইট অফ করে ঘুমাতে চলে গেল।
সকালে….
সবাই নাস্তা করছিল এমন সময় নীল আসলো জাবিরদের বাসায়।নীলকে দেখে শরীফা বেগম বললেন,
“আরে নীল যে আসো বাবা নাস্তা করতে বসো”
“নাহ আন্টি আমি নাস্তা করেই এসেছি, আমার একটু জাবিরের সাথে কথা ছিল”
“হুমম আমার খাওয়া শেষ চলো নীল”
“হ্যা চলো অফিসে যেতে যেতে কথা বলবো”
“আম্মু আসি,ফারাহ লাফালাফি কম করবে আম্মু যা বলে তা শুনবে”
“আমি মোটেও লাফালাফি করি না”
“আচ্ছা আসি এখন আমি”
জাবির আর নীল বেরিয়ে গেল।নীল বাসা থেকে বেরিয়েই জাবিরকে বললো,
“ভাই তোমার বোন তো আমাকে ধোঁকা দিল,আমাকে ফাংশন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলে নিজে উধাও হয়ে গেল”
“লিজার কথা বলছো”
“ভাই তাহলে কি জাহরার কথা বলবো,সে তো এখন ভাবি,এখন তুমি কি চাও না তোমার বউ ফাহিমের বউয়ের পাশাপাশি নীলের বউকেও ভাবি ডাকুক”
“ওহ আচ্ছা,এই ব্যাপার,মানে সোজা সোজা বললেই তো পারো কালকে কিছু করতে পারো নি,এখন তোমার লিজার ডিটেইলস লাগবে ফোন নাম্বার কোথায় থাকে আরো এক্সট্রা”
“বাহ,তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান, ফারাহ কিভাবে তোমাকে খুঁজে বের করলো”
“আচ্ছা শোনো তাহলে লিজার নাম্বার আর এড্রেস আমি তোমাকে টেক্সট করে দিচ্ছি,আর লিজার ফ্যামিলি মানে ওর বাবা থাকি চিটাগাং সো বিয়ের কথা বলতে তোমাকে চিটাগাং যেতে হবে বুঝলে”
“আমি টেকনাফ টু তেতুলিয়া চলে যাবো সমস্যা নেই”
“নাহ সমস্যা আছে কারণ সেখানে গিয়ে তুমি তাদের পাবে না”
জাবির আর নীল দুজনেই হাসতে লাগলো,তারপর জাবির ওকে নাম্বার এড্রেস দিয়ে নিজের অফিসে চলে গেল। আর নীল চলে গেল জাবিরের দেয়া এড্রেস অনুযায়ী সেখানে গিয়ে দেখতে পেল লিজা যেখানে থাকে সেটা একটা গার্লস হোস্টেল।নীল গিয়ে দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো,
“এই যে মামা,এখানে লামিয়া জাহান লিজা নামে কেউ থাকে”
“এই আমি তোমার কোন জনমের মামা হ্যা আমাকে মামা বানিয়ে ফেললে,আর যায় ডাকো আমাকে মামা ডাকবে না”
“কেন কি হয়েছে”
“আমার একখান বোন ছিলো তার চার ছেলেমেয়ে এগুলা এতে বেয়াদব হয়ছিল যে জীবনে আমি একটু গরীব বইলা আমারে মামা বলে ডাকে নাই,এর জন্য আমারে কেউ মামা বইলা ডাকলে আমার খারাপ লাগে”
“চাচা বলবো নাকি,এতেও সমস্যা আছে”
“এরও একটা ঘটনা আছে বলি শুনো….”
“দারোয়ানজী প্লিজ একটু লিজাকে ডেকে দিবেন”
“এই মিয়া লিজা তোমার কে হয় যে আমি তোমার জন্য তারে ডাইকা দিমু”
“ডাকবেন না আপনি”
“ক্যান ডাকমু সলটা কও তোমার পরিচয় দেও ভালো ভালো কথা বলছিলাম ভালো লাগে নাই এখন আমিও দারোয়ানের মতোই ব্যবহার করমু কেমনে সামলাবা সামলাও”
নীল পকেট থেকে ফোন টা বের করে লিজার নাম্বারে কল দিল।লিজা তখন টেবিলে বসে বসে ফেসবুকে স্ক্রলিং করছিল।অচেনা নাম্বার থেকে কল দেখে প্রথমবার ধরলো না,পরের বার আবার কল আসলে সে কলটা রিসিভ করলো।
“হ্যালো কে বলছেন”
“নীল বলছি,নিচে আসো কথা আছে আমার”
“কোন নীল,আর নিচে আসবো মানে”
“যে নীলকে তুমি কালকে অপেক্ষায় বসিয়ে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলে সেই নীল”
“আপনি এখানে কি করছেন,আমার এড্রেস কোথায় পেয়েছেন”
“তোমার নাম্বার বা এড্রেস কোনোটায় আমার জন্য যোগাড় করা কোনো কঠিন কাজ না,এখন কথা কম বলে নিচে আসো জলদি”
নীল কলটা কেটে দিল, লিজা বারান্দা দিয়ে দেখলো আসলেই নীল নিচে দাঁড়িয়ে আছে।সে নিচে গেল দারোয়ান তাকে দেখে দাঁত বের করে একটা হাসি দিল।লিজা বাইরে গিয়ে দেখলো নীল দাঁড়িয়ে আছে তার জন্য।
“কি সমস্যা আপনার”
“আমার সমস্যা তুমি,কাল কিভাবে তুমি চলে এলে তুমি জানতে আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো”
“কি এমন কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সেটার উত্তর জানার জন্য আপনার এতো অপেক্ষা করতে হবে আমার জন্য, একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গিয়েছিল তাই আমাকে চলে আসতে হয়েছিল এর জন্য আপনি আমার হোস্টেলর নিচে এসে দাড়িয়ে থাকবেন আজব”
“আমার কাছে সবকিছুই গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর এসেছি, আজও যদি উত্তর না পায় তাহলে আমি আবার আসবো”
“আপনার কোনো কাজ নেই”
“নাহ নেই,এখন এটাই আমার কাজ”
“দেখুন এটা একটা গার্লস হোস্টেল এখানে আপনি এসে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে আমার এখানে থাকা প্রবলেম হয়ে যাবে”
“গার্লস হোস্টেলের সামনেও বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ডের জন্য গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থাকে”
“আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড না আমিও আপনার গার্লফ্রেন্ড না সো আপনি আর এখানে আসবেন ইজ ইট ক্লিয়ার”
“উইল ইউ মেরি মি”
“কিহহ”
“উইল ইউ মেরি মি”
“দুদিনের পরিচয়ের একটা মেয়ে কে আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিচ্ছেন”
“প্রথমে বন্ধুত্বের হাতই বাড়িয়ে ছিলাম তুমি ধরো নি তাই এখন বিয়ের জন্য জিজ্ঞেস করছি”
“আপনার মাথায় সমস্যা আছে ডাক্তার দেখান,আর এখান থেকে চলে যান,আসবেন না আর কখনো”
“আমি তোমাকে পছন্দ করি”
“দেখুন ভালো করে বলছি আজকে রোদের তাপ অনেক বেশি আপনিও ঘেমে গেছেন,আমিও ঘেমে যাচ্ছি সো আপনার যদি কোনো কাজ না থাকে তাহলে বাসায় গিয়ে এসির নিচে বসে থাকেন”
“তুমি শুনতে পাচ্ছো আমি কি বলেছি”
“আমি আপনাকে যেতে বলেছি”
“আমি পছন্দ করি সেটা কি শুনছো না তুমি”
“ভালো হয়েছে পছন্দ করেন এখন আমি কি করবো আমি তো বলি নি আমিও আপনাকে পছন্দ করি”
“তুমি এটাও বলোনি তুমি আমাকে অপছন্দ করো”
“উফফ আল্লাহ এ কার হাতে আমাকে ফালালে তুমি, আপনার এখানে দাঁড়িয়ে থাকর শখ তো তবে থাকুন রোদে পুড়ে যখন জ্বর আসবে তখন বুঝবেন”
লিজা হোস্টেলের ভিতরে চলে গেল,দারোয়ান গেইট বন্ধ করে দিল।নীল হাত দিয়ে চুল ঠিক করে বললো,
“কত কেয়ার করে আমার রোদে পুড়লে জ্বর আসবে তা ভেবে কত চিন্তা,হাই মে মার জাওয়া”
নীল কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মামার বাসায় ফিরে গেল মাকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য।লিজা এতক্ষণ বারান্দা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে নীলকে দেখছিল,চলে যেতে দেখে সে রুমে আসলো আর ওর কথা ভাবতে লাগলো।
#চলবে
#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃতাসনিম
“আমরা এখানে কেন এসেছি জাবির”
“তোমার তো বাসায় ভালো লাগে না, তাই আমরা এসেছি তোমার মুড ভালো রাখার জন্য কারণ তোমার মুড ভালো থাকলে আমার প্রিন্সসের মুড থাকবে,আর একটা কারণ আছে এখানে আসার”
“কি কারণ বলো থামলে কেন”
“এই যে নতুন দুটো কাপল হয়েছে তাদের তো একটু একসাথে সময় কাটানো দরকার, সবাই তো আর আমাদের মতো না যে সহজেই সব মানিয়ে নিবে,তাই ওরা যেন কথাবার্তা বলতে পারে তাই এখানে নিয়ে এলাম”
“হুমম,আচ্ছা যাও আইসক্রিম নিয়ে ভ্যানিলা এন্ড চকলেট মিক্স”
“জি না ম্যাডাম,ডাক্তার বলেছে আইসক্রিম খাওয়া যাবে না বাইরের কিছুই খাওয়া যাবে না,খেতে চাইলে চলো সামনেই একটা রেস্টুরেন্ট আছে স্যুপ খাবে”
“তুমিই খাও, আমি খাবো না”
“আচ্ছা বসে থাকো তবে”
আজ এক সপ্তাহ পর আবার নীল লিজার সামনে দাঁড়িয়েছে,সেদিনের পরে সে আর সময় বের করতে পারেনি,কাল জাবির কল করে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলায় সে রাজি হয়ে গেল,সকালেই তারা সবাই বেরিয়ে পড়েছিল।লিজা একটা বেঞ্চের একপাশে বসে লেকের দিকে তাকিয়ে পানি দেখছিল,আজ তাকে জোরাজোরি করেই আনা হয়েছে। নীল নীরবতা ভেঙে বললো,
“লিজা,বিয়ে করবে আমাকে”
“আপনি কি বাংলা ভাষা বোঝেন না”
“আই থিংক তুমি একটু কম বুঝো”
“তাহলে বাংলা পারে না এমন একটা মেয়েকে কেন বিয়ে করতে চাইছেন”
“কারণ ভালোবেসে ফেলেছি”
“আপনি জানেন আমার জন্য পনেরো বছর বয়স ছিল তখনই আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল কিন্তু আমি বিয়ে করবো না বলে কি করেছিলাম জানেন”
“সুইসাইড করতে গিয়েছিলে”
“আমি এসব লেইম কাজ করি না বুঝলেন,আমি পালিয়ে এসেছিলাম নীলাচল সেখানের একটা পাহাড়ের চূড়ায় আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মেঘ ছোঁয়ার জন্য কিন্তু জাবির ভেবেছিল আমি সুইসাইড করছি,তারপর তখন আর আমি কিছু বলিনি কোনোভাবে জাবিরের সাথে ঢাকা চলে আসি আর এখানে থাকা শুরু করি।এখন আপনাকে এগুলো বলার কারণ হলো আমাকে যদি আপনি এভাবে ডিস্টার্ব করে যান বা জাবিরকে দিয়ে ব্যাল্কমেইল করাতে চান,তাহলে কিন্তু আমি যেকোনো কিছু করতে পারি,সো আমার সাথে এই টপিকে আর কখনো কথা বলবেন,অন্য টপিকে কথা বলুন সমস্যা নেই”
“ভয় দেখাচ্ছো আমাকে”
“আমি যেকোনো কিছু করতে পারি, বিশ্বাস না হলে জাবিরকে জিজ্ঞেস করতে পারেন”
“কিন্তু আমি এতো স্ট্রং না তোমার মতো,লাইফে কখনো কাউকে ভালোবাসিনি,ভেবেছিলাম হয়তো বাসবোও না কিন্তু তুমি যে ভালোবাসা নিয়ে আমার লাইফে চলে আসবে আমি বুঝতে পারিনি,যদি তুমি একান্তই আমার না হতে চাও,তাহলে আমার পক্ষেও তোমার সামনে থাকা সম্ভব না, ভালো থেকো”
“কোথায় যাচ্ছেন আপনি”
“যেখানে তুমি থাকবে না সেখানে”
নীল কথাটা বলে সোজা হাঁটা ধরলো, লিজা সেখানেই বসে রইলো।
“শুনন আপনি মানুষ আজব হলেও কাজের আছেন,তবে ভাবি বেশি ভালো আপনি ভাবির চেয়ে একটু কম ভালো”
“আর তুমি মানুষটা অনেক অবুঝ বুঝলে”
“মোটেও না আমি ম্যাচিউরড্ একজন মানুষ”
“আচ্ছা,আজকে এখানে আসার প্ল্যানটা কি তোমার ছিলো”
“নাহ,ভাইয়া নাস্তা করার সময় বললো ঘুরতে যাবে তাই বের হওয়া”
“হুমম তাই বলি তোমার এই ছোট্ট একটা মাথা থেকে এতো কড়া বুদ্ধি বের হবে না, ভালোই হলো তোমার সাথে তো আমার সেভাবে কথাই হয় নি আজকে জাবিরের কারণে কথা বলতে পারছি”
“হুমম হুমম,নীল ভাইয়া কোথায় যায়”
জাহরা আর ফাহিম নীলের কাছে গেল।
“কিরে, কোথায় যাস তুই”
“আমার একটা কাজ পড়ে গেছে রে আমাকে যেতে হবে, জাবিরকে বলে দিস একটু আসছি,তোরা মজা কর”
“এই নীল ভাইয়া আসার সময় না বললে আজকে তুমি পুরো ফ্রি তাহলে কি কাজ আসলো এখন তোমার,তুমি চলে গেলে লিজা আপুর সাথে গল্প করবে কে সে তো একলা হয়ে যাবে”
“সে একলাই ভালো আছে,তার আমাকে প্রয়োজন নেই”
নীল আর সেখানে দাঁড়ালো না চলে গেল। জাহরা আর ফাহিম, জাবিরাহ(জাবির+ফারাহ=জাবিরাহ) কাছে গেল। জাবির ওদের কথা শুনে বুঝতে পারলো কি হয়েছে, জাবির লিজার কাছে গেল ও সেখানে অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিল।
“লিজা….”
“………”
“বাসায় চলো লিজা”
“…………”
লিজার হাতে একটা চিমটি কাটলো জাবির,পরে লিজা ওর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে গেল।
“কি হয়েছে চিমটি কাটলে কেন”
“একজনকে পাঠিয়ে দিয়ে, নিজে এখন এভাবে বসে আছো কেন,লিজা ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড যখন তোমার বয়স কম ছিল তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল তখন আমি তোমাকে বাঁচিয়ে ছিলাম,এখন তুমি ম্যাচিউরড নিজের ভালো মন্দ বুঝো,নীলের মতো একটা ভালো নিজে থেকে তোমাকে চাইছে আর তুমি ওকে ফিরিয়ে দিচ্ছো”
“যখন বললে যে আমি আমার ভালো মন্দ বুঝি তাহলে আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমাকেই নিতে দেও,আমি জানি নীল একজন ভালো মানুষ, সে আমাকে ভালোবাসে এটাও সত্যি, কিন্তু এভাবে আমি কাউকে হুট করে আমার জীবনে জায়গা দিতে পারি না, কারণ জাবির আমি তো তোমার মতো নই,যে একটা অচেনা অজানা মানুষকে বিয়ে করে নিবো”
“তাহলে তাই করো যা তোমার ভালো মনে হয়,আর তুমি কখনো চাইলেও জাবির আর ফারাহর মতো হতে পারবে না,তুমি শুধু আমার নামটা নিয়েছো ঠিকই কিন্তু তুমি যে ফারাহকেও মিন করেছো সেটা আমি বুঝতে পেরেছি,তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়া আমার কর্তব্য তাই এখন দয়া করে আমার সাথে গেলে খুশি হবো”
জাবির কথাটা বলে উঠে চলে গেল, লিজাও তার পিছু পিছু গেল,লিজাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারা তাদের বাসায় চলে গেল। বাসায় আসার পর থেকে জাবিরকে চুপ থাকতে দেখে ফারাহ বললো,
“কি হয়েছে তোমার”
“কিছু না,নীল কে কল দিয়েছিলো রিসিভ করেনি,তুমি একটু ফুপ্পি কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবে বাসায় গিয়েছে কিনা”
“কেন,জাহরার কাছে তো শুনেছিলাম ভাইয়া কাজে গেছে কাজ শেষে তো বাসায়ই যাবে এটা আবার কল করে জিজ্ঞেস করার কি আছে”
“এতক্ষণে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা, তাই বলছি কল টা করো আর জিজ্ঞেস করো আর তা না পারলে ফুপ্পির নাম্বার দাও আমিই কল দিচ্ছি”
তখনই জাবিরের ফোনে নীল কল দিল ওর কল দেখে জাবির বারান্দায় চলে গেল।
“কি ভাই আমাকে কিছু না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলে”
“সরি,আমার মাথা ঠিক ছিল না তাই চলে এসেছিলাম ”
“এতো সহজেই হাল ছেড়ে দিবে”
“জোর করে কিছু পাওয়া যায় না জাবির,যদি সে আমার ভাগ্যে থাকে তবে আমি তাকে পাবোই”
“হুমম,বি স্ট্রং ওকে,কিছুই শেষ হয়ে যায়নি”
“হুমম তুমি চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি,আচ্ছা এখন রাখি”
“ওকে”
কথা শেষে জাবির রুমে গিয়ে দেখে ফারাহ বিছানায় বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
“এমন করে তুমি বারান্দায় গেলে যেন গার্লফেন্ড্র কল দিয়েছে আমার সামনে কথা বলা যাবে না, কি এমন কথা বলো তোমরা হুমম শুনো যদি লিজাকে নিয়ে হয় তাহলে বাদ দাও এমনি মেয়েটা তিড়িংবিড়িং বেশি করে আমার ভাইয়ের জীবন টা আগুনে পরিণত করে ফেলবে”
“ঘুমাও তুমি এতো কথা না বলে”
জাবির লাইট অফ করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো।নীল আর লিজাকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।
#চলবে