#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃতাসনিম
কয়েকদিন আগেই জাহরার এক্সাম শুরু হয়ে গেছে, শরীফা বেগম আর জুবায়ের সাহেব এসেছেন ফারাহকে দেখার জন্য, তারা কিছুদিন থাকবে এখানে। ফারাহকে এখন খাওয়ার উপরে রাখা হয়,সারাদিন কিছু না কিছু তার হাতে দিয়েই রাখবে শরীফা বেগম।
বিকেলে….
ফারাহ বারান্দায় বসে আচার খাচ্ছিল,তখন তার ফোনে আননোউন নাম্বার থেকে কল আসলো,প্রথমবার কলটা কেটে গেল,দ্বিতীয় বার আবার কল আসলো,তখন ফারাহ কলটা রিসিভ করলো।অপর পাশ থেকে বলে উঠলো,
“আজ আমি অস্ট্রেলিয়া চলে যাবো,তুমি একবার আমার সাথে দেখা করবে”
“তোমার সাথে দেখা করার কোনো প্রয়োজনবোধ করছি না আমি, অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছো ভালো কথা,সেখানে গিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করো,ভালো থাকো,ফারদার আমার সাথে কোনো কন্টাক্ট করবে না”
“ফারাহ,হোয়াই ইউ আর সো রুড,কি এমন বলেছি তোমাকে আমি”
“তোমার আমাকে কিছু বলা লাগবে না,শোনো শাহিন আমি চাই না তোমার জন্য আমার লাইফে কোনো প্রবলেম ক্রিয়েট হোক,আমি আমার হাসবেন্ড কে নিয়ে অনেক ভালো আছি,এন্ড থ্যাংক ইউ সেদিন আমার সাথে এমন করার জন্য না হলে আমি জাবিরের মতো এমন একজন প্রটেক্টিভ, সাপোর্টিং,কেয়ারিং মানুষকে হারিয়ে ফেলতাম”
“ওকে ফাইন,ভালো থাকো এন্ড নতুন সদস্যকে আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা, সাবধানে থেকো,তোমার সাথে দেখা হলে তোমাকে যে আমার কাছে ফিরে আসতে বলতাম তা না,তুমি না হয় আমার নাই হলে কিন্তু তোমার বেবির জন্য ছোট্ট একটা গিফট আমি দিতে চেয়েছিলাম,যাই হোক গিফট না হয় আমার কাছেই থাকুক,কোনো এক সময় কোনো না কোনো ভাবে তোমার কাছে পৌঁছে দিব”
শাহিন কলটা কেটে দিল, ফারাহ ফোন টা পাশে রেখে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল, এমন সময় মিনারা বেগম আর শরীফা বেগম দুজন ফারাহর দুপাশে এসে বসলো।
“ফারাহ মা কিছু খাবে তুমি”
“আম্মু এটা শেষ করে নেই”
“আচ্ছা শোন,জাহরার তো এক্সাম শেষ হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যে, তখন তুই ওকে ফাহিমের কথাটা বলবি”
“হ্যা ফারাহ তুমি বলো তোমার ননদকে”
“আমি,আপনারা থাকতে আমি কেন”
“আরে ভাবিদেরই এসব কথা বলতে হয়, আমরা বুড়ো-বুড়িরা কি বলবো নাকি”
“আচ্ছা ওর এক্সাম শেষ হোক তারপর”
——-
রাতে….
জাবির অফিস থেকে এসে রুমে গিয়ে দেখে ফারাহ বিছানায় বালিশে মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে, জাবির তার পাশে বসে কপালে হাত রেখে বললো
“খারাপ লাগছে”
“কেমন জানো লাগছে অস্থির অস্থির”
“এসি তো ওন করা তাও ঘামছো কেন,আম্মুকে ডাক দিব”
“না না থাক,আম্মু সারাদিন কাজ করে এখন একটু রুমে গেছে বিশ্রাম নিতে দেও,আমি ঠিক আছি”
“আচ্ছা, একটু পরে ছাদে যাবো আমরা”
“সত্যি,আমাকে ছাদে নিয়ে যাবা”
“আস্তে এ অবস্থায় লাফালাফি করতে হয় না,আমার প্রিন্সেস ব্যথা পাবে”
“এখনি শুধু প্রিন্সেসের চিন্তা আর পরে তো আমাকে চিনবেনই না মি.জাবির”
“সে পরে দেখা যাবে,কাকে চিনি আর কাকে চিনি না”
ফারাহ মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে রইলো,জাবির উঠে গেল ফ্রেশ হতে,খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ফারাহকে ছাদে যাবে তখনই শরীফা বেগম আটকালেন ওদের, ফারাহ আস্তে আস্তে বললো
“হয়ে গেল আর কোথাও যাওয়া লাগবে না”
“এতো রাতে ছাদে কেন যাচ্ছিস”
“আম্মু ফারাহ তো সারাদিন রুমেই থাকে ওর কি ভালো লাগে এভাবে, তাই একটু ছাদে যাচ্ছিলাম”
“এ অবস্থায় রাতে কোথাও যেতে হয় না,কাল সকালে আমার সাথে যেও,এখন যাও ঘুমাও,ঔষধ খেয়েছো”
“হুমম খেয়েছি”
“যাও ঘুমাতে যাও”
জাবির ফারাহকে নিয়ে রুমে চলে আসলো, ফারাহ গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো, জাবির ওর সামনে দাঁড়িয়ে বললো
“বারান্দায় বসি চলো”
“তুমি গিয়ে বসো,আমি বসবো না”
“আহা,আম্মু তো তোমার ভালোর জন্যই বলেছে না যেতে”
“আমি কি বলেছি খারাপের জন্য বলেছে,ছাদে যাওয়া যদি মানা হয় তবে দেখবে বারান্দায় যাওয়াও মানা,তাই আমি যাবো না”
“আচ্ছা ঘুমাও”
“তুমি ঘুমাবে না”
“নাহ আমি চাঁদ দেখবো”
ফারাহ অসহায়ের মতো জাবিরের দিকে তাকিয়ে রইলো,ওর ফেইস দেখে জাবির হেসে দিল, আগে এই চাঁদ দেখা,বৃষ্টিতে ভিজা,রাতে ঘুরতে যাওয়া,ভোরবেলা হাঁটতে যাওয়ার বায়না গুলো ফারাহ করতো কিন্তু দুমাস ধরে সে কিছুই করতে পারে না। সবকিছু তাকে টাইম মতো করায় শরীফা বেগম।
“আচ্ছা,দেখবো না আমিও চাঁদ, আমাদের প্রিন্সেস হওয়ার পর তিনজন একসাথে চাঁদ দেখবো,হ্যাপি”
“তুমি কিভাবে জানো,আমাদের প্রিন্সেস হবে প্রিন্সও তো হতে পারে, আম্মুর কথা শুনে তো মনে হয় তারা ছেলে চায়,আর তুমি সারাদিন প্রিন্সেস করো”
“আমি একটা ছোট্ট ফারাহ চাই,কেননা তাকে আমি ফারাহর মতো ভুল করতে দিব না যার জন্য তাকে এতোগুলা বছর নিজের পরিবার পরিজন দের ছেড়ে দূরে পড়ে থাকতে হয়”
“আমি যদি লন্ডন না যেতাম,এখানেই পড়ে থাকতাম তাহলে হয়তো শাহিনের সাথেই আজ আমার বিয়ে হতো আর না হয় আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলতাম,সেটা কি ভালো হতো”
“সেটাই তো বললাম তুমি অনেক অবুঝ ছিলে,আমার প্রিন্সেস এতোটা অবুঝ হবে না,আচ্ছা হয়েছে এখন ঘুমাও”
এক মাস পর………
জাহরার এক্সাম শেষ হয়ে গেছে দুদিন হয়,আজ ফারাহকে একপ্রকার জোর করেই জাহরার কাছে পাঠানো হয়েছে ফাহিমকে নিয়ে কথা বলার জন্য।
“জাহরা আসবো”
“আরে ভাবি আসো,আমার রুমে আসতে তোমাকে আবার অনুমতি নিতে হয় নাকি”
“নাহ তুমি এখন বড় হয়েছো,ব্যস্তও তো থাকতে পারো তাই আর কি”
“কি যে বলো,বসো এখানে আমার ফুপ্পি কি বলে ভাবি”
“তোমার ফুপ্পি বলে তার একটা ফুপা লাগবে”
“ওহ আচ্ছা,কিহহ কি বললা তুমি”
“মানে জাহরা শুনো”
“নিশ্চয়ই এটা আম্মুর বুদ্ধি, আমাকে বিয়ে দিয়ে বাসা থেকে বের করার ইচ্ছা,আচ্ছা ভাবি তুমিই বলো আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে, আমি কি আমার ফুপ্পির সাথে খেলবো না,তার আগেই আমাকে বের করে দিবে”
জাহরা বসে কান্নার অভিনয় শুরু করলো।ফারাহ বললো,
“ফাহিম ভাইয়াকে কেমন লাগে তোমার”
জাহরা চুপ করে সোজা হয়ে বসে ফারাহর দিকে তাকিয়ে বললো
“তোমার ভাই ফাহিম”
“হুমম”
“ট্রাস্ট মি ভাবি উনি অনেক আজব টাইপের মানুষ,এমনি ভালো কিন্তু কাজকর্ম কেমন যেন এলোমেলো”
“ভালো লাগে তোমার”
“হ্যা খারাপ কি,ওহ জানো লাস্ট এক্সামের দিন আমি তো রিকশা খুঁজেই পাচ্ছিলাম,তারপর উনিই আমাকে পৌঁছে দিল,বললাম এমনি লোকটা ভালো,মাঝে মাঝে ভূতে ধরে মনে হয়”
“বাহ,ভালোই”
“কি ভালো”
“আম্মু কে গিয়ে বলে আসি তুমিও রাজি”
“মানে”
“পরে জানতে পারবে”
ফারাহ শরীফা বেগমের রুমে চলে গেল, সেখানে তারা গোল হয়ে বসে ছিল।ফারাহ আসতেই ওকে ঘিরে ধরলো।ফারাহ থেকে হ্যা শুনে দুই বেয়াইন খুশি হয়ে কোথায় যেন চলে গেল।
জাবিরকে ফোন করে বলা হয়েছে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসার জন্য, সে বাসায় এসে দেখলো ফারাহ ছাড়া আর কেউই নেই বাসায়।
“আমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে তারা কোথায় গেছে”
“আম্মুরা গেছে আংটি কিনার জন্য, আব্বু জাহরাকে নিয়ে শপিং এ গেছে, আর ফাহিম ভাইয়া তো অফিসে, আর তুমি আর আমি এখন বাসায়”
“আমাদের কোনো কাজ দিয়ে গেছে”
“নাহ বলেছে আমরা যেন রেডি থাকি,তোমাদের নাকি কোন বাংলো আছে সেখানে সব ঠিকঠাক করা হচ্ছে ওখানেই আংটিবদল হবে ভাইয়া আর জাহরার”
“বাবা,ওদের আংটিবদলই এতো জমকালো আয়োজনের, আর আমাদের পোড়া কপাল দেখো নিরামিষ একটা বিয়ে করে বসে আছি”
“তোমাদের ওই বাংলোতে কখনো ঘুরতে নিয়ে গেলে না আমাকে”
“ওটা এতো রেডি ছিল না,কিছুদিন হয় একদম ঠিকঠাক হয়েছে এখন তো তুমি অসুস্থ তাই আর নিয়ে যায় আচ্ছা, চলো আজ আমরা প্রথমে ঘুরবো তারপর যাবো সেখানে”
দুজনে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো ঘুরার জন্য,বেলুন আকাশে উড়ানো, আইসক্রিম খঅয়া ফুচকা খাওয়া সবই করলো,তারপর দুজন বনানীর দিকে চলে গেল সেখানেই তাদের বাংলো।খুব বেশি মানুষকে ইনভাইট করা হয়নি,দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্নীয়দের ইনভাইট করা হয়েছে।ফারাহ আর জাবির ভিতরে যেতেই নীলের সাথে দেখা হলো(ফারাহর ফুফাতো ভাই নীল)
“কিরে ফারাহ তুই বিয়ে করে মা হতে চলছিস,আর আমি হতভাগা মার কথা না শুনে এখনো কুমারই রয়ে গেলাম”
” জাবির নীল ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই, নীল ফুপ্পি আসেনি”
“এসেছে, ওদিকে মামা-মামির সাথে কথা বলছে,সো জাবির কেমন লাগে ফারাহকে পেইন দেয় না আপনাকে,যে ভয়ে আমি বিয়ে করিনি”
“প্রথমত থ্যাংক ইউ বিয়ে না করার জন্য, তাই আমি ওকে পেয়েছি, আর পেইন তা ও কখনোই আমাকে দেয় না,বরং আমি মাঝে মাঝে ওর সাথে রাগ করি”
“বাহ অনেক পরিবর্তন ছোটবেলায় অনেক জেদি মেয়ে ছিল,এখন দেখি ভদ্র হয়ে গেছে”
“আমি ভদ্রই ছিলাম”
তারপর ফারাহর আম্মুদের কাছে গেল,সেখানে যাওয়ার পর আর তাকে কোনো দিকে যেতে দেয় না তাদের সামনে বসিয়ে রেখেছে। জাহরাকে পার্লার থেকে সাজিয়ে নিয়ে আসবে ওর ফ্রেন্ডরা।ফাহিমও চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যে।
#চলবে
#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃতাসনিম
জাহরা আর ফাহিমকে একসাথে বসানো হয়েছে।সবাই সবার মতো কথা বলছে আর ওদের দেখছে।জাহরা আস্তে করে ফাহিম কে ডাক দিল।
“হুমম বলো”
“আপনি জানতেন আমাদের বিয়ের কথা”
“কে আমি না তো”
“তাহলে আপনি রাজি হলেন কেন,আমি না কত ছোট আপনার”
“এক্সকিউজ মি.ছোট মানে কি বলতে চাও তুমি আমি বুড়ো হয়ে গেছি”
“আমার সাথে আপনাকে সবাই বুড়োয় বলবে”
“আচ্ছা সমস্যা নেই, বললে বলবে,আপ কে লিয়ে কুচ ভিহ”
“মানে,আমার জন্য মানে কি”
“কিছু না,এসব বাদ দাও দেখো অ্যাঙ্গেজমেন্ট কত ধুমধাম করে হচ্ছে, বিয়ে তে তো আরো বেশি হবে তুমি তা এনজয় না করে কিসব বলে যাচ্ছো”
“এইরকম হুট করে সব আয়োজন করে ফেললি কি হয়,একটু মুড আসতে হবে না আমার”
“আপনার মুড আসবে কি করে”
“আপনাকে তা নিয়ে ভাবতে হবে না, আমি নিজেই নিজের মুড ঠিক করে নিবো”
“ওকে”
ফারাহ আর জাবির এক সাইডে বসে ছিল।সেখান থেকে সবাইকে দেখা যাচ্ছিল,হঠাৎ একজন এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো, যাকে ফারাহ কপালটা কুঁচকে ফেললো।মেয়েটি হেসে বললো,
“কেমন আছো ভাবি,পুচকে টা কেমন আছে”
“বাহ বাহ এবার এতো উন্নতি,প্রথমেই ভাবির খোঁজ নিচ্ছো”
“আগের বার ভাবি যা রাগ হলো আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম,তাই এবার আগে তাকেই জিজ্ঞেস করলাম,যদিও ভাবি এখনো উত্তর দেয়নি,হয়তো রাগ এখনো আছে আমার উপর তাই না ভাবি”
“নাহ লিজা,তোমার উপর কেন আমার রাগ থাকবে, আমি আর বাবু দুজনেই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি, তুমি কেমন আছো”
“আমিও ভালো আছি,জাবির তুমি কেমন আছো”
“এই তো ভালোই আছি,আসতে এতো দেরি হলো কেন”
“আরে রাস্তায় এতো ট্রাফিক,কি বলবো,আচ্ছা আমি একটু জাহরার সাথে দেখা করে আসি”
“হুমম যাও”
লিজা ওদের সামনে থেকে চলে গেল জাহরার কাছে,তার পিছু পিছু আরেকজনও গেল।
“ওকে কে ইনভাইট করলো”
“আব্বু আম্মুই করেছে, ও আমাদের ফ্যামিলি মেম্বারের মধ্যে পড়ে ফারাহ”
“হুমম,শোনো তুমি এখান থেকে কোথাও যাবে না একমিনিটের জন্যও না যেতে হলে আমাকে সাথে নিয়ে যাবে”
“বাবা রে এতো জেলাস কেন তুমি”
“কারণ ওই মেয়ে কে আমার সুবিধা লাগে না সেদিনও বলেছি,আজ আবার বলছি তুমি যদি এখন এর জন্য আমার সাথে রাগও করো তাতে আমার কিছু যায় আসে না”
“নাহ এখন তোমার সাথে রাগ করবো না,আমার প্রিন্সেস তাহলে কষ্ট পাবে”
——-
“এক্সকিউজ মি, একটু কথা বলা যাবে”
“আমরা কি পূর্বপরিচিত,আপনি আমার স্কুল কলেজ ভার্সিটির কোনো জায়গার ফ্রেন্ড”
“নাহ মানে…..”
“তাহলে কেন আমি আপনার সাথে কথা বলবো”
“কথা বলার জন্য যে পূর্ব পরিচিত হতে হয় এমন তো কোথাও লিখা নেই,বরং কথা বলার মাধ্যমে পরিচিত হওয়া যায়”
“আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইন্টারস্টেড নই”
“কেন,একবার শুনন তো আমার কথা”
“পথ ছাড়ুন,আমার এখানে দাঁড়িয়ে আপনার সাথে খোশগল্প করার সময় নেই”
“কেন আপনাকে বাবুর্চির কাজ দেয়া হয়েছে নাকি,দেখে তো মনে হচ্ছে না,বাবুর্চিরা নিশ্চয় নীল গাউন কানে গোল্ডেন স্টোনের ঝুমকা,হাতে ব্রেসলেট,আটা ময়দা সুজি দিয়ে টিপটপ হয়ে আসবে না”
“হাউ দেয়ার ইউ,আটা ময়দা সুজি কি হ্যা,শুনন আমি এমনি সুন্দর আমাকে অতো সাজতে হয় না আর যদি সেজেও থাকি তাতে আপনার কি,আপনি কে আমার মেকআপ কে আটা ময়দা সুজি বলার”
“বাবা রে এতো পুরো বোম্বাই মরিচ”
“কিহহহ”
“কিছু না আপনি যেতে পারেন,এটা শুনে যান আমি কিন্তু বর ও কনে উভয় পক্ষ সো আমার সাথে একটু সম্মান দিয়ে কথা বলবেন,না হয় বিয়েতে দেখাবো মজা”
“আপনি যা ইচ্ছা হোন আমার কোনো কিছুতেই কিছু যায় আসে না শুনতে পেরেছেন এবার আমাকে যেতে দিন”
“পথ তো অনেক আছে আপনি যাচ্ছেন না কেন”
“ফালতু লোক”
লিজা নীল কে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।নীল সোজা গেল ফারাহর কাছে,জাবির তখন ওর বাবা মার সাথে কথা বলতে গিয়েছিল।নীল ফারাহর পাশে বসে বললো
“বনু,একটা মেয়ে পটিয়ে দিবি”
“তোমার আমাকে দেখে কি ঘটক মনে হয়”
“আসলেও তুই ঘটক হলেও তো পারতি,কেন হলি না আচ্ছা যাই হোক আমার জন্য ওই নীল গাউন পড়া মেয়ে টা কে একটু ম্যানেজ করে দে”
“নীল গাউন পড়া মেয়েটা কে তোমার ভালো লাগলো”
“হ্যা কেন কি সমস্যা, মেয়েটা একটু রাগী তবে রাগী মানুষের মনটা নরম হয় আমি পড়েছিলাম এক জায়গায়”
“ফুপ্পি কে দেখাও আগে তারপর দেখছি আমি”
“আরে তুই ম্যানেজ করে দে আম্মুকে বোঝানো কোনো ব্যাপার না”
“আমি কি করবো বলো,তুমি লেগে থাকো একসময় না একসময় হয়ে যাবে”
“কিছু যখন করতেই পারবি না তাহলে সময়টা নষ্ট কেন করলি আমার”
“আচ্ছা আমি হেল্প করি তাহলে,আসলে হয়েছে কি নীল,তোমার বোনের সেতুকে বেশি ভালো লাগে না তাই সে ওর ব্যাপারে কিছু বলতে চায় না”
“তুমি হেল্প করবে জাবির”
“হুমম চলো আমার সাথে ওর সম্পর্কে একটু বলি আর তোমার সাথে ওর একটু ভাব করিয়ে দেয়”
“জাবির তুমি এতো ভালো কেন”
“আমার জামাই যে তাই ভালো”
“তুই তো কথাই বলিস না,চুপ করে বসে থাক এখানে দেখিস আমার মামা যেন ব্যাথা না পায়”
“বোনের কোনো কদর নেই শুধু ভাগ্নের জন্য কদর,যাও যাও চলে যাও তোমরা”
জাবির আর নীল কথা বলতে বলতে লিজার কাছে গেল, সে বসে জুস খাচ্ছিল।জাবির একটা চেয়ার টেনে নীলকে বসতে বললো তারপর নিজেও বসলো।
“লিজা পরিচিত হয়েছো”
“হ্যা উনি বর ও কনে উভয়পক্ষ, তাই না ভাইয়া”
“দেখুন আমাকে ভাইয়া বলবেন না”
“কেন,কি সমস্যা”
“এই সমস্যা টমস্যা পরে হবে,আগে আমি যা করতে এসেছি তা করে যায় আমার বউ ওখানে একলা বসে আছে,লিজা ও নীল ফারাহর কাজিন,আর নীল ও লিজা আমার বোন,এখন দুজনে কথা বলো কেমন,লিজা সুন্দর করে কথা বলো”
“কেন,আমার সাথে কি ওকে বিয়ে দিয়ে দিবে নাকি যে সুন্দর করে কথা বলতে হবে”
“হতেও তো পারে”
জাবির কথাটা বলে চলে আসলো,নীল চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললো,
“সো,বন্ধুত্ব করা যায় আমার সাথে”
“নিজে খাতির জমাতে পারছিলেন না বলে জাবিরকে নিয়ে এলেন”
“সেসব বাদ দিন,এরকম বিয়ে বিয়ে সীজন হলে নিজেরও বিয়ে করতে ইচ্ছে করে”
“আপনার আম্মুকে গিয়ে বলুন আম্মু আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে”
“পছন্দ মতো মেয়ে পায় না যে”
“আহারে,কত কষ্ট”
“হুমম কষ্ট, কিভাবে আমার কষ্ট কমানো যায় বলতে পারেন”
“বিয়ে করে ফেলুন”
“রাজি হয়ে যান করে ফেলি”
“মানে..”
“নাহ,মানে আপনাকে বেশ সুন্দর লাগছে, আপনি ঠিকই বলেছেন আপনার মেকআপের দরকার হয় না এমনি সুন্দর”
“থ্যাংক ইউ,দেরিতে হলেও যে বুঝতে পেরেছেন তার জন্য খুশি হলাম”
“তাহলে কি বন্ধু হওয়া যায়”
“ভেবে দেখবো”
“বন্ধু হওয়ার জন্যও ভাবতে হবে”
“হ্যা ভাবতে হবে”
“তো কখন জানাবেন”
“ফাংশন শেষে”
লিজা উঠে চলে গেল, নীল ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
#চলবে