প্রিয় হতে প্রিয়তর পর্ব-২৫+২৬

0
446

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃতাসনিম

ছয় মাস পর……..

জাবিরের বাবা এ সময়ের মাঝে দুবার অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তারা জাহরা আর ফাহিমের বিয়ের তারিখটা ঠিক করে ফেলেছে।চারদিকে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে, সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হবে।জাহরাকে নিয়ে লিজা পার্লারে গেছে, আর এদিকে সব দেখাশোনা করছে জাবির,নীল আর জাবিরের বন্ধুরা।ফারাহও এখন অসুস্থ বললেই চলে তার ডেলিভারির সময় এগিয়ে আসছে, তাই তাকে কোনো কাজে হাত লাগাতে দেয়া হয় না, কয়েকমাস আগে একদিন সে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে, হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার চেকআপ করেন তারপর জানান তাদের জমজ বেবি হবে,তাই ফারাহর দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে বলেছেন।

সন্ধ্যায়…….

চারদিক আলোতে ঝলমল করছে,বর আর কনের বাসা এক জায়গায় হওয়ার কারণে একসাথেই আয়োজন করা হয়েছে, স্টেজে জাহরা আর ফাহিমকে বসানো হয়েছে, সবাই একে একে ওদের হলুদ লাগাতে লাগলো।

নীল ফারাহর সাথে বসে ছিল,দুজনে কথা বলছিল এ ছয় মাসে সে আর লিজার সাথে কোনো কন্টাক্ট করেনি,কাল থেকে তারা সবাই এখানে লিজা অনেকবার তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে ইগনোর করে চলে গেছে, আজকেও যেন কথা না বলতে পারে তাই সে ফারাহর সাথে বসে ছিল।কিন্তু তার ধারণা ভুল প্রমাণ করে লিজা হাতে বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে ফারাহর পাশে বসে পড়লো।

“ভাবি খেয়ে নেও,তোমাকে নাকি ঔষধ খেতে হবে”

“লিজা এসবের গন্ধ আমার ভালো লাগে না,আমি খাবো না”

“জাবির যে পাঠালো আমাকে দিয়ে,অল্প খাও”

“আমার ভালো লাগে না এই খাবার টাবার তাও তোমরা শুধু জোর করো”

“আহা ভাবি তুমি না খেলে বেবিরা খাবে কি করে,নীল তুমি একটু বোঝাও ভাবি কে”

“খেয়ে নে ফারাহ,জেদ করিস না এমনিই তো পড়ে যাস একটু পরপর”

“আচ্ছা ভাবি আমি খাইয়ে দেয় তোমাকে”

লিজা ফারাহকে খাওয়াতে লাগলো,এই সুযোগে সেখান উঠে চলে গেল। খাওয়া শেষ করে লিজা প্লেট নিয়ে চলে গেল আর জাবিরকে বললো

“আমি খাবার খাইয়ে এসেছি, তুমি যাও ঔষধটা দিয়ে আসো,আর জাবির শুনো”

“হুম বলো”

“নীলকে একটু ডেকে দিবে,ও শুধু আমাকে ইগনোর করে চলে, আমি ওর সাথে কথা বলতে চাই”

“ঠিক আছে ডেকে দিবো”

জাবির উঠে ফারাহর কাছে চলে গেল, যাওয়ার সময় নীলকে বলে গেল তার জায়গায় গিয়ে যেন বসে,নীল উঠে সেখানে গেল,লিজাকে দেখে অন্যদিকে যেতে নিতেই লিজা এসে ওর পথ আটকালো।

“ভাব বেড়েছে তোমার,কাল থেকে দেখছি আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইছি তুমি দেখছো না”

“আমার সাথে তোমার কোনো কথা থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না”

“তোমার মনে না হলেও আমার কথা আছে,এ ছয় মাসে কি তোমার একবারও আমার কথা মনে পড়েনি”

“আমার তোমার কথা মনে পড়লেও কি না পড়লেও তোমার কি তাতে আজব,এসব কথা কেন বলছো”

“তুমি না আমাকে ভালোবাসো”

“তো কি করবো এখন”

“একবারও খোঁজ নিলে না আমি কেমন আছি,আমাকে একবার আমাকে দেখতে ইচ্ছে করেনি”

“সোজাসুজি বললেই তো পারো তুমি চাইছিলে আমি যেন তোমার পিছনে সারাজীবন পড়ে থাকি তারপর তুমি বলবে আমার জ্বালায় তুমি বাঁচতে ছিলে না এজন্য আমাকে বিয়ে করেছো,নেভার আমি এটা কখনোই করতাম না,আমি তোমাকে বোঝানোর সে কয়েকদিন তোমার কাছে গিয়েছিলাম,কিন্তু তুমি যখন বললে তোমাকে যেন বিরক্ত না করি,আমার জন্য তোমার প্রবলেম হচ্ছে তখন আমি পিছিয়ে এলাম,তুমি ভালো থাকো এটাই আমি চাই”

“আমি ভালো নেই, আমি তোমাকে আমার হোস্টেল ভার্সিটির সামনে আসতে বারণ করেছিলাম, আমার সাথে কন্টাক্ট করতেও বারণ করেছিলাম কারণ তখন আমি রিয়েলাইজ করিনি আমারও তোমার মতো একজনকেই চাই,যে আমাকে নিয়ে পাগলামি করবে,আমার খেয়াল রাখবে,তুমি যে এভাবে সব কন্টাক্ট অফ করে দিবে আমি সত্যিই ভাবিনি”

“ভালো হয়েছে, এখন যেতে দেও আমাকে”

“নাহ,তুমি বলো ভালোবাসো আমাকে”

“কাজ আছে আমার”

“বলো বিয়ে করবে আমাকে”

“আম্মুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো”

“আচ্ছা বলো শাশুড়ী আম্মু কোথায়”

“বিয়ে হয় নাই এখনো”

“তো কি হয়েছে আমি বিয়ে না হওয়ার আগেই আম্মু ডাকা লোক”

“ভাইরাল গার্ল”

“তুমি আমার ভাইরাল বয়”

লিজা গেল জাবিরের আম্মুর কাছে উনি তখন নীলের মার সাথেই কথা বলছিলেন।

“আম্মু তোমার সাথে আমার একটু কথা ছিল”

“কাকে বললি আমাকে নাকি শাশুড়ী মাকে”

“মানে……”

“তোর আব্বু আম্মুর সাথে সেদিন আপার কথা বলিয়ে দিলাম, আমরা সবাই চাই জাহরা আর ফাহিমের বিয়েটা ভালোই ভালোই হয়ে গেলে তোদের একটা ব্যবস্থা করবো”

“হ্যা আপা ফারাহও তো এখন অসুস্থ নতুন সদস্য আসুক আগে ভালো মতো সব শেষ হয়ে গেলেই ওদের চারহাত এক করে দিব ইনশাল্লাহ”

লিজা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো,ও যা বলতে এলো৷ তা দেখি আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে,বাহ ভালোই হলো।হাহহ মি.নীল এই যে আমাকে দুইদিন এভাবে ইগনোর করলেন, এখন আমিও একটু মজা নিবো।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হয়ে মেহমানরা বিদায় জানিয়ে যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে গেল। জাবির রুমে এসে দেখে ফারাহ শুধু ছটফট করছে আর ঘেমে যাচ্ছে।

“কি হয়েছে ফারাহ”

“আমার খুব অস্থির অস্থির লাগছে,ভালো লাগছে না”

“বসো এখানে,পানি খাও”

“না না বসবো না বসলে বেশি খারাপ লাগে,তুমি আম্মুকে ডাক দেও”

জাবির তাড়াতাড়ি গিয়ে তার মাকে ডাক দিল।শরীফা বেগম ফারাহর কাছে গেলেন৷ ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে উনি জাবিরকে বললেন তারা হাসপাতালে যাবে গাড়ি বের করতে।জাবির গিয়ে গাড়ি বের করলো।ফারাহ ছটফট করতে করতে একসময় সেন্সলেস হয়ে গেল।ফারাহকে নিয়ে তারা হাসপাতালে গেল।ফারাহর বাবা মা ভাই নীল লিজা আর শরীফা বেগম। জাহরাকে বাসায় রেখে এসেছেন তার বাবাকে দেখার জন্য উনি অসুস্থ হয়ে গেলে আবার আরেক বিপদ। ডক্টর ফারাহকে দেখে বললেন এখনি ডেলিভারি করতে হবে,ওকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো।

সবাই ওটির বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো।জাবিরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।একদিন ফারাহ বলেছিল,

“আচ্ছা জাবির,যদি এমন হয় তোমাকে ডিসিশন নিতে হয় আমার আর বেবির মধ্যে যেকোনো একজনকে বাঁচানোর জন্য তুমি কাকে বাঁচাবে”

“ফারাহ এমন কথা বলবা না,এমন কিছু হবে না”

“না না,শুনো যদি হয় তবে কিন্তু তুমি আমাদের বেবিকেই বাঁচাবে, আমাকে কথা দাও”

“ফারাহ এবার কিন্তু রেগে যাবো আমি,চুপ করো,তুমি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ইমপর্ট্যান্ট বুঝছো”

এ কথাগুলো বারবার জাবিরের মাথায় ঘুরছিল,এর মধ্যেই ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।জাবির সবার আগে তার কাছে গেলেন।

“ডক্টর আমার ওয়াইফ”

“দেখুন আপনার তো টুইন বেবি এখন এদের মধ্যে একজন উল্টো হয়ে গেছে, একজনকে ঠিক রাখতে গেলে আরেকজনের ক্ষতি হতে পারে,আর যদি দুজনকেই ঠিক রাখতে চান তাহলে দুজনেরই ক্ষতি হতে পারে এজন্য আপনারা কি মতামত দিবেন বলুন একজনকে বাচানোর চেষ্টা করবো?”

জাবির চুপ হয়ে পিছিয়ে গেল,সে কিভাবে বলবে একজনকে বাঁচানোর জন্য, ও তো দুজনেরই বাবা একজন পৃথিবীর আলো দেখবে আরেকজন দেখবে না এটা তো ফারাহও মেনে নিবে না।নীল এসে জাবিরের কাঁধে হাত রাখলে জাবির পিছনে ঘুরে তাকায়।

“ভাই বলো কিছু, তোমাকেই তো ডিসিশন নিতে হবে”

“কি ডিসিশন নিবো আমি,বলবো যে একজনকে বাঁচিয়ে রাখুন আরেকজনকে মেরে ফেলুন,সরি এটা আমার পক্ষে পসিবল না, আমি দুজনেরই বাবা,আমি তাদের সাথে এতোবড় অন্যায় করতে পারবো না”

“মানে আপনি বলতে চাইছেন আমরা যেন দুজনকেই বাঁচানোর ট্রাই করি,তাহলে এটাও শুনন এতে কিন্তু আপনার ওয়াইফের ঝুঁকি আছে”

“জাবির বাবা,আমার মেয়েরও ক্ষতি হতে পারে বলছে বাবা,তুমি একটা ঠিক ডিসিশন নেও বাবা”

“আব্বু আপনি এভাবে ভেঙে পড়বেন না আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন,ডক্টর আমি আমার দুজন বাচ্চাকেই চাই আর আমার ওয়াইফও সুস্থ থাকে সেভাবেই ট্রাই করবেন,প্লিজ”

“ঠিক আছে আপনারা যা ভালো মনে করেন”

ডাক্তার আবার ভিতরে চলে গেল।জাবির এসে চেয়ারে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা গেল,তবে একজনের জাবির উঠে দাঁড়ালো তাহলে আরেকজনকে তারা বাঁচাতে পারলো না।

#চলবে

#প্রিয়_হতে_প্রিয়তর
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃতাসনিম

কিছুক্ষণ পর আবার কান্নার শব্দ এলো,নার্স দুটো ফুটফুটে বাচ্চা কোলে নিয়ে জাবিরের সামনে দাঁড়ালো। জাবিরকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শরীফা বেগম আর মিনারা বেগম গিয়ে বাচ্চা দুজনকে কোলে নিলো।জাবির নার্সকে বললো,

“আমার ওয়াইফ……”

ডাক্তার ওটি থেকে বেরিয়ে বললেন,

“আপনার ওয়াইফও ভালো আছে, তবে….”

“তবে কি”

“উনারা তিনজনের কেউই আশংকা মুক্ত নন,যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে,বাচ্চাদের হসপিটালেই রাখতে হবে কিছুদিন, আর আপনার ওয়াইফেরও বিশেষ টেক কেয়ার প্রয়োজন”

“আমি একবার দেখতে পারবো ওকে”

“এখন না উনার সেন্স নেই, সেন্স আসলে পরে দেখা করতে পারবেন”

কথাটা বলে ডাক্তার চলে গেল।জাবির গিয়ে ওর বাচ্চাদের কোলে তুলে নিল, সে এখন এক ছেলে এক মেয়ের বাবা হয়ে গেছে। এতক্ষণ তার মনের ভিতর ঘূর্ণিঝড় আইলা হচ্ছিল, ওদের মুখের দিকে তাকাতেই তা থেমে গেল।তারপর আবার মা আর শাশুড়ীর কাছে বাচ্চাদের দিয়ে সে নীলের কাছে গেল। মাঝরাতে তারা বাসা থেকে বেরিয়ে ছিল এখন সকাল হয়ে যাচ্ছে। আজকে তো ফাহিম জাহরার বিয়ে,এখন যখন আল্লাহর রহমতে সব ঠিক আছে, তখন ওদের বিয়ের আয়োজনের ব্যাপারটা দেখা দরকার।

“নীল,লিজা তোমরা বাসায় চলে যাও,ওদিকে বিয়ের আয়োজনে কাউকে তো থাকতে হবে”

“বিয়ে হবে আজকে”

“এটা কেমন কথা লিজা,বিয়ে হবে না কেন,আমার একমাত্র বোনের বিয়ে আজকে,অবশ্যই বিয়ে হবে যেভাবে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সেভাবেই হবে,ফাহিম ভাই আব্বুকে নিয়ে তুমিও চলে চাও,জামাই সাজা লাগবে না”

“জাবির,ফারাহকে বাদেই বিয়ে হবে”

“ও ভিডিও কলে থাকবে,এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ সশরীরে না থাকলে কি হয়েছে, আর কোনো মন খারাপ না সবাই এবার শুধু আনন্দ করবে, আমার প্রিন্স আর প্রিন্সেস না হয় কষ্ট পাবে”

সবাইকে পাঠিয়ে দিয়ে জাবির আবার ওর বাচ্চাদের দেখার জন্য মার কাছে গেল, ওর যেন আনন্দ কমছেই না,শুধু একবার ফারাহকে দেখতে পেলে আর কোনো চিন্তা থাকতো না।

সকাল ৯ টায় ফারাহর সেন্স আসলে জাবির বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ওর কাছে যায়,বাচ্চাদের দেখে ফারাহর চোখে পানি চলে আসে,তার বাচ্চা, ও উঠে বসার চেষ্টা করে, জাবির ওকে উঠতে বারণ করে।

“এখন উঠা লাগবে না ম্যাডাম,কোলে আপনি পরেও নিতে পারবেন”

“তুমি খুশি হয়েছো”

“আমি এতো খুশি হয়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়,বুঝলে আমার প্রিন্স আর প্রিন্সেস,আমি তো ওদের নামও ঠিক করে ফেলেছি”

“কি নাম ঠিক করলে শুনি”

“আমার প্রিন্সেসের নাম জুহানাত রহমান ফারীন,আর প্রিন্সের নাম হবে জাওয়াদ রহমান ফুয়াদ”

“বাহ,অনেক সুন্দর নাম,আমরা বাসায় যাবো কবে,আজকে ফাহিম ভাইয়া আর জাহরার বিয়ে তে আমরা থাকবো না”

“থাকবে তো তবে ভিডিও কলে”

“কিহহহ,তুমি থেকো ভিডিও কলে,আমি বাসায় যাবো”

“জানপাখি,ডাক্তার না করেছে নিম্নে এক সপ্তাহ থাকতে হবে এখানে”

“বিয়ে,রিসিপশন কোনোটাতেই আমি থাকবো না,আমি যাবোই”

“নাহ,তুমি যাবে না মা”

“আম্মু আমাকে রেখে ওদের বিয়ে হয়ে যাবে”

“ওদের বিয়ে দেখার চেয়ে তোমাদের সুস্থ হওয়াটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, ডাক্তার বলেছে তোমাদের এখানেই থাকতে হবে মা”

“ঠিক আছে”

মা আর শাশুড়ীর সামনে ফারাহ কিছু বললো না, পরে জাবিরকে ধরবে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে। জাবির ডাক্তারের কাছে গেল কথা বলার জন্য।

“আসবো স্যার”

“মি.জাবির হ্যা আসুন,প্লিজ বসুন”

“থ্যাংক ইউ সো মাচ আপনাকে,আজকে আপনার জন্য আমি আমার ওয়াইফ আর বাচ্চাদের সুস্থ ভাবে ফিরে পেয়েছি, আপনাকে যতই থ্যাংক ইউ বলি কম হবে”

“নাহ,এটা তো আমার ডিউটি, আসলে জানেন কি মি.জাবির তখন আপনার মধ্যে কি চলছিল আমি তা ফিল করতে পারছিলাম, একদিন আমিও এমন সিচুয়েশনে ছিলাম,কিন্তু আমি নিজেই আমার ওয়াইফ আর বাচ্চা কাউকেই বাঁচাতে পারিনি,সেদিন ভেবেছিলাম ছেড়ে দিব এই পেশা,কিন্তু ছাড়তে পারিনি কারণ আমার ওয়াইফ আমার পেশাটাকে অনেক ভালোবাসতো,মানুষের সেবা করার সুযোগ তো সবার হয় না,তাই ওর স্মৃতি বজায় রাখার জন্য আমি ছাড়িনি এই পেশা,এরপর যখনই এমন ক্রিটিক্যাল অপারেশন আমার সামনে আসে সেদিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার,আর সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কি জানেন আজকের দিনেই আমি আমার লাভ অফ লাইফকে হারিয়ে ছিলাম, আজ আপনাকে আপনার লাভ অফ লাইফ ফিরিয়ে দিতে পেরে নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছে আমার,সরি অনেকক্ষণ ধরে আমিই কথা বলে যাচ্ছি”

“আপনি কিভাবে মুখে হাসি রেখে এতো কঠিন কথাগুলো বললেন আমি সেটাই বুঝতে পারছি না,যাই হোক আপনি ভালো থাকুন এটাই আমার কামনা,আপনার ঋণ তো আমি কোনোদিন পরিশোধ করতে পারবো না তবে আজ আমার বোনের বিয়ে আপনি যদি আসতেন তাহলে অনেক খুশি হতাম,আর আমার ওয়াইফ অনেক জেদ করছে বিয়েতে যাওয়ার জন্য কারণ তার ননদের সাথে তার ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে তো তাই”

“ওহহ ফ্যামিলি ম্যারেজ,ওকে আমি যাওয়ার ট্রাই করবো,এখন পেশেন্ট কে নিয়ে একটু বলি ওনাদের একটু পরে দেখতে যাবো আমি ভালো দেখলে পরশু বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন, তবে বাচ্চার মা কে ফুল বেডরেস্টে থাকতে হবে একমাস,আর বাচ্চাদেরও অনেক খেয়াল রাখতে হব,টুইন বেবিদের রোগবালাই একটু বেশিই হয় তাই চোখে চোখে রাখতে হবে”

“ঠিক আছে”

জাবির চেম্বার থেকে বেরিয়ে ফারাহর সাথে একবার দেখা করে বাসায় গেল ওদিকে কি হচ্ছে দেখার জন্যে,দুপুরের আগে সে ফিরে আসলো সাথে নীলকে নিয়ে এলো মা আর শাশুড়ী মাকে ওর সাথে পাঠিয়ে দিল আর বিয়ে পড়ানোর সময় ভিডিও কল দিতে বললো।তারপর ফারাহর সাথে বসে ওকে সব ঘটনা বলতে লাগলো কি কি আয়োজন করা হয়েছে, কাল কি হবে।

দুপুর তিনটার দিকে বিয়ে পড়ানো শেষ হলে বিদায়ের সময় জাহরা কান্নার বন্যা বসিয়ে দিল। জাবির ভিডিও কলে থেকেই বললো

“কিরে পাশের বাসায় তো বিয়ে দিলাম,তাও কান্না করিস কেন”

“তোকে জ্বালাতে পারবো না তাই”

“হাহহ এখন শুধু বাসায় শান্তি”

“জাবির,আজকেও তোমার ওকে না জ্বালালে হয় না”

“না গো হয় না মনের ভিতর শান্তি আসে না”

তারপর ফাহিমদের বাসায় জাহরাকে নিয়ে যাওয়া হয়,সেখানে সবাই আড্ডা দিতে থাকে ফারাহ আর জাবির ভিডিও কলে ওদের সাথে যুক্ত থাকে।

#চলবে