প্রেমতরী পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
496

#প্রেমতরী
পর্ব :- ১৫(শেষ)
.
মামুন দ্রুত ডাক্তারকে বিদায় দিয়ে আসে।
এক দৌড়ে আবার নিজের রুমে।
মা মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। মিষ্টি বাচ্চাদের মতো করে কেঁদে যাচ্ছে।
–মিষ্টি, কাঁদছিস কেনো? আজ তো তোর খুশির দিন। এভাবে কাঁদলে হবে?(মা)
–মা, আমারও বাবু হবে। আমিও মা হবো। কিযে খুশি লাগছে আমার। আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। আমার মনের আশা পূরন করেছে।
–বলেছিলাম না, আল্লাহর কাছে চাইতে। আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন না।
মামুন মায়ের পেছনে এসে দাড়ায়।
–কি করছিস ওখানে? এখানে মিষ্টির পাশে এসে বস।
মা মামুনের একহাত ধরে টেনে মিষ্টির পাশে বসায়।
–তোরা কথা বল, আমি বরং তোর বাবাকে আর দাদুকে খবরটা দিয়ে আসি।
মামুনের মা বহিরে চলে যায়।
মামুন দুহাতের মাঝে মিষ্টির হাতটা নিয়ে নেয়।
মিষ্টি কান্না মাখা গলায় মামুনের বুকে আছড়ে পড়ে।
হু হু করে কেঁদে ওঠে মিষ্টি।
–এই পাগলি, কাঁদছো কেনো?
–আমার বাবু হবে, আমি মা হবো। এই অনুভূতি আমি কাউকে বোঝাতে পারবো না। আমার যে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
–কেনো কাঁদবে আর? তোমার তো আর কোনো কাঁদার কারন নেই। এখন থেকে আর কাঁদা যাবে না।
–১০০ বার কাঁদবো। তোমার কি?
–আমার বউ কাঁদবে, আর আমার কিছুই না?
–এহ আসছে বউ বলতে, সব দোষ তোমার।
–আমার দোষ?
–তো?
–কি করছি আমি?
–তোমার ভালোবাসায় কমতি ছিলো বিধায় আমি এতদিন মা হতে পারি নি। তুমিতো আমায় ভালোই বাসো না।
–তাই? আমার ভালোবাসায় কমতি? দেখাচ্ছি।
–লাগবে না, আপনার ভালোবাসা আপনার কাছে রাখেন। আর লাগবে না।
–অ্যাহ? আমাকে আর লাগবে না?
–আপাতত না,
–আমি চলে যাচ্ছি তাহলে, বাই।
–আরে আরে, কই যাও?
–আমারতো আর কাজ নাই, কি করবো থেকে?
–আমার বাবুটা তো আমাকে আম্মু বলবে। আব্বু বলার জন্য তো একজনকে লাগবে, আমি নাহয় তোমাকে দেখিয়ে বলে দেবো যে তোমাকে যেনো আব্বু ডাকে।
–তাই? তবুও ভালো।
–তুমি খুশি হওনি?
–হুম।
–তোমার ভেতরটা আমি পড়তে পারি। অর্ধাঙ্গিনী হইযে তোমার। তোমার খুশিটুকু একবার সবার সামনে প্রকাশ করেই দেখো না, অন্তত আমার সামনে।
–আমি পারি না, জানিনা কেনো আমি এমন। মনটা চাচ্ছে পুরো দুনিয়াকে চিৎকার করে বলতে। আমি বাবা হবো, পারছি না।
–তুমি পারো, তোমার চোখের পানিই সব বলে দিচ্ছে।
.
মামুন নিজের চোখে হাত দিয়ে দেখে, আসলেই তার চোখে পানি।
মিষ্টি দুহাত দিয়ে মামুনের চোখের পানি মুছে দেয়।
–পুরুষদের চোখে পানি মানায় না। কেনো কাঁদছো তুমি?
–পুরুষরা কষ্টে কাঁদে না, তবে খুশিতে তাদেরও অশ্রু আসে। আর এটা আমার আনন্দের অশ্রু।
–পাগল একটা।
মামুন মিষ্টির পেটে ধীরেধীরে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে এবার আর ভুল হবে না, বাবা এবার তোমায় গার্ড হয়ে পাহারা দেবে।
পাশের রুম থেকে মা মামুনকে ডাক দেয়।
মিষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে মামুন মায়ের রুমে আসে।
–শোন, দোকানে যা।
–কেনো?
–মিষ্টি কিনতে হবে না?
–ও আচ্ছা।
–মিষ্টি নিয়ে প্রথমে তোর ফুফুর বাসায় যাবি। ওনাকে খবরটা দিয়ে আসবি।
–আগে বাড়ি না এসে ফুফুর বাড়ি কেনো?
–একটা পুরোনো হিসাব আছে।
–কি?
–আমার মেয়েকে কাঁদিয়েছিলো।
–হুম বুঝেছি,
মামুন মিষ্টি নিয়ে একে একে সব আত্মীয়স্বজন দের দিয়ে আসে।
পুরো বাড়িতে আনন্দের জোয়ার বইছে।
মিষ্টিকে নিয়ে শাশুড়ির আনন্দের শেষ নেই।
মিষ্টির শাশুড়ি মিষ্টিকে আর কেনো কাজ করতে দেয় না। এক কথায় উনি মিষ্টিকে বলে দিয়েছেন যে মনে কর এই ৭ মাস এই বাড়িতে কাজ করা তোর জন্য হারাম। যদি তোর কিছু লাগে, তাহলে আমাকে অথবা মামুনকে বলবি। যদি এই নিয়ে কোনো গাফেলি করিস, আর যদি আমার নাতি বা নাতনীর কিছু হয়। তরে আমি বাড়ি থেইকা বাহির কইরা দিমু।
শাশুড়ির এক ধমকে মিষ্টি একদম চুপসে যায়।
মামুন আর শাশুড়ি সারাক্ষণ মিষ্টির সেবা করে।
রাতে ঘুমানোর সময় মিষ্টি মামুনকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।
–এমন মেয়ে আমি জীবনেও দেখিনি। এখন কান্না করার কি হলো?
–আমার আর সহ্য হচ্ছে না।
–কি? ব্যথা করছে?
–না।
–তাহলে?
–এত খুশি, এত সুখ আমার আর সহ্য হচ্ছে না। আমি কখনো ভাবিনি আমি এতটা সুখি হবো। অপূর্ণ বলতে আমার জীবনে আর কিছুই নেই। সব পেয়ে গেছি আমি। মা এতো ভালো কেনো? তুমি এত ভালো স্বামী কেনো? কেনো আমার ওপর রাগ করো না? কেনো আমাকে বকো না?
–বকলে তো কেঁদে দাও। কেমনে বকবো?
–জানো, স্বামীদের নিয়ে জীবনে অনেকের কাছে অনেক কথা শুনেছি। আজ তাদের ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে। সবার কপালে আমার মামুন জোটে না। মামুন শুধু মিষ্টির জন্যই।
–আচ্ছা তুমিই বলো, এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে কেউ বকতে পারে? কেউ রাগ দেখাতে পারে?
–আমি দেখতে খুব সুন্দর তাইনা?
–হুম, একদম পরির মত।
–আমার বাবুটাও দেখবে খুব কিউট হবে আমার মত। বলোতো ছেলে হবে নাকি মেয়ে?
–আমি চাই মেয়ে হোক।
–কেনো?
–মেয়েরা বাবা ভক্ত হয়, আমার মেয়ে তোমার চেয়ে আমাকে বেশি ভালোবাসবে।
–এহ, ছেলে হবে।
–তুমি মেয়ে চাও না?
–একদম না, মেয়ে হলে সে এসে আমার ভালোবাসায় ভাগ বসাবে। তুমি আর আমার একটুও ভালোবাসবে না। সারাক্ষণ আমার মেয়েকে নিয়েই থাকবে। এর চেয়ে ভালো ছেলে হোক।
–তুমি আসলেই একটা পাগলি।
–হুম ভালো হয়েছে।
–ঘুমাও এখন।
–আজ একটু আদর করোনা।
–এই না, পেটে চাপ লাগবে, বাবু ব্যথা পাবে।
–পাবে না।
–বেশি জানো তুমি, এইবার আর কেনো অসাবধানতা নয়। প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে নিতে হবে।
–বাব্বাহ, তাই বলে আমি আদর পাবো না?
–আচ্ছা এদিকে আসো……………………
.
মামুন আর শাশুড়ি মিষ্টির খুব খেয়াল রাখে।
এই বাড়িতে মিষ্টির কাজ করা বারন।
এমনিতেই রাজ্য ছাড়া রানী ছিলো মিষ্টি।
কিন্তু এখন যেনো রাজ্যজয় করা কোনো এক রানী মিষ্টি।
আদর আপ্যায়নে কোনো কমতি নেই মিষ্টির।
কিছুক্ষণ পরপর মামুন কাজ ফেলে ছুটে আসে মিষ্টিকে দেখতে,
শাশুড়ি মা একটু পর পর এসে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে, কি লাগবে, কি খাবে, সাহায্য করতে হবে কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।
গর্ভাবস্থায় মিষ্টিকে চুল পরিমাণ কষ্ট পেতে দেয়নি কেউ।
এভাবে কেটে যায় ৯টি মাস।
মামুন এখন কাজ করা বন্ধ করে দিছে
২ মাসের ছুটি নিয়ে মামুন এখন সারাক্ষণ মিষ্টির সাথেই থাকে।
উঠতে বসতে মামুন মিষ্টির সাহারা হয়ে সাহায্য করে।
–আচ্ছা মামুন, আমার বাবুটা সুস্থ ভাবে দুনিয়ায় আসবে তো?
–আল্লাহ আল্লাহ করো, সব ঠিক ভাবেই যেন হয়।
–শুনছি বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে অনেকে মারা গেছে। আমিও যদি…….
–চুপ থাকো তো, এত কথা কেনো বলো?
–আমায় মিস করবে?
–তোমাকে আমি এখন পর্যন্ত কখনো মারি নি তাই না?
–হুম,
–কিন্তু এবার মারবো, আর একবার যদি এমন বাজে কথা বলো
–আমায় খুব ভালোবাসো তাই না?
–খুব, আমার নিজের চেয়েও বেশি।
–মা বাবাও আমায় খুব ভালোবাসে তাইনা?
–তারা আমার চেয়েও তোমায় বেশি ভালোবাসে। তোমার কিছু হলে পুরো সংসারটা শ্মশানে পরিণত হবে, বুঝতে পারছো? আমাদের কথা একটু ভেবে দেখো।
–কেনো সবাই আমায় এত ভালোবাসে? আমি কি সত্যিই এর যোগ্য?
–কারন মা বাবা তোমাকে বউ হেসেবে নয়, নিজের মেয়ে হিসেবে দেখে। তো তুমিই বলো, নিজের মেয়েকে কি কেউ ভালোবাসে না? শুধু এটা জেনে রাখো যে মিষ্টি ছাড়া এই সংসারটা শূন্য।
–আমায় বলোতো, এত ভালোবাসা রেখে কি করে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতাম? তোমায় বিয়ে করে আমি ভুল করিনি, তাই না? আমার ভালোবাসা ভুল ছিলো না।
–পাগলি একটা, ঘুমিয়ে পড়ো, অনেক রাত হয়েছে।
–আমার ঘুম আসবে না, তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
–কেনো আসবে না?
–তোমার বাবু আমায় জ্বালাচ্ছে।
–তাই নাকি? বকে দিবো?
–একদম না, সরো এখান থেকে।
–আচ্ছা বকবো না, একটু কথা বলি।
–ও তো বলবে না।
–দেখো আমি কিভাবে বলি।
আস্তে করে মিষ্টির পেটে কান লাগিয়ে মামুন কথা বলা শুরু করে।
বাবু, তোমার আম্মুকে একদম কষ্ট দিবে না। বুঝেছো? যদি কষ্ট দাও তাহলে আব্বু কিন্তু তোমার সাথে একদম কথা বলবে না।
–এই দেখো বলে দিয়েছি, আর কষ্ট দিবে না।
–আমার ব্যথা করতেছে।
–আবার বুঝি বাবুটা জ্বালাচ্ছে? একদম কথা শুনে না, আমার মত হইছে।
–সত্যিই খুব ব্যথা করতেছে।
–কি বলছো? বেশি?
–হুম, মাকে ডাকো।
–একটু ওয়েট করো।
এই মাঝরাতে মামুন দৌড়ে গিয়ে মাকে ডেকে নিয়ে আসে।
–মিষ্টি, কি হয়েছে?
–খুব ব্যথা করছে।
–মামুন, জলদি গিয়ে তোর রহিমা খালাকে ডেকে নিয়ে আয়। বল মিষ্টির ব্যথা উঠছে।
–রহিমা খালা কেনো? ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
–লাগবে না, হাসপাতালে গেলে ওরা সিজার করে ফেলবে। যা বলছি তাই কর।
–ঠিক আছে।
.
একটু পর মামুন রহিমা খালাকে নিয়ে ঘরে আসে।
–মামুন বহিরে গিয়ে বস।(মা)
–মা, ওকে আমার পাশে থাকতে দাও না।(মিষ্টি)
–না না, লাগবে না, পুরুষ মানুষ এখানে থাকার প্রয়োজন নেই।
–ও তো আর পরপুরুষ না, আমার স্বামী। ওকে থাকতে দাও না মা।
–দেখ মা, ও এসব সহ্য করতে পারবে না। আল্লাহ আল্লহ কর, দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
মামুন অসহায়ের মতো বাহিরে গিয়ে দরজার পাশে বসে আছে।
ভেতর থেকে মিষ্টির আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে। মিষ্টির এমন কষ্টে মামুনের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে, আর মনে মনে ভাবে।
মা হয়তো আমায় এজন্যই ভেতরে থাকতে দেয় নি, আমি পারবো না মিষ্টির এই কষ্ট সহ্য করতে।
বাবা একটু পর পর এসে খবর নিয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর মামুন দরজার ওপারে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়।
দুচোখের পানি মুছে মামুন উঠে দাড়ায়।
আর ছটফট করতে থাকে কখন ভেতরে যাবে।
কিছুক্ষণ পর মা দরজা খুলে বাহিরে আসে, সাথে তোয়ালে পেচানো একটা ফুটফুটে বাচ্চা।
–এই নে, তোর মেয়ে।
মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় মামুন ছলছল চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
আস্তে করে মেয়েকে কোলে তুলে নেয়।
–মিষ্টি কেমন আছে?
–ভালো আছে, ভেতরে গিয়ে দেখ। আমি বরং ফ্রেস হয়ে আসি।
–আচ্ছা যাও।
রহিমা খালাও নিজের সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
মামুন মেয়েকে কোলে নিয়ে মিষ্টির পাশে এসে বসে। মিষ্টি এখনো চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
–মিষ্টি…।
মিষ্টি চোখ মেলে তাকিয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিয়ে মামুনকে জিজ্ঞেস করে।
–আল্লাহ তোমার কথা শুনেছেন, আমাদের মেয়ে হয়েছে।
–কেমন আছো তুমি?
–খুব ভালো, আমার মেয়েটাকে একবার দাও না, একটু দেখি।
মামুন আস্তে করে মেয়েকে মিষ্টির পাশে শুইয়ে দেয়।
মিষ্টি আলতো করে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে মিষ্টি ডুকরে কেঁদে ওঠে।
মামুন মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর মিষ্টি পরম যত্নে মেয়েকে আদর করতে থাকে।
–শুনো, আজ থেকে আর কাঁদা যাবে না। তোমাকে দেখে দেখে আমার মেয়েও কান্না শিখে যাবে।
–আমি আর কাঁদবো না, আমার কাঁদার আর কোনো কারন নেই। আজ থেকে আমি পূর্ন।
–দেখো, আমার মেয়েটা একদম তোমার মত হয়েছে। নাকটা কিন্তু আমার মতো।
–এহ, যাওতো, এসেছে নিজের মতো বলতে।
–আচ্ছা থাক, তোমার মতই। দাও ওকে।
–কেনো দিবো?
–আমিতো এখনো আদরই করলাম না।
–লাগবে না, শুধু আমাকেই আদর করবা। আর আমি করবো আমার মেয়েকে।
–দাও না একটু।
–আমি জানতাম এমনই হবে। এসে গেছে আমার ভালোবাসায় ভাগ বসানোর মানুষ। মাও এখন আর আমায় ভালোবাসবে না।
–অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন, এবার আমার মেয়ের পালা।
মামুন মেয়েকে কোলে নিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলে, আদর করে, বাচ্চাদের মত করে হেসে হেসে কি যেনো বলে।
মিষ্টি অপলক দৃষ্টিতে মামুনের দিকে তাকিয়ে আছে।
এই প্রথম মিষ্টি মামুনকে এতটা খুশি দেখছে, এতটা আবেগি হতে দেখছে।
.
একটু পর মিষ্টির শশুড় শাশুড়ি দৌড়ে ঘরে ঢোকে।
–কই কই, দে আমার নাতনিরে। আমার কত সখ ছিলো আমার নাতনিরে কোলে নিয়া খেলমু, আল্লাহ আমার মনের আসা পুরন করছে, জলদি দে।
মামুনের মা বাবা দুজনই বাচ্চার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেছে। মামুন আর মিষ্টি বসে বসে হাসতেছে।
একটু পর মামুনের মা নিজের গলা থেকে চেইনটা খুলে নাতনির গলার পড়িয়ে দেয়।
–মা, এটা কি হলো? আমায় দিবে বলেছিলে।
–এখন থেকে সব কিছু আমার নাতনির, তোর আর কিছু নাই।
–এটা কিন্তু চিটিং হচ্ছে।
–আরো কত চিটিং হবে। সবে তো শুরু, আমার নাতনি এসে গেছে। তোর ভাগের সব ও নিয়ে নিবে।
–তা তো দেখতেই পাচ্ছি, ১ম দিনেই সব উল্টাপাল্টা করে ফেলছে। বাবা, দাদা, দাদু সবাই শুধু ওকে নিয়েই আছে। আমার কথা কেউ বলছে না।
–পাগলি একটা, এত রাগ করলে হয়? তোর জন্য মামুন নিয়ে আসছে কত কিছু।
–আমার জন্য? কই?
–ধুর আম্মু, কি বলে দিচ্ছো? এটা সারপ্রাইজ ছিলো তো।(মামুন)
–কি আনছো আমার জন্য? দাও দাও।
–যাহ, ভাল্লাগেনা। সারপ্রাইজ টাই মাটি করে দিলো।
মামুন ধীরেধীরে মায়ের রুম থেকে মিষ্টির জন্য কিনে আনা গলার চেইন, চুড়ি, কানের জোড়া, সহ আরো কত কিছু নিয়ে আসে।
মিষ্টিতো খুশিতে শেষ।
মা আর বাবা নাতনিকে মিষ্টির পাশে শুইয়ে দিয়ে চলে যায়।
–নাও, আগে আমার মেয়েকে খাইয়ে দাও, আমার মেয়ে যেনো একটুও কান্না না করে। তোমার মতো কারনে অকারনে কান্না আমায় মেয়ে যেনো না শিখে।
–শয়তান, আমি অকারনে কাঁদি?
–তো?
–আর কাঁদবো না, যাও।
–ওকে খাইয়ে দাও।
–হুম।
–তুমি বললে তোমার ভালোবাসায় আমার মেয়ে ভাগ বসাচ্ছে। এখন তোমার মেয়ে যে আমার জিনিসে ভাগ বসাচ্ছে?
–ওই শয়তান, চুপ।
–🤫🤫🤫,
–মুখে কিচ্ছু আটকায় না? একদম শয়তান হয়ে গেছো তুমি।
–আমার কি দোষ?
–সামনে থেকে সরো, তোমার নজর লাগবে।
–অ্যাহ 😮, আমার নজর লাগবে?
–যেভাবে তাকিয়ে আছো, লাগবেই তো।
–আমার নজর ভালো।
–কচু ভালো।
–জলদি করো, ওর সাথে এখনো আমার অনেক কথা বাকি।
–কি কথা শুনিতো।
–তোমাকে কেনো বলবো? আমার মেয়েকে বলবো।
–মেয়ের মাকে বলা যাবে না?
–মেয়ের মাকেও কিছু বলবো।
–বলো না।
–আমার কাছে তোমার আর কিছু চাওয়ার থাকলে চাও, তুমি যা চাইবে তাই দিবো।
–তাই? কেনো?
–কারন তুমি আমায় আমার জীবনের বেস্ট গিফট দিয়েছো। এর বদলায় কিছুতো চাইতেই পারো।
–হুম, চাওয়ার তো অনেক কিছুই আছে।
–বলো, কি চাও।
–তোমায়, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। তোমায়, আমার সুখের সময়। তোমায়, আমার কষ্টের সময়। তোমায়, শেষ বয়সের সাথি হিসেবে। পারবে?
–কেনো পারবো না? ছেড়ে যাওয়ার তো কোনো কারন নেই। কিন্তু পাশে থাকার জন্য হাজারো কারন আছে। কথা দিলাম, যতদিন বেচে থাকবো, তোমার হয়েই থাকবো।
–আর আমায় খুব খুব ভালোবাসতে হবে।
–খুব বাসবো, সামনের বছর আরেকটা গিফট লাগবে আমার।
–তাই? ঠিক আছে। কিন্তু এবার ছেলে।
–সেটা আমি কি করে বলবো? যা হয়।
–ঠিক আছে। আসো, শুয়ে পড়ো, অনেক রাত হয়েছে।
–আমায় ঘুম পাড়িয়ে দাও।
–এখন আমি মেয়েকে সামলাবো? নাকি মেয়ের বাবাকে?
–মেয়ের বাবাকে।
–যাহ, ওদিক ফিরে ঘুমাও, খালি শয়তানি। আমার মেয়েটা বাপের মত শয়তান না হলেই হয়।
–বাপের মত ভালো হবে।
–ঘুমাও।
–ঘুমাচ্ছি।
মিষ্টির একহাত মামুনের মাথায়, আর একহাত দিয়ে মেয়েকে আগলে রেখেছে।
মামুন আর মেয়ে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে, মিষ্টির নিরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে, আর মনে মনে ভাবছে।
এই সংসার আমায় অনেক কিছু দিয়েছে, এত ভালোবাসা, এত মমতা, এত সুখ, জানিনা আমি এর যোগ্য ছিলাম কিনা, কিন্তু আমি সব পেয়েছি। বিনিময়ে ৫ বছর পর এসে এই সংসারে কিছুতো একটা দিতে পেরেছি, আমার জন্য হলেওতো ওদের মুখে একটু হাসি দেখতে পেয়েছি। ওরা আমার কাছে আর কিছুই চায় নি। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী। এমন কপাল নিয়ে সত্যিই কি কেউ দুনিয়ায় আসে? এমন স্বামী কি সত্যিই কারো ভাগ্যে আছে? আজ নিজের প্রতি নিজেরই হিংসে হচ্ছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েকে আগলে ধরে মিষ্টিও ঘুমিয়ে পড়ে।
.
আসা করি তাদের বাকি জীবনটা এভাবে সুখেই কেটে যাবে।
এই কামনা করে গল্পটা এখানেই শেষ করছি…।
.
.
(সমাপ্ত)
.
লেখক #A_Al_Mamum