প্রেমের ঐশ্বর্য পর্ব-১০+১১+১২+১৩

0
200

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১০

“ভাইয়া, তোমার নাম প্রেম ঠিক আছে। কিন্তু সবখানে এভাবে প্রমাণ ফেলে আসা কি ঠিক?”

বলেই শব্দ করে হাসতে চাইতেও পারল না রামিশা। প্রেম রামিশাকে তাড়া করার উদ্দেশ্যে উঠতে চাইতেও মিসেস. পরিণীতা প্রেমের হাত ধরায় সে উঠল না। মায়ের দিকে তাকালো প্রেম। মিসেস. পরিণীতা রামিশা আর জুবায়েরকে ইশারা করল ঘরে যেতে। ওরা আর কিছু না বলে চোখ টিপে চলে গেল। নিজের মায়ের দিকে তাকাতে পারছে না প্রেম। এবার তার ইচ্ছে করছে যে চড়টা সে ঐশ্বর্যকে মারতে বাকি রেখেছিল সেটা এবার মেরেই দিতে।

“প্রেম? আমি যা দেখছি, যা শুনছি সেটা কি সত্যি? তোমার কি কারোর পছন্দ?”

চকিতে তাকালো প্রেম। দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না না মা। তুমি কি ভাবছো ওই ওদের কথায়? তোমরা যা ভাবছো তা নয়। আসলে আমি একটা পাগল মেয়ের পাল্লায় পড়েছিলাম। সি ইজ টোটালি ম্যাড।”

“সেই পাগল মেয়েটা কি আমার ছেলেটাকেও পাগল করে দিচ্ছে?”

“না মা। সেই সুযোগ আমি দেব না।”

মিসেস. পরিণীতা এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন। বড় নিশ্বাস ফেলে এবার প্রেমের উদ্দেশ্যে বললেন,
“আসলে প্রেম, তোমাকে না বলে আমি আর তোমার বাবা একটা কাজ করে ফেলেছি।”

প্রেমের চোখজোড়া সরু হয়ে এলো। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে এই ব্যাপারে। তবুও সে খুঁটিয়ে জানতে চেয়ে বলল,
“মানে? কি এমন কাজ?”

“আসলে, তোমার জন্য একটা মেয়ে দেখে ফেলেছি। তোমাকে অনেকবার বলেছি বিয়ের কথা। তুমি শুধু এখানেই আমাকে বার বার আশাহত করেছো। এবার আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না। আমি এবার আমার সঙ্গে একটা গল্প করার সঙ্গী চাইছি। আর ভালো লাগছে না একা একা।”

মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল প্রেমের। সে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ের জন্য প্রস্তুত না। বিয়ে মানে একটা বড় দায়িত্ব। এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তার সময় প্রয়োজন। সবেমাত্র দেড় বছর হলো সে ব্যবসার হাল ধরেছে। এই সময় বিয়ে তার ভালো লাগছে না। সে তিরিক্ষি হয়ে বলল,
“কিন্তু মা! এই সময় বিয়ে? তুমি খুব ভালো করে জানো আমি এসব বিষয়ে প্রস্তুত নই।”

মিসেস. পরিণীতাও বিষয়টাকে আর ছাড়ার পাত্রী নন। তাই তিনি বলে উঠলেন,
“আমি তোমার এবার কোনো বাহানা শুনতে চাইছি না প্রেম। আমরা কথা বলে নিয়েছি। আর মেয়েটাও সব দিক থেকে পারফেক্ট। কাল তুমি মেয়েটার সাথে মিট করবে এবং জেনে নেবে যা যা জানার। যদি তোমার তাকে ভালো না লাগে কোনো কারণে তাহলে আমাকে সেটা বলবে তারপর আমরা আর বিষয়টা নিয়ে আগাবো না। আমাদের বিবাহবার্ষিকীর উপহার হিসেবে এতটুকু তো করতেই পারো। পারবে না?”

এবার আর মায়ের কথা ফেলার কোনোরকম সুযোগ পেল না প্রেম। একপ্রকার বাধ্য হয়ে বলল,
“ঠিক আছে। আমি মিট করব কাল। নাউ হ্যাপি?”
বলেই উঠে আসে প্রেম। তার মন নেই এসবে। তাই কিছুটা রেগেই নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো প্রেম।

দুপুরের আগ মুহূর্ত। শীত হালকা কমেছে। চারিদিকে হালকা রোদ। একটা রেস্টুরেন্টে বসে আনমনে ফোনে মনোযোগ দিয়ে আছে প্রেম। ড্রেসআপ পুরোটাই ফর্মাল। সেই কালো কোট, সাদা শার্ট, গলায় ঝুলানো লাল টাই আর হাতে চেইনের ঘড়ি এবং পায়ে সু জুতো। ফর্সা নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। চেহারা হালকা বিরক্তির রেশ ফুটে রয়েছে। মুখে তো তার সহজে এমনিই হাসি থাকে আর এখন আরো নেই।

সকাল সকাল কাজের বাহানা দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিল প্রেম। উদ্দেশ্য ছিল তার কোনোভাবেই কোনো মেয়ের সঙ্গে দেখা করবে না। এমনি একটা পাগল মেয়ের চোটে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার উপক্রম তার। এর ওপর অন্য কোনো মেয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার ইচ্ছে নেই তার। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় আর কি! কাজের বাহানা দিয়েও পার পেলো না প্রেম। মিসেস. পরিণীতা গিয়ে টেনে নিয়ে এসেছে অফিস থেকেই। এই রেস্টুরেন্টে প্রেমকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেছেন। মায়ের কথা, আজ যদি মেয়েটাকে ঘুরে চলে যেতে হয় তাহলে তার মা কথা বলাই বন্ধ করে দেবে। তার থেকে দেখা করা ভালো।

“এক্সকিউজ মি! আপনি মি. শেখ আনন প্রেম?”

ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েলি কন্ঠস্বরের মালিককে দেখার জন্য তাকালো প্রেম। একটা অল্পবয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে। চোখেমুখে কিছুটা অস্বস্তি! প্রেমের চেনা চেনা লাগল। সেই মূহুর্তে মনে পড়ল মিসেস. পরিণীতা আসার সময় ওই মেয়েটার ছবি দেখিয়েছিল। এটা সেই মেয়ে। প্রেম গাম্ভীর্যের সাথে জবাব দিলাম,
“ইয়েস। ইউ আর রাইট।”

মেয়েটি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল। প্রেম সরু চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পরেও যখন মেয়েটার মধ্যে কোনো হেলদোল সে দেখলো না তখন আবার মেয়েটার দিকে তাকালো প্রেম। মেয়েটি উশখুশ করছে আর সিটের দিকে তাকাচ্ছে। তা দেখে প্রেম তাড়াহুড়ো করে বলল,
“প্লিজ সিট!”

এবার মেয়েটা গিয়ে বসল। অতঃপর আবারও নিরব প্রেম। মুখে কোনো কথা নেই। তা দেখে ইতস্তত বোধ করল মেয়েটি। সে কি করে আগে কথা বলতে শুরু করবে? তবুও কিছুরা লজ্জা ভেঙে বলে উঠল,
“আপনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য আর আলাদা কথা বলার জন্য আপনার আর আমার পরিবার এখানে পাঠিয়েছে। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে করতে পারেন।”

প্রেম এবার ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠল,
“ওহ হ্যাঁ, আপনার নাম কি? একচুয়ালি বার বার মিস বলে সম্মোধন করতে কেমন জানি লাগবে। সো আপনার নামটা যদি বলতেন।”

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকালো মেয়েটি।
“আপনি আমার নামটাও জানেন না?”

“মা বলেছিল। বাট আই ফরগোট।”

“আমার নাম রোজ। আই মিন রোজ জাহ্নবী।”

প্রেম শুঁকনো মুখে বলে,
“ওহ। নাইস নেম। আপনি কি কিছু অর্ডার করবেন? করলে করতে পারেন।”

রোজ মাথা নাড়িয়ে না করল। প্রেমও আর কিছু বলল না। প্রেম আর কিছু জিজ্ঞেস করছে না দেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলল রোজ। এভাবে চুপচাপ তার ভালো লাগছে না। শুধু আশেপাশে তাকাচ্ছে। প্রেমকে কিছু বলতে না দেখে সে মলিন মুখে বলল,
“মাইন্ড না করলে একটা প্রশ্ন করি? আপনার কি বিয়ের এই সম্মন্ধে আপত্তি আছে কোনো? মানে এটা কি চাপে পড়ে করছেন? আপনার মনে হচ্ছে কোনো আগ্রহ নেই।”

“যদি সত্যি বলি তাহলে হ্যাঁ। আমি কিছুটা মায়ের চাপে পড়ে এখানে আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। বিয়ের করার কোনো প্ল্যানিং এতো তাড়াতাড়ি ছিল না আমার।”
রোজ কিছুটা বেজার হলো তবে মুখ ফুটে কিছুই বলল না।

রেস্টুরেন্টের এক প্রান্তে বসে আছে ঐশ্বর্য। গালে হাত দিয়ে মেনুর কার্ডটা মনোযোগ দিয়ে দেখছে সে। তার সাথে আরো দুজন মেয়ে।
“প্রিন্সেস, এই রেস্টুরেন্টের খাওয়াদাওয়ার মধ্যে কোনো পাও তুমি? আমাদের আসল খাবারই তো নেই। রক্তই কি পাই না।”

তাদের মধ্যে একজনের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালে ঐশ্বর্য। আর বিরক্ত হয়ে বলল,
“কতবার বলব? এখানে আমি তোমাদের প্রিন্সেস নয়। আমি ঐশ্বর্য। এখানে প্রিন্সেস বলে ডাকলে তোমাদের ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে তোমার রক্ত পান করব এবার।”

দুজনেই ঢোক গিলে চুপ রইল। ঐশ্বর্যের বাকিদের মতো রক্তের তৃষ্ণা কেন যেন আসে না। এর কারণ তার কাছে অজানা। সে এবার ওয়েটারকে ডাক দিতে আশেপাশে তাকালো। তখনই সামনে চোখ গেল তার। ঈগলের মতো সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে আঁটকে গেল প্রেম। সেই সূক্ষ্ম নজর কেঁড়ে নিলো একা মেয়েও। সঙ্গে সঙ্গে তার হাত আঘাত করে বসল কাঁচের টেবিলকে। চির ধরে গেল টেবিলে। মাঝখানে ভেঙে গেল সেটা। সকলে চমকে উঠল। তাকালো ঐশ্বর্যের পানে। এমনকি প্রেম নিজেও পেছন ফিরে তাকালো। চমকে বাকরুদ্ধ হলো সে নিজেও। ঐশ্বর্যের সাথে থাকা দুজন চমকে উঠে দাঁড়ালো। মুখ ফস্কে বলে ফেলল,
“প্রি…”

পুরোটা বলতে পারলো না তারা। ঐশ্বর্যের সেই দৃষ্টির কারণে। যেই দৃষ্টি যে কারো প্রাণপাখি বের করে দিতে পারে। ঐশ্বর্য দুজনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে একপা-দুইপা করে এগিয়ে এলো প্রেমের সম্মুখে। তার একেকটা পায়ের ধাপ যেন নাড়িয়ে দিচ্ছে মাটির ভীত। একবার তার দৃষ্টি রোজের ওপর দিয়ে প্রেমের দিকে ঘুরিয়ে তাকিয়ে বেশ শান্ত তবে গমগমে কন্ঠে বলল,
“এই তাহলে আমার ভালোবাসা স্বীকার না করার কারণ? তাই যদি হয় তাহলে এই কারণ উপড়ে ফেলব আমি।”

চলবে….

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১১

আচানক ঐশ্বর্যকে এখানে দেখে বাকরুদ্ধ প্রেম। কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না সে। একবার ঐশ্বর্যের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রোজের দিকে। ঐশ্বর্যকে এতোদিনে যা চিনেছে তাতে প্রেমের বুঝতে সময় লাগেনি যে মেয়েটা বড় রকমের সিনক্রিয়েট করতে বাঁধবে না। তাছাড়া তার চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে একবার চোখ দিয়ে ভস্ম করে দেবে রোজকে। তার সেই আগুন দৃষ্টি সত্যিই ভয়ানক বটে। এতো রাগ নিয়ে চলে এই মেয়ে? রেস্টুরেন্টের সবাই স্তব্ধ। অন্যদিকে রেস্টুরেন্টের মালিক ছুটে এলো তড়িঘড়ি করে। একপ্রকার ঐশ্বর্যের সামনে কিছুটা কড়া কন্ঠে বলল,
“একি ম্যাম! কি করলেন আপনি? আমাদের টেবিল ভেঙে ফেললেন? এমনটা করা উচিত হয়নি। আপনাকে এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রেস্টুরেন্টে কি সিনক্রিয়েট করার জন্য আসেন?”

অগ্নি দৃষ্টি এবার নিক্ষেপ করে ঐশ্বর্য রেস্টুরেন্টের মালিকের দিকে। মাথায় এমনি দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। সারা শরীরের রগ চিনচিন করছে। এবার নিজের দৃষ্টির সাথে নিজের দুহাত বাড়িয়ে তেড়ে আক্রমণ করতে এলো ঐশ্বর্য। রেস্টুরেন্ট ওনারের কোটের কলার চেপে ধরে রাগে গজরাতে গজরাতে বলল,
“এই রেস্টুরেন্টের ওনার! তোর সাহস হয় কি করে আমার সঙ্গে জোর গলায় কথা বলার? তোর রেস্টুরেন্টের টেবিল তো দূরে থাক। আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলার মাশুল তোকে দিতে হবে। এই রেস্টুরেন্ট বন্ধ করিয়ে দেব আমি। ধ্বংস করব তোকে।”

কলার ছেড়ে অন্য হাত দিয়ে ওনারের গলা চেপে ধরল ঐশ্বর্য। নিজের রাগ দমন হচ্ছেনা আজ। সকলে এই অবস্থা দেখে বিস্ময়ে হতভম্ব। কারো হুঁশ বা সাহস কোনোটাই কুলচ্ছে না এগিয়ে আসার জন্য। মেয়েটার রূপ স্নিগ্ধময়ীর ন্যায় হলেও তার এই ধ্বংসাত্মক ক্রোধে সব বিনাস করতে সক্ষম।

আর উপায়ন্তর না পেয়ে দ্রুত এগিয়ে এলো প্রেম। ঐশ্বর্যকে ধরে জোর করে ছাড়িয়ে নিল তাকে। ছাড়িয়ে নেওয়া সময় একটু ধাক্কা লাগল ঐশ্বর্যের। কিছু ছিটকে পড়তে গিয়েও সামলে নিল নিজেকে। সেই মারাত্মক ক্রোধের সাথেই প্রেমের দিকে তাকালো সে। ‘প্রেম’ মানুষটা যেন আস্ত রাগ, ঘৃণা, হিংসা গলিয়ে দেওয়ার ঔষধ। তার চেখ এক মস্ত বড় সাগর যেখানে তাকালে তো ক্রোধ বিলীন হয়ে যায়। উধাও হতে থাকলো ঐশ্বর্যের ক্রোধ। ভয়ানক দৃষ্টি পাল্টে মায়াময়ী হলো তার দৃষ্টি। তখনই হুঁশ ফিরল প্রেমের কন্ঠে,
“আর ইউ টোটালি ম্যাড? ওহ গড, আমি কার পাল্লায় পড়েছি? কি ভাবো তুমি নিজেকে। আর একটু ওই লোকটা মারা যেতো। তোমাকে কি ভাষায় বললে তোমাকে বর্ণনা করা যাবে আমি জানি না। কিন্তু তোমাকে একটা সুস্থ মানুষ বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। জানি না কোন ভাগ্য নিয়ে তোমার সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। প্লিজ, এগুলো পাগলামি বন্ধ করো। আর নিজের মাথার চিকিৎসা করাও।”

ঐশ্বর্য শুধু হা হয়ে শুনল। মাথা নিচু করল সে। এই প্রথম কারো কথায় তার বুকে গিয়ে তীরের মতো বিঁধল। ছারখার হয়ে গেল ভেতরটা। আবার মুখ তুলে চাইলো সে। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলল,
“আপনার মতে আমি পাগল। আমার ভালোবাসা আপনার কাছে শুধুমাত্র একটা পাগলামি। তাহলে কে সুস্থ? কার ভালোবাসা আপনার কাছে আসল ভালোবাসা? আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মেয়েটা?”

রোজের দিকে কটাক্ষ করে বলল ঐশ্বর্য। প্রেম একবার রোজের দিকে তাকালো। মেয়েটা ফ্যালফ্যাল করে ঐশ্বর্যের দিকে চেয়ে রয়েছে। সে নিজেও হয়ত এসব ঘটনায় আঁতকে উঠেছে। প্রেম ভাবছে অন্য কথা। যদি রোজের কথা বলে তাহলে কি ঐশ্বর্য ফিরে যাবে? তাহলে কি ঐশ্বর্য নিজের এই পাগলামি থামাবে? এসব ভাবনায় মত্ত হতে হতে ঐশ্বর্য আবার উত্তর চেয়ে বসল।
“কি হলো বলুন? আমি জানতে চাই। আপনার পছন্দ কি ওই মেয়ে? আর এটাও বলুন যে ওই মেয়ের পছন্দ যদি আপনি হন তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। কারণ ও আপনাকে পছন্দ করেছে। আপনি ওকে না।”

প্রেম আরো কিছুক্ষণ ভাবলো। এমনিতে মায়ের পছন্দও যখন রোজ। তার ওপর এখন রোজকে বাঁচাতে হলেও এই কথাটা বলা প্রয়োজন। ঐশ্বর্য মেয়েটা যে নিজের সীমা অতিক্রম করে রোজের ক্ষতি করে ফেলতে পারে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই আর বিলম্ব না করেই প্রেম বলে উঠল,
“হ্যাঁ। আমার পছন্দ রোজ। ওর সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ের কথা চলছে। ফাইনাল কথা খুব দ্রুত হয়েও যাবে।”

ঐশ্বর্য কিছু বলল না। কিছুক্ষণ চুপ করে পলক না ফেলে প্রেমের দিকে এক নয়নে চেয়ে রইল। অতঃপর বলে উঠল,
“ওকে। ইনায়া আর সানিয়া চলো। আমি বাহিরে যাচ্ছি। অ্যান্ড ইউ…”
রেস্টুরেন্টের ওনারের দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলল ঐশ্বর্য।
“আপনার ক্যাশ কাউন্টারে আপনার ক্ষতিপূরণ দিয়ে যাচ্ছি। নেক্সট টাইম আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস করবেন না। ঐশ্বর্য সিনহা আমার নাম।”

ঝড়ের গতিতে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেল ঐশ্বর্য। দেখা পাওয়া গেল না তার। তার জন্য হম্বিতম্বি করে পিছু পিছু সানিয়া আর ইনায়াও ছুটল। প্রিন্সেস ডাকতে চেয়ে ডাকলো না তারা। এবার সত্যি সত্যি ঘাড় থেকে মাথা নামিয়ে দেবে ঐশ্বর্য।

প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে রেস্টুরেন্টের বাহিরে ঐশ্বর্য। মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টের দরজার দিকে তাকাচ্ছে সে। পার্কিং প্লেসে নিজের গাড়িতে ভর দিয়ে একটু পর পর তার হাতে থাকা কাঁচের বোতলের দিকে তাকাচ্ছে। অন্যদিকে সানিয়া আর ইনায়া পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে দুজন দুজনের হাত ধরে ঐশ্বর্যের দিকে ভীরু চোখে তাকাচ্ছে। ঐশ্বর্যের মতলব তারা ধরতে পারছে না। কি করতে চাইছে সে আবার? তারা ভয়ে ঐশ্বর্যকে প্রশ্নও করতে পারছে না।

রেস্টুরেন্টের দরজা দিয়ে প্রেম আর রোজ বের হলো। যা নজর এড়ালো না ঐশ্বর্যের। উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ালো সে। কাঁচের বোতল ঘুরাতে ঘুরাতে এসে ইনায়া আর সানিয়ার সামনে দাঁড়াল। ভয়ে একাকার তারা দুজনেই। ঐশ্বর্যের দৃষ্টি তাদের কাছে একটা কন্ট্রোললেস গুলির মতো। যা যেকোনো সময় ছুটে বেরিয়ে আসলে তাদের জান বেরিয়ে যাবে। ঐশ্বর্য কাঁচের বোতল তাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“যার বেশি সাহস আছে সে এটা নাও।”

ইনায়া আর সানিয়া দুজন দুজনের দিকে তাকাতাকি করে কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাতে বোতলটা ধরল ইনায়া। অতঃপর ঐশ্বর্যের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই ঐশ্বর্য বলল,
“এখন এই কাঁচের বোতল আমার মাথায় সজোরে আঘাত করো।”

ভয়ে তৎক্ষনাৎ আঁতকে উঠল ওরা দুজন। চোখ কপালে উঠে গেল একদম। সানিয়া নিচু কন্ঠে বলল,
“কি বলছো প্রিন্সেস? আমরা এমন কেন করব? এটা করতে পারব না!”

“ইনায়া, তুমি ধরেছো বোতলটা। তার মানে তোমার সাহস আছে। হিট মি!”

“প্রিন্সেস…!”

ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে ওঠে এবার।
“হিট মি ইনায়া। ডু ওর ডাই। হয় তোমাকে করতে হবে নয়ত মরতে হবে। মারো আমাকে।”

ঐশ্বর্য চেঁচিয়ে বলতেই কেঁপে উঠে ভয়ের চোটে মাথায় কাঁচের বোতল জোরেশোরে মেরে দেয় ইনায়া। কাঁচ ভাঙার শব্দ হয়। আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে কাঁচ। দূরে ছিটকে যায় ঐশ্বর্য। মাথা দিয়ে রক্তের ফিনকি বেরিয়ে পড়ে। গাল বেয়ে টপটপ করে নিচে পড়ে একেকটা তাজা রক্তের ফোঁটা। ধপ করে বসে পড়ল সে। অন্যদিকে ভয়ে জান যায় অবস্থা সানিয়া আর ইনায়ার। তারা ডাকতে থাকে ঐশ্বর্যকে। ঐশ্বর্য ঘোলা চোখে দেখে প্রেমকে আসতে। হঠাৎ প্রেম ছুটেই আসছে। তা দেখে এই অবস্থাতেও মুচকি হাসি বেরিয়েই আসে ঐশ্বর্যের। এটাই তো চেয়েছিল সে।

রোজকে নিয়ে পার্কিং প্লেসে গাড়ির জন্য আসছিল প্রেম। ফোনে কথা বলছিল অফিসের লোকের সাথে। তখনি হঠাৎ তার চোখ যায় ঐশ্বর্যের দিকে। অবস্থা বড্ড খারাপ। মেয়েটা পড়ে যাচ্ছে তার সামনে। মাথা আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তা দেখে হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায় তার। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। আর কোনো কিছু না ভেবে ছুট লাগায় ঐশ্বর্যের দিকে। অন্য কেউ থাকতে তার কেন এতো অস্থিরতা সে জানে না! হয়ত সে ঐশ্বর্যকে চেনে বলে! আর একটা মেয়েকে এই অবস্থায় ফেলে চলে যাওয়া তো কোনো মানুষের কাম্য নয়। তার তো একদমই নয়।

ঐশ্বর্যের কাছে এসে হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়ে প্রেম। তার মাথা চেপে ধরে তুলে বলে,
“এই মেয়ে রাগ দেখাতে দেখাতে এই কি হলো তোমার?”

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১২

“তোমাদের কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? মেয়েটা এভাবে আঘাত পেলো কি করে? দেখতে পেলে না তোমরা? তোমরা তো মনে হয় ওর সাথেই এসেছিলে।”

ইনায়া আর সানিয়ার উদ্দেশ্যে ধমকে বলে উঠল প্রেম। দুজন মাথা নিচু করে থাকা অবস্থায় কেঁপে উঠল। কাজটা তো তাদেরই। প্রিন্সেস এর যা জেদ! এমনভাবে কথাগুলো বলছিল যেন তাকে না মারলে সে তাদের মেরে ফেলবে। একথা প্রেমকে কি করে বোঝাবে তারা? সানিয়া মিনমিন করে বলে,
“আসলে আপনি তো জানেন যে প্রি… থুক্কু ঐশ্বর্য কেমন পাগলাটে ধরনের মেয়ে। কখন কি করে বসে কিছুই টের পাওয়া যায় না। আমরাও বুঝতে পারিনি। আমরা সামলে নিতে পারব ওকে। সমস্যা নেই আমরা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি ঐশ্বর্যকে।”

বলেই ইনায়া আর সানিয়া ঐশ্বর্যকে ধরতে এগিয়ে আসতেই প্রেম এবার রক্তচক্ষু নিয়ে বলল,
“বাড়ি? বাড়িতে নিয়ে গেলে কি করে হবে? পাগল নাকি তোমরা? ওর মাথা থেকে ব্লিডিং হচ্ছে। আর এসময় বাড়ি নয় হসপিটালে নিয়ে যাওয়া উচিত। উফফ… আমি কাদেরই বা বোঝাচ্ছি। যেমন মেয়ে তেমন তাদের বান্ধবী। কিছুই বোঝেনা। ডিজগাস্টিং!”

“আমরা ওকে হস…”

“থাক। আমি ওকে হসপিটাল নিয়ে যাব। তাছাড়া যেদিন থেকে ওর সাথে দেখা হয়েছে সেদিন থেকে তো ওকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার সম্পর্কই আমার! যখনই দেখা হয় ওর কিছু না কিছু হবেই। ওহ গড… প্লিজ সেভ মি।”

কথাটা বলে আর একটুও দেরি করল না প্রেম। তুলে নিল পাঁজকোলে ঐশ্বর্যকে। দ্রুত গাড়ির সিটে নিয়ে গিয়ে বসাতেই পিছু পিছু ছুটে এলো রোজ। প্রেম রোজকে লক্ষ্য করতেই বেশ ভাবুক হয়ে গেল। এতক্ষণ এই মেয়েটার কথা মাথাতেও ছিল না। প্রেম কিছু বলতে উদ্যত হবার আগেই রোজ নিচু আওয়াজে ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে বলল…
“আপনি কিছু মনে না করলে আমি আপনাদের সাথে যেতে পারি?”

“আপনি…”

“হ্যাঁ। মানা করবেন না। আমারও ওর অবস্থা দেখে ভালো লাগছে না। তাই বলছিলাম হেল্প করাটা তো খারাপ নয়। আমি জানি ও আমার সা…”

পুরো কথাটা শেষ করতে দিল না রোজকে প্রেম। তার আগেই সে গাড়িতে বসে বলল,
“ওকে। ইউ হ্যাভ নো টাইম। সো প্লিজ এতো কথা না বলে ঐশ্বর্যকে ধরে রাখুন। আর ওর মাথায় আমার রুমালটা চেপে ধরে রাখুন। অলরেডি অনেক ব্লিডিং হয়ে গেছে।”

প্রেমের বাড়িয়ে দেওয়া রুমালটা নিয়ে ঐশ্বর্যের কাছে বসল রোজ। তাকে বেশ মনোযোগের সহিত একবার দেখে তার মাথায় রুমাল চেপে ধরল সে। প্রেম হাই স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিল। অন্যদিকে বেক্কল হয়ে ইনায়া আর সানিয়া দাঁড়িয়ে রইল। ওরা এখনো শকে রয়েছে ঐশ্বর্যকে মেরে! সুস্থ হয়ে ঐশ্বর্য আবার ওদের মারবে না তো? সেই আশঙ্কায় ওরা!

ইমারজেন্সি রুমে আছে ঐশ্বর্য। মুখে অক্সিজেন মাস্ক। নার্সরা দৌড়াদৌড়ি করছে। প্রেম আর রোজ দাঁড়িয়ে আছে। প্রেম মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। মুখটা ভার। চোখেমুখে অস্থিরতা স্পষ্ট। ডক্টর দ্রুত ঐশ্বর্যের সাথে হার্ট রেট মনিটর কানেক্ট করার চেষ্টা করল। সঙ্গে সঙ্গে মনিটরে ব্ল্যাঙ্ক দেখা গেল পুরোটাই। মানে মানুষটা মৃত। সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠল প্রেম। ধড়ফড়িয়ে ডক্টরের দিকে আশ্চর্য হয়ে তাকালো। ডক্টর নিজেও হতবাক। একটু আগেই তো পেশেন্টের পার্লস চলছিল। তড়িঘড়ি করে আবারও পার্লস চেক করল ডক্টর। তারপর বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে গিয়ে বললেন,
“নার্স! মেশিনটা কি নষ্ট হয়ে গিয়েছে? পেশেন্টের পার্লস এখনো চলছে। আর উনি যে নিশ্বাস নিচ্ছেন সেটাও বোঝা যাচ্ছে। মেশিনটা চেক করো।”

নার্স দেরি না করে মেশিনটাকে চেক করতে লাগল। আর ডক্টর বলল,
“আপনারা বাহিরে যান। পেশেন্টের অনেকটা লেগেছে ব্লিডিং এখনো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাজ করতে দিন।”

প্রেম কিছু না বলে বেরিয়ে গেল। পিছু পিছু বের হলো রোজ। তার মুখেও চিন্তার রেশ। সে একবার প্রেমের দিকে তাকাচ্ছে একবার ইমারজেন্সি রুমের দিকে। তবে সে কিছু বলল না। এখন কিছু বলে লাভও নেই।

বেশ কিছুক্ষণ পর ডক্টর বের হলো। তড়িঘড়ি করে চলল সামনে দিকে। উনার হাতে ছিল রক্তের স্যাম্পল! যতদূর সম্ভব ঐশ্বর্যের রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করতে নিয়ে গেলেন উনি। প্রেম কিছু জিজ্ঞেস করতেও পারল না। এসব নজর এড়ালো না রোজের। সে বলল,
“আপনি মনে খুব টেনশনে আছেন। আমি পাশের দোকান থেকে পানি নিয়ে আসছি। পানি খেলে ভালো লাগবে।”

“লাগবেনা। আই এম অলরাইট।”

রোজ তবুও থামল না। সেও একপ্রকার তাড়াহুড়ো করেই ছুটল। প্রেম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল সেদিকে। এই মেয়েটাও কি অদ্ভুত!

প্রায় ১ ঘণ্টা হয়ে গেল। ডক্টর আর একবারও এদিক এলো না ঐশ্বর্যের চিকিৎসা করতে। রোজ আধঘন্টা আগে এসেছে। যদিও বিষয়টা একটু রহস্যময় যে পানির বোতল কিনতে আধঘন্টা লাগে? তবুও কিছু বলেনি প্রেম। সে বিড়বিড় করে বলল,
“জানি না হসপিটালের এ কেমন সিস্টেম! ডক্টর কি ঘুমিয়ে গেলেন ওইদিকে গিয়ে? আশ্চর্য!”

প্রেমের রাগ হয় এবার। হাঁটা দেয় রিসেপশনের দিকে। কয়েক ধাপ এগোতেই রোজ পিছু ডাক দেয়।
“শুনুন, ওই মেয়েটার জ্ঞান ফিরেছে। ও তো তাকিয়েছে।”

হতভম্ব হয়ে পিছু ফিরে তাকায় প্রেম। ডক্টর এলো না। চিকিৎসা হলো না। অথচ ঐশ্বর্যের সেন্স চলে এলো? পিছন ফিরে ইমারজেন্সি রুমের দিকে আসে প্রেম। দরজার কাঁচ দিয়ে দৃঢ় নজরে তাকায়। ঐশ্বর্য পিটপিট করে চোখ মেলছে। তার তীক্ষ্ণ চাহনি হয়ে এসেছে দুর্বল। সঙ্গে সঙ্গে নার্স একটা ইনজেকশন পুশ করতেই আবার চোখ বন্ধ করে সে। অতঃপর বেরিয়ে আসে সেখান থেকে। নার্স নিজেই আশ্চর্য হয়ে বলে,
“ইটস অ্যা মিরাকল! এমন ঘটনা ঘটেনি কখনো আমাদের হসপিটালে। যে কোনো পেশেন্টের এতো ব্লিডিং এর পরেও তার জ্ঞান কোনো চিকিৎসা বা ব্লাড দেওয়ার আগেই ফিরল। এমনটা কি করে হয় বুঝতে পারছি। পেশেন্ট বিরবির করছিল। তাই ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি। অন্যদিকে স্যার ১ ঘন্টা হয়ে গেল আসছেন না। আমরা তো ভেবেছিলাম উনাকে বাঁচাতে পারব না। আর অন্যদিকে হার্ট রেট মনিটরও সাপোর্ট করছিল না। বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে। আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। আমি আসছি স্যারকে ডেকে।”

প্রেম বাকহারা হয়ে দরজার কাঁচের মাধ্যমে ঐশ্বর্যের চেহারার দিকে। মাথায় আবারও মোটা করে ব্যান্ডেজ করা। অক্সিজেন মাস্কও খুলে দেওয়া হয়েছে। অলরেডি একটা আকাশি রঙের শার্টে আবৃত করা হয়েছে তাকে। ফর্সা এবং টান টান সুন্দর মুখটাতে মলিনতা ছেয়ে রয়েছে। এমনটা কখনো দেখেনি প্রেম। ঐশ্বর্যকে শুধু হাসতে বা রাগতেই দেখেছে। এমন মলিনতা যেন ঐশ্বর্যের জন্য বেমানান!

ইনায়া আর সানিয়া এসেছে আধঘন্টা পর। অন্যদিকে প্রেমকে অফিস থেকে ডাকছে। আর্জেন্ট কাজ। প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে। এবার বিগ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে ডিল হবে। যেখানে ডিল করতে না পারলে তাদের পথেও বসতে হতে পারে। ব্যাপারটা খুব রিস্কই।

ঐশ্বর্যের রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল প্রেম। আবার কল এলো। রিং বাজলো। প্রেম বিরক্তি নিয়ে কেটে দিল কল। তা দেখে সানিয়া বলল,
“বলছিলাম, আপনাকে যখন অফিস থেকে বার বার কল করছে আপনারা যান। আমরা এদিকটা সামলে নেব। তাছাড়া কুই… সরি আই মিন ঐশ্বর্যের মা-বাবা আসছে। কল করেছিলাম। তো আপনি চিন্তা ছাড়াই যেতে পারেন।”

প্রেম নির্লিপ্ত। সে যেতেও চাইছে না আবার থাকতেও চাইছে না। এক দোটানায় ক্লান্ত সে। নার্স পারমিশন দিয়েছে একজনকে ঐশ্বর্যের রুমে গিয়ে দেখে আসার জন্য। অন্যদিকে খবর পাওয়া গেছে যেই ডক্টর ঐশ্বর্যের ট্রিটমেন্টের দায়িত্বে ছিল সেই ডক্টর ল্যাবের দরজা ওপাশ থেকে লক করে রেখেছেন। আর উনার কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছেনা। সবাই ব্যস্ত সেদিকে।

প্রেম আর এতোসব না ভেবে ঐশ্বর্যের কেবিনে ঢুকে গেল। পা টিপে টিপে গিয়ে ঐশ্বর্যের কাছে দাঁড়াল সে। মেয়েটার মুখ দেখে একটুখানি হাসিও পেল প্রেমের। কে বলবে? মেয়েটা সজ্ঞানে থাকলে হুমকির উপর হুমকি দেয়? বেডের পাশ ঘেঁষে দাঁড়াতেই অজান্তেই ঐশ্বর্যের হাতের সাথে প্রেমের হাতের ছোঁয়া লাগল। ঠান্ডা ঐশ্বর্যের স্পর্শ সত্যিই অদ্ভুত! গা শিউরে ওঠে! প্রেম তৎক্ষনাৎ সরে আসতে চাইলে আচমকা ঐশ্বর্য নিজের হাত দিয়ে প্রেমের হাত আগলে নেয়। তার হাতে আবদ্ধ করে ঐশ্বর্যের হাত। এই স্পর্শ যেন কোনো ভিন্ন অনুভূতি দিয়ে তৈরি! প্রেম ইতস্ততবোধ করে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজের হাত। তবে ঐশ্বর্য আবারও আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে। প্রেম চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এই মূহুর্তে সে অনুভূতিশূন্য! না পারছে সরতে না পারছে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে।

তখনি রুমে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ল ইনায়া আর সানিয়া। প্রেম আবার ছাড়িয়ে দূরে সরে এসে গম্ভীর মুখে তাকালো। থেমে থেমে বলল,
“আমি অফিস যাচ্ছি। আশা করছি তোমরা ওর খেয়াল রাখবে। ওর মা-বাবা আসলে ভালো হতো। একটু ভালো করে বুঝিয়ে বলতাম যে মেয়েটাকে স্বাভাবিক বানাতে! গড নোজ আর কি কি সহ্য করতে হবে।”

প্রেম এবার বেরিয়ে আসে। যাওয়ার সময় দেখতে পায় রোজকে। নিরীহ তার দৃষ্টি। রোজ বলল,
“আপনি কি অফিস যাচ্ছেন?”

প্রেম মাথা নাড়লো। রোজ বলল,
“আপনি চলে যান। আমি বাড়ি চলে যাব। এখান থেকে আমার বাড়ি অনেকটা কাছে। আমি ওই মেয়েটাকে একবার দেখে চলে যাব।”

“আর ইউ সিউর?”

রোজ হালকা হেঁসে মাথা নাড়ায়। প্রেম চলে যায়। রোজ কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে আসে। ইনায়া আর সানিয়া কি যেন কথা বলছিল রোজকে দেখেই তারা থেমে যায়। রোজ জিজ্ঞেস করে,
“ও কেমন আছে এখন?”

“ভালো। বাট ঘুমোচ্ছে।”

উত্তরে ইনায়া বলে। রোজ ধীর পায়ে এগিয়ে এসে বসে পড়ে ঐশ্বর্যের পাশে।
“ইটস অ্যা মিরাকল ইউ নো? কোনো ট্রিটমেন্ট বেঁচে গেছে।”

কথা বলতে বলতে ঐশ্বর্যের বাম হাতের ওপর থেকে একটু একটু করে কাপড় সরিয়ে দেয় রোজ। শেষ পর্যন্ত মিলে দেখা আকাঙ্ক্ষিত জিনিসটির। জ্বলজ্বল করে ওঠে ঐশ্বর্যের হাতের সেই অজানা চিহ্ন। অন্যদিকে কারো চিৎকার ভেসে আসে,
“আমাদের ডক্টর আরহাম মারা গেছেন। উনার লাশ পাওয়া গেছে ল্যাবে।”

তা কানে আসতেই চমকে ওঠে ইনায়া আর সানিয়া। চমকায় না রোজ। চোখজোড়া লাল হয়ে আসে তার। জ্বলজ্বল করতে শুরু করে। মুখের কোণে ফুটে ওঠে এক রহস্যময় হাসি!

চলবে…

#প্রেমের_ঐশ্বর্য
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১৩

পুরো দুইদিন কেটে গেছে। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ত সব রুটিনে নিজেকে আবার আগের মতো করে নিয়েছে প্রেম। তার একটাই কাজ! অফিস যাওয়া আর কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। তবে এবার কাজের চাপটা বেশিই। প্রেমের বাবা এবার নিজের সব দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে সব দায়িত্ব ছেলের ওপরে দিয়েছেন। এবার কোটি কোটি টাকা ইনভেস্ট করে প্রজেক্ট সহ প্রেজেন্টেশন করা হয়েছে। নামি-দামি ইন্ডাস্ট্রির সাথে ডিল ফাইনাল করতে হবে। একবার ডিল ক্যান্সেল করলে সব শেষ। তাই নিজেকে সমান ভাবে কাজে সময় দিচ্ছে প্রেম। কাজের ফাঁকে গতকাল গিয়েছিল হসপিটালে। ঐশ্বর্য মেয়েটার একটু দেখা পেতে। এতো বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে। না দেখলে মন থেকে খচখচানি যায় না। তবে দুর্ভাগ্যবশত সে দেখা পায়নি ঐশ্বর্যের। তারপর থেকে কেমন জানি হতাশা কাজ করছে প্রেমের মাঝে। তবে কাজে সেটা ভুলতে বসেছে। আর মনে এই শান্তনা দিয়েছে যে, মেয়েটা হয়ত নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছে। ওর মা-বাবা নিয়ে গিয়েছে। আর দেখা হবার কোনো সম্ভবনা নেই।

চারিদিকে পিনপিনে নিরবতা। বড় রাস্তায় শাঁই শাঁই করে মাঝেমধ্যে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলেছে। শীতটা বেশ ভালোই পড়েছে এবার। রাতে কুয়াশায় এপাশ ওপাশ দেখা অনেকটা মুশকিল। রাস্তায় একপাশে বড় বাগানের সরু রাস্তা বেরিয়ে পাশাপাশি দুটো বড় বড় বিল্ডিং। বিল্ডিং এর ওপরে বড় বড় অক্ষরে লিখা ‘The Sheikh Industry’। নামটাতে লাল লাইট জ্বলছে। সামনের বিল্ডিং এর গেট থেকে বের হতে দেখা হলো এক কালো কোট পরিহিত ব্যক্তিকে। ঘাড় এদিক ওদিক বাঁকিয়ে সোজা হাঁটতে থাকল সে। সামনে দাঁড় করানো আছে তার গাড়ি। যেতে যেতে নিজের হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকালো প্রেম। ব্যক্তিটি প্রেম। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“এট লাস্ট এতো রাতে কাজ শেষ হলো। আই হোপ এতো পরিশ্রমের ফল সুইট হবে। সিনহা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে কেউ না করতে পারবে না।”

গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়াল সে। পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে গাড়ির লক খুলতে চাইতেই প্রেমের খেয়ালে এলো লক করা নেই গাড়িতে। সেই সাথে গাড়ির ভেতর থেকে গানের আওয়াজও আসছে। পরক্ষণেই সন্দেহ হলো প্রেমের। সাথে সাথে সন্দিহান নজরে তাকিয়ে দ্রুত গাড়ির দরজা খুলল সে।

চক্ষুদ্বয় কপালে উঠল এবার প্রেমের। চরম বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে বলল,
“তুমি? এখানে? আমার গাড়িতে? কি করে?”

গাড়িতে অনবরত গান বদলিয়ে চলছিল ঐশ্বর্য। চোখেমুখে ছিল বিষাদ। তবে চেহারার পরিবর্তন হয়েছে। চোখমুখ বসে গিয়েছিল একেবারে মেয়েটার। তা বদলে আবার সেই উজ্জ্বলতা ফিরেছে তা চোখজোড়া ঝলসে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সেই আর্কষণ আছে ঐশ্বর্যের চোখে যখন যার দিকে তার চাহনি থাকবে তখনই তার মাঝে কম্পন সৃষ্টি হতে বাধ্য। তবে প্রেমের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। ও কোনোদিন ঐশ্বর্যের চোখের দিকে চোখ রেখে তাকায় নি। কোনোদিন ঐশ্বর্যের সেই চাহনির স্বীকার হয়নি। এবার ব্যাপারটা উল্টো। ঐশ্বর্য প্রেমের চাহনির স্বীকার হয়েছে। নিজের কঠিনতম মনকে ছিন্নভিন্ন করে তৈরি করেছে নতুন এক মনের। ভ্যাম্পায়ার প্রিন্সেসের মনে উদ্ভব হয়েছে ভালোবাসার। কিন্তু প্রেম? তার মনে কি কোনোদিন ভালোবাসার উদ্ভব হবে ঐশ্বর্যের জন্য?

বিরক্তি প্রেমের কন্ঠে পরক্ষণেই কেটে যায়। ঐশ্বর্যের চোখেমুখে ফুটে ওঠে উৎফুল্ল। অতঃপর নির্বিঘ্নে উত্তর দেয়,
“ইটস অ্যা ম্যাজিক মি. আনস্মাইলিং! এসব আপনার মাথায় ঢুকবে না। আপনার মাথায় তো কাজের চিন্তা গুঁজে রাখা।”

ঐশ্বর্যের এমন উত্তর শুনে আরো অস্থির প্রেম। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“তুমি এখানে কেন? তাও এতো রাতে। তোমার তো এখন নিজের বাড়িতে রেস্ট নেওয়া উচিত। এতো রাতে করছোটা কি তুমি বাড়ির বাহিরে? এমনিতে এর আগেও বলেছিলাম মেয়েদের এতো রাতে বাহিরে থাকা সেফ নয়। আর এটা লোকে ভালো চোখে দেখে না।”

“লোকের কথা বাদ দিন। কে কি বলল, কে কি করল আই ডোন্ট কেয়ার। বাঙালি জাতির সো কলড স্বভাবে এতো পাত্তা দিতে নেই।”

“সে না হয় বুঝলাম। বাট তুমি এতো রাতে আমার অফিসের সামনে করছো টা কি?”

এবার প্রেমের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকালো ঐশ্বর্য। প্রেমের দৃষ্টি গেল ঐশ্বর্যের কপালে। এখনো বেশ মোটাসোটা ব্যান্ডেজ ওর মাথায় পেঁচিয়ে রাখা। যা চুলের ওপর দিয়ে বাঁধা। এলোমেলো কোঁকড়ানো ঢেউ খেলানো চুল এদিক ওদিক নেতিয়ে পড়ে আছে। প্রেমকে চমকে দিয়ে ঐশ্বর্য এক ঘোর লাগানো কন্ঠে ঐশ্বর্য বলে উঠল,
“ধরে নিন, আমি এক অসহায় তৃষ্ণার্ত পথিক। যে নিজের তৃষ্ণা মেটাতে এখানে ছুটে এসেছে। সেই তৃষ্ণা আর সেই ছটফটে মন শুধু আপনাকে দেখে শান্ত হবে।”

প্রেম কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল। তারপর একটু নিচু হয়ে গাড়ির ভেতরে হেলতেই হকচকিয়ে উঠল ঐশ্বর্য। তৎক্ষনাৎ প্রেম হাত বাড়িয়ে একটা পানির বোতল নিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে উৎকন্ঠা হয়ে বলল,
“এই নাও পানি। তৃষ্ণার জন্য এতোদূর আসতে হয়েছে কেন? তোমার বাসায় পানি নেই? সাপ্লাই বন্ধ নাকি? বাহিরে থেকে কিনে নিতে পারতে। তোমাকে দেখে তো বড়লোকের বিগড়ে যাওয়া মেয়ে বলেই মনে হয়। পানির জন্য এতোদূর ছুটে আসতে হলো? টেক দিস।”

চিকন ও সুগঠিত ওষ্ঠদ্বয় আপনাআপনি হা হয়ে গেল ঐশ্বর্যের। থম মেরে বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ঠোঁট উল্টে নিজের মাথা চাপড়ে ওপর দিকে তাকিয়ে বলল,
“এ আমি কার প্রেমে পড়েছি! এতো প্রেম নয় আস্ত একটা নিরামিষাশী!”

প্রেম ভ্রু কুঁচকাতেই ঐশ্বর্য ঝাঁঝালো গলায় বলে,
“আমি আপনার কথা বলছিলাম মি. অপ্রেম!”

প্রেমের বুকের হাত রেখে একটু ধাক্কা দিতেই সর যায় প্রেম। গাড়ি থেকে বেরিয়ে চোখ ছোট করে তাকায় ঐশ্বর্য। এবার তার বড়সড় আফসোস হচ্ছে। এ কার পাল্লায় পড়েছে সে?

প্রেম এবার ভুলটা বুঝে গলা খাঁকারি দেয়। গম্ভীর হয়ে বলে,
“তুমি আমার গাড়ির লক খুললে কি করে? আমার গাড়িতে তো লক ছিল!”

ঐশ্বর্য ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি দেয়। সামনের চুল ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে একটু ভাব নিয়ে বলে,
“এটা আমার কাছে জাস্ট ৫ সেকেন্ডের ব্যাপার। একটু শক্তি প্রয়োগ করলেই চলে।”

“সিরিয়াসলি? এটা একটা পুরুষের শক্তি প্রয়োগ করলেও খুলবে না। আর তোমার মতো একটা শুঁকনো পাতার মতো মেয়ে গাড়ির দরজা খুলবে। আমার গাড়ির চাবিও তো আমার কাছে দরজা খুললে কি করে বলো তো?”

“নাথিং ইজ ইম্পসিবল ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। শুধুমাত্র আপনার প্রেমে পড়া ছাড়া।”

প্রেম এবার শান্ত চোখে তাকিয়ে ঐশ্বর্যের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লো।
“হয়েছে বকবক? বাড়ি আজকে যাবে নাকি এখানেই থাকার প্ল্যানিং করে এসেছো?”

“যদি বলি আপনার সঙ্গে প্রতি মূহুর্তে থাকার প্ল্যানিং করে এসেছি। তখন কি আপনার সঙ্গে থাকতে দেবেন?”

প্রেম দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। সে ভুল ছিল। ভেবেছিল ঐশ্বর্য সব ভুলে গেছে কিন্তু না। তার পাগলামি বাড়ছে দিন যাচ্ছে। সে নিরাশ হয়ে বলল,
“ঐশ্বর্য, তুমি হয়ত ভুলে গেছো যে তুমি বলেছিলে রোজ যদি আমার পছন্দ হয় তুমি দূরে সরে যাবে। এসব বন্ধ করবে আর নিজে নিজের মতো থাকবে। তুমি ভুলে গেছো?”

ঐশ্বর্য ইশারায় থামায় প্রেমকে। প্রেমের চারিপাশে ঘুরতে ঘুরতে নিজের আঙ্গুল ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,
“ওয়েট ওয়েট! আমি এটা কখন বললাম যে আমি দূরে সরে যাব? ভুলে তো আপনি গেছেন। আমি বলেছিলাম আমি ওই মেয়ের কোনো ক্ষতি করব না। ব্যাস… এতটুকুই তো বলেছিলাম। আর আমি তো নিজের মতোই আছি। কারণ আমি আপনার মাঝে নতুন আমিকে খুঁজে পেয়েছি।”

প্রেম আর কিছু বলতে পারে না। গলা শুঁকিয়ে এসেছে তার। প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায় সে। হুড়মুড়িয়ে বলে ওঠে,
“বাড়িতে যাবেনা তুমি? আমার গাড়িতে বসো। আমি বাড়িতে দিয়ে নিজের বাড়ি চলে যাব। ইটস অলরেডি লেট। ১১ টা বাজছে।”

“চলে যাব। শুধু এটা বলুন যে আপনি রোজকে পছন্দ করেননি। ওর সঙ্গে আপনার বিয়ে হবেনা। এটা বললেই আমি চলে যাব।”

প্রেম এবার সত্যিই হতাশ। এই মেয়েটার এতো জেদ কেন? অন্যদিকে রোজের পরিবারের সাথে তার পরিবারের বিয়ের কথাবার্তা অনেকটা এগিয়ে গেছে। প্রেম তার মাকে মানা করেছিল কয়েকবার। তার মা শোনেনি। শুধু রোজের খুঁত জানতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রেম সেটা বলতে ব্যর্থ হওয়ায় বিয়ের তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে একপ্রকার। মাকে নিরাশ করতে তার মন টানছে না। অন্যদিকে রয়েছে ঐশ্বর্য! প্রেম নিজের কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলে,
“ইটস ইম্পসিবল।”

“তাহলে আমিও এখান থেকে এক পাও নড়ব না।”

অপকট উত্তর দিল ঐশ্বর্য। প্রেম এবার রাগবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে,
“তুমি থাকো তবে এখানে আমি যাচ্ছি। আমিও দেখব তুমি কতক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো।”

“দেখতে চান? ঠিক আছে? আমি যতক্ষণ না এই কথা আমাকে দেবেন আমি এখানেই থাকব। আপনার অফিসের সামনে।”

প্রেম কিছু বলল না। তার রাগ লাগছে ভীষণ। একটা মেয়ে এতোটা জেদি হয় কি করে? তবে প্রেম এটা জানে যে ও এখানে সারারাত অন্তত থাকতে পারবে না। মুখে বলছে ঠিকই। অন্যদিকে মিসেস. পরিণীতা তাকে কল দিয়ে চলেছে। প্রেম গাড়িতে উঠে বসে। ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে,
“বাড়িতে যাবে? তাহলে তোমায় ছেড়ে দিয়ে আসি?”

“নো ওয়ে। যাব না আমি বাড়ি।”

প্রেম দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে গেটে সামনে আছে। গেটের সামনেই ছিল ওয়াচম্যান। তাকে দেখে গাড়ি থামালো প্রেম। ইশারায় গাড়ির কাছে ডাকতেই এগিয়ে এলো ওয়াচম্যান। প্রেম তাকে কটাক্ষ করে জিজ্ঞেস করল,
“আমার অফিস এরিয়ায় একটা মেয়ে এসেছে। তুমি তখন ঘুমোচ্ছিলে? ও করে ঢুকল? আর আমাকে ইনফর্মও করোনি।”

“স…সরি স্যার। ওকে ঢুকতে দিতে চাইনি কিন্তু জোর করে ঢুকে গিয়েছে। ওকে খুঁজতে গিয়েছিলাম কিন্তু ওকে পাইনি। ভেবেছি ও ভয়ে আবার বাহিরে চলে এসেছে।”

প্রেম ব্যস্ত কন্ঠে বলে,
“ম্যামকে একটা গাড়িতে তুলে দেবে একটু কিছুক্ষণের মধ্যেই নিশ্চয় অফিসের গার্ডেন থেকে বেরিয়ে আসবে তখন গাড়িতে তুলে দেবে। মনে থাকে যেন।”

ওয়াচম্যান মাথা ঝাঁকায়। এবার কিছুটা নিশ্চিন্ত হয় প্রেম। আবার স্টার্ট দিয়ে স্টেয়ারিং রাস্তার দিকে ঘুরিয়ে ফেলে। কুয়াশার মাঝে হারিয়ে যায় গাড়িটা।

চলবে…

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ]