প্রেম তরঙ্গ ২ পর্ব-০১

0
265

#প্রেম_তরঙ্গ২
আলিশা
পর্ব~~১

চিঠি পড়ে স্তব্ধ আমি কিছু সময় ঝিম মেরে বসে রইলাম। অতঃপর হুট করে ছিড়ে ফেললাম চিঠি। শত টুকরোর অংশ করে মেঝেতে বিছিয়ে দিয়ে দৌড়ে বাইরে চলে এলাম। ড্রইংরুমে এসে কাউকে নজরে না এনে হাঁক ছেড়ে উঠলাম

— বড় আম্মাহহহহ, আম্মুউউউউ

আমার ডাকের রেশ আমার মুখ ছেড়ে যেতে না যেতেই আচমকা এক কন্ঠ আমায় কেঁপে তুলল

— টিটিইইইই!

অবাক কন্ঠ। আমি তড়িৎ গতিতে চেনা ডাকের মালিকের দিকে মাথা ঘোড়ালাম। ক্যারেন! এখানে? এবার সব বুদ্ধি তেজ উবে গিয়ে এলো মনে রাশি রাশি ভয়। এরই মাঝে বড় মা আম্মু চলে এলেন। উপস্থিত সকলে আশ্চর্যের চূড়ায় উঠে পরেছে।

— ক্যারেন? তুই চিনিস তিথিকে?

বড় মার ডাক। ক্যারেন হকচকিয়ে উঠে আমার পাশ বরাবর দাড়িয়ে গেলো। বলে উঠলো

— আন্টি টিথি ইজ মাই…….

— ফ্রেন্ড… ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড। হি ইজ মাই ফরেন ফ্রেন্ড। গুড ফ্রেন্ড, ভালো ফ্রেন্ড।

ক্যারেনকে আটকে দিয়ে ধুপ করে বলে উঠলাম আমি। ক্যারেন হতভম্ব হয়ে গেলো। আমার সম্মুখে দাড়িয়ে ছিল কণা, ক্যারেনের মা ও বাবা। তারা স্তব্ধ হয়ে গেলো। আমি ধুকপুক করা হৃদপিণ্ড নিয়ে হঠাৎ বুদ্ধি আঁটলাম ক্যারেনকে এখান থেকে সরাতে হবে। ভাবনা অনুযায়ী হুট করে বললাম

— ক্যারেন, চলো তোমাকে আমাদের বাসা দেখাই। তোমার না খুব ইচ্ছে ছিল আমাদের গ্রাম দেখার। বাসা দেখার। আরো কতো কি? তুমি তো জানো না আমাদের বাসায় একটা টিয়া পাখি আছে। বারান্দায় সামনে বেলি…..

হড়বড় করে পাগলের প্রলাপ শুরু করে দিলাম আমি। এক হাতে ক্যারেনের হাত টেনে চলছি সদর দরজার দিকে অপর হাতে শাড়ির কুচি ধরে রেখেছি। সকলে হয়তো তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে। বড় আম্মা এরই মাঝে ডেকে উঠলেন

— তিথি, তুই জ্ঞান বুদ্ধি কি লোপ পেয়েছে তোর?

চাপা রাগত কন্ঠ আম্মার। মুহূর্তেই মাথায় আমার একটা কথা জ্বলজ্বল করে উঠলো। ” আমি একা যাচ্ছি ক্যারেনের সাথে। ফেয়ার না এটা” ভাবনা ভেবে আবার পিছু ফিরে ডেকে উঠলাম কণাকে।

— কণা তুমিও আসো? গ্রাম দেখিয়ে নিয়ে আসি। আসো।

আমার কথায় কণা কি ভাবলো আমি ঠাহর করতে পারলাম না। তবে সে ডাক পাওয়ার সাথে সাথে দ্রুত পায়ে পিছু নিলো আমাদের। বাড়ি ছেড়ে, রাস্তা পেরিয়ে আমাদের আর বড় আম্মার বাড়ির মাঝখানের বাঁশ ঝোপের মাঝে এসে আমি হাত ছেড়ে দিলাম ক্যারেনের। কিন্তু হঠাৎ অনুভব করলাম আমার হাত বন্দী। আমি চমকে ক্যারেনের দিকে তাকালাম। সে শক্ত চোখ মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হঠাৎ ক্যারেন কণাকে বলল

— কণা, গেট লস্ট।

কণা আদেশ পাওয়া মাত্র পা বাড়ালো না। সে অবাক নয়নে কিয়ৎক্ষণ পরখ করলো আমাকে আর ক্যারনকে। অতঃপর ধীর কন্ঠে বলল

— ভাইয়া, আমি….

— যেটে বলছি আমইই

জেদ নিয়ে বলা কন্ঠ ক্যারেনের। কণা চলে উল্টো পথে হাঁটা দিিলো। কণা চোখের আড়াল হতেই আমি ঝাড়ি দিয়ে ক্যারেনের হাত থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে বললাম

— একদম বাড়াবাড়ি কিছু করার সাহস করবেন না। আমার আর আপনার যে বিয়ে হয়েছে এ কথা যেন একটা পাখিও না জানে।

— হোয়ায়? আরেকটা বিয়ে করার ইচ্ছা? থীন কে বিয়ে করবা?

— সাট আপ! আপনার মতো হীন মন মানুষিকতা বোধ আর কারো নেই।

ক্যারেন আমায় ভস্ম করে দেওয়া দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি আবারও তার হাত টেনে পথ চলা শুরু করলাম। কিন্তু এবার সে বাঁধ সাধলো। পাথরের প্রতিমার মতো দাড়িয়ে রইলো শুধু। আমি তেজ উবে দিলাম। মিইয়ে যাওয়া গলায় বললাম

— নিজের বোনের সাথে আমার ভালোবাসার মানুষকে এক করে দিয়েছেন। এবার আমার বোনের সাথে তার ভালোবাসার মানুষকে এক করে দেওয়ার একটা ব্যাবস্থা করবেন? আপনি আমার থেকে ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু আমি কারো ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছি না। বরং দু’টো মন ভাঙা থেকে জোড়া লাগাতে চাইছি। মিলি যদি তীন কে না পায় তাহলে বাঁচবে না। তীন যদি আমায় না পায় তাহলে কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবে না। আমি চাইছি, মিলি ওর ভালোবাসা দিয়ে তীনকে ভালো রাখুক।

ক্যারেন আমার কথার পিঠে কেমন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তা আমি দেখলাম না। তবে একসময় অনুভব করলাম ক্যারেন আমার হাত থেকে তার হাত ছাড়িয়ে নিয়েছে। আমি চমকে তখন পেছনে তাকালাম। ক্যারেন পলকহীন আমার পানে তাকিয়ে আছে। তারপর হঠাৎই বলল

— কণা ভালো নেই টিটি। টিটাস আজ তিনদিন হলো নিখোঁজ। বাসায় আসে না।

আমি চমকে উঠলাম ক্যারেনের কথায়। বুকটা ধ্বক করে উঠলো। তিতাস ঠিক আছে তো? প্রায় পাগল প্রায় হয়ে আমি ক্যারেনকে শুধালাম

— তিতাস ঠিক আছে?

ক্যারেন যেন আমার একথা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে বাঁধা দিলো। সম্পূর্ণ উপেক্ষা করলো সে আমার প্রশ্ন কে। বলল

— থীনকে না জানাও এ বিষয়ে। সে যডি তোমার বোনকে বিয়ে করতে চায় তাহলেই দাও। আদারওয়াইজ তোমার বোন হ্যাপি হবে না।

ক্যারেন স্থির পলকে আমার নয়নে নয়ন রেখে শীতল কন্ঠে বলল কথাগুলো। আমি মস্তিষ্কে ধারণ করলাম খুব করে তার কথাগুলো। সে ভুল বলছে না হয়তো। ভাবনার মাঝে আমি ঘুড়ে উঠে এক পা আমাদের বাড়ির পথে এগোতেই হঠাৎ আজও পায়ের পাতায় কারো পায়ের স্পর্শ পেলাম। চমকে তাকালাম আবারও পেছনে। অবাক হলাম আমি। ক্যারেনের চোখ চিকচিক করছে। সে বলছে

— আই হ্যাপ সাম ফিলিংস ফর ইউ, টিটি। ঠুমি চলে আমার পর এখানটায় চিনচিন করেছে।

ক্যারেন বুকের বা পাশে হাত রেখে বলে উঠলো কথাটা। আমি অপলক তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। তার চোখের পানি, বুকের অনুভূতি কোনোটাই একবিন্দু প্রভাবও ফেলতে পারলো না আমার মনের উপর। কেবলই তার জন্য আমার মনের দরজা বন্ধ হতে বন্ধ হলো আরো শক্তভাবে।

.
ধীর পায়ে বাড়ির পথ ধরে চলে এলাম। ক্যারেনও এলো আমার পাশাপাশি হেঁটে। এরমাঝে প্রশ্ন করতে ভুলিনি, সে কিভাবে এখানে এলো। উত্তরে ক্যারেন জানালো,

” আমিই বাবার বোনের বাড়িটে এসেছি। থীনের হবু বউ দেখটে। বাট এসে দেখিই আমার বউ।”
.
ক্যারেনের সাথে বাড়িতে পৌঁছে প্রথমেই মিলির কাছে ছুটে যাই আমি। অতঃপর মিলিকে বিছানায় দেখে আত্মা শুকিয়ে যায় আমার। মিলিও কি কণার মতো ভুল করেছে? ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে জমে যায়। চিৎকার করে তখন ক্যারেনকে ডাকি। ঠিক সেই সময়ই মিলি মাথা তোলে।

— আপু তুই?

আমি দৌড়ে মিলির কাছে চলে যাই। ওর মুখটা দু’হাতে নিয়ে ভেজা চোখ মুছে দিয়ে বলি

— তুই কিছু করিসনি তো বনু? ঠিক আছিস?

— কি যা তা বলছিস। আমি এমন না। এত্তবড় দুঃখ বুকের মাঝে বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা আমার আছে।

মিলির ঝটপট বলা কথা। আমার বুক ভেঙে কান্না আসছে। একটা সতেরো বছরের মেয়ের এতো ম্যাচিউর হওয়া কি সাজে?

— এটা ক্যারেন?

মিলির কথায় আমি পেছন ফিরে চাইলাম। আমার ঠিক পেছনেই ক্যারেন দাড়িয়ে ছিল।

— ডু ইউ নো মি ইন্টেলিজেন্ট গার্ল?

— ইয়েস। কজ হউ আর আ্যা ক্রিমিনাল।

মিলি শক্ত চোখ মুখ নিয়ে বলে উঠলো। ক্যারেনের চোখে মুখে ফুটে উঠলো অসহায়ত্ব, অপরাধ বোধ। তবুও সে নরম কন্ঠে বলল

— আমি আমার মা হারা বোনকে অনেক ভালোবাসি

— তাই বলে তো আপনি অন্য কারো বোনের ভালোবাসা কেড়ে নিতে পারেন না। আপনি জানেন? আজ আপনার জন্য চারটা মানুষের জীবনে দুঃখ নেমে এসেছে? সাথে আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আপনার বোন কোনোদিনও সুখী হবে না। তিতাস ভাইয়া কোনো দিনও মানবে না। আসলে আপনাদের ধরি, মারি খাই স্বভাব। বিয়ে, ভালোবাসা এসবের মর্ম বুঝবেন কি? নিজেদের ওখানে তো একশো একটা মেয়ের সাথে চলাফেরা করেন।

চলবে…..

( লিখে ফেলছি।)