প্রেম তরঙ্গ ২ পর্ব-০২ এবং বোনাস পর্ব

0
236

#প্রেম_তরঙ্গ২
#আলিশা
পর্ব~~২

মিলি রাগ ক্ষোভে ক্যারেন কে কঠিন কথাগুলো শুনিয়ে দিলেও ক্যারেন নীরবে ব্যাথাতুর দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রইলো মিলির পানে। মিলি ক্রমে ক্রমে ফুঁসেই উঠলো। আবারও বলল

— আমি নিজেই আমার বোনকে আপনার হাতে তুলে দিতাম। আপনার সাত খুনও মাফ করতাম যদি আপনি আমার বোনকে ভালোবেসে বিয়ে করতেন। কিন্তু আপনি তো তা করেননি। শুধুই স্বার্থপরতা দেখিয়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতে বিয়ে করেছেন।

— এখন টো ভালোওবাসি। অনেক বেশি। এই ভালোবাসার টানে আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে এসেছিহ আবারও। ডাও তুলে তোমার বোনকে?

ক্যারেন কথার মাঝে হাত বাড়িয়ে দিলো মিলির দিকে। আমি নীরব দর্শক অবাক হলাম এবার। ক্যারেনের শেষোক্ত কথা মস্তিষ্কে আটলো না। তবুও মৌন রইলাম। কিন্তু মিলি স্তব্ধ হলো না। সে পুনরায় তার তর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে জয়জয়কার করে দিলো তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিকে। ক্যারেনের দিকে একই ভাবে সেও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল

— আপনার ঘটানো ঘটনা ক্রমে চারটা মানুষের হৃদয়ে যে দুঃখ কষ্টের জন্ম হয়েছে সে গুলো তুলে এনে আমার এই হাতে রাখুন আগে। আপনি তাদের বুকের দহনের অন্ত ঘটান আগে। তারপর আপনার লেইম অনুভূতির মানুষটাকে আপনার হাতে তুলে দিচ্ছি।

— লিটল গার্ল, ফিলিংস ইজ অ্যা পিউর ম্যাটার। এটা কখনো ফেইক হটে পারে না। ঠোমার রাইট নেই এটাকে লোয়ার করার। ঠোমরা বাঙালিই বলো, গোবরএ পুষ্প ফোটে। টাহলে আমার হৃদয়ে কেন ভালোবাসার জন্ম হটে পারে না?

ক্যারেনের এবারের পাল্টাপাল্টি জবাবে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। চোখ আপনা আপনি বিস্ময়ে ভোরে গেলো। মিলির পানে দৃষ্টি তাক করে দেখি সেও ঘাবড়ে গেছে। কিছু বলতে পারছে না এবারে। ক্যারেন নিজের হাত নামিয়ে নিলো। তার রীতি অনুযায়ী সে রক্তিম মুখাবয়বের অধিকারী এই ক্ষণে। কি রাগ, কি দুঃখ, কি হাসি। সে এদের একটার অনুভূতির পরশ পেতেই অরুণে রাঙা হয়। ফ্যাকাশে, ধবধবে ফর্সা চোখ, মুখ, ঘাড় জুড়ে তখন রক্তের লাল আভা খেলতে মত্ত হয়।

ক্যারেন আর মিলি এরপর নীরবে আরো কিছুসময় যেন তর্ক বিতর্ক করলো চোখে চোখে। অতঃপর ক্যারেন এঘর হতে বেড়িয়ে গেলো। আমি মিলির পানে দৃষ্টি রেখে ঠাঁই বসে রইলাম। মনে হলো আমি নয়, মিলি আমার বড় বোন। কিছু বলার সাহস আমার হচ্ছে না।

.
সকল কিছু উবে দিয়ে ঠান্ডা মস্তিষ্ক নিয়ে যখন ভাবলাম মিলির কথা। তখনই হঠাৎ মনে হলো, ক্যারেনকে আমি কেন এনেছি? তার পক্ষ হতে কোনো প্রকার সাহায্য আমি মোটেও কামনা করি না। আজন্মেও চাই না। ভাবনা অনুযায়ী ক্যারেনকে বললাম সে আমার অক্ষিপট হতে বহু বহু দূরে চলে যাক। তবে হ্যা, সে যেন ঘুণাক্ষরেও একটা জড় বস্তুকেও না জানায় আমাদের বিয়ের কথা। মিলির বিষয় কেটে উঠলে আমি যাবো তাকে ডিভোর্স দিতে। ক্যারেন আমার অভিমত, আদেশ শ্রবণ করলো খুব নম্র ভাবে, আহত নয়নে। অতঃপর গোঁ ধরে বসলো সে। চলে গেলোনা। বরং সে একটু পর তার গাড়ি এনে রাখলো আমাদের বাড়ির সামনে। অতঃপর আসলো আমার সম্মুখে। কন্ঠের সুর যথাসম্ভব কোমল করে বলতে চাইলো

— থীন, ক্রস কান্ট্রি ফ্লাইট-এর জন্য চিটাগং আসে। আমই… ওয়েট করতে বলেছি ওকে।

চোখের দৃষ্টিতে রইলো অপ্রস্তুত বোধ। ক্যারেনের চোখের ছোট দু’টো অক্ষিতারার নড়চড় হলো ঘড়িঘড়ি। আমি শূন্য অনুভূতি নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ক্যারেনের মুখপানে। বিক্ষিপ্ত মন ফুঁসে উঠলেও হঠাৎ চারিদিকে অসহায়ত্বর অস্তিত্ব আমলে নিয়ে থমকে গেলো। যাবো কি ক্যারেনের সাহায্যে? যদি না যাই তবে তীন ভাইয়াকে ধরতে পারবো না। সে আজই বাসায় আসবে। মিলির থেকে একটু আগে জেনেছি আজ তীন ভাইয়ার হবু বউ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হতো আমাকে। শেনা মাত্র যেন আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একাজ আমি ঘুণাক্ষরেও হতে দিতাম না। সিকি পরিমাণ মান সম্মান আব্বুর বজায় না থাকলেও আমি উন্মুক্ত করে দিতাম সব। নয়তো! নয়তো মুখের ওপর বলে দিতাম আমি কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমায় মেরে কেটে নদী সাগরে ভাসিয়ে দিলেও আমি কাউকে বিয়ে করবো না।

.
বাতাসের গতি ধরে যেন শা শা করে ড্রাইভ করতে লাগলো ক্যারেন। অবশেষে তার সঙ্গেই যেতে হচ্ছে। নয়তো আমি পৌঁছাবো কিভাবে তীন ভাইয়া অব্দি? কি বলে, কি হেতু দেখিয়ে তুলে দেবো মিলিকে তার হাতে। সব মিলিয়ে, মেজাজ শীতলে রেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হচ্ছে আমার তার সাথে। আমি পারি না, কখনো পারিনি কারো সাথে গলা উঁচিয়ে কঠোর ভাবে বাক্য বিনিময় করতে। মিলির মতো স্পষ্টভাষী, সাহসী মেয়ে হতে। ক্যারেনের সাথে বিয়ে হওয়ার পর আমি পুড়েছি, মরেছি, যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গেছি বারংবার। তবুও কখনো তার সনে অপ্রীতিকর ব্যাবহার করতে পারিনি।

— আপু আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?

মিলির কথায় ভাবনা উবে গেলো আমার। পাশ ফিরে চাইলাম। ক্রমাগতই মিলি হাশফাশ করছে। ও আসবে না। ক্যারেনের সঙ্গে যাবেও না কোথাও। আমিই তাকে বাধ্য করে জোরজারি করে তৈরি করিয়ে দিয়েছি।

— আমি কি বলেছি মিলি? চুপ থেকে শুধু দেখে যা।

— আম্মু, আব্বু, বড় মা তোকে খুজছে নিশ্চয়ই। তোর এখন বিপদ আর তুই কি আমাকে নিয়ে পালানোর প্ল্যান করছিস? আমার তো চিন্তা তোকে নিয়ে। আমি জানি তুই তীন ভাইয়াকে বিয়ে করবি না। কিন্তু বাড়ির সবাইকে কি বলবি?

মিলির কথার পিঠে আমি চলতি গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি ফেললাম। নির্লিপ্ত সুরে মিলিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক প্রসঙ্গে ঠেলে দিয়ে বললাম

— চিঠিটা তুই কোথায় পেয়েছিস?

— তোর রুমে। আমি এনাদের খোঁজ নিতে এসেছিলাম। তোর টক্সিক ইংরেজ আমাদের বাড়িতে আসলো কিনা এটা দেখার জন্য বাড়িতে এসেই হঠাৎ তীন ভাইয়ার কল পাই। সে ফোন করে বলল, ” মিলি, তিথির ঘরে বিছানার চাদরের নিচে একটা চিঠি আছে। বোকা মেয়েটা বোধ হয় দেখেইনি। দিয়ে দিও ওকে”

মিলির কথাগুলো শুনে নিয়ে আমি নিশ্চুপ রইলাম। কথা বাড়ালাম না আর। মিলিও নিশ্চুপ রইলো। আমার কেবলই মনে হতো লাগলো, এই বিষন্ন মাখা দিবসগুলো অন্যরকম হতে পারতো। আমার কালো রাত্রের নির্বাক অশ্রু ফোঁটাগুলো তিতাসকে নিয়ে আনন্দের হতে পারতো। নয়তো তিতাস ক্যারেন কেউ আমার জীবনে নাও পদার্পণ করতে পারতো। তীন ভাইয়া আমার জন্য শতসহস্র সুদ্ধ অনুভূতি না লালন করে মিলির জন্য রাখতে পারতো। কণাও তিতাসকে ভালো না বাসলেই পারতো। এমন বৃত্তের মতো প্রেম তরঙ্গ হৃদয়ে হৃদয়ে না প্রবাহিত হলে নিশ্চয়ই কোনো ক্ষতি হতো না। দোষ না করেও যেন দোষী সকলে।

.
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে গাড়ি আনলো ক্যারেন। মিলি অবাক হলো। সে গাড়ি থেকে নেমে আমায় কিছু বলে ওঠার পূর্বেই আমি ঝটপট ওর হাত ধরে হাঁটা দিলাম। ক্যারেন আমার পিছু পিছু আসছে। তীন ভাইয়াকে নজরে পরলো একটু সামনে যেতেই। ফর্মাল ড্রেসে সে সজ্জিত। সাদা শার্ট কালো প্যান্টের স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ মুখের মানুষটাকে দেখেই আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। গলায় শক্ত করে এঁটে গেলো কিছু। কাছে গিয়ে মুহূর্তেই কিছু বলার সাধ্য হলো না। ভাইয়া যেন হকচকিয়ে গেছেন আমাকে, মিলিকে আর ক্যারেন কে দেখে। উনি বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আমাদের নিয়ে উপস্থিত হলেন খুব নিকটেরই এক রেস্টুরেন্টে। মিলি ততক্ষণে স্তব্ধ। সে আমার কানে ফিসফিস করে বলল

” আপুনি, কি করতে চাস তুই”

আমি ওর উত্তরে বললাম

” হাজার সমস্যার একটা সমস্যা সমাধান করতে চাই। দু’টো হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়া থেকে বাচিয়ে দিতে চাই ”

তীন ভাইয়াকে বলে রেস্টুরেন্টের ভেতরের দিকে একটা বিশেষ কক্ষ ঠিক করিয়ে নিলাম। অতঃপর কাঁচে ঘেরা সে কক্ষে প্রবেশ করেই আমি হুট করে তীন ভাইয়ার হাতের ওপর মিলির হাত রেখে বললাম

— আপনার দশ বছরের ভালোবাসা সত্যিই উপেক্ষা করার শক্তি আমার নেই। আপনি তিথিকে খুব বেশি ভালোবাসেন না? সেই তিথি আজ আপনাকে একটা উপহার দিয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষের উপহার কিন্তু ফিরিয়ে দিতে হয় না। হারিয়ে ফেলতে হয় না। খুব যত্ন করে রাখতে হয়। ভালোবাসার মানুষের কথা কিন্তু মানতে হয়। এই পুতুলটা আমার খুব বেশি প্রিয়, খুব বেশি আদরের। যত্নে রাখবেন।

কথাগুলো বলতে গিয়ে আমার চোখ অজান্তেই ঝাপসা হলো। ক্যারেন আমার পাশেই দাড়িয়ে ছিল। মিলির চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো জল। সে নির্বিকার। তীন ভাইয়া আহত, মর্মাহত, অসহায় হয়ে গেলেন। আমি তার মুখ পানে তাকিয়ে জল ভরা চোখে মুচকি হেসে বললাম

— ক্ষমা করবেন আমাকে।

কথাটা বলেই আমি চোখ মুছে পা বাড়ালাম পেছন ঘুরে। এমন সময়ই তীন ভাইয়ার কন্ঠ কানে এলো আমার

— আমার মুখটা খুব সুন্দর করে বন্ধ করে দিয়ে গেলে। ইউ আর গ্রেট তিথি পরি।

চলবে…..

#প্রেম_তরঙ্গ২
#আলিশা
#বোনাস_পর্ব

সেদিন তীন ভাইয়ার হাতে মিলিকে তুলে দিয়ে যখন বাড়িতে এলাম তখন আমি আরেকটা বিপদের মুখোমুখি। ক্যারেনের সাথেই আসা হলো। পথে তার সাথে আমার একটা শব্দও বিনিময় না হলেও এখন তাকে নিয়ে বড় আম্মার বাড়িতে ঝড় শুরু হয়েছে। তীন ভাইয়া ও মিলিকে সেখানে দেখে বেশ অবাক হলেও পরে বুঝলাম তারা হয়তো বিমানে এসেছে। ক্যারেনের মা-বাবা চুপ ছিলেন না আমাদের বিষয় নিয়ে। বুঝলাম সব রটে গেছে ইতিমধ্যে। পুকুরের পানি সমুদ্রে চলে গেছে। যথারীতি আমার হেনস্তা হতে কোনো প্রকার অসুবিধা হলো না। তবে আমি অবাক হলাম তখন, যখন আম্মু আমার পাশে আসলেন। বড় মা আমায় বুকে টেনে নিয়ে আত্নীয়দের কটুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলে গেলেন। তীন ভাইয়া ততক্ষণে উপরে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়িয়েছে। বাবা পুরোটা সময় নির্বিকার রইলেন। দেখে গেলেল বহুক্ষণ অনিমেষ তাকিয়ে ক্যারেনকে। ক্যারেনের অনুভূতি ধরতে পারলাম না আমি। সে যেন ক্ষণেই বিব্রত ছিল আবার ক্ষণেই ছিল খুশি। আমার ভেতরে তখন ঝড় বইতে শুরু হলো। না জানি এবার পানি কোথায় গিয়ে পরে। সকলে ক্যারেনকে নিয়ে পরলো। ভেবে বসলো ক্যারেন আমায় ভালোবেসে বিয়ে করেছে। আমি গেলাম পরে অসহায়ত্বের সমুদ্রে তলিয়ে। এবার কি হবে? আমি তো ক্যারেনকে মানতে পারবো না কখনো? আম্মু আব্বু হঠাৎ খুশি হয়ে উঠলেন। বুঝলাম না তারা কি চাইছে। ক্যারেন এরই মাঝে দৃষ্টি বিনিময় করলো আমার সাথে। যেন সে বলতে চায় সব। তার কি সুবুদ্ধি হলো? ভাবতে গিয়ে হাসি পেলো আমার। পাশাপাশি দাড়িয়ে ছিলাম দুজন। ক্যারেন হঠাৎ সামনে পা বাড়ানোর জন্য উদ্যত হতেই আমি পা বাড়িয়ে দিলাম তার সম্মুখ পথে। ক্যারেনের প্রথম কদমে তার পাটা এসে পরলো ঠিক আমার পায়ের পাতায়। সে চমকে উঠলো। অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাতেই আমি তাকে সকলের অগোচরে ইশারায় মানা করলাম কিছু না বলতে। ক্যারেন থেমে গেলো। সেদিনের এতো বড় ঝামেলা সেখানে ধামাচাপা দিয়ে আমি পর দিনই ক্যারেনকে নিয়ে রওনা হলাম ঢাকার পথে। ভাবলাম এবার তিথির উঠে দাঁড়ানোর পালা। ডিভোর্স করবো ক্যারেনের সাথে অতি সন্তর্পনে। যেন কেউ না জানে, কেউ না বোঝে। তারপর তিথির এক নিজস্ব পরিচয় যখন গড়ে উঠবে তখন তিথি মা-বাবার সম্মুখে গিয়ে উঁচু মাথায় সব বলে দেবে। জানিয়ে দেবে।

— কি চাও ঠুমি টিটি?

— সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ভালো থাকতে চাই। মুক্ত বাতাসে একটা শ্বাস টানতে চাই।

চলতি গাড়িতে ক্যারেনের প্রশ্নের জবাবে আমি একথাই বললাম। ক্যারেন ড্রাইভিং অবস্থায় এক পলক আমাকে দেখে বলে উঠলো

— আমার বুকের বা পাশে টিটির বসবাস। আমার ভুবন জুড়ে টিটির আনাগোনা। ডিড ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?

— নো

— সরি টিটি। মেনে নেওয়া যায় না?

— কক্ষণো পারবো না।

এরপর ক্যারেন চুপ হয়ে গেলো। তার পাশের সিটে বসে থাকায় আমার নজরে এলো তার রক্তিম চোখ মুখ, ভেজা আখি সাথে শুঁকনো এক ঢোক গেলার দৃশ্য। আমি কেবলই নিস্তব্ধ হয়ে অনুমান করতে চাইলাম তার কষ্টের মাত্রা। আমার চাইতে কি বেশি হচ্ছে?

.
ঢাকায় এসে আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠতে হলো ক্যারেনের বাসায়। তবে এ বাসায় ওঠাটা হলো আমার জন্য কাল। দুপুরে রংপুর থেকে ঢাকা এলাম। ক্যারেন বেরিয়ে গেলো ঘরে এক মিনিট অবস্থান করেই। বাইরে তখন তুমুল বর্ষণে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি একা রইলাম ঘরে। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বান্ধবীদের ফোন করে থাকার কোনো এক ব্যাবস্থা করে পরদিনের সূর্য দেখার অপেক্ষায় রইলাম। তবে সে সূর্য আমায় দেখতে হলো কলঙ্ক নিয়ে। ক্যারেন বাসায় এলো সেদিন ভিজে জুবজুবে হয়ে। পুরো বাসায় কারেন্ট নেই। জেনারেটর বা আইপিএস এর কোনো ব্যাবস্থাও নেই এখানে৷ রাত কাটাতে আমি ঘরের সেফাটা আপন করেছিলাম। মাঝ রাতে হঠাৎ ক্যারেনের গোঙ্গানি। জ্বর এলো প্রচুর। আমি মায়া দেখাতে গেলাম। বারংবার সে “মম মম” বলে ডাকছিলো। জ্বরও কম আসেনি। আনুমানিক একশো তিন চার হবেই। আমি যখন মানবতার খাতিরে ক্যারেনের কপালে জলপট্টি দেই ঠিক তখনই আমার সর্বনাশ এসে হানা দেয় আমার ওপর। ক্যারেন অস্বাভাবিক আচরণ করে বসলো। তার হাতের ছোঁয়ায় অন্য এক আচ পেতেই কেঁপে উঠি আমি। বিছানা থেকে নামার জন্য প্রস্তত হতেই সে আষ্টেপৃষ্টে ধরে আমায়। আমার চোখে তখন নেমে গেলো জল।

.
গুটি গুটি অক্ষরের লেখাগুলোর সমাপ্তি ঘটলো। এরপর আর কিছু লেখা নেই। কানিজ এতো মোটা ডাইরিটা উল্টাতে লাগলো। প্রতিটা পাতা উল্টালো সে গভীর মনোযোগ সহকারে। পরের কাহিনী কি? এরপর কি হলো? ক্যারেন-তিথি কোথায়? ওদের কি ডিভোর্স হয়ে গেলো? মিলি-তীন কি করলো? আচ্ছা মিলি তো খুব বুদ্ধিমতী ছিল। সে কি মানিয়ে নিয়েছে সব? পনেরো বছরের কিশোরী কানিজের মনে উঠলো ঝড়। পরের কাহিনী জানার আগ্রহ তার বুকে জেঁকে বসলো খুব করে। এরই মাঝে হঠাৎ পেছন থেকে ডেকে উঠলো কেউ

— কানিজ? হট আর ইউ ডুয়িং?

চিকন কন্ঠের মেয়েলি ডাক শুনে কানিজ চমকে উঠলো। তার লং কোর্টের ভিতরে টুপ করে সে ডুকিয়ে নিলো ডায়েরিটা। অতঃপর পেছন ফিরে বলল

— নাথিং মম। আই এম কামিং সুন।

চলবে…..