ফেইরিটেল পর্ব-৪৬+৪৭ | বাংলা রোমান্টিক ভালোবাসা গল্প

0
517

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–46

গোটা শহরজুড়ে এক অদ্ভুত রকমের বিষন্নতা নেমে এসেছে৷ নেমে এসেছে এক ফালি অন্ধকার। মিরারও চোখে আঁধার নেমেছে। ভীষণ অপমানিত বোধ করছে সে। সত্যি তো সে এখানে কী করছে? তার এখানে কোন কাজ নেই। ওকে তো ইনভাইটও দেওয়া হয়নি৷ বিনা দাওয়াতের অতিথি সে৷ সে সামনের দিকে তাকালো। ওর চাহনি যেন তাকে পুড়ে ছাড়খার করে দিবে৷ কেমন ক্ষতপ্রাপ্ত, পাগলাটে, খেপাটে সেই দৃষ্টি৷ মায়া হবে সেই দৃষ্টির পানে তাকালে৷ হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে মিরা ব্যথা অনুভব করে কোন কারণ ছাড়া৷ সে মরা গলায় বলে, “ঘুমান নি কেন সারারাত? ”

ইমান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল। মুখে এক টুকরো হাসি ঝুলিয়ে বলে, ” ঘুম কেড়ে নিয়ে আদিখ্যেতা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে কেন ঘুমাই নি? ভেরি ফানি।”

–” আমি কারো ঘুম কেড়ে নিই নি।”

ও আরেকদফা হাসলো। কী ধারালো সেই হাসির চাবুক। মনে হচ্ছে সরাসরি মিরার গায়ে বসে যাবে৷ নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে, ” আমি যাচ্ছি তাহলে। বাই দ্যা ওয়ে, কংগ্রাচুলেশনস।”

ইমান ভ্রু কুচকে বলে, ” যাচ্ছি মানে? কোথায় যাবে? ”

–” বাসায় যাব আপাতত।”

ইমান রাগান্বিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে, ” বাসায় গিয়ে কী বোঝাতে চাচ্ছো, ইমান খান একটা অতিরিক্ত গেস্ট খাওয়াতে পারে না? আমাকে রাস্তার ব্রেগার মনে হয়? এম আই এ স্ট্রিট ব্রেগার?”

–” আপনি ড্রাং/ক। কী বলছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না।”

–” তুমি কোথাও যাবা না। পার্টি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত এখান থেকে বের হবে না।”

–” আমার এখানে ভালো লাগছে না৷”

–” ভালো না লাগলেও থাকতে হবে৷”

–” আপনি এমন পিকিউলিয়ার বিহেইভ কেন করছেন?”

ইমান ফোস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ” মিরা, তুমি কেন এতো হৃদয়হীনা হয়ে পড়লে? আমার বুকের ভাংচুর, তোলপাড় তোমার কানে পৌঁছায় না একটাবারও?”

মিরা কঠিন গলায় বলে, ” আমার ভেতরকার সব মিষ্টি অনুভূতিকে আপনি-ই গলা টিপে হত্যা করেছেন৷”

ইমান কথাটা শ্রবণ করামাত্র পাশের টেবিলে তার হাত দিয়ে আঘাত করল। বিকট শব্দ হলো। দু-তিন জন তাদের দিকে ফিরে তাকালো৷ কথা বলা শেষ করেই সে এলোমেলো পায়ে ডান দিকে চলে গেল। ডান সাইডে সম্ভবত বা-র৷ মিরা সেদিকে না এগিয়ে অনুষ্ঠানের মূল জায়গায় এসে দাড়ালো। স্টেজ তৈরি করা হয়েছে৷ স্টেজের সামনে টেবিলে কেক রাখা। বিশাল বড় কেক৷ এবং গ্লাস দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পিরামিডের মতো বানিয়ে রাখা আছে৷ সাদকে দেখা যাচ্ছে না। একা একা সে কিছুক্ষণ বসে থাকল। একজন ওয়েটার তাকে জুস আর ব্রাউনি খাওয়ার জন্য দিয়ে গেল৷ সে সময় কাটানোর জন্য চামচে টুংটাং আওয়াজ করল। ব্রাউনি মুখে দিতেই কেমন গা গুলিয়ে এলো। খেতে ইচ্ছা করছে না৷ চোখ থেকে টপটপ করে দু’ফোটা মোটা টসটসে তাজা নোনাজল গড়িয়ে পড়ল৷

ইমান বা-রে-র এককোনায় গিয়ে বসল৷ সঙ্গে সঙ্গে একজন ওয়েটার তার দিকেও এগিয়ে এলো। ওয়েটারকে ড্রিং/ক আনার নির্দেশ দিল সে। ওয়েটার বলে উঠে, “আপনার রুমের চাবি।”

ওয়েটার হাত বাড়িয়ে হোটেল রুমের চাবি এগিয়ে দিতেই ইমানের স্মরণ হয়, আজকের রাতটা সে ভেবেছিল এখানে এই হোটেলে কাটাবে মিরাকে নিয়ে ৷ স্পেশাল নাইট টাইপ কিছু করার ইচ্ছা ছিল।

ওয়েটার বলে, ” আপনার পছন্দমতো রুম ডেকোরেশন করা হয়েছে৷ লাল গোলাপ দিয়ে রুমে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ বিশটা ক্যান্ডেল জ্বালানো হয়েছে। আপনি কী একবার চেক করবেন স্যার ?”

ইমানের বুকে অজানা ব্যথা শুরু হলো। কত-শত প্লান-পরিকল্পনা করে রেখেছিল সে। অথচ সবটা এক নিমিষেই ভেস্তে গেল। সব সুখ যেন কেউ তীব্র টর্নেডোতে উড়িয়ে নিয়ে গেল!

ড্রি-ক-স আসার সঙ্গে সঙ্গে সে তা পান করা শুরু করল। এদিকে অনেকেই ড্রি-ক করতে এসেছে। নাচ-গানও চলছে৷ আমেরিকান প্রচুর আনন্দ করতে জানে। মজা করতে ভালোবাসে। ওদের প্রথমবার দেখলে মনে হবে তাদের কোন দুঃখ নাই। আসলে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষের ভেতরেই সুপ্ত বেদনা লুকায়িত থাকে৷ ওরা তা প্রকাশ না করে হাসিমুখে সামনে পা বাড়ায়৷

আরেকবার ওর্ডার দিল সে।পাশের টেবিল থেকে হাসির তীক্ষ্ণ শব্দে মাথা ধরে গেল। বুঝতে পারছে নে-শা-গ্র-স্থ হচ্ছে সে। পেছনের টেবিলে একটা মেয়ে আর একটা ছেলে হাসাহাসি করছে। মেয়েটা এখানকারই! সে আরেক পে/গ মুখে তুলবে তার আগেই কেউ তার হাত থেকে ছো মেরে ছোট কাচের গ্লাস টেনে নিল এবং মেঝেতে ফেলে দিল পানীয় দ্রবটা। ইমান ভ্রু কুচকে তাকাতেই হচকচিয়ে গেল। তার সামনে গোলাপি গাউন পরা ওই নিষ্ঠুর, হৃদয়হীনা, কঠোর দিলের মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। আজ তার রুপ যেন চুইয়ে চুইয়ে পরেছে। অন্যরকম ভাবে সেজেছে বুঝি। তবে ওকে বিয়ের দিন বেশি সুন্দর লাগছিল। একদম চোখ ফেরানো যাচ্ছিল না৷ আজও যাচ্ছে না। হা করে তাকিয়ে রইল ইমান। এরপর রাগ উঠে যায়। আপাতত সে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়ার পথে৷হা/ই হয়ে আছে বোধহয়। অনুভূতি, চিন্তা-চেতনা, ভাবনা, লজিক কিছুই বিন্যস্ত নয় তার মস্তিষ্কে। সব কিছু ঘেঁটে গেছে৷ সে রেগে গিয়ে বলে, ” আমার ড্রি-ক কেন তুমি ফেলে দিলে?”

–” ইচ্ছা হলো তাই।”

ইমানের টেবিলে তখন আরো তিন গ্লাস ছিল। সে আরেকটা হাতে তুলে নিতেই মিরা সেটা টেনে এনে টেবিলে ফেলে দিল৷ এরপর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে বাকি দুটো গ্লাসের পানীয় ওর মাথায় ঢেলে দিল৷ মাথার চুল ভিজে গেল। চুল থেকে পানীয় গড়িয়ে স্যুটের কলার ভিজে উঠে। বিষ্ময়ের তোড়ে ইমান কথা বলতে পারল না৷

মিরা কঠিন সুরে বলে, ” আজকের দিনে এমন না করলে চলছে না? কত মানুষ এই পার্টিতে উপস্থিত। আপনার জন্য একটা বিশেষ দিন৷ অথচ নিজ হাতে নিজের সম্মানহানি করছেন৷”

ইমান এবারে উঠে দাড়ালো এরপর স্যুট খুলল, টাই লুজ করল। নিজের চুল ধরে টানল। তার চোখ-মুখ শক্ত করে বলে, “আমার সম্মান গেলে তোমার কী?বউগিরি ফলাচ্ছ কেন? হু? হুয়াই?”

–” আশ্চর্য! আপনার মাথা পুরোপুরি গেছে।”

–” তুমি যদি বউগিরি ফলাতে পার, আমিও স্বামীগিরি ফলাবো।”

মিরা বিরক্ত হয়ে গেল। এখানে আসাই ভুল হয়েছে তার। ওদিকে থাকতে থাকতে একবার মনে হলো এখানে এসে ইমানকে দেখে গেলে ভালো হয়৷ বা-রে প্রবেশ করতেই সে দেখল ইমান ড্রি/ক করছে৷ কেন যেন এ দৃশ্য তার খুব কুৎসিত লাগল। এভোয়েড করে চলে যেতে পারেনি। এখন মনে হচ্ছে বা/রে আসাই তার ভুল হয়েছে৷ মা/ত/লা/মি সহ্য করতে হবে৷

ইমান তার দিকে ঝুকে এসে ওর নরম গালে হাত রাখল। এরপর আরো কাছে আসতে গেলেই, মিরা বাধা দিয়ে বলে, ” ডোন্ট…….. ”

ইমান থেমে গেল এরপর মৃদ্যু গলায় বলে, ” উইল ইউ ডান্স উইথ মি? ”

–” নো।”

–” তোমার বারং কে শুনবে?”

সে মিরার হাত ধরে এগিয়ে আসলো ডান্স ফ্লোরে। ডান্স ফ্লোরে সাত-আট জন ডান্স করছে৷ রক মিউজিক চলছে। ডিজে গান বাজাচ্ছে৷ লাল-সবুজ বাতি তাক করে ফ্লোরের মধ্যে ফেলা হচ্ছে৷ পার্টি মুড যাকে বলে!

ইমানের গান পছন্দ হয়নি৷ সে ডিজেকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কী জঘন্য গান বাজাচ্ছো তুমি? এতো ফালতু কেন তোমার টেস্ট? রোমান্টিক গান বাজাও ষ্টুপিড। ”

তার কথায় আরোও দুজন সায় দিয়ে বলে, ” রোমান্টিক গান বাজাতে৷”

ডিজে মিষ্টার হেসে ফেলে বলল , ওলরাইট গাইজ। ইনজয়!

প্লে-লিস্ট থেকে গান খুঁজে গান সিলেক্ট করে দিল। খুব চমৎকার একটা সুইট, সফট, রোমান্টিক গান বাজতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত লাইট বন্ধ করে দিল। খুবই অল্প আলো ছড়ানো বাতি জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। পার্টির আমেজ বদলে গিয়ে খুব শীতল একটা পরিবেশ তৈরি হলো। ইমান মিরাকে নিয়ে মাঝে অবস্থান করছে। সে ওর কোমড়ে হাত রাখল। মৃদ্যু কেঁপে উঠে মিরা চোখ বুজে ফেলে। এরপর ওর আরেকটা হাত নিজের হাতের সঙ্গে মিশিয়ে নেয় ইমান। আংঙুলের ভাঁজে আংগুল গুঁজে দিল। দুজনের মধ্যে দূরত্ব কমে গেল৷ কোমড় চেপে ধরেই টান মেরে নিজের পায়ের পাতার উপর মিরাকে দাড় করালো। এরপর হাত দিয়ে ওর থুতনি উচু করল সামান্য। মিরার চোখের পাপড়ি তিরতির করে নড়ছে৷ চোখে চোখ রেখে করুণ গলায় বলে, ” আরেকটা চান্স দিলে খুব ক্ষতি হচ্ছে তোমার? শরীর দগ্ধ হচ্ছে? আচ্ছা তুমি আমার মন পুড়ে যাওয়ার পোড়া গন্ধ শুনতে পাচ্ছো না? ”

মিরা সরে আসতে চাচ্ছে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। সাউন্ড বক্সে গান ভেসে আসছে,

I call your name, but you’re not around
I say your name, but you’re not around

I need you, I need you, I need you right now
Yeah, I need you right now.

গানের সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই সন্ধ্যারাতে একশ তারাকে সাক্ষী রেখে, নিগূঢ়, নিকষকালো নিমজ্জিত আঁধারে ছেয়ে যাওয়া রাত্রীতে ইমানও বলে উঠে, ” আই নিড ইউ, আই নিড ইউ রাইট নাও।”

মিরা চমকে উঠে৷ স্লো ভয়েজে বলা কথাগুলো তার রগে, শিরা-উপশিরায় পর্যন্ত পৌঁছে যায়৷ ইমান তাকে আরো একটু কাছে টেনে এনে ঘুরালো, এরপর নিজের বাম হাতের উপর মিরাকে ফেলে দেয়। গান বেজেই চলেছে।

So don’t let me, don’t let me, don’t let me down
I think I’m losing my mind now

It’s in my head, darling, I hope
That you’ll be here when I need you the most, so
Don’t let me, don’t let me, don’t let me down
D-don’t let me down

কি চমৎকার একটা। লিরিক গুলো যেন ইমানের মনের কথা তুলে ধরছে৷ মিরা সোজা হয়ে দাড়ালো। আবারো ইমান তার কোমড়ে হাত রাখে। এরপর নাচের তালে তালে তার কাছে আসে। ঠিক সেই সময় ওদেরকে ফোকাস করে ডিস্কো লাইট জ্বলে উঠে। ডান্স ফ্লোরের মাঝে থাকায় মিরা খেয়াল করল, জুই নামক মেয়েটা এদিকেই আসছিল। কিন্তু তাদেরকে এতো কাছাকাছি অবস্থান করতে দেখে থমকে যায়। মিরারও ভারী অস্বস্তি হতে লাগে৷ ইমানকে দূরে সরানো চেষ্টা করে। তখনই জুই হনহন করে বেরিয়ে যায়৷
মিউজিকের শব্দে সে ইমানের দিকে তাকালো। ইমান ডান্স স্টেপ ফলো করে তাকে পেছনে ঘুরাবে এমন সময় তার কাধের কাছের ফিতা ছিঁড়ে গেল৷ গাউনটা দুই যুগ আগের কেনা৷ আন্টির তরুণী বয়সের কেনা। ড্রাই ওয়াশ করে মিরা পরেছে৷ পুরাতন হওয়ায় আচমকা টান লাগায় ছিঁড়ে গেছে৷ বেশ বিপদে পরলো তো সে!

ইমানের বুকের সঙ্গে নিজের ঘাড় মিশিয়ে ফেলে সে। ইমান তার ডান হাতটা তার পে-টে-র উ-প- রাখল। তার গা বেয়ে মৃদ্যু শীতল শিহরণ বয়ে যায়৷ সে ফিসফিস করে বলে, ” আমাকে ছাড়ুন। আমি সমস্যা হচ্ছে।”

ইমান ঝামটা মেরে বলে, ” আমি পাশে থাকলে কী তোমার গা জ্বলে? যদি না ছাড়ি কী করবা? পুলিশ ডাকবা? হ্যারেস্টমেন্টের জন্য কেইস ফাইল করবে?”

মিরা দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “অসহ্য একটা লোক”।এরপর বলে উঠে, ” আমার জামার ফিতা ছিঁড়ে গেছে৷ ওয়াশরুমে যেতে হবে৷ ইমার্জেন্সি।”

ইমান বোধহয় ওর পরিস্থিতি বুঝল। সে একটু দূরে সরে এসে ছিড়ে যাওয়া ফিতা পর্যবেক্ষণ করল৷ এরপর মিরার উম্মুক্ত, ফর্সা ঘাড়ে হাত বুলালো। ফিতা বাধার প্র‍য়াস করল কিন্তু ব্যর্থ হলো। ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক, ইমান কয়েকবার তার ঘাড়ে হাত ঘুরালো৷ প্রতিবার সে কেঁপে উঠল৷ অবশেষে তার ঘাড়ে গভীরভাবে অধরজোড়া স্পর্শ করে ইমান। এবং খোপা করা চুল খুলে দেয়। ক্ষণেই তার কেশ বদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে কোমড় অব্দি ঝুলে পরে৷ ইমান আচমকা তাকে কোলে তুলে নিল। তখনোও গান বাজছে,

I need you, I need you, I need you right now
Yeah, I need you right now…….

মিরা চঞ্চল চোখে চারপাশ তাকিয়ে বলে উঠে, ” মানুষ-জন দেখছে তো। আপনি এমন পাগলামী কেন শুরু করেছেন? আমাদের কেউ এভাবে দেখলে বেহায়া ভাববে৷”

–” মানুষ দেখলে দেখুক৷ বেহায়া ভাবলে ভাবুক৷ এতে করে অন্তত কেউ তোমার উম্মুক্ত ঘাড় তো দেখতে পারবে না।”

বা/রের পাশ দিয়েও হোটেল রুম গুলোয় যাওয়া যায়। বারোতলা থেকে হোটেলে থাকার জন্য রুম আছে। ইমান তাকে বারো’শ দশ নাম্বার রুমের সামনে এনে দাড় করিয়ে চাবি দিয়ে গেইট খুলে দিল। গেইট খুলতেই রুমের ভেতর দেখা গেল। ডেকোরেশন এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে৷ মিরা অবাক হয়ে বলে, ” রুম এভাবে সাজানো কেন?”

ইমান রেগে গেল কিন্তু প্রকাশ না করে বলে, ” আমি কীভাবে জানব রুম সাজিয়ে রেখেছে কেন?”

মিরা রুমের ভেতরে ঢুকে গেইট লাগিয়ে দিল৷ ইমানও গজগজ করতে করতে বেরিয়ে যায়৷

মিরা আয়নায় দাঁড়িয়ে জামা ঠিক করছিল, তখনই দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়। সে ধরেই নেয় ইমান ফিরে এসেছে। ছেলেটা আজ পুরা হা/ই হয়ে আছে৷ সে দরজা খুলে দিতেই অবাক হলো। জুই নামের মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে৷ মিরা মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকালো। সাদা জর্জেটের কাজ করা একটা সিম্পেল গাউন পরেছে। গাউনের ডানহাতটা কাটা৷ খুব সুন্দর লাগছে তাকে। মিরা তাকিয়ে দেখল, মেয়েটার সঙ্গে তার চেহারার কোন জানি অংশে মিল রয়েছে। বিষয়টা দারুণ কাকতালীয়।

জুই হেসে বলে, ” ভেতরে আসি?”

–” আসুন।”

জুই ভেতরে প্রবেশ করে তাকে জিজ্ঞাসা করে, “নিউইয়র্ক কেমন লাগছে?”

–“বেশ।”

— “আর ইমানকে?”

মিরা তার করা প্রশ্নে হতবিহ্বল হলো। সে আমতাআমতা করে বলে, “সর‍্যি?”

জুই বেডে বসে বেডশীটের উপর লাভ শেইপ করা গোলাপের পাপড়ি গুলো ভেস্তে দিয়ে বলে, তুমি কী জানো যে তুমি আগুন সুন্দরী? তোমার রুপে যেকোনো পুরুষ মজে যাবে৷”

মিরা কথাগুলো শুনল ঠিকই কিন্তু উত্তরে কিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গ টেনে এনে বলে,” আপনি আরো সুন্দর।”

জুই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, ” সুন্দরী হলে তো আমার প্রেমিক তোমার রুপে মজত না৷”

মিরা যেন।আকাশ থেকে পড়ল৷ ওনার প্রেমিককে কখন মিরা ফাঁদে ফেললো?

জুই দাঁড়িয়ে গেল এবং খুব সাবলীলভাবে বলে, ” মিষ্টার খানও অন্য পুরুষদের মতো তোমার এই রুপেই ঘায়েল হচ্ছে।”

মিরা চোখ বড় করে তাকালো এবং প্রশ্ন করে, ” ইমান?”

–” ইয়েস, ইমানের কথাই বলছি। জানো ওকে আমি স্কুল লাইফ থেকে ভালোবাসি৷ ওর জন্য নিজের ড্রিম সাবজেক্ট বাদ দিয়ে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। শুধুমাত্র ওর সাথে থাকব বলে। তোমার ধারণাও নেই ওকে আমি কতখানি ভালোবাসি৷”

মিরা চকিত উঠে তার পানে তাকালো। তার মানে সাদ আর আন্টির কথা সব সত্য?

সে কিছু বলবে তার আগেই জুই বলে উঠে, “ক্রাশকে অন্য কারো সঙ্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে দেখে কষ্ট হয়? তাহলে বুঝ আমার কেমন লাগে? যখন ওকে তোমার প্রতি আআকর্ষণবোধ হতে দেখি? ”

মিরা নিষ্প্রাণ কণ্ঠে বলে, ” উনি আপনার বয়ফ্রেন্ড? ”

–” অফ কোর্স। বিলিভ হয় না? ওয়েট এক মিনিট বলে সে নিজের ফোন বের গ্যালারি ওপেন করে মিরার সামনে ধরল। গ্যালারি ভর্তি তার আর ইমানের হাসি মুখে তোলা সেলফি, সুন্দর মুহূর্তে ম্র ছবি। হোটেল রুমেও তাদের ছবি আছে৷

মিরার চোখ ফেটে যেন এক্ষুনি জল গড়াবে। সে তবুও বলে, ” এগুলো তো নর্মাল ছবি।”

জুই বলে, ” আমরা দুজনই এডুকেটেড। তোমার কী মনে হয় রিলেশনে থাকাকালীন আমরা ঘ/নি/ষ্ঠ মুহুর্তের ছবি ক্যাপচার করব? এতো লেইম নই আমরা।”

মিরার চোখ বেয়ে এবারে জল গড়ালো। সে বলে উঠে, ” আমি জানতাম এসব কিছু। ”

–” আসলে মিষ্টার খান এসব নিয়ে কখনোও আলোচনা করেনা৷ আমরা তো ডেইটও করেছি মিরা। বিয়ে করার প্লানও আছে৷ কিন্তু দেখ আমার ভাগ্য কতো খারাপ! তুমি মাঝপথে এসে আমার থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিচ্ছো।”

মিরা দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে বললো, ” আমি কোনদিন কারো কাছ থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নিতে চাইনা। কখনোই এমন কু-বাসনা অন্তরে নেই।”

— ” তাহলে সরে যাও না ইমান আর আমার মধ্যে থেকে। কেন বারবার আমাদের মধ্যে ফাটল তৈরি করছো? তুমি আসার পর থেকে মিষ্টার খানের আমার সঙ্গে কথা বলার টাইম নেই।”

–” আমি কখনোই আপনাদের মধ্যে জড়াইনি।”

— “আমার আর ওর রিলেশন অনেকদিনের৷ প্লিজ আমাদের সম্পর্কটা ভেঙে দিও না। অনুরোধ রইল তোমার কাছে।”

চলবে৷
#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–47

বক্ষস্থলের বাম পাশে যেন কেউ দুম করে আঘাত মেরেছে। মিরার মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো ব্যথাতুর আর্তনাদ। এ আর্তনাদ মনের চিৎকার যেন! যেটা সে বাদে কেউ শুনতে পাচ্ছে না৷ সে ফ্যালফ্যাল করে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে খানিক বাদে বলে উঠে, “আপনি জানেন আমি ওর কে হই?”

–” জানি তো।”

–” ভুল জানেন। ও…. ও আমার…… ” বাকি শব্দটা মিরার মুখ থেকে বের হতে চাইছে না৷ আদৌও কি কাবিননামায় ওই সইটাই তাদের সম্পর্কের ভিত্তি? সে কী এমন একটা টক্সিক রিলেশনশিপ চায়? নাহ! তার কাছে সবসময় “ভালোবাসা” অর্থ ছিল ভিন্ন। “ভালোবাসা” কে প্রচুর কদর করে সে। সবসময় লাভিং এন্ড কেয়ারিং লাইফ পার্টনার চাই তার৷ বাবা-মায়ের অসফল সম্পর্ক বারবার তাকে ভালোবাসাময় সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দেয়। আচ্ছা তার ভাগ্যটাও মায়ের মতো হলো না? বাবাও তো অন্যকাউকে পছন্দ করত। দাদী জোর করে বিয়ে করালেন শান্ত-নম্র, কমবয়সী সুপ্তি বেগমের সঙ্গে। বিয়ের জোর খাটানো তো যায়নি বাবার উপর? সে-ই তো বাবা বারংবার ওনার কাছে ফিরে যেতেন৷ বিয়ের কাবিননামার ক্ষমতাও নেই অপর মানুষটিকে নিজের করে রাখার। মা তো কম চেষ্টা করেনি। নিজের সব দিয়ে প্রচেষ্টা করে গেছেন। লাভ কী হলো? পরিণামই বা কী হলো? ফলাফল সেই একই! করুণ।

জুই তার দিকে এগিয়ে এসে ওর কানের কাছে উড়তে থাকা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলে, ” তুমি কী কষ্ট পেয়েছো আমার কথায়? তোমাকে দুঃখ দেওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই। তোমার বয়সের দোষ সবটা। মাত্র টিন এইজ পেরুলে। দুনিয়ার সবকিছুই আনন্দময় লাগবে। চোখে রঙিন চশমা পরে আছো। তোমার বয়সে আমিও এমন ছিলাম। হ্যান্ডসাম ছেলে পাশ দিয়ে গেলে ফিরে তাকাতাম৷ কিন্তু বিশ্বাস কর, মিষ্টার খানের মতো কাউকেই মনে ধরে না আমার। তুমি মাত্র ম্যাচিউর হচ্ছো। যে কাউকে ভালো লাগতেই পারে তোমার। এটা পাপ নয়৷ কিন্তু অন্য কারো ভালোবাসাকে ছিনিয়ে দেওয়া বড় পাপ। তোমার মতো নিষ্পাপ কেউ পাপ করুক এটা আমি চাই না।”

জুইয়ের বলা কথাগুলো কেন যেন মিরাকে অনুভূতিশূন্য করে তুলছে৷ সে চাইলেই এই মেয়েটাকে কষে থাপ্পড় মারতে পারে। তার স্বামীর দিকে কুনজর দেওয়ায় সে পারে ওকে শায়েস্তা করতে। কিন্তু গ্যালারির ছবি গুলো দেখে এবারে সত্যি মনে হচ্ছে, ইমানের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক না থাকলেও প্রনয়ময় সম্পর্ক আছে৷ দুজনে দিনের পর দিন ধুমসে প্রেম করে বেরিয়েছে। এজন্য তো জুইকে ওর বাসায় সবাই চেনে। তবে কী সে-ই তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ভুলে ইমানের জীবনে প্রবেশ করে ফেলেছে? ইমান যদি অনুমতি না দিত তবে সে কোনদিন ওর জীবনে আসতে পারত না। সে সুযোগ দিয়েছিল, না কেবল সুযোগ দেয়নি বরং নিজ থেকে এগিয়ে এসেছিল মিরাকে বিয়ে করার জন্য। এখন সবটা এমন ঘোলাটে, অস্পষ্ট লাগছে কেন? জুই যা বলছে সেগুলো পুরোপুরি তার বিশ্বাস হচ্ছে না, আবার অবিশ্বাস করারও কারণ নেই। নাহ! একটা কারণ অবশ্য আছে৷ ইমান এবং তার আচরণ — এই দুটো রিজনেই জুইয়ের কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার৷ ইমান যে তার জন্য অহেতুক পাগলামি করছে, বারবার বলছে সেকেন্ড চান্স দিতে, সেগুলো কেন করছে ও? প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বিয়ে করে থাকলে কেন তাকে নিউইয়র্কে নিজের বাসায় আশ্রয় দিল? কেন তার সঙ্গে এতো ভালো ব্যবহার করল? সে তো এসেছিল নিরুপায় হয়ে। ইমান চাইলেই তাকে নিজের বাসা থেকে বের করে দিয়ে আরেকবার প্রতিশোধ নিতে পারত৷ তাতো করেনি। বরং সব ধরনের সহযোগিতা করছিল৷ নতুন করে সব সাজাতে চাইছিল। তাহলে কী মাঝ দিয়ে তাদের মধ্যে জুই নামের বিদেশি মেয়েটি ঝামেলা করছে না?

জুই মেইন দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে, ” তোমাদের দুইজনকে একসঙ্গে ডান্স ফ্লোরে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল মিরা। এই কষ্টের কথা কাউকে বলা যায় না। শুধু মনে হচ্ছিল ওই জায়গায় আমার থাকার কথা৷ ওই আদুরে স্পর্শ গুলোতে কেবল আমার থাকার কথা৷”

জুই চোখ বেয়ে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল। সে “আসছি” বলে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে৷ মিরা ভীষণ বিপন্ন অনুভব করল। মনের ভেতরটায় কুটকুটে অন্ধকার নেমে আসল৷ এরপর ফ্লোরেই হাঁটু গেড়ে বসে পরে৷ হাঁটু ভাজ করে বসে থাকল চুপচাপ। উঠে দাঁড়াতে মন চাইছে না। কান্না করতেও ইচ্ছা করছে না। শরীর কেমন অসাড় হয়ে আসছে৷

_____________

ইমানের রক্তে আ্যলকোহোল মিশে গেছে। মদ্যপান করায় সবকিছুই তার কাছে অসহ্য লাগছে। গান-বাজনা কানে এসে বাজছে যেন। ইমোশন, অনুভূতি সবকিছু খুব প্রখরভাবে ফিল করছে সে। এই ঠোঁটের মধ্যে এখনো মিরার ছোঁয়া লেগে আছে জন্য সে আর গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে না। থাক না, আরো কিছু সময় সেই স্পর্শটা! সে দিব্যি বুঝতে পারছে, তার নে/শা ধরে গেছে৷ এই মূহুর্তে তার পক্ষে পরিকল্পিত বা পরিষ্কার করে কিছু ভাবা বা বলা সম্ভব না৷

অনুষ্ঠানের মূল জায়গায় এলো সে। মিরা হোটেল রুম থেকে ফিরে আসল কিনা চেক করার জন্য। অনেক গেস্ট ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। সাদকে একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখল। তার দিকে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, ” মিরাকে দেখেছিস?”

–” না, ব্রো৷ আমি তো কায়রার সঙ্গে ব্যস্ত আছি৷ ওর খবর জানি না। বাই দ্যা ওয়ে,তুমি আজ এতো ড্রিং/ক কেন করেছো? চোখ লাল হয়ে আছে।”

ইমান মুখ কালো করে বলে, ” খুশিতে।” এরপর মনে মনে বলল, “বউ রিজেক্ট করেছে সেই খুশি। পাশ দিয়ে আমার সুন্দরী বউ পরী সেজে ঘুরবে তাও তাকে একটা চু/মু খেতে পারছি না এই খুশিতে খেয়েছি৷

সাদ যখন কায়রাকে নিয়ে পুনরায় গল্প করতে ব্যস্ত হয়ে পরে, ইমান সেখান থেকে সরে এসে হোটেল রুমের দিকে যেতে লাগলো৷ তার মন বলছে মিরা এখানেই উপস্থিত আছে৷ হোটেল রুমে এসে দাড়ালো সে। ভেতর থেকে বন্ধ করা দরজা। আচমকা তার কেমন যেন অনুভূতি হতে লাগলো।সে দরজায় নক করল। কেউ রেসপন্স করল না। সে সামান্য দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে ডাকে, ” মিরা? মিরা? তুমি ঠিক আছো? দরজা খুল।”

খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হয়৷ মিরাকে বের হয়ে আসতে দেখে সে স্বস্তি পায়৷ কিন্তু সামান্য চমকেও উঠে সে। মেয়েটার সাজ-গোজ সবটা নষ্ট হয়ে গেছে। মেকাপের কিছুই অবশিষ্ট নেই৷ কেবল লেপ্টে যাওয়া কাজল চোখের আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। কোমড় অব্দি কেশ খুলে রেখেছে। তাও কী অপূর্ব লাগছে তাকে! নে/শা অবস্থায় যেন আরোও নেশা ধরে গেল তার৷

ইমান কিছু বলবে তার আগেই মিরা প্রশ্ন করে, ” আপনার কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?”

ইমান সামান্য ভড়কে যায়। সে বলে, ” সর‍্যি?”

–” জুই নামের মেয়েটির সঙ্গে আপনার কতদিনের সম্পর্ক? ”

ইমান তার প্রশ্নের তোড়ে বিষ্মিত, হতবাক, হতবুদ্ধি হলো। জুই তাদের মধ্যে কোথা থেকে আসল আবার?

সে বলে উঠে, ” জুই নিয়ে এসময় কেন কথা হচ্ছে? ”

–” ওকে নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা? নাকি লুকিয়ে প্রেম করতে চান?”

ইমান ভ্রু কুচকে বলে, ” লুকিয়ে প্রেম মানে? ”

–” জুই আপনার প্রেমিকা হয় তাই না? আচ্ছা বলুন তো, আপনার কতগুলো প্রেমিকা রয়েছে?

মিরার কথাগুলো তার মাতাল করা মাথায় এলোমেলো ভাবে বন্দুকের আঘাতের ন্যায় লাগল। বক্ষস্থলে রক্ত ঝরছিল যেন৷ সে বলে উঠে, ” ফালতু কথা বলবে না।”

ইমানের দিকে তাকাতেই মিরার দু’চোখের সামনে ওর আর জুইয়ের হাসিমাখা ছবিগুলো ভেসে উঠে। সে যেন তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে, “আমি ফালতু কথা বলছি না। বরং আপনার কাজ-কর্ম খুবই ফালতু, জঘন্য। নিসন্দেহে আপনি একজন চরিত্রহীন লোক। ”

–” আমাকে চরিত্রহীন কেন বলছো তুমি? এই শব্দটা আমি প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করি।”

মিরা তবুও থামলো না৷ সে বলে উঠে, ” আচ্ছা আপনি কী জুইকেও হার হাইনেজ বলে ডাকেন? আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিলেন সেভাবে কী ওকেও জড়িয়ে ধরেন? ওকেও কী এমনই করে চু/মু দেন? সেদিন তুষারপাতের মধ্যে আমাকে যেভাবে পাগল করা আ/দ/র দিয়েছিলেন ঠিক একই ভাবে কী তাকেও দেন, ইমান?”

শেষের দিকে বলা কথাগুলো ইমান সহ্য করতে পারল না। বদহজম হলো৷ চোখ বুজে লম্বা শ্বাস নিয়ে সে মিরার গালে কষে একটা চড় মারে৷ ওই নরম গালে সে কোনদিন ফুলের টোকা দিতে চায় না। সবসময় আ/দ/র দিতে চায়৷ কিন্তু দ্যাখো, পরিস্থিতি কোন জায়গায় এলে দাড় করালো তাকে।

নিজের চুল টেনে ধরে ইমান বলে উঠে, ” মিরা চুপ কর প্লিজ। ননসেন্স কতক্ষন সহ্য করব? লেট মি ক্লিয়ার ওয়ান থিংক, জুই শুধুমাত্র আমার ফ্রেন্ড হয়৷ ওর সাথে বিশেষ কোন সম্পর্ক আমার নেই৷ তবে হ্যাঁ খুব ভালো বন্ধু হয় ও আমার। সবসময় ও আমার ভালো চেয়ে এসেছে।”

মিরা থাপ্পড় খেয়ে বিষ্মিত, ক্ষোভ, হতভম্বের শেষ সীমানায় পৌঁছে যায়। সে বলে উঠে, ” শুধুমাত্র বন্ধুর জন্য আমাকে থাপ্পড় মারলেন?”

ইমান বলে উঠে, ” দেখ, তুমি যদি বুঝতে না চাও আমার কিছু করার নাই। আমার যা বলার বলে দিয়েছি আমি। চোখ বন্ধ করে রাখলে পৃথিবী দেখা যায় না৷ সত্য জানার জন্য হলেও চোখ খুলতে হয়৷ তোমার মুখ থেকে চরিত্রহীন উপাধি আমাকে ভেতরে ভেতরে শেষ করে দিচ্ছে মিরা৷ একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, পারসোনালিটি গঠন করতে অনেকটা কঠোর পরিশ্রম করতে হয়৷ আমি অনেক হার্ড ওয়ার্ক করে সোসাইটিতে নিজের ব্যক্তিত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি৷ অথচ এক নিমিষেই তুমি আমার ব্যক্তিত্বে দাগ এঁকে দিলে।”

মিরা গালে হাত দিয়ে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। ইমানের উপর সন্দেহ করা, সরাসরি প্রশ্ন করা কী তবে মস্ত বড় ভুল হলো?

সে বলে উঠে, ” সবাই ভাবে পুরুষদের চরিত্রে কলঙ্ক লাগালে তারা কষ্ট পায় না। এ ধারণা ভুল। নারীরা যেমন কষ্ট পায়, পুরুষরাও পায়৷ তোমার প্রতিটা কথা আমাকে হত্যা করছে বারংবার। কেন বুঝতে পারলে না তুমি আমাকে? কেন? নিশ্চয়ই এটা আমার ব্যর্থ্যতা৷”

সে খুবই এলোমেলো পায়ে হাঁটা ধরে। মিরা তাকিয়ে থাকল একদন্ড। তাহলে জুই কেন তাকে বলল তারা প্রেমিক-প্রেমিকা। ইমান কী সত্য বলল নাকি সত্য অস্বীকার করে বসল? সবকিছু এতো কনফিউজিং কেন? কেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সে? সে দরজা ধরে কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকল৷ খুব অসহায় লাগছে এই মূহুর্তে। নিচ থেকে মাইকে এনাউন্সমেন্ট করার শব্দ আসছে। নিশ্চয়ই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। দশ মিনিট সেভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর সে নিচে নেমে এলো। চারিদিকে ঝকঝকে আলো জ্বলছে৷ মৃদ্যু মিউজিক বাজছে। হলজুড়ে হিটার চলছে। আজকেও বাইরে তু্ষারপাত হচ্ছে। যার জন্য মানুষ-জন কম বের হচ্ছে৷ নিজস্ব নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া আজ কেউ বের হবে না বোধহয়। কেউ কেউ বাসায় ঘুমাচ্ছে৷ কেউ পার্টি করছে। আবার কেউ স্টাডি নিয়ে ব্যস্ত । এতো বড় শহরে আজ যে যার মতো ব্যস্ত৷

স্টেজে ইমান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশেই পিটার। উনি একটা ক্রেজ ইমানের হাতে তুলে দিতেই চারপাশে করতালিতে পরিবেশ মুখরিত হলো। পিটার সাহেব কেক কাটলেন। ইমানকে খাইয়ে দিতে চাইলে সে না বোধহয় ইচ্ছা পোষণ করে৷ যার প্রিয় মানুষ তাকে সন্দেহ করে, তার নিশ্চয়ই এখানে মজা করে কেক খেতে মন চাইবে না৷ ইমান গোমড়া মুখে দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে জুই স্টেজে উঠে এসে তার পানে তাকিয়ে মুচকি হাসল। তার ভারী বিব্রতবোধ হচ্ছে৷ তাকে আর জুইকে নিয়ে কীসব বাজে বলেছে মিরা।

পিটার মাইক হাতে বলে, ” একটা গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট বাকি আছে।”

সবাই আবারো চিয়ার আপ করল। উনি ইমানের কাঁধে হাত রেখে হাসিমুখে বলে, ” আপনারা সবাই জানেন, ইমান আমার কোম্পানিতে অনেকদিন ধরে আছে৷ ওর পরিশ্রম, মেধা, সততা, ডেডিকেশনের জন্য কোম্পানি শুধু লাভই করে গেল। বিনিময়ে ওকে আমরা তেমন কিছু দিতে পারছি না৷ এজন্য ওকে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী সম্পদটা দিতে চাই। ওকে নিজের কাছে রাখতে চাই৷ ওকে আপনজন করে পাশে রাখতে চাই আজীবন। ”

ইমান পিটারকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” স্যার, আমি তো সবসময়ই আপনার সঙ্গে আছি। নতুন করে বলার কী আছে? ”

পিটার হেসে ফেলে বলে, ” আমি তোমাকে আমার সন-ইন-ল হওয়ার প্রোপোজাল দিচ্ছি৷ তুমি কী আমার আদরের প্রিন্সেসের দায়িত্ব নিবে? ”

ইমান পিটার স্যারের কথায় পিলে চমকে উঠে। সে আড়চোখে জুইয়ের দিকে তাকালো। সে মুচকি হেসে মাথা নিচু করে ফেলল। হুট করেই ইমানের বড্ড পিপাসা পেল। এইসব মিরা শুনে ফেললে নিশ্চয়ই তাকে ভুল বুঝবে। কেন বারবার এমন হচ্ছে? তার হাঁসফাঁস লাগতে শুরু করল। মস্তিষ্কে চাপ পড়ছে। মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাবে সে। এদিকে পিটার উত্তরের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে৷

কথায় আছে না? যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা নাকি একটু আগে হয়! মিরা এতোক্ষণ উপরে বসে বসে কান্না করলেও ঠিক তখনই নিচে নামে যখন পিটার ইমানকে নিজের মেয়ের জন্য যোগ্য বলে সবার কাছে পরিচয় দিচ্ছিল।

তার চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ল। সে স্টেজের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে। আসার আগে ইমানের নাম্বারে ম্যাসেজ দেয়, ” বন্ধুর বাবাও জানে সম্পর্কের কথা। ভাই জানে, মা জানে। শুধু জানে না সে, যাকে দিনের পর দিন ঠকাচ্ছেন৷ আচ্ছা ইমান এমন বন্ধু কোথায় পাওয়া যায়? যার সঙ্গে ডেইট করা যায়? বিয়ে করা যায়?আমাকে বলবেন প্লিজ? তাহলে আমিও এমন জাস্ট ফ্রেন্ড বানিয়ে রাখব।যার সঙ্গে যখন ইচ্ছা ডেটে যাওয়া যায়৷ আপনার তো ডেট খুব পছন্দ। আমাকেও কফি ডেটের অফার দিয়েছিলেন৷”

চলবে৷

(বাংলা ধারাবাহিক গল্প)