#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–48 (বোনাস)
মিরা এক ছুটে এগারো তলা থেকে নিচে নেমে আসে পায়ে হেঁটে । সিড়ি দিয়ে নেমে এসেছে সে। এগারোতলা থেকে তাড়াহুড়ো করে নামার কারণে সে ঘামতে লাগলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে সে এক্সিট গেটের সামনে এসে দাড়ালো। ততক্ষণে বরফে চারপাশে ভরে উঠেনি। কেবল একটু করে তুষারপাত হচ্ছে৷ ঝিরিঝিরি করে৷ জমিনে বরফ পতিত হতেই গলে যাচ্ছে৷ সারাদিনে একবারও বরফ পড়েনি৷ এখন একদিন পর আবার বরফ পড়তে আরম্ভ করেছে৷ সে দু’কদম আগাতেই ওয়াচম্যান তার সামনে এসে বলে, ” তুমি কী বাইরে যেতে চাচ্ছো?”
–” হ্যাঁ। ”
–” ওয়েদার কিছুটা খারাপ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরো খারাপ হবে। এখন এভাবে বের না হলেই ঠিক হবে। ”
–” সমস্যা নেই৷ আমি ম্যানেজ করে নিব৷”
–” আচ্ছা ঠিক আছে। ”
ম্যানেজ করে নিব বলে বিল্ডিং থেকে বের হতেই তার মনে হলো কাজটা ঠিক হয়নি৷ বেশ ভালোই শীত পরে গেছে। বলতে গেলে ঝাকিয়ে শীত নামছে। খুবই নরম নরম বরফ আসমান থেকে বৃষ্টির মতো ঝপঝপ করে পড়ছে। গায়ে এসে আদুরে ভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু মিরার হৃদয়ে তখন ভাংচুর চলছে৷ কাঁচ ভাঙ্গা ক্ষতিকর টুকরো গুলো হাত দিয়ে ধরলে যেমন ক্ষত-বিক্ষত হয় হাত, কেটেকুটে রক্তাক্ত হয় ঠিক তেমনই করে বুঝি কেউ তার হৃদয়ের অন্তঃস্থলটাকে কেটে টুকরো টুকরো করে রক্তাক্ত করছে। সে চোখের পানি বারবার মুছে ফেলছে৷ যতোবারই মুছে ফেলছে ততোবারই অশ্রু বর্ষিত হচ্ছে৷ গাল লাল হয়ে গেছে। সে দিক-বেদিক ভুলে হাঁটা দিল। লোকেশন তার মনে নেই। সম্ভবত তারা সেন্ট্রাল পার্ক ক্রস করে আরো কিছু দূর এগিয়ে গিয়েছিল। এখন মনেই আসছে না তার লোকেশন৷ লোকেশন যাই হোক। আজ যেদিকে মন চাচ্ছে সেদিকে ছুটে পালাবে। ভারাক্রান্ত, ক্ষতপ্রাপ্ত, দুঃখী মন বাস্তবতা ভুলে শুধু বহু দূর ছুটে যেতে চায়, যেখান থেকে তাকে কোনদিন শুনতে হবে না যে সে থার্ড পারসন৷ কেউ তাকে থাপ্পড় ও মারবে না৷ এতো দূরে হারিয়ে যেতে চায়। তার অবস্থা নিদারুণ, করুণ। কাদতে কাদতে মাথা ধরে গেছে৷ এই মূহুর্তে মনে হচ্ছে সে বেঁচে আছে কেন? পৃথিবীটা অর্থহীন।
মিনিট বিশ একটানা দৌড়ে আসার ফলে সে হাপিয়ে উঠে৷ পা চালিয়ে আর এক কদম হাঁটা তার জন্য অসম্ভব বলতে গেলে। সে দম নেওয়ার জন্য থামতেই আঁচ করতে পারল প্রকৃতির তাণ্ডব লীলা। প্রচণ্ড গতিতে বাতাস ধেয়ে আসছে। মনে হচ্ছে বিশাল বড় দালাল গুলোও ভেঙে গুড়গুড় হয়ে যাবে। সেই সাথে সেকেন্ডের মধ্যে নরম তুলতুলে বরফ খণ্ড গুলো রগচটা, ভয়ংকর রুপ ধারণা করে৷ প্রকৃতির রাগান্বিত রুপ দেখে সে ভয় পেয়ে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার হলেও আলো জ্বলছে৷ আকাশের বুকেও তারা উঠেছে ডজন খানেক৷ বাতাস বইছে প্রবল আকারে। বাতাসের মাত্রা অতিরিক্ত শীতল স্পর্শ গায়ে এসে বিঁধতেই প্রতিটা লোম খাড়া হয়ে আসছে৷ গাউনের কাপড়, চুল উড়ছে এলোমেলো ভাবে। প্রতি মুহূর্তে রাস্তার মধ্যে বরফ জমা হচ্ছে৷ আর কিছুক্ষণ হলেই তো সেদিনকার মতো বরফ জমে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাবে। কী করবে সে? একবার ভাবল উলটো দিকে ফিরে যাবে৷ কিন্তু মনের কোনে বিপুল পরিমাণ অভিমান জন্ম নিয়েছে৷ তার অভিমান গুলোকে একগুচ্ছ করে বিশ তলা বিল্ডিং বানানো যাবে৷ কার কাছে ফিরে যাবে সে? মা আর বোন ছাড়া তার কোন আপনজন নেই৷ সে বুকে যন্ত্রণা নিয়ে আবারো হাঁটা ধরে সামনের দিকে। এবারে হাঁটতে বেগ পেতে হচ্ছিল তাকে। রাস্তার মাঝ দিয়ে চার-পাঁচটা গাড়ি বেশ স্পিড তুলে তাকে ক্রস করল। একটা গাড়ি তাকে দেখে থেমে যায়৷ কাঁচ তোলা ওই কালো গাড়ি দেখে মিরা ভাবে নিশ্চয়ই ইমান এসেছে৷ কিন্তু তাকে ভুল প্রমানিত করে অন্য এক শেতাঙ্গ কাঁচ নামিয়ে বলে, ” ডু ইউ নিড হেল্প?”
–” নো। ”
তার সোজাসাপটা জবাব৷ উনি তবুও বলে, ” শিউর? ”
–” ইয়েস৷”
গাড়িটা তাকে ক্রস করে চলে যেতেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার৷ সামনে পা বাড়ানোর ক্ষমতা বা শক্তি তার মধ্যে অবশিষ্ট নেই। উদাস চাউনিতে সে রাতের আকাশ দেখল। বরফ পড়া দেখল। বরফময় শীতল হাওয়ার তোড়ে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে৷ পা জমে যাচ্ছে। হা কাঁপছে। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে সে । ঠাণ্ডায় মনে হচ্ছে জান বেরিয়ে যাবে৷ সে একটা গাছের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। গাছটা দেখে মনে হলো ক্রিসমাস ট্রি। গাছ সম্পর্কে ধারণা কম জন্য সে পুরাপুরি ঠাওর করতে পারল না৷ তবে গাছের গায়ে বরফ জমতে শুরু করেছে৷ ল্যাম্পপোস্টের আলো গাছে এসে ঠেকছে৷ বরফ গুলো ঝলমলিয়ে হাসছে৷ বরফ দূর থেকে দেখতেই সুন্দর। কাছাকাছি ততোটাই ভয়ংকর। এর কবলে পরে সেটা হারে হারে টের পাচ্ছে সে। মিরার চোখের কোটরে নদী ভরে যাবে যেন! সে নিস্তেজ, ক্লান্তসিক্ত হয়ে বসে পরে। অভিমান, রাগ, দুঃখ, বিরহ, ভালোবাসার থেকে প্রতারণা সব মিলেমিশে এক অসহ্য যন্ত্রণায় সে কাহিল হয়ে পড়েছে৷
______________________
স্টেজের দিকে সকলের এটেনশন৷ সবাই উত্তেজিত হয়ে আছে পরবর্তীতে কী হতে চলেছে জানার জন্য । ইমানের মুখ থেকে কিছু শোনার জন্য দর্শকরা ব্যাকুল। কিন্তু ও একদম চুপ৷ যেন শশ্মানে দাঁড়িয়ে আছে সে। কিংবা কথা বললেই হাজার ডলার জরিমানা। পিটার তাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” কী হলো তোমার ডিয়ার?”
ইমামের এবার টনক নড়ল। সে এগিয়ে এসে জুইকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।”
জুই হেসে বলে, ” পরে বললে চলবে না? ”
–” না। আজ তুমি সত্যটা না জানলে আমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।”
ইমানের অভিব্যক্তি দেখে কিছু আঁচ করতে পারছে সে। ও অত্যাধিক গম্ভীর হয়ে আছে। যেন দু সেকেন্ড আগেই মৃত্যু সংবাদ শুনেছে৷ জুই বলে উঠে, ” আচ্ছা তাহলে বল।”
ইমান আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুঁজল। এরপর বলে উঠে, ” এখানে না। পারসোনালি বলতে চাই।”,
জুই একটু হলেও ভয় পেল। পরক্ষণ ভাবল সবার সামনে হ্যাঁ বলতে লজ্জা পাচ্ছে। সে বলে উঠে, ” ঠিক আছে। কর্ণারে চল৷ ওদিকটা নিরিবিলি।
ইমান তার কথা শুনে স্টেজ থেকে নেমে যায়৷ পিটার কিছু বলে উঠার আগেই জুই বলে, “পাপা, আমাদের একটু স্পেস চাই৷”
–” কিছু হয়েছে? ”
পাপার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, ” না, পাপা। সব ঠিক আছে। জাস্ট কিছুক্ষণ সময় দাও।”,
জুই স্টেজ থেকে নেমে ইমানের পিছু নিল৷ কর্ণারের দিকে এসে থামল সে। ততক্ষণে ইমান মনে হয় যা যা বলবে সেগুলো মনে মনে ঠিক করে নিচ্ছে৷
জুই বলে, ” মিষ্টার খান?”
ইমান চোখ বন্ধ করে হড়বড় করে বলে, ” আই এ্যাম ম্যারিড জুই। আমার উচিত ছিল আগেই সবটা জানানো। এই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে এখন। ”
জুই কথাটা শোনামাত্র বজ্রপাতের মতো চমকে উঠে। সে অপ্রতিভ হয়ে পড়ে। দিশেহারা হয়ে বলে, ” কী বলছো তুমি? ”
–” বাংলাদেশে যাওয়ার পর আমি বিয়ে করেছি। জানো আমার একটা খুব মিষ্টি বউ আছে। যাকে আমি এখন মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি।”
ইমানের মুখে বিয়ে-বউ-ভালোবাসা শব্দ গুলো শুনে জুইয়ের চোখ ভিজে উঠে। সে তোতলাতে তোতলাতে বলে, ” কে সে? তুমি আমাকে জানাও নি কেন? নিশ্চয়ই ফান করছো? ইমান এটা মজা করার কোন সময় হলো?”
ইমান সরাসরি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি মজা করছি না৷ সত্যি আমি বিবাহিত৷ আজ আমাদের বিয়ের দুই মাস চলছে৷ আমি ধারণাও করিনি পিটার স্যার এমন কিছু আবদার করে বসবে৷ তোমাকে সবসময় একজন ফ্রেন্ড হয়তোবা বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই দেখেছি। ওই নজরে কোনদিন দেখিনি৷ আমি জানি তুমিও স্যারের কথায় বিব্রত হচ্ছো৷ স্যার আমাদের ভুল বুঝছেন।”
জুই আহত দৃষ্টি মেলে তার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি আমাকে ভালোবাসেন না?”
–” আমি কেন তোমাকে ভালোবাসব জুই? এমন কথা কোনদিন বলেছি তোমায়?”
–” বলেন নি৷ কিন্তু বোঝা যায় তো।”
–” ভালোবাসা প্রকাশ না করলে বুঝলে কীভাবে?”
–” মিষ্টার খান, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। সম্ভবত নিজের সত্তা খুইয়ে হলেও আপনাতে আসক্ত।”
ইমান তার কথা শুনে পিলে চমকে উঠে বলে, ” কী বলছো তুমি খেয়াল আছে?”
–” আমার ধ্যান-জ্ঞানে কেবল আপনি! ”
–” জুই তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। গিয়ে রেস্ট নাও।”
জুই তার হাত ধরে মিনতি করে বলে, ” আই লাভ ইউ। প্লিজ আমাকে একসেপ্ট করুন৷ আপনাকে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারছি না।”
ইমান এক ঝটকায় তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, ” আমি বিবাহিত জুই। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও।”
সে জুইকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে ধরলে জুই বলে উঠে, ” তাহলে আপনি আমাকে বিয়ে করছেন না?”
–” তুমি পাগল হয়ে গেছো। সাইক্রিয়েটিস্ট দেখাও।”
–” আপনাকে ভীষণভাবে পস্তাতে হবে৷”
— “ওলরেডি পস্তাচ্ছি আমি৷”
বলে সে চলে আসে হোটেল রুমে। হোটেল রুমের দরজা খোলা৷ ভেতরে কেউ নেই। সে ফোন বের করে মিরাকে কল দেওয়ার জন্য। মেয়েটাকে সর্যি বলতে হবে। বেশি রুড হয়ে গিয়েছিল। বুঝিয়ে বলতে হবে। ফোন হাতে নিতেই মিরার ম্যাসেজ দেখেই তার পায়ের তলা থেকে মাটি নাই হয়ে গেল।
সে মরা গলায় বলে, “শিট! কেন বারবার আমাকে ভুল বুঝো তুমি? ”
সে হন্তদন্ত হয়ে নিচে নেমে হল চেক দেয়। কোথাও মিরা নেই। সাদের সঙ্গে দেখা হলো। পিটার তাকে দেখে স্টেজ থেকে নামল। সে বুঝতে পারছে সবাই তার দিকে চেয়ে আছে৷ কিন্তু এই মূহুর্তে সে কোন কিছু ভাবতে পারছে না৷ মিরাকে না দেখা অব্দি ঠিকঠাক নিশ্বাস নেওয়াই দায়৷ সাদ তার দিকে আসলে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে, ” মিরাকে দেখেছিস?”
— ” না ভাইয়া। অনেকক্ষণ হলো তাকে দেখিনি।”
ইমান বুঝতে পারল, সিচুয়েশন খুব একটা অনুকূলে নেই। মিরা মেয়েটা বড্ড বেখেয়ালি এবং অভিমানী। রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সোনালী আপুর হলুদের কথা মনে পড়ে গেল তার৷ সামান্য জামা কেটে দেওয়ার জন্য ও প্রোগ্রামে যাবে না বলে গো ধরে বসেছিল৷ আজ এতোবড় ভুল বোঝাবুঝির পর যদি ভুল কোন স্টেপ নেয় ও? তার বুক ছ্যাত করে উঠে। আতকে উঠে সে। এক পল অপেক্ষা না করে হলের বাইরে এসে লিফট কল করে। ফোন হাতে নিয়ে মিরার নাম্বার তার এক ফ্রেন্ডকে টেক্সট করে লোকেশন ট্রাক করার জন্য।
সে নিচে নেমেই ওয়াচম্যানকে মিরার ছবি দেখিয়ে বলে, ” এই মেয়েটাকে দেখেছো তুমি? ”
ওয়াচম্যান ছবি দেখে বলে, ” প্রায় আধঘন্টা আগে ও এই খারাপ আবহাওয়ায় বেরিয়ে গেছে৷”
আবহাওয়া খারাপ শুনে ইমানের হুশ হলো আজ তো ওয়েদার ফল করার কথা৷ নিউইয়র্ক সহ আরো কয়েক জায়গায় ব্লিজার্ড ওয়ার্নিং দিয়েছে৷ সে কপাল চামড়ালো। ম্যাসেজ আরো চল্লিশ মিনিট আগেই তাকে দিয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আগে কেন ফোন বের করেনি সে? উফফ এতো অস্থিরতা নেওয়া যাচ্ছে না৷ দুমিনিট পর তার ফ্রেন্ড রিপ্লে দিল। মিরার ফোনের লোকেশন পাওয়া গেছে। সে যেখানে আছে সেখান থেকে লোকেশন বিশ মিনিটের পথ। গাড়ি বের করে ড্রাইভ শুরু করল। আজ গাড়ি চালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। তুষার পড়ছে। গাড়ির কাঁচ বরফে ভরে যাচ্ছে বারবার। গাড়ি চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়াও অস্থির হয়ে আছে তার সর্বাঙ্গ। মনে কু ডাকছে৷ সে ত্রিশ মিনিট পর কাঙ্খিত লোকেশনে এসে পৌঁছে। জ্যাকেট ছাড়া গাড়ি থেকে বের হতেই মনে হলো সে এই মূহুর্তে জমে ফ্রিজ হয়ে যাবে৷ শীতের জ্বালায় মরি মরি অবস্থা। মিরার লোকেশন ও এখানে সো করছে। সে ফ্লাশ অন করে মিরাকে ডাকতে লাগে। অন্ধকার হলেও ল্যাম্পপোস্টের আলো আছে। বরফে ঢাকা রাস্তায় হাঁটতে পারছে না সে। স্নো বুট পরে আসেনি। পা জমে গেছে। বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে অসুস্থ হয়ে যাবে সে।
আচমকা সে যেন কিছু একটা দেখে ফেলে। অবচেতন মস্তিষ্ক সবটা ধরতে পারল। এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটে আসে। ছুটে আসার সময় গাছের গুড়ির সঙ্গে লেগে পা ছুলে যায় তার৷ রক্তও বের হলো বুঝি৷ সেদিকে তাকানোর সময় নেই। গাছের নিচে মিরা উপুড় হয়ে শুয়ে আছে৷ তার চোখ-মুখ-চুল বরফে ঢেকে গেছে৷ কোমড়ের উপর স্তুপ জমা হচ্ছিল। তবে একটু দূর থেকে তার গাউনের গোলাপি রঙের ঝিকিমিকি দেওয়া অংশ হলদে আলোয় ঝলমল করছিল জন্য ইমানের নজর সেদিমে গিয়ে থেমেছিল৷ মিরার কাছে আসতেই তার আত্মা শুকিয়ে উঠে। মেয়েটারর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ঠাণ্ডায়। মরা লাশের মতো ঠোঁট সাদা হয়ে এসেছে। তবুও অল্প বিস্তর তার ঠোঁট কাপছে৷ মিরাকে এভাবে, এ অবস্থায় দেখে তার চোখ বেয়ে একফোঁটা পানি পড়ল৷ বহু দিন পর কাদল সে৷ মিরার মাথায় হাত বুলায়। হাতে হাত রাখে। ঠাণ্ডায় হাত যেন জমে গেছে। এক শীতের কবলে পরে বোধহয় ও সেন্সলেস হয়ে গেছে। ওকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে নেয় ইমান। এরপর বলে, ” মিরা, তুমি-ই কেবল আমার হার হাইনেস, আমার রাজকন্যা, আমার শেহজাদী। বিশ্বাস কর, তোমাকে ছাড়া অন্য কোন নারীকেই আমি শেহজাদী বলে ডাকিনি। আমার ছোট্ট রাজ্যের রঙিন পাখিটা শুধুমাত্র তুমি। তবুও কেন সন্দেহ করলে?”
আবারো তার চোখ বেয়ে পানি পড়ে। এভাবে তুষার পাতের মধ্যে থাকা যাবেনা৷ কিছু করতে হবে৷ গাড়ির হিটারেও বুঝি মিরার গা গরম হবে৷ সামান্য দূরে সে একতলা কাঠের একটা বাড়ি দেখল৷ ওখান থেকে টিপটিপ আলো ভেসে আসছে। এধরনের বাসাগুলো যারা সলভেন্ট কম তারা কম ডলারে রেন্টে থাকে। ওখান থেকে সাহায্য নিতে হবে। সে মিরার ঠাণ্ডা শরীরটা কোলস তুলে ওই বাসায় গিয়ে দরজা জোরে জোরে নক করে। এমন ওয়েদারে আমেরিকানরা রাতে নিজের মত করে কাটায় ম/দ পান করে। বার কিউ করে৷ কেউ বেল বাজালে বিরক্ত হয়৷
দু’মিনিট এর মাথায় একজন বুড়ি গেইট খুলে দিল। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি বিরক্ত৷
ইমান তার কাছে সাহায্য চাইল। উনি ঝারি মেরে বলে, ” এমন শীতে এতো পাতলা কাপড় পরে বের কেন হয়েছো? নতুন নাকি নিউইয়র্কে? তোমাদের মতো কিছু গাধার আমদানি আজকাল নিউইয়র্কে হয়েছে। বুলশিট। আস। ভেতরে। আমার বাসায় হিটার নষ্ট। ফায়ার প্লেস আছে৷ ওটা জ্বালিয়ে তোমার সঙ্গীকে উষ্ণতা দাও।”,
— অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে।”
–” তোমার মতো গাধাকে সাহায্য করতে পেরে আমি খুশি।”
উনি টাওয়াল, মোটা কাপড় দিয়ে চলে গেলেন। একটা ছোট্ট রুমে তাদের থাকার জায়গা হলো। ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালালো সে৷ কিন্তু মনে হয় কাঠ ড্যাম হয়েছে। দাউদাউ করে জ্বলার বদলে খুবই ধীরে আগুন জ্বলছে। ইমান ওর গাউন বদলে মোটা জামা পরিয়ে দিল। পায়ে মুজা পরালো। হাতে হাত রেখে ঘষতে লাগলো। একটুকুও গা গরম হয়নি ওর। নিজের শার্ট খুলে শুকাতে দিল। মিরার এই মূহুর্তে উষ্ণতা, উত্তাপ, তাপ, গরম দরকার। তার কী উচিত মিরার ঘনিষ্ঠ হওয়া? কাছে আসলেই তো মিরা ক্ষেপে যায়। এখন এসব ভাবার সময় না। ওর দরকার উষ্ণতা। ইমান তার শরীরের সব উষ্ণতা পারলে ঢেলে দেয়৷
ইমান সাত-পাঁচ না ভেবে মিরার মুখ মণ্ডল নিজের ঠোঁ/টে/র দিকে এগিয়ে আনে৷ ক্ষণেই ওকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসা, আ/দ/র, উষ্ণতা বিকিয়ে দিল৷ তাদের মধ্যে দূরত্ব মিটে গেল৷ আস্তে আস্তে মিরার শরীরের ঠাণ্ডা ভাব কমতে লাগলো। ইমান তার চোখে, মুখে, গলায়, হাতে নিজের উষ্ণ অ/ধ/র জোড়া ছুইয়ে দিল।
চলবে।
#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–49
অম্বর জুড়ে শুভ্র মেঘের ছড়াছড়ি। রাতের আকাশ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে অপূর্ব দৃশ্য। মিষ্টি নক্ষত্রকুঞ্জের জ্বলতে থাকা আলোর দিকে তাকিয়ে আছে ইমান৷ ভোর হতে বেশি সময় বাকি নেই। শেষরাতের তারা শেষ সাক্ষাৎ দেখতে ব্যস্ত সে৷
ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে শুয়ে আছে তারা৷ তার বুকের উপর মিরার নরম শরীরটা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে৷ উষ্ণতা শু/ষে নিচ্ছে মনে হয় মেয়েটা৷ ওদিকে ফায়ার প্লেস থেকে মৃদ্যু মৃদ্যু তাপে রুমের শীতল ভাব কিছুটা প্রশমিত হচ্ছে আধো আলোয় সে মাথা সামান্য ঝুঁকিয়ে মিরার দিকে তাকালো। কী নিষ্পাপ মুখটা! যেন কোনদিন ওই মুখে পাপেরা ছোঁয়া লাগায়নি। বাচ্চাদের মতো দিন-রাত ভুলে ঘুমাচ্ছে। ওর শ্বাস-প্রশ্বাসের ওঠানামা ইমান নিজের বুকের উপর টের পাচ্ছে। দু’ঘন্টা ধরে তারা দুজনই শুয়ে আছে। ইমানের ভীষণ ক্লান্ত লাগছে৷ আজ সারাদিনে অনেক ধকল গেছে। শারীরিক, মানসিক দুই দিক দিয়েই! দু’চোখে ঘুম যেন তাড়া করছে৷ কিন্তু তার দুশ্চিন্তা এক জায়গায়, যদি মিরার কোনকিছুর দরকার হয়? ওর শরীর অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। যদি জ্বর আসে? বা ঘুম ভাংলে পিপাসা পায়? এসব ভেবে সে না ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিল৷ একরাত না ঘুমিয়ে কাটানো যাবে। তারচেয়ে বরং আজকের এই তারা ভরা অম্বরের নিচে শুয়ে ওই বদলখানির দিকে তাকিয়ে পাড় করে দিক। ওই নিষ্পাপ চেহারা, আদরমাখা ওষ্ঠদ্বয় সে কোনদিন ভুলতে পারবে না৷ এই মুখমণ্ডলটা এবং এই মানুষটা তার অন্তরের প্রতিটা অংশে বাঁধা পড়ে গেছে৷ কাটাতারের শক্ত বাঁধন যেন! ইমানের মন চাইছি মিরার বুকের মধ্যে ঢুকে গিয়ে তার প্রতি সকল ঘৃণা, অপছন্দ, বিরক্ত, তিতোভাব এবং তাদের দুজনের মধ্যকার তিক্ত মুহুর্ত গুলোকে টেনে হিঁচড়ে বের করে এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে৷ কিন্তু এতো সম্ভব না। তাহলে কীভাবে মিরার মনে দ্বিতীয়বার নিজের জন্য জায়গা করে নিবে? কীভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুনরায় ভালোবাসবে? সে ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তার বেদনা ভরা দীর্ঘশ্বাসে পুরো রুম জুড়ে বিষন্নতা ছেয়ে গেল। মিরা ঘুমের মধ্যে নড়েচড়ে উঠে। সে নিজের বাম হাত দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।ছোট বাচ্চাদের ঘুম গভীর হওয়ার জন্য যেমন মাথায় হাত বুলানো হয় অনেকটা তেমনই করে ওর চুলে বিলি কেটে দিল৷ সারারাত বাইরে তুষারপাত হলো। ঝড় হলো। এমন কী বাইরে তাপমাত্রা নেমে মাইনাস থ্রিও হয়েছে৷ বাতাসের জন্য বারবার কাঠের জানালায় বাড়ি খেয়ে আওয়াজ করছিল৷ প্রতিবারই মিরা মৃদ্য কেঁপে উঠছে ঘুমের মধ্যে । ইমান অনুভব করল, তার বুক উত্তাপে ছারখার হচ্ছে। বুক পুড়ে যাচ্ছে গরমে। সে ঘুমু ঘুমু চোখে মিরার কপালে হাত রাখে৷ ইশ! কপাল যেন পুড়ে যাবে। জ্বর চলে এসেছে৷ এর আগেও মিরার জ্বর এসেছিল৷ কিন্তু এবার ইমানের অস্থিরতা চারগুণ বৃদ্ধি পেল৷ এটারই ভয় পাচ্ছিল সে। মিরাকে বুক থেকে সরিয়ে সে ফ্লোরে শুইয়ে দিল৷ এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করল। জ্বর থামার কোন নাম-গন্ধ নেই। সে জলপট্টি দেওয়ার ব্যবস্থা করে৷ নিজের শুকনা শার্টটা ভিজিয়ে মিরার গা মুছিয়ে দিল বেশ ক’বার। আস্তে আস্তে জ্বর নেমে আসে। তবুও কপালে ভেজা শার্ট দিয়ে রাখল৷ এরপর পুরো রুমে পায়চারি করে। অনেক আগেই সাদকে ম্যাসেজ করে দিয়েছিল। সাদ মাত্র রিপ্লে পাঠালো, ” ওকে স্টে সেইভ৷”
সে লক্ষ্য করল, বরফ পড়া কমে আসছে। তবে রাস্তায় এখন বের হওয়া দুষ্কর। বরফ সরানো হয়নি এখনো৷ অর্থাৎ আরো খানিকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে৷ রুমের মধ্যে আসবাবপত্র বলতে তেমন কিছু নেই। ফায়ারপ্লেসটা বাদে একটা পিয়ানো পড়ে আছে৷ অযত্নে পড়ে আছে সেটা৷ তবে কভার দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে৷ পিয়ানোর সামনে চেয়ার রাখা। তার চোখ বড় বেহায়া হয়ে গেছে। এতোকিছু দেখার মতো থাকা সত্ত্বেও চোখজোড়া মিরার গলার দিকে যাচ্ছে৷ ওর ফর্সা গলার কালো কুচকুচে তিল দুটোর দিকে চোখ নিবদ্ধ করে সে। বেশিক্ষণ সেভাবে তাকিয়ে রইলে সে আউট অফ কন্ট্রোল হয়ে পড়বে। আফিমের নেশাও বুঝি এর থেকে কম শক্তিশালী! ভাই রে ভাই! নিজের দুষ্টু মনকে অন্যদিকে ড্রাইভার্ট করার জন্য সে পিয়ানোর সামনের চেয়ারে বসে। ধুলো জমা কভারটা সরিয়ে পিয়ানো বাজানো শুরু করল। বহু আগে গানের প্রতি ঝোক ছিল। গিটার-তবলা, পিয়ানো হাল্কা হাল্কা বাজানো শিখেছিল সে। গানের স্বরও ভালোই ছিল। রবীন্দ্র সংগীত ভালো গাইতে জানত৷ পিয়ানো বাদকদের নিজস্ব গানের খাতা থাকে। এখানেও খুঁজে পাওয়া গেল৷ পুরোনো একটা ডায়েরি। ডায়েরির উপরে উনিশ’শ তিরাশি লেখা৷ বহু আগের কথা! সে যখন করুণ সুর তুলে পিয়ানো বাজানো শুরু করল তখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। সূর্যের আলো খুবই তীক্ষ্ম মাত্রায় জানালার ফাঁক গলে ভেতরে প্রবেশ করছে। সে সুরের মধ্যে এতোটাই ডুবন্ত হলো যে চারিপাশের কথা বেমালুম ভুলে বসল৷
বিষাদময় কান্নার শব্দে মিরার ঘুম ভাঙ্গে। সে চোখ খুলতেই মাথায় ব্যথা অনুভব করছে। সারা শরীরে যেন বিষ-ব্যথা! সে ভ্রু কুচকে সামনের দিকে তাকালো। অস্পষ্ট ভাবে সুঠাম দেহের একজনকে দেখল। যিনি মনোযোগ দিয়ে কী যেন হাতাচ্ছে। উঠে বসতেই সে বুঝল, এটা আসলে কোন কান্নার শব্দ না বরং পিয়ানোর সুর৷ সুরটা কারো বুকের ব্যথাকে সুরের রুপে রুপান্তর করছে যেন৷ ভোরের বেলা পিয়ানোর দুঃখী সুর শুনে তার বুক কেঁপে উঠে। পিয়ানোবাদকের কী খুব বেশি কষ্ট? তার চেয়েও বেশি? নিশ্চয়ই না। সে আরোও অবাক হয়, পিয়ানোবাদককে দেখে৷
ভোরের রৌদ্রজ্বল শুভ দিনের সূচনা। ঘন ঘন তুষারপাতের জন্য সাদা বরফে ঢেকে গেছে বাসার ছাদসহ আশপাশের বাড়ির ছাদ৷ যতোদূর চোখ যাবে তুলো মতো বরফের হাট-বাজার যেন৷ ইমানের দিকে চোখ গেল তার। খালি গায়ে চেয়ারে বসে আছে৷ ওর পেশিবহুল সুগঠিত দেহের দিকে এক পলল তাকিয়ে দ্রুত চোখ বুজে ফেলল৷ যদিও বা মানুষটা একান্ত তার। তারপরও সে চোখ নামিয়ে নিল৷ জানালা গলে সোনালী রোদে ওর চোয়াল, গলা, হাত ঝকঝক করছে। ওকে যতোবারই দেখছে বুকের মধ্যে চিনচিন ব্যথা হচ্ছে। গভীর সেই চিনচিনানি ব্যথা যা বলে বোঝানো যাবে না৷ তাহলে কী কাল রাতে ইমান তাকে খুজে পেয়েছিল? নাকি সে ভ্রম দেখছে এখন?
মিরা উঠে দাড়ালো এবং পিয়ানোর সামনে এসে দাড়ালো। তার উপস্থিতি টের পেতেই সেই বুক কাপানো সুর থেমে যায়৷ পিয়ানো রিড থেকে ও হাত নামিয়ে ফেলে এবং ইমান পিছনে তাকিয়ে তাকে দেখে সামান্য চমকালো। তবে নিজেকে ধাতস্থ করে বলে, ” গুড মর্নিং।”
মিরা জবাব দিল না। সামনের আয়নায় নিজেকে দেখে সে বিষ্মিত। বেবি পিংক রঙের নাইটি পরে আছে সে। নাইটির উপর মোটা শীতবস্ত্র। কিন্তু হাঁটুর ইঞ্জি দুই পর থেকে তার পায়ে কোন কাপড় নেই। নিজেকে এই রুপে দেখে ঘাবড়ে যায়৷ বাঙ্গালী মেয়েরা এ’জাতীয় জামা পরে না সাধারণত। পোশাক-আশাক থেকে চুল সবকিছুই অগোছালো। যেন শ/রী/রে/র উপর দিয়ে ঝড় গেছে। অস্বস্তি হতে লাগলো।
সে অনুভব করল তার সর্বাঙ্গে একটা ব্যথা কাজ করছে। এই ব্যথার সঙ্গে এর আগেও একবার পরিচিত হয়েছিল সে। ওইদিনও তুষারপাত ছিল৷ সে কঠিন চোখে ইমানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমরা এখানে কী করছি? এটা কোন জায়গা? আপনি আমার কাছে এলেন কিভাবে?আর আমি-ই বা এমন অবস্থায় কেন? সবকিছুই এতো অগোছালো কেন?”
ইমান অসহায় মুখ করে বলে, ” রিল্যাক্স হও প্লিজ। এতো প্যানিক হচ্ছো কেন শুনি? আমার সঙ্গেই তো আছো।”
–” এজন্য তো আরো বেশি চিন্তা হয়।”
ইমানের হাসিমাখা মুখে ধূসর মেঘের আবির্ভাব ঘটে৷ সে বলে, ” আমি কী তোমাকে পাচার করে দিব নাকি যে এতো অস্থির হচ্ছো?”
–” আপনি কাল রাতের আমার সঙ্গে কী করেছেন?”
ইমান আড়চোখে একবার দিকে তাকিয়ে বলে, ” বিশ্বাস কর আমি কিছু করিনি৷”
–” আপনাকে বিশ্বাস করতে চাই না।”,
–” আমাকে ভুল বুঝ না। প্লিজ। তোমার শরীর অনেক ঠাণ্ডা ছিল। এজন্য এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এতো তুষারপাত হচ্ছিল যে গাড়ি চালিয়ে যেতে টাইম লাগত। এদিকে তুমি ঠাণ্ডায় অচেতন হয়ে পড়েছো৷ উপায় না পেয়ে তোমাকে উত্তাপ দেওয়ার জন্য…….. ”
–” এতো কথা বলছেন কেন? আপনার কাছে কৈয়ফত চাই নি তো। আপনি স্বামী হন, যখন ইচ্ছা কাছে আসতেই পারেন৷ আমার ইচ্ছার তো দাম নেই এমনিতেও আপনার কাছে৷”
–” তুমি আবারো আমাকে ভুল বুঝছো।”
–” থাক বাদ দেন৷ আপনাকে সঠিক করে বোঝা আমার কর্ম না।”
ইমান হতাশ হলো। ঘুম থেকে উঠেই মেয়েটা এতো রেগে গেল কেন? বউরা কী এমন করে সবসময় জামাইগুলোকে ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দিবে? ও শুধু দেখল কাছের আসার ঘটনাটা৷ অথচ তাকে খুঁজে না পেয়ে তার ভেতরকার ক্ষয়ক্ষতি চোখে পড়ল না।
ইমান বলে, ” আমরা তাহলে বের হই?”
–” আপনার যা মন চাইবে তাই হবে৷”
সে জড়ালো গলায় বলে, ” তুমি যদি এই বাসায় থাকতে চাও, তাহলে আমি বাসাটা হাজার ডলার দিয়ে হলেও রেন্ট নিব।”
মিরা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিল। তার ইমানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ভীষণ বিব্রতবোধ হচ্ছে৷ রাগও লাগছে খুব৷ ওর চুল ধরে টেনে ছিঁড়ে ফেলতে মন চাচ্ছে৷ কেন সবসময় জোরজবরদস্তি, অস্থিরতা! সে সোয়েটার বুকের সঙ্গে ঠিকঠাক জড়িয়ে নিয়ে বলে, ” বাসায় যাব৷”
তারা বৃদ্ধা মহিলার কাছ থেকে বিদাই নিল। মহিলা বিরস মুখে বলে, ” গাধামি বাদ দিয়ে একটু বুদ্ধিমান হও। নাহলে নিউইয়র্কে টিকে থাকতে পারবে না৷”
ইমান মৃদু হাসল৷ কিছু বলল না৷ মহিলা তো জানে না সে এদেশের নামকরা এক ভার্সিটির ভালো রেজাল্ট করা ছাত্র। যেকোনো কোম্পানিতে সিভি ড্রপ করলেই হ্যান্ডসাম স্যালারির জব পাবে৷ অথচ তাকে গাধা বলে বলে মহিলা মুখে ফ্যানা তুলল৷
সে হেঁটে হেঁটে এসে গাড়ির সামনে দাড়ালো। এরপর গাড়ির ছাদ থেকে বরফ সরালো৷ মিরার আবছা আবছা কালকের সব কথা স্মরণ হলো। নিজের বোকামীর জন্য কী পরিমাণ যন্ত্রণা সইতে হলো৷ মিরার জন্য ড্রাইভিং সীটের পাশের দরজা খুলে দিলে, সে ঘুরে অন্যদিক দিয়ে এগিয়ে এসে পেছনের সীটে বসে পরে।
ইমান দরজা লাগিয়ে নিজের মনেই বলে, ” নেভার মাইন্ড৷”
ততোক্ষণে রাস্তা থেকে বরফ সরানোর কাজ চলছিল। অনেকেই বাসার সামনে জমা হওয়া বরফ সরাচ্ছে। মানহাতানের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামাতেই মিরা বাসায় ঢুকে পরে৷
সে বাসায় ঢুকে ফোন হাতে নিতেই জুইয়ের অসংখ্য মিসড কল দেখল। কিছুক্ষণের মধ্যে বিশবার কল দিয়েছে। সাদের ম্যাসেজ দেখার জন্য অনলাইন হয়েছিল তখন দেখে অনবরত কল দিয়েছে৷ মেয়েটা নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে। মিরা ফ্রেস হয়ে এসে হলরুমেই বসে থাকল। ইমান তাকে আর ঘাটালো না। সে নিজেই পেরেশানিতে পড়ে গেল। পিটার স্যারও তাকে ফোন দিয়ে কিছু কথা শুনালো। মেয়ে আর তার বাবার ভাব এমন যেন সে ওদের কেনা গোলাম। ওদের অফিসে জব করে , আন্ডারে কাজ করে জন্য নিশ্চয়ই তাকে কিনে ফেলেনি৷ পিটার স্যার একসময় মুখ ফসকে বলেই দিল, ” তোমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দাও। তোমার জন্য আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে৷ কান্না করছে। তাছাড়া তোমার বাবা জানে এসব কিছু?”
তার ভীষণ রাগ লাগছে। জুই মনে হচ্ছে স্যারকে সত্য বলে দিয়েছে। ভালো করেছে৷ সে এমনিতেও সবকিছু বলে দিত আজই৷ সত্য গোপন করতে করতে আজ তার দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে৷ পিটার স্যারের সঙ্গে ফোনে তর্ক শেষ হতেই তার রুমে বাবা আসলেন৷ উনি কালকেই ফিরে এসেছেন৷ জহির সাহেব মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে, ” পিটারের সঙ্গে কথা হলো। তুমি কালকে পার্টিতে ওকে সবার সামনে অপমান করেছো। বাংলাদেশে গিয়ে নাকি বিয়েও করেছো। সেখানে মেয়ের সঙ্গে সংসার করে ফিরে এসেছো৷ এতো অবাধ্য সন্তান কেন হলে তুমি? তোমার মতো সন্তানের বাবা হয়ে আমি লজ্জিত।”
আজ অনেকদিন পর ইমানের ভেতরে দানা বেঁধে আক্রোশ জন্ম নিল৷ সে বলে উঠে, ” আমিও আপনার সন্তান হওয়ায় লজ্জিত। আমাকে এলিগেশন দেওয়ার আগে নিজের দিকে তাকাবেন৷ নিজে কুকীর্তি করে বেড়িয়েছেন৷ আমি না। আমি হালালভাবে সব করেছি৷ আপনার মতো…. ”
ইমানের কথার মাঝেই তার বাবা তাকে থাপ্পড় মারে। জীবনে প্রথম বাবার হাতে থাপ্পড় খেয়ে ইমান আরো বেশি রেগে যায়৷ অতীতের প্রতিটা জক্ষম তাজা হয়। সে কালনাগের মতো ফুলেফেঁপে ফোস ফোস করে৷
জহির সাহেব জিজ্ঞেস করে, ” কার সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়েছে? ”
ইমান গজগজ করতে করতে বলে, “মিরা৷ মিরা আমার ওয়াইফ৷”
জহির সাহেব দু’কদম পিছিয়ে যান৷ তার মিরাকে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল৷ কিন্তু ছেলে যে ওকে বউ করে এনেছে এটা মাথায় আসেনি। সে বলে উঠে, ” আজিজের মেয়েকে বিয়ে করেছো? পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে ওকেই কেন বিয়ে করলে? জানো না, আজিজ আমাদের সঙ্গে কী করেছিল? আমার জীবনটা তছনছ করে দিয়েছিল।”
ইমান রাগের মাথায় বলে, ” আপনার সুবিধাই করে দিয়েছিল৷ আমার মা রাস্তা থেকে সরে গেল। আপনি এই সুযোগে নতুন বউ পেলেন৷ আপনার তো ভালোই হয়েছিল।”
আরেকটা চড় তার গালে পড়ল৷ দুই বাবা-ছেলে বহুদিন পর ঝগড়া করল। রাগের বশে ইমান ভাংচুর করল৷
হলরুম থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। সাদ আর হাসনাহেনা চুপচাপ মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে রইল৷ কেউ উপরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না৷ একটা সময় উপর থেকে আওয়াজ আসা থেমে যায়। তার একটু পর ইমান নিচে নেমে আসে। সে একবার মিরার দিকে তাকিয়ে এরপর সদর দরজার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বলে, ” আমি আসছি। ততোক্ষণের মধ্যে যেন কেউ আমার ওয়াইফের সঙ্গে একবিন্দু বাজে ব্যবহার না করে। তাহলে সবাইকে খু/ন করে ফে-ল/ব।”
হাসনাহেনা আর সাদ চমকে উঠে সঙ্গে মিরাও।
ইমান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এবং অতিতের পাতায় ডুব দেয়। বহু বছর আগের কাহিনি। তখন সে বাংলাদেশেই থাকত৷ মা বেঁচে ছিলেন৷ তার বাবা মানুষ হিসেবে মনে হয় ভালোই ছিল৷ তাকে খুব আদর করত৷ প্রতিদিন তার সঙ্গে দাবা খেলত। কিন্তু বিরাট এক দোষ ছিল তার। সেগুলো ওতো ছোট বয়সে বুঝত না সে। তবে বাসার অশান্তি তার ছোট মগজে পীড়া দিয়। বাবা নে/শা করত৷ এ নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায় লাগত৷ ঝগড়া হত৷ পরিবারে অশান্তি হত। তার বাবার সঙ্গে ছোট মামারও বাজে অভ্যাস ছিল৷ দুই শালা-দুলাভাইয়ের বাজে অভ্যাসের কথা পরিবারের সবাই জেনে গেল। জেনে যায় আরো একটা কুৎসিত সত্য৷ যেই সত্য সব শান্তিকে ঝাপিয়ে নরকে ফেলে দেয় তাদের৷ আজিজ আর জহির সাহেব বিজনেজ একসঙ্গে করত৷ পার্টনার ছিল তারা। দুজনে একই ক্লাবে রেগুলার যাতায়াত করত৷ মাঝে মাঝে সেখানে থাকতও রাতে করে। বাসায় জানাত অফিসের কাজ৷ তখন আজিজ সাহেব অবিবাহিত ছিলেন না। নারীদের প্রতি দুজনেই আকৃষ্ট ছিল। জহির সাহেবের পরিচিত এক ক্লাবের মে/য়ে একদিন হুট করে এসে দাবী করে তার পে/টে আজিজ সাহেবের সন্তান বড় হচ্ছে। বিপাকে পড়ে আজিজ সাহেব সব দোষ জহির খানের উপর চাপায়। বাবা-ভাই সত্য জানলে তাকে জানে মেরে ফেলবে এই ভয়ে সে মিথ্যাচারের সাহায্য নেয়৷ জহির খানের ভাষ্যমতে, মেয়েটার সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই।শুধু মাত্র পরিচয় আছে। কিন্তু আজিজের সাথে প্রায় যোগাযোগ হয় তার।
আজিজ সব ধরনের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য জহির খানকে ফাসায়। সে কোন একভাবে জহির খানের ভিডিও পরিবারের সকলকে দেখিয়ে কনভিন্স করে ফেলে। এবং জহিরকে দমিয়ে রাখার জন্য মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায়। দুজনে অপরাধ, অন্যায়ের বন্ধু হওয়ার দরুন জহির খানের দুই নাম্বারি ড্রা/গের ব্যবসা সম্পর্কে জানত সে। পুলিশের কাছে তথ্য লিক করে৷ এদিকে জেলে থাকার জন্য জহির সাহেব পুরো পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্ত্রীও তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে যায়৷ আজিজ সাহেব নিজের পাপ ঢাকবার জন্য ওই স্লা/ট মেয়েকে বিপুল পরিমাণ টাকা দেন যেন সে স্বীকারোক্তি বদলে জহির সাহেবের উপর দোষ চাপায়। যেহেতু প্রুভ হিসেবে ভিডিও আছে।সবাইকে মিথ্যা বলে যেন তার পেটে জহির সাহেবের নাজায়েজ সন্তান। টাকার লোভে মহিলা রাজী হয়ে যায়। শুধু তাই না, জহির সাহেবের অবর্তমানে সে ওনার বাসায় থাকা শুরু করে আজিজের আদেশ মতো৷ পুরা সমাজে ছিঃ ছিঃ পড়ে যায় খান পরিবার নিয়ে। এতোসব অপমান সহ্য করতে না পেরে ইমানের মা আ/ত্ন/হ/ত্যা করেন গলায় ফা/স দিয়ে ৷
জেল থেকে বেরিয়ে আসতে জহির সাহেবের ছয় মাস লেগে যায়। উনি কেস-কাস্টাডি করে ইমানকে নিয়ে নিউইয়র্ক চলে আসেন। তবে তার আসার আগে রোজিনা বড় জ্বালিয়েছে তাকে৷ পরবর্তীতে নাকি রোজানি গর্ভপাত করে ফেলে। এর পরিবর্তে জহির সাহেবের কাছে দশ লাখ টাকাও নিয়েছিল৷ অতীতের কথা ভাবতে ভাবতেই চোখে পানি এসে পড়ে ইমানের। বাবা এবং মামা এই দুই ব্যক্তিকেই সে প্রচন্ড ঘৃণা করে৷ আচমকা সে লক্ষ করে হাইওয়েতে গাড়ি চলছে। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল৷ সামনে থেকে বিশাল বড় একটা ট্রাক ধেয়ে আসছে তার দিকে। ড্রাইভিং করার আয়ত্ত সে হারিয়ে ফেলছে।গাড়ি কন্ট্রোললেস হয়ে পড়েছে৷ চোখে অন্ধকার দেখছে। মায়ের দিনের পর দিনে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাদার দৃশ্য ভাসছে শুধু!
________________________
ইরা নতুন বাসায় শিফট হয়ে খুশি। অনেকদিন পর তার মুখে হাসি ফুটে উঠেছে৷ মা দু’দিনের মাথায় তাকে নিয়ে মিরপুরের একটা বাসায় উঠেছে। চিলেকোঠায় একরুমের একটা বাসা।দুপুর করে প্রচুর গরম পড়ে। তবুও সে খুশি। যেন এবাসাটা স্বর্গ৷ সুপ্তি বেগম খাবারের প্লেট নিয়ে বসলেন তার কাছে। এরপর খাইয়ে দিতে দিতে বলে, ” ইমান জামাই মানুষ। ওর কাছে বারবার সাহায্যের জন্য হাত পাতা কী ঠিক হচ্ছে?”
ইরা বলে উঠে, ” মা আমি যখন বড় হবো তখন চাকরি করে ভাইয়ার সব ঋণ শোধ করে দিব৷”
সুপ্তি বেগম হেসে বলে, ” সব ঋণ শোধ করা যায় না রে মা।”
ইরা ছলছল চোখে বললো, ” মা প্লিজ আমি মামা বাসায় ফিরে যাব না। এখানেই থাকব। এর জন্য যদি ইমান ভাইয়ার কাজের মেয়ে হয়ে থাকতে হয় তাতেও রাজী।”
মেয়ের কথায় সুপ্তি বেগমের বুক ভার হয়ে আসলো। জীবন যুদ্ধ এতো কঠিন কেন? ওই বাসায় ইরাকে নায্য বিচার দিতে না পেরে সে বুঝে যায় ইরা ওখানে নিরাপদ নয়৷ তার নিজের ভাইও চুপ। আজিজের সাহায্য সে নেবে না। কাজেই উপায় না পেয়ে ইমানের কাছে ফোন দেয়। পুরো সত্য সে না জানালেও আংশিক জানিয়ে বলে তারা নতুন বাসায় শিফট হতে চায়। ইমান তার এক ফ্রেন্ডের বাসায় উঠতে বলে। একদিনের মধ্যে সব ব্যবস্থা করে দেয়৷ সুপ্তি বেগম ছোট বাসা চাইছিল। এজন্য এ বাসার খোঁজ ইমান দেয় তাকে। সঙ্গে ছয় মাসের এডভান্স ভাড়া নাকী তার ফ্রেন্ডকে দিয়েছে। এটা অবশ্য সুপ্তি বেগম পরে জানলেন। তখন থেকে এক ধরনের হীনমন্যতায় ভুগছে সে। এরপর তিনবার কল দিল ইমানমে। কিন্তু সে ধরছে না। মিরার ফোনও বন্ধ।
নতুন বাসায় বেল বেজে উঠল। ইরা অবাক হলো। এ বাসায় আবার কে আসলো? দরজা খুলতেই দেখল বাবা দাঁড়িয়ে আছে৷ অনেকদিন পর বাবাকে দেখে সে জড়িয়ে ধরে তার বাবাকে। সত্যি বলতে ইরা অভাবী জীবন চায় না। সে আগের মতো স্বচ্ছল একটা লাইফস্টাইল চায় যেটা কেবল বাবাই তাকে দিতে পারবে৷ আজিজ সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথা বলছিলেন। তখনই সুপ্তি বেগম দরজার সামনে এসে বলে, ” এখানে কী করছেন আপনি? ”
–” আমার মেয়ের কাছে এসেছি।”
সুপ্তি বেগম বলে, ” মেয়ের জন্য দরদ ভেসে যাচ্ছে আজ।”
আজিজ কঠিন চোখে তাকিয়ে বলে, ” তুমি মুখ বন্ধ রাখো। নাহলে মুখ সে/লা/ই করে দিব বলছি।”
এক কথা, দু কথা থেকে তর্ক লেগে যায়৷ ইরা সহ্য করতে না পেরে রুমে ফিরে আসে৷ ভীষণ কষ্ট হয়৷ ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের ঝগড়া দেখে আসছে সে। তবে ইদানীং বাবা খুব বাড়াবাড়ি করে৷
সুপ্তি বেগম একসময় বলে উঠে, ” এতো মেয়ের জন্য দরদ থাকলে নিজের প্রথম সন্তানের কাছে যান৷ আমার মেয়ের আপনার মতো কোন বাবার দরকার নাই। আপনাকে শুধরানোর বহু সু্যোগ দেওয়া হয়েছিল৷ আপনি বদলান নি। দুই মেয়ের বাবা হয়েও অভ্যাস পাল্টেনি আপনার৷”
চলবে৷
[ভালোবাসার গল্প ২০২২,
ভালোবাসার গল্প কাহিনী,
ভালোবাসার গল্প কষ্টের,
ভালোবাসার গল্প কথা,
ভালোবাসার গল্প কষ্টের
ভালোবাসার গল্প ছবি
সেরা ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসার গল্প by golpopoka,
ভালোবাসার গল্প 2022,
ভালোবাসার গল্প 2022,
বাংলা ভালোবাসার গল্প,
বাংলা ভালোবাসার গল্প 2022,
নতুন ভালোবাসার গল্প,
ইসলামিক রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প,
আবেগি ভালোবাসার গল্প,
ভালোবাসার গল্প পড়তে চাই,
বাংলা ভালোবাসার গল্প by গল্পেরমহল,
না বলা ভালোবাসার গল্প,
ভালোবাসার গল্প পড়তে চাই,
মজার ভালোবাসার গল্প,
ভালোবাসার গল্প 2022,
ভালোবাসার গল্প fb,
বিয়ের পর ভালোবাসার গল্প,
রোমান্টিক ভালোবাসার ছোট গল্প,
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী,
রোমান্টিক বিয়ের গল্প,
হঠাৎ বিয়ের রোমান্টিক গল্প,
বউয়ের ভালোবাসা পাওয়ার উপায়,
বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প,
রোমান্টিক গল্পের লিংক,
ভালোবাসার গল্প,
ভালোবাসার গল্প কাহিনী,
ধারাবাহিক গল্প,
রোমান্টিক ধারাবাহিক গল্প,
রোমান্টিক প্রেমের গল্প ১৮+,
অসমাপ্ত গল্প,
অসমাপ্ত ভালোবাসার কষ্টের গল্প,
ধারাবাহিক গল্প 2022,
Valobashar golpo,
Valobashar golpo by golpermohol,
Valobashar golpo by golpo mohol,
Valobashar romantic golpo, Romantic Love story by golpermohol,golpermohol noton golpo,golpermohol new story,golpo poka best story,
Dharabahik golpo,balobashar golpo, bashor rather golpo,best Love story bangla,best love story bangla by golpermohol,golpermohol noton golpo,
Emosional love story bangla,bangla emosional love story,bangladeshi love story,bangladeshi love story by golpermohol
Golpermohol bangladeshi golpo,golpermohol, golpermohol, golpo mohol,golpermohol.com,sad love story bangla,sad love story 2022,sad love story 2022,sad love story bnahla 2022, romantic love story,bashor rather golpo রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ,
Valobasar golpo bangla lekha,
Valobashar kobita,]