বউপাখি পর্ব-০২

0
101

#বউপাখি
#পর্ব_২
#লেখনিতে_সিনথিয়া
-‘প্রথমবারের বিয়ে মনে নেই তো কি হয়েছে? আমরা আবার বিয়ে করবো। এই আরাফ চৌধুরী তার বউপাখিকে শুধু একবার নয়, হাজারবার বিয়ে করতেও রাজি আছে।’

আর কিছু বলার সাহস করলো না তিতির। এই পাগলকে কিছু বলে লাভ নেই। বিয়ে যখন করবে বলেছে, তখন এই লোক ওকে বিয়ে করেই ছাড়বে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল তিতির। আরাফ ততক্ষণে গাড়িতে উঠে পড়েছে। আজকে গাড়ি ও চালাবে। নিজের বউপাখিকে আজ পুরো এক বছর পর ওর বাড়িতে নিয়ে যাবে। ভাবতেই আরাফের বুকের ভিতরটাতে একটা ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভূতি হলো। আহ্..তার বউপাখি।

আরাফ গাড়ি চালাচ্ছে আর তিতির ওর পাশের সিটে বসে রয়েছে চুপ করে। উহু তিতির চুপ করে নেই, তিতির দেখছে। আরাফ নামের পাগলটাকে। আরাফের বলিষ্ঠ হাত গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ধরে আছে আর সেদিকে তাকাতেই তিতিরের ভেতরটা ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। আরাফের ঘন চুল, চাপ দাড়ি, চোখের চাহনি,কথা বলার ধরন কি কোনোভাবে তিতিরকে আকৃষ্ট করছে? ওকে প্রেমে পড়তে বাধ্য করছে এই পাগলটার? অসম্ভব। তিতির মরে গেলেও এই পাগলের প্রেমে পড়বে না! কক্ষনো না! কনট্রোল তিতির কনট্রোল!

নিজের মনে মনে এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ওরা আরাফদের বাড়িতে চলে এসেছে, তা টেরই পায়নি তিতির। টের পেলো যখন আরাফ গাড়ির দরজা খুলে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। তারপর হাঁটুর ওপরের দিকটায় ইশারা করে বলল-
-‘এখানটায় পা রেখে নামো বউপাখি। গাড়িটা বেশ উঁচু। তোমার নামতে অসুবিধা হবে।’

– ‘আমি নামবো না।’

এটা বলে তিতির অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো।

-‘আমাকে আবার ব্যাথা দিতে বাধ্য করো না তোমায় তিতির।’

কত্তবড় সাহস পাগলটার। এতক্ষণ বউপাখি বউপাখি করে গলা শুকিয়ে ফেলেছিলো কিন্তু এখন আবার নাম ধরে ডাকছে। মনে মনে ফুঁসে উঠলো তিতির। এদিকে আরাফেরও মেজাজটা গরম হতে লাগলো। আর কত পরীক্ষা দিতে হবে ওকে ওর ভালোবাসা প্রমাণ করার জন্য। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলল-

-‘তুমি এখন যে ত্যাড়ামিটা আমার সাথে করছো, আমি সেই ত্যাড়ামির উপর পি এইচ ডি করা। সো বি কেয়ারফুল ডার্লিং।’

ঘাবড়ে গেলে তিতির, কিন্তু দমলো না। আরাফের দিকে মুখ ফিরিয়ে কিছু একটা বলতে যাবে, কিন্তু তখনই আরাফ ওকে গাড়ি থেকে কোলে তুলে নিলো। তারপর তিতিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-

-‘ বলেছিলাম না, আমার সাথে ত্যাড়ামি করো না বউপাখি ‘

তিতিরের সাড়া শরীর জুড়ে একটা শিরশির অনুভূতি বয়ে গেলো। এতোটাও আশা করেনি তিতির। এতো দেখি মারাত্মক লেভেলের পাগল।

তিতিরকে কোলে নিয়েই আরাফ বাড়ির দরজার সামনে আসলো। তারপর এক পা দিয়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে বাড়ির দরজা খুলল। প্রচন্ড এক শব্দ হওয়ায় তিতির কেঁপে ওঠে । বাড়ির সবাই এই শব্দ শুনে হতভম্ব হয়ে ছুটে আসে ওদের সামনে। আরাফের দাদি আর ওর মা ওদেরকে দেখে খুশিতে কেঁদে ফেলে। আরাফের মা তিতিরকে দেখে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে-

-‘ অবশেষে তুই ঘরে এলি মা, এতোদিনে মনে পড়লো তোর এই শাশুড়ী মায়ের কথা?’

আরাফের দাদি সেই কথায় বাঁধা দিয়েই বলল-

-‘আহা বউমা, আগে ওদের ঘরে যাইতে দাও তো। দাদুভাই সেই কহন থাইক্যা নাতবউরে কোলে নিয়া দারাইয়্যা রইছে।’

তিতিরের মুখ প্রথমে লজ্জায় লাল থেকে নীল হয়েছিল, দাদির কথা শুনে এবার তা বেগুনি রূপ ধারণ করলো। আচমকা আরাফের কানের কাছে মুখ নিয়ে চোখ বন্ধ করে তিতির বলল-

-‘আপনি কি পাগল? প্লিজ আমাকে নামিয়ে দিন, প্লিজ! আপনার সব কথা শুনবো আমি, কিন্তু দয়া করে আমাকে আর লজ্জায় ফেলবেন না!’

আরাফও তিতিরের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল-

-‘ টু লেট বউ পাখি, তখন ত্যাড়ামিটা না করলেই পারতে, তাহলে এখন আর এভাবে লজ্জায় পড়তে হতো না, আর এই পাগলটার পাগলামিও দেখতে হতো না!

এটুকু বলেই ওপর তলায় উঠতে উদ্যত হলো আরাফ। কিন্তু তখনই আরাফের বাবা আহনাফ চৌধুরী বাঁধা দিলো আরাফকে-

-‘দাঁড়াও! কোথায় যাচ্ছো বাঁদর কথাকার? তোমার কি মনে নেই এই মেয়ের বাবা তোমাকে-।’

আহনাফ চৌধুরীর কথা শেষ করতে দিলো না আরাফ, তার আগেই বলে উঠলো –

-‘তোমাকে নাতি-নাতনী গিফট করতে যাচ্ছি বাবা, এখন প্লিজ ছেড়ে দাও, নয়তো সব এনার্জি এখানেই শেষ হয়ে যাবে!’

(চলবে)…