বাঁধিব হৃদয়ে তোমায় পর্ব-০৯+১০

0
254

#বাঁধিব হৃদয়ে তোমায়
#পর্ব-০৯+১০
#সুমাইয়া মনি

হাতে ফোনের বাক্সটি নিয়ে আবির স্থির হয়ে বসে আছে। একটু আগে বিভা ফোনটি আবিরকে ফেরৎ দিয়ে গেছে, যেটা কাল রাতে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে এসেছিল। তার রাগ হচ্ছে না, বরং মন বিষণ্ণতায় ভুগছে। বিভাকে হারানোর ভয় যেন ক্রমশে গ্রাস করে নিচ্ছে তাকে। আচ্ছা সব মেয়েরাই কি এমন হয়? নাকি কিছু মেয়েরাই ভালোবাসা নামক বস্তুটির ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা কিছুতেই বুঝতে চাইছে না তার ভালোবাসা। সব কিছু তার কাছে নাটক,
বানোয়াট মনে হচ্ছে। কি করে যে বোঝাবে তাকে? ভেবেই আবির দীর্ঘশ্বাস টেনে নেয়। ভেবেছিল হয়তো বিভা ফোনটা নিবে। না নেওয়ার ফলে মনঃক্ষুণ্ন করে বাইকে চড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটে।
বিভা আড়াল থেকে আবিরের যাওয়ার দৃশ্য দেখছে। ওর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল মোহনা। চোখমুখ কুঁচকে বলল,
‘খুশি হলি তো?’
‘খুশি হবার কি আছে শুনি।’ মোহনার দিকে ফিরে প্রশ্ন করল বিভা।
‘এই যে আবির ভাইয়া চলে গেল।’
‘এতে খুশির তো কিছু দেখছি না।’
‘ভাইয়া কাল বৃষ্টিতে ভিজে তোকে ফোন দিয়ে আসল। আর তুই সেটা ফেরত দিলি। এতে সে কতটা কষ্ট পেয়েছে জানিস?’
‘নাহ!’ সাফসাফ বলে উঠে।
‘তুই আসলেই একটা লবন ছাড়া মেয়ে। ভালোবেসে যদি একটা ধোঁকা খেতি, তাহলে বুঝতি ভালোবাসার মর্ম, ঠিক আমার মতো।’
‘এই জন্যই তো ফাউল চিজ থেকে নিজেকে দূরে রাখছি।’
বিভা মেকি রাগ নিয়ে বলল,
‘বাসায় গিয়ে ভাতের সঙ্গে বেশি করে একটু লবন খাবি। এতে যদি বুদ্ধি একটু বৃদ্ধি পায়।’
‘লবনের সঙ্গে বুদ্ধির কি সংযোগ?’ পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বিভা।
‘জানি না।’ বলে মোহনা প্রস্থান করল।
বিভা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইলো।
.
.
সোফায় আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আবির। স্লো ভলিউমে গান ছেড়ে পাশে ফোন রাখা। আইরিন বেগম ছেলেকে পর্যবেক্ষণ করছে। আনলিমিটেড দুষ্টু ছেলেটি প্রেমে পড়ে এতটা চেঞ্জ হয়ে যাবে কখনো ভাবেনি। মাথার পাশে বসে চুলে হাত বুলাতেই আবির মাথা তুলে তাকায়। আম্মুকে দেখে চোখ জোড়া বন্ধ করে বলল,
‘একটু বিলি কেটে দেও আম্মু।’
ছেলের আবদার ফেলতে পারেননা তিনি। মাথায় হাত চালিয়ে বলে,
‘বিভাকে সত্যি কী ভালোবাসিস?’
‘হুম, আম্মু। আমি ওঁকে বিয়ে করতে চাই।’ সরাসরি বলে দেয় আবির।
‘এত বড়ো হয়ে গেছিস যে মায়ের কাছে বিয়ের কথা বলতেও মুখে আঁটকায় না।’
‘একদিন তো বিয়ে করতেই হবে। আগেভাগে বললে কি এমন সমস্যা আম্মু।’
‘তোর ভাইয়া-ই তো এখনো বিয়ে করল না।’
‘ভাইয়াকে বিয়ে দেও। তারপর আমি বিয়ে করব।’
‘আফিন যে বিয়ে করতে চাইছে না। অনেক মেয়েই দেখানো হয়েছে। সব রিজেক্ট করল।’
‘এ বছরে ভাইয়াকে বিয়ে দিতেই হবে। আর বিয়ের দায়িত্ব আমি নিবো।’
‘দায়িত্ব নেওয়ার পিছনেও তোর কারণ আছে জানি।’
‘বুঝতে পেরেছো। আচ্ছা আম্মু বিভাকে তোমার কেমন লাগে? সত্যি করে বলবে।’
‘ভালো। সহজসরল মেয়ে। এ যুগের মেয়েদের মতো স্টাইলিশ নয়। তাই বেশিই ভালো লাগে।’
‘সত্যি আম্মু আমারও এই জন্য ওঁকে এত ভালো লাগে। মানে সব মেয়েদের চেয়ে আলাদা বলা যায়। তবে সহজসরল নয়। জিদ্দি একটা মেয়ে।’
আইরিন বেগম চুপ থেকে ফের বললেন,
‘আমি ভাবছি তোর বাবার কথা।’
‘তাকে আমেরিকায় থাকতে দেও। আমাদের সময় দেওয়ার সুযোগ তার নেই।’ কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বলল।
‘এভাবে বলিস কেন? তিনি যা করছে, তোদের দু’জনের জন্যই তো করছে।’
‘আর কত? যা করেছে কম নয়।’
ছেলের রাগ দেখে আইরিন বেগম মৃদু হাসে। বাবার প্রতি তার ছোট থেকেই অভিমান, অভিযোগ জমে আছে। আফিন হবার পর আলি আহমেদ ওঁকে সময় দিতে পারলেও, আবির হবার পর তার ব্যস্ত সময় শুরু হয়। ব্যবসার কাজে বেশিভাগ সময়ই তাকে আমেরিকায় থাকতে হয়। তিনি নাক টেনে দিয়ে বলল,
‘আগামী মাসেই সে আসছে। যতো অভিযোগ তাকেই বলিস।’
‘লাগবে না।’ বলেই আবির কাত হয়ে শুয়। আইরিন বেগম ছেলের মাথায় এখনো হাত বুলাচ্ছে।
______
সত্যিটা আজ ববি জানবেই। কেন হঠাৎ করে মেয়েরা এভাবে অসুস্থ হচ্ছে। এর পিছনের কারণ কী হতে পারে? ফ্যাক্টরিতে কোনো সমস্যা রয়েছে নাকি এমনেতেই এমনটা হচ্ছে। ববি কালকের মেয়েটিকে দেখতে আসে। জানতে পারে তার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তাই অপারেশন করতে হবে। পাশে আরো একটি মেয়ে ভর্তি ছিল। সেই মেয়েটির নাকি জরায়ুতে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। অপারেশন তাকেও করতে হবে।
ববি বুঝতে পারে না কোন স্থান থেকে শুরু করবে। জরায়ুতে, হার্টে যদি সমস্যা হয় তাহলে মেয়েরা হঠাৎ করে জ্ঞান কেন হারাবে। বুকে ব্যথা, নয়তো পেটে ব্যথার মাধ্যমে ধরা পড়ার কথা। এখানে সেন্সলেস হবার পিছনের মূল কারণ সে দেখতে পাচ্ছে না। আর লক্ষ্য করে দেখলো, অপারেশন হচ্ছে অসুস্থ হবার ঠিক একদিন পর রাতে। এই জন্য সন্দেহর বীজ যেন আরো বেড়ে তীব্র হতে থাকে মনে। দু’জন মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে না তারা এতটা অসুস্থ। স্বাভাবিক ভাবে খাচ্ছে, কথা বলছে, হাঁটছে। ববির ভাবনার ছেদ ঘটে নার্সের ডাকে। তিনি ববিকে কেবিন থেকে বের হতে বলে। ববি নার্সটির কথা অনুযায়ী কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। পাশেই ডাক্তারের চেম্বার ছিল। আপাতত সেখানে ডাক্তার ছিল না। ববি আশেপাশে লক্ষ্য করে ভেতরে প্রবেশ করে। সে ইংরেজি পড়তে জানে না। সামনে হলুদ রঙের ফাইল দেখতে পেয়ে তার মধ্যে থেকে তিনটি কাগজ চুরি করে ব্যাগের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে৷ তারপর স্বাভাবিক হয়ে করিডর থেকে হেঁটে বাহিরে বেরিয়ে আসে। পাশের একটি ফার্মেসীতে সে প্রবেশ করে। সেখানে একজন অর্ধবয়স্ক লোক বসেছিল। দোকানে তেমন একজন কাস্টোমার ছিল না।
ববি স্বস্থি পেয়ে ব্যাগ থেকে তিনটি কাগজ বের করে লোকটির সামনে দেয়। বলে,
‘কাকা এই কাগজে যা লিখা আছে সেগুলো আমাকে একটু বলবেন। আসলে আমি তো পড়তে জানি না।’
লোকটি কাগজ তিনটি হাতে নিয়ে নজর বুলায়। পরমুহূর্তেই ববির দিকে চশমার ওপর থেকে তাকায়। ববি উৎসুক দৃষ্টিতে লোকটির আদলে চেয়ে রয়েছে উত্তরের আশায়। লোকটি নজর ঘুরিয়ে বলল,
‘এখানে কিছু মেডিসিনের নাম লিখা আছে। যেমন, জ্বর, ঠান্ডা, পায়ে- মাথা ব্যাথার পেইন কিলার আরো অনেক কিছু। তোমার কি এসব ঔষধ লাগবে?’
‘নাহ! আমি শুধু আপনাকে দেখাতে এসেছি কাগজ গুলো। পরে বোনকে দিয়ে ঔষধ গুলো নিবো।’
‘ওহ!’
‘আচ্ছা আমি আসি।’
লোকটি কিছু বলে না। বিভা কাগজ নিয়ে হাঁটতে লাগলো।
মনে তার প্রশ্ন এখনো উঁকি দিচ্ছে। আপাতত কাগজ গুলো ব্যাগে ভরে রাখে। মাথায় এক রাশ প্রশ্ন নিয়ে বাড়ির পড়ে হাঁটছে। অনেকটা পথ পাড়ি দিতেই হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার এসে সামনে থামে। ববি কিছুটা ভয় পায়। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে আফিন। ববির দিকে মৃদু হেসে এগিয়ে এসে বলল,
‘আজ আমি ইচ্ছে করেই সামনে চলে এসেছি।’
‘কেন?’
‘না আসলে হয়তো আমি আপনার ভীত ফেইস দেখতে পারতাম না।’ ভ্রু উচু করে বলল।
ববি মুচকি হাসে। আফিন নিজেও হেসে আবার বলে,
‘চলুন আমার সঙ্গে।’
‘আজ আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি না।’
‘আপনাকে না নিয়ে আমিও যাচ্ছি না হুম।’
‘কেন?’
‘একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।’
‘এখানে বলুন?’
‘আপনার কি আমাকে দেখে পাগল বলে মনে হচ্ছে?’
‘মোটেও না।’
‘রাস্তার মাঝে কেউ কথা বলে না। গাড়িতে উঠুন।’
‘না….’
‘প্লিজ।’ অনুরোধ করে বলল আফিন।
ববি দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যায়৷ আশেপাশের লোকজন তাদের দেখছে। ববি সেটা লক্ষ্য করে গাড়ির কাছে এগিয়ে আছে। আফিন খুশি হয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দু’জনে উঠে বসে।
গাড়ি চলতে আরম্ভ করে। গাড়ির মধ্যে কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না। ববি একবার জিজ্ঞেস করে ছিল ‘কি ইম্পর্ট্যান্ট কথা’। আফিন বিনিময় মিষ্টি করে হাসি প্রদান করে।
ববির বাড়ির সামনের গলিতে এসে গাড়ি থামে। কারণ ববি এখানেই গাড়ি থামাতে বলেছে। এতক্ষণ ওয়েট করে ছিল আফিনের ইম্পর্ট্যান্ট কথা শোনার জন্য। আফিন যখন বলেনি তাই সময় বিলম্ব না করে দরজা খুলে বেরোতে নিলে আফিন ডান হাত ধরে আটকায়। ববি বিস্মিত চোখে ঘুরে তাকায়।
আফিন ববির চোখের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বলল,
‘আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই। হবেন কী আমার অর্ধাঙ্গিনী?’
.
.
.
#চলবে?

#বাঁধিব_হৃদয়ে_তোমায়
#পর্ব_১০
#সুমাইয়া মনি

বিস্ময় চোখমুখ কুঁচকে আসে ববির। প্রথমে তো উত্তর দিতে পারেনি, পরমুহূর্তে কিছু বলার আগে আফিন আবার বলে,
‘আপনাকে প্রথম দিন দেখার পর আমি কোনো এক মুগ্ধতার আঁটকে গেছি। হঠাৎ হঠাৎ আপনার কথা মনে পড়ে যেত। অনেকব বার এড়ানোর বৃথা চেষ্টা করেছি। হয়তো আপনি আমার প্রথম ভালেবাসার মানুষ হিসাবে আমার জীবনে এসেছেন। করবেন কি আমায় বিয়ে? আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। আশা করছি উত্তরটি নাসূচক হবে না।’ পুরো কথাটি শুনে ববি কিছু বলতে পারে না। লজ্জায় নিরুত্তর রয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। এতে আফিন কিছুটা উদাস হয়।

জানালার পাশ ঘেঁষে কথা গুলো ভাবছিল ববি। আফিনের কথা গুলো তাকে আনমনা করে দেয়। ভাবতে ভাবতে অনুভূতিপ্রবণ হয়ে পড়ে সে।
‘আপু?’ দু কাঁধে হাত রেখে বিভা ডাক দেয়।
ববি হকচকিয়ে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
‘বল।’
‘কি ভাবলে?’
‘এখনো ভাবিনি।’
‘হ্যাঁ বলে দেও না। মা-ও তো তাই বলছে।’
‘আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোদের কে দেখবে রে?’
‘এইজন্যই তো এতদিন বিয়ে না করার জন্য দূরে ছিলি। এখন আর তোকে দূরে সরতে দেবো না। আফিনকে তুই হ্যাঁ বলে দিবি।’ বিলকিস বানু এগিয়ে এসে বললেন।
‘মা আফিন রা অনেক বড়োলোক। আমি চাই না তাকে বিয়ে করতে। আর তাছাড়া তোমাদের কথা আমার মাথায় আছে। আমি পারব না বিয়ে করতে।’
‘আবার সেই একই কথা বলছিস। তোর বিয়ে হলে বিভা তো আছে। দু’জন মানুষের সংসারের চিন্তা তোর করতে হবে না।’
‘তবুও…’
‘আপু বেশি কথা বোলো না। তুমি ভাইয়াকে হ্যাঁ বলে দেও। আর তুমি নিজেও তো ভাইয়াকে পছন্দ করো হুম..’ মুচকি হেসে বলল বিভা।
ববি লজ্জামিশ্রিত হাসি দেয়। বিভা বলে,
‘দেখো মা দেখো, তোমার মেয়ে সত্যি আফিন ভাইয়াকে পছন্দ করে।’
‘যাহ!’
বিলকিস বানু হাসে। আফিনের বিয়ের প্রস্তাব শুনে তারা খুশি হয়েছে।
____
‘আম্মু আমি ববিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি।’
‘ববি কী বলেছে?’
‘এখনো কিছু বলেনি।’
‘বিয়ে করবে তোকে, কি বুঝিস?’
‘জানি না।’
‘রাজি না হলে আমি তাকে রাজি করাবো।’ আবির বলল।
‘দেখি ববির উত্তর কি আসে।’
‘দেখো।’
‘বাবাকে তুমি বলবে নাকি আমি বলব আম্মু?’
‘আমিই জানিয়ে দেবো নে। কিন্তু ববির গার্মেন্টসে চাকরি… ‘
‘রাজি হলে বাদ দিয়ে দেবো। ওর পরিবারের দায়িত্ব আমি নিবো।’
‘হ্যাঁ! সেই ভালো হয়।’
‘সঙ্গে আমি আছি…’ আবির হাত তুলে বলে।
আফিন মৃদু হাসে। আইরিন বেগমও হেসে ফেলে।
.
.
পরেরদিন…

আবির ক্যাম্পসের সরু রাস্তায় বসেছিল বন্ধুদের নিয়ে।
বিভা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জোরে ‘এই যে বিয়াইন’ বলে ডাক দেয়। আশেপাশে অনেকেই ওদের দিকে তাকায়। বিভা কিছুটা রেগে যায়। কাছে এগিয়ে যেতে চাইলে মোহনা আঁটকায়। হাত ধরে টেনে ক্লাসরুমের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। আবির হাঁক ছেড়ে হেসে বলল,
‘মোহনা ছেড়ে দেও তোমার বান্ধবীকে। দেখি না সে কি বলে।’

মোহনা ছাড়ে না। একদম ক্লাসরুমে এসে হাত ছাড়ে। বিভা রাগ নিয়ে বলল,
‘ধরে আনলি কেন, যোগ্য জবাব দিয়ে দিতাম।’
‘ভুল কি বলেছে, তোর বোনের সঙ্গে যদি আফিন ভাইয়ার বিয়ে হয় তুই তো তার বিয়াইন হবি।’
‘সেটা চিল্লিয়ে বলতে কে বলেছে তাকে।’
‘বিয়ে ঠিক হলে সবাই এমনেতেও জানবে।’
‘হোক আগে।’
‘হবে নে। এবার শান্ত হয়ে বোস।’
বিভা রাগ নিয়ে সিটে বসে। পাশে বসে মোহনা। একটু পরে ক্লাস আরম্ভ হয়। ক্লাস চলা কালিন আবির কয়েকবার জানালা কাছ দিয়ে হেঁটে গিয়েছে। বিভা এতে কোনো ভ্রূক্ষেপ করে না। তবে রাগ মনে মনে রাখে। চারটি ক্লাস শেষ হবার পর টিফিন পিরিয়ডে তারা ক্যান্টিনে যায়। এক সঙ্গে বসে খাবার খাওয়ার সময় সেখানে আবির বন্ধুদের নিয়ে উদয় হয়। বিভা তড়িঘড়ি করে খেয়ে, পানি পান করে এক প্রকার পালিয়ে আসে ক্যান্টিন থেকে। আবির বিভার কর্মকাণ্ড দেখে মৃদু বাঁকা হাসে।
.
.
রাতে আফিন, আবির ও তাদের আম্মুকে সঙ্গে নিয়ে ববিদের বাড়িতে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলার জন্য আসে। ববি বাড়িতেই ছিল। তাদের সামনেই বিয়ের আলোচনা হয়।
‘ভাবি আফিনের বাবা তো বাহিরে, তাই আমাকেই বিয়ের জন্য কথা বলতে আসতে হলো। আপনার বড়ো মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে। আশা করি আপনাদের কোনো আপত্তি নেই বিয়েতে?’
‘আমি কি বলব বলুন। আপনারা বড়োঘরের লোক, আর আফিন যে আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য রাজি আছে, এটাই তো অনেক।’ বিনয়ী কন্ঠে বলল বিলকিস বানু।
‘এভাবে বলবেন না ভাবি। বড়ো ছোট বলে কোনো ভেদাভেদ নেই। ছেলে-মেয়েদের পছন্দটাই মেটার। আমি বিয়ের তারিখ ঠিক করে যেতে চাই।’
‘এত তাড়াতাড়ি।’
‘হ্যাঁ! তবে টেনশন করবেন না। বিয়ের সব খরচ আমাদের। আর ববি তুমি কাল থেকে কাজে যাবে না। আমাদের বাড়ির বড়ো বউ হয়ে গার্মেন্টসে চাকরি করবে এটা মানায় না।’
ববি কথাটা শুনে মাথা নুইয়ে রাখে। আবির বিভার দিকে তাকিয়ে সকলের অগোচরে চোখ টিপ দেয়। বিভা দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আবির হেসে ফেলে। বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত করে তারা চলে যায়। এ মাসের ছাব্বিশ তারিখে বিয়ের সময় ঠিক করা হয়। সকলে আনন্দিত ছিল এই বিয়ে নিয়ে। কিন্তু বিভা একটু চিন্তিত ছিল। আর তার চিন্তার কারণ আবির। এবার হয়তো তাকে জ্বালাতন করতে পারবে আরো টাইট ভাবে। ভেবে চোখমুখ ঘুচে আসে তার।
___
কলেজে আসার পর মোহনাকে বিয়ের কথা জানায়। মোহনা খুশি হয় এবং টেনে টেনে আবিরকে জড়িয়ে ওঁকে নিয়ে মজা করতে আরম্ভ করে। যেটা বিভা মোটেও পছন্দ করছে না। কয়েকটা কিল-ঘুষি দেয়। তাতে কাজ হয় না। মোহনা থামে না। এক পর্যায়ে মারামারি করতে থাকে। স্যার আসার পর তাদের মারামারির ইতি ঘটে।

ছুটির পর সামিম বিভাকে একা ডাকে মাঠে ডাকে। প্রথমে ভেবেছিল আবির ডাকছে। কিন্তু পরক্ষণে আবির না ডাকার কথা বলার পর বিভা মোহনাকে রেখে কলেজের মাঠের দিকটায় যায়।
বিভা বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ভাইয়া বলুন।’
‘কথাটা মোহনাকে নিয়ে বলতে চাই।’
‘বলুন।’ উৎসুক দৃষ্টিতে তাকায় বিভা।
‘আমি জানি মোহনার ব্রেকআপ হয়েছে। আর সেটা আমার জন্যই। কারণ সাকিব ভালো ছেলে না। অনেক মেয়ের সঙ্গে প্রেম – ভালোবাসা আছে ওর। বলা যায় প্লে বয়। এই জন্য আমি আবিরকে সঙ্গে নিয়ে সাকিবকে মোহনার জীবন থেকে সরে যেতে বলেছি।’
‘সাকিব ভাইয়া ভালো না সেটা আপনি কি করে জানলেন?’
সামিম কিছুক্ষণ নিরুত্তর থাকে, পরমুহূর্তে বলে,
‘প্রথম থেকে আমার নজর মোহনার ওপর ছিল। একদিন সাকিবের সঙ্গে মোহনাকে রমনাপার্কে দেখি। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ওরা এক মাস হলো রিলেশনশীপে আছে।
আমি মোহনার ওপর থেকে মুভ অন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মারুফ জানাল সাকিব ছেলেটি ভালো না। মারুফের প্রতিবেশী ছিল। তাই ওর চেয়ে ভালো আর কেই বা জানবে। ওর কথা বিশ্বাস না করে ক’দিন নজর রাখি সাকিবের ওপর। তারপরই আমি ওর বিষয়ে জানতে পারি। এখানে আমার কোনো ভুল আছে বলো বিভা?’
‘ভুল নেই মানলাম। কিন্তু এতে মোহনা কতটা কষ্ট পেয়েছে জানেন? ওর প্রথম ভালোবাসা ছিল সাকিব ভাইয়া।’
‘জানি। আমি ওঁকে মাঝেমধ্যে বিষণ্ণ মনে বসে থাকতে দেখি।’
‘আপনি কি মোহনাকে পছন্দ করেন?’
‘ভালোবাসি। আমাদের সম্পর্ক তৈরি করার জন্য তোমার সাহায্য চাই বিভা।’ সরাসরি বলে ফেলে সামিম।
বিভা কিছুক্ষণ নিরুত্তর থেকে বলে,
‘কবর। এতে যদি মোহনা হ্যাপি থাকে, তাহলে আমি সাহায্য করতে রাজি আছি।’
সামিম সন্তোষ হয়ে বিভাকে ‘ধন্যবাদ’ জানায়।
দূর থেকে আবির সামিম ও বিভাকে এক সঙ্গে লক্ষ্য করে। বিভাকে হাসিমুখে কথা বলতে দেখে কিঞ্চিৎ রাগ এসে ভর করে মনে। আবির ছুঁটে আসে তাদের নিকট।
.
.
.
#চলবে?