বাবুই পাখি পর্ব-১৮+১৯

0
761

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_১৮
Writer-Afnan Lara
.
পুতুল হাতের পাতিল নিয়ে হেঁটে ফাঁকা রান্নাঘরে এসে দাঁড়ালো।কল্পনা করছে এখানে বোয়াম থাকবে।ওখানে পাতিল,ডেকচি,ফ্রিজ আরও কত কি।রান্নাঘরটা সুন্দর হওয়া চাই।তাহলে রান্নাগুলো ও বেশ মজার মজার হবে।
ইমাদ বেছে এক রুমের ওয়াসরুমে গেছে মুখ ধুতে।পুতুল মাথার ঘোমটাটার সেফটিপিন খুলতে খুলতে ফ্লোরে বসলো।
-“আয়না নেই।বিছানা নেই।কি করে কি হবে তা ভাবতেই মাথা ঘুরছে।এই বাসা মানুষ করতে মাসখানেক লেগে যাবে।আর ততক্ষণে শাশুড়ির ডাক ও পড়ে যাবে।আহারে তখন আমার এত সুন্দর বাসাটার কি হবে?”
ভাবতে ভাবতে পুতুল বেডরুমের দিকে একবার তাকালো।দরজা খোলাই ছিল।হঠাৎ সেখানে ইমাদকে উদম দেখে চোখটা সেকেন্ড শেষ হতে না হতেই সরিয়ে ফেলেছে সে।
ছেলেদের উদম দেখলে খুব লজ্জা করে।
-“লজ্জা উনার লাগার কথা অথচ আমি লজ্জা পাচ্ছি।কেন জানি না গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো”
.
ইমাদ সেই রুমটার ফ্লোরে বসে বললো,”বুঝছেন?প্রচুর গরম।এত গরম যে আমার হালকা পাতলা পাঞ্জাবিটাও খুলে ফেলতে হলো।অথচ আজ ভোরের দিকে মুশলধারায় বৃষ্টি হয়েছিল।কোথায় চারিদিকে ঠাণ্ডা আবেশ থাকবে তা নাহয়ে গরমে সিদ্ধ হচ্ছি।ভাবছি আপনার কি অবস্থা হচ্ছে।এত ভারী একটা শাড়ী পরে।রাগের চোটে আমার জামাকাপড় ও আনতে পারলাম না।যদি আনতাম তাহলে অন্তত আমার পাঞ্জাবিটা পরে থাকতে পারতেন।
কলিংবেল বাজছে মনে হয়?”
.
-“আমি খুলছি”
.
পুতুল উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুললো।আরিয়ান আর তার বাবা দাঁড়িয়ে আছে।তারা বাসা চিনলো কি করে তাই ভাবছে পুতুল।আরিয়ানের বাবা ইমাদের নাম ধরে ডাকলেন।
ইমাদ পাঞ্জাবিটা চট জলদি করে পরে বের হয়ে আসলো।তাও উল্টো পরেছে।তাড়াহুড়ো করলে হিসেব গোলমেলে হবেই হবে।আরিয়ানের বাবা একটা ট্রলি ব্যাগ ভেতরে ঢুকিয়ে রেখে বললেন,”রওনক আন্টি পাঠালো তোমার জামাকাপড় ”
.
ইমাদ ব্রু কুঁচকে বললো,”মা আমার ঠিকানা জানলো কি করে?”
.
-“ওমা শুধু আন্টি কেন?সারা এলাকাবাসী জানে তুমি নতুন বউকে নিয় তমিজউদ্দিনের বাসায় উঠেছো।
অবশ্য খবরটা পাচারে উনি নিজেই প্রধান দায়িত্ব পালন করেছেন।আমিও তো তার থেকেই শুনলাম।আধ ঘন্টা আগে ওদিকে চায়ের আড্ডা দিতে গিয়েছিলেন আর সবাইকে জানিয়ে এলেন।”
.
-“ওহ বুঝলাম।আসুন না।কিন্তু বসার জায়গা নেই।কিছুরই জায়গা নেই।কোথায় বসতে বলবো?”
.
-“আস্তে আস্তে সব হবে।আজ আসি।একদিন দাওয়াত খেতে আসবো।”
.
আরিয়ান পুরো সময়টায় চুপ ছিল।মুখে ললিপপ একটা দিয়ে ফাঁকা বাসাটাকে দেখছিল।এরকম ফাঁকা বাসা এর আগে সে দেখেনি।তারা যখন নতুন বাসায় এসেছিল তখন বাসায় একটা চেয়ার আর একটা বেড ছিল।কিন্তু এই বাসাতে তো দুজন মানুষ ছাড়া আর কিছুই নাই।
——–
ইমাদ দরজা লাগিয়ে বললো,”যাক আপনার শাড়ী বদলানোর পরে কি পরবেন তা পেয়ে গেলাম।আমার ব্যাগটা খুলে যা পছন্দ হয় পরে নেন।কাকপক্ষীও দেখতে আসবে না এখানে”
.
পুতুল গায়ের শাড়ীটাতে হাত বুলিয়ে বললো,”ডিনার করতে গেলে উনারা কি বলবেন?”
কথাটা বলতে বলতে পুতুল ইমাদের ব্যাগটা খুলে দেখলো তার দুইটা থ্রি পিস।এগুলোর একটা তার ছিল আর আরেকটা ইমাদের কেনা ছিল।জিভে কামড় দিয়ে সে ইমাদের দিকে তাকালো এবার।ইমাদ মাথায় বাড়ি দিয়ে বললো,”একদিনে আমার সব জানা হয়ে গেলো মা বাবার”
.
-“ভালো।তবে আমি এই থ্রি পিস টা পরছি।আপনার তোয়ালে নিয়ে গেলাম”
.
পুতুল চলে গেছে অন্য রুমে।ইমাদ ব্যাগটা থেকে তার টিশার্ট একটা নিয়ে পাঞ্জাবিটা পাল্টে ফেললো।এরপর কি মনে করে হাসলো।
তার হাসির কারণ হলো মা জামাকাপড় পাঠিয়েছে মানে মায়ের রাগ নরমাল হয়েছে।ঘাড়ো হলে জামাকাপড় পাঠাতে না বরং লাথি মেরে নিচে ফেলে দিতো।লোক ধরিয়ে পাঠিয়েছে মানে রাগ একেবারে কমে গেছে।
হাসতে হাসতে তার রুমে ব্যাগ এনে রাখলো সে।পুতুল ফ্রেশ হয়ে ছুটে এসে বললো,”আমরা ঘুমাবে কেমনে?”
.
ইমাদ তখন রুমের বারান্দাটা দেখতে যাচ্ছিল।থেমে গিয়ে বললো,”কিভারে আর।লম্বা হয়ে শুয়ে পড়বেন যেখানে ইচ্ছা ।ফ্লোর তপ সব জায়গায় একই”
.
পুতুল মুখটা ফ্যাকাসে করে বললো,”ভালো”
—–
এবার দুজনে দুই রুমে বসে আছে ফ্লোরের উপর।পুতুল উঠে এসে ইমাদের সামনে বরাবর বসে বললো,”একা একা ভয় করছিল।তাই এলাম।আপনি কিছু মনে করবেন না আবার”
.
-“কি মনে করবো?আমার বিয়ে করা বউ আপনি।যখন খুশি এসে বসতে পারেন।”
.
-“আচ্ছা আপনার কি সিনথিয়া আপুর জন্য মন খারাপ হয় না?”
.
ইমাদ মুচকি হেসে বললো,”আমার খুব খুশি লাগছে এই ভেবে যে ওকে আর বিয়ে করতে হবে না”
.
পুুতুল দুষ্টু করে একটা হাসি দিলো তারপর বললো,”বিয়ের ভয়ে হাসছেন।আপনার কি খেয়াল আছে আপনি আজ আমায় বিয়ে করে এনেছেন?”
.
-“সিনথিয়ার প্যানপ্যান থেকে আপনাকে বিয়ে করা অতি উত্তম তাই হাসি পাচ্ছে।”
.
-“আমি প্যানপ্যান করি না?”
.
-“একদমই না।আপনি তো ঘ্যানঘ্যান করেন”
.
পুতুল ভ্রু কুঁচকে মুখ বাঁকিয়ে বললো,”একটা কথা বলুন তো!!ঠিক সময়ে এসে হাজির হয়েছিলেন কি জন্যে?”
.
-“জানি না কেন।তবে আপনাকে মিস করছিলাম”
.
কথাটা শুনে পুতুল দাঁত কেলালো।ইমাদ মুখটা ঘুরিয়ে বললো,”দাঁত কেলাতে হবে না।আমি তো এমনি গিয়েছিলাম দেখতে যে বিয়ে হয়ে গেছিলো কিনা”
.
-“যদি বিয়ে হয়ে যেতো ইমাদবাবু?”
.
-“তাহলে আর কি।জাস্ট একটা বাবুই পাখির বাসা গড়তো আজ।কারণ আমি এমনিতেও বাড়ি ছাড়তাম সিনথিয়াকে বিয়ে করার ভয়ে”
.
পুতুল কানের পেছনে চুল গুজতে গিয়ে টের পেলো তার খোঁপায় লাল গোলাপ গুঁজানো।চোখ বড় করে ফুলগুলো মাথা থেকে তুলে এনে সে চেয়ে রইলো।ইমাদ চোরের মতন উঠে বারান্দায় চলে গেছে।পুতুল ফুলগুলোকে এপিঠওপিঠ করে দেখে কি ভেবে ফুলের সব পাপড়ি ইমাদের সারা রুমে ছড়িয়ে দিয়ে মনে মনে বললো,”হয়ে গেলো বাসর ঘর”
.
ইমাদ ফোনে কথা বলছিল রিজবির সঙ্গে।কথা শেষ করে এবার ফোন পকেটে ঢুকাচ্ছে দেখে পুতুল তাড়াহুড়ো করে সব পাপড়ি ফ্লোর থেকে সরানো শুরু করে দিলো।
সব একসাথ করতে গিয়ে মাথা তুলে দেখলো ইমাদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।পুতুল থতমত খেয়ে বললো,”ঐ ইয়ে মানে একটু দুষ্টুমি করছিলাম।এর বেশি কিছু না।আপনি প্লিজ সিরিয়াস নেবেন না”
.
ইমাদ রুম থেকে যেতে যেতে বললো,”ভুলেই গিয়েছিলাম আজ আমাদের বাসর রাত।”
.
পুতুল মাথায় বাড়ি একটা দিয়ে সব পাপড়ি মুঠোয় বন্দি করে নিয়ে নিলো।ইমাদ দরজা খুলে পেছনে তাকিয়ে বললো,”চলেন ”
.
-“কোথায়?ডিনার এসময়ে?এখনও তো ডিনারের সময় হলো না”
.
-“কখন বললাম ডিনারে যাব।ঘুরতে যাব”
.
কথাটা শুনে পুতুল ছুটে আসলো রুম থেকে।ইমাদ বাহিরে দিয়ে দরজা লক করে হাঁটা ধরেছে।পুতুল জিজ্ঞেস করেছে তারা কই যাবে।ইমাদ বললো বালিশ কিনতে।
.
-“আচ্ছা এত টাকা পাচ্ছেন কই থেকে?
আর আপনি তো চাকরি করেন বেশি দিন হলো না।বাসা ভাড়ার টাকা দিলেন কি করে?”
.
-“আসলে আগে আমি আরিয়ানকে প্রাইভেট পড়াতাম।সেসব টাকা জমাতাম কারণ আমার সব খরচ বাবা দিতো,মা দিতো।ওগুলো দিয়েই আজ বাসা ভাড়া দিয়েছি।বেতন পেতে অনেক দেরি।তাছাড়া এখন যে বললাম বালিশ কিনবো সে টাকাটাও আমার পকেটে আছে।”
.
-“কাল সকাল থেকে খাব কি?বালিশ কিনতে হবে না।এমনি শুতে পারবো”
.
-“ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।চলুন আমার সঙ্গে।”
.
ইমাদ পুতুলের হাত ধরে হাঁটা ধরলো।পুতুল ইমাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।একটাসময়ে ইমাদ হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,”সরি।”
.
-“সমস্যা নেই।হাত ধরতে পারেন।আপনি আমার বিয়ে করা বর”
.
ইমাদ আড় চোখে তাকিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ফেললো।লিফট না ধরে সিঁড়ি দিয়েই যাচ্ছে তারা।
অনেকটা পথ হাঁটার পর একটা তোষকের দোকানে বালিশ পেলো তারা।ইমাদ দুটো বালিশ নিলো।তারপর পকেট থেকে টাকা বের করে গুনতে গুনতে হেঁটে চললো।পুতুল বালিশ দুটো নিয়ে এক পা দু পা করে হাঁটছে ওর পিছু পিছু।
টাকা গোনা শেষে ইমাদ ওর হাত থেকে বালিশগুলো নিয়ে বললো,”কাল সকালে তরকারি কিনে আনবো।রেঁধে ফেলবেন ঠিক আছে?”
.
-“হুমমম।হলুদ মরিচ,আদা রুসন বাদে ফুঁ দিয়ে রেঁধে ফেলবো।”
.
-“আরে তরকারির সাথে ওসবও এনে দেবো।”
.
-“বাটাবাটি কে করবে?আমি সবসময় মিক্সারে বাটছি সব।পাটা নিয়ে বসিনি আগে”
.
-“আমি কি আপনাকে পাটায় বসতে বলেছি?মিক্সার ও এনে ফেলবো।এত কিছুর জন্য কারোর স্পন্সার লাগবে”
.
পুতুল কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,”তা সেই স্পন্সার করা কোম্পানির নামটা কি?”
.
-“বাবা”
.
-“হেহহহ!আপনার বাবা আপনাকে দু টাকা দিলে আপনার আম্মু তাকে কাঁচা গিলে খাবে একলা বাসায়”
.
-“মা জানবে কি করে?”
.
-“আমি কথা ফাঁস করে দেবো”
.
-“তাহলে বসিয়েন পাটা নিয়ে”
.
-“প্লিস বোঝার চেষ্টা করুন”
.
-“কি বুঝতাম?”
.
-“আমি চাই আমাদের যাই হোক তা নিজের পয়সাতে হোক।কারোর হেল্প লাগবে না”
.
-“তাহলে পাটায় বাটা চেষ্টা করেন।একদিকে ছাড় দিতেই হবে পুতুল বাবু”
.
-“ইমাদ বাবু খাটে।পুতুল বাবু খাটে না।আপনি আমাকে শুধু পুতুল ডাকবেন”
.
-“কিছুই ডাকবো না।বাসা এসে গেছে”
.
——-
-“হ্যালো মিসেস রওনক।জ্বি জ্বি ওরা বালিশ দুটো নিয়ে বাসায় ঢুকছে সবেমাত্র।বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম।
আচ্ছা আমার মিসেসকে বলে ইমাদকে ডিম পোচ করে খাইয়ে দেবো।আমি তো জানি না সে খাসির মাংস খায় না।জানলে ওয়াইফকে খাসির কালাভুনা করতে বলতাম না”
.
-“আমার ছেলে এখন কি দিয়ে ভাত খাবে!!একবার জিজ্ঞেস করতে পারতেন আমায়!”
.
-“থুরি।আচ্ছা এতই যখন ছেলের প্রতি টান তখন বের করে দিলেন কেন?”
.
-“সেটা আপনি বুঝবেন না।সকালে নাস্তা পাঠাবেন।আহারে আমার ছেলেটা না খেয়ে আছে।নিজেকে দোষ দিতে পারছি না।ওকেও দোষ দিতে পারছি না।আর ঐ মেয়েটাকেও না।মন চায় ইমাদের বাবাকেই দোষ দিয়ে বসে থাকি।
যাই হোক!
বালিশ নিয়ে ঢুকেছে মানে?ওরা কি শুধু ফ্লোরে বালিশ পেতে শুবে নাকি?আপনি ওদের আপনার বাসায় জোর করে আজ রেখে দিবেন।আপনার নাতিনের ফিস আমি দিয়ে দিব।”
.
-“ঠিক আছে।”
——
ইমাদ আর পুতুল বালিশ রেখে ডিনার করতে এসেছে।পুতুল খাসির মাংস মজা করেই খাচ্ছে কিন্তু ইমাদ মুখটা ফ্যাকাসে করে পুতুলের খাওয়া দেখছে শুধু।কোথা থেকে তমিজ আঙ্কেলের ওয়াইফ একটা ডিম ভেজে এনে ইমাদের পাতে দিলেন।ইমাদের কেমন যেন সন্দেহ হলো তাও চুপচাপ খেয়ে নিলো সে।
খাওয়া শেষ করে দুজনে চলে যেতে নিতেই তমিজ আঙ্কেল ওদের আটকে বললেন আজ এখানে ঘুমাতে।অনেক না করেও পার না পেয়ে দুজনে উনাদের গেস্ট রুমেই জায়গা পেলো।পুতুল আগেভাগে বালিশ নিয়ে বললো সে নিচে শুবে।ইমাদ হাত ভাঁজ করে বললো,”নিচে শুবেন ভালো।তার আগে একবার ফ্লোরের দিকে তাকান”
.
পুতুল ইমাদের কথা মতন ফ্লোর দেখে চোখ বড় করে বললো,”এত ময়লা কেন।ছিঃ”
.
-“ছোট বাচ্চা বাসায় থাকলে এমনই হয়।আসুন আমার সাথেই ঘুমান। কি আর করবেন”
.
পুতুল বালিশ নিয়ে ইমাদের পাশে বসে থাকলো।উঠে বসলো না।ইমাদ ও রোবটের মতন বসে আছে।তমিজ আঙ্কেল চুপিচুপি ওদের দেখছেন দূর থেকে।ইমাদ সেটা বুঝতে পেরে দরজাটা লাগিয়ে আসলো।পুতুল নড়েচড়ে বললো,”আমি এপাশে শুবো”
.
-“এপাশে আমি শুবো।গভীর রাতে জেগে গিয়ে পানি খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার। ওপাশে শুলে এটা পসিবল হবে না”
.
চলবে'””

বাবুই পাখি🌿
#পর্ব_১৯
Writer-Afnan Lara
.
পুতুল নাকটা ঘঁষে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।মানে সে বোঝাতে চাচ্ছে যে সে এই পাশেই ঘুমাবে।ইমাদের সঙ্গে একমত না।তার ও তো ইচ্ছা অনিচ্ছা আছে!
পুতুলের এমন চাহনি দেখে ইমাদ কপাল কুঁচকে বললো,”ফাইন!আপনি এপাশেই ঘুমাইয়েন।রাতে আমার পানির তৃষ্ণা পেলে আপনাকে প্রথমে ঘুম থেকে উঠাবো তারপর আপনাকে সরিয়ে পানি খেতে যাব।তখন আমাকে কিছু বলতে পারবেন না।ঠিক আছে?”
.
পুতুল দাঁত কেলিয়ে মাথা নাড়ালো।ইমাদ মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো ওর দিকে।
পুতুল ভয় পেয়ে একটু পিছিয়ে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই ইমাদ লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ে বললো,”আমি ভালো ছেলে।এতই ভালো যে বিয়ে করা বউকে টাচ করবো না।ভাবেন আমি কত ভালো ছেলে”
.
পুতুল ঘাঁড় ঘুরিয়ে বললো,”হুমম।আপনি অনেক অনেক ভালো একটা ছেলে।প্রাউড অফ ইউ”
.
কথা শেষ করে পুতুলও এবার শুয়ে পড়েছে।দুজনেই উপরের ছাদটা দেখছে।ছাদটা কমলা রঙ করা।ড্রিম লাইটের আলোতে বেরঙ লাগছে।
পুতুল একবার কপাল চুলকে আবার মাথা চুলকে নড়েচড়ে উঠলো।
ইমাদ মাথাটা কাত করে বললো,”আন ইজি ফিল হয়?”
.
-“নাহ।তবে জানি না আমার এত গরমে শীত লাগছে কেন।মনে হচ্ছে গা কাঁপবে এবার।ঐ যে আছে না?ভয়ে শীত করে।আমার ঠিক তেমন।দাঁতে দাঁত ধাক্কা খাচ্ছে।গায়ের পশমগুলো দাঁড়িয়ে গেছে।আর ঢোক গিললেই মনে হয় গলা ব্যাথা”
.
-“আমি ডাক্তার নই।কিন্তু বলতে পারি যে আপনার কেন এমন সমস্যা হচ্ছে।কারণটা হলো এই প্রথম একটা ছেলের সঙ্গে এক বিছানায় শোয়ার অনুভূতি।ভাবতেই হাসি পাচ্ছে আমি আপনার হাত ধরলে আপনার কি হালটাই না হবে।তাই ভেবে কখনও ধরবো না।”
.
কথাটা বলে ইমাদ আরেকদিকে মুখ করে শুয়ে পড়েছে।পুতুল চোখ দুটো ছোট করে তাকিয়ে থাকলো ইমাদের দিকে।কেন যেন এই কথাটা তার একদমই ভাল্লাগেনি।
কেন ভালো লাগেনি তার কারণ খুঁজতে গিয়ে ঘুম এসে গেলো তার।
সেই ঘুম ভাঙ্গলো রাতের ২টা বিশ মিনিটে।ইমাদ ভেঙ্গেছে।
-“চোখ খুলে এত রাগ আসলো মাথায়।মন চাইলো সামনের এই বোকা ছেলেটাকে চিবিয়ে গিলে ফেলি।কিন্তু না।মনে পড়লো এ আমার বিয়ে করা বর।এরে মারলে আমারই লস।
তাই রাগটাকে কাবু করে তারই হাত ধরে শোয়া থেকে উঠলাম।মুখটা ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা??
সে এমন ভাব করলো যেন আমি তারে ঘুম থেকে উঠিয়েছি।মানে রাগ আমার হওয়ার কথা কিন্তু সে পাল্টা রাগ দেখাচ্ছে।
সে বললো,”বলেছিলাম আমাকে এ পাশে শুতে দিন।এখন হলো তো?কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়েছি বলে রাগ দেখালেন”
আমার মনে পড়ে গেলো তার সাথে করা ডিলের কথা।তাই পা টা একটু পিছিয়ে হাঁটু ভাঁজ করে তাকে জায়গা করে দিলাম।সে চুপচাপ উঠে গিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো পানি খেতে।
ছোট থেকেই কারোর পানি খাওয়া দেখলে আমার ভালো গলা টাও শুকিয়ে যায়।এখনও তাই।তার উপর ইমাদবাবু ফ্রিজের সামনে দাঁড়িয়ে ঢকঢক করে এক বোতল ঠাণ্ডা পানি সাবাড় করে যাচ্ছেন।আমি দৌড় না লাগালে শেষ করে দেবে তার খাওয়ার স্পীড বলছে।
সুতরাং দেরি করা ঠিক না।নরমাল পানিতে তৃষ্ণা মিটবে না।”
.
ভাবতে ভাবতেই পুতুল ছুটে গিয়ে ইমাদের সামনে এসে ওর হাত থেকে বোতলটা কেড়ে নিয়ে ভ্রু কুঁচকে পানি খাওয়া শুরু করলো।ইমাদ তার ঠোঁট দুটো মুছে হাঁটা ধরেছে।পুতুল দুই ঢোক পানি খেয়ে বোতলটা আগের জায়গায় রেখে ইমাদের পিছু পিছু চলে আসলো।ইমাদ তার জায়গায় শুয়ে পড়েছে আবার।যেন এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে ছিল সে।চুপচাপ ভালো মানুষের মতন শুয়েও পড়েছে।কোনো কথা বার্তা নাই।টু শব্দটাও করলো না!
.
পুতুল ইমাদের পাশে বসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সে কারণে।রুমের ড্রিম লাইটের আলোয় যা একটু বোঝা যায় আর কি।
ইমাদ মাথাটা তুলে বললো,”কিছু বলার আছে?”
.
-“নাহ।”
.
পুতুল চট করে শুয়ে পড়লো আরও প্রশ্নের জবাব দিতে হতে পারে সে ভয়ে।
-“ঘুমে থেকেও বুঝে যায় আমি তাকিয়ে আছি।উফ!!”
.
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই ডাক পড়ে গেছে তমিজ আঙ্কেলের নাতিন রুকাইয়ার।সে এসেছে নাস্তার জন্য ডাকতে।ইমাদ চোখ ডলতে ডলতে শোয়া থেকে উঠে বসে পাশে তাকালো।পুতুল হাত ভাঁজ করে এক কোণায় ঘুমাচ্ছে ইমাদ ওর হাতটা ধরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে বললো উঠতে।সে উঠছে না দেখে ওকে পেরিয়ে নামতে গেলো সে বিছানা থেকে
পুতুল ঠিক সেসময়ে উঠতে গেলো আর ইমাদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আবারও শুয়ে পড়লো ধপ করে।ইমাদ কপালে হাত দিয়ে ঘঁষতে ঘঁষতে বললো,”না জানি দিনটা আমার কেমন যায়।দিনের শুরুতেই বাড়ি খেতে হলো”
.
পুতুল ও নিজের কপাল ঘঁষছে।ইমাদ গিয়ে দরজা খুলে দিয়েছে।রুকাইয়া নাস্তা করতে আসতে বলে চলে গেলো।ইমাদ পুতুলের দিকে তাকিয়ে বললো,”চলেন বাসায় যাই।ফ্রেশ হয়ে খেতে আসবো”
.
পুতুল মাথা নাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে ওর পিছু পিছু চলে গেলো।যাবার আগে ইমাদ তমিজ আঙ্কেলকে বলে গেছে।তিনি টিভি দেখছিলেন সেসময়ে।
পুতুল ইমাদের আগেই মুখটা ধুয়ে নিয়ে এখন সব রুমে ঘুরঘুর করছে।ফাঁকা ঘর দেখলে মন চায় রেলগাড়ী খেলতে।সবগুলো রুমে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করে।একবার এক রুমে গিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করে।মানে যা খুশি তাউ করতে মন চায়।
এরই মাঝে রুকাইয়া নাস্তার ট্রে দিয়ে চলে গেছে।সে একা ছিল না।তাদের বুয়াও ছিল সঙ্গে।
নাস্তা দিয়ে তারা দুজনে চলে গেছে।পুতুল ট্রেটা ধরে দেখলো দুটো ডিম ভাজি,ভাজির বাটি, চারটে সাদা রুটি।চা নাকি পরে দিয়ে যাবে বললো।
ইমাদ একেবারে গোসল করেই বেরিয়েছে।মাথার ভেজা চুলগুলোকে তোয়ালে দিয়ে মুছে তোয়ালেটাকে গলায় ঝুলিয়ে পুতুলের সামনে বরাবর বসে সে বললো,”আমার না খুব খিধে পেয়েছে”
.
পুতুল ইয়া বড় হা করে ইমাদকে দেখছে।ইমাদ রুটি মুখে দিয়ে পুতুলের চাহনি দেখে বললো,”কি হয়েছে বলুন তো?আমাকে বিয়ের পর থেকে নতুন দেখছেন নাকি?ওরকম সবসময় তাকিয়ে থাকেন কেন?বিয়ের পরেরদিনই সুন্দর হয়ে গেলাম নাকি আমি?”
.
-“নাহ।কেন এমনি তাকাতে পারি না?ঠিক আছে আর তাকাবো না।”
.
-“তাকাতে হবে না।চুপচাপ খান।আমি এখন অফিসে যাব।সারাদিন বাসায় বসে রান্না করবেন।
যাওয়ার সময় তরকারি, মাছ,আদা,রসুন সব এনে দিব।”
.
ইমাদ খওয়াটা একটু জলদি করে দৌড় দিলো রেডি হতে।পুতুল দরজার কিণারায় দাঁড়িয়ে বললো,”জলদি আসিয়েন।”
.
-“দুপুর গড়িয়ে বিকাল হবে আসতে আসতে।কেন?এর আগে একা থাকেননি?”
.
-“না সেটা না।ইদানিং বৃষ্টি হচ্ছে বেশি।বৃষ্টির সময় ভয় লাগে আমার।তাছাড়া কতকাল একা বসে থাকা যায় তাও এরকম ফাঁকা একটা বাসায়?”
.
-“আচ্ছা আসবো।”
.
ইমাদ ঘড়ি ঠিক করতে করতে চলে যাচ্ছিল।
পুতুল ওকে থামিয়ে বললো,”চা খেয়ে যাবেন না?এত তাড়া কিসের?”
.
-“ওহ।ঠিক আছে।আসলে বাজার করে দিতে হবে তো তাই তাড়াহুড়ো করছি।অফিসের বস অনেক কড়া।দু মিনিট দেরি হলে স্টাফদের যা বকা দেন।অবশ্য আমি এখনও বকা খাইনি তার পরেও দেরি যাতে নাহয় সেই ভাবনায় থাকি।বকা খেতে ভালো লাগে না একদম”
——
চা খেয়েই ইমাদ বের হয়ে গেছে।
পুতুল দরজা লাগিয়ে ইমাদের রুমের বারান্দাটা দেখতে এসেছিল।কলিংবেল বাজার আওয়াজ কানে আসতেই ছুটে গেলো খুলবে বলে।ভাবলো ইমাদ বুঝি কি রেখে গেছে তা নিতে আবার ফিরলো এখন।
-“ওমা দরজা খুলে দেখলাম ইমাদের মা দাঁড়িয়ে আছেন।রীতিমত যা করা উচিত তাই করলাম।সালাম দিলাম উনাকে।তিনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে মুখ ভেঙ্গালেন। তারপর আস্তে করে বললেন,” এই নাকি নতুন বউ।থ্রি পিস পরা!!”
আমি শুনে ফেললাম।তাও মুচকি হাসি দিয়ে বললাম ভেতরে আসতে।উনি ভেতরে আসলেন সাথে আসলো পাঁচ ছয়টা ছেলে।তাদের হাতে সবজি, মাছ,মশলাপাতি,সব কিছু।
তারা সব ড্রয়িং রুমে রেখে চলে গেছে।ইমাদের মা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,”তোমার জন্য আনি নাই।আমার ছেলের কষ্ট আমার সহ্য হচ্ছিল না বলে এগুলো আনলাম।তার মানে এই না যে আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি।
ছেলের কেয়ার করেও তার উপর রাগ করে থাকা যায়।এটা মায়েরা পারবে।তুমি বুঝবে না।শুধু মাসকাবারি দিতে আসিনি।একটা খাট এনেছি।আমার ইমাদ নিচে শুতে পারেনা।।খাট নিয়ে ছেলেরা এখনই এসে পড়বে।”
.
পুতুল ইমাদের মায়ের হাত ধরে বললো,”আমাকে মাফ করে দিন।আমার দোষ সব।উনার কোনো দোষ নেই”
.
ইমাদের মা হাত ছাড়িয়ে বললেন,”হ্যাঁ।খাটটা ঐ রুমে রাখো গিয়ে।
তোষক আনবে কখন?
তোমরা এত ধীরে কাজ করো কেন।জলদি করো।আমার আবার কাজে যেতে হবে।”
.
ইমাদ হাত ভর্তি তরকারি নিয়ে ভেতরে ঢুকে বললো,”মা?”
.
মা মুখটা ঘুরিয়ে হেঁটে চলে গেলেন।ইমাদ আগামাথা কিছুই বুঝছে না।পুতুল এগিয়ে এসে বললো,”আপনার মা এগুলো পাঠিয়েছেন”
.
-“মাফ করে দিয়েছে আমায়?”
.
-“নাহ।
বললো রাগ করে থেকে কেয়ার করে যাবে”
.
-“ওমা।এ কেমন রাগ তাহলে?”
.
-“এত তরকারি কোথায় রাখবো।ফ্রিজ তো…..”
.
-“চুপ।মা শুনলে এবার ফ্রিজ ও পাঠাবে।আজ যা রান্না করার রাঁধেন বাকি সব তমিজ আঙ্কেলের ফ্রিজে রেখে আসবো।এখন আমি যাই।আমার দেরি হচ্ছে।”
.
পুতুল দরজা লাগিয়ে বিছানাটা দেখে এসে বসলো রান্না করবে বলে।
-“আমার শাশুড়ি দা, বটি,মিক্সার সব এনে দিছে।কি ভালো উনি।কথা হলো আমায় পছন্দ করেন না।আমি যদি চুল গোলাপি করি তাহলেও কি উনি আমায় পছন্দ করবেন?কে জানে।মা ছেলের হাবভাব ঠিক বুঝতে পারি না।ইমাদ বাবু একেবারে তার বাবার মতন হয়েছে।আর ভাবটা মায়ের পেয়েছে।
পুরো পরিবারটা একদম দারুণ।কিন্তু সবার মনের চিন্তাভাবনা একেবারে বেমিল।আমি মাঝখানে ফেঁসে গেছি।মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় সিনথিয়া আপুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করি কি করে উনি সামলাতেন।পরে ভাবি দরকার নেই।যেটা উনার না সেটা উনাকে জিজ্ঞেস করে অনুভূতি জানতে চাইলে ঝাঁটা পেটা করবে।কিছু কিছু মেয়েরা বিনা কারণেও আরেকটি মেয়েকে ঘৃনা করার ক্ষমতা রাখে।
যেমন আমি সিনথিয়া আপুর কোনো ক্ষতি করিনি।অথচ এখন তিনি মনে মনে আমাকে কাঁচা চিবিয়ে খাচ্ছেন।এরকম আর কি!
থাক।উনি যেমন আছেন তেমন থাকুক।আমিও আমার জায়গায় থাকি।জীবনে এই প্রথমবার রান্নার কাজটা কঠিন মনে হচ্ছে আমার। খুব কঠিন।সব এলোমেলো লাগছে।আজ রান্না মজার হবেনা জানি।লবণ হয় বেশি দেবো নয় কম দেবো।উনি আমায় মাফ করে দেবেন সেটাও জানি।আচ্ছা!এত ভালো হওয়ার কি আছে?উনার রাগ দেখার খুব শখ আমার।মানে আমার উপর রাগ দেখায়নি এখনও তেমন করে।ইমাদবাবু রগচটা ।ইশ।তারপর আমার গায়ে হাত তুলতে গিয়েও তুলবে না।এরপর হাত তুলতে গিয়েছিল কেন সেটা ভেবে অনুতপ্ত হবে।সেটা দেখে আমার এত ভাল্লাগবে।তারপর আমার কেয়ার করা শুরু করবে।চা বানিয়ে খাওয়াবে।কানে ধরে সরি বলবে।
আমি মনে হয় একমাত্র সেই স্ত্রী যে চায় তার স্বামী তার উপর রাগ করুক।রাগ উঠানো সহজ।কয়েকদিন পর মাথায় ভূত চাপলে রাগ উঠিয়ে দেবো।এখন সময় না।শাশুড়ি যদি একটা টিভি দিয়ে যেতো রাগ করে। তাহলে রান্না শেষে বসে টিভি দেখতাম।”
চলবে””