বিবাহ অভিযান পর্ব-০৪

0
116

#বিবাহ_অভিযান (৪)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

“এই চোখে দেখেন না? মেয়ে দেখলেই ধাক্কা দিতে মন চায়! অসভ্য ছেলে।”

সমুদ্র ফোনটা’কে সরিয়ে বলল,
– “সরি মিস আসলে আমি খেয়াল করিনি।”

মেয়েটা সমুদ্রে’র দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
– “এই আপনি আমাকে মিস বললেন কেন?”
– “কেন কি অসুবিধা!”
– “দেখে বোঝেন না আমি বিবাহিত!”

সমুদ্র বিরক্ত নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। অবিবাহিতদের মতো সাজগোজ করে থাকলে মানুষ বুঝবে কেমন করে সে বিবাহিত না অবিবাহিত!

– “সরি ম্যাম আপনাকে দেখে আমার মনে হয়নি আপনি বিবাহিত তাই মিস বলেছি। সরি…

সমুদ্র ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়। মেয়েটা হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিজ মনে বলল,
– “সত্যি কি আমাকে অবিবাহিত মনে হয়?”

— —– —

বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। সমুদ্র বাড়ি ফেরার জন্য রওনা দেয়, মাঝপথে…

– “আপনাকে আমি কতবার বলেছি না আমাকে বিরক্ত করবেন না। কেন বারবার আমার পেছনে পড়েন?
– “বিশ্বাস করো আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আমাকে একটু বোঝ!”

রাত্রিবেলা একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে, বিষয়টিকে দেখে এড়িয়ে যেতে পারল না সমুদ্র। বাইক’টা থামিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “কি হয়েছে ভাই? ঝামেলা করছেন কেন!”

ছেলেটা নরম গলায় বলল,
– “ভাই আমাদের পার্সোনাল ব্যাপার আমরা মিটিয়ে নেব, আপনি যান।”

কথাটা শুনে সমুদ্র বাইকটা স্টার্ট দিতে যাচ্ছিল, তখন মেয়েটা বলল,
– “আমাকে একটু লিফ্ট দেবেন?”

সমুদ্র ও ছেলেটা উভয়েই চমকে তাকাল। ছেলেটা ব্যস্ত হয়ে বলল,
– “রাশি আমি তোমাকে পৌঁছে দিই?”

রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “আপনাকে আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি আমাকে বিরক্ত করবেন না। আপনার আর আমার মধ্যে কিছু হওয়া সম্ভব না।”

তারপর রাশি সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
– “সরি আপনাকে দাঁড় করানোর জন্য। আপনি আসতে পারেন, ধন্যবাদ।”

রাশি গটগট করে হেঁটে সামনে চলে গেল। সমুদ্র এবং সেই ছেলেটা এখনো সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাশির যাবার দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র বলল,
– “ভালোবাসো মেয়েটাকে?”
– “হুমম।”
– “মানছে না কেন?”
– “আমি ওর জুনিয়র বলে।”

সমুদ্র চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল।

– “সিনিয়রের প্রেমে পড়লে কিভাবে?”
– “সে অনেক কথা ভাই। ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু ফলাফল শূন্য।”
– “লেগে থাকো, দ্যাখো কি হয়।”

ছেলেটা মৃদু হাসল। সমুদ্র বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। যাবার পথে ভাবতে লাগল, পৃথিবীতে কত রকমের মানুষ আছে, একেক জনের চিন্তা ভাবনা একেক রকমের।

—- —— —-

২দিন পর,
সমুদ্রের পাত্রী আর পছন্দ হচ্ছে না। মেয়ে দেখে চলেছে তো দেখেই চলেছে। সমুদ্রের প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে, এখন মাঝেমধ্যে মনে হয় বিয়ের প্রসঙ্গ না তুললেই বোধহয় ভালো হতো।

সমুদ্রের বাবা ছেলের বিরস মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– “কি ব্যাপার মুখটা ওইরকম আমসি করে রেখেছ কেন? ”
– “কিছু না।”
– “বুঝেছি। জীবনে তো একটাও প্রেম করতে পারলে না, প্রেম করলে বিয়ের জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হতো না।”

সমুদ্র বাবার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
– “প্রেম করার পর যদি পরিবার না মানত তখন?”

সমুদ্রের বাবা একটু থতমত খেলেন ঠিকই কিন্তু সমুদ্রকে সেইটা বুঝতে দিলেন না, উল্টে হেসে বললেন,
– “সেইটা তখন দেখা যেত। প্রেম তো করতে পারোনি এত চিন্তা করে কি হবে?”

সমুদ্র মুখটা করুন করে চুপচাপ খেতে লাগল। খাবার মাঝে মা কিছুটা খাবার দিয়ে বলল,
– “বাবু ওর কথা বাদ দে তো। তোর জন্য যে ঠিক করা আছে সে না আসা পর্যন্ত এইরকম হবে, চিন্তা করিস না। আর আমি ঠিক করেছি তোর বিয়ের জন্য খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেব।”

কথাটা শুনে সমুদ্রের বিষম লেগে যায়। ওর চেনা অচেনা অনেকেই খবরের কাগজ পড়েন, তাদের চোখে যদি এইটা পড়ে তো সমুদ্র শেষ। না এইটা কিছুতেই করতে দেওয়া যাবে না।

– “মা এইসবের কোনো দরকার নেই। তুমি এমনি পাত্রী দ্যাখো না।”
– “আচ্ছা। যা বলবি তাই।”

অন্যদিকে…

খুশি অনেক সময় ধরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে চলেছে। রাশি ছোটবোনের কান্ডে বিরক্ত হয়ে বলল,
– “কিরে কি করছিস আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে?”
– “দ্যাখ তো দিদি আমাকে কি বিবাহিত বলে মনে হয় না?”

রাশি বিরক্ত হয়ে বলল,
– “কেন? আবার কি হলো!”

খুশি বিরস মুখ করে বলল,
– “আজকে রেস্টুরেন্টে একজনের সাথে ধাক্কা লেগেছিল, সে আমাকে অবিবাহিত মনে করে মিস বলল।”
– “এতে অসুবিধার কি আছে?”
– “আরে পুরোটা শুনবি তো!”
– “বল।”
– ” ছেলেটাকে আমি যখন বললাম আমি মিস নই মিসেস তখন ছেলেটা বলল, আপনাকে দেখে আমার মনে হয়নি আপনি বিবাহিত তাই মিস বলেছি। সত্যি আমাকে কি অবিবাহিত মনে হয়?”

রাশি খুশির মাথায় চাঁটি দিয়ে বলল,
– “পড়াশোনা করার বয়সে বিয়ে করলে মানুষ অবিবাহিত বলবে না তো কি বলবে?”

খুশি গাল ফুলিয়ে বলল,
– “তো কি করব! তুই তো বিয়ে করবি না বলে ঠিক করেছিস।”

রাশি বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,
– “কি করবো বল মন মতো কাউকে তো পেলাম না।”
– “কি জানি তোর‌ কপালে কে আছে?”

রাশি খুশির দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
– “আমার চিন্তা না করে নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা কর। সুখে থাকবি।”

রাশি বিছানায় শুয়ে ফোন টিপতে লাগল। খুশি ঘর থেকে বেরিয়ে মায়ের ঘরে গিয়ে নক করল।

– “মা আসবো।”
– “হ্যাঁ আয়।”

খুশি মায়ের পাশে বসল। খুশি আর রাশি দুইবোন। রাশি বড়ো, পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করছে আর খুশি পড়াশোনা শেষ করে ৩মাস হলে বিয়ে করেছে। খুশির লাভ ম্যারেজ তবে অনুষ্ঠান করেই বিয়ে হয়েছে। খুশি আর রাশির সংসার বলতে ওদের মা, বাবা কিছুবছর আগে মা’রা গিয়েছেন।এখন সংসার চলে সম্পূর্ণ রাশির ইনকামে, যদিও বিয়ে না করার এইটাই প্রধান কারন কিন্তু রাশি সবার কাছে বলে পছন্দমতো কাউকে পায়নি তাই বিয়ে করছে না।

– “কিরে কি বলবি?”
– “মা দিদি কবে বিয়ে করবে?”

রাশির মা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলল
– “মেয়েটাকে তো বলছি বিয়ের কথা কিন্তু কিছুতেই রাজি হচ্ছে না।”
– “মা দিদি আমাদের সংসারের জন্যই বিয়ে করতে রাজি না। এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে,ওকে বোঝাও না।”
– “আমি তো কত করে বলছি কিন্তু তোর দিদি তো রাজি হচ্ছে না। তুই যদি পারিস বোঝা।”

খুশি দীর্ঘশ্বাস ফেলল। দিদিকে বোঝাবে কি করবে কে জানে!

খুশির মাও বড়ো মেয়েকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। বয়স বাড়ছে মেয়েটার একটা গতি করতে পারলে শান্তি পেতেন কিন্তু মেয়ে বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছে না। রাশির বয়স ২৪+, গ্র্যাজুয়েশন করার পর চাকরি করেছে। সংসারের দায়িত্ব নিয়েছে আপাতত বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়েছে।

—- —

আজ সমুদ্র একজন পাত্রীর সাথে আলাদাভাবে দেখা করবে।‌ সমুদ্রের মা, বাবা মেয়েকে দেখে এসেছেন, মেয়েকে পছন্দ হয়েছে। সমুদ্র সেই ঘটনার পর যেতে রাজি না, তাই আলাদা ভাবে দেখা করতে আসার প্রস্তাব দিয়েছে। ওনারা রাজিও হয়েছেন, আর আজ দুজন মিট করবে।

সমুদ্র কফিশপে বসে আছে, মেয়েটার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু মেয়েটা এখনো আসছে না, সমুদ্র বারবার ঘড়ির দিকে দেখছে অনেকটা সময় চলে‌ গেছে মেয়েটা এখনো আসছে না। তখনি একটা নারী কন্ঠ শুনতে পেল,

– “আপনি এইখানে?”

#চলবে….