বিবাহ অভিযান পর্ব-০৮

0
121

#বিবাহ_অভিযান (৮)
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ)

– “আমি মা-বাবার বড়ো সন্তান। আমার কোনো ভাই নেই, বাবা মারা যাবার পর সংসারের হাল আমাকেই ধরতে হয়। পড়াশোনা, জব সামলাতে সামলাতে কখন যে প্রেম করার বয়সটা পেরিয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি।‌আর এখন এই বয়সে এসে বাচ্চাদের মতো প্রেম করা তাও আবার জুনিয়র কারোর সাথে এইটা একদম বেমানান।”

রাশির যুক্তিগুলো সমুদ্রের মনমতো হলো না। ভালোবাসার আবার বয়স লাগে নাকি!

– “আপনার বয়স কত?”
– “২৪+”

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “এইটা আর এমন কি! কিন্তু আপনি এমনভাবে বলছেন যেন আপনার ৩০+।”

সমুদ্রের কথায় রাশি মেকি হেসে বলল,
– “আপনার কাছে ২৪+ বয়সটা বেশি না কিন্তু সমাজের চোখে এইটাই অনেক। অনেকে তো মনে করে আমার বয়স হয়ে গেছে আমার আর‌ ছেলেই জুটবে না।”

রাশির কথা শুনে সমুদ্র মজা করে বলল,
– “তাদের ভাবনা’কে ভুল প্রমানিত করে একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিন অসুবিধা কি?”

সমুদ্রের কথায় তাল মিলিয়ে রাশি বলল,
– “ভালো ছেলে কোথায় পাবো বলুন তো! অনলাইনে অর্ডার দিলে কি এসে যাবে?”
– “কেন! আপনার সেই জুনিয়র প্রেমিক আছে তো?”

রাশি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
– “প্রেমিক না আরো কিছু। এইরকম প্রেমিক কারোর না হোক।”
– “কেন?”

– “ছেলেটা আমার থেকে ১বছরের জুনিয়র, সেটা বড়ো কথা নয় আসল কথা কি জানেন ছেলেটা বিবাহিত।”

বিবাহিত! কথাটা সমুদ্রের বিশ্বাস হলো না।
– “আপনি এইসব কি বলছেন? ছেলেটা বিবাহিত তো আপনার পেছনে পড়ে আছে কেন?”

রাশি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– “কয়েকবছর আগে ছেলেটা আর মেয়েটা কাউকে না জানিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে তারপর সবকিছু ভালোই চলছিল হুট করে ছেলেটা আমার পেছনে পড়েছে। আমি জানি এইটা ভালোবাসা না আবেগ। আর এইরকম ছেলের সাথে কোনো সম্পর্কে যাবার ইচ্ছা আমার নেই।‌ যে পুরুষ এক নারীর দায়িত্ব নিয়ে অন্য নারীতে আসক্ত হতে পারে সেই পুরুষ’কে আমার চাই না।”

সমুদ্র মনে মনে বলল,
– ‘শালা আমি বউ পাইনা আর এরা পেয়ে অবহেলা করছে!”

রাশি মৃদু হেসে বলল,
– “জানেন প্রথম প্রথম ছেলেটার পাগলামী দেখে ভালো লেগেছিল কিন্তু যখন খোঁজ নিয়ে এইসড জানতে পারি তখন ছেলেটার মুখটাও দেখতে ইচ্ছা করে না।একটা মেয়েকে নিজের জীবনে জড়িয়ে আবার অন্য মেয়ের মায়ায় কিভাবে পড়ল!”

সমুদ্র কি উত্তর দেবে? প্রেম ভালোবাসা এইসব সম্পকে ওর অভিজ্ঞতা এমনিতেই কম তাই উত্তরটা না দিয়ে চুপ করে থাকল।

দুজনের মাঝে এটা সেটা নিয়ে আরো বেশ কিছুক্ষন কথা হলো। তারপর যে যার নীড়ে ফিরতে ব্যস্ত হয়ে উঠল।

— — —–

আজ অয়ন ও রিতার এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান।‌সমুদ্র চারিদিক সামলাতে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।‌একবার এইদিক আর একবার ওইদিকে। কে একবার বলে সমুদ্র এইদিকে আয় আর একবার ওহ বলে সমুদ্র এইদিকে এসো।‌

মোটামুটি সমস্ত কাজ সেরে সমুদ্র অয়নের বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিল।‌সকাল থেকে দৌড়দৌড়ি করতে করতে জীবন পুরোই শেষ।

অয়ন সমুদ্র’কে এইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে বলল,
– “কিরে শুয়ে আছিস রেডি হবি না?”

সমুদ্র আধশোয়া হয়ে বলল,
– “এইদিকে আয় একটা কথা বলব।”
– “কি?”
– “আয় না।”

অয়ন সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যেতেই সমুদ্র ওর পিঠে দমাদম কিল বসিয়ে দিল।অয়ন ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে বলল,

– “আহ শালা মারছিস কেন?”
– “তো কি করব! শালা তোর বিয়ে আর আমি খেটে মরছি। সকাল থেকে একদন্ড বসার সুযোগ পাইনি, তোর বাপ আমাকে কি বিনা পয়সার‌ চাকর‌ পেয়েছে?”

অয়ন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলল,
– “এইরকম বলছিস কেন? তুই না আমার বন্ধু, আর বন্ধুর বিয়েতে বন্ধু একটু এইরকম করে।”
– “ঠিকাছে রে তুলে রাখলাম।‌ আমার বিয়েটা একবার‌ ঠিক হোক তারপর তোকেও বোঝাব।”

অয়ন কিছু না বলে মৃদু হাসল। ক্লান্তিতে চোখটা বুজে আসল সমুদ্রের, কখন যে ঘুমের দেশে পাড়ি দিল নিজেই জানে না।

—- —-

সন্ধ্যা থেকে লোকজন আসতে শুরু করেছে, অনুষ্ঠান’টা অয়নদের বাড়িতেই হবে তাই জন্য এত আয়োজন। অয়ন রেডি হয়ে সমুদ্রকে ডাকতে আসল, যদিও ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছা করছিল না কিন্তু কিছু করার নেয় ডাকতে হবে কারন সমুদ্র’কে ছাড়া ওর চলবে না।

– “এই সমুদ্র উঠে পড়, গেস্টরা চলে আসছে।

সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলল,
– “যা তো আমি এখন ঘুমাবো।”

সমুদ্র উঠছে না দেখে অয়ন একটু শয়তানি করে বলল,
– “বাবা তোকে খুঁজছিল। গেস্ট আসছে তাদের আপ্যায়ন করতে হবে তো।”

কথাটা শোনা মাত্রই সমুদ্র উঠে বসে বলল,
– “আমার এইখানে আসাটাই ভুল হয়েছে, যতসব।”

অয়ন কিছু বলল না কারন কাজ‌ হয়ে গেছে। সমুদ্র’কে ওহ ভালো করেই চেনে ওহ যখন একটা দায়িত্ব নিয়েছে তখন সেটা পালন করবে।‌আর‌ অয়নের বাবার কোনো কথা সমুদ্র ফেলবে না সেটাও অয়নের জানা তাই তো ঘুম থেকে উঠানোর জন্য বাবার নাম ভাঙাল।

সমুদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে রুমের বাইরে যেতে যাবে তার আগেই অয়ন পেছন থেকে ডেকে বলল,
– “যাচ্ছিস ভালো কথা কিন্তু এইরকম সেজে যাবি?”

সমুদ্র নিজের পোষাকের দিকে তাকাল, সকাল থেকে এইটাই পড়ে আছে চেঞ্জ করা হয়নি। কিন্তু তবুও ঠিকঠাক, এখন চেঞ্জ করার সময় নেয়। অয়নের কথার উত্তর না‌ দিয়েই বেরিয়ে গেল, অয়ন ডাকলেও পেছন ফিরে তাকাল না। শেষে বিরক্ত হয়ে অয়ন বিরবির করে বলল,
– “এই ছেলে এইরকম কেন?”

নীচে এসে চারিদিকে অয়নের বাবাকে খুঁজতে লাগল।‌এর‌ মাঝে সমুদ্র আর রাশির দেখা হয়ে যায়। পার্পেল কালারের শাড়িতে রাশিকে বেশ মিষ্টি লাগছে।

সমুদ্রকে দেখা মাত্রই রাশি মিষ্টি হেসে বলল,
– “কেমন আছেন?”
– “হুমম ভালো আপনি?”
– “হুমম।”

সমুদ্র উশখুশ করছে একটা কথা বলার জন্য কিন্তু বলতে‌ পারছে না‌ সেটা রাশি বুঝতে পেরে বলল,
– “আপনি কি কিছু বলবেন?”

সমুদ্র আমতা আমতা করে বলল,
– “আসলে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।”

রাশি চমকে তাকাল, সমুদ্র এই কথাটা বলবে আন্দাজ করতে পারেনি। কিছু বলতে যাবে তার আগেই সমুদ্র বলল,
– “আমি আসছি, পড়ে কথা হবে।”

সমুদ্র তড়িঘড়ি চলে যায়। রাশি ওর যাবার দিকে তাকিয়ে নিজ মনে বলল,
– “অদ্ভুত মানুষ তো!”

সমুদ্র চারিদিকে খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে অয়নের বাবাকে খুঁজে পায়। ওনার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করল,
– “আঙ্কেল আমাকে খুঁজছিলেন?”
– “কই না তো। আর তুমি এখনো রেডি হও নি কেন? তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
– “যাচ্ছি। এইদিকের সব কমপ্লিট?”

অয়নের বাবা মৃদু হেসে সমুদ্রের পিঠ চাপড়ে বললেন,
– “হ্যাঁ তুমি যেভাবে দায়িত্ব নিয়ে করেছ তাতে কমপ্লিট না হয়ে কোথায় যাবে! যাও এখন রেডি হয়ে নাও।”

সমুদ্র ঘাড় নাড়িয়ে ওখান থেকে চলে গেল।

— — –

রুমে এসেই অয়নের উপর আক্রমন হলো।

– “শালা আমাকে ঘুম থেকে তুলে বাপ ডাকছে বলে পাঠালি কেন?”

অয়ন কলগেট স্মাইল দিয়ে বলল,
– “নাহলে তুই উঠতিস না।”

সমুদ্র তেড়ে গেল ওর দিকে। অয়ন তড়িঘড়ি ঘর ছেড়ে পালাল‌ আর যাবার আগে বলে গেল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নীচে আসার জন্য।

— —- —-

অনুষ্ঠানে সবাই চলে এসেছে। সমুদ্রের বাবা মাও এসেছেন। রাশি ও ওর বন্ধুরা রিতার কাছেই ছিল, রিতার সাথে পরিচিত হচ্ছে। অয়ন গেস্টদের সামলাতে ব্যস্ত, সমুদ্র একা বসে আছে। রাশির চোখ পড়ে সমুদ্রের দিকে, বন্ধুদের পাশ কাটিয়ে সমুদ্রের কাছে গিয়ে বলল,
– “কি ব্যাপার এইখানে একা বসে আছেন কেন?”
– “এমনিতেই ভালো লাগছে না।”

রাশি চিন্তিত গলায় বলল,
– “এনিথিং রং, শরীর ঠিক আছে তো!”

সমুদ্র রাশির দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলল,
– “আমাকে নিয়ে এত ভাবছেন কেন?”

রাশি থতমত খেয়ে গেল।‌সত্যি তো ওহ সমুদ্র’কে নিয়ে এতটা ভাবছে কেন?

– “কি হলো চুপ করে গেলেন যে!”

রাশি আমতা আমতা করে বলল,
– “আমাকে ডাকছে আমি গেলাম।”

রাশি তড়িঘড়ি সমুদ্রের কাছ থেকে পালিয়ে যায়। সমুদ্র মৃদু হাসল। রাশির সমুদ্রের কাছে যাওয়া, কথা বলা সবটা দুজন মানুষ খুব ভালো করে খেয়াল করল। দুজনের মনেই প্রশ্ন এদের মধ্যে কিসের এত কথা!

#চলবে….