বিষাদের শহরে তুমি এলে পর্ব-০৬

0
167

#বিষাদের_শহরে_তুমি_এলে
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

“তুমি চলে এসেছো? আমি ভাবতেই পারি নাই! তুমি সত্যি সত্যি চলে আসবে। তোমার বাবা-মা তোমাকে আসতে দিল?

–আমি আপনার কাছে এসেছি। এটা আমার বাবা-মা জানে না। আমি তাদের না জানিয়ে, আপনার কাছে এসেছি। আর এই কথাটা আমি বাবা-মায়ের কাছে গোপন রাখতে চাই। বাবা জানলে আমার পড়াশোনা বন্ধ করে দিবে। আমার বাবা আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ চায়। আর আমি চাই আমার বাবার হাসি। বাবার মলিন মুখটা আমাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে। বাবা-মাকে খুশি রাখার জন্য, আমি নিজের খুশি বিসর্জন দিতে রাজি আছি।

–আমার ছেলেকে যদি আগের মতো করে দিতো পারো। তার বিনিময়ে তোমার কি চাই?

–একটা বাইক। তানহার কথা শুনে আদনান আহির বিস্ময় নয়নে তানহার দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড তানহার দিকে দৃষ্টিপাত করে, অন্য দিকে ঘোরালো চক্ষুদ্বয় জোড়া। সুপ্ত কণ্ঠে বলল।

–আমার কথা মতো কাজ না করতে পারলে, আমি তোমার আবদার পূরণ করে দিব না। আমার ছেলে যদি আরো বিগড়ে যায়। তাহলে তোমার সমাপ্তি ওখানেই করে দিব। তানহা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল। আপনি যা বলবেন। তাই হবে।

আদনান আহিরের গাড়িটা বিশাল বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালো। তানহা গাড়ি থেকে নেমে, আদনান আহিরের সাথে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল। তানহাকে দেখে ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলল। যখন শুনলো তাহান সামান্য পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে। তখনই মনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হলো। এই মেয়েকে কিছুতেই তার ছেলের কাছে রাখবে না। স্বামীর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে টু শব্দ করতে পারলো না। আদনান আহির তানহাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল। ইফাদের রুমটা দেখিয়ে দিয়ে, তার কাজে লেগে যেতে বলল। তানহার মনে সাহস সঞ্চয় করে, ইফাদের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আদনান আহির তানহার দিকে তাকিয়ে আছে। তানহা ইফাদের রুমের মধ্যে প্রবেশ করল। ইফাদ মাথায় চিরুনি করছিল। তানহাকে দেখে চক্ষুদ্বয় জোড়া গোল গোল হয়ে গেল। তানহাও বিস্ময় নয়নে ইফাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দু’জন মিলে একসাথে বলে উঠলো।

–তুৃমি!

–আপনি!

–আমার বাসায় আমি থাকবো না। তাহলে কে থাকবে? তুমি থাকবে? তোমার মতো ছোট মন মানসিকতার মেয়ে, আমি একটাও দেখি নাই। আমি মানছি। আমি তোমার ক্যামেরা ভেঙে দিয়েছি। তাই বলে তুমি টাকা নিতে বাসায় চলে আসবে। তোমার কত টাকা লাগবে বলো। আমি দিয়ে দিচ্ছি। টাকা নিয়ে আমার বাসা থেকে বিদায় হও। তোমাকে এক মুহুর্ত সহ্য করতে পারছি না। ক্যামেরার কথা মনে হতেই, তানহার বুকে চিনচিন করে ব্যথা করে উঠলো। তানহা জবাব দিল না। তার খুশির থেকে পরিবারের অশান্তিটা দূর করা প্রয়োজন। তাই সে ইফাদের সব কথা হজম করে নিল।

–আমি আপনার থেকে টাকা নিতে আসি নাই। আপনার বন্ধু হতে এসেছি। সেদিনের কথা সবকিছু ভুলে গিয়ে, আমরা বন্ধু হতে পারি না। তানহার কথা শুনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো ইফাদ। মেয়েটার হাবভাবে কেমন সন্দেহ ঠেকছে। ইফাদের থেকে উত্তর না পেয়ে, তানহা ইফাদের দিকে এগোতে যাবে। তখনই ইফাদের রাগান্বিত কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো।

–একদম আমার কাছে আসবে না। তুমি বাহিরে থেকে এসেছো। আমার রুমে আসার আগে, ফ্রেশ হয়ে এসেছিলে? ইফাদের কথায় হতভম্ব হয়ে গেল তানহা। মস্তিষ্কের রক্তকণিকা গুলো উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তানহা।

–স্যরি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমি একটা জীবানুর কাছে এসেছি। জীবানুর কাছে আসতে হলে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে আসতে হয়। এতে আমরা জীবানুর সংস্পর্শে এলেও, জীবাণু আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তানহার কথা শুনে, ইফাদ রাগান্বিত হয়ে তানহার দিকে তাকালো। বজ্রকন্ঠে বাবা-মাকে ডাকলো। তানহা ইফাদকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এভাবে চিৎকার করবেন না। আপনার বাবা ড্রয়িং রুমে আছে। আপনাকে এত উত্তেজিত করে ফেলেছি। এটা দেখলে আমাকে এখনই বাসা থেকে বের করে দিবে। আপনাকে তো আর খু*ন* করতে আসিনি। আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে এসেছি। আপনি আমাকে যা বলবেন। আমি আপনার সব কথা গুলো মানবো। অবশ্যই আমাকে মার্জিত কিছু বলতে হবে।

–আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাই না। এমন ভাবে কথা বলছো। তুমি আমার অফিসের বস। আমাকে আদেশ করছো। আমাকে যথাযথ পালন করতে হবে। তোমার সাথে আমি কথা বলতে চাই না। আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যাবে। নাকি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

–আপনি আমার সাথে বন্ধুত্ব করলে, একটা পরিবারের মুখে হাসি ফুটে উঠবে। আমি আপনার সকল কথা মেনে চলবো। আমাকে দিয়ে যদি আপনাদের বাসার সব কাজ করান। তাহলে আমি করবো। তবুও আমার সাথে বন্ধুত্ব করুন। তানহার কথা শুনে ইফাদ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। ড্রয়িং রুমে এসে, বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এই মেয়ে আমাদের বাসায় কি করছে আব্বু? এই মেয়েকে আমার একদম সহ্য হয় না। কতবড় সাহস, আমাকে বলছে। তার বন্ধু হতে! আমি কি রাস্তার ছেলে নাকি? যে যার তার সাথে বন্ধুত্ব করবো। আমি ওর ক্যামেরা ভেঙে দিয়ে ছিলাম। তাই আমার সাথে বন্ধুত্ব করে, প্রতিশোধ নিতে এসেছে। ইফাদের কথাটা তানহার কলিজা ছেদ করে গেল। বুকের চিনচিনে ব্যথা গুলো, তার কষ্টের জানান দিচ্ছে। তানহা কি করবে বুঝতে পারছে না। ইফাদের কথা তার মনে, গভীর ভাবে দাগ কেটেছে। এখনই দু’কথা শুনিয়ে দিয়ে, চলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বাস্তবতার কাছে সে হেরে গিয়েছে। বাস্তবতা মানুষকে অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়। কথায় কথায় রেগে যাওয়া মানুষটাকেও চুপ করিয়ে দেয়। তানহার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। তানহা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে পারলো না। মুখ খুলে, দুই লাইন বলেই ফেলল।

–আপনার ছেলে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে নারাজ। আমি তাহলে বাসায় চলে যাই। বন্ধুত্ব করতে এসেছি। অপমানিত হতে আসি নাই। তানহার কথা শুনে ফুঁসে উঠলো রাহেলা বেগম।

–তোমাকে টাকা দিয়ে এমনি এমনি রাখবো। আমার ছেলে যা বলবে, তোমাকে তাই শুনতে হবে। কাজের লোক হয়ে, যদি মালিকের দু’কথা শুনতে না পারো। তাহলে বাদ দাও। কাজের লোক হবার কোনো যোগ্যতা তোমার নেই। দরজা খোলা আছে। তুমি এবার আসতে পারো। নিজের অর্ধাঙ্গিনীর মুখে এমন বাক্য শুনে, রাগান্বিত দৃষ্টিতে রাহেলা বেগমের দিকে তাকালো আদনান আহির। স্বামীর দৃষ্টি উপেক্ষা করতে পারলো না। শান্ত হয়ে গেল রাহেলা বেগম।

–দেখো মেয়ে তোমাকে সবকিছু আমি বলেছি। এত অল্পতে দমে গেলে চলবে? তোমাকে কি দোষ দিব। তুমি বাচ্চা মেয়ে। ছোটখাটো কথায় রেগে যাবে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তোমার এটা ভুলে গেলে চলবে না। তুমি একটা চাকরি করতে এসেছো। মাঝেমধ্যে বসে দু-একটা কথা, তোমাকে শুনতেই হবে। এতে তোমার মেজাজ গরম হবে। কিন্তু তোমাকে শান্ত থাকতে হবে। জীবন যুদ্ধ সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। আমাদের প্রচুর পরিশ্রম করে, জীবন যুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে। আমি কি বলেছি? আমার কথা তুমি বুঝতে পেরেছো। ইফাদের বাবার কথার মানে কি বুঝলো তানহা। অর্ধেক রাস্তা গিয়েও ফিরে আসলো। সবাই তো আর তার বাবা-মা না। যে তার রাগ সহ্য করবে।

–তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। কাজের লোকের অভাব পড়েছে। যে একটা মেয়েকে আমার কাছে রাখবে।

–মেয়েটা বিপদে পড়ে আমার কাছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। আমি তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। আজ যদি তুমি ওকে প্রত্যাখ্যান করো। তাহলে মেয়েটার অনেকটা ক্ষতি হয়ে যাবে। আজ মেয়েটা নিজে যেচে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছে। কিন্তু তুমি তাকে অবহেলা করছো। একদিন তুমি নিজ থেকে, ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইবে। সেদিন তানহা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করবে। ইফাদ কিছু একটা ভেবে বলল।

–আমি ওর সাথে বন্ধুত্ব করবো। কিন্তু ও যে আমার ফোন ভেঙে দিয়েছে। সেই ফোনটা ও আমাকে কিনে দিবে। ও যদি দিতে পারে। তাহলে আমি ওর সাথে বন্ধুত্ব করবো। আমার সব কথা শুনতে হবে। আমার কাজ করে দিবে হবে। তানহা কিছু বলতে যাবে। তার আগেই আদনান আহির তানহাকে চক্ষুদ্বয় দ্বারা ইশারা করল। তানহা দমে গেল। তবে মনের মধ্যে একটা বাক্য এসে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটা না বলে থাকতে পারলো না। সোজাসাপটা বলে দিল।

–আমি আপনার সব কথা শুনবো। আপনার কথা আর কাজ গুলো যেন মার্জিত হয়। তানহার কথা শুনে, ইফাদ হাসলো। ইফাদের অকারণে হাসির কারনটা খুঁজে পেল না তানহা। ইফাদের মনটা একটু গলেছে। ভেবেই শান্তির শ্বাস ছাড়লো। ইফাদ তানহাকে উদ্দেশ্য করে বলল।

চলবে…..