বৃষ্টি নামার পরে পর্ব-০৪

0
4806

#বৃষ্টি_নামার_পরে❤
#লেখিকা-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৪

৪.
“গুঞ্জন রুমে বসে বসে মোবাইল দেখছিলো।ওর মনে খুব আনন্দ হচ্ছে,উরাধুরা নাচার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে চেপে রেখেছে।ওইসময় মৃন্ময় যখন ওকে কোলে তুলে রুমে এনে বিছানার উপর ছুঁড়ে ফেলেছিলো তখন গুঞ্জনও রেগেমেগে ওর হাতের আঙ্গুলে কামড় বসিয়ে দিয়েছিলো।রাগের চোটে মৃন্ময় আর কিছু বলতে পারেনি।আর এদিকে গুঞ্জন জোরে জোরে হাসছিলো।মৃন্ময়ের দেখে মনে হচ্ছিলো গুঞ্জন যেন বিশ্বজয় করে ফেলেছে!আর কিছু না বলে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সেই যে গেলো গেলোই,এখনো আসেনি!”

“গুঞ্জনের হঠাৎ করেই মনে হলো রাতের কথা।মুহূর্তেই দুশ্চিন্তা এসে ভর করলো।মৃন্ময়কে তো বলেছিলো যে,আজ ও চলে যাবে।এ সম্পর্ক গুঞ্জন মানে না আর না মৃন্ময়! অলরেডি রুহি মৃন্ময়ের গার্লফ্রেন্ড।ওরা ওদের সম্পর্কে সিরিয়াস।তাহলে কাবাব মে হাড্ডির মতো গুঞ্জন ওদের মাঝে থেকে কি করবে?তাছাড়া দিদার কাছ থেকেও কথা আদায় করে নিয়েছে।তাহলে এখন চলে যাওয়াটাই বেটার, ওর হোস্টেল ওর জন্য সবসময় খোলা।গুঞ্জন কাপড় ব্যাগে ঢুকাতে লাগলো।এখন মৃন্ময় আসলেই হবে,ব্যাটাকে তো দেখিয়ে দিতে হবে যে,গুঞ্জন অতটাও ইরেস্পনসিবল মেয়ে না।যেটা বলে ও সেটাই করে।এখন শুধু মৃন্ময়ের আসার অপেক্ষা।”

“মৃন্ময় বেশ কিছুক্ষণ পর রুমে এলো।দেখে মনে হচ্ছে রেগে আছে খুব।এসে সোফায় বসে রইলো বেশ খানিকক্ষণ।এদিকে গুঞ্জন একা একা বসে বোর হয়ে গিয়েছে। তার উপর এমন গম্ভীরমুখো লোক সামনে বসে থাকাতে ওর নিজেকে পাগল খানার পাগলি মনে হচ্ছে।এর থেকে দিদার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকাটা গুঞ্জনের কাছে অনেক আনন্দের,মজার,ভালোলাগার।”

“দাদীমার ঘরে যাবার উদ্দেশ্যে বিছানা থেকে উঠে সামনে এগুতেই মৃন্ময় বাঁধা দিলো।গুঞ্জনেত দিকে না তাকিয়েই বললো, কোথায় যাচ্ছো?”

“গুঞ্জন ভ্রু কুঁচকে বললো,কোথায় যাচ্ছি তা জেনে আপনার তো কোনো দরকার নেই।”

মৃন্ময় আবারও বললো,কোথায় যাচ্ছো জানতে চেয়েছি,আমার কি দরকার সেটা আমি বুঝবো!”

“গুঞ্জন আর কথা না বাড়িয়ে বললো,দিদার ঘরে যাচ্ছি।আপনার মতো নিরামিষের ঘরে বসে থাকার চেয়ে দিদার সাথে কথা বলে সময় কাটানো অনেক ভালো!”

“মৃন্ময় বললো,দেখো দিদা এখন ঘুমুচ্ছে।এখন যাওয়া যাবেনা!”

-“কেন?যাওয়া যাবে না কেন?আমিও দিদার সাথে ঘুমুবো!”

“মৃন্ময় রেগে বললো,দিদার সাথে কেউ থাকলে দিদার অসুবিধা হয়।ভালো করে ঘুমাতে পারেনা।”

“গুঞ্জন সন্দেহী গলায় বললো,বুঝলাম।এখন আপনি বলুন কি বলতে চান আমাকে,আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমায় কিছু বলবেন কিন্তু পারছেন না।বলে ফেলুন, নয়তো পেটে গ্যাস হবে!”

“মৃন্ময় রেগে বললো,মোটেও না!”

“গুঞ্জন জোরে বললো,বলুন বলছি কি হয়েছে!”

“মৃন্ময় অসহায়ের মতো বললো,বাড়িতে আজ মেহমান আসবে!’

” গুঞ্জন অবাক হয়ে বললো,মেহমান আসবে তো আমি কি করবো?”

“মৃন্ময় গলা খাদে নামিয়ে বললো,মেহমান আসবে তোমাকে দেখতে!”

“গুঞ্জন রাগী গলায় বললো,আমি কি ভিনদেশী এলিয়েন যে,আমাকে দেখতে আসবে?”

“মৃন্ময় বললো,এলিয়েন নও,কিন্তু আমার বউ তো!সেইজন্যই সবাই নতুন বউ দেখতে আসবে!”

“গুঞ্জন তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে বললো,বউ?হাসালেন আমায়!আপনার বউ,ইভেন কারো বউ হওয়ার শখ আমার নেই।জোর করে বিয়েটা দেওয়াতে শুধু বিয়েটা করেছি,নইলে গার্লফ্রেন্ড ওয়ালা লোকের সাথে মরে গেলেও বিয়ে কর‍তাম না!”

“মৃন্ময় বললো,এখন ঝগড়া করো না প্লিজ,বাড়িতে মেহমান আসবে সো তুমি নতুন বউয়ের মতো সেজেগুজে থাকবে এটা দিদা বলেছে।আর কারো সামনে রুড বিহেভ করো না প্লিজ!এটা আমার রিকুয়েষ্ট!”

“গুঞ্জন আরও এক দফা অবাক হলো।বললো,সাজগোজ করবো মানে? এত্ত শখ নেই, সঙ সেজে বসে থাকার।আসলে কি জানেন তো,আপনারা ফর্সা,সাজগোজ ওয়ালা মেয়েদের বেশি পছন্দ করেন।কিন্তু এটা ভুল।সব সুন্দরী মেয়েরা সবসময় ভালো হয় না।মানুষ ভালো তাঁর মনের সৌন্দর্য দ্বারা,চেহারার নয়।একগাদা মেকআপ লাগিয়ে সবার সামনে নিজেকে প্রেজেন্ট করার দরকার হয় না,বুঝেছেন?তাই এই রিকুয়েষ্ট আমাকে করবেন না!”

“মৃন্ময় বেশ অবাক হলো।কোনোমতে বললো,ঠিক আছে।”

“গুঞ্জন গুছিয়ে রাখা ব্যাগটা হাতের ইশারায় দেখিয়ে বললো,মনে আছে তো!আমি কিন্তু আজ চলে যাবো।সব ফর্মালিটি শেষ হয়ে নিক,আপনার দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই,ওকে?”

৫.
“মৃন্ময় চমকালো।গুঞ্জন তো দেখি যা বলে তাই করে।অলরেডি ব্যাগপত্র গুছিয়ে বসে আছে।বিয়ের দ্বিতীয় দিন বউ যদি বাড়ি থেকে চলে যায়,তাহলে লোকে কি বলবে?তাছাড়া দিদা তো বলেছে মৃন্ময়কে,এই কয়েকদিন অনেক মেহমান আসবে বউ দেখতে,এমনকি ইংল্যান্ড থেকে মৃন্ময়ের কিছু রিলেটিভরা আসবে।আর এখন যদি গুঞ্জন চলে যায়,তাহলে মানসম্মান সব শেষ।তাই যা করার ওকেই করতে হবে। কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিয়ে গুঞ্জনের উদ্দেশ্যে বললো,আমার একটা রিকুয়েষ্ট রাখবে গুঞ্জন? আর কিছু কোনোদিন চাইবো না!”

“গুঞ্জন বেশ অবাক হলো।বললো,জ্বি বলুন!”

“তুমি যদি আজই চলে যাও তাহলে সবাই কি ভাববে বলো তো,খারাপ দেখাবে।নতুন বউ এভাবে বাসা ছেড়ে চলে যাবে,কেমন না।তুমি প্লিজ কিছুদিন পরে যাও!”

“গুঞ্জন কিছুক্ষণ ভাবলো।তারপর বললো,ঠিক আছে।রিকুয়েষ্ট একসেপ্টেড!কিন্তু মেহমানদের সামনে আমাকে সঙ সাজতে বলবেন না।আমার এসব সাজগোজ পছন্দ নয়।”

-“ওকে!”

“গুঞ্জন তীক্ষ্মদৃষ্টি মেলে বললো,কিন্তু এমনি এমনি তো আর আপনার সব কথা রাখা যায় না।কিছু পেতে গেলে কিছু তো দিতেই হয়।এখন আপনাকেও দিতে হবে।”

“মৃন্ময় সন্দেহী চোখে বললো,কি চাই?”

“গুঞ্জন গম্ভীরমুখে বললো,আমি লোভী না যে টাকা চাইবো।তাই এভাবে বলার কিছুই নেই।আপনি আমাকে একটা গান গেয়ে শুনান।”

“মৃন্ময় হতভম্ব হয়ে বললো, আর ইউ ম্যাড গুঞ্জন? আমি কখনোই গান গাইনি,পারিনা গান গাইতে!”

-”তা বললে তো হবে না মিস্টার মৃন্ময় চৌধুরী।আপনি নিজের স্বার্থসিদ্ধি করে নেবেন আর কিছু করবেন না তা তো হতে পারে না,তাই না?”

“মৃন্ময় রেগে বললো, পারবো না!”

“গুঞ্জন ব্যাগটা হাতে নিয়ে বললো,দ্যাটস ওকে।আমি আজ চলে যাবো,গট ইট!আপনার কথা রাখতে পারছি না,স্যরি!”

“মৃন্ময় ভাবলো। অতঃপর বললো, ঠিক আছে।গাইবো গান।”

“গুঞ্জনের চোখ দুটো চকচক করে উঠলো।আনন্দে বলে উঠলো, রিয়েলি?”

“মৃন্ময়ের নিজের কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে।এমন মেন্টাল মেয়ে সে কখনো দেখেনি।সে গান গাওয়া শুরু করলো।”

“This was just meant to be
You are coming back to me
‘Cause this is pure love
‘Cause this is pure love

Mikham keh vaghty khaby
Kenareh to beshinam
Ageh yeh vaght khabam bord
Baz khabeh toro bebinam

Atreh nafashayeh to
Beh tanam bepicheh
Kash bedoony
Keh zendegy bito hicheh

This was just meant to be
You are coming back to me
‘Cause, this is pure love
‘Cause, this is pure love

I know you are more afraid
Then I’ll say I will wait
‘Cause this is pure love
‘Cause this is pure love

Mikham tane ghashangeto
To baghalam begiram
Begam ageh nabashi
Karam tamoomeo
Bedooneh to mimiram

Mikham labato roo labam
Bezary ta hamisheh
Begam keh zendegy digeh
Bedooneh to nemisheh

This was just meant to be
You are coming back to me
‘Cause this is pure love
‘Cause this is pure love

I know you are more afraid
Then I’ll say I will wait
‘Cause, this is pure love
‘Cause, this is pure love

Ba ra la la la la ba la la la
The moon it smiles above…
Ba ra la la la la ba la la la
‘Cause this is pure love.
Ba ra la la la la ba la la la
The moon it smiles above…
Ba ra la la la la ba la la la
‘Cause this is pure love.

To nistio ta abad
Bito delam migireh
Amma zamooneh migeh
Keh digeh kheili direh

This was just meant to be
You are coming back to me
‘Cause, this is pure love
‘Cause, this is pure love

Ba ra la la la la ba la la la
The moon it smiles above…
Ba ra la la la la ba la la la
‘Cause this is pure love.
Ba ra la la la la ba la la la
The moon it smiles above…
Ba ra la la la la ba la la la
‘Cause this is pure love.”

“গান গাওয়া শেষ করে মৃন্ময় থামলো।গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে দেখে গোলগোল চোখ করে মৃন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখতে নিষ্পাপ শিশু লাগছে।অথচ গান গাওয়ানোর মতো ভয়ঙ্কর জিনিসটা ব্ল্যাকমেইল করে মৃন্ময়ের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে।মৃন্ময় বললো,হয়েছে এবার?”

“গুঞ্জন বাঁকা হেসে বললো,হয়েছে।এমন সুরেলা গলায় বারবার গান শুনতে ইচ্ছে হয়। আহা!কি সুর…।তবে আপনার এই বিশুদ্ধ ভালোবাসার গান শুনে আমার না খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছে।কিন্তু আফসোস,আমি জন্মগত সিঙ্গেল।মিঙ্গেল হতে পারলাম না। পারলে ভালো হতো।ভাবছি এবার একটা বয়ফ্রেন্ড জুটাই ফেলি!”

“একথা শুনে মৃন্ময় রেগে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো,তোমার তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাহলে সিঙ্গেল কোথায়?বয়ফ্রেন্ডের দরকার নেই।”

“গুঞ্জন হাসিমুখ করে বললো,আপনিও তো বিয়ে করেছেন।একদিকে ম্যারিড অন্যদিকে মিঙ্গেল!দু নৌকায় পা দিয়ে চলছেন।”

“মৃন্ময় রেগে গেলো।বললো,বাজে কথা একদম বলবে না!মাইন্ড ইট!”

“গুঞ্জন গলা খাদে নামিয়ে বললো,আমার কথাটা ভেবে দেখবেন।আপনি যা করছেন তা ঠিক কিনা,বলেই দুম করে একটা কিল বসিয়ে দিলো মৃন্ময়ের পিঠে।তারপর পগার পার।”

চলবে…..ইনশাআল্লাহ!