বেনে বৌ পর্ব-০৪

0
125

#বেনে_বৌ
#পর্ব-৪
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

একজন নারীর সবচেয়ে আপন হয় তার স্বামী।কবিতার ক্ষেত্রেও ভিন্ন ছিল না।আজ তার বিয়ের জন্য গয়না পাঠিয়েছে আবিদের মা।জানিয়েছে আসছে বিয়ের শাড়িও।শাফিনের সাথে বিয়ের সময় এসব কিছুই ঘটা করে হয়নি। মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে শাফিন কিনেছিল নতুন বৌয়ের সাজসজ্জার জিনিসপত্র। দুই হাজার টাকায় কেনা বিয়ের শাড়িটার দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকে সে বলেছিল,

“যখন আমার স্থায়ী চাকরি হবে আমি প্রতি মাসে তোমাকে নতুন শাড়ি কিনে দিবো।আমরা আমাদের পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকীতে আবার বিয়ে করবো।তখন দেখবে আমি তোমায় সোনায় মুড়িয়ে দিবো বৌ।”

বৌ শব্দটা শুনে কবিতা লজ্জায় লাল বেগুনী হয়ে পড়েছিল।সাড়ে সাতশ টাকার নাকফুল এবং দুই হাজার টাকার শাড়ি পরে কবুল বলার সময় যেমন উত্তেজনা এবং আনন্দ কাজ করছিল তেমন আনন্দের ছিঁটেফোঁটাও কাজ করছে না সামনে থাকা গয়না গুলো দেখে।নাকফুলটা খুলে কবিতার ভাবী হীরে বসানো সোনার নাকফুলটা পরাতে চাইলে কবিতা বলল,

“ভাবী এটা যে আমার হীরের থেকেও দামী। আমাকে এটা খুলতে বলিও না।”

“কবিতা এটা সামান্য একটা পাথরের নাকফুল।আর এটা হীরের। তুই কাঁচ আগলে হীরেকে ছুড়ে ফেলছিস।”

“আমার কাছে আমার প্রিয়তম হীরের চেয়েও দামী। যেটাকে কাঁচ ভাবছো আমি দেখছি আমার সাত রাজার ধন।”

“তুই পরবি না তবে?”

“না।আমাকে কোনো কিছু নিয়ে তোমরা জেদ করলে আমি গলায় দড়ি দিবো।”

ফোনের অপর পাশ থেকে সবটা শুনতে পেল শাফিনের মা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে কবিতার মাকে বলল,

“আপা ওকে জোর করিয়েন না।ইতিমধ্য আমি আমার বড় ছেলেকে জোর করে রাজি করিয়েছি।ভীনদেশি এক খ্রিস্টানের প্রেমে পড়েছে সে।”

ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কবিতার মা ফিসফিস করে বলল,
“কি বলছেন আপা এসব?”
“ঠিক বলছি আপা।এক ছেলেকে অকালে হারালাম। আরেক ছেলে যদি না ফিরে?এজন্যই কবিতাকে আমি জোর দিচ্ছি। তাড়াহুরো করছি।আপনার থেকে আমার কিছুই লুকানোর নেই।”
“আপা ওরা সুখী হবে তো?আমরা তো কোনো ভুল করতেছি না?”
“আমরা কেবল নিজ নিজ সন্তান কে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করতেছি আপা।আল্লাহ সহায় হবেন।এতে যদি ওদের নজরে আমাদের খারাপ হতে হয়, তবে আমরা তাই হবো।”

” ঠিক বলেছেন আপা। কবুলের জোর অনেক। যখন দুইজন একটা বৈধ সম্পর্কে, দায়িত্বে বাঁধা পড়বে তখন আর এসব থাকবে না।”

শাফিনের মায়ের বুক থেকে যেন অনেক বড় বোঝ নেমে গেল।সে ভেবেছিল কবিতার মা বুঝি বেঁকে বসে কিন্তু না তার ভয় ঠিক হয়নি। আবিদকে আটকানোর এর থেকে সহজ এবং দ্রুততর উপায় আর ছিল না।শাফিনের মৃত্যুর তিন দিন পর জানতে পারে আবিদের সাথে ক্রিশ্চিয়ানা নামের এক মেয়ের প্রায় চার বছরের সম্পর্ক রয়েছে।সেদিন থেকেই বড় পুত্রকে হারানোর ভয় তাকে জড়িয়ে নিয়েছিল।নিজ ধর্মের কোনো মেয়ে হলে কখনো আপত্তি করতেন না কিন্তু বিধর্মী একটা মেয়েক কখনোই মেনে নেওয়া যায় না।অপর দিকে কবিতার মা চিন্তা করছিলেন, কবিতা অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়নি কিন্তু আবিদকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।কবিতা নিজেও তো বিধবা, ছেলে মানুষের চরিত্রের দাগ কেউ দেখে না।অবিবাহিত ছেলে হয়েও কবিতাকে কেবল মায়ের কথায় বিয়ে করতে রাজি হওয়া ছেলের এইটুক দোষ মাফ করাই যায়।আসলে দোষ তো আবিদের না।দোষ হচ্ছে ওইসব মেয়েছেলেদের। হাটুর উপরে কাপড় পরে চোখের সামনে ঘুরঘুর করলে পুরুষ মানুষের মন তো একটু পিছলে যাবেই। এসব নানান কথা চিন্তা করে ঘরের কাজে মনোযোগ দিলেন ভদ্রমহিলা।দুই দিন পর একমাত্র মেয়ের বিয়ে। এলাকায় জানানি দিতে হবে।পাশের বাড়ির চাচীকে গরুর দুধের অগ্রিম বায়না দিতেও ভুলেনি।ঘরে নতুন ধান উঠেছে।খেঁজুর গুড়ের পায়েস রান্না করেই পুরো গ্রামে জানানি দিবে।

কবিতা দূর থেকে বিয়ের সকল প্রস্তুতি দেখে।আকাশের দিকে তাকিয়ে কান্নাগুলো গিলতে চেষ্টা করে বলে,
“পরপারে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে এক নজর দেখার জন্য মনে যে তৃষ্ণাটা জাগে, সেই তৃষ্ণা কতোটা চোখের পানি দিয়ে তৃপ্ত হবে আমার খোদা! কবে তৃপ্ত হবে?”

চলবে

#ছবিয়াল: bdclicks