বেনে বৌ পর্ব-০৫

0
150

#বেনে_বৌ
#পর্ব-৫
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)

“আমি বিয়েটা করতে চাই না আব্বা।”
“তুমি এই বিয়েটা না করলে আমি বিষ খাবো।সাথে তোমার মাকেও খাওয়াবো।এরপর তুমি নিজের ইচ্ছেমতো চলবে।তোমার সমাজ না থাকলেও তো আমার আছে।”

বাবার কথাটা মস্তিষ্কের এফোড় ওফোড় করে দিলো কবিতার। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে।
মাঝে মাঝে পৃথিবীতে কিছু মানুষের সাথে বেশ বেঈমানী হয়।সেই বেঈমানীটা করে পৃথিবী নিজে কিংবা নিয়তি। লোকে তাকে পরিস্থিতির শিকার বলে চালিয়ে দিতে চায়,স্বান্তনা শোনায় কিন্তু যার সাথে ঘটে সে জানে। এই নিষ্ঠুরতম পরিবেশে টিকে থাকার লড়াই কতোটা ধৈর্যের হয়।কবিতা সেই ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে।কেন দিচ্ছে সে জানে না। নিজেকে জীবনের শেষ প্রান্তে নিয়ে দাঁড় করালে হয়তো এমন পরীক্ষা আর দিতে হবে না।এক।পুরুষে আসক্ত নারী হয়ে থাকবে কিন্তু সমাজ ছি ছি করবে, সৃষ্টিকর্তা শেষ বিচার অবধি শাস্তি দিবে। ইহকালের যন্ত্রণার জন্য সে পরকাল নষ্ট করতে পারবে না বলেই হয়তো ওই পথে পা বাড়াচ্ছে না।

প্রতিটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একটা অবলম্বন লাগে।কবিতার কিছুই নেই।বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তাকে তার বাবা জিজ্ঞেস করলো,

“এখনো সময় আছে। অন্য কেউ পছন্দ থাকলে জানিয়ে দাও। গতবারের মতো এবারো সবার কাছে আমার মাথা নিচু করিও না।”

“কি বুঝাতে চাচ্ছেন আব্বা?আমার কারোর সাথে সম্পর্ক আছে কি না? না আব্বা নিশ্চিত থাকুন।”

“গতবারেও তো এমন কিছুই হয়েছিল কবিতা। আমি তখন নিশ্চিত ছিলাম।এবার নই।তুমি যে অবধি শ্বশুর বাড়ি চলে না যাচ্ছো আমার শান্তি বা তোমার প্রতি বিশ্বাস কিছুই নেই।”

কবিতা আর কোনো জবাব বা প্রশ্ন কিছুই করেনি।কেবল তার নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।দরজা বন্ধ করে বসে রইল চুপচাপ। নিয়তি তাকে নিয়ে কোন খেলায় মগ্ন হয়েছে?

শাফিনের সাথে পালিয়ে যাওয়ার দুই দিন পূর্বে তার বাবা একটা বিয়ের সম্বন্ধ এনেছিল।ছেলে দেশের বাইরে থাকে।বড় রাষ্ট্র, মেয়েকে সুখেই রাখবে।আঠারো পার হওয়া মেয়ের সিদ্ধান্ত জানতে না চাইলেও জিজ্ঞেস করেছিল কোনো আপত্তি আছে কি না।কবিতা ভালো মন্দ কিছুই না বলাতে ধরে নিয়েছিল তার আপত্তি নেই।কিন্তু যেদিন ছেলে দেখতে আসবে তার ঠিক আগের দিন রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় কবিতা।শাফিনের হাত ধরে গিয়ে উঠে শহরের দুই কামড়ার এক বাসায়।কাজী অফিস থেকে বিয়ে করেছিল।তাদের চোখে তখন সংসার করার এক স্বপ্ন ছিল। যে স্বপ্নের কারণে কবিতা সেদিন বাবার অপমান হতে পারে এটাও ভাবতে ভুলে গিয়েছিল।আজ বাবার বলা কথাগুলো তীরের ফলার মতোন গায়ে লাগলেও কিছুই জবাব দিতে পারলো না।প্রতিনিয়ত এমন কথা শুনতে পারবে না সে।এরচেয়ে আবিদের সাথে শর্তের বিয়েটাই ভালো।

কবিতার ঘোর কাটলো দরজায় যখন শব্দ হলো।দরজা খুলে দেখতে পেল পাঁচটা কুরিয়ারের প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার ভাই এবং ভাবি। ধীরে ধীরে প্যাকেট গুলো খুলে দেখলো এখানে সেই সবগুলো শাড়িই রয়েছে যেগুলো গতকাল আবিদ তাকে দেখিয়েছিল। বিস্মিত না কি বিরক্ত?কোনটা হবে কবিতা? দামী দামী পাঁচটা বিয়ের শাড়িতেও তার মন ভালো হলো না।উল্টো ভীষণ ভীষণ কান্না পেল। তার কাছে এই শাড়ি গুলো মূল্যহীন ওই দুই হাজার টাকার অল্পদামের শাড়ির কাছে।

কবিতা শাড়িগুলোকে সাইডে রেখে নিজের লাগেজ খুলে তার বিয়ের শাড়িটা বের করলো।মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলো সে।শাফিনকে ভুলতে তো বিয়েটা করছে না তবে কেন এতো সাজসজ্জা হবে? শাফিন ব্যতীত কেউ ছিল না,আবিদ কেউ হবে না। এই শর্তেই রাজী হওয়া বিয়েতে আবিদের শাড়ি পরার প্রয়োজন বোধ করছে না সে। মুখ ফুটে কিছু বলল না।এই মুহূর্তে কিছু বলা মানে যে কোনো সময় এই পুরোনো শাড়িটাকে কেউ সরিয়ে ফেলবে।

গ্রীণটির কাপে চুমুক দিয়ে ক্রিশ্চিয়ানা আবিদের দিকে তাকালো।ট্রেডমিলে প্রায় ঘন্টা খানেক যাবত দৌড়ে যাচ্ছে সে। সুঠাম দেহ চকচক করছে তাতে জমে থাকা ঘামে। দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো না সে। বয়ফ্রেন্ডকে এভাবে দেখার অধিকার আছে তার। কিন্তু আবিদ কিছুটা লজ্জাশীল।যত্রতত্র চুমুতে তার আপত্তি। লিভ ইনে থাকতে চেয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানা কিন্তু এতেও তার না ছিল।শরীরী উত্তাপকে খুব সহজে এড়িয়ে যায় এই পুরুষ। তার এই গুণটাই যেন বেশ পছন্দ মেয়েটার।এই যে গতকাল সন্ধ্যেতে শর্ট’স পরে সে এসেছিল, হাতে স্কচ নিয়ে আহ্বান জানিয়েছিল অথচ আবিদ নামের প্রেমিক পুরুষ হাসি দেখিয়ে তাকে ঘায়েল করলো, প্রত্যাখ্যান করলো তার শরীরী আহবান।এতে অবশ্য খুব একটা আপত্তি নেই ক্রিশ্চিয়ানার। বেস্টফ্রেন্ডের সাথে গতরাত উদ্দামতা ছড়িয়েছে সী বীচের লেট নাইট পার্টিতে। তার কাছে শরীরী প্রেমটা দৈনন্দিন চাহিদা তথা বেসিক নীডের মতো।কোথাও না কোথাও থেকে তো পূর্ণ করতে হবে।আবিদের প্রত্যাখান তো আর চাহিদা বসিয়ে রাখবে না।

“প্রিন্স, কিছু ভাবছো তুমি? তোমাকে চিন্তিত লাগছে।”

“আমাকে খুব সম্ভবত দেশে ফিরতে হবে।”

“কেন?কেউ অসুস্থ? আমি যাচ্ছি তো তোমার সাথে?”

আবিদ পুনরায় দ্বিধায় পড়ে যায়।কবিতার বিষয়ে ক্রিশ্চিয়ানাকে জানানো দরকার। লুকিয়ে এই কাজ করতে মন চাইছে না কিন্তু সবে মাত্র ক্রিশ্চিয়ানার বাবা গত হয়েছে। মেয়েটা মানসিক ট্রমা নিতে পারবে তো?কি করবে না করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।হুট করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।দেশ থেকে তার মা কল দিয়েছে। যে অপর প্রান্ত থেকে বলছে,

“তৈরী হয়ে নাও আবিদ। আর সময় নেই আমাদের হাতে। আজকে, মিনিট দশ পর আমি কল দিচ্ছি।কবিতার সাথে তোমার আজকেই বিয়ে।”

“মা বিয়েটা দুদিন পর ছিলো। হুট করে আজকেই কেন?”

“কবিতার জন্য।ও হয়তো আত্মঘাতী হওয়ার চিন্তা করছে।এমনটাই বলল ওর বাবা।তোমার সাথে বিয়েটা হলে তুমি ওকে সময় দিতে পারবে।তখন এসব চিন্তা আসবে না।তাই তুমি দ্রুত তৈরী হয়ে নাও।”

আবিদ অসহায় দৃষ্টিতে একবার ক্রিশ্চিয়ানার দিকে তাকালো।মেয়েটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।তাকে কি জবাব দিবে আবিদ?

চলবে