বেপরোয়া ভালবাসা পর্ব-২৮+২৯+৩০

0
396

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৮
#লিখনীঃ মনা হোসাইন

চারদিকে আলো ফুটে উঠলে ঘুম ভাঙল আদিবার। আদির কাঁধে নিজেকে দেখে কেন যেন একটু ছটকে সরে গেল…

-“ট্রেন চলে এসেছে…?

আদি বেশ নরম গলায় উত্তর দিল
-“অনেক আগেই…চল যাওয়া যাক.

আদিবা নামতে নিলে আদিত্য বলল,
-“ব্যাগটা আমার কাছে দে…

-“নাহ আমার কাছেই থাকুক

-“সাথে জলজ্যান্ত একটা ছেলে থাকতে মেয়ে ব্যাগ নিয়ে যাবে ব্যাপারটা খারাপ দেখায়।

-“বল্লাম তো আমি নিতে পারব।
বেশ ধমক দিয়েই কথাটা বলল আদিবা

-“আরে এত রেগে যাচ্ছিস কেন?যা করেছি তোর ভালর জন্যই ত করেছি।

-“আপনি একটা বিষয় কেন বুঝতে পারছেন না আমি বড় হয়েছি ভাইয়া। আমার ভাল বুঝার দায়িত্ব টা এবার আমাকে নিতে দিন। আপনি আমার জন্য যে ভাল গুলো বুঝেন সেগুলো আমার ভালর চেয়ে খারাপেই হয় বেশি…

-“কী সব বলছিস? কিসের মধ্যে কি বলতে চাইছিস..?

-” কিছুই বলতে চাচ্ছি না আমি মুক্তি চাইছি আপনি নামক কারাগার থেকে আমায় মুক্তি দিন প্লিজ…

যদিও আদি আজ আদিবার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল কিনন্তু এই কথাটা বলতে দেরি হলেও থাপ্পড় মারতে দেরি হল না। আদি স্বজোরে আদিবার গালে থা/প্পড় বসিয়েছে।না আদিবা তাতে কাঁদে নি জলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে। আদি চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করল তারপর শান্ত গলায় বলল,

-“আদিবা তুই জানিস আমি রাগ কন্ট্রোল করতে পারি না তবুও আমাকে কেন রাগাস…? চল বাসায় চল যা বলার বাসায় গিয়ে বলবি…

আদিবা কোন উত্তর না দিয়ে আদি কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিবা আদির ব্যাগ থেকে ছু/ড়ি/টা বের করে নিল আদি কিছুটা অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকাল।

-“কি করবি? আমায় মা/র/বি..?

-“নাহ..আপনাকে মা*রতে যাব কেন আপনার সাথে আমার কিসের শত্রুতা।

-“তাহলে ছু/ড়ি দিয়ে কী করবি..?

-“আমি আর ওই বাসায় ফিরব না।

-“বাড়াবাড়িটা এবার বেশি হয়ে যাচ্ছে না? বলেই আদি আদিবার দিকে এগিয়ে গেল

-“খবরদার আমার কাছে আসবেন না।

-“তোর কী মনে হয় তোর হাতের ছু/রিকে আমি ভয় পাই..?চুপচাপ বাসায় চল বাড়াবাড়ি করবি তো হাত-পা ভে*ঙে বাসায় ফেলে রাখব.

-“ভাইয়া আপনাকে সাবধান করছি আমার পিছন পিছন আসবেন না…

-“আসলে কী করবি?

-“আমি আপনাদের হাতের পুতুল নই যে যখন যা ইচ্ছা করবেন আমার সাথে।আপনাদের অত্যা/চার আর মেনে নিতে পারছি না। আজ হয় আমাকে এখান থেকে যেতে দিবেন অথবা আমি নিজেকে শেষ করে দিব…

আদিবার কথা শুনে থমকে গেল আদি,আদিবা এমন কিছু বলবে তার মাথায় ছিল না।সে ভ্রু কুচকে বলল,

-“আদিবা…এসবের মানে কী?

-“আমাকে ধমকে কোন লাভ নেই আমি আর কোন কিছুই ভয় পাই না। আমাকে যেতে দিন।

-“কোথায় যাবি..?

-“যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাব…

-“জীবন এত সহজ নয়.একবার বাইরে বেরিয়ে দেখ তোর সাথে কি কি ঘটে..

-“কী আর ঘটবে..? যা যা খারাপ ঘটার সব ত এমনিতেই ঘটে আমার সাথে আর কী ঘটবে। বেরিয়ে গেলে অন্তত কথায় কেউ থা/প্পড় মা/র/বে না উনিশ থেকে বিশ হলে বাথরুমে আটকে রাখবে না।

-“এরচেয়েও ভয়াবহ কিছু ঘটবে…

-“কী ঘটবে…? কেউ আমার সম্মানে হাত দিবে..? আপনার কি মনে হয় আমার সম্মান আছে? আপনি আমার সম্মানে হাত দেন নি? জোর করে…

-“আদিবা চুপ করবি তুই…?

-“কেন চুপ করব? মিথ্যে বলছি কিছু?আপনি আমার সাথে খারাপ কিছু করেন নি? এমন কোন জায়গা বাকি রেখেছেন যেখানে হাত দেন নি?

-“আদিবা….!!

-“গলা নিচু করছেন কেন চেঁচিয়ে বলুন যা করেছেন বেশ করেছেন।আপনার চোখে তো নিজের অন্যায় কোনদিনি পড়েনি।

-“মানছি যা করেছি ভুল করেছি তাই বলে আমি তোকে টাচ করা আর অন্যদের টাচ করা এক কথা?

-“এক হবে না কেন? আপনি আমার স্বামী? কেন করলেন এমন? আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে এগুলা করায় আমার কেমন লেগেছিল আপনি জানেন? শরীর দাগ না হয় জামায় ঢেকে ফেলেছি কিন্তু আপনি আমার সাথে এগুলো করার পর আমার মনে যে দাগ লেগেছে সেগুলো ঢাকব কি করে?আপনি আর কখনো আপনাকে সম্মান করতে পারব না।

-“আমি এতটাও খারাপ কিছু করিনি তুই যেভাবে বলছিস..তাছাড়া তুই চাইলে আমি তোকে আজকেই বিয়ে করব। যা হয়েছে ভুলে যা আমি যা করেছিলাম রাগের মাথায় করেছিলাম।

-“রাগ…? হ্যা আপনাদের সবারেই রাগ করা মানায় শুধু আদিবার রাগ থাকতে পারে না৷ আর কি বললেন বিয়ে…? আপনার কী মনে হয় জোর করে সব পাওয়া যায়..?জোর করে আর যাইহোক ভালবাসা পাওয়া যায় না। আপনি আমার জীবন টা নষ্ট করে দিয়েছেন। হ্যা আমি আপনাকে ভালবাসতাম কিন্তু এখন আর ভালবাসি না কোনদিন আর বাসবও না। যে ভালবাসায় কোন সম্মান নেই,স্বাধীনতা নেই সেই ভালবাসা আমার চাই না।

আদি আদিবার চোখের দিকে তাকাল চোখ থেকে যেন আগুন ঝরছে আদি একটু স্থীর হয়ে বলল,

-“বাসতে হবে না। বিয়েও করতে হবে না কিছুই করতে হবে না শুধু বাসায় চল। আদিবা রাস্তায় এমন করলে লোকে খারাপ ভাব্বে…

-“আপনার কি মনে হয় আমি আপনাকে চিনি না? ভুল ভাল বুঝ দিয়ে বাসায় নিয়ে গিয়ে মা*রবেন আমি আর কত সহ্য করব বলতে পারেন?নাহ আমি আপনাদের আর কোন সুযোগ দিব না। আপনারা আমার উপড় অ/ত্যা/চার করার আগে আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দিব বলেই আদিবা ছু/রি/টা নিজের হাতে চালাতে চাইল।

আদি ঝরের গতিতে এসে ধরে ফেলল। আদিবা নিজেকে আঘাত করতে চাইছে আর আদি তাকে বাঁধা দিতে চাইছে। তাদের মধ্যে হাতাহাতি লেগে গিয়েছে। হাতাহাতির এক পর্যায়ে আদিবার হাতে ছু/রি/টা লেগে গেল। হাত থেকে র*ক্ত পড়তে শুরু করল সাথে সাথেই আদি স্বজোরে আদিবার গালে আবারো থা/প্পড় বসাল। আদিবা ছিটকে নিচে পড়ল।

-“দেখলেন? এতকিছুর পরেও আপনি নিজের রাগ সামলাতে পারলেন না। আপনিই বলুন আপনার সাথে সারাজীবন থাকা সম্ভব?

আদি নিচে পড়ে থাকা ছু/রিটা তুলে নিয়ে। পকেট থেকে রুমালটা আদিবার উপড় ছুড়ে ফেলে দিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বলল,

-“অনেক হয়েছে আদিবা হাতটা বেঁধে এবার বাসায় চল প্লিজ।

-“ভাইয়া আপনি বাড়াবাড়ি করলে আমি আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হব।

কথাটা শুনে আদি অবাক চোখে তাকাল

-“কি বললি তুই..?

-“যা বলেছি ঠিকি বলেছি আমি বড় হয়েছি। নিজের মত করে বাঁচার অধিকার আমার আছে।

-“আদিবা তুই কি বলছিস বুঝতে পারছিস?

আদিবা উত্তর দিল না। আদিবা হাত বাঁধতে বাঁধতে কাঁদছে আদিবার দিকে তাকিয়ে হটাৎ করেই আদি শান্ত গলায় বলল,

-“যা তোকে আজ মুক্ত করে দিলাম আদিবা। যেখানে ইচ্ছে চলে যা….আমি আর তোর উপড় জোর করব না। আজ থেকে তুই আমায় চিনিস না আমিও তোকে চিনি না।

আদি আর কোন কথা বলল না। এমনকি আদিবার দিকে ফিরেও তাকাল না হনহন করে হেঁটে চলে গেল।

আদিবা উঠে আদির রুমাল দিয়েই হাত বেঁধে নিল তারপর হাঁটতে শুরু করল। যত কষ্টই হোক এই লড়াইয়ে তাকে জি মতরে হবে।নিজের উপড় হওয়া সকল অন্যায়ের জবাব দিতে হবে আদি সহ বাকি সবাইকে বুঝাতে হবে তারা আদিবার সাথে যা যা করেছে অন্যায় করেছে। তার বিশ্বাস সে যখন থাকবে না তখন সবাই তাদের ভুল বুঝতে পারবে।

এদিকে আদি হাঁটছে আর ভাবছে,
-“তোর উপড় যে মায়া টুকু অবশিষ্ট ছিল সেটাও আজ তুলে দিলি আদিবা..? কিন্তু কেন? তুই কী আমার রাগের পিছনের ভালবাসাটা কোনদিনি বুঝিসনি? তুই সত্যিই আমায় ভালবাসিস না? নাই বা বাসলি তাই বলে বাসা ছেড়ে চলে যাবি? এই দশ হাজার টাকায় তোর কতদিন চলবে..?ভালই হয়েছে বেরিয়েছিস আজ থেকে তুই বুঝবি বাইরের জগৎটা কতটা খারাপ। পরিবার যতই খারাপ হোক বাইরের নিষ্টুর দুনিয়া থেকে কতটা ভাল। তোকে আমি আর বাঁধা দিব না। আজ আমি যা হারালাম হয়ত এই শুন্যস্থান কোনদিন পূরন হবে না কিন্তু তুই আজ যা হারালি তাও আর কোনদিন ফিরে পাবি না। কথা দিলাম আমি নিজেকে বদলাব। আদিবা নামক মায়া থেকে নিজেকে বের করে আনব। যত কষ্টই হোক আমি তোকে ভুলব আদিবা।তোকে নিজের সাথে জড়িয়ে আর কষ্ট দিব না। তোকে আজ থেকে ভুলে যাব…

ভাবতে ভাবতে মন খারাপ করে বাসায় ফিরল আদি. আদিকে দেখে সবাই এগিয়ে আসল সবার ধারনা ছিল আদি,আদিবাকে নিয়েই ফিরবে।কিন্তু আদিবা নেই দেখে আদিবার মা এগিয়ে বললেন,

-“আদিবা কোথায় আদি…?

প্রশ্নটা শুনার সাথে সাথে আদি চেঁচিয়ে উঠল,
-“তোমার মেয়ে কোথায় তার জবাব আমি কি করে দিব…?

-‘ত ত তুই এত রেগে যাচ্ছিস কেন?

-“কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছো জানো না? তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করছো কেন..?আচ্ছা আমি যাওয়ার সময় কী একবারো বলেছিলাম আমি আদিবার জন্য চলে যাচ্ছি? তাহলে কেন ওর সাথে এত খারাপ ব্যবহার করলে? এতটাই খারাপ ব্যবহার যে ও আর এই বাসায় ফিরতে চায় না।

আদির কথায় সবাই মাথা নিচু করে নিল।

-“যাইহোক আমি আদিবাকে ফিরানোর অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু সে ফিরবে না।

-“ফিরবে না তো কোথায় যাবে গ্রামে…?

-“নাহ আমাদের পরিবারের সমস্থ দরজা আজ থেকে আদিবার জন্য বন্ধ। ও আর কোন দিন এই বাড়িতে ফিরবে না এটাই আমার শেষ কথা…

-“তুই এসব কি বলছিস বাবা…?

-“যার যার আমার মতামত পছন্দ হবে না তারাও বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে পারো। আর একটা কথা এতদিন তো আমার বিয়ে বিয়ে করে মাথা খারাপ করে দিচ্ছিলে আজ আমি নিজেই বিয়ে করতে চাই তবে বাইরের কোন মেয়েকে না। আমি সাদিয়াকে বিয়ে করতে চাই যদি রাজি থাকো বিয়ের আয়োজন করো অথবা এই বাসার দরজা তোমাদের জন্যও বন্ধ হয়ে যাবে…

আদি রেগে আছে বুঝতে পেরে আদির মা এগিয়ে আসলেন,

-“মাথা ঠান্ডা কর বাবা। তুই কী বলছিস হয়ত নিজেই জানিস না।

-” কেন জানব না? সাদিয়াকে বিয়ে করার যোগ্যতা আমার নেই?

-“আমি তা বলিনি কিন্তু তুই আদিবাকে পছন্দ করিস রাগের মাথায় এত বড় সিধান্ত নিস না।

-“আমার কথা কখনো নড়চড় হয় না মা। আর পছন্দ তো সাধারন বিষয় এই সমাজে বড় বোনের বরের সাথেও ছোট বোনের বিয়ে হয়। কাকিয়া এই যে এত বছর আমাদের বাসায় থাকলে এবার তার প্রতিদান দাও সাদিয়াকে আমাকে দাও প্লিজ। কথা দিচ্ছি কোন দিন এতটুকুও অসম্মান করব না। ওকে আমি সুখে রাখব। আমি জোর করছি না আমার কথাটা একটু ভেবে দেখো প্লিজ তোমার বড় মেয়ে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে তাই আমি সাদিয়ার মাঝেই আদিবাকে খুঁজে নিতে চাই। আমি বাঁ/চতে চাই কাকিয়া আমায় ফিরিয়ে দিও না বলতে বলতে আদি চোখের পানি ছেড়ে দিল।

সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল এই প্রথম আদিকে কেউ কাঁদতে দেখল। আদি চোখ মুছতে মুছতে নিজের ঘরের দিকে গেল। আদি নিজেকে শান্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে৷ না এমন তো হওয়ার ছিল না। আদিবাকে ছেড়ে থাকার কথা তো ছিল না। আদিবাকে ছাড়া বাড়িটা বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আদিবাকে ছাড়া মিনিটে মিনিটে কাকে ডাকবে সে? যার মায়াবী মুখটা দেখার জন্য কারনে অকারনে ডেকে আনত তাকে ছাড়া চারদিকটা যে অন্ধকার লাগছে।আদিবা কী সত্যিই আর ফিরবে না? সে কেন আদির মনের লুকানো ভালবাসা বুঝল না? আদির দম বন্ধ হয়ে আসছে সে আদিবার প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারছে না…

.
.
.
চলবে…!!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ২৯
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

মেয়েটার সাথে বেশিই বাড়াবাড়ি করা হয়ে গেছে। আদিকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আদিবার প্রতি অবহেলার পরিমাণ টা বেশি হয়ে গিয়েছে। এটা যেন আজ সবাই বুঝতে পারছে।

নিজের মেয়েকে বাড়ির বাইরে রেখে কোন মায়ের মন শান্ত থাকতে পারে না। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে সাহানা বেগমমের। এত কিছুর সত্যিই কোন দরকার ছিল কী? কি দরকার ছিল এখানে থাকার? আদি চলে যাওয়ার পর নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেলেই তো হত…মেয়ে দুটোকে নিয়ে বাকি জীবন টা পার করা যেত না?আদিবার মা কাউকে কিছু না বললেও মনে মনে এসব ভাবছেন আর আপন মনে কেঁদে চলেছেন। আদি নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। অরিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারছে না বারবার মনে হচ্ছে তার জন্যই এতকিছু ঘটেছে। আজ রাগের মাথায়,আদিবা যদি কিছু খারাপ কিছু করে বসে এর দায় কে নিবে..? মেয়েটার প্রতি বড্ড অবিচার করা হয়েছে।

আদির বাবা এমনিতেই অসুস্থ ছিলেন এসবের ভীড়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নিজের ভাইয়ের শেষ আমানত রক্ষা করতে না পারার ব্যার্থতা ঘিরে ধরেছে তাকে। সারা বাড়িতে শোকের হাওয়া বইতে শুরু করেছে।

একমাত্র জুই আর সাদিয়া কিছুটা স্বাভাবিক আছে,
সাদিয়া,জুই কে নিয়ে বাইরে গিয়ে বলল,

-“জুই, এখন আমাদের কি করা উচিত বলতো..
সবাই যেভাবে হাত গুটিয়ে নিয়েছে আদিবাপুর না কোন ক্ষতি হয়ে যায়।

-“আমাদের কী আর করার আছে..? আমরা চাইলেই কি বা করতে পারব?

-“কোন অঘটন ঘটার আগে আদিবাপুকে খুঁজে বের করা দরকার..

-“কোথায় খুঁজব..?

-“চল ভাইয়াকে গিয়ে বলি…

-“তোর কি মনে হয় ভাইয়া বলবে..?
ভাইয়া আমাদের লাথি মেরে সোজা নেটওয়ার্কের বাইরে ফেলে দিবে কোন সন্দেহ নেই।আচ্ছা সাদিয়া একটা কথা বল ভাইয়া যদি তোকে সত্যিই বিয়ে করতে চায় তখন কী হবে…?

-“ভাইয়ার মুখে মুখে কথা বলার সাহস আমার নেই মা ও হয়ত আপত্তি করতে পারবে না।

-“তারমানে তুই ভাইয়াকে বিয়ে করবি..?

-“ভাইয়া চাইলে বিয়েটা হবে। এই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আমি চাই আর নাই চাই বিয়ে হবে। আর আমি এটাও জানি ভাইয়াকে এখন আটকানোর সামর্থ্য আমাদের কারো নেই একমাত্র আপুই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। যেভাবেই হোক আপুকে ফিরিয়ে আনতে হবে ওদের মাঝে ভুলবুঝাবুঝি মিটাতে হবে। আপুকে সামনে রেখে ভাইয়া এমন সিধান্ত কিছুতেই নিতে পারবে না।

-“তা ঠিক বলেছিস আচ্ছা চল যাই স্টেশন থেকে খুঁজা শুরু করি ছবি দেখিয়ে লোকদের জিজ্ঞাসা করব। কোন কোন একটা উপায় তো হবেই।

জুই আর সাদিয়া দুজনই আদিবাকে খুঁজতে বের হল…



এদিকে ঘড়ির কাঁটা এখনো নয়ের ঘর পেরোয় নি এর আগেই ফোনের তীক্ষ্ণ শব্দে ঘুম ভাংগল নিলয়ের।নিলয় একরাশ বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম সুরে জিজ্ঞাস করল,

-“হ্যালো কে বলছেন…? এত সকালে কোন সেন্সে ফোন করেছেন? মানুষকে একটু ঘুমাতেও দিবেন না নাকি…?

সাথে সাথে ফোনের অপর পাশ থেকে কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসল
-“তোর ঘুমের গুষ্টি কিলাই মানুষের জীবন লন্ডবন্ড করে দিয়ে এখন ঘুমানো হচ্ছে..?

কন্ঠ শুনে নিলয়ের ঘুম উবে গেল তাড়াতাড়ি উঠে বসল,

-‘ক ক কে বলছেন?

-“তোর যম…

-“অরিন তুমি আমায় ফোন করেছো? আমি তো ভাবতেই পারছিনা।

-“আপনি অনেক কিছুই ভাবতে পারেন না যাইহোক যেকারনে ফোন করেছি এখনি আমার বাসার সামনে আসুন।

-“হটাৎ এতদিন পর…?

-“আমার ভাল করেই মনে আছে আপনি আমার এক্স তাই প্রেম করার জন্য ডাকছি না। ছয় বছর আগে যে ঝামেলা তৈরি করেছিলেন সেটা মিটানোর জন্য ডাকছি।

-“মানে..? তুমি কি বলছো কিছুই তো বুঝতি পারছি না।

-“বুঝার কথাও না অপরাধী রা নিজেদের ভুল কখনো বুঝতে পারে না। যাইহোক আদিবা হারিয়ে গিয়েছে ওকে খুঁজতে হবে আমার একার পক্ষে সম্ভব না তাই আপনাকে আসতে বলছি।

-‘কি বলছো..? আদিবা হারিয়ে গিয়েছে মানে কী?

-“মানে বুঝানোর সময় আমার কাছে নেই। আমি বের হচ্ছি আগে আসুন তারপর সবটা বলছি।

জুই আর সাদিয়ার মত অরিনও কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।

কিছুক্ষনের মধ্যেই নিলয়ও আসল।
-“কি হয়েছে অরিন…?

অরিন সবটা খুলে বলল। অরিনের কথায় বেশ অবাক হল নিলয়।

-তুমি তো কোনদিন আমাকে এসব বলো নি অরিন..

-“আমরা কেউই জানতাম না ভাইয়া কেন বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল আজ এতবছর পর ভাইয়া সত্যিটা বলল। ও সেদিন আদিবা কে আপনার সাথে দেখে মানতে পারে নি।তাই রাগে চলে গিয়েছিল।

-“এইটুকুর জন্য ছয়টা বছর বিসর্জন দিয়ে দিল?

-“ভালবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখলে কেমন লাগে আপনি কি করে বুঝবেন? আপনি তো কখনো ভালবাসতেই শিখেন নি।

-“এবার কিন্তু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।

-“যাইহোক আপনার সাথে তামাশা করার জন্য ডাকিনি চলুন স্টেশনে যেতে হবে।




এদিকে আদিবা সিধান্ত নিয়েছে একটা বাসা ভাড়া নিবে তারপর একটা কাজের ব্যবস্থা করবে। এবার নিজের মত করে বাঁচবে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ আদিবা বাসা খুঁজায় লেগে গেল। একটা রুমও পেয়ে গেল। আদিবার বাসাটা ভালই লেগেছে রুম দেখে বাড়িওয়ালার কাছে গেল কথা বলার জন্য।

-“আন্টি বাসা ভাড়া কত..?

মহিলা হেসে উত্তর দিল
-“পানি,বিদ্যুৎ,গ্যাস বিল সহ সব মিলে ৩৫০০ টাকা।

-“আন্টি একটু কম রাখা যায় না?

-“আচ্ছা ৩০০০ হাজার দিও শুধু তোমার জন্য ছাড় দিলাম। আজকাল এত দায়িত্বশীল মেয়ে তো দেখাই যায় না। মা বাবাকে নিয়ে থাকতে নিশ্চুই।

-“জি মানে…আন্টি আমি একাই থাকব

কথাটা শুনেই মহিলা মুখ কালো করে তাকাল।

-“একা থাকবে মানে..?মা বাবা কোথায়?

-“আমার বাবা নেই আন্টি।

-“ওহ আচ্ছা তাহলে মাকে নিয়ে এসো বাকি কথা তখনেই হবে। আমি একা মেয়েকে বাড়ি ভাড়া দিবনা।

-“আন্টি আমি একটু বিপদে পরে বাসা খুঁজতে এসেছি আমার মায়ের সাথে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই তাঁকে নিয়ে আসতে পারব না।

-“তাহলে আমিও ভাড়া দিতে পারব না।

-“কেন দিবেন না আমি আপনার ভাড়া সময়মত দিতে পারব। আপনি বললে একমাসের ভাড়া অগ্রিম ও দিতে রাজি আছি।

-“বিষয়টা ভাড়ার না আমার অবিবাহিত ছেলে আছে। আমি কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না।

-“আন্টি আমাকে দেখে কি আপনার এমন মেয়ে মনে হচ্ছে..?

-“দেখো মা একা মেয়ের কোন ভরসা নেই। যখন তখন অঘটন ঘটতে পারে তুমি ভাল হলেও সমাজ তো ভাল না। কারো কুনজর পড়লে তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না।নিজেও বিপদে পড়বে আমাকেও ফেলবে।তুমি আমাকে আন্টি বললে তাই একটা উপদেশ দেই মা। তোমাকে দেখে ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হচ্ছে তাছাড়া তুমি দেখতে মাসাল্লাহ সুন্দরী তোমার পক্ষে একা থাকা সম্ভব না। দুদিন আগে বা পরে কারোর না কারোর নজর পড়বেই। আর যখন দেখবে তুমি একা। এই সমাজ তোমাকে ছিঁড়ে খাবে।

-“আন্টি….?

-“কথাটা অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি। কথায় আছেন ছেলেরা রাগলে বাদশা, আর মেয়ের রাগে ব্যা**শ্যা হয় ।ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে যাও মা।

আদিবা আর কথা বাড়ল না বেরিয়ে আসল। মহিলার কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও মন্দ বলে নি। আদি তার ভাই তবু তার কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা আদিবার ছিল না আর বাইরের কেউ যদি তার দিকে নজর দেয় কি হবে তখন?

ভাবতে ভাবতে আদিবা আরও কয়েকটা বাসা দেখল কিন্তু সবার একি কথা একা মেয়েকে ভাড়া দিবে না। দেখতে দেখতে সারাদিন কেটে গেল আদিবা সারাদিন বাসা খুঁজে বেরিয়েছে কিন্তু সবার এক কথা একলা একটা মেয়েকে বাসা ভাড়া দিবে না।গার্জিয়ান নিয়ে যেতে হবে।আদিবা বাসা খুঁজে না পেয়ে সিধান্ত নিল পরের দিন মেয়ের হোস্টেলে সীট খুঁজবে কিন্তু তার আগে আজ রাতটা থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আদিবা একটা হোটেলে গেল। আদিবাকে দেখে রিসিপশনের লোকটি বলল,

-“ম্যাডাম বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি..?

-“আমার একটা রুম দরকার।

-“সিংগেল রুম নাকি ডাবল..?

-“সিংগেল…

-“আচ্ছা ১৫০০ টাকা ভাড়া ম্যাম।

-“সমস্যা নেই দিয়ে দিন।

-“ঠিক আছে আপনার আইডি কার্ড দিন ম্যাডাম।

-“আইডি কার্ড মানে..?

-“আপনার পরিচয় কনফার্ম করার জন্য আইডি কার্ড দিতে হবে।

-“আমার কাছে কোন আইডি তো নেইম

-“আপনি কী জানেন না আইডি ছাড়া কোন হোটেলে রুম বুক করা যায় না..

-“আইডি ছাড়া কোনভাবে রুম দেওয়া সম্ভব না?

-“একা মেয়েকে হোটেলে রুম দেওয়ায় নিষিদ্ধ আজকাল মেয়েরা যেসব ব্যবসা শুরু করেছে। ক্লাইন্ড নিয়ে হোটেলে এসে… যাইহোক আইডি ছাড়া রুম দিলে পুলিশি ঝামেলা হয়ে যাবে। সরি আপনাকে কোন সাহায্য করতে পারছি না। আপনি এখন আসতে পারেন।

আদিবা আর কোন হোটেলে গেল না। এভাবে নিজেকে অসম্মান করার মানে হয় না। তবে কী আদি ঠিক বলেছিল একা মেয়ের জন্য সমাজ টা আসলেই এতটা জটিল…? হাতে টাকা থাকা সত্ত্বেও মাথা গোঁজার একটু জায়গার ব্যবস্থা করতে পারল না? এতটাই অসহায় সে? এখন কি করবে? কোথায় যাবে? বাসায় ফিরে যাওয়া উচিত?

না এই যুদ্ধে হার মানবে না আদিবা দরকার হলে স্টেশনে রাত কাটাবে তবুও বাসায় ফিরে যাবে না ভাবতে ভাবতে আদিবা স্টেশনে গিয়ে পৌঁছাল। মনটা বেজায় খারাপ তাই কিছু খাওয়ার ইচ্ছে হল না।আদিবা না খেয়েই স্টেশনের একটা ব্যাঞ্চে ব্যাগ মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু চোখে ঘুম নেই রাত যত বাড়ছে আদিবার আঁতংক তত বাড়ছে। চারদিক নীরব হতে শুরু করেছে।

রাত ১১ টার ঘর পেরিয়েছে। বাসার সবাই আদিবাকে খোঁজার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নিলয় পুলিশ কেস ও করেছে কিন্তু তার সন্ধান মিলেনি। তাই সবাই বেশ দুচিন্তা করছে তবে এই ব্যাপারে একজনের বিন্দু মাত্র হেলদুল নেই।অরিন বাসায় ফিরেছে, সাদিয়া আর জুঁই এখনো ফিরে নি এদের কাউকে নিয়েই আদির কোন মাথা ব্যাথা নেই। আদি আদিবাকে খোঁজতে যাওয়া তো দূর সারাদিনে নিজের ঘর থেকেও বের হয় নি। কেবল বের হল।

বেরিয়ে এসে টেবিলে বসে খেতে শুরু করেছে।
আদির এমন আচারন দেখে আদিবার মা অবাক হলেন তিনি বেশ রেগেই বললেন

-“তুই কী মানুষ? মেয়েটা সারাদিন বাসায় ফিরে নি কোথায় আছে কী করছে কিছু জানি না আর তুই নিচিন্তে খেতে বসেছিস।

-“তাহলে কি আদিবার শোকে অনশনে বসা উচিত ছিল?

-“শুধু আদিবা না জুই আর সাদিয়াও ফিরে নি।

-“বাহ তবে তাদের এই অভিনব বুদ্ধিটা কে দিয়েছিল আদিবাকে খোঁজার?

-” তুই তবুও যাবি না?

-” আমি বলেছিলাম নাকি তাদের যেতে..? তাহলে আমি খুঁজতে যাব কেন? তাছাড়া তোমার মেয়েরা একটু বেশি বুঝে এতে আমার কী করার আছে…

-“আজ আমার একটা ছেলে থাকলে এভাবে বসে থাকতে পারত না।ছেলে নেই বলে এতটা অসহায়ের মত অন্যের কাছে দয়া ভিক্ষা যাইতে হত না।

-“ইমোশনালি ব্ল্যা*ক*মেইল করার চেষ্টা করে লাভ নেই আমি তোমার বড় মেয়েকে খুঁজতে যাব না। তিনি নিজে নিজেই ফিরবে…শুধু সময়ের অপেক্ষা।

-” আদিবার জন্য নাই বা গেলি সাদিয়া আর জুই এর জন্য অন্তত যা…

আদি কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।

ঘড়িতে প্রায় ১২ টা বাজে আদিবা কেবল চোখ টা বন্ধ করেছে এর মধ্যেই কারোর স্পর্শে আংতকে উঠল তাড়াতাড়ি উঠে বসল আর অবাক হল একটা মাতাল টাইপের তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।দেখে আদিবা আমতা আমতা করে বলল,

-“ক ক কাকে চাই…?

লোকটা নেশাক্ত গলায় বলল,
-“রেট কত তোর..? চল আজ আজকের জন্য তোকে কিনে নিলাম।

-“ক ক কী করছেন হাত ছাড়ুন।আপনি ভুল করছেন আমি ওইসব মেয়ে না।

-“স্টেশনে থেকে আবার ভাব দেখাচ্ছিস? তোদের সবাই চিনে আচ্ছা ঝামেলা করিস বা রেটের চেয়ে কিছু বাড়িয়ে দিব নি।

আদিবা আর কিছু না বলে কোনমতে লোকটার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়াতে লাগল। লোকটা মাতাল থাকায় আদিবার পিছু নিতে পারে নি। আদিনা পিছন দিকে বারবার তাকাতে তাকাতে ছুটছে হটাৎ কিছু একটার সাথে ধ্বাক্কা খেয়ে ধপাস করে নিচে পড়ল। সাথে সাথেই একজন বলে উঠল

-“কি ব্যাপার ম্যাডাম রেটে মিলেনি? আরও বাড়িয়ে দিতে হবে?

কন্ঠ শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে অবাক হল,
-“ভ ভ ভাইয়া আপনি..?

-“ভাইয়া নই কাস্টমার…এক রাতের জন্য কত লাগবে?



চলবে…!!

#বেপরোয়া_ভালবাসা
#পর্বঃ৩০
#লেখনীঃ #মনা_হোসাইন

(১৮+ কন্টেন্ট অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং যারা গল্প থেকে উৎসাহ নিয়ে কাহিনিকে বাস্তবে জীবনে প্রয়োগ করতে চান তাদের জন্য পর্বটি ইগনোর করার অনুরোধ রইল পড়তে চাইলে নিজের দায়িত্বে পড়ুন)

আদিবা আদির কথায় অবাক হয় নি। আদির কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি ভদ্রতা আশা করা যায় না।
আদিবা উঠতে চেয়ে উঠতে পারল না পায়ে হালকা ব্যাথা পেয়েছে আদি এসে আদিবাকে কোলে তুলে নিল।সাথে সাথে আদিবা চেঁচিয়ে উঠল

-“ছাড়ুন… আপনাকে হেল্প করতে কে বলেছে?

-“বাপরে কী তেজ…ছেড়ে দিলে কি হবে বুঝতে পারছিস?

আদিবা উত্তর দিল না। আদি বাঁকা হেসে বলল,

-“ক্লাইন্ট হিসেবে ওই মাতাল লোকটার চেয়ে আমি শতগুণে ভাল. ধর বাচ্চা যদি মাতাল গুন্ডা হয় তোর জীবন তো তেজপাতা হয়ে যাবে তার চেয়ে আমার মত হলে,দেখতেও ভাল হবে আচারনেও ভাল হবে।

-” আপনার লজ্জা বলতে কিছু নেই তাই না? এত বাজে কথা কী করে বলেন? আমি আপনার বোন হই অন্তত সেটা ভেবে একটু লজ্জা পেতে পারেন না? এমন বেসরম বেহায়া ছেলে আমি কখনো দেখিনি।

-“দেখার সুযোগ দিলে তো দেখবি। তাছাড়া মাঝরাতে স্টেশনে পড়ে থাকা কোন মেয়ের সাথে এর চেয়ে ভাল করে কথা বলার মানে হয় না।

-“আমাকে নামান বলছি আমার কথা শুনেই গাঁ ঘিন ঘিন করছে।

আদি র*ক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
-“যখন ওই লোকটা ধরেছিল তখন করেনি..?

বলেই পাশের বেঞ্চে বসিয়ে দিল আদিবা রাগে গজ গজ করতে বলল,
-“যদি ভেবে থাকেন আপনি এসেছেন বলে আমি ফিরে যাব তাহলে ভুল ভাবছেন আমি আপনার সাথে যাব না।

-“আমার খেয়ে কাজ নেই তোকে নিতে আসব? আমি সাদিয়া আর জুইকে নিতে এসেছি। তোকে নিয়ে যাওয়া তো দূর তুই নিজের ইচ্ছেয় যেতে চাইলেও বাসার দরজা তোর জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।

বলেই আদি উঠে দাঁড়াল। আর বলল তোরা কী যাবি নাকি এই ইডিয়েট এর সাথে থাকবি?

বলতেই সাদিয়া আর জুই দেয়ালের পিছন থেকে মুখ বের করে তাকাল। আদিবা অবাক হল।

-“তোরা এখানে কি করছিস?

আদিবা প্রশ্ন করতেই সাদিয়া ছুটে এসে আদিবার পায়ের কাছে বসে পড়ল।
-“আপু তুই আর অমত করিস না প্লিজ বাসায় চল। সারাদিন তোকে খুঁজেছি পাইনি এখনো হয়ত পেতাম না ভাইয়া না আসলে…

আদিবা একরাশ অভিমান নিয়ে বলল,
-“আমাকে খোঁজার কি হল? তোরা তো সবাই আমাকে নিজেদের বোঝা ভাবতি হটাৎ আমার জন্য দরদ উতলে উঠল কেন?

আদিবা কথাটা আদির দিকে তাকিয়ে বলল,সাথে সাথেই আদি বলে উঠল।

-“নাটক দেখার সময় আমার নেই। চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বস। আমার হবু বউ রাতের বেলা বাইরে থাকবে আমি সেটা মেনে নিব না।

আদির কথায় আদিবা আবারো রাগে তেঁতে উঠল,
-“আপনি নিজেকে ভাবেন টা কী হ্যা…?যা মুখে আসে তাই বলেন। কে আপনার হবু বউ? আমি মরে গেলেও তো আপনার মত অ*সভ্য একজন কে বিয়ে করব না।

আদিবার কথায় হা হা করে হেসে উঠল আদি..

-“একটা রাস্তার মেয়েকে আদিত্য চৌধুরী বিয়ে করবে ভাবলি কি করে? তুই যখন থেকে বাসা থেকে বের হয়েছিস তখন থেকে আমার মন থেকেও উঠে গেছিস। আমি তোকে হবু বউ বলি নি সাদিয়াকে বলছি।ও তোকে তো বলা হয়নি আমি সাদিয়াকে বিয়ে করছি। সামনের সপ্তাহে আমাদের বিয়ে।

কথাটা শুনে আদিবা থ হয়ে গেল সে হতবাক হয়ে সাদিয়ার দিকে তাকাল। সাথে সাথে সাদিয়া মাথা নিচু করে নিল।আদিবা কড়া গলায় প্রশ্ন করল

-“এই তুই মাথা নিচু করছিস কেন? কি বলছেন উনি? তুই সত্যিই উনাকে বিয়ে করবি..?

সাদিয়াকে উত্তর দেয়ার সুযোগ না দিয়ে আদিত্য বলে উঠল,

-“বিয়েটা সাদিয়া করছে না আমি করছি। আর এই ব্যাপারে কারোর মতামত জানার প্রয়োজন মনে করছি না। কেউ চাইলেও এই বিয়ে হবে না চাইলেও হবে… সাদিয়া আমি গাড়িতে যাচ্ছি এক মিনিটের মধ্যে তুই আসবি।

বলে আদি চলে গেল আদিবা চোখ গরম করে তাকাল সাদিয়ার দিকে..

-“এসবের মানে কী সাদিয়া..? তুই কোন প্রতিবাদ করলি না কেন? তারমানে কী তুই ও এই বিয়েতে রাজি..?

-“আপু ভাইয়ার মুখে মুখে কথা বলার সাহস আমার নেই। প্লিজ তুই বাসায় চল আপু তুই পারবি ভাইয়াকে বুঝাতে।আমাকে এতবড় বিপদে ফেলিস না প্লিজ ফিরে চল।

-‘ফিরতে তো হবেই উনি নিজেকে ভাবেন টা কী। যখন যা ইচ্ছে হবে তাই করবেন?

রাগে শরীর রি রি করছে তবুও আদির সাথেই ফিরল আদিবা। আদিবা বাসায় ফিরে কারো সাথে কোন কথা না বলে সোজা আদির ঘরে চলে গেল। আদি গাড়ি পার্ক করে আসতে একটু সময় লেগেছে। সে আনমনে ঘরে ঢুকে একটু থমকে দাঁড়াল। আদিবা তার বিছানায় বসে গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে দেখে প্রশ্ন করল,

-“ঘটনা কী? আপনি আমার ঘরে কি করছেন?

-“আপনার লজ্জা সরম একেবারেই নেই তাই না?

-“এক প্রশ্ন কত বার করিস? একটু আগেই তো প্রশ্ন করেছিলি।

-“আপনি কোন সাহসে সাদিয়াকে বিয়ের কথা বললেন..?

-“কেন না বলার কি আছে? কি নেই আমার যে বিয়ে করতে পারব না।

-“কাউকে আপন করে পাওয়ার জন্য যে যোগ্যতা থাকা দরকার সেটাই তো নেই।

-“মানে কি বলতে চাইছিস..?

আদিবা উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দেয়ার বদলে ঠাস করে আদির গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

আদি অবাক হয়ে তাকাল..
-“সীমা পেরিয়ে যাচ্ছিস কিন্তু আদিবা..আমার ধর্য্যের পরিক্ষা নিস না।

-“ধর্য্যের সীমা তো অনেক আগেই পার করে দিয়েছেন।বড় বোনের সাথে নোংরামি করে এখন ছোট বোনের দিকে নজর দিয়েছেন ছিঃ লজ্জা করল না এত নিজে নামতে…?

আদিবার কথা শুনে হটাৎ করেই যেন আদি পুরো বদলে গেল। চোখ মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠেছে আদিবাকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আদিবাকে ছুঁড়ে ফেলে দিল।

-“ক ক কী করছেন এসব..?

আদিবার কথা যেন আদির কানে ঢুকে নি সে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে নিজের শার্ট টা খুলে ছুড়ে ফেল দিল। আদিবা বুঝল আদি নিজের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি উঠে চলে যেতে চাইল কিন্তু সুযোগ পেল না আদি আবারও হ্যাঁচকা টানে আদিবাকে বিছানায় ফেলে দিল।

-“কি করতে চাইছেন? সাবধান কাছে আসবেন না আমি কিন্তু চেঁচাব বাসায় সবাই আছে…

-‘ Go ahead…

বলেই আদি আদিবার হাত দুটি চেঁপে ধরল।

-“আ আ আপনি এসব কি করছেন?

-“নোংরামি…

-“মানে কো আমি কিন্তু এবার সত্যি চেঁচাব।

-“সমস্যা নেই আমার রুম সাউন্ড প্রুফ।

বলেই আদি একটানে আদিবার জামার একাংশ ছিড়ে ফেলল।তারপর আদিবার গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল

আদিবা ভয়ে কুঁকড়ে উঠল নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টায় নিজেকে হাত পা ছুড়তে লাগল..

আদিবা বাঁধা দিচ্ছে দেখে আদি মুখ তুলে হাত দুটো ছাড়িয়ে নিয়ে আদিবার ওড়না দিয়ে হাত দুটি বেঁধে দিল। আদির চোখ থেকে আগুন ঝড়ছে। নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। আদিবা একমনে কেঁদে চলেছে.. কিন্তু আদি তাতে পাত্তা দিল না। আদিবার চোয়াল চেপে ধরে বলল,
-“কি করতে যাচ্ছি বুঝেছিস নিশ্চুই..? শুরু করব?

-“ভ ভ ভাইয়া…

-“মাফ চা…বল আর কোনদিন আপনার চরিত্র নিয়ে কথা বলব না।

আদিবা উত্তর দিল না। আদি আবারো ধমকে বলে উঠল,

-“এক থেকে তিন গুনব এর মধ্যে মাফ না চাইলে…

-“আর কোনদিন আপনার চরিত্র নিয়ে কিছু বলব না।

-“এই তো গুড গার্ল..আমি পৃথিবীতে একটা মেয়েকে খা*রাপ চোখে দেখেছি আর সেটা তুই…সাদিয়াকে কুনজরে দেখা তো দূর ওর দিকে আমি কোনদিন তাকাইও নি…

আদিবা কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছেনা…

-“হয়ত ভাবছিস তাহলে কেন বিয়ে করব তাই না..?আসলে আমি তোকে আমার শালিকা বানাতে চাই তাই সাদিয়াকে বিয়ে করব। যাইহোক এই ঘরে আজ যা ঘটল সেটা যেন কেউ জানতে না পারে যদি জানে যেটুকু অসম্পূর্ন রেখেছি সেটাও পূরণ করে ফেলব…

-“আপনি কী মানুষ…?

-“নাহ কোনদিন ছিলাম ও না…চুপচাপ ঘুমা আমি আজ তোর রুমে ঘুমাব এই অবস্থায় বাইরে যাওয়ার দরকার নেই



চলবে..!!