বেড়ী পর্ব-০৮

0
2832

#বেড়ী পর্বঃ৮
#লেখায়ঃপ্রজাপতি(Nosrat Monisha)

-হ্যাঁ আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিয়ের আড়াই মাসের মাথায় যার বউ তিন মাসের গর্ভবতী হয়ে যায় তার মাথা খারাপ হবে না তো আর কার মাথা খারাপ হবে।
চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে নির্ঝর কথাগুলো বলছিলো। পাগল প্রায় হয়ে সে হৃদিতার কাঁধে ঝাঁকুনি দিতে দিতে বলে,
-কেন করলি এটা? যদি এতোই তাকে ভালবাসতি তবে আমার সাথে এ অভিনয় কেন? কেন আমার বিশ্বাস ভাঙলি? বল জবাব দে।

সবার চেহারা বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীর মতো হয়ে গেছে শুধু মুমু ছাড়া। কারণ তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে। এখন হৃদিতার এ বাড়ি ছেড়ে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। মনে মনে বলছে,
-ভাগ্যিস গতকাল সাথে গিয়েছিলাম আর ডাক্তারের সাথে আলাদা কথা বলে তার সন্দেহ জানতে পেরেছিলাম। নাহলে এসব ব্যবস্থা কি করে করতাম।
ঘটনা হলো মুমু ডাক্তারের সাথে দেখা করে জানতে পেরেছে হৃদিতা প্রেগন্যান্ট হতে পারে।
কিন্তু টেস্ট রিপোর্ট ছাড়া তিনি কনফার্ম হতে পারছিলেন না। মুমুর প্রথমে হৃদিতার মা হবার সংবাদে রাগ হলেও পরে তার মাথায় একটা ভয়ংকর কুবুদ্ধি চাপে। সে হৃদিতার সুখের সংবাদকে দুঃখের সংবাদে পরিণত করার পরিকল্পনা করলো । সকালে সবাই উঠার আগে হাসপাতালে যায়। সে গত রাতেই এক ঘুষখোর খুঁজে বের করে রেখেছিলো। সকালে তার সাহায্যেই রিপোর্টে দেড় মাসের বদলে তিনমাস লেখায়। আর এতেই কাজ হয়ে যায়। সে আরও কিছু অবশ্য করেছে।

হৃদিতার অবস্থা পানি ছাড়া মাছের মতো এখন। স্বামীর অবিশ্বাস এতোদিন মেনে নিয়েছে। কিন্তু যে মানুষ নিজের সন্তানকে অস্বীকার করে তাকে কিভাবে মেনে নেবে সে? আর নির্ঝর যদি এই বাচ্চাকে স্বীকৃতি না দেয় তবে কি হবে এর জন্ম পরিচয়। সমাজতো কিছুতেই মেনে নেবে না।
হৃদিতা ভয় পায় এই মাতৃত্বের খবর তার ভাগ্যে আবার কোন বেড়ী লিখে রেখেছে তা ভেবে।

নির্ঝরের হিংস্র চোখে আগুন আবার সেখানেই অশ্রু। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে হৃদিতা খুব স্পষ্ট গলায় বলে,
-আজ অব্দি আপনি ছাড়া আমাকে কেউ স্পর্শ করে নি। আপনি ভুল করছেন।

-একদম আমার সামনে ন্যাকামি করবি না। আমার কাছে এখন সব পরিষ্কার প্রাইভেট কোচিং বলে তুই তোর নাগরের সাথে দোখা করতিস। সব বন্ধ হওয়ার পর লুকিয়ে বের হতি নাগর আর বোনের সাথে দেখা করতে ।

নির্ঝরের ব্যবহারে কেউ বুঝতে পারছিলো না তাকে কি বলবে না। এমনকি রিপোর্ট দেখে আদৃতার মতো গরম মেজাজের মেয়ে তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে না।
মার্জিয়াও বুঝতে পারছে না তার মেয়েদের সংসারেই কেন এমন হচ্ছে। এক মেয়ের সংসার বলতে গেলে ভেঙে গেছে আরেকজনেরটাও সেই রাস্তায়। সে গিয়ে মেয়ের জামাইয়ের সামনে গিয়ে বলে,
-বাবা আমার মেয়ে এমন না। কোথায় হয়তো কোন ভুল হচ্ছে।

নির্ঝর দাঁত খিঁচিয়ে বলে,
-ভুল হচ্ছে না ভুল হয়েছিল। আর ভুলটা ছিলো এই নষ্টা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে। আপনারা শুধু বড় মেয়ের না ছোট মেয়ের চরিত্রও গোপন করে বিয়ে দিয়ছেন। আমার জীবন নষ্ট করেছেন।

নির্ঝরের এমন বেয়াদবি দেখে তার বড় ভাই নাহিদ বলে,
-বিহেভ নির্ঝর। শান্ত হও। রিপোর্টে ভুল থাকতেই পারে। এমন হাজার রিপোর্টে প্রিন্টিং মিসটেক হয়।

-নাহিদ ভাইয়া মিসটেকটা রিপোর্টে হয় নি তোমাদের এই মেয়েটাকে নিয়ে হচ্ছে। সায়েমা যখন বললো এই মেয়েটা প্রেগন্যান্ট আমি বিশ্বাস করতে পারি নি কারণ বিয়ের পর যাতে এর পড়াশোনায় সমস্যা না হয় তাই আমরা প্রপার ফ্যামিলি প্ল্যানিং ইউজ করেছি।

নাহিদ বিরক্ত হয়,
-কি অশিক্ষিতের মতো কথা বলছো? তুমি জানো না ফ্যামিলি প্ল্যানিং অনেকক্ষেত্রে কাজ করে না।

-আমিও সেটাই ভেবেছিলাম তাইতো খুশিও হয়েছিলাম। কিন্তু আমার ভুল ভেঙে গেছে। আরে বিয়ের পর প্রায় সপ্তাহ দশদিনতো ওর সাথে আমার ফিজিক্যালই হয় নি তাহলে এই তিন মাসের বাচ্চা? তুমি একবার রিপোর্টটা দেখো এটা পরিষ্কার যে ওর গর্ভের ভ্রূণের বয়স বার সপ্তাহ।

হৃদিতার বাবা নাহিদের কথায় সাহস পেয়ে বলে,
-বাবা নির্ঝর আজকের রিপোর্টে ভুল হয়েই থাকে। তুমি যদি টেস্টটা আবার করাতে।

-তাহলে কি ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে আপনারা নতুন রিপোর্ট বের করবেন যেমন পুলিশকে টাকা দিয়ে বড় মেয়েকে নির্দোষ প্রমাণ করলেন।

-না না, তুমি ভুল করছো। আদৃতার উপর অভিযোগটা সত্যি ভুল ছিলো। ঠিক আছে আমরা নাহয় তোমার পরিচিত ডাক্তারের কাছে যাবো।

-মানুষের আর খেয়ে কাজ নেই আপনার মেয়েদের পেছনেই লেগে থাকবে। শুনুন শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যায় না। ঐ হাসপাতাল ঢাকার ভালো হাসপাতাল গুলোর মধ্যে একটা।

হৃদিতা কান্না করে দেয়।
-আপনি যেখানে বলবেন যে পরীক্ষা বলবেন আমি করাবো। কিন্তু আমার উপর এতো বড় মিথ্যা চাপাবেন না।

নাহিদ বলে,
-দেখ নির্ঝর এতো কনফিডেন্টলি হৃদিতা কথাগুলো বলছে অপরাধী হলে নিশ্চয়ই এভাবে বলতো না।

-ভাইয়া তুমি ভুলে গেছো? চোরের মায়ের বড় গলা।

-দেখ ভাই হিসেবে আমার রিকুয়েষ্ট রাখ টেস্টটা আবার করা।

সায়েমা বলে,
-নির্ঝর ভাইয়া প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করানো যাবে।

ডিএনএ টেস্ট শুনে মুমুর গলা শুকাতে থাকে যদি এটা হয়ে যায় তবে হৃদিতাকে আর তাড়ানো যাবে না।

কিন্তু তার ভয় নাহিদ দূর করে দেয়,
-আমি বুঝতে পারছি আমার ভাইবোন সব মূর্খের দুনিয়ায় বাস করছে। সায়েমা টিভি সিনেমার মতো ডিএনএ টেস্ট এতো সহজ না এর জন্য কোর্ট ওর্ডার লাগে। আর বাচ্চা পেটে বোধহয় এটা করার অনুমতি কোর্ট দিবে না। তাই এর জন্য বাচ্চার জন্মের অপেক্ষা করতে হবে। তাই নির্ঝর একটু বোঝার চেষ্টা কর।

সবার কথা শুনে নির্ঝর একটু নরম হয়।তারও মনে হতে থাকে হয়তো এটা মিথ্যা রিপোর্ট। তাই নিজের ভাবনা চাপিয়ে রেখে বলে,
-ভাইয়া আমি আর কাউকে বিশ্বাস করি না। তোমরা যা খুশি করো আমি এই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারছি না।

মুমু জানতো এমনটা হবে। তাই সে এর জন্য সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।
-তাহলে ভাইয়া চলুন নির্ঝর যখন দেরি করতে চাইছে না আমরা যাই। আমার পরিচিত গাইনেকোলজির ডাক্তার আছে। আপনারা বললে ফোন করি।

সায়েমা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে বলে,
-তোমার পরিচিত ডাক্তার কেন দেখাতে হবে?

মুমু একটু করুন সুরে বলে,
-সে তোমাদের যাকে খুশি দেখাতে পারো। কিন্তু সেখানে গেলে আজ বিকেলে রিপোর্ট দিয়ে দেবে, যেখানে অন্য জায়গাতে একদিন লাগবে।

-না অন্য জায়গাতে যেতে হবে না আমার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট চাই।


আদৃতা, নাহিদ, মুমু, সম্পা এসেছে ডাক্তারের কাছে। নির্ঝর আসতে চাইলেও তাকে নিয়ে আসা হয় নি। হাসপাতালে সবার সামনে রিএক্ট করবে তাই।

চেকআপ শেষে সম্পা আর আদৃতার সাথে কথা বলছে ডাক্তারের সাথে। মুমু আর নাহিদ পিছনে দাড়িয়ে আছে।

মুমু নিজের উৎসাহটা মুখের উপর আসতে দিচ্ছে না। এই ডাক্তার মহিলাকে প্রায় বছর সাতেক আগে তার বাবা এক বাচ্চা পাচার আর অর্গান ট্র্যাফিকিং এর কেস থেকে বাঁচিয়েছিলো। আজ সেই জের ধরেই নিজের কাজ আদয় করে নিলো মুমু।

মুমুর কথামতোই ডাক্তার ভ্রূণের বয়স বার সপ্তাহ বলে।
সবাই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে ডাক্তার যা বলেছে তা জানায়।
নাফিসা বিশ্বাস করতে পারছে না এতো সরল দেখতে মেয়ে তার ছেলের সাথে এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা কি করে করলো?

শফিকুল ইসলামের আর কোন মুখ নেই কিছু বলার।
সারোয়ার আহমেদ হৃদিতার গলা থেকে চেনটা টেনে ছিঁড়ে দিয়ে বলে,
-তোর মতো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে আমি আমার ছেলের জীবনটা নষ্ট করে দিলাম। আমার বাড়িতে এরকম খারাপ মেয়ের জায়গা নেই। শফিকুল ইসলাম নিজের মেয়েকে নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যা। আর যাবার সময় নাটক করে পাড়া প্রতিবেশীকে মেয়ের নষ্টামির কথা জানাবি না। তোদের না থাকলে কি হবে আমাদের একটা মানসম্মান আছে।

সারোয়ার আহমেদের মাথা ঠিক নেই সবাইকে তুইতোকারি করে কথা বলছে। তাই নাফিসা তাকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে যায়।

সম্পা এবং নাহিদেরও আর কথা বলার জায়গা থাকে না। আর ছোট বলে সায়েমাকে তো বরাবরই এসব থেকে দূরে রাখা হয়।

নির্ঝর ঘরে গিয়ে একে একে হৃদিতার সব জিনিস ছুঁড়ে ফেলছে। হৃদিতাকে আদৃতা ধরে রেখেছে। নিজে এতো কিছু সহ্য করেছে যে আজ এতো প্রমাণের পরও নিজের বোনের উপর বিশ্বাস হারাতে পারছে না।
আদৃতার অমনোযোগী হওয়ার সুযোগ পেয়ে হৃদিতা দৌড়ে ঘরে গিয়ে নির্ঝরের পায়ে ধরে।

-যা খুশি ভাবুন কিন্তু আমি কসম কেটে বলছি আমাকে আপনি ছাড়া কোন পুরুষ স্পর্শ করে নি।

-নাটক করছিস? কি ভেবে এখানে এলি তোর নাটক দেখে আমার মন গলে যাবে?

-আমি কোন নাটক করছি না। আপনি আমার কথাটা বুঝতে চেষ্টা করুন।

-তোর চেহারা দেখলে আমার ঘৃণা হয় দূর হয়ে যা।
বলে নির্ঝর হৃদিতাকে লাথি দেয়। হৃদিতা দুর্বল থাকায় খাটের কোণায় লেগে তার কপাল ফেটে রক্ত বের হতে থাকে।

আদৃতা দৌড়ে এসে বোনকে তোলে। এতক্ষণ চুপ থাকলেও এবার সে রেগে বলে,
-আপনি মানুষ?

-এসে গেছে মেডাম মানুষ । যার ভালো মানুষির দর্শন গোটা ইন্টারনেটে হয়েছে। ঠিক আছে আপনারা মানুষ আমি অমানুষ। তাহলে আমার মতো অমানুষের সাথে আপনার বোনের থাকতে হবে না। আমি তাকে এই মুহূর্তে তালাক দিচ্ছি। এখন মুখে বলে দিচ্ছি কয়েক দিন পর কাগজ পৌঁছে যাবে।

বলে যেই নির্ঝর মুখ খুলবে নিরব এসে বাধা দেয়। শুরু থেকে নিরব চুপচাপ সব শুনছিলো আর কি যেন ভাবছিলো। সে কারও পক্ষ নেয় নি।
-মাথা ঠান্ডা কর। বাচ্চাটা যারই হোক এ অবস্থায় তালাক হবে না। তাই বাচ্চাটা জন্ম নেওয়া অব্দি অপেক্ষা কর।

-কিন্তু বাচ্চাটাইতো আমার না।

-সেটা নিয়ে পরে ভাবা যাবে এখন চুপ থাক। আর আপনি দয়া করে এখন হৃদিতাকে নিয়ে চলে যান। আমাদের বাড়িতে এখন কারও মাথা ঠিক নেই।

মুমুর আশা পূর্ণ হলো। হৃদিতা বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
এদিকে হৃদিতাকে একরকম টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে আদৃতা। বার বার বোঝাচ্ছে যে বাড়িতে তোমার সম্মান নেই সেখানে থেকে কি হবে আর তাছাড়া কেউতো বাচ্চাটাকেই মানে না।

চিৎকার করে হৃদিতা নির্ঝরকে ডেকে বলছে,
-নির্ঝর আপনি একবার আমার কথা বিশ্বাস করুন। এটা আপনার বাচ্চা। আপনি আমাকে ছেড়ে দিলে আমি মরে যাবো।

নির্ঝর বন্ধ দরজার ওপাশ হতেও হৃদিতার বলা কথাগুলো শুনতে পাচ্ছে। সে কানে হাত রেখে বলে,
-না আমি তোমার গলা শুনতে চাই না। তুমি একটা ছলনাময়ী, খারাপ মেয়ে।


রাতে দুই বাড়িতে শোকের ছায়া। অথচ আজ সব কিছু নতুনভাবে শুরু হতে পারতো।
মুমু নির্ঝরকে খাবারের জন্য ডাকতে চাইলে নাফিসা বাধা দেয়। তার ছেলে নিজের স্ত্রীকে কতটা ভালবাসে তা সে জানে কিন্তু মেয়েটা এমন চরিত্রহীন হবে তা কে জানতো? অথচ এই হৃদিতার জন্য নিজের ছেলেকে কত কথা শুনিয়েছে। এখনতো নাফিসার নিজেরই হৃদিতাকে মারতে মন চাইছে।
সায়েমার আজ বিশ্বাস ভেঙে গেছে যে মেয়েকে এতো স্নেহ দিয়েছিলো ভাবী না নিজের বোন মনে করেছিলো সেই মেয়ে কি-না তার ভাইকে ঠকালো?


আদৃতা হৃদিতার কপালে ব্যান্ডেজ করে। তারপর জোর করে বাচ্চার স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে তাকে হালকা কিছু খাইয়ে দেয়।
হৃদিতা লুকিয়ে মায়ের ফোন এনে নির্ঝরকে ফোন করতে থাকে। একশবারের উপরে ফোন করার পর নির্ঝর ফোন রিসিভ করে বলে,
–আর কি চাই তোর? আমার সব আশা বিশ্বাস নষ্ট করে মজা নেওয়ার জন্য ফোন করেছিস?

হৃদিতা কান্না করে বলে,
-আল্লাহর দোহাই আপনি আমাকে যত খুশি গালি দেন, মারুন কাটুন যা খুশি করুন কিন্তু আমাকে অবিশ্বাস করবেন না।

-তোর এই মিষ্টি কথায় আমি আর ভুলবো না।

-নির্ঝর আমি কুরআন শরীফে হাত রেখে বলতে পারবো এ বাচ্চা আপনার।

-তুই সেটা পারবি। তোর মতো চরিত্রহীন যে বিয়ের আগে পেট বাজায় সে আল্লাহর বাণী আর কালামকে কি মর্যাদা দিবে। শোন তোর মতো মেয়েরা পুরো মেয়ে জাতকে কলঙ্কিত করে।

আদৃতা ওষুধ নিয়ে ঘরে এসে দেখে হৃদিতা ফোনে কাকুতি মিনতি করছে।
সে ফোনটা ছিনিয়ে কানে দিয়ে শুনতে পায়,
-তুই যতই ন্যাকা কান্না করিস তোর আসল রূপ আমি চিনে ফেলেছি। তুই একটা বিশ্বাসঘাতক চরিত্রহীন।

আদমতা খুব শান্ত ভাবে বলে,
-নির্ঝর সাহেব আমি আদৃতা। আজ যাকে এতগুলো অপবাদ দিলেন এতো অপমান করলেন আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এমন একদিন আসবে আপনি তার পায়ে ধরে এসব ব্যবহারের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাইবেন। কিন্তু আমি এই গ্যারান্টি দিতে পারছি না তখন হৃদিতা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে। শুধু এটা বলবো আমার বিশ্বাস আমার বোন নির্দোষ তাই এই দিনটা আসবেই হয়তো দেরি হবে কিন্তু আসবে। কারণ হলো নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচারক।


মুমু গুনগুন করে গান গাইছিলো আর বিছানা গুছচ্ছিলো।
নিরব ঘরে এসে খুব কড়া গলায় বলে,
-বাড়িতে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেলো আর তুমি গান গাইছো?

-তো আমি তোমাদের মতো মুখ ভার করে বসে থাকবো? আমার ভালো লাগছে আমি গাইছি।
বলে মুমু চলে যেতে নিলে নিরব তার হাত টেনে শক্ত করে ধরে।

-আহ! নিরব লাগছে হাত ছাড়ো।

নিরবের চোখ পাথরের মতো স্থির। সে গম্ভীর গলায় বলে,
-আমি বিশ্বাস করি হৃদিতা নির্দোষ। আর এটা প্রমাণের সর্বোচ্চ চেষ্টা আমি করবো।

মুমু কপাল কুঁচকে বলে,
-আর যদি না পারো?

– একটা কথা মনে রেখো মুমু আল্লাহর দুনিয়া সত্য চাপা থাকে না। আমি বের করতে না পারলেও কোন না কোন ভাবে সত্য প্রকাশিত হবেই। তবে আমি যদি জানতে পারি এতে তোমার কোন হাত আছে তবে আজ হৃদিতাকে যতটা সহ্য করতে হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি তোমাকে সহ্য করতে হবে বলে দিলাম।

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিজেকে নিরবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নেয় মুমু।
তার এই হাসির অর্থ হলো,
নিরব সে সুযোগ তুমি পাবে না। আর সত্য? সত্য প্রকাশের আগেই আমি নির্ঝরের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে যাবো।

-চলবে?