বেড়ী পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
3697

#বেড়ী পর্বঃ ১০
#লেখায়ঃপ্রজাপতি(Nosrat Monisha)

-আমি ঠিক জানতাম তুই খারাপ। বাড়ির সবাই বললো তাই সব ভুলে তোকে একটা সুযোগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু তারা তো আর জানে না তুই রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে নাগরের সাথে..

-নির্ঝর!
বলে চিৎকার করে উঠে হৃদিতা।

এত বড় অন্যায় করার পরও হৃদিতা চিৎকার করতে পারবে এই ভেবে চমকে যায় নির্ঝর।

-না জেনে শুনে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন। আপনি কি ভুলে যাচ্ছেন আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন?
উনি আদৃতা আপুর স্বামী তারেক ভাইয়া।

এই কথা শুনে আরো রেগে যায় নির্ঝর।
-ও তারমানে এর সাথেই শুয়েছিলি তুই। এর বাচ্চাই তোর পেটে।
তারপর শুরু করে বাংলা গালি।

তারেক নির্ঝরের কথা শুনে অবাক হয়। সে নিজেও আদৃতাকে গালি দিয়েছে। কারণ সে ভিডিওর ব্যাপারটা পুলিশকে জানিয়ে দুর্নাম বাড়াতে চায় নি। কিন্তু সেটা এতো নোংরা ভাষায় ছিলো না। তাই সে প্রতিবাদ করে,
-দেখুন রেগে গেলে মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তই আপনি চুপ করুন। অসভ্যতা বন্ধ করুন।

নির্ঝর খপ করে তারেকের কলার ধরে বলে,
-তুই আমার বউয়ের সাথে শুবি আর আমি চুপ করে থাকবো?

হৃদিতা বহু কষ্টে তারেকের কলার ছাড়িয় বলে,
-আল্লাহর দোহাই আমি বলছি চুপ করুন। আর ভাইয়া আপনি এর মধ্যে আসবেন না। নির্ঝর আপনি নিজের পবিত্র স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে সবার সামনে তামাশা করছেন। নিজের স্ত্রীকে ভরসা করতে শিখুন। কই আমি তো আপনাকে নিয়ে কখনো সন্দেহ করি নি। যখন আপনি নিজের ভাবীর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গাভীর রাতে গল্পে মশগুল থাকেন। আপনারা বাসায় একে অপরের সাথে এমন ভাবে লেগে থাকেন বাইরের যে কেউ দেখলে বলবে আপনারা স্বামী-স্ত্রী।

কথাটা শোনার সাথে সাথে নির্ঝর এত জোরে হৃদিতাকে থাপ্পড় দেয় যে শরীরের ভারসাম্য হারায় আর তারেক তাকে ধরে ফেলে।

নির্ঝরের এটা দেখে আরো রেগে গিয়ে বলে,
-নষ্টা মেয়ে ছেলে। রাস্তা ঘাটে নষ্টামি করিস ঢলাঢলি করসি আবার আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলিস। আর একবার এসব বললে তোকে মেরেই ফেলবো।
বলে হনহনিয়ে সেখানে থেকে চলে যেতে থাকলে হৃদিতা জোরে তাকে ডাক দেয়।
-নির্ঝর আহমেদ।

তারপর হৃদিতা চিৎকার করে বলতে থাকে,
-নিজের সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীর গায়ে সবার সামনে হাত তুললেন।
দুর্বল বলে আপনার এই থাপ্পড়ের জবাব আমি দিতে পারবো না। কিন্তু উপর ওয়ালা বলে যদি কেউ থাকে সে আপনাকে এমন থাপ্পড় দিবে যে মুখ থুবড়ে পড়বেন। তিনি আজ নাহয় কাল সত্যের আয়না আপনাকে দেখাবে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যাবে হৃদিতাকে কোথাও খুঁজে পাবে না। আমি যদি পবিত্র হই আনার হায় আপনার লাগবেই।

নির্ঝর গাড়ির দিকে এগুতে থাকে।

-এই বুঝি তোমার স্বামী?

-না! নির্ঝর আহমেদের মতো পুরুষরা কারো স্বামী হতে পারে না।

তারেক বলে,
-হৃদিতা রিয়েলি সরি আমি ভাবতে পারি নি এমন হবে। তুমি ঠিক আছো?

-কৈ মাছের প্রাণ এতো সহজে মরবো না।

-আমি অনেক লজ্জিত হৃদিতা। শুধু নিজের জন্য না তোমার স্বামীর জন্যও। আমি তো শুধু তোমাকে রিকুয়েষ্ট করতে এসেছিলাম যাতে আদৃতাকে বোঝাও আমার কাছে ফিরে আসে

-তারেক ভাইয়া আমি আগেও বলেছি আবার বলছি ছোটবেলা থেকেই আপু নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়। আপনি ক্ষমা চাইতে থাকুন হয়তো আপু ফিরে যাবে। তবে আমার বোঝানোতে লাভ হলে আমি আপুকে বলবো। আর আমি নিজেও চাই আপনি আর আপু এক হয়ে যান।

-ধন্যবাদ। চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।

-আমি বুঝতে পারছি আমাকো পৌঁছে দেওয়ার বাহানায় আপুকে দেখতে চাইছেন। কিন্তু আপু তো বাসায় নেই।

-অফিসে গেছে বুঝি?

-জানিনা তবে সকাল থেকে উঠে দেখি নি

-সমস্যা নেই তবুও চলো মা-বাবার সাথে দেখা হবে।

-না ভাইয়া আমাি একাই যাবো। এখন থেকে একা চলার অভ্যাস করতে হবে। নাহলে সময়মতো নির্ঝর আহমেদের মতো লোকেদের জবাব দিতে পারবো না।

এদিকে নির্ঝর গাড়িতে ফেরত গেলে মুমু বার বার কি হয়েছে জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু সে চুপ ছিলো।


নির্ঝর বাড়িতে গিয়ে দেখে বাড়ির সবাই গোল টেবিল বৈঠকে বসে আছে। শুধু বাড়ির সবাই না মুমুর বাবা আর আদৃতাও বসে আছে।

আদৃতাকে দেখে নির্ঝর চটে গেলো আর গালি শুরু করলে আদৃতা নির্ঝরকে খুব শান্ত গলায় বলে,
-আমার খুব ইচ্ছা করছে পায়ের জুতা খুলে আপনার আর আপনার মতো কাপুরুষদের গালে ঠাস ঠাস করে বাড়ি দিতে। কিন্তু আমি নেহাতই ভদ্র বাড়ির মেয়ে। ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ করতে চাই না। আমার স্বামীও আমার গায়ে হাত তুলেছে কিন্তু দেড় বছরের সংসার জীবনে একবার তাও ঐ মিথ্যা ভিডিওর জন্য দুটো থাপ্পড়। কিন্তু আপনি দুই মাস সংসার করে ভাবীর শুনে আমার বোনকে অমানুষের মতো পিটিয়েছেন। আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কত বড় জানোয়ার।

-কি বললি ? আমার সাথে এভাবে কথা বলার সাহস তুই কই পাস?
বলে নির্ঝর আদৃতার দিকে এগুতেই নিরব সামনে এসে বলে,
-অনেক ভুল করেছিস এবার চুপ কর।

-ভাইয়া তুমি এর সাপোর্ট করছো?

-হ্যাঁ করছি শুধু আমি না সবাই করছে।


মুমু নির্ঝরের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। পৃথিবীর সবার ঘৃণা সহ্য করতে পারলেও নির্ঝরের চোখে তার জন্য ঘৃণা সে সহ্য করতে পারছে না।তার মুখোশ খুলে গেছে।
কাজটা আদৃতা আর নিরব করেছে।

সারোয়ার এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
তিনি একবার পুত্র বধূকে বলে,
-মামনি তুমি একবার বলো ওরা যা বলছে সব মিথ্যে । তোমার কোন দোষ নেই।

নিরব আর সহ্য করতে পারে না বলে,
-হ্যাঁ বাবা মুমুর কোন দোষ নেই দোষ তোমার আর মুমুর বাবার। তোমরা মুমুর মতের বিরুদ্ধে ওর পায়ে আমার নামের বেড়ী পড়িয়েছো। তাই সে হিংস্র হয়ে গেছে। এতটাই হিংস্র যে আমাকে মারতে চেষ্টা করে। আর দোষ চাপায় সম্পা ভাবীর উপর। মনে আছে আমার বিয়ের এক সপ্তাহ পর আমার ফুডপয়জনিং হয়েছিলো। সবাই ভেবেছিলো সম্পা ভাবীর গাফিলতির জন্য কিন্তু আসলে মুমু খাবারে বিষ মিশিয়েছিলো। এসব আমি আজ ঐ হাসপাতালে গিয়ে জানতে পেরেছি যেখানে হৃদিতাকে চেক-আপের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। ডাক্তার খুব ভীতু পুলিশের দুঘা খেয়ে কথা গরগর করে সব বলে দিয়েছে। মা জানো এরপরও মুমু বার বার আমাকে এমন খাবার খাইয়েছে যাতে আমার এলার্জি আছে। কিন্তু বাবা তার স্নেহে তুমি এতো অন্ধ ছিলে যে ভাবীর উপর সব দোষ চাপিয়ে দিতে। তাই ভাইয়া বাধ্য হয়ে আলাদা হয়ে গেলো। আসলে ভাবীর উপস্থিতিতে সে নির্ঝরের কাছাকাছি যেতে পারছিলো না তাই ভাবীকে প্ল্যান করে এ বাড়ি থেকে আলাদা করেছে। তোমাদেরকে কি বলবো আমিই তো এসব জানতে পারতাম না। নির্ঝরের প্রতি মুমুর আকর্ষণকে সবসময় এড়িয়ে গেছি ভেবেছি সমবয়সী ভালো বন্ধু। আমার সাথে বয়সের পার্থক্য বেশী তাই আমাকে বুঝতে পারে না। কিন্তু সে একদিন আমাকে ঝুঝবে, ভালবাসবে। এটা আমার ভুল। যার খেসারত একটা নিষ্পাপ মেয়েকে দিতে হয়েছে। তবে আমি ভুল শোধরানোর ব্যবস্থা করেছি ওর বাবাকে খবর দিয়ে নিয়ে এসেছি। উনি নিজের মেয়েকে নিয়ে চলে যাবেন। আর আমি দু’এক দিনের মধ্যে ডিভোর্স ফাইল করবো।

এতকিছু শোনার পর সবার উপর প্রভাব ফেললেও মুমুর কোন হেলদোল নেই। সে শুধু নির্ঝরকে দেখে যাচ্ছে। এক পর্যায়ে তার হাত,ধরে বলে,
-আমার কারও পরোয়া নেই। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাসো। ভাল হয়েছে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে এরপর আমরা বিয়ে করে সংসার করবো।

নির্ঝর জোরে চিৎকার করে মেঝেতে বসে যায়। কি করে এতো বড় ভুল করলো সে?নিজের স্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখতে পারে নি। তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আজকে রাস্তার মাঝখানে সবার সামনে।

মুমুকে নির্ঝরের কাছ থেকে টেনে নিয়ে যায় সায়েমা তারপর মুমু বাবার হাতে তার হাত দিয় বলে,
-আপনাকে অনেক সম্মান করি কিন্তু এখন আর সেটা করতে পারছি না। এই ডাইনীটাকে নিয়ে এক্ষুনি বের হয়ে যান।

মুুমুর বাবার মেয়েকে নিয়ে মাথা নিচু করে বের হয়ে যায়।

আদৃতার ফোনে অনেকক্ষণ একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসছে। আজকাল তারেক নম্বর বদলে ফোন করে। তাই সে দেখেও না দেখার ভান করছে। আদৃতা বের হওয়ার আগে নিরবকে বলে,
-এখন চলে যাচ্ছি। আপনার সাহায্যের জন্য সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি চেয়েছিলাম আমার বোন নির্দোষ তা প্রমাণ করতে আমি পেরেছি। ও এখন রাতে শান্তিতে ঘুমুতে পারবে
যা আপনি সাহায্য করছিলেন বলে সম্ভব হয়েছে। নতুন জীবনের শুভকামনা রইলো।

-আপনাকেও ধন্যবাদ আপনি না থাকলে এসব জানতে পারতাম না। সত্যি বলতে এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ হৃদিতার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে জানিনা সে মাফ করবে কি না। তবে ওকে বলবেন তার নিরব ভাই সবসময় ওর পাশে আছে। হৃদিতাকে দেখে রাখবেন।

আবার আদৃতার ফোন বাজে। এবার বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করতেই তার চেহারার রং উড়ে য়ায়। সে শুধু বলে,
-কোন হাসপাতাল?
এরপর ফোন রেখে বলে,
-যদিও বলা উচিত না তাও বলছি কারও আপনাদের কারও ব্লাড গ্রুপ কি ও-নেগেটিভ?

সায়েমা বলে,
-আমার আর নাহিদ ভাইয়ার কিন্তু কেন?

-আপনারা প্লিজ আমার সাথে চলুন। হৃদিতা হাসপাতালে ওর প্রচুর ব্লাড প্রয়োজন।

কথাটা শুনে নির্ঝর পাগলের মতো বলে,
-কি হয়েছে ওর কেন হাসপাতালে?

আদৃতা সোজা নির্ঝরকে এড়িয়ে সায়েমাকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়।
নির্ঝরসহ সবাই পিছনে যায়।


ঘন্টা দুই পার হয়ে যায় ডাক্তার কিছু বলতে পারছে না। একে তো গর্ভবতী তার উপর এক্সিডেন্ট। অনে রক্তপাত হয়েছে তাই বাঁচতে পারে কি না নিশ্চয়তা নাই।
আসলে বাড়ি ফেরার সময় কাঁচা আমের ভর্তা কিনে খাবে বলে একটু তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হচ্ছিলো হৃদিতা। কিন্তু একটা প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা দেয়। কলেজের সহপাঠীরা ওকে চিনতে পারে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার এক বান্ধবীর কাছে আদৃতার নম্বার থাকায় সে কল দেয়।

নির্ঝর হৃদিতার মা-বাবার পায়ে ধরে কান্না করছে। তারা মুমু যড়যন্ত্রের কথা শুনেছে। কিন্তু মেয়ের মৃত প্রায় অবস্থা দেখে কিছুটা পাথর হয়ে গেছে। তাই হৃদিতাকে দেখার অনুমতি দিচ্ছে না।

নাফিসা নিজের ছেলের অবস্থা চোখে দেখতে পারছে না। আর সারোয়ার আহমেদ তো নিজেকে মাফই করতে পারছে না। শুধু ভাবছে এতো বড় ভুল কি করে করলো সে? একটা মেয়েকে বাবার স্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে বিয়ে করিয়ে গোটা সংসার এলোমেলো করে ফেলেছে।

হৃদিতাকে আই.সি.ইউ তে দেওয়া হয়েছে হালকা জ্ঞান ফিরে এসেছে।
আদৃতা তার মাথায় হাত বুলিয়ে কানের কাছে গিয়ে বলে,
-আমার সোনা পাখি সবাই সত্য জেনে গেছে। তুই নির্দোষ তা প্রমাণ হয়েছে। তোর বেবির বাবা নির্ঝর সবাই জেনে গেছে।

হৃদিতা দুর্বল গলায় প্রশ্ন করে,
-আমার বেবিটা ভালো আছে তো আপু?

আদৃতা এই ভয়টাই পাচ্ছিলো। কি বলবে তাকে?
নিজের অশ্রু ধারা চেপে বলে,
-খুব ভালো আছে।

হৃদিতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

কিছুক্ষণ পর আবার বলে,
-নির্ঝর এসেছে?

আদতা অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকিয়ে দেখে আর ভাবে, আল্লাহ কোন মাটি দিয়ে একে বানিয়েছে? কেন এত কিছুর পরও ঐ মানুষটাকে ভালবাসতে হবে?

সে মাথা নাড়িয়ে বলে,
-দেখতে চাস ওকে?

হৃদিতা সম্মতি জানায়।


নির্ঝর হৃদিতার হাত ধরে বলে,
-মাফ করে দাও চাঁদ আর কখনো এমন করবো না। আমি অনেক খারাপ কিন্তু তুমি তো ভালো মাফ করে দাও।

হৃদিতা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। সে অনেক কষ্টে নিঃশ্বাস টেনে বলে,
-আমি আপনাকে মাফ করেছি। আল্লাহ আপনাকে হেদায়েত দিন।

একটু থেমে আবার বলে,
-নির্ঝর সকল বেড়ী খোলার সময় হয়েছে। আপনার ভালবাসার বেড়ী থেকে আজ আমি মুক্ত।

নির্ঝরের চোখের পানি বাঁধ ভাঙছে না। সে কোনরকম বলে,
-আমি তোমাকে মুক্তি দেবো না বুঝতে পেরেছো?

কিন্তু হৃদিতা আর কারও সাথেই কোন কথা বলে না।


হৃদিতা মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে।
আজ তারেককে ডেকে পাঠিয়েছে আদৃতা।
তারেক আদৃতার দিকে তাকিয়ে দেখে এ কয়দিনে বেশ শুকিয়ে গেছে। সে মাফ চাওয়ার মতো করে বলে,
-সব দোষ আমার সেদিন যদি আমি ওকে পৌঁছে দিতাম তবে।

-নাহ তোমার অনেক কিছুতে দোষ আছে কিন্তু এক্ষেত্রে কোন দোষ নেই। জন্ম-মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তোমাকে অন্য কারণ ডেকেছি।

-কি।

আদৃতা ডায়েরির একটা পাতা বের করে তারেককে পড়তে বলে।
-হৃদিতা চাইতো আমি তোমাকে মাফ করে দেই। সত্যি বলতে আমি আমার বোনের কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখি নি। কিন্তু তোমাকে মাফ করাটা অনেক কঠিন। আমি চেষ্টা করবো তবে এতে সময় লাগবে। কিন্তু কতসময় বলতে পারবো না। ছয়মাসও লাগতে পারে আবার ছয় বছরও লাগতে পারে। তুমি কি অপেক্ষা করবে?

-আমার অবিশ্বাস দেখেছো এবার নাহয় বিশ্বাসটা একটু দেখো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। এতে হয়তে জানোয়ার থেকে কিছুটা হলেও মানুষ হতে পারবো।


বছর দুই পর।
হৃদিতার কবরের পর হৃদিতার পরিবার নির্ঝর বা তার পরিবারের কারও কোন খোঁজ নেয় নি। নির্ঝরের পরিবার অবশ্য যোগাযোগ রাখতে চেয়েছিলো, ক্ষমাও চেয়েছিলো। কিন্তু আদৃতার বাবা স্পষ্ট জানিয়েছে, মেয়ে নেই শ্বশুর বাড়িও নেই। আর তাদের বিরক্ত করা হলে তিনি পুলিশকে জানাবেন। তাই দুই পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ।
তবে হৃদিতার কবর জিয়ারতে গেলে মাঝে মধ্যে দুই পরিবারের দেখা হয় সেখানে নির্ঝরের পরিবার কথা বলতে চাইলেও হৃদিতার মা-বাবা কিংবা আদৃতা তাদের এড়িয়ে যায়। তারা কখনো জানতে চায় নি নির্ঝরের কথা। নির্ঝর হয়তো বেঁচে আছে আবার নতুন সংসার করছে, কিংবা অপরাধ বোধ বইতে না পেরে পাগল হয়ে গেছে অথবা মরে গেছে।
তবে আদৃতা মুমুর ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছে আগে তাকে এমনি ছেড়ে দিলেও হৃদিতার মৃত্যুর পর তার উপর কেস করেছে নিরব। প্রথম কয়দিন জেলে থাকলেও বাপের টাকার জোরে জামিন নিয়ে এখন সে বাইরে।

রাতে হৃদিতার ডায়েরিটা আবার পড়ছে আদৃতা,
আমার বাবুসোনা,
-তুই জলদি দুনিয়ায় চলে আয়। তোর মায়ের অনেক কষ্ট। জানিস তোর বাবা নিজের ভালবাসার বেড়ী খুলে আমার পায়ে সন্দেহ আর অবিশ্বাসের বেড়ী পড়িয়ে দিয়েছে। আমি এই বেড়ীর যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না ।

আদৃতা আর এগোতে পারে না।
ডায়েরিটা বন্ধ করে বলে,
-আমার সোনাপাখি বোন আমার কাল তোর আশা পূর্ণ হচ্ছে আমি তারেকের কাছে ফিরছি৷

-(সমাপ্তি)