ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-০৯

0
212

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ৯

মিম তারপর, কিছুক্ষণ……রেষ্ট নিয়ে নিলো।
এরপর, রাত বারোটায় লেগে পরলো নিজের কাজে পুরো বাড়ি পিঠের গন্ধে ম-ম করছে। রেষার শাশুড়ি রান্নাঘরের আশেপাশে ঘুরঘুর কর ছিলো মিম তাকে দেখে রাগী গলায় বলে উঠলো,
– “একটু দেখে শুনে চলাফেরা করুণ। বানিয়ে রাখা পিঠে গুলো পরে নষ্ট হয়ে যাবে।” তখন রাত তিনটা,
হঠাৎ কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ পেয়ে মিম ডাইনিং এরিয়ার ছুটে এসে দেখলো একটা মালাই রোলের প্লেট মেঝেতে পরে খানখান হয়ে আছে। মিম ঝুমা কে দেখেই চিৎকার চেঁচামেচি করে রেষাকে ডাকতে লাগলো।
রেষা এসে শাশুড়ীর পায়ের কাছে মালাইয় রোলের প্লেট টা পরে থাকতে দেখে বললো,
– “মা হয়তো বুঝতে পারেনি বোন। হয়তো বেখেয়ালে পরে গেছে?”
– “হ্যাঁ, তোর শাশুড়ি তো বাচ্চা? কিছু বোঝেনা, চুরি করে খেতে গিয়ে আমার এতো কষ্ট সব মাটি করে দিয়েছে।”
– “বোন আমার কথা শোন?”
– “কি শুনবো? তুই এখুনি আমার এগুলো বানাতে যা যা লাগবে তা এনে দিবি বাজার থেকে।”
– “এতো রাতে এসব কোথায় পাবো?”
– “আমি কি জানি? তোর চোর শাশুড়ি কে বল এখন আমাকে আমার প্রয়োজনীয় সকল জিনিস গুলো আনিয়ে দিতে।
ওনার খেতে ইচ্ছে করলে…….. এসে আমাকে বলতে পারতো চুরি করে খেতকে বলেছে ওনাকে?” হালিমা এগিয়ে এসে বললেন,
– “উনি হয়তো পানি খেতে এসেছিল মা?”
– “তোমাকে কি আমি এখানে ডেকেছি ওই চোর মহিলার হয়ে সাফাই গাইতে? একদম চুপ করে থাক তুমি…..
তোমার বচন কেউ শুনতে চায়নি, ঠিক আছে? তুমি কি যেন বলেছিলে? আমাকে দুঃশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে। আজ উনি সামান্য খাবার চুরি করেছে কাল হয়তোবা ডাকাতি করবে?”
মেয়ের কথা শুনে হালিমা হঠাৎ তাকে চড় মারার জন্য এগিয়ে গেলেন। ইসাত তার হাত টা চেপে ধরে বললো,
– “থামো মা, প্লিজ। অনেক হয়েছে।” দীপ্ত বলে উঠল,
– “চলেই তো যাচ্ছিলো, এতো ন্যাকামো করে ওনাকে এ বাড়িতে রাখতে কে বলেছে মা তোমাকে?”
– “সেটাই,দাবিদাওয়া যা ছিল সব পূরণ করেছ। তবে
এখন কেন এদের সহ্য করছ মা আমরা কেন সহ্য করব এই মহিলাকে?
আর রেষা, একটু ও লজ্জা করে না তাই না? দেখতে পাচ্ছিস, বোন টা সারারাত জেগে কত কষ্ট করছে?”
ফাইজান সাহেব ততক্ষণে সবার চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নিচে চলে এলেন।
প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে তিনি তাকিয়ে রইলেন বড় মেয়ের মুখের দিকে। অতঃপর, তিনি মেঝেতে খাবার পরে থাকতে দেখলেন……..এতক্ষণে, চিৎকার চেঁচামেচির কারণ স্পষ্ট তার কাছে।
তিনি মেয়েকে শান্ত হতে বললেন, সবকিছু এক্সট্রা কিনে রাখায় আর বেশি ঝামেলায় পরতে হয়নি মিম কে। হালিমা মেয়েকে হাতেহাতে এগিয়ে দিতে চাই লেন…….মিম প্রচণ্ড অভিমান থেকেই মা কে বললো,
– “শোনো মা, তুমি আমার কোনো সাহায্য না করলে আমার খুব ভালো লাগবে।”মেয়ের এই একটা কথায় তার বুক টা কেঁপে উঠল। লাবণি শাশুড়ি কে বুঝিয়ে বললো,
– ” চিন্তা করবেন না মা, আমি আছি বোনের সাথে।”
তিনি ঘরে এসে স্বামীর পাশে শুলেন, তবে ঘুম নেই তাদের দু’জনের চোখে।
তখন বেলা ছয়টা মিমের সকল পিঠা বানানো হয়ে গেছে। তার চোখ টা একটু লেগে এলো। পরক্ষণেই, তার ঘুম ভেঙে গেলো এলার্মের শব্দে। ও উঠে ঝটপট তৈরি হ’য়ে গেলো।
হালিমা এসে খাবার নিয়ে সাধাসাধি করতে লাগলেন মেয়েকে। মিম এক গ্লাস পানি খেয়ে। তার বানানো সকল পিঠে নিয়ে ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা হল
যাওয়ার আগে পিঠে উৎসবে যাওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে গেলো সবাইকে। মিম ভার্সিটিতে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই সবাই এসে সকল পিঠা ডিপার্টমেন্টে নিয়ে গেলো। সেজান তাকে বললো,
– “আরেহ বান্ধবী,
তোকে দেখে আজ আমাদের সিনিয়র জুনিয়র ছাড়া ও কম বয়সী স্যারেরা পাগল হয়ে যাবে।” মিম তার কান টা মলে দিলো, সে হাসতে হাসতে বললো,
– “এতদিনে বুঝলাম, এতো টাকাপয়সা থাকার পরে ও ইমান স্যার কেন এখানে গেস্ট লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে?” মিম সঙ্গে সঙ্গে তাকে দৌড়ানি দিল তখন কেউ একজন বলে উঠলো,
– “আরে আরে, আস্তে আস্তে শাড়িতে জড়িয়ে পরে যাবে মেঝেতে।” কথা টা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো মিম। সামনে’ই ইমান দাঁড়িয়ে আছে।
তার চেহারায় সুখের ছাপ স্পষ্ট মিম খেয়াল করে দেখলো, ওর হ্যান্ডপেইন্ডেড শাড়ির সাথে ইমানের পাঞ্জাবির কালার টা মিলে গেছে।
ও কিছু টা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো, তবে ইমান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত তাকে। সে হাসি মুখে মিমের কাছে এগিয়ে এলো মিম এক দৌড়ে ঢুকে গেলো তার ডিপার্টমেন্টের মধ্যে। তখন মিসেস ইশিতা হাসতে লাগলেন, তিন মিম কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
– “আস্তে মা, পরেটরে লেগে যাবে।” তখন ওদের চেয়ার ম্যান স্যার বললেন,
– “মিম আম্মু, আজ তোমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।”
– “হ্যাঁ স্যার, মিম কে আজ সত্যি’ই অনেক সুন্দর দেখতে লাগছে।”
– “আরেহ ইমান যে?”
– “জ্বি স্যার।”
– “অল সেট?”
– “হ্যাঁ, আমাদের বাচ্চারা তৈরি হ’য়ে আছে।” ইশিতা হাসতে হাসতে বললেন,
– “কিন্তু আমাদের মিম যে একাই একশো।
না মানে ও একাই সাত রকমের পিঠা তৈরি করে নিয়ে এসেছে।”
– “রেয়ালি?”
– “জ্বি।”
– “বলছি, দু’টো কি ফাও খাওয়া যাবে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “না স্যার, স্টলে যাবেন। কিনে খাবেন স্টল থেকে।”
– “তুমি এতো কঠোর হচ্ছো কেন?” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “আমি এমনই স্যার। আপনার আর কিছু বলার আছে?” তখন নিরা আর লিরা যারযার পিঠে নিয়ে হাজির। ইমান মিম কে দেখে, চলে গেলো নিজের ডিপার্টমেন্টে….! সেখানে গিয়ে ও সকল স্টুডেন্টদে’র ডেকে পাঠালো।
সে কিছু নির্দেশনা দিলো তাদের উদ্দেশ্যে। বেলা নয় টা’র মধ্যে মিমের সকল প্যাকেজিং শেষ হলো। তারা বাহারি প্লেটে পিঠে সাজিয়ে নিয়ে রাখলো স্টলের মধ্যে। বেলা দশটায়,
অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন হলো।তারপর ডিসি সাহেব,
এমপি মহোদয় ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করতে লাগলেন স্টল গুলোকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সুপার চলে এলো,উপাচার্য উজ্জ্বল চৌধুরী আইন বিভাগে এসে মিমকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “আম্মু তোমাদের এখানে কয় পদের পিঠা আছে?”
মিম হাসিমুখে বললো,
– “প্রায় এিশ পদের স্যার।” হঠাৎ তার পাশ থেকে ইমান জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনাদের এখানে কি কি সিগনেচার আইটেম আছে?” লিরা বললো,
– “মালাই চপ,স্নোবল, শাহি টুকরা, চকলেট মনোহরা
কুনাফা, ক্ষীর পাটিসাপটা, সূর্যমূখি ফুল পিঠা।” ডিসি সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
– “এই আইটেম গুলো কে বানিয়েছে?” সবাই মিমকে দেখিয়ে দিলো। ইমান মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “এখানে বেষ্ট কোন টা হবে?” মিম মুচকি হেসে বললো,
– “আই থিংক, ইউ সুট ট্রাই বোথ আইটেমস। আমি নিশ্চিত, স্বাদ এবং কোয়ালিটি দু’টোই আপনাদের পছন্দ হবে।” ততক্ষণে,
নোয়া সুন্দর করে ছয়টা ওয়ান টাইম প্লেটে পিঠে সাজিয়ে সকলকে টেস্ট করতে দিলো। সকলে’ই খাবার মুখে দিয়ে খুব প্রশংসা করছে।
ইমান মালাই চপ শেষ করে স্নোবল টেস্ট করলো। চকলেট মনোহরা টেস্ট করার পরেও তার মুখে অন্য খাবারের স্বাদ লেগে আছে। সে খেয়াল করে দেখলো অন্যান্য স্টলের প্রেজেন্টেশন থেকে আইন বিভাগের প্রেজেন্টেশন সম্পূর্ণ আলাদা এবং তাদের স্টলে অনেক রকমের ভিন্ন ভিন্ন আইটেম আছে। মিমের সিগনেচার আইটেম ছাড়াও….
ইলমার কেকপুডিং, ডাব পুডিং নিরার নকশি পিঠা, বর্ণমালা পিঠা, বিনুনি পিঠা, জামাই পিঠা আছে এ ছাড়াও আরও অনেক পিঠা। হয়তো গুণে শেষ করা যাবেনা এতো জানাঅজানা পিঠার নাম উঠে এসেছে এই উৎসবে।
ইমান তখনও নিজের খাওয়া পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি৷ মিম জিজ্ঞেস করলো,
– “স্যার, একটু কুনাফা দেই আপনাকে?”ইমান মুচকি হেসে বললো,
– ” শিওর, বাই দ্যা ওয়ে, কেউ আসবে না তোমার বাসা থেকে?” তখন হঠাৎ,
ফাইজান সাহেব এসে হাজির সাথে বাকি রাও আছে
তিনি এসে মেয়ের কাছে পিঠের চাইলেন। ইমান মিটি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “আঙ্কেল? এতো করুণ অবস্থা আপনার? শেষমেশ মেয়ের স্টলে এসে পিঠে কিনে খেতে হচ্ছে?” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “বাড়িতে বসে পেট পুরে খেয়েছি বাবা।
এখন আবার কিনে খেতে এসেছি মেয়ের স্টল থেকে
মেয়েটা এতো কষ্ট করেছে আমার সকালে আবার কিছু না মুখে দিয়ে এখানে চলে এসেছে।”
কথাটা শুনে কিছুটা রেগে গেলো ইমান। সে মিমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– “পিঠের কোয়ালিটি অনুসারে কস্টিং টা অনেক কম রাখা হয়েছে।” মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “এটা আমার স্ট্রাটেজি স্যার, তবে শুভকামনা রইল আপনাদের জন্যে।”
ইমান তার দিকে তাকিয়ে রইলো। সে পকেট থেকে কিছু চকলেট বের করে মিমকে দিয়ে বললো,
– “খেয়েনিন খালি পেটে থাকলে অসুবিধে হবে শরীর খারাপ লাগবে।”
– “আপনার তাতে কি?”
– “আমার অনেক কিছু মিস। আমার অনেক কিছু যায়-আসে।” বাবার সামনে দাঁড়িয়ে এমন কথা শুনে মিম বিব্রত বোধ করতে লাগলো। ফাইজান সাহেব পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বললো,
– “কোনো ব্যাপার না মা, ইমান জাস্ট তোমার সাথে একটু মজা করছে।”
– “মজা?”
– “হ্যাঁ, ওই দেখ….. তোমার আম্মু, ঝুমা আন্টি, আপু, ভাবি আর নয়ন এসে গেছে।” মিম তাদের দেখে ভীষণ খুশি হলো, দীপ্ত বোনকে জিজ্ঞেস করলো,
– “বলুন ম্যাডাম, আমাদের কি করতে হবে?” মিম হাসতে হাসতে বললো,
– “তেমন কিছুই না ভাইয়া তুমি শুধু বলো কি খাবে?”
হালিমা বললেন,
– “বাসায় পার্সেল দিয়ে দাও মা৷ সকল পদের পিঠে থেকে দশ পিছ পিছ করে দেবে।”
ইমান মিমকে জিজ্ঞেস করলো,
– “ডিসকাউন্ট কি হবে না ম্যাম?”
– “না স্যার,সব পিঠে সেল হয়ে যাওয়ার পর বিবেচনা করে দেখা হবে।”ইমান তার কথা শুনে হাসতে হাসতে নিজের ডিপার্টমেন্টে চলে এলো।
এসে দেখলো তাদের এখানেও বেশ ভালো কেনাবেচা
হচ্ছে।
ইমান সেখানে কিছুক্ষণ থেকে নিজের ডিপার্টমেন্টে ফিরে গেলো। নিজের কেবিনে বেশ কয়েক পদের পিঠা দেখে পিয়ন কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,
– “এ গুলো কে পাঠিয়েছে?” মনসুর বললেন,
– “মিম আপা স্যার,
আপা সব সময় স্যার ম্যাডামদের জন্য আলাদা এক টা আইটেম রাখেন পিঠা উৎসবে।”
নামটা শুনেই ইমানের মন টা যেন পুলকিত হয়ে উঠল আজমির সাহেব ছেলেকে ফোন করে বললেন,
– “বাবা, আমরা কিন্তু আসছি পিঠা উৎসবে। দয়া করে তুমি আগেভাগে ভালো ভালো পিঠে কিনে রেখ নয়তো তোমার মা বোন আজ বাড়িতে ঢুকতে দেবেন না তোমাকে।”

চলবে,,,