ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-১৭+১৮

0
287

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৭

মিম চুপচাপ ইমানের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। সে হয়তো স্বামীর মনের কথা গুলো এতক্ষণে বুঝে গেছে।
ও কি ভেবে ইমানকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
– “আপনি আমাকে পছন্দ করেন কেন?” ইমান ওর প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে ব্যঙ্গ করে বলে উঠলো।
– “হতে পারে, বাবার অনেক টাকা-পয়সা দেখে?” মিম মৃদু হেসে বললো,
– “আপনার এই এক্সকিউজ গ্রহণ যোগ্য না৷ কারণ আপনার অর্জিত টাকা-পয়সা এবং ধন-দৌলতের পরিমাণ অনেক বেশি আমার বাবার থেকে।
তাহলে, তাহলে এর পেছনে আসল কারণ টা কি? খান সাহেব?”
– “খান সাহেবের এখন একটাই উত্তর বেগম জান সে আপনাকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে।”
– “কিন্তু কেন?”
– “আশ্চর্য…! কি কেন? এই কেন’র কি কোন উওর আছে? ভালোবাসি তো বাসি। কোনো কারণ ছাড়া’ই তুমি মিশে আছো আমার পরমাত্মার সাথে।
হ্যাঁ, শারীরিক চাহিদা আছে। তবে মানুষিক ভাবে ও আমি তোমার প্রতি অনেক দূর্বল আর আমি কখনো চাই না তোমার প্রতি আমার এই সকল দূর্বলতা গুলো কাটিয়ে উঠতে।” মিম তখন দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “যদি আমি ম’রে যাই?”
– “তাহলে আর কি? সুন্দরী একটা মেয়ে দেখে বিয়ে করে নেবো, তবে…।”
– “আচ্ছা, আমি অনুমতি দিলাম।”
– “কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে।”
– “এই যেমন?”
– “তাকে ও ঠিক তোমার মতোই সুন্দরী দেখতে হতে হবে। তার মনটা হবে তোমার মতোন পরিষ্কার। ঠিক তোমার মতো সহজ-সরল দেখতে হতে হবে তাকে।” মিম তার কথা শুনে হাসতে বললো বলে উঠলো,
– “কিন্তু, আমার যে কোনো জমজ বোন নেই।”
– “আমি কিছু হতে দেবো না তোমাকে।” মিম তার মাথায় হাত বুলোতে শুরু করলো। ইমান হঠাৎ করে’ই উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে…………
বেশ কিছুক্ষণ, দু’জনে চুপ করে রইলো৷ ইমান তার গালে চুমু খেতেই সে বলে উঠলো।
– “দরজা খোলা আছে।” ইমান উঠে গিয়ে সেটা লক করে আসলো। মিম ডান পাশ কাত হয়ে শুতেই ইমান গিয়ে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
সে তখনো বেশ চুপচাপ, ইমান এটা-সেটা নিয়ে গল্প করে বেশ ভাব জমানোর চেষ্টা করছে তার এক মাত্র বউয়ের সাথে। মিম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। ইমান আরও করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। মিম তখন বেশ লজ্জা পেতে লাগলো। ইমান কিছু টা এগিয়ে এসে চুমু খেতে লাগলো বউয়ের ঠোঁটে। মিম দু’ই হাতে স্বামীর গাল আঁকড়ে ধরলো৷
প্রথমে, সে তাকে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পর ক্ষণে পেরে ওঠেনি তার বলিষ্ঠ বাহুডোর থেকে বেড়িয়ে আসতে। হঠাৎ করেই কেউ একজন তাদের ঘরের দরজায় কড়া নাড়লো….
আজমির সাহেবের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ইমান বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পরলো সাথেসাথে। মিম খুবই দ্রুত শাড়ির আঁচল টেনে ঠিক করে নিলো। ইমান গিয়ে দরজা খুলে আজমির সাহেবের কাছে হাসি মুখে জিহাদ করলো,
– “বাবা, তোমার কিছু লাগবে?” তিনি মুচকি হেসে বললেন,
– “না বাবা। জোহান ওরা এসে আমায় বললো, তুমি না কি ভুলে গেছো ওদের কে?”
– “বিষয়টি একদম’ই তা না, বাবা। আর তাছাড়া তুমি খুব ভালো করে’ই জানো ওদের তিল কে তাল বানানোর স্বভাব আছে।
আমার নতুন বিয়ে হয়েছে। আমি কি আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রীকে সময় দেবো না?
একটু ওর সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবো না? মেয়ে টা আমায় কি ভাববে?
দেখ বাবা, ওরা আজ আছে কাল নেই৷ যাঁরা আমার দুঃখের সময়ে পাশে ছিল না, তাঁরা আমার সুখের সময়ে পাশে না থাকলেও চলবে। আর তাছাড়া, এই মেয়েটি নিজের এতদিনের কম্ফোর্টেবল জোন ছেড়ে নির্দ্বিধায় আমার ওপরে ভরসা করে আমার দু’ হাত হাত ধরে এ বাড়িতে চলে এসেছে। তাহলে আমি কেন পারবোনা তার সুখের কথা ভেবে, তার শান্তির কথা ভেবে একটুখানি সেকরিফাইজ করতে? কি হলো? বলো? চুপ করে আছো কেন?
আমার কথায় কি কোনো ভুল আছে?” তিনি মিটি মিটি হেসে বললেন,
– “না বাবা, সে যাই হোক। আমি কিছু একটা বুঝিয়ে বলে দেবো ওদেরকে।” মিম তখন এগিয়ে এসে বলল
– “কি ব্যাপার?
বাবাকে বসতে না বলে আপনি এখনো দরজায় দাঁড় করিয়ে গল্প করছেন কেন তার সাথে?”তিনি বললেন,
– “কোনো ব্যাপার না মা।
আমি ইচ্ছে করেই রুমে আসিনি কিছু কাজে এসে- ছিলাম তোমার সাহেবের কাছে। তোমরা গল্প যেমন বসে গল্প করছিলে গল্প করো। খামখা আমার জন্য তোমাদের সুন্দর সময়টুকু নষ্ট হচ্ছে।”
– “তুমি এভাবে বলছ কেন বাবা? ঘরে এসে বসে গল্প করো তোমার ছেলের সাথে।” আজমির সাহেব ওর কথা শুনে মৃদু হাসলেন। তখন এমা এসে নাস্তা করার জন্য নিচে নিয়ে এলেন তাঁর পুএ সহ পুরবধূকে। তিনি মিমকে বিভিন্ন নাস্তা নিয়ে সাধতে শুরু করলেন। মিম বললো,
– “বিশ্বাস করো মা, এখন আমার একটু ও খিদে নেই বরং জোর করে খাবার খেলে শরীর খারাপ করবে।” সঙ্গে সঙ্গে আমেনা বলে উঠলেন,
– “এ কেমন মেয়েকে শেষমেশ বাড়ির বউ করে নিয়ে এলে বড় আপা যে কি না এক চুল ও দাম দেয় না তোমাকে?”
– “খালামণি, তুমি একটু বেশি বলে ফেললেনা? ওর খেতে ইচ্ছে না করলে কি এখন জোর করে খাবে?
আর শোনো,
আমার মা তোমাদের মতো ন্যারো মাইন্ডের নয়। মিম না খেতে পারলে আমার মা কিছু’ই মনে করবেন না তাতে।”
ছেলের কথা শুনে এমা হাসতে হাসতে বলে উঠলেন
– “তুমি একদম ঠিক বলেছ, বাবা।
আমি না হয় খাবার তুলে রাখবো ওর যখন ইচ্ছে হবে তখন না হ’য় খেয়ে নেবে।”
– “তুমি আমাকে নিয়ে অহেতুক দুঃশ্চিতা করছ মা। আমায় নিয়ে এতো রাজ্যে’র টেনশন করতে হবে না তোমাকে। আর হ্যাঁ, কাল থেকে আমিও তোমায় সব কাজে সাহায্য করার চেষ্টা করবো।
তুমি কিন্তু না করতে পারবেনা আমাকে।” এমা এবার পুএবধূকে নিজের বুকে বেশ শুক্ত করে’ই জড়িয়ে ধরলেন। তাকে আশ্বস্ত করে বললেন,
– “তোমাকে এইসব নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। এই বাড়িতে৷ কাজ করা’র জন্য অনেক লোক আছে। তবুও….. তুমি যদি ভালোমন্দ কোনো খাবার বানাতে চাও। না হয় তোমার সাহেবের জন্য বানাবে। খেতে ভীষণ ভালোবাসেন তিনি।
আর তাছাড়া বিয়ের আগে’ই বেশ কয়েক বার সে তোমার হাতের রান্নার প্রশংসা করেছে। আর আমার মনে হয়, যে মানুষের হাতে বানানো পিঠা খেতে এতো মজার তার হাতে ‘র রান্নাও খেতে অসম্ভব সুস্বাদু হবে।
মিম শাশুড়ির কথা শুনে মিটিমিটি হাসলো৷ মনেমনে সে ভেবে নিলো কাল সকালে সে বাড়ির সবাইকে চমকে দেবে। তখন সকাল সাতটা,
সে বিছানা ছেড়ে ওঠার চেষ্টা করতেই ইমান শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
মিম কোনো মতে ধস্তাধস্তি করতে করতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর, ফরজ গোসল শেষ করে নামাজ পড়ে ছুটলো সকলের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করতে। বেলা তখন প্রায় সাড়ে নয়টা,
এমা ঘুম থেকে উঠে রান্না ঘরে এসে চমকে গেলেন তার পুরবধূকে চিন্তিত মুখে দেখে। তিনি এসে মিমের পাশে দাঁড়ালেন………….। মিম মুখ কালো করে বলে উঠলো,
– “দেখ না মা,কত কষ্ট করে সকলের জন্য এতোকিছু
রান্না করলাম আর সব কিছু কিভাবে যেন নোনতা হয়ে গেছে?”
তিনি পুএবধূর কথায় কিছুটা চিন্তিত হ’য়ে পরলেন। পরক্ষণেই মুচকি হেসে বললেন,
– “চিন্তা করো না মা। কিছু হবে না, আমি তো আছি তোমার সাথে।”
– “একটু পরেই সকলে খাবার টেবিলে চলে আসবে মা।” তিনি মিমে’র চোখে’র জল মুছে দিতে দিতে বললেন,
– “বোকা মেয়ে। মা আছেনা? ওদের আসতে আসতে আমার ট্রিকস কাজে লেগে যাবে।”
মিম বিষ্ময়কর চাওনি দিয়ে তার শাশুড়ির মুখ পানে তাকিয়ে রইলো। তিনি আবারও চোখে’র জল মুছে দিতে দিতে আশ্বস্ত করলেন পুএবধূকে।
সকাল দশটা, সকলে মিলে এক সঙ্গে খাবার টেবিলে খেতে বসেছে। টেবিলে, হরেক রকমের খাবার দেখে সকলেই বেশ অবাক। আজমির সাহেব হাসি মুখে এমা কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “এতো এতো সব মজার মজার রান্নাকে করেছে?” তিনি ইশারা করে মিমকে দেখিয়ে দিলেন।
আজমির সাহেব লাউশাকের ঝোল তরকারি দিয়ে ভাত মাখিয়ে খেতে খেতে বললেন,
– “বাহ……! মা লাউশাকের এই ঝোল তরকারি দিয়ে রান্নাটা দারুণ দারুণ খেতে হয়েছে।” ইমান হাসি মুখে বললো,
– “আলু দিয়ে করল্লা ভাজির মধ্যে চিংড়ি দেওয়ার আইডিয়া টা বেস্ট ছিলো। আমার করল্লা ভাজি আর কাতলা মাছের কালিয়া টা খেতে দারুণ লাগছে।”
– ভাবি, আপনার হাতের রান্না সত্যি’ই অমৃত। বিয়ের আগে কতবার রান্না করে খাইয়েছেন আমাদের ভাই কে?” ইমান মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,
– “অনেক বার, জোহান।
আসলে ‘নয়ন’ বেশ কয়েকবার তোদে’র ভাবির রান্না করা খাবার এনে খাইয়েছে আমাকে।” মিম চমকে তার দিকে তাকিয়ে রইলো তখন রান্না ঘরের কাহিনি এমা খুলে বললেন সকলের কাছে। ইমান ভ্রু কুঁচকে নিজের খালা আর ইস্পার দিকে তাকিয়ে রইলো, সে তাদের উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “আজকের পর থেকে আর কেউ আমার বউয়ের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তার কপালে দূর্ভোগ আছে।
সকলে এখনো অব্ধি আমার ভালো রূপ টা দেখেছে। এরপর কিছু হলে সে আমার আসল রূপ টাই দেখবে
……..।” মিম তখন ইমানকে থামিয়ে দিলো। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলো,
– “আর একটু তরকারি দেবো আপনাকে?” ইমান বউয়ের হাত চেপে ধরে বললো,
– “তুমি আমার সাথে খেতে বসো লক্ষীটি। স্বামীর পরে বউ খেতে বসবে এমন কোনো নিয়ম নেই এ বাড়িতে।
কখনো খিদে পেটে, আমার জন্য অপেক্ষা করবে না তুমি না খেয়ে থাকলে আমার সবথেকে বেশি কষ্ট হবে।”

চলবে,,,

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৮

– “হুমম, বুঝলাম।
কিন্তু, মা যে এখনো না খেয়ে আছে?
তিনি এখনো এক গ্লাস পানি ও খাননি। তাহলে আমি কি করে খাবার তুলি মুখে?” এমা এগিয়ে এসে তাকে ছেলের পাশে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
– “এটা কেমন কথা মা? আমি খাইনি বলে তুমি ও না খেয়ে থাকবে?
মা হিসেবে আমি মোটেও এইসবের পক্ষে না। আমার সন্তানেরা পেট পুরে না খেলে তোমার কি মনে হ’য় মা আমার গলা থেকে এই সকল ভালো মন্দ খাবার নামবে?”
– “তাহলে তুমি ও আমাদের সাথে খেতে বসোনা মা।”
এমা হাসতে হাসতে বললেন,
– “আমার খাবার প্লেট বাড়াই আছে।” মিম চমকে তাকিয়ে রইলো তিনি পুএবধূর মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “তোমার বাবা এসে থেকে’ই সবার আগে আমার জন্য খাবারের প্লেটটা বেড়ে রেখেছে।” মিম শাশুড়ির কথা শুনে মুচকি হাসলো। আজমির সাহেব হাসিমুখে বললেন,
– “আজ অনেক দিন পর, টেবিলের ওপরে এতো রকমের খাবার দেখে আমার সত্যি বলতে মায়ের কথা খুব মনে পরছে।
মা সব সময় সকলের পছন্দের খাবার দিয়ে টেবিল সাজিয়ে রাখতেন আজ, বারবার করে আমার মায়ের মুখ টা খুব মনে পরছে।” মিম শশুরের কথা শুনে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “তাহলে আমাকেই ভালো করে দেখে নাও। তোমার মা তোমার সামনেই বসে আছে।” তিনি তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “আসলেই, তো….! আমার মা তো আমার সামনেই বসে আছে।”
– “হুমম, তাহলে এতো কিসের দুঃখ তোমার?”
– “তুমি কেন ছয়মাস দেরি করে, তারপর। চলে এলে এ বাড়িতে?”
– “কি জানি? আল্লাহ তায়া’লার হুকুম ছাড়া গাছের একটা পাতাও নড়ে না।
সেখানে আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ কি করে হেঁটে চলে আসতাম তোমাদের কাছে?”
– “সেটাও, ঠিক। কিন্তু, আমার এই আক্ষেপ টা সারা জীবনের জন্য থেকে যাবে।”
– “আমি দুঃখিত, বাবা। তোমার জন্য দুধের ফিরনী করে ছিলাম সুগার ফ্রী। এখন দেবো? খাবে?” তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “কেন নয়? মা রেঁধেছে বলে কথা। আমার সকল খাবার খেতে খুব ভালো লেগেছে।” মিম আলাদা একটা একটা বাটিতে ফিরনী তুলতে তুলতে বললো
– “আজ আমি দু’টো নতুন জিনিস শিখলাম মায়ের কাছ থেকে। এর আগে জানতাম না, যে খাবারে নুন বেশি পরে গেলে ঝটপট একটা আলু ধুয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে রান্নায় দিয়ে দিলে।
এই বাড়তি আলু অতিরিক্ত নুন শুষে নেয় এবং নুনটা ব্যালেন্স হ’য়ে যায় পারফেক্ট ভাবে। আর এছাড়াও তরকারিতে নুন বেশি হয়ে গেলে ছোট-ছোট আটা বা ময়দার বল তৈরি করে রান্নায় দিয়ে দেওয়া যায়। যে বলগুলো অতিরিক্ত নুন শুষে নেবে।” তখন ইস্পা মিম কে উদ্দেশ্য করে খোঁচা মে’রে বলে উঠলো,
– “ভাবি, তুমি যে একাই সবজান্তা নও এটা জেনে আমার খুব ভালো লাগছে।” ইমান তখন হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুই নিজে কি সবজান্তা? ইস্পা? তোর নিজের কি আমার বউয়ের মতো সত্যি স্বীকার করার মতোন সৎ সাহস আছে? মনে আছে…
তুই এক বার অন-লাইন থেকে পিঠে অর্ডার করে ছিলি আর আমাদের বলেছিলি,তুই নিজে সেই পিঠে গুলো বানিয়েছিস নিজের হাতে।”
– “দেখ, সেসব পুরোনো কথা ইমান ভাই।”
– “তবুও তুই মিথ্যে কথা বলেছিলি আমাদের কাছে। আর হ্যাঁ, নিজে খোঁচা মা’রা কথাবার্তা সহ্য করতে না পারলে অন্যকে কখনো’ই খোঁচা মা’রতে যাবি না। ঠিক আছে?
তাহলে, নিজে সমস্যায় জর্জরিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আবারও কেঁচো খুড়তে কেউটে বেড়িয়ে পরার সম্ভাবনা আছে।” মিম স্বামীর কথা শুনে হাসতে বলল
– “হয়েছে থাক।” ইমান বললো,
– “কেন থাকবে? ওর জায়গা টা আমি জাস্ট ভালো করে দেখিয়ে দিলাম ওকে।
দেখ, তুমি ওর সমবয়সী হতে পারো। কিন্তু, সম্পর্কে তুমি অনেক বড় ওর থেকে। কাজেই, সে যেন নিজের সম্মান নিজে’ই রাখে। না হলে, মানুষের এতো ঠেকা পরে নাই যে সে মাথায় তুলে নাচবে ওকে। এখন তো মনে হচ্ছে তোমার সকল রান্নায় লবণ মেলানো এই দু ‘ই মা মেয়ের কাজ।
অযথাই, এখন এখানে বসে তোমাকে সকালের হাসি ‘র খোঁড়াক বানানোর চেষ্টা করছে।” ইমানের কথা শুনে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন আমেনা। মিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তখন ইমান মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো বউকে।
মিম চুপচাপ সোনামুখ করে স্বামীর হাতে খেয়ে নিলো ইমান বললো,
– “ঝটপট তৈরি হ’য়ে এসো। আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ভার্সিটিতে দোয়া, মহফিল এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।”
– “আমি ও যাবো?”
– “হুমম, কেন নয়? আমার স্ত্রী হিসেবে আজ সেখানে তোমাকেও ইনভাইট করা হ’য়েছে।”
মিম ইমানের কথা শুনে লজ্জা পেলো বেশ। যদিও সে তার ঘরে ফিরে এসে তৈরি হয়ে গেছে পনেরো মিনিট এর মধ্যে।
এমা গিয়ে পুএবধূকে নিজের মতো করে সাজিয়ে দিলেন। মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “মা তুমি বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে বেশি লবন দিয়ে ছিলাম তরকারিতে?”
– “ছিঃ মা, কখনো’ই না। আমি জানি, তুমি কখনোই চাইবে না নিজের সংসারে অশান্তি ডেকে আনতে। বরং আমি আজ ভীষণ খুশি হয়েছি এই ঘর সংসার এখন তোমাকেই সামলে রাখতে হবে।
কিন্তু, এখন সদ্য বিয়ে হয়েছে তোমার। স্বামীকে নিয়ে রঙঢঙ করো। রান্না করার জন্য, সংসার সামলানোর জন্য অনেক সময় পাবে। সারা জীবন পরে আছে।” সে যেন শাশুড়ি কথায় ভরসা পেলো। ইমান স্টাডি রুম থেকে ফিরে এসে বউকে আদুরে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
– “কি গো? কত দূর? তোমার সাজগোছ কমপ্লিট হয়েছে?” মিন এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো,
– “হুমম, তা বললেন না তো আমায় দেখতে কেমন লাগছে?”
ইমান এগিয়ে গিয়ে বউয়ের কপালে চুমু খেলো তাকে জড়িয়ে ধরে, কিছু মিরর-ফি তুলে বললো,
– “চলো, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।” অতঃপর, তারা সঠিক সময় মতো ভার্সিটিতে পৌঁছে গেলো। মিমের সহপাঠীরা অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। মিম কিছুটা বিব্রত বোধ করতে লাগলো। ইমান সেটা বুঝতে পেরে বললো,
– “কোনো ব্যাপার না। আমি আছি, তোমার সাথে।” তারপর সে খুব শক্ত করে বউয়ের হাত চেপে ধরলো মিম একটু ইতস্তত বোধ করতে করতে বললো,
– “আমার এখানে কেন যেন খুব আন-কম্ফোর্টেবল ফিল হচ্ছে?”
ইমান তার মাথা টা নিজের কাঁধের ওপর রাখলো।
মিম গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো ওভাবে। দোয়া মহফিল এবং আলোচনা সভা শেষে ইমান মিমকে নিয়ে রওনা হলো। মিমের যখন চোখ খুললো সে বেশ ভালো করেই বুঝে গেলো। ইমান তাকে তার বাবার বাসায় নিয়ে এসেছে। সে ধড়ফড় করে বিছানা ছেড়ে উঠে বসার চেষ্টা করলো……….। পরক্ষণেই, সে বাঁধা প্রাপ্ত হ’য়ে খেয়াল করে দেখলো।
ইমান তার বুকের ওপরে মাথা রেখে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সে কিছু এক টা ভেবে ভদ্রলোকে
‘র মাথায় হাত বুলোতে শুরু করলো। কেমন যেন তার আজ মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে? ইমানের ওপরে রাগ ও হচ্ছে আবার তার এ বাড়িতে এসে বেশ ভালো ও লাগছে।
কি অদ্ভুত ব্যাপার? তার ঘর টা ঠিক আগের মতোই পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখা আছে।
তার একটা জিনিস ও এদিক ওদিক হয়নি। জায়গার জিনিস জায়গায় পরে আছে। হঠাৎ ইমান একটু নড়ে চড়ে বসলো। বউয়ের গালে চুমু খেতেই মিম তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি এখানে নিয়ে এলেন কেন আমাকে?”
– “কেন নিয়ে আসবো না, বলো? বাবা-মা দু’জনেই
তোমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে আর তুমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছ কিন্তু সেটা প্রকাশ করতে চাইছ না কারো কাছে।” মিম তার দিকে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকিয়ে রইলো
সে বললো,
– “দয়া করে ছাড়ুন,আমি এখন উঠবো নামাজ কাজা হ’য়ে যাচ্ছে।” সে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “ফরজ গোসল করবো, চলো।” মিম চমকে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি কি খাইয়ে ছিলেন আমাকে?” ইমান মিটি মিটি হেসে বললো,
– “Disopan 0.5 ডক্টর আহমাতুল্লাহ দুশ্চিন্তা এবং ইনসোমনিয়ার জন্য সাজেস্ট করেছিলেন আমাকে। আমি তোমার বিরহে ইনসোমনিয়ার রুগী হয়ে গিয়ে ছিলাম অনিদ্রা তার নিত্য রাতের সঙ্গী করে ফেলে ছিল আমাকে।
যাগগে, বাদদেও সেসব। ফরজ গোসল করবো চলো এর আগে বাবা-মা এসে বেশ কয়েকবার ডেকে গেছে আমাকে তোমাকে।”মিম তার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে বললো,
– “দেখুন, আমি চাই না আপনার সাথে ওয়াশরুমে যেতে।” ইমান হাসতে হাসতে তাকে টেনে নিয়ে হঠাৎ বাথরুমে ঢুকে পরলো। শাওয়ার ছেড়ে দিতে’ই মিম কাক ভেজা ভিজে জুবুথুবু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো এক পাশে। ইমান হাসতে হাসতে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– “স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করা খুব, খুবই পূর্ণ্যের কাজ। শুধু শুধু লজ্জা পেলো হবে?”
মিম নিজের এলোমেলো শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বলল,
– “মন চায় ওয়ালের সাথে বাড়ি মে’রে আপনার মাথা টা ফা*টিয়ে দেই।”সে হাসতে হাসতে বউকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “দেও, আমি বাঁধা দিবো না তোমাকে।” মিম তার দিকে চোখ নাক মুখ শক্ত করে তাকিয়ে রইলো। সে তার আঁখি যুগল নিক্ষেপ করলো স্ত্রীয়ে’র ললাটে। চোখে চোখ পরত-ই মিম চোখ সরিয়ে নিলো। ইমান মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো তার লাজরাঙা মুখ খানা দেখে। বেশকিছু ক্ষণ পর,
তারা দু’জনেই ফ্রেশ হয়ে চলে এলো। নামাজ পড়া শেষে ইমান নিচে আসতেই সকলে গল্পে মেতে উঠলো তার সাথে। মিম এসে ইমানের পাশে বসলো, নয়ন ইমান কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “ভাইয়া,
তুমি এমন ভাবে আপুর দিকে তাকিয়ে আছো যেন আজ প্রথম দেখছ নিজের বিয়ে করা বউ কে?”ইমান মৃদু হেসে বললো,
– “প্রথম দেখছি না তা ঠিক। তবে তোমার আপুকে সব ধরনের পোশাকেই একদম এক টা পিচ্চি বাচ্চা দেখতে লাগে আমার কাছে।” ইমানে’র কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই, সে একটু থেমে আবারও বলতে লাগলো,
– “অবশ্য বাচ্চা কে তো বাচ্চাই দেখতে লাগবে।” ওর কথায়, একমত হলেন ফাইজান সাহেব। তিনি মেয়ের মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “ও বোধহয় সারাজীবন,পিচ্চি বাচ্চা হ’য়েই থাকবে
….। তবুও আমি আমার কন্যা কে ভীষণ ভালোবাসি আর আমি জানি, বাবা। তুমি সারাজীবন নিজের মত করে আগলে রাখবে ওকে।”
– “নিঃসন্দেহে,বাবা। আপনি আমায় ভরসা না করলে হয়তো একাই জীবন টা কাটিয়ে দিতো আমাকে।”
মিম তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
– “কিন্তু আপনি যে এখন আর একা নন, আমি আছি আপনার সাথে।” ইমান তার হাতে হাত রেখে বললো,
– “তুমি’ই আমার ‘ব্যক্তিগত সুখ’ খুব ভালোবাসি প্রিয়।”
মিম লজ্জা পেয়ে দ্রুত চলে গেলো সেখানে থেকে।”

চলবে,,,