ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
402

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
অন্তিম পর্ব- ২০

সাত সকালে বউকে খোশ-মেজাজে দেখে ইমান বললো,
– “আজ নয়নকে দেখতে আসছে তুমি কি যাবে না ও বাড়িতে?”
– “আপনার যেতে হলে জান, অযথা নাটক করতে আসবেন না আমার কাছে।” সে বলল,
– “তুমি ওর মেঝো বোন।”
– “বললাম, তো। আপনার যেতে ইচ্ছে হলে জান। আমি যাবো না ও বাড়িতে।” বউয়ের ধমক খেয়ে এক দম ঠান্ডা হয়ে গেলো ইমান। ইমান কে সকাল সকাল বাড়িতে দেখে সকলেই বেশ খুশি হয়েছে। কিন্তু, মিম তার সাথে আসেনি শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো সবা’ র। নয়ন ইমানে’র কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “ভাইয়া, আপু কি আসবে না আমার বিয়েতে?”
ওর মলিন মুখ টা দেখে ইমান বললো,
– “আমি ওকে নিয়ে আসার যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপু।” নয়ন নিজেকে সামলে রাখতে না পেরে কেঁদে ফেললো সাথে সাথে। দু’ই ফ্যাম-লির সকলে মিলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেললো।
তবে ফাইজান সাহেব তিনি কোনো আগ্রহ প্রকাশ করলেন না এসবে। পরেরদিন, তিনি দীপ্ত কে সঙ্গে নিয়ে ছোটো মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে মেঝো মেয়ের শশুরবাড়িতে চলে এলেন। এসেই সকল কথা বার্তা শেষ করে দেখা করার জন্য অস্থির হ’য়ে উঠলেন মেয়ের সাথে। তখন এমা হাসিমুখে বললেন।
– “ও এখন বাড়িতে নেই বেয়াই, একটু আগেই তুর্ণর সাথে ঘুরতে বেড়িয়েছে।” ইমান তাকে আশ্বস্ত করে বললো,
– “আমি ওকে ফোন করে এখুনি ডেকে নিচ্ছি,বাবা।”
– “আচ্ছা, বোনকে বলো ভাই (ইসাত) ওর সাথে দেখা করতে এসেছে।” ইমান ও তৎক্ষনাৎ বউকে ফোন করে দীপ্তর শেখানো বুলি আউড়ে দিলো। বেশকিছু ক্ষণ পর,
মিম এবং তুর্ণ ইসাতকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এলো বাড়ি তে…..এবার, ইমানের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পরলো সে আবারও, বউয়ে’র কাছে মিথ্যে-বাদী প্রমাণিত হওয়ায় পর থেকে খুব চিন্তিত হয়ে পরেছে। তবে মিম তাদের সাথে কোনো কথা বলেনি।
শুধুমাএ, কুশলাদি বিনিময় করে ফিরে এলো নিজের কক্ষে। দেখতে দেখতে,নয়নের বিয়ের দিন চলে এলো ইমান সেখানে উপস্থিত থাকলেও মিম যায়নি বোনের বিয়েতে আর এই নিয়ে……. সকল আত্মীয়-স্বজনেরা কানাঘুষো শুরু করলো।
বিয়ে’র আয়োজন জাঁক-জমকপূর্ণ হলেও সকল আনুষ্ঠানিকতা দায় সারা ভাবে করা হয়েছে। নয়নের বিদায়ে সে সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো, তিনি গম্ভীর মুখে মেয়েকে বললেন,
– “ভেবো না, তোমার জন্য আমার কষ্টে বুক টা ফেটে যাচ্ছে। তুমি ওই বাড়িতে ঘরের এক কোণে মা’র খেয়ে জুবুথুবু হয়ে পরে থাকলেও……আমি তোমাকে দেখতে যাবো না৷ কষ্ট ছাড়াতো আর কিছু’ই দিতে পারোনি তুমি আমাকে।”
বাবার কথা শুনে যেন থমকে গেলো নয়ন। সে চুপটি করে শান্ত হ’য়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাইজান সাহেব মেকি হেসে বললেন,
– “চাইলেই তে আর দূরে ঠেলে দেওয়া সম্ভব না। সুখে থাকো,আল্লাহ তায়া’লা যেন খুব শীঘ্রই হেদায়েত দেয় তোমাদের দু’জন কে।” কথা টা বলে’ই তিনি নিজের কক্ষের দিকে পা বাড়ালেন। নয়ন মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে। দীপ্ত বোনকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। কারও মুখে হাসি নেই বাড়ির পরিবেশ কেমন যেন থমথমে হয়ে গেছে?
সকল ঝক্কি-ঝামেলার সামলে ইসাত দীপ্ত ইমানকে খাবার খাওয়ার জন্য জোরজবরদস্তি করতে লাগলো ইমান বললো,
– “বিয়ের পর থেকে আমি একদিন ও একা খাবার খাইনি আপনাদের বোনকে রেখে।” সবার মুখ কেমন যেন মলিন হ’য়ে গেলো। ইমান বললো,
– “খাবার গুলো কন্টেইনারে দেওয়ার ব্যবস্থা করুণ আমি বাড়িতে গিয়ে খাবো, আপনার বোনের সাথে।”
ফাইজান সাহেব এগিয়ে এসে বললেন,
– “না বাবা, তা হয় না।”
– “আমাকে জোর করবেন না বাবা, ওকে ছাড়া এই খাবার নামবে না আমার গলা থেকে।
বিয়ে হয়েছে পর থেকে, আমি কখনো ওকে ছেড়ে বেশি সময় বাহিরে কাটাইনি এক দানাও মুখে তুলিনি
….সে মুখে না বললেও বেশ বুঝতে পারি মেয়ে টা আমার জন্য দুঃশ্চিন্তা করছে।
আপনারা হয়তো ভাবেন আমাদের সম্পর্কে কোনো ভালোবাসা নেই।
কিন্তু, আমি রোজ অনুভব করতে পারি আমাদের মাঝে আমাদের সম্পর্কে অনেক ভালোবাসা আছে। হয়তো তার প্রকাশ করার ধরন টা ভিন্ন। কিন্তু, আমি বুঝতে পারি আমার ‘ম্যাডাম’ আমাকে ঠিক কত টা ভালোবাসে।” ইমানের কথা শুনে, কেউ আর তাকে খাবার খাওয়ার জন্য জোরা-জুরি করলো না। সে
বাড়িতে পৌঁছালো তখন রাত নয় টা বাজে। মিম তার অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো……।
ইমান তাই বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে তাকে নিয়ে খেতে বসলো এক সাথে। তখন এমা দু’জনের কাছে এলেন তিনি বললেন,
– “আমার খুব ইচ্ছে আমি তোমাদের দু’জনের গায়ে হলুদ দিবো একসাথে।” মিম শাশুড়ির কথা শুনে মৃদু হাসলো ইমান বললো,
– “মা, কিছুদিন পর দাও। অর্ণব আসছে থাইল্যান্ড থেকে। ও আমাদের বিয়েতে থাকতে পারেনি গায়ে হলুদে থাকলে ভীষণ খুশি হবে।” এমা ছেলের কথাই রাখলেন দেখতে দেখতে, নয়নের রিসেপশন হ’য়ে গেলো নির্বিঘ্নে।
ও তারপর নতুন জামাই নিয়ে বাপের বাড়ি বেড়াতে এলো। রেষাও রায়হান কে নিয়ে বেড়াতে চলে এলো শুধু মিম যায়নি বাপের বাড়িতে। ফাইজান সাহেব অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পরলেন,
তার যেন কোনো মাথা ব্যাথাই নেই বাড়িতে তার বড় মেয়ে ছোটো মেয়ে যার যার জামাই নিয়ে বেড়াতে এসেছে। এর’ই মধ্যে আজমির সাহেব একদিন গায়ে হলুদের জন্য বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানাতে এলেন। ও দিকে,
সাব্বির সমস্ত আয়োজন করছে। গায়ে হলুদের আগে
‘র দিন রাতে মিম কে নতুন করে মেহেন্দি পরানো হল ইমান মেহেন্দি পরাতে আসা মেয়েটিকে বলে ছিলো
– “আমার নাম টা সুন্দর করে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে দেবেন আমার হাতে।” মেয়েটি ও করলো তাই মিম এর বদলা নিতে ইমানের হাতে সুন্দর করে লিখে দিলো,
– “আমার দিকে নজর দিয়ে লাভ নেই, খালাম্মা।বাড়িতে সুন্দরী বউ আছে।” সকালে উঠে নিজের হাতে এই লেখা দেখে চোখ কপালে তুলে ফেললো ইমান। পাশে বসে ওর বন্ধুরা হাসছে। ও উঠে মিম কে খুঁজতে শুরু করলো, জোহান হাসতে হাসতে বললো।
– “কোনো লাভ নেই,
ভাবি এখন হলুদের জন্য সাজছে।” ইমান ও গিয়ে ঝটফট ফ্রেশ হয়ে এসে তৈরি হ’য়ে গেলো। তারপর সে নিচে এসে নাস্তা করতে বসলো সকলের সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে অর্ণব এসে হাজির। এত
দিন পর সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে কাছে পেয়ে ইমান যেন হাওয়ায় উড়ছে।
তখন বেলা বারোটা, মিমকে নিয়ে সবাই চলে এলো বাড়ির পেছন দিক টা কে।
ওকে দেখেই অর্ণবের মাথায় হাত। ইমান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে বলে উঠলো,
– “সরি দোস্ত, এক রাতে মন ভরেনি তাই সারাজীবনে
‘র জন্য নিজের করে নিলাম অর্থাৎ তোদের ভাবি করে করে নিয়ে এলাম তাকে।”
– “বলছিলাম,আমি কি এখন চির সিঙ্গেল থাকবো?”
– “ইসস, একটা শালি ছিলো তাও বিয়ে হয়ে গেছে।” ইমানের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে রাখলো অর্ণব। তত ক্ষণে গায়ে হলুদের আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। দু’জনের গায়ে হলুদ ছোঁয়ানো শেষে ইমান মিমকে হলুদ ছুঁইয়ে দিলো। তারপর, ইমানের এক চাচাতো ভাবি চলে এলো দু’জনকে গোসল করাতে।
তাকে ইমান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
– “আপনি আমার বউকে গোসল করান….. আমাকে বরং আমার বউ গোসল করিয়ে দেবে?” ওর কথায় হেসে উঠলো সবাই।
গোসলের পর্ব শেষে ইমান কে বলা হলো বউ কে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির ‘সদর দরজা’ দিয়ে প্রবেশ করতে।
কথাটা শুনেই মিমের চোখ কপালে উঠে গেলো, সে
মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– “মা আমি এই বুড়ো দাম*ড়া লোকটার কোলে চড়ে ঘরে ঢুকতে যাবো কোন দুঃখে?”
– “এটা শুধু একটা নিয়ম মা।”
– “আমাকে দেখে একটা কি পিচ্চি বাচ্চা বলে মনে হ’য় না কি তোমাদের কাছে?” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– ‘হ্যাঁ তাই তো,
তুমি যখন চার দেওয়ালের মাঝে আমার কোলে চড়ে বসো তখন…………এখন একটু সৌজন্যতার খাতিরে আমার কোলে উঠলে কি হবে?” ইমানের কথা শুনে মুখে কুলুপ এঁটে রাখলো মিম সে বউকে কোলে তুলে নিয়ে ধীরেধীরে পা ফেলে এগিয়ে গেলো বাড়ির সদর দরজার দিকে।
সদর দরজা দিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করার পর, তাদের দু’জনকে মিষ্টিমুখ করানো হলো। তারপর মিম ঘরে চলে এলো হলরুম থেকে। মিনিট পাঁচেক পর, তুর্ণ মিমকে নিতে ওর ঘরে চলে এলো। সে এসে’ই তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “জানো? মা আজ তোমার এবং ভাইয়ার মুখে ভাত দেবে।” মিম চমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “এটা আবার কেমন নিয়ম?” ও হাসতে হাসতে তার গাল টেনে বললো,
– “এটা কোনো নিয়ম না আপি, আমার দাদীও এমন টাই শখ করে……. করেছিল মা বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে বউ হয়ে আসার পর। বোঝা গেছে?
তাই মায়ের ও খুব স্বাদ হয়েছে তোমাদের জন্য সে এ
সব করবে।তাইতো বাড়িতে এইসব কিছুর আয়োজন
মা ভীষণ খুশি আর সে খুব পছন্দ করে তোমাকে।” তুর্ণর কথা শুনে মিম হাসলো। তারপর সে নিচে চলে এলো ওর সাথে এমা ছেলে ছেলের বউকে পাশাপাশি বসিয়ে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলেন। মিম কয়েক গ্রাস খেয়ে বললো,
– “আমি আর পারছিনা মা, বিশ্বাস করো। পেট ভরে গেছে।” ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “আম্মু তুমি ওর কথায় একটুও কান দিয়ো না তো
আমার বউ তো?
আমি জানি, খুব ভালো করে’ই জানি যে সে এতো লোকের সামনে বসে খেতে লজ্জা পাচ্ছে।” ইমানে’র কথা শুনে হাসতে লাগলো সবাই। হালিমা হাসিমুখে বললেন,
– ” বাবা, তুমি একদম ঠিক চিনেছ ওকে।” ধীরে ধীরে সময় এগিয়ে যেতে লাগলো। মিমের দিনকাল দারুণ কাটছে।
যদিও বা সে সকল কেই ক্ষমা করে দিয়েছে। কিন্তু, কোথাও না কোথাও সে একটা অদৃশ্য সীমা রেখা টেনে রেখেছে। প্রয়োজন ব্যতীত, সে কারোর সাথে’ই কথা বলে না। তবে শাশুড়ির কথা মতোন তার স্বামী মানুষ টাকে গড়ে পিঠে নিচ্ছে।
তাদের বিয়ের তখন বিশ দিন, আজ কাল মেয়ে টা প্রায়ই অসুস্থ থাকছে।
সে ধরেই নিয়ে ছিল ফুড পয়জনিং কিন্তু ইমানের শত জোরাজোরি করার পর ডক্টর দেখিয়ে জানা গেল সে মা হতে চলেছে।
মা হওয়ার অনুভূতি ভীষণ আনন্দের, তবে মিম সেটা মন খুলে প্রকাশ করতে পারছেনা কারো কাছে। তবে ইমান, সে ভীষণ খুশি…!
বাবা হওয়ার অনুভূতি যেন রাতারাতি আরো বদলে দিয়েছে তাকে।
সে সারাক্ষণ বাড়িতে বসেই কাজ করে, বউয়ের যত্ন নেয় সারাক্ষণ নজরে নজরে রাখে তাকে। এমার যেন ঠিক একই কাজ। সে সারাক্ষণ মিমের খাবার দিক টা
‘য় নজর রাখে….।
তুর্ণ সে ধরেই নিয়েছে তার বোনের একটা মেয়ে হবে। মেয়ের কথায় প্ররোচিত হয়ে আজমির সাহেব তার অনাগত নাতনির জন্য খেলা কিনে ঘর বাড়ি ভরিয়ে ফেলেছে।
এদের কাণ্ড-কারখানা দেখে মিম বেশ অবাক। সে সাব্বির কে বলে দিয়েছে এমন কোনো পাগলামো না করতে। কিন্তু, তিনি আরেক ধাপ উপরে এখুনি সে অনাগত নতুন অতিথিদের জন্য আলাদা রুমের কথা চিন্তা-ভাবনা করছে। ওদিকে,
মেয়ের ঘরের প্রথম নাতিনাতনী আসতে চলেছে চিন্তা করে ফাইজান সাহেব পুরো পাগলামো করেছে। দীপ্ত, ইসাত পারলে বোনকে এখুনি বাড়িতে নিয়ে আসে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হালিমা মেয়েকে ফোন করে বললেন,
– “মা এই সময়ে, বিশেষ যত্নে থাকা তোমার ভীষণ প্রয়োজন। আর, এতো যত্ন হ’য় না এই সময়ে মেয়েরা এতো আদর পায় না শশুর বাড়িতে।” মায়ের কথা শুনে মিম হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– “তুমি একদম ভুল ভাবছ মা, তুমি জানো না আমার নতুন মা (এমা) কত ভালোবাসেন আমাকে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বাচ্চা এখানেই হবে আমি ও বাড়িতে ফিরে গিয়ে কোনো ফলস পজিশনে ফেলতে চাই না তোমাদেরকে।”
মেয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন হালিমা কল টা কেটে গেলো ওপাশ থেকে মিম এগিয়ে গিয়ে ইমানের বুকে মাথা রাখলো। ইমান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তাকে বুকে জড়িয়ে রেখে।হালিমা গিয়ে স্বামীকে ধরা গলায় বললেন,
– “এ কোন বাড়িতে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছ? যেখানে গিয়ে মেয়ে টা আমাদের ভুলে গেছে?”
ফাইজান সাহেব কিছু বলে ওঠার আগে’ই রেশমা বলে উঠলো,
– “দুঃখ করেছেন কেন খালাম্মা? মেঝো মণি যেমন তেমনই তার শশুর বাড়ি জুটেছে।” ওর কথায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো দু’জনে।
দেখতে দেখতে, মিমের ডেলিভারির সময় টাও চলে এসেছে। বাংলাদেশ ডেলিভারির সময় হাসবেন্ডের বউয়ের পাশে থাকার নিয়ম নেই। কিন্তু, ডক্টর ভালো হওয়ায় সে ইমানকে থাকতে পারমিশন দিয়েছে। ও অপারেশনের পুরোটা সময় পাশে ছিল।
নরমাল ডেলিভারিতে বউয়ের চোখে জল দেখে তার কাল ঘাম ছুটে গেছে। সে কাঁদতে ও পারছিলনা কিছু বলতেও পারছিলনা। কিন্তু,
মিম সাহস পেয়েছে তাকে দেখে। জমম দুই সন্তানের জন্মের পর। মিমের দূর্বল শরীর আরও দূর্বল হ’য়ে পরলো। ইসাত দীপ্ত রক্ত দিলো বোনকে।
বাচ্চা জন্মের আড়াই ঘন্টা পর, মিমের হুঁশ ফিরলো। সে তখন পাশ ফিরে ইমানকে দেখেই টেনে জড়িয়ে ধরলো তাকে। ইমান কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল মিম তাকে অবাক করে দিয়ে বললো,
– “ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।” ইমান এতোদিন অপেক্ষার পর নিজের কাঙ্ক্ষিত শব্দ টা শুনতে পেয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “এই একটা কথা বলতে বুঝি এতো সময় লাগে?” মিম লজ্জা পেয়ে তার বুকে মুখ লুকাল। ইমান হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
– “আর কত লুকোচুরি খেলবে?” মিম বললো,
– “কি জানি?” সে ফিসফিস করে তার কানে কানে বললো,
– “আমি আর কোনো লুকোচুরি খেলার সুযোগ দিবো না তোমাকে। তুমি’ই তো আমার “একান্ত ব্যক্তিগত সুখ।”
আমি আর কোনো কম্প্রোমাইজ করতে পারবোনা নিজের সুখের সাথে।”

……………………সমাপ্ত…………………