ব্যক্তিগত সুখ পর্ব-১৯

0
244

#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৯

ও রান্না ঘরে এসে এদিক-সেদিক তাকিয়ে হাসতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই, সে খেয়াল করে দেখলো লাবণি ওর অপজিটে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। সে এগিয়ে এসে ননদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বলল
– “আমার দুলাভাই মানুষ টা ভীষণ ভালো। তা এক রাতের মধ্যে কি খাইয়ে বশ করেছ তুমি ওই মানুষ টা কে?”
– “তোমরা ও না ভাবি।”
– “কি আমরা? চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। দুলা- ভাই মানুষ টা বউ বলতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।”
– “ওনার কি মাথার ঠিক আছে না কি? পাগল একটা
পাগল দেখে তোমরা বিয়ে দিয়েছ আমাকে।”
– “হুমম, বুঝলাম। তা ভুল কি করেছি? জীবনে সবার এরকম একটা পাগলের প্রয়োজন আছে।”
মিম লাবণির কথায় ভেংচি কেটে দুধ চা বসিয়ে দিল।
লাবণি হাসতে হাসতে আদুরে গলায় ননদের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “দুলাভাই বুঝি দুধ চা খেতে খুব ভালোবাসে?”
– “তুমি আমাকে না জিজ্ঞেস করে তোমার দুলাভাই কে গিয়ে জিজ্ঞেস করো না।”
-“কেন গো? তুমি আছো কি করতে?” তখন সেখানে নয়ন এসে হাজির, সে হাসতে হাসতে বললো,
-“কেন আবার? স্বামী সোহাগি হ’য়ে থাকতে।” মিম সাথে সাথে তার কান মলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
– “বিয়ের আগে তুই ক’বার আমার হাতের রান্না নিয়ে খাইয়েছিস ওই লোকটা কে?”
সে তোতলাতে তোতলাতে বললো,
– “অনেক বার আপু, আসলে ভাইয়া ভয় দেখিয়ে ছিল আমাকে।”
– “সত্যি কথা বললে, তোর গলা কাঁপত না আর তুই তোলাতিস ওনা। এবার বল, কি লুকচ্ছিস আমার কাছে?” ও মুখ কালো করে বলে উঠলো,
– “আসলে ভাইয়া আমার এক্স-বয়ফ্রেন্ড জয়নালের সাথে ফুড কোর্টে দেখে ফেলেছিল আমাকে।”
– “ওই ছেলেকে নিয়ে এতো কাহিনি হ’য়ে যাওয়ার পরেও তোর শিক্ষা হ’য়নি? বেয়া*দব।” নয়ন সাহস করে বলে উঠলো,
– “আসলে আমরা বিয়ে করে নিয়েছি আপু।” মিম রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার এই কু-কীর্তির কথা জানিয়েছ ফাইজান চৌধুরী কে?” সে মিটিমিটি হেসে বললো,
– “হুমম, আসলে ভাইয়া (ইমান) আমাদের বিয়ের ব্যাপার টা বুঝিয়ে বলে ছিল বাবা-মা কে। না হলে, তুমি তো জানো তারা কেমন?
কে*টে টুকরো টুকরো করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিতো আর খুঁজে পেতে না তোমরা আমাকে। আর তাছাড়া বাবা পরে কাজি ডেকে আমাদের বিয়ে টা পড়িয়ে দিয়ে ছিল। কিন্তু, তোমার ভয় তেই পুরো ব্যাপার টা চেপে গেছে………..।” মিম চোখ, নাক, মুখ শক্ত করে বোনকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তারপর?” নয়ন হাসতে হাসতে বললো,
– “তারপর আরকি? মা তোমাকে বিয়ে দেওয়া জন্য একদম ব্যাকুল হ’য়ে গেছে. আর বাবাও, ঠিক তাই কিন্তু সে মুখে ফুটে বলতে পারছিলা তোমাকে। তবে এখন,
আমার রাস্তা একদম ক্লিয়ার হ’য়ে গেছে। কাল আমার শশুর-শাশুড়ি আসবেন। সামাজিক ভাবে আমাদের বিয়ের পাকা কথা বলবেন বাবা মায়ের সাথে।” মিম তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,
– “তোরা নিজের সুখের জন্য আমার আর কত ক্ষতি করবি? বল? কি হলো বল আমাকে?” সঙ্গে সঙ্গে নয়ন মিমের হাত চেপে ধরে বললো,
– “আমাকে ভুল বুঝোনা আপু তুমি। আমি খুব ভালো বাসি জয়নাল কে।”মিম রাগ সামলে রাখতে না পেরে নয়ন কে চড় মে’রে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমার কি দোষ ছিলো? সেটা বল আগে?” নয়ন কাঁদতে কাঁদতে বোনের পা জড়িয়ে ধরে বলল,
– “আমাকে ক্ষমা করে দাও আপু।” মিম ওকে লাথি মে’রে ফেলে দিয়ে হনহন করে নিজের ঘরে চলে এলো রান্নাঘর থেকে।
ততক্ষণে,রেশমা হলে গিয়ে ফাইজান সাহেবের কাছে সব খুলে বললো। তিনি ইমান কে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের ঘরে গিয়ে ডাকাডাকি করতে লাগলেন তাকে।হালিমা রেগে গিয়ে ছোটো মেয়েকে গিয়ে বললেন,
– “এখুনি, এ-সব কিছু বলতে মানা করা হয়েছিল না তোমাকে?” সে মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগলো। রেষা বললো,
– “আমি আজ’ই শশুর বাড়ি ফিরে যাবো এখান থেকে। আমিও ভাবছিলাম,
বাবা কি করে বোনের বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো টা উতলা হয়ে পরলো? বাবা সারা জীবন সব কিছু’র উর্ধ্বে রেখেছে বোন (মিম) কে।
আর তাকেই কি-না জোর করে বিয়ে দিয়ে দিলো? আচ্ছা মা, একটা কথা বলো তোমরা আর কি কি লুকিয়েছ আমাদের দু’জনের কাছ থেকে?” ইসাত বলে উঠলো,
– “আমিও এসবের কিছুই জানি না,রেষা। আর আমি জানতেও চাই না। তোমার পারলে এদের পূজা করো সাত আসমানে তুলে রেখে।” দীপ্ত তখনও চুপচাপ। মিম এখনো দরজা খোলেনি।
ভয়ে, দুশ্চিন্তায় ফাইজান সাহেব অসুস্থবোধ করছে। অনেক ডাকাডাকি, ধাক্কাধাক্কি করার পর মিম দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো। সকলেই বেশ চমকে গেলো মিম কে ওর ব্যাগ প্যাক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ইমান কিছু বলতে চাইলে, মিম তাকে থামিয়ে দিলো। সে স্বাভাবিক ভাবে’ই ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “আপনার এখানে থাকতে ইচ্ছে করলে, থাকুন। আমি ফিরে যাচ্ছি আমার বাড়িতে।
এটা আমার নিজের বাড়ি নয়, আর আমার রাতে ঘুম আসবেনা অন্যের বাড়িতে।”মেয়ের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন ফাইজান সাহেব, বললেন,
– “তুমি একটু মাথা ঠান্ডা করো মা, আমরা বসে কথা বলবো একসাথে।”
– “আপনার কি আমার কথা একটু ও কানে যায়নি? বিরক্ত হননা, আপনারা? এতো নাটক করতে করতে
……।” হালিমা চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন,
– “আমাদের ভুল বুঝোনা মা,
এটা তোমার বাড়ি, তোমরা বাবার বাড়ি। তুমি এই বাড়ি ছেড়ে কোথায় যাবে এতো রাতে?”
– “এতো কৈফিয়ত আমি আপনাকে দেবো না আর আমি এখানে কথা বলছি জনাব ফাইজান চৌধুরীর সাথে।কাজেই আপনি দয়া করে চুপ থাকুন, আপনার এক্সপার্ট ওপেনিয়ন আমি চাইনি আপনার কাছে।” মেয়ের কথা শুনে চুপ করে রইলেন, হালিমা। ইমান বললো,
– “তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো বাবাকে।”
– “আপনারা দয়া করে আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করুণ, আমি আর এক মুহূর্ত থাকতে চাই না এ বাড়ি তে…।”
– “যদি আমি তোমাকে যেতে না দেই, তখন?”
– “দেখুন, আপনার আমার ওপরে তেমন জোর নেই ঠিক আছে? আমি আপনার ভালোবাসায় এতো টাও অন্ধ হয়ে যাইনি যে আপনাকে বিশ্বাস করে নেবো দু’ চোখ বুঝে। আর তাছাড়া, আমি এখনো আপনাকে মেনে নিতে পারিনি ‘মন থেকে’। যাকে ভালোবাসি না তার এতো আদিক্ষেতা ঠিক সহ্য হচ্ছেনা।
আমি চললাম, আপনি বরং জামাই আদর খান বসে বসে….। আমি আর এখানে থেকে নিজেকে কারো হাসির খোঁড়াক বানাতে চাইনা।
আমি কোনো সম্পর্ক রাখতে চাইনা এই সব ছোটো লোকদের সাথে।”মেয়ের কথা শুনে কাঁদতে লাগলেন হালিমা। ফাইজান সাহেব বোঝাতে ব্যার্থ হলেন তাকে মিম রাগ দেখিয়ে বেড়িয়ে গেলো ইমান ও বাসা থেকে থেকে বেড়িয়ে গেলো তার সাথে সাথে।
মেয়ে জামাইয়ের জন্য করা এতো আয়োজন সবই বৃথা। তখন রাত একটা, মিমকে বাড়িতে দেখে খান বাড়ির সকলে’ই হকচকিয়ে গেছে।
সে কাওকে কিছু না বলে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লক করে রাখলো। ইমান বাড়িতে ফিরে সব কিছু’ই খুলে বললো আজমির সাহেব এবং এমার কাছে, তুর্ণ বলে উঠলো,
– “তুই কেন নাক গলাতে গেলি ভাইয়া? ভাবি যাও বা তোকে পছন্দ করতে শুরু করে ছিল। এখন সে শুধু’ই অবিশ্বাস করবে মেয়ে টা তোকে।” বোনের কথা শুনে বিচলিত হয়ে পরলো ইমান সে দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে। ওদিকে, ফাইজান সাহেব একা বসে, তিনি হালিমা কে জিজ্ঞেস করলেন,
– “বলতে পারো? আমি কি পাপ করে ছিলাম? যে আল্লাহ তায়া’লা কুসন্তান দিলেন আমাকে। মেয়ে টা আমার কাছে এসে একটু সময় বসলো ও না। কেন চলে গেলো? কিসে’র শাস্তি দিয়ে গেলো মেয়ে টা আমাকে…..?
দেখ, তুমি তোমার ছোটো মেয়ের ধুমধাম করে বিয়ে দিতে চাইছ, দাও। আমি নেই এর আগে-পিছে। ও ম’রে পরে থাকলেও………. আমি ওকে আর দেখতে যাবোনা। ও বাঁচলো কি ম*রলো আমার কিছু’ই যায় আসে না তাতে। নেহাৎ, মানসম্মান রক্ষা করার জন্য এতো সামাজিকতা। আশা করছি, আমি বেশ ভালো ভাবে বোঝাতে পেরেছি তোমাকে?”
স্বামীর কথা শুনে,
ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন হালিমা।ইমান ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে লক খুলে ঘরে ঢুকে দেখলো, মিম চোখ বুঝে বিছানায় শুয়ে আছে৷ সে গিয়ে চুপটি করে বউ এর পাশে বসলো। তাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
– “তুমি চাইলে যে কোনো ধরনের শাস্তি দিতে পারো আমাকে।” মিম অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পরলো। তার কথা বলার কোনো ইচ্ছে হলো না ইমানের সাথে। তবু
-ও সে বউয়ের সাথে কথা বলার জন্য ব্যার্থ চেষ্টা করতে লাগলো। হঠাৎ এমা এসে ছেলেকে বললেন ঘর থেকে চলে যেতে। ইমান অসহায় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। তিনি ছেলেকে ঝাড়ি মে’রে বললেন,
– “তুমি কি এখনো এখানে সংয়ের মতোন দাঁড়িয়ে থাকবে?” মায়ের ঝাড়ি খেয়ে বেজার মুখ নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো ইমান। কিছুক্ষণ পর, সে অধৈর্য্য হয়ে নিজ ঘরে ফিরে গিয়ে দেখলো এমা মিমকে নিজ এর হাতে ভাত খেতে খাইয়ে দিচ্ছে।
তার পাশেই তুর্ণ বসা সে আবার মিমের সাথে কোনো একটা বিষয় নিয়ে গল্প করছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে যেন একই মায়ের পেটের ‘দুই বোন’। খুব সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের দুই ভাবি ননদের মাঝে। ইমান দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দু’জনের খুনসুটি এনজয় করছিল। এতক্ষণ পর, বউয়ের মুখে হাসি দেখে সে স্বস্তি পাচ্ছে………………। মিম ঘুমিয়ে যাওয়ার পর, সে চুপিচুপি গিয়ে বউয়ের পাশে শুয়ে পরলো। তুর্ণ যেতে যেতে ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “অন্তত আজ রাতের জন্য একটু জ্বালাতন কম করো ভাবিকে।”
বোনের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে ইমান মিটিমিটি হাসতে শুরু করলো। সে একা একা হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
– “ফাজিল টা বড্ড বেশি পেকে গেছে।”

চলবে,,,