#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১০
বাবার কথা শুনে, হেসে উঠলো ইমান
সে পিয়ন কে তিন হাজার টাকা দিয়ে কিছু একটা ফিসফিস করে বলে দিলো তাকে।
মনসুর তার কথা মতো পিঠে উৎসবে চলে গেলো।
বিশ পিস চকলেট মনোহরা, বারো পিস মালাই চপ, পনেরো পিস স্নোবল, দশ পিস নকশি পিঠা, বিশ পিস শাহি ঢুকরা, বারপিস জামাই পিঠা, ডাব পুডিং কিনে নিয়ে এলো আইন বিভাগের স্টল থেকে।
অতঃপর, সে ইমানকে বললো,
– “টোটাল দুই হাজার দুইশ ষাট টাকা খরচ হয়েছে স্যার। কিন্তু, কথা হলো এতো পিঠা কে খাবে? ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– “কেন আমি এবং আমার পরিবার, তারা সকলে পিঠে খেতে ভালোবাসে। আচ্ছা, ক্ষীর পাটিসাপটা পিঠা ছিলো না?”
– “হ্যাঁ, স্যার আছে তো…প্রতিবারের মতোন এইবার ও আইনবিভাগের সকল পিঠা আগে আগে সেল হয়ে যাচ্ছে।”
– “সেল হবে না বলছ মনসুর?”
– “পাকা মেয়ে টা সকল পিঠের দাম খুব কম রেখেছে
জানো? ওদের স্টলে দেখলাম। পাঁচ টাকা দামের ও পিঠা আছে।”
– “পাঁচ টাকা দামে কিছু যায় আসে না স্যার। স্বাদ আর মান টাই আসল।”
– “হুমম, আমিও একমত মনসুর তোমার সাথে।” অতঃপর সে আবারও স্টলে ফিরে গেলো। ততক্ষণে, আজমির সাহেব সকল কে নিয়ে পৌঁছে গেছে। তুর্ণ মিমকে দেখেই তার কাছে ছুটে গেলো।ইস্পা ইমানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “বোন ওদিকে কোথায় গেল? এখানে আমাদের পরিচিত কেউ আছে?” ইমান তাকে পাত্তা না দিয়ে আইন বিভাগের দিকে এগিয়ে গেলো। ভিড় ঠেলে স্টলে ঢুকে দেখলো,
তুর্ণ আজমির সাহেব দুজনে বসে পিঠে খাচ্ছে। এমা মিমের প্রশংসা করতে ব্যস্ত। সে বললো,
– “সারা জীবন ভেবে এসেছি এমনই একটা লক্ষী মেয়ে আমার বাড়িতে আমার মেয়ে হয়ে আসবে।” ওনার কথায় মিম ভীষণ লজ্জা পেলো। সে মিটিমিটি হেসে মিমকেউদ্দেশ্য করে বললো,
– “ম্যাডাম, আপনাদের দেখছি সব পিঠা সেল হয়ে যাচ্ছে?” মিম হাসিমুখে বললো,
– “হুমম, একজন ধনকুবের এসেছিল দুই হাজার দুইশ ষাট টাকার পিঠা সে একাই কিনে নিয়ে গেছে।” ওর কথা শুনে মুচকি হাসলো ইমান। সে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো,
– “দু’টো কি ফাও হবে?”
হঠাৎ দুধ রসগজা পিঠের ঝোল পরে ইমানের পরনে
-র পাঞ্জাবি টা মাখামাখি হ’য়ে গেছে সে দ্রুত প্রস্থান করলো নিজের কেবিনের দিকে।
বেশ কিছুক্ষণ পর, মিম তার খোঁজে চলে এলো। ইমানে’র কেবিনে নক করতেই সে বললো, ভেতরে আসতে। ভেতরে ঢুকে মিম ইমান কে কোথাও দেখতে পেলো না….. সে পিঠের প্লেট টা টেবিলের ওরে রেখে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। হঠাৎ, ইমান এসে তার সামনে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
মিম বেরুনোর জন্য ছটফট করতে লাগলো ইমানের কেবিন থেকে ইমান তাকে জোর করে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখলো। শেষমেশ, মিমকে ছটফট করতে দেখে বললো,
– “তোমাকে আমি ছাড়তে পারি, তবে একটা শর্ত আছে।” মিম ভয়ে ভয়ে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো।
– “কি কি শর্ত?”
– “বেশি কিছু না, তোমাকে জাস্ট আমার এই কেবিন টা পরিষ্কার করে দিতে হবে।”
মিম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “মানে?”
– “মানে অলরেডি বুঝিয়ে বলেছি তোমাকে।”সে তার কথা মতো ধীরে ধীরে ইমানে’র কেবিন টা গোছাতে শুরু করলো।
ইমান সোফায় বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো তাকে। বিশ মিনিটের মধ্যে মিম সব গুছিয়ে ফেললো
ইমান হঠাৎ করেই উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গিয়ে তার কপালে চুমু খেয়ে বললো,
– “আলহামদুলিল্লাহ্, আমার আপনাকে বেশ পছন্দ হয়েছে।” মিম তার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইল ইমান টেবিলের ওপরে থেকে পাঁচ হাজার এক টাকা নিয়ে তার হাতে দিয়ে সেই হাতে চুমু খেয়ে বললো,
– “আমাদের বাড়িতে……. বিয়ের জন্য কোনো পাএী পছন্দ হলে। এভাবে’ই সম্মান জানানো হয় তাকে। আমার আপনাকে ভীষণ পছন্দ আমি সংসার করতে চাই আপনার সাথে ”
– “কিন্তু, আমি যে আপনাকে চাই না?”
– “বেলা শেষে, একদিন আমার ‘ব্যক্তিগত সুখ’ এর কারণ তুমিই হবে।”
– “আপনি কাজ টা একদম ঠিক করলেন না।”
– “তুমি একদিন ‘আমাকে’ অবশ্যই, ‘ভালোবাসবে’।” মিম তার দিকে তাকিয়ে রইলো, দু’জনের ঘোর কেটে গেলো ইস্পার ডাকে। ইমান দ্রুত শার্ট এবং ব্লেজার টা পরে ফেললো……মিমের শাড়ির আঁচল টা ঠিক করতে অসুবিধে হচ্ছে।
ইমান এগিয়ে এসে তার শাড়ির আঁচল টা ঠিক করে দিলো। দরজা খোলার পর, ইস্পা খুব চমকে গেলো দু’জন কে এক সাথে দেখে।
ইমান মিমে’র সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলতে লাগলো। মিম ও নিজেকে যত টা সম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে ইস্পার মুখ টা কালো হয়ে গেলো
সে চুপচাপ দু’জনের পেছন পেছন হাঁটছে৷ মিম দ্রুত
স্টলে চলে এলো। ইস্পা ইমানকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তুমি ওই মেয়েটির সাথে কি করছিলে? কেবিনের মধ্যে?” ইমান বলে উঠলো,
– “জামাই বউ খেলছিলাম, অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে আমার এই মেয়ে টাকে।”
– “ভাইয়া?”
– “কি ভাইয়া? সারা জীবন কি দেবদাস হ’য়ে ঘুরে বেড়াতে দেখতে চাস তোরা আমাকে?”
– “সত্যি করে বলো তোমরা কি করছিলে?”
– “আরেহ ভাই, কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করছিলাম। ভিডিও করে দেখানো উচিত ছিলো তোকে।”
– “তুমি মিথ্যে বলছ?”
– “মিথ্যে কেন বলতে যাবো? হ্যাঁ, রে তোর একটু ও লজ্জা করবে না নিজের ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি দেখতে?” ও কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার ছাএী কেন শুতে যাবে তোমার সাথে?”
– “দেখ, ওর সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা৷ তাই মার্কস বাড়িয়ে দেওয়ার নাম করে শরীর চর্চা করলাম ওর সাথে।”
– “তাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না,তোমার শরীর চর্চার সঙ্গিনী?”
– “আরেহ! তুই বুঝবিনা, বোন। মানুষ ভুলে যায় ওর ইনোসেন্ট লুক দেখে।”
– “আমি সেসব কি করে বুঝতে পারবো?” সে হাসতে হাসতে বললো,
– “ওর কাছে গিয়ে দেখবি কাঁধে জোরা তিল আছে। কোমড়ে আঙুলের ছাপ আর বিভিন্ন স্থানে নখের আঁচড় আছে।” এই বার কিছুটা সিরিয়াস হয়ে গেলো ইস্পা। ইমানের বলা প্রতিটি কথা এখন চিরন্তন সত্যি বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।
তার দু’চোখ ছলছল করতে লাগলো, মিম এগিয়ে গিয়ে মলিন মুখে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “বোন তোমার কোনো অসুবিধে হচ্ছে?” সে মুচকি হেসে বলে উঠলো,
– “কোই না তো? আগে জানলে আমি কখনো ওর
রোষা*নলে পরতে দিতাম না তোমাকে। মিম কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে গেলো। ইস্পা মেকি হেসে বেড়িয়ে পরল বাড়ির উদ্দেশ্যে……
এদিকে পিঠে উৎসব শেষ হতে হতে বিকেল চারটা বেজে গেলো। বরাবরের মতোই আইন বিভাগ প্রথম
প্রাণীবিদ্যা বিভাগ এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগ যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। ইংরেজি বিভাগ তৃতীয় আর এইসব কিছু নিয়েই তাদের পুরো ক্যাম্পাস যেন আনন্দ উৎসবে মেতে আছে।
মিমের বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে রাত আটটা বেজে গেলো। সে বাসায় গিয়েই ঘুমিয়ে গেছে।
ফাইজান সাহেব রাতের খাবার নিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথার কাছে বসলেন। আজকাল মেয়ের এ রূপ পরি
-বর্তন তাকে খুব দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন এই বাসার পরিবেশ, তার মেয়ের থাকার জন্য উপযোগী না। কারণ তার আশেপাশের মানুষের কটুকথা এবং আচার-আচরণ মেয়ে টাকে দিন কে দিন খিটখিটে এবং বদরাগী করে তুলছে। তিনি খুব ভালো করেই জানেন,
তার মেয়ে মোটেও এমন না। তার পারি-পার্শ্বিক পরি -স্থিতি তাকে এরকম আচরণ করতে বাধ্য করছে। মেয়েকে একটু হাসি মুখে দেখার জন্য, তিনি সাথে করে তাকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে ছিলেন কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর থেকেই মেয়ে টা কেমন যেন আবারও বদ -লে গেছে? তিনি বুঝতে পারছেননা এই মুহুর্তে কার কাছে সাহায্য চাইবেন?
কি ভেবে ফাইজান সাহেব ফোন করে বসলেন ইমান এর কাছে ইমান একটু চিন্তা ভাবনা করে তাকে বলল
– “ওকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিন, বাবা। ওর যত্নের কোনো অভাব হবে না এ বাড়িতে। আমার মা ওকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসবে আর আমার বাবাও খুব ভালোবাসবে তাকে। আমার ছোটো বোন, তুর্ণ। ওর ভীষণ পছন্দের মিম সারাক্ষণ শুধু ওকে নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে আমার কানের কাছে। আর আমি এখনো তাকে নিজের করে পাওয়ার সেই আশা ছেড়ে দেইনি।
জানি না, এই মেয়ে টা কেন এতো অপছন্দ করে আমাকে? নিজের অজান্তেই আমি কি ক্ষতি করেছি ওর…….? ও কেনই বা নিজের আশেপাশে এক মুহুর্ত সহ্য করতে পারেনা আমাকে।” ফাইজান সাহেব দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন,
-“এখানে তোমার কোনো দোষ নেই বাবা। দোষ টা সম্পূর্ণ আমাদের দিক থেকে হয়েছে। জানো, আমার বড় মেয়ে টা রসকষ মিলিয়ে কথা বলতে ওস্তাদ ওর কিছু বানোয়াট কথাবার্তা শুনেই একটু মাত্রাতিরিক্ত শাসন করে ফেলেছিলাম মেয়েটাকে।
যেটার কোনো প্রয়োজন’ই ছিল না,তারপর থেকেই মেয়ে আমার এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে ছেলেদের কে। এটা মনেমনে, আমাকে আনন্দ দিলেও কখনো বুঝতে পারিনি মেয়ের আমার বিয়ে নিয়ে ভিন্নধর্মী ধারণা পোষণ করছে। এটা আমি কখনো চাইনি আমি সবসময় চেয়েছি আমার মেয়ের ভবিষ্যতে টা সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে দিতে।
আমি আমার মেয়ে টাকে ভীষণ ভালোবাসি, বাবা। জোর করে আমি কখনো ওকে তুলে দিতে পারবোনা তোমার হাতে। ইমান,
তোমাকে আমার কখনো’ই অপছন্দ ছিল না। কিন্তু, আমাকে আমার বাচ্চার দিকটাও ভেবে দেখতে হয়ে- ছে।” ইমান এবার একটু সাহস পেয়ে বলে উঠলো,
– “এইবার একটু শক্ত হোন বাবা।
আপনাকে শক্ত হতেই হবে। সারা জীবন টা মানুষের একভাবে কেটে যেতে পারেনা বাবা…আপনার ভালো মন্দ কিছু একটা হ’য়ে গেলে আপনার মতো করে কেউ ভালোবাসবেনা তাকে।
আমি কখনো ওকে অযত্নে রাখবোনা, আমি আজও অব্ধি ভুলতে পারিনি আপনার কন্যাকে। তার প্রতি ভালোবাসা আমার একটুও কমে যায়নি আমি, আমি নতুন করে আবারও ভালোবাসতে শুরু করেছি তাকে
আমি বুঝতে পারছি না। আমি ঠিক কিভাবে আপনা- কে বোঝাবো? আপনি সময় নিন……” তিনি ইমানকে চমকে দিয়ে বললেন,
– “আমি ভেবে জানাবো তোমাকে।” তখন হঠাৎ রেষা মিমের ঘরে চলে এলো, সে ফাইজান সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– “বাবা, কে ফোন করেছিল তোমার কাছে?”
– “কেন?
তোমাকে বুঝি, আজ কাল সব ব্যাপারে ‘কৈফিয়ত’ হবে?”
– “না আসলে কাল বোনকে পাকাপাকি ভাবে দেখতে আসবে আমার শশুর বাড়ি থেকে।”
– “শোনো রেষা,
এ বিয়ে টা হচ্ছে না৷ কারণ, তোমার ছোটো বোনের জন্য আমার ছেলে পছন্দ করা আছে। আমি আমার রাজকন্যার যারতার সাথে মে’রে গেলেও দিতাম না। কাজেই তুমি তোমার এই সকল অপপ্রয়াস বন্ধ করে দাও ঠিক আছে?”
বাবার কথা শুনে রেষা, কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে হালিমা কে গিয়ে সব খুলে বললো…..হালিমা মুখে প্রকাশ না করলেও মনেমনে খুব খুশি হলেন মেঝো মেয়ের কথা ভেবে। সত্যি বলতে,
তিনিও ওই বাড়িতে মেয়েকে পাঠাতে চাননা। কিন্তু, সেটা কখনো মুখ ফুটে বলেননি বড় মেয়ের কাছে। বড় মেয়ে টা জেনে-বুঝেই নরকে পা দিয়েছে সেই নরকে সে আরেক সন্তানকে ঠেলে দিতেন কিভাবে? সারাজীবন তিনি সন্তানদের কত যত্নে বুকে আগলে মানুষ করেছেন। সেই সন্তান কষ্টে থাকলে মা হিসেবে তিনি কি করে ভালো থাকবে?
মায়ে’র কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে, রেষা তাকে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোমার হঠাৎ কি হয়েছে?” তিনি বললেন,
– “আমি তোমার বাবার সাথে কথা বলে আসছি।”
– “দয়া করে,
তুমি একটু বুঝিয়ে বলো বাবাকে।” হালিমা মেকি হেসে বললেন,
– “চেষ্টা করবো।” তারপর তিনি ফিরে গেলেন স্বামীর কাছে। বিভিন্ন কথায় কথায় হালিমা ফাইজান সাহেব কে জিজ্ঞেস করে বসলেন,
– “তোমার মনে হলো আমি আলাদা চোখে দেখি মিম কে?” তিনি বললেন,
– “আমার মনে হওয়ায় কিছু যায় আসে না, হালিমা। কিন্তু, ও সেটাই ভাবছে।”
– “তোমার কেন মনে হলো? ওমন এক টা পরিবারে আমি বউ হয়ে যেতে দিতাম তাকে (মিম)?”
– “কাজকারবার তেমনই করছ।”
– “মা হলে অনেক কিছু করতে হ’য়। হয়তো, আমি কখনো বোঝাতে পারবোনা তোমাকে।” তিনি স্ত্রী কে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– “আমি সব’ই বুঝি, হালিমা। কিন্তু, তোমার রেষার অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া টা ভুল হয়েছে। বাবা- মা হয়েছি বলে সবসময় তার অন্যায় গুলোকে প্রশ্রয় দেবো।
তুমি দেখছ, এতো বড় মেয়ে সে এখন নিজের ছোটো বোনের জীবন টা ধ্বংস করতে উঠেপড়ে লেগেছে?”
– “এর কিছুই হবে না দেখ, আমি কোনো অন্যায় হতে দেবোনা মেঝোর সাথে। সে তো আমারও সন্তান। মা হ’য়ে আমি চাইব আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে দিতে?”
– “সে হয়তো তুমি চাইবে না কিন্তু আমি আর মিম ও নুহাসের বিয়ে নিয়ে কোনো কথা শুনতে চাই না এই বাড়ির কারো মুখে।” স্বামীর কথা শুনে বড্ড চুপচাপ হয়ে গেলেন হালিমা ফাইজান সাহেব একটু থেমে আবারও বলতে শুরু করলেন,
– “তোমাদের কারণে মেয়ে টা আমাকেও ভুল বুঝছে ও ভাবছে, অকারণে ওকে বকাবকি করা হলেও আর সবার করা অন্যায় গুলোকে এ বাড়িে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে।
আর এই কথা টা মিথ্যে না, রেষা এতো বড় একটা অপরাধ করার পরেও………তুমি আমি কিছুই বলতে পারছিনা তাকে। হয়তো বা এই ক্ষেত্রে অধিক সন্তান স্নেহ কিংবা সমাজে মানসম্মান হারানোর ভয় তোমার আমার মধ্যে প্রবলভাবে কাজ করছে।
এখন এই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আমি রেষার এসব কিছু মেনে নিতে পারছিনা, হালিমা। সত্যি বলতে, আমার নিজের মানুষিক ভাবে অসুস্থ বলে মনে হচ্ছে। আমি ওর এই অন্যায় আবদার কখনো মেনে নিতে পারবো- না। মেয়েটা আগাগোড়া ভুল দিয়ে নিজের জীবন টা ভরে রেখেছে। ও ভাবছে আমি যা করছি তাই, ঠিক। ও শুধু স্বার্থপরের মতোন নিজের কথা চিন্তা করছে। আমি আর ওর কাছ থেকে কোনোকিছু আশাকরি না ওর জন্য আমি কিছুতেই কষ্ট পেতে দেখতে পারবো না মা (মিম) কে……।”
মিম ঘুম ঘুম চোখে পায়চারি করতে করতে এসে বাবা-মায়ের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শুনে ফেলে ছিল এখন তার মন টা খুশিতে যেন নেচে গেয়ে উঠছে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে মা বলে হালিমাকে ডেকে উঠলো, দু’জনেই বেশ হকচকিয়ে বেড়িয়ে এল ঘর থেকে। উভয়ের চোখেমুখে কৌতুহলের ছাপ মিম হালিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “আম্মু, ফ্রিজে কি কোনো স্পাইসি খাবার-দাবার আছে?
দেখনা, সারাদিন পিঠা পিঠা করে মুখের স্বাদ বিস্বাদ হয়ে গেছে আমার তাছাড়া খুব খিদে লেগেছে।” তিনি স্বামীকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “তুমি ওকে খাইয়ে আসোনি?”
– “ঘুমিয়ে ছিলো তার ওপরে টায়ার্ড তাই আর বিরক্ত করিনি মেয়ে টাকে।” ওনার কথা শুনে হালিমা রান্না ঘরে ছুটে গেলেন….
আজ অনেক দিন পর, মেয়ের মুখ থেকে ‘আম্মু’ ডাক টা শোনার পর থেকে তার মনটা শীতল হয়ে গেছে। তিনি ফ্রিজ থেকে মেয়ের পছন্দের ইলিশ মাছ বের করে বেশ ঝাল দিয়ে ভেজে ফেললেন। এদিকে, ফাইজান সাহেব মেয়েকে ব্যস্ত রাখার জন্য বললেন,
– “আম্মু, তুমি আমার সাথে দাবা খেলবে?” মিম তখন খিদের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে বললো,
– “হুমম, ব্যাপার টা মন্দ হ’য় না। আজ আমি হারিয়ে ছাড়বো তোমাকে।”
মেয়ের কথা শুনে, হেসে ফেললেন ফাইজান সাহেব তাদের খেলা শুরু হতে না হতেই দীপ্ত এসে বাবা আর বোনের ছোট্ট একটা ভিডিও করে ফেইসবুকে ডে দিয়েছে। ইমান তার অফিসের কাজ শেষে ফেইসবুক
-কিং করছিলো। হঠাৎ সে খুব অবাক হ’য়ে গেলো মাঝরাতে দীপ্তর দেওয়া ডে দেখে।
সেই ডে দেখে, ইস্পা ইমানকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “এই মেয়েকে যে বিয়ে করবে তার’ই বিপদ৷ মাঝ রাতে উঠে কে দাবা খেলে, ভাইয়া? একটু বোঝাও আমাকে?”ইমান তার টিটকিরি মূলক কথাবার্তা শুনে বললো,
– ” আমি খেলবো, আমার খুব ইচ্ছে করে এই মেয়ে টা কে বিয়ে করতে।” ইমানে’র কথায় মন খারাপ করে নিজের ঘরে ফিরে গেলো ইস্পা। ইমান কোনো পাত্তা দিলো না তাকে। সে দীপ্তকে কৌতুহল বশত টেক্সট করে জিজ্ঞেস করলো,
– “এতো রাতে কি চলছে ব্রো?” দীপ্ত তাকে আরও কিছু ভিডিও আর টেক্সটের রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “টুর্নামেন্ট চলছে।”ইমান মিটিমিটি হেসে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
– ” তার উইনার কে?” সে বোনের সুন্দর একটা ছবি দিয়ে রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “সব সময় তিনিই জেতে।” ইমান হাসতে হাসতে তার টেক্সটে’র রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “বাবারা বোধহ’য় সব সময় হারতে ভালোবাসে তাদের রাজকন্যার কাছে।” দীপ্ত আবারও টেক্সটের রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “হ্যাঁ তা ঠিক,
তবে বোন ভীষণ পারদর্শী দাবা খেলাতে। তবুও বাবাকে দেখি সবসময় ইচ্ছে করেই হেরে যায় হয়তো শান্তি আছে তার এই হে’রে যাওয়াতে?” ইমান হঠাৎ করেই তাকে ভয়েস ম্যাজেস পাঠিয়ে বললো,
– “আমি হে’রে যেতে চাই আপনার বোনের কাছে।” দীপ্ত তার ভয়েস শুনে মিটিমিটি হেসে তার রিপ্লাই দিয়ে বললো,
– “ধৈর্য্য ধরো, ইমান। আল্লাহ তায়া’লা চাইলে বরফ ঠিক গলবে।”
– “বুঝলাম বড় ভাই। কিন্তু, আমার বক্তব্য হলো মেয়ে মানুষকে এতো বদরাগী কেন হতে হবে?
সে হবে নদীর জলের মতো শান্ত, স্নিগ্ধ এবং কোমল যার মোহে পরে যে কেউ চিরকালের মতোন হারিয়ে যেতে চাইবে….।”
ইমানে’র এই সকেল সাহিত্যিক মার্কা কথাবার্তা শুনে দীপ্ত বলে উঠলো,
– “দেখ, ইমান। তুমি শুধু আমার বোনের মোহে পরে থাকলে। তোমাদের বিয়ে টা পসিবল নয়।
কারণ,আমরা কল্পনার জগতে বসবাস করিনা, বস- বাস করি বাস্তব জগতে।দেখ ভাই, তুমি তোমার মোহ কাটানোর জন্য আমার বোনকে বিয়ে করতে চাইলে আই এম সরি। কারণ,একবার মোহ কেটে গেলে তুমি আর কখনো ফিরেও তাকাবে না তার দিকে।” ইমান তার কথা শুনে থতমত খেয়ে বললো,
– “আরে বড় ভাই, আমি জাস্ট কথার কথা বললাম। নিজের মোহ কাটানোর জন্য আমি বিয়ে টা করতে চাইছিনা তাকে।
সে আমাকে ভালো না বাসুক, আমি তো জানি আমি কত টা ভালোবাসি তাকে? প্রথম প্রথম, সে সত্যি’ই আমার মোহ ছিল…………।
কিন্তু, এখন আমি ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলেছি তাকে। আমি ওর সাথে সংসার করতে চাই, ওকে ভালো বাসতে চাই,
নিজের পুরো জীবনটা আমি কাটাতে চাই ওর সাথে”
দীপ্ত ইমানকে উত্তেজিত হতে দেখে খুঁজে পেলো না এখন তার কি বলা উচিত? সে মৃদু হেসে বললো,
– “শুভরাত্রি,ছোটো ভাই। শুতে যাও,অনেক রাত হয়ে
গেছে।”
চলবে,,,