#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৩
দু’জনের কথা শুনে আবেগপ্লুত হয়ে পরলো সবাই। মিম মনে মনে ইমানের গুষ্টি উদ্ধার করছে। সে ভেংচি কেটে আনমনে বলে উঠলো,
– “ভালোই যোগ্যতা আছে, ইমোশনাল ব্লাক*মেইল করে আমার বাপের মাথাটা চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে।” মিমের কথা আর করো কানে না গেলেই ইমান শুনতে পেল ঠিক….
সে এখন বউয়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসছে। কিছু ক্ষণ পর,
কাজি সাহেব চলে এলো।
বিয়ে পরানো শেষে মিমের কোনো হেলদোল না দেখে সকলেই কানা-ঘুঁষা করছে। রেষা বোনকে উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
-“জানিস আমার বিয়ের দিন আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়ে ছিলাম কাঁদতে কাঁদতে।”
– “তো? আমি কি করতাম? হুমমমম, তুমি কেঁদেছ বলে আমাকে কাঁদতে হবে এটা কোথায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে?” দেখ বড় আপু,
আমি এতো ন্যাকামো করতে পারিনা৷ বলতে পারো আমি চাই না আমার মেকআপ টা খারাপ করতে।” বোনের কথায় চুপ করে গেলো রেষা ফাইজান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর, মেয়ে জামাই দু’জন কে খেতে নিয়ে যাওয়া হলো। হালিমা ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে চাইলেন মেয়েকে।
কিন্তু মিম চামচ, কাটা চামচ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। তার আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনদের নিয়ে বিন্দু মাএ আগ্রহ নেই। সে যেন বেশ বিরক্ত হচ্ছে। নবদম্পতির খাওয়া দাওয়া শেষে দু’ই পরিবারের সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছে তাদের আড্ডা শেষ হল। মাগরিবের আজানের পর নামাজ শেষ করে মিমের
বিদায়ের আয়োজন করা হয়েছে সকলেই বেশ কেঁদে কেটে অস্থির। কিন্তু, মিম একদম চিল মুডে আছে। হালিমা মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন, মিম বললো,
– “আরে আরে তুমি কাঁদছ কেন? তোমার খুব খুশি হওয়া উচিত। আফটার অল তোমাদের বাড়ি থেকে তোমাদের অন্ন ধ্বংসকারীনি চলে যাচ্ছে।”তিনি মেয়ে এর গায়ে হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– ” আমার ভুল হ’য়ে গেছে বাবা। ক্ষমা করে দাও।”
– “তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর, মন প্রাণ ভরে দোয়া কর আমার সংসার যেন দীর্ঘ দিন টিকে থাকে।” মেয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হালিমা। নয়ন লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছে। মিম তার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললো,
– “তোর এইবার খুশি হওয়া উচিত নয়ন রাস্তা ক্লিয়ার হ’য়ে গেছে।” নয়ন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো মিম রেষাকে গিয়ে বললো,
– “বাবার পছন্দ বিয়ে টা না করলে তুমি আমাকে যে কোনো মূল্যে পাঠিয়ে ছাড়তে ওই নরকে।”
রেষার গাল বেয়ে পানি পরতে লাগলো। সে নিজেও বুঝতে পারছে সে কত টা নিচে নেমে গিয়েছে। দীপ্ত এগিয়ে গিয়ে বোনকে জড়িয়ে ধরলো…..মিম কোনো কথাই বলেনি তার সাথে। ইসাত বোনের মাথায় হাত রাখলো, মিম মিটিমিটি হেসে বললো,
– “এইবার তুমি অন্তত খুশি বড় ভাইয়া আর কেউ মাছের মাথা নিয়ে ঝগড়া করবে না তোমার সাথে।”
ইসাত কাঁদতে কাঁদতে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। দীপ্ত খুঁজে পেলো না সে কি অপরাধ করেছে?
ইমান ফাইজান সাহেবকে অনেক বোঝালো আর
বললো,
– “বাবা,
আপনার মেয়ে আমার কাছে অনেক আনন্দে থাকবে আমি তার কোনো অযত্ন হতে দেবো না। কখনো কষ্ট পেতে দেবো না তাকে।”
আজমির সাহেব তাকে বুঝিয়ে বললেন,
– “আপনি একদম চিন্তা করবেন না সে তো আমার মেয়ে আমাদের কাছে অনেক যত্নে থাকবে। আপনার জামাই আসার সময় তার মা কে বড় মুখ করে বলে এসেছে,”সে তার মায়ের জন্য আরেক টি মেয়ে নিয়ে আসতে যাচ্ছে।” আপনার বেয়ান বলেছে,”খুব যত্ন করে আমার মেয়েকে নিয়ে এসো, একদম চোখের জল ফেলতে দেবেনা তাকে।
আর আমি নিজেও মেয়ের বাবা। ও আমার কাছে সারা জীবন আমার রাজকন্যা হ’য়ে থাকবে।” তুর্ণ এগিয়ে এসে বললো,
– “দেখ আমি আগেই বলে দিয়েছি ওই সব ভাবিটাবি বলে ডাকতে পারবোনা কারণ ‘আপু’ ডাক টাই বেস্ট আমার কাছে।”
ওর কথা শুনে হেসে উঠলো সবাই। ফাইজান সাহেব বুকে জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। মিম তখনো চুপচাপ একদম অনুভূতি শূন্য বলে মনে হচ্ছে তাকে দেখে। দু’ই ভাই বোনকে কোলে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। দীপ্তর কাঁদতে কাঁদতে হাঁপানি উঠে গেছে…………
ওকে ধরে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেওয়া হলো ইসাত বলল
– “ইমান কখনো কষ্ট পেতে দিয়ো না আমার বোন টা কে। বড্ড অভিমানী মেয়ে টা তোমার সাথে বিয়ে টাও বোধ হ’য় বাবার সাথে অভিমান থেকে করেছে।”
– “আপনি একদম চিন্তা করবেন না ভাইয়া। আমি কখনো অভিযোগ তোলার সুযোগ দেবো না তাকে।” অতঃপর, তারা মিরপুরের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পরলো
………….
বধূবরণ শেষে মিমকে তার শাশুড়ির ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এমা নিজের হাতে পুএবধূর জন্য জলখাবার বানিয়ে নিয়ে এলেন।
মিম তাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো।
– “মা তোমাকে এতো কষ্ট করতে কে বলেছে?” তিনি মুচকি হেসে তার কপালে চুমু খেয়ে বললেন,
– “তুমি না কি কিছুই খেয়ে আসোনি? তোমার স্বামী সাহেব নালিশ দিয়েছেন আমার কাছে।” মিম নিচের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগলো।
এমা তখন নিজের হাতে কিছু জল খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলো তাকে। ইস্পার মা বেশকিছুক্ষণ পর, বোনকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “তোর কি মনে হয় আপা?
এই মেয়ে ভাত রেঁধে খাওয়াবে তোকে?” এমা হাসি মুখে বলে উঠলেন,
– “এখুনি ভাত রেঁধে খাওয়ানোর কথা উঠছে কেন? মেয়েটা সবে মাএ আমার কাছে এসেছে আর আমার ছেলে যে খুঁজে খুঁজে একটা রত্ন পাথর খুঁজে এনেছে সেটা একদিন সময় বলে দেবে।” বোনের কথায় বেশ বিরক্তির হলেন আমেনা। এগিয়ে গেলেন গেস্ট রুমের দিকে। তখন রাত প্রায় এগারোটা বাজে, ইমান সকল ঝামেলা মিটিয়ে গিয়ে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো নিজের শয়ন কক্ষে।
এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে তার। আচ্ছা মিম কি আজ তার ডাকে সারা দেবে?
এইসব কিছু ভাবতে ভাবতে সে উপহার নিয়ে বিছানা কাছে এগিয়ে গেলো ধীরে ধীরে নতুন বউয়ের ঘোমটা তোলার পর তার শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হ’য়ে আসছে মিম তখনও নিজের দিকে তাকিয়ে। সে খুঁজেই পাচ্ছে না ইমান এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছে?
সে হঠাৎ বউয়ের কপালে চুমু খেলো। মিম সাহস জুটিয়ে তাকে ধাক্কা মে’রে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
– “এই ভাবে আপনি আর কখনো চুমু খাবেন না আমাকে।” ইমান বউয়ের কথা শুনে মিটিমিটি হাসতে লাগলো, সে আসলে এতক্ষণে বউকে জব্দ করার একটা মোক্ষম অস্ত্র খুঁজে পেয়েছে।
যার প্রয়োগ সে যত্রতত্র করতে পারবে। এই বার কে আটকায় তাকে? সে নিজের হাসি সামলে বউয়ের উপরে ঝুঁকে পরলো।
মিম নিজেকেসামলে নিয়ে বললো,
– “এবার কিন্তু বেয়াদবি হয়ে যাচ্ছে।”ইমান মিটিমিটি হেসে বললো,
– ” আমি কি না আছি রোমান্টিক মুডে?”
– “এই শুনুন, আপনার রোমান্টিকতা আপনার কাছে রাখুন। আমাকে দেখতে এলে কিন্তু আপনার কপালে ঢের দুঃখ আছে।”
– “আরেহ বাহ..! এটা কোনো কথা? হুমম, তোমাকে দেখাব না তো দেখাবো কাকে?”
– “কেন? একবার আমার সর্বনাশ করার চেষ্টা করেও আপনার স্বাদ মেটেনি?
তাহলে চরম সর্বনাশ টা আজ না হ’য় করেই ফেলুন। আমি আর আটকাতে যাবো না আপনাকে।” মিমের বলা কথা গুলো শুনে ইমান হতবাক।
তার বুঝতে বাকি নেই তার অজান্তেই মিমের কোনো ক্ষতি সে করে ফেলেছে। সে আমতা আমতা করে বউকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…..
জামাকাপড় ছেড়ে নাও তোমার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে?”
– “কেন? বেড়াল মারবেন না?” ইমান হঠাৎ করেই তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “হুমম, তবে তার আগে তোমার শাস্তি পাওয়া বাকি আছে।” এবার মিম শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো। ইমান হঠাৎ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
মিম সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধাক্কা মে’রে দূরে সরিয়ে দিলো ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
– “খবরদার, নিজের ওই নোংরা হাত দিয়ে আর কখনো স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না আমাকে।” ওর এই একটা কথা শুনে ইমান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। মিম আবারও হুংকার দিয়ে বলে উঠলো,
– “খবরদার, আমাকে নিজের ওই বাগান বাড়ির সস্তা মেয়ে গুলোর মতোন ভাববেন না,ঠিক আছে?” ইমান স্থির হ’য়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো, জিজ্ঞেস করল
– “আমার কি অপরাধ?
আমাকে বলো? তুমি না বললে আমি কি করে শোধ -রাব নিজেকে?” মিম তখন তার উপহাস করতে করতে বলে উঠলো,
– “আপনি নিজেকে শোধরাবেন………! আর সেটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?”
– “কেন বিশ্বাস করবেনা তুমি আমায়? একটু আমায় বিশ্বাস করলে তোমার কি ক্ষতি হবে?”
– “আমার যা ক্ষতি করার ছিলো তা আপনি করে ফেলেছেন। নতুন করে এখন আমার কি ক্ষতি হবে?”
ইমান অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইলো, মিম হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো,
– “এতো সহজে আপনি আমাকে ভুলে গেলেন কি ভাবে?
না কি, এখন নিজেকে আমার কাছে সাধু পুরুষ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন আপনি? কি মনে করেন আপনি? এতো সবকিছু করলে আপনার পাপ মোচন হ’য়ে যাবে……?” মিমের কথায় ইমানে’র চোখ ছল ছল করে উঠলো, মিম একটু থেমে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো,
– “আপনার গাড়ির নম্বর টা আমার এখনো মনে আছে।” ইমান এগিয়ে গিয়ে মিমের হাত চেপে ধরে বললো,
– “আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো, প্লিজ। তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে।” মিম নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো,
– “আমার একটুও ভুল হচ্ছে না মিস্টার খান৷ এখনো আপনার সেই নোংরামি গুলো আমার চোখে ভেসে ওঠে।” ইমান নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,
– “তোমাকে আমি সেই রাতে কোথাও দেখতে পাইনি নিজের আশেপাশে।”
মিম রেগে গিয়ে তার মুখের ওপরে বাথরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
– “নাটকবাজ, এই সব করতে আসবি না আমার কাছে।” ইমান ওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পরলো।
তার সবকিছু এলোমেলো লাগছে। মিম লম্বা শাওয়ার নিয়ে বাথরুমের বাহিরে চলে এলো…..ইমানকে দেখে তার মন মেজাজ দু’টোই খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ও ভাবতেই পারছেনা এই অত্যন্ত সহজ-সরল দেখতে লোকটা দুই কি আড়াই বছর আগে ওর চরম সর্বনাশ করার চেষ্টা করেছে।
ইমানের সেই নোংরা স্পর্শ গুলোর কথা মনে পরলে এখনো তার অন্তর আত্না যেন কেঁপে উঠছে। ও কি করে বিয়ে করে নিলো এমন একটা নোংরা লোক কে
…..?
যার কাছ থেকে প্রতিশো*ধ নেওয়ার জন্য সে এই বিয়ে টা করেছে। সে একটু কাছে টেনে নিলেই সে কেন তার লক্ষ ভ্রষ্ট হচ্ছে? পথ হারিয়ে ফেলছে?
এসব ভেবে ভেবে মিম অস্থির হ’য়ে উঠছে। ইমান তখনও মেঝেতে বসে।
সে কোনো মতে হামাগুড়ি দিয়ে মিমে’র পা জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো।
– “আমাকে যখন ভালোই বাসতে পারবে না তখন কেন তুমি বিয়ে করে কষ্ট দিচ্ছ নিজেকে?
এভাবে নিজেকে আঘাত দেওয়ার কোনো মানে হ’য় না। তুমি নিজেকে আঘাত করছ না, আঘাত করছ আমাকে।”
চলবে,,,
#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৪
মিম ইমানের চোখে জল দেখে মেকি হেসে বলে উঠলো,
– “আপনার কেন মনে হলো মিষ্টার খান? যে এতো বছর পরে সুযোগ পেয়ে আমি ছেড়ে দিতাম আপনাকে? এ টা একটু বেশি হ’য়ে গেলো না?”
– “শুধু,
আমার প্রতি রাগ আর ঘৃণা থেকে তুমি আমাকে শাস্তি দিতে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে?”
– “আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম………..কিন্তু আপনি এতো বছর পর কেন? আবারও ভালোবাসাকে হাতি -য়ার ফিরে এসেছেন আমার লাইফে?” ইমানের চুপ করে রইলো, কিছুক্ষণ পর সে বললো,
– “আমি বুঝতে পারছি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু, আমার ভালোবাসা মিথ্যে না। আমি ভালোবেসে বিয়ে করেছি তোমাকে।
জানি, নিজের স্বামীকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে সেটা সহ্য করা সহজ না। কিন্তু
সেসব আমার ইচ্ছেকৃত ছিলো না। একটু বিশ্বাস কর আমাকে।
আমরা একসাথে অনেক সুখে থাকবে৷ আমি নিজের সকল বদঅভ্যেস গুলো বদলে ফেলেছি সেই ঘটনার পর থেকে।
মিম তাকে ধাক্কা মে’রে আবারও দূরে সরিয়ে দিলো। ইমানে’র খুব কষ্ট হচ্ছে। এসব কিছু হবে সে হয়তো কখনো স্বপ্নে ও চিন্তা করেনি।
কিন্তু, তার নোংরা অতীত তার বর্তমান টা কে ধ্বংস করে ফেলছে। এতসব কিছু চিন্তা করে ইমান অসুস্থ প্রায়,
দু’জনে বিছানার দু’দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ করেই ইমান মিমকে নিজের খুব কাছে টেনে নিলো।
মিম নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে ও হঠাৎ বউয়ের কপালে চুমু খেলো। মিমের সমস্ত রাগ পরে গিয়ে কেমন শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ইমান তোয়ালে দিয়ে তার গা হাত পা মুছে দিতে শুরু করলো, একটু ধমক দিয়েই বললো,
– “আমার ওপরে রাগ দেখিয়ে তুমি নিজের চরম ক্ষতি করে ফেলবে।
পরনের ভেজা কাপড়চোপড় ছেড়ে আসোনি কেন? নিজেকে আঘাত করে বুঝি কষ্ট পেতে দেখতে চাও আমাকে? শোনো,
বাবাকে বলে এসেছি, তোমাকে খুব যত্নে রাখবো ভালোবাসবো।
আসলে আমি বোধ হয় চাইলেও পারবোনা তোমার কোনো ক্ষতি করতে।”
– “আমি আগেও আপনাকে বলেছি আমাকে স্পর্শ করবেন না।” সে মুচকি হেসে বলে উঠলো,
– “আমি চাইলে কিন্তু, অনেক কিছু’ই করতে পারি তোমার সাথে।” মিম তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো।
হঠাৎ তার স্পর্শ যেন ইমানের কাছে খুব পরিচিত বলে মনে হচ্ছে।
সে বারবার মিমের হাত নিজের গালে চেপে ধরতে লাগলো। তার মধ্যে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে…মনে হচ্ছে এই স্পর্শ তার পূর্ব পরিচিত। কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব?
এবার ইমানের মনে একটু একটু করে আশংকা তৈরি হচ্ছে। আচমকা’ই মিম কেশে উঠলো। ইমান দ্রুত কোলে তুলে বাথরুমে নিয়ে গেলো তাকে।
অতঃপর, সে একটা শাড়ি এবং মিমের প্রয়োজনীয় সকল জিনিস বাথরুমের দরজায় রাখলো।
মিম ভেজা জামা-কাপড় ছেড়ে এলোচুলে বেড়িয়ে এলো বাথরুম থেকে। ইমান মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলো। মিম তাকে ঝাড়ি মে’রে বলে উঠলো
– “আপনি এই ভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?”
– “আমি এভাবেই তাকাই, তোমার সমস্যা হলে বলো আমি এখুনি বেড়িয়ে যাচ্ছি এ ঘর থেকে।”
মিম হঠাৎ তাকে দরজার কাছে এগিয়ে যেতে দেখে তার পথ আটকে দাঁড়িয়ে পরলো। ইমানের দু’গাল শক্ত করে চেপে ধরে বললো,
– “শুনুন, আমাদের দু’জনের মাঝে যা কিছু হচ্ছে তা শুধু এই বন্ধ দরজার আড়ালেই চাপা পরে থাকবে। বাহিরের লোককে দেখিয়ে লাভ কি? হুমম? বাহিরের লোক জানবে খুব প্রেম ভালোবাসা আপনার আমার মধ্যে।”
– “মানে কি? তুমি কি পারবে সারা জীবন আমায় ভালো না বেসে এই বাড়িতে একই ছাঁদের নিচে আর এক বিছানায় কাটিয়ে দিতে?”
– “কেন পারবোনা জনাব? জীবন টা নাটকের চেয়েও নাটকীয়…..সবে কিস্তি মাত করার সুযোগ টা আমার হাতে এসেছে।”
– “ভণিতা না করে যা বলার স্পষ্ট করে বলো।” মিম মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
– “আপনি কি শারীরিক ভাবে দূর্বল? না মানে, বাসর রাতে কে তার নতুন বউকে একা ফেলে বেড়িয়ে যায় ঘর থেকে? কি হলো? চুপ করে আছেন কেন? বলুন? না কি………..নিজের সব এনার্জি লস করে এসেছেন আপনার বাগান বাড়ির ওইসব সস্তা মেয়েদের কাছে
…….?
সামান্যতম লজ্জা নেই না আপনার? আপনার ধেই ধেই করে নাচা উচিত। তার কারণ আমার মতো এক টা ভালো মেয়ে নিজের জীবন সঙ্গি হিসেবে নির্বাচন করেছে আপনাকে। নয়তো, আমি আপনাকে আমার বাড়ির মেথর হিসেবে ও নিয়োগ দিতাম না।
যাগগে,
কি হলো বাহিরে যাবেন না এভাবে ভূত দেখার মতো চমকে আপনি তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?” ইমান এক পা দু’ পা করে এগোতে এগোতে মিমকে এক সময় ওয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো,
– “তোমাকে গিরগিটির মতো রং বদল করতে দেখে আমার সত্যি’ই খুব ভয় করছে।” মিম হঠাৎ নিজের হাতে তার পাঞ্জাবির বোতাম গুলো খুলে দিতে দিতে বলে উঠলো,
– “কি করবো বলুন?
দিন রাত চব্বিশ ঘণ্টা আপনার একান্ত সতীসাধ্বী স্ত্রী এবং বাবা-মায়ের বাধ্য কন্যা সেজে থাকতে খুব বোর লাগছে। তার জন্য নিজের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করছি…
নিজের মনোরঞ্জনের জন্যই আমি বিয়ে টা করেছি আপনাকে। বলছিলাম,
যে পাঞ্জাবি টা খুলুন আপনারর শরীর টা চেক করে দেখি? বাই দ্যা ওয়ে, কত মেয়ে এত দিন আপনার বিছানায় এসেছে?”
– “খোদার কসম, দয়া করে আমাকে ভুল বুঝো না তুমি।”
– “আল্লাহ তায়া’লা নাম ভাঙিয়ে একদম বাটপারি করতে আসবেন না আমার সাথে।
আপনার বন্ধু গুলো ও ঠিক আপনার’ই মতোন। সব গুলোর চরিত্রে সমস্যা আছে। এদিকে আবার শখ কত? সতীসাধ্বী স্ত্রী পাওয়ার লোভে হাপিত্যেশ করে মরছে।” ইমান নিজের রাগ শান্ত করতে মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরে বললো,
– “কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে?”মিম তাকে
চমকে দিয়ে বলে উঠলো,
– ” উই ক্যান ডু সে********। আফটার অল আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক। আমাদের কিছু শারীরিক চাহিদা আছে। কেন আপনার নেই?
আপনি কি গে না কি? ইয়া আল্লাহ, এ তুমি কোন আপদ জুটিয়ে দিয়েছ আমাকে?
ভার্জিন না, ওকে ফাইন। তাই বলে একটা ‘গে’ এর সাথে সংসারধর্ম পালন করতে হবে? অস্তাগফিরুল্লাহ্ নাউজুবিল্লাহ্ আল্লাহ তুমি ক্ষমা করে দাও আমাকে। ভেবেছিলাম, একটা ভার্জিন জামাই পাবো। শেষমেশ এইরকম একটা গে জুটলো আমার ভাগ্যে?”
ইমান যেন বোবা হয়ে গেলো আর একটাও শব্দ বের হচ্ছে না তার মুখ থেকে। বেশকিছু ক্ষণ পর, সে ঘোর কেটে বেড়িয়ে এলল…..
মিমকে কপাল চাপড়াতে দেখে বললো,
– “আমি এখনো ভার্জিন আছি এতো কষ্ট পেতে হবে না তোমাকে।”
– “আমি আর আপনাকে বিশ্বাস করিনা।”
– “আরেহ বাবাহ! আমি গে নই।
গে হলে কি আর ভুল করে নিজের বউকেই বিয়ের আগে নিয়ে তুলে নিয়ে আসতাম নিজের কাছে?”
– “এবার লাইনে আসো বাছা,
ছোটো লোক কোথা কার যেন একটা আমার গা- পিত্তী জ্বলে যাচ্ছে আপনাকে দেখে।” ইমান হাসতে হাসতে বললো,
– “আমি সত্যি ভার্জিন।”
– “আপনার কাছে এর স্বপক্ষে কোনো যুক্তি কিংবা প্রমাণ আছে?”
– “ভাই তোমার ল’ইয়ার হয়ে কোনো কাজ নেই। তুমি কোনো কারণ ছাড়াই শাসন করছ, কথা শোনাচ্ছ আমাকে…….।”
– “তুই তবে তোর কোলবালিশ নিয়েই বাসর কর। এই তোর বউ লাগবে কি করতে?” ইমান এবার টাস্কি খেয়ে তাকিয়ে রইলো।
মিম বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে ভুল বশত ইমানে’র কাঁধে পা তুলে দিয়ে বললো,
– “এই বার, ঠিক আছে।” ইমান দুষ্ট হেসে বললো,
– “তোমার কি আমার সর্বাঙ্গ ছেড়ে কাঁধে পা তুলতে মন চাইছে?”
মিম ইমানের টিটকিরি মূলক কথাবার্তায় পাত্তা দিলো না, সে নিজের ভুল স্বীকার করে বললো,
– “সরি গো, খেয়াল করিনি। ভুল করে একটা ষাঁড়ের গায়ে পা উঠে গেছে।”
– “তোমার মতলব কি? একটু খোলসা করে বলো তো?”
– “কি বলবো?
একটা বুড়ো দেখে বিয়ে করলেও শান্তিতে ঘরসংসার করতে পারতাম তার সাথে। তা না, আমার কপালে জুটেছে একটা মদন গায়ে জোর নেই আর না কোনো পুরুষত্ব আছে।”
মিমের শেষ কথা টা ইমানে’র খুব গায়ে লাগলো। সে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বউকে।”
মিম কাঁদোকাঁদো মুখ করে জিজ্ঞেস করে বসলো,
– “আবার মে’রেটেরে ফেলবেন না কি?”
– “না গো,
আমার তোমাকে জুস বানিয়ে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।” মিম বেশ চমকে গেলো। ইমান তার কপালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “এইবার ভালো লাগছে?” মিমের শরীর যেন বরফ শীতল হয়ে গেলো।
সে তবুও শক্তি সঞ্চয় করে আমতা আমতা করে তার জিজ্ঞেস করলো।
– “আ আ আপনি, এটা কি করলেন আমার সাথে?”
– “ভেবেছি বাসর রাত টা আর নষ্ট করবো না। এতো সুন্দর একটা বউ পেয়ে মাথাটা বিগড়ে গেছে। আমি নিজেকে সামলাতে পারছিনা।
দেখ কতটা ঘেমে গেছি আর এই সব তোমার কারণে হচ্ছে।” মিম ভেংচি কেটে জিজ্ঞেস করলো,
– “আমি কি করলাম আবার?”
– “দেড় বছর আগে মদ্যপ অবস্থায় আমার তোমাকে দেখেই মাথাটা বিগড়ে গেছে। আর এখনো ঠিক তাই”
– “দেখুন, আমার আপনার আদর খাওয়ার কোনো শখ নেই। আপনার খালাতো বোন, কি যেন নাম ওর? ইস্পা।
-হ্যাঁ, ইস্পা পর্দার ফাঁকা থেকে আমাদের দু’জনকে দেখছে……।” ইস্পার কথা শুনে প্রথম প্রথম ইমানের রাগ গলো খুব……….মিম তাকে দেখাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিজের নিজের স্বামীকে। ইমান তখন বউয়ের গালে অনবরত চুমু খেতে লাগলো মিম তাকে বললো,
– “এবার ছাড়ুন, অনেক হ’য়েছে।” ইমান ফিসফিস করে বলে উঠলো,
– “এখনো কিছুই হ’য়নি ম্যাডাম আর ইস্পাকে আমি
যতদূর চিনেছি। ওই বেয়াদব সারারাত ওখানেই পার করবে।”
– “আপনাদের বড্ড নৈতিক শিক্ষার অভাব। এখন কি আমাকে কাপড়চোপড় খুলে ফেলতে হবে?”
– “সেসব অন্য হিসাব। কিন্তু, এখন আমার বাঘিনী ভয় পেয়ে গেলে কি করে চলবে?” মিমের ভ্রু কুঁচকে গেলো,
ইমান ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে লাইট টা অফ করে দিলো সঙ্গে সঙ্গে।
অতঃপর, সে কিছু উদ্ভট কিছু ভয়েস রেকর্ডিং প্লে করে দিলো। মিম বিরক্ত হচ্ছে বুঝতে পেরে বললো,
– “তুমি তো আর চেল্লাবেনা।
তাই তোমার হয়ে আমার ফোন বেচারা টাই চেল্লাছে”
মিম রেগে গিয়ে,
অন্ধকারে কয়েক ঘা বরের পিঠে বসিয়ে দিলো আর ইমান বাংলা ছবির মতোন পা ঘষাঘষি করলো বউয়ে
‘র সাথে।
ইস্পা সেসব দেখে চোখের জল মুছতে মুছতে নিজের ঘরে চলে গেলো। এদিকে, নবদম্পতি একে অপরকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেছে।
তখন ভোর রাত, মিম ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখল। ইমান নিজের শরীরের ভার ছেড়ে দিকে ঝুঁকে আছে। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই। ইমান তার কপালে আবারও চুমু খেলো…।
মিম নিজেকে সামলে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরলো নিজের এলোমেলো কাপড়চোপড় ঠিক করতে। কিন্তু, ইমান তাকে সেটা করতে দিলো না৷ সে ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলো তার সাথে।
ধীরে ধীরে মিম তাকে সম্মতি দিতে লাগলো। সকালে তার ঘুম ভাঙলো ইমানে’র বুকে। সে উঠে দ্রুত ফ্রেশ শাশুড়ির ঘরে চলে এলো। এমা কিছু একটা বুঝে ফেললেন পুএবধূকে দেখে,
ইমান ঘুম থেকে উঠে ফরজ গোসল টা সে’রে বউকে খুঁজতে শুরু করলো। প্রচণ্ড ভালোলাগার পাশাপাশি তার খারাপ লাগাও কাজ করছে।
তার মনে হচ্ছে কাজ টা সে ঠিক করেনি, যদি তাদের মাঝে দূরত্ব বেড়ে যায় তখন কি হবে? ছেলেকে একটু চিন্তিত দেখে আজমির সাহেব বললেন,
– “তুমি মা কে খুঁজছো? তাকে আমাদের ঘরে সকলে মিলে রিসেপশনের জন্য তৈরি করছে।”
– “ও উঠে কিছু খেয়েছে বাবা?”
– “না, আপু খাবে কি? তার চোখ থেকে অনবরত জল পরছে।” তুর্ণের কথা শুনে ইমান চিন্তিত মুখে মা বাবার ঘরে চলে এলো। মিমের সাথে দেখা করতে চাইলে সে শাশুড়ি কে বললো,
– “মা আপনার ছেলেকে বলুন,
আমি আপাতত কোনো কথাই বলতে চাইনা তার সাথে।”
চলবে,,,