#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৫
বউয়ের শেষ কথাটা তার উত্তেজনা বৃদ্ধি ঘটালো। সে কোনো ভণিতা ছাড়াই, নিজের সকল ধৈয্য হারিয়ে বাবা-মায়ের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে এমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো।
– “মা তোমরা একটু বাহিরে যাবে?”তিনি মুচকি হেসে কাজের মেয়ে টাকে নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে এলেন। ইমান গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে পরলো বউয়ের পাশে……।
মিমের তাকে নিয়ে বিন্দু মাএ মাথা ব্যাথা নেই, সে নিজের মতো করে সাজছে। ইমান তাকে চুপচাপ দেখে বেশ অবাক হল।
বেশ কিছুক্ষণ পর, সে বলে উঠলো,
– “তোমাকে আজ বোধহয় একটু বেশি সুন্দর দেখতে লাগছে।”
– “আমি জানি, আমি সুন্দর। নতুন কিছু বলুন, বার- বার সেই একই কথা আর একই ডায়লগ শুনতে আমার বেশ বিরক্ত লাগছে।”
– “ভোর রাতের জন্য আমি দুঃখিত।”
– “বি এ ম্যান, মিস্টার খান। এতো টা ন্যাকামো ঠিক মানাচ্ছেনা আপনাকে। ন্যাকামো আমি করবো। স্বামী হয়েছেন।
আপনাকে সেটা সহ্য করতে হবে। দেখুন,
যেটা হয়েছে, সেটা বুক ফুলিয়ে স্বীকার করুণ। আমি অস্বীকার করছিনা। আমার ও পূর্ণ সম্মতি ছিলো সে সবে। আমরা দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাহলে শুধুশুধু জল ঘোলা করেছেন কেন? দয়া করে ‘ভিক্টিম’ বলে মনে করবেন না আমাকে। আমি আসলে ভোররাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে কিছু ভাবছি না আর ভিক্টিম বলেও মনে করছি না নিজেকে……..।
কিছু সময়ের জন্য আবেগি হ’য়ে পরেছিলাম। অবশ্য, সেই আবেগ এখন কেটে গেছে। দু’জন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মাঝে তাদের সম্মতিতে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের সৃষ্টি হওয়া কোনো পাপ না। হ্যাঁ, তবে বিয়ের মতো একটা বন্ধন নিশ্চয়’ই থাকা উচিত তাদের মাঝে। না হলে এই সমাজ, আবার আপনার এবং আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে ফেলবে।” ইমান হঠাৎ, তার কথা শুনতে শুনতে তাকেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। মিটিমিটি হেসে বলে উঠলো,
– “তুমি ভাঙবে তবু মচকাবে না।
বোঝাই যাচ্ছে, কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই অনুতপ্ত।”
– “কি বলুন তো?
আপনাদের মতো কিছু পুরুষের বাড়িতে বিরিয়ানি রেখে বাহিরে পান্তা ভাত খেতে খুব ভালো লাগে।” সে মিটিমিটি হেসে বলে উঠলো,
– “তুমিই আমার পান্তা বিরিয়ানি তাহলে আমি কোন দুঃখে বাহিরে যাবো? যাবো না কখনো। একটু ভরসা করে দেখ আমাকে।”
– “সরি আই কান্ট।” ইমান তখন ঝুঁকে দীর্ঘতম চুম্বন করতে লাগলো নিজের স্ত্রীয়ের ঠোঁটে।
ওর এমন আকস্মিক আক্রমণে মিম চমকে গেলো। কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তি করার পর মিম রেগে গিয়ে বললো
– “ছাড়ুন, আমার সাজপোশাক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” ইমান ঝাড়ি খেয়ে হাসতে হাসতে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো। যদিও সে বউকে নিয়ে কিছু টা চিন্তিত হয়ে আছে….।
মিম রেগে-মেগে নিজের মেক-আপ তুলে ফেললো। তুর্ণ গিয়ে এমাকে বললেন,
– “মা তোমার ভাইয়াকে ও ঘরে ঢুকতে দেওয়া’ই ভুল হ’য়েছে।” ইমানের মুখ টা শুকিয়ে গেলো এমা মেয়ের কথা শুনে মিটিমিটি হেসে ঘরে ফিরে এসে দেখলেন। পার্লারের মেয়ে টা আবারও নতুন করে তার পুএবধূর মেক-আপ করছে। যদিও,
তিনি এই বিষয়ে আর কিছু বললেননি। মিম শাশুড়ি মায়ের হাসিহাসি মুখটা দেখে তখন জিজ্ঞেস করলো।
– “মা কিছু বলবে?”
– “না মা, বলছিলাম যে তুমি আবার ভুলটুল বুঝো না আমার বোকা ছেলেটাকে।
ও আসলেই সরল সোজা মানুষ, সবে সংসার করছ ধীরে ধীরে একদিন নিজেও বুঝতে পারবে।”
– “কিন্তু,মা আমি যদি বলি আপনি একটা ভুল ধারণা পোষণ করছেন আপনার ছেলের সম্পর্কে। আর, হ্যাঁ। তিনি মোটেও সরল সোজা মানুষ না।
চেহারায় একটা ইনোসেন্ট ভাব থাকলেও উনি ওনার আসল চেহারা টা সকলের কাছ থেকে’ই লুকিয়ে রেখেছে…………?”
তিনি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বললেন,
– “এখন, কি বলি? বলো মা? তোমার বাবাও সরল- সোজা মানুষ ছিলেন না আমার কাছে।
তবে আমি তাকে একটা শর্ত দিয়েছিলাম আর তিনি সেটা মেনে নিয়েই এতো গুলো বছর ধরে আমার সাথে থেকে গেছে।
আমি কিন্তু সেই আমার শর্ত মানার জন্য তাকে জোর করিনি। একদম’ই না।
তবুও তিনি সারাজীবন আমাকে শীর্ষ মর্যাদা দিয়েছে
আমি ওনাকে চোখের সামনে পরিবর্তন হতে দেখেছি আর উনি হ’য়তো নিজেই চেয়েছিল আমার কাছে থিতু হতে। আমি কখনো’ই ওনাকে ওনার বদঅভ্যেস গুলো ছাড়তে বলিনি।
উনি সেগুলো ছেড়েছেন নিজ উদ্যোগে। আমি জানি, মা। মানুষ কখনো পারফেক্ট হতে পারেনা……….. হ্যাঁ, তবে আমরা চাইলে এ্যাপ্রিশিয়েট করতে পারি তাকে।
তার ভালো কাজ গুলোকে।
আমি মানছি,আমার ছেলের অনেক দোষ। তবে তুমি চাইলে পারো তাকে একটিবার সুযোগ দিয়ে নিজের মনের মতো করে গড়ে তুলতে।
আমি স্বীকার করছি, আমি তাকে ভালো করে গড়ে তুলতে পারিনি।”
– “মা…!”
– “এতো অবাক হওয়ার কিছু হয়নি মা। তবে তুমি চাইলে পারো তাকে নিজের মতো করে গড়ে নিতে। দেখ মা, আমরা আজ আছি কাল নেই।
কাজেই,এই গরু, গাঁধা পিটিয়ে তোকেই মানুষ করতে হবে।” শাশুড়ির কথায় মিম উচ্চ শব্দে হেসে উঠলো। তিনি হাসতে হাসতে বললেন,
– “আমি শেফালীকে দিয়ে নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসে- ছি মা। এখন কিন্তু, খেতেই হবে।”
– “কিন্তু?”
– “কি কিন্তু? এখন না খেলে তোমার শরীর খারাপ করবে।”
– “একটু পরে খাই?”
– “না, এখুনি খেতে হবে।” মিম মিটিমিটি হেসে বলল,
– “তাহলে খাইয়ে দাও।” তুর্ণ গাল ফুলিয়ে মুখ ভার করে বলে উঠলো,
– “মা তার নতুন মেয়েটাকে পেয়ে একদম’ই আমাকে ভুলে গেছে।”
– “হুমম, তোর এই হিংসুটেপনা আমার ঘরের বাহিরে গিয়ে কর।”
– “দেখলে আপু (মিম)? সত্যি বলেছি,তাই তার গায়ে ফোস্কা পরেছে।” মিম হাসতে লাগলো। এমা বললেন পাগল ছাগলদের কথায় কান না দিতে।
তখন’ই ইস্পা সেই ঘরে ঢুকে পরলো, এমাকে বললো করে বললো,
– “মণি, মা তোমাকে একটু ডেকেছে।” ওর কথা শুনে তিনি বোনের কাছে চলে এলেন। আমেনা কথায় কথায় বললেন,
– “এ তুমি কেমন মেয়েকে এত বড় বাড়ির বউ করে নিয়ে এলে বড় আপা? যে কি না তোমার ছেলের সম্পর্কে’ই তোমার কানে বিষ ঢালছে?”
– “ও ভীষণ সরল, আমেনা।
মনে শয়তানি বুদ্ধি থাকলে আর নিজের মা মনে করে এতো কিছু খুলে বলতো না মেয়ে টা আমার কাছে।”
– “তুমি ভুল ভাবছ খালামণি।”
– “ইস্পা, তুমি দয়া করে আর কখনো মানুষ চেনাতে এসো না আমাকে।
তোমার থেকে মানুষ চেনার অভিজ্ঞতা আমার বেশি। আমি আমার মেয়ে সম্পর্কে আর কোনো পরনিন্দা কিংবা পরচর্চা কোনো টাই করতে চাইনা তোমাদের সাথে।”
– “তুমি তোমার ছেলের বউয়ে’র দোষ একদম’ই দেখতে পাচ্ছনা আপা।”
– “হ্যাঁ, পাচ্ছি না। তোদের মা মেয়ের আর কিছু বলার আছে? আমার ইমান তোদের একদম ঠিক চিনেছে। আমি’ই বরং এতো বছর ধরে চিনতে পারিনি তোদের কে……।”
কথা গুলো ব’লেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন, এমা। ওদিকে, নিমন্ত্রিত সকল অতিথিরা’ই একে একে আসতে শুরু করেছে। সে এক আনন্দঘন মুহুর্ত ইমান নিজে গেটে দাঁড়িয়ে থেকে সবাইকে ফুল দিয়ে ওয়েল কাম করছে।
কিছুক্ষণ পর,মিমের বাপের বাড়ি থেকে সকলে এসে উপস্থিত হলো। ইমান সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো শশুরকে। তারপর,
দুই শা*লার সাথে কোলাকুলি করলো। নয়ন মিমের কাছে নিয়ে গেলো নয়ন, রেষা, লাবণ্য, হালিমা এবং নিরা কে।
মেয়ের সাজপোশাক দেখে হালিমা বেশ অবাক। এক দম রানীর মতো দেখতে লাগছে মেয়ে টা কে একদম চোখ সরানো যাচ্ছে না। মনেমনে ভাবছে,
“গহনা পরলে না জানি আমার মেয়ে টা কে দেখতে কত সুন্দর লাগবে?”রেষা গিয়ে বোনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো, মিম বললো,
– “বেয়াদবি করার জন্য আমি দুঃখিত, বড় আপু।”
– “আমিও বোনু, পারলে ক্ষমা করে দিস আমাকে।”
– “ওরা তোমাকে আবার কোনো কষ্ট দিচ্ছে না তো?”
– “না রে,
বাবা ফ্লাট বাড়ি টা আমার মানে লিখে দেওয়ায় সবাই এখন আমাকে মাথাকে তুলে নাচছে। সে এক এলাহি কাণ্ড।
শুনেছি, তুই না কি বাবাকে বলেছিস ফ্লাট বাড়ি আর আমার প্রাপ্ত জায়গাজমি গুলো তোর দুলাভাইয়ের নামে লিখে না দিয়ে বরং আমার নামে লিখে দিতে?”
– “হুমম, আমি শুধু তোর সুখের কথা’ই চিন্তা করেছি বড় আপু।
ওই গুলো ভাইয়া পেলে খুব টর্চার করতো তোকে।” বোনের কপালে চুমু খেয়ে রেষা বলে উঠলো,
– “ধুরর, পাগলি কোনো ব্যাপার না।
এখন আবার কেঁদে ফেলিস না মেক-আপ নষ্ট হয়ে যাবে।” মিম খিলখিল করে হেসে উঠলো, নয়ন বোন কে জড়িয়ে ধরে বললো,
– “আমরা খুব মিস করছি তোমাকে।” মিম চোখমুখ শক্ত করে বললো,
– “আমি মোটেও মিস করছিনা৷
বাবা-মা, তুর্ণ তোমাদের ভাইয়া সকলে আমার খুব যত্ন করছে।” মেয়ের কথা শুনে হালিমা মুচকি হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
– “মাএ একদিনেই শশুর বাড়ির লোকেরা তোমার এতো আপন হ’য়ে গেছে?”
– “হুমম, কেন? আপনি খুশি হননি?”
– “কেন খুশি হবো না মা? তোমার সন্দেহ আছে?” মিম তার সাথে আর কোনো ঝামেলা বাড়ালো না। কিছুক্ষণ পর,
তুর্ণ এসে তাকে ছাঁদে নিয়ে গেলো৷ সেখানে ইমানে’র ফটোসেশান চলছে।
বউকে দেখা মাঐ সে যেন রোমান্টিক মুডে চলে গেল
তার হাবভাব দেখে জোহান বললো,
– “ভাই তোর চেহারা’ই বলে দিচ্ছে। কাল রাতে ভাবি তোর খুব যত্ন-আত্তি করেছে।”
– “হ্যাঁ তো?
তুই আসলে কি জানতে চাইছিস আমার কাছে? না মানে মহিলাদের খুব আগ্রহ থাকে।
তারা বাসর ঘরের রোমান্টিক গল্প শুনতে চায় নতুন বউয়ের কাছে। কিন্তু, তোরা….।
তোরা তো আর মহিলা না ভাই? এতো কিসের কৌতু -হল তোদের? আমার বউ আমাকে ভালোবাসবে না তাহলে ভালোবাসবে কাকে?”
– “জোহান ওভাবে কথা টা বলতে চায়নি বন্ধু।”
– “তেরাও কখনো বলার চেষ্টা করিসনে তবে।
দেখ, এইসব বিষয় গুলো আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ সেখানে একটু ও গ্রহণ যোগ্য নয় আমার কাছে…….।”
– “বুঝেছি বন্ধু। কিন্তু, আমাদের ভাবি কেন মুখ টা বেজার করে বসে আছে?”
ইমান মিটিমিটি হেসে বউয়ের কাছে এগিয়ে গেলো। একরকম,
জোর করেই সকলের সামনে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
মিম ইমানের আকস্মিক আক্রমণে…….থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইলো। সে বউয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলো,
– “সত্যি, সত্যিই তোমায় আজ ভীষণ সুন্দর দেখতে লাগছে। একদম’ই আমার মনের মতোন।
আচ্ছা, তুমি কি জানো? হুমম? আমি এভাবেই দেখতে চেয়ে ছিলাম তোমাকে।”
চলবে,,,
#ব্যক্তিগত_সুখ
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৬
– “আমি আপনার মনের কথা কি করে জানবো? লজ্জা করে না আপনার? একটু লজ্জা থাকা উচিত আপনার।
সকলের সামনে আপনি এসে কেন জড়িয়ে ধরলেন আমাকে? এখানে, এখানে বাবা-মা আছে। আপনার আমার ছোটো-ছোটো ভাইবোন ছাড়া আরও অনেক বয়োজ্যেষ্ঠরা আছে।”
– “হ্যাঁ তো? তাই বলে কি আমি আসতে পারবোনা আমার নিজের বিয়ে করা বউয়ের কাছে?
দেখ, এই মুহুর্ত থেকে আমি তোমার সাথে সারাক্ষণ চিপকে থাকবো আর তাছাড়া কেউ কিছু বললেও আমার কিন্তু কিছু যায়আসে না তাতে।
শোনো, এখানে বউ তুমি আমার। আমি এখন চিপকে আছি প্রয়োজনে, শুয়ে গড়াগড়ি খাবো মেঝেতে। তবুও
এরওর কথা দিয়ে আমি কখনো’ই তোমাকে বিচার করতে যাবো না। কারণ, আমি খুব ভালো করে চিনে গেছি তোমাকে।”
– “আপনি কি থামবেন?”
– “না তা কেন? কি ভাবছ তুমি? লোকে কি বলবে? বিয়ের পর,
বাহিরের লোকদের এতো জবাবদিহি করার কি প্রয়োজন? ওনারা কি আসবে?
তোমার এবং আমার সংসার টা গুছিয়ে দিতে? কি হলো বলো? আমার বউকে বাহিরের লোকের কথা শুনে চিনতে হবে আমাকে?”
– দেখুন, এমন কিছুই ঘটেনি। আপনি শুধু শুধু বাজে বকবেন না আমার বিরক্ত লাগছে।” ইমান তৎক্ষনাৎ প্রসঙ্গ পাল্টে জিজ্ঞেস করলো,
– “কাল বাবার বাসায় বেড়াতে যাবে না,?”
– “নাহ, যাবো না।
এই বিয়ে বিয়ে করে আমার ভার্সিটির ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস গুলো মিস হ’য়ে যাচ্ছে।”
– “তুমি এভাবে বলছ কেন? হুমম?
একটু বোঝার চেষ্টা করো বাবা-মা শুনতে পেলে তারা ভীষণ কষ্ট পাবে।”
– “আই ডোন্ট কেয়ার আর তাছাড়া আপনি বলেছেন এটা আমার নিজের বাড়ি।
তাহলে আমি আমার বাপের বাড়িতে বেড়াতে কেন যাবো? বলুন? কোন দুঃখে?”
– “শোনে, পাগলী।
নিয়ম রক্ষার ও কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে। নিয়ম রক্ষা করতে যাবে না তুমি? লোকে কথা শোনাবেনা বাবা-মা কে?”
– “শোনাবে কি শোনাবেনা সেটা তাদের ব্যাপার। আমি আর ফিরে যেতে চাই না ও বাড়িতে।” পাশে দাঁড়িয়ে ফাইজান সাহেব মেয়ের কথা শুনছিলেন। দীপ্ত,
সে-ও বোনের কথা শুনে মন খারাপ করে ফেলেছে। ইমান আর বউয়ের সাথে কথা বাড়ালো না। শশুর- শাশুড়ী কিংবা ওই বাড়ির অন্য কাওকে এতো জেদ করতে দেখেনি সে…..।
ফাইজান সাহেব এসে থেকেই আলাদা করে মেয়ের সাথে কথা বলা’র কোনো সুযোগ পাননি। তবে সে তার মেয়েকে হাসিখুশি দেখে কিছু টা হলেও নিজের দুঃশ্চিন্তা লাঘব করতে পেরেছে। ইমান গিয়ে শশুরের পাশে দাঁড়ালো। তাকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
– “আপনি একদম চিন্তা করবেননা, বাবা।
আমি ঠিক বুঝিয়ে ওই বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে যাবো আপনার কন্যাকে।” তিনি মুচকি হেসে বলে উঠলেন,
– “বড্ড অভিমানী আমার মেয়ে টা। কি জানি তুমি কি করে তার রাগ ভাঙাবে?”
– “এখনো গোটা একটা রাত পরে আছে বাবা। আমি আশা হারাই না এতো সহজে। নয়তো ছ’মাস আগেই হয়তো আমি আপনার মেয়েকে ভুলে যেতাম। তাকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছেটা আজও অব্ধি জিইয়ে রাখতাম না নিজের মাঝে।
কাজে’ই একটু অপেক্ষা করুণ, সে যেতে চাক বা না চাক আমি একটা মাস্টার প্ল্যান নিশ্চয়ই বের করে ফেলবো এর মধ্যে।
আর সে ওই বাড়িতে কাল যাচ্ছে, এটা নিশ্চিত। নিজ বাবার বাড়িতে কেন বেড়াতে যাবে না সে? এটা তো ঠিক না, তার সব কথা বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নিলেও আমার এটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে।”
কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে ছেলের কথা শুনে স্বস্তি পেলেন আজমির সাহেব এবং এমা। ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পেরে তাদের দু’জনেরই খুব গর্ব হচ্ছে। ফাইজান সাহেব, মেয়ের পাশে গিয়ে বসলেন। তিনি মেয়ের কপালে চুমু খেয়ে তার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বললেন,
– “এখনো, তুমি তোমার এই বুড়ো বয়স্ক বাবাটা’র ওপরে রাগ পুষে রাখবে?
ইমান, ছেলেটা কিন্তু মোটেও মন্দ নয় মা। দেরিতে হলেও একদিন তুমি ঠিক বুঝতে পারবে।”
তখন ইমান ওদের ইউনিভার্সিটিডর উপাচার্য এবং আইন বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার কে নিয়ে মিমের কাছে এগিয়ে এলো। হাসিমুখে বউকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
– “এই দেখ কারা এসেছে।” মিম যেন তাদের দু’জন কে দেখে লজ্জা পেলো।
সাথে ভার্সিটির অন্যান্য ডিপার্টমেন্টর প্রফেসর আছে
আবেদ সাহেব এগিয়ে এসে মিমের হাতে উপহার তুলে দিয়ে বললেন,
– “আপনি কেমন আছেন মা জননী?” মিম হাসি মুখে বললো,
– “জ্বি ভালো স্যার। আপনি কেমন আছেন? বাসায় সবাই কেমন আছে?”
– “আলহামদুলিল্লাহ্, ভালো আছি মা বাসায় ও সবাই ভালো আছে।
তা আপনি কি জানেন? এই ভদ্রলোক (ইমান) কে আপনার জন্য কত কাঠখড় পোহাতে হয়েছে?”
– “জ্বি, মানে না স্যার।”
– “তুমি ভীষণ লাকী, এই ছেলে টা তোমাকে অনেক ভালোবাসে তোমাকে।”
– “স্যার, আমিও ভীষণ লাকী। আসলে, মনের মানুষ কে নিজের করে পাওয়ার মধ্যে অদ্ভুত এক শান্তি লুকিয়ে আছে।”
– “হ্যাঁ তা ঠিক, তবে তোমাদের দু’জনকে এক সাথে হাসিখুশি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। এভাবেই মিলেমিশে থেকো তোমরা।
উপদেশ হিসেবে বলবো,”স্বামী স্ত্রী হয়েছ তোমরা। ঝগড়াবিবাদ হলে চেষ্টা করবে সাথে সাথে সম্ভব না হলেও………..কিছুক্ষণের মধ্যে মিটিয়ে ফেলতে আর কখনো সম্পর্কের মধ্যে কোনো তৃতীয় পক্ষের হস্ত- ক্ষেপ গ্রাহ্য করবেনা।
কারণ এরা আসে আমাদের উষ্কে দিয়ে মজা দিতে।” আবিদ সাহেবের কথা শুনে ইমান মিম দু’জনেই হাসিমুখে বলে উঠলো,
– “আচ্ছা স্যার, মনে থাকবে।”
তখন তুর্ণ ছুটতে ছুটতে মিমের কাছে চলে এলো। ও কে হাঁপাতে দেখে মিম জিজ্ঞেস করলো,
– “কি হয়েছে তুর্ণ? শরীর খারাপ লাগছে না তো?”
– “না না আপু, শরীর?
একদম ঠিক আছে। তুমি চলো তোমার ফটোসেশান, তোমাদের কাপল ফটোসেশান। সব এখনো বাকি আছে।” মিম তখন’ই ওর সাথে চলে গেলো। মিমের সিঙ্গেল ফটোসেশানে’র মাঝে ইস্পা এসে ঝামেলা করতে লাগলো কারণ সে ছবি তুলবে।
এই খবর সাব্বির ইমানের কাছে পৌঁছে দিলো। ইমান গিয়ে ইস্পাকে বললো,
– “তোর ছবি তোলার সময় কি পেরিয়ে যাচ্ছে? কি সমস্যা কি তোর? না আমায় একটু খুলে বল। শুনি, কোথায় তোর জ্বালাযন্ত্রণা হচ্ছে?” এক ঘর লোকের সামনে অপমানিত হয়ে বেশ চুপচাপ ইস্পা।
মিমের ফটোসেশান শেষে তাদের কাপেল ফটোশুট শুরু হয়েছে। এরপর, ফ্যা-মলি ফটোসেশান শুরু হল
……।
দু’ই পরিবারের সকলে মিলে সেই সময় টুকু উপভোগ করছে। মিম কথায় কথায়, কি যেন ভেবে ইমানকে বললো,
– “আজ রাতে, একটু তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরার চেষ্টা করবেন। জানি না, রাত জেগে জেগে এতো কি গল্প করেন বন্ধুদের সাথে……!” বউয়ের বিষ্ময়কর চাওনি দেখে হেসে ফেললো ইমান৷ তবে মিমের এই কথা টা তার চেহারার জৌলুশ।
আরও কয়েক’শ গুণ বৃদ্ধি করেছে। মুখে প্রকাশ না করেও মনেমনে সে আজ ভীষণ খুশি। বউয়ের এই আবদার সে আজ যেকোনো মূল্যে পূরণ করবে।” তাদের রিসেপশনের অনুষ্ঠান,
শেষ হতে না হতে মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো।
ইমান ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজ পড়ে বসলো বউয়ের পাশে।
তখন জোহান এসে ইমানের নাম ধরে ডাকাডাকি করতে লাগলো। ইমান বললো,
– “আজ ভালো লাগছে না ইয়ার। তোরা এনজয় কর আমার শরীর টা কেমন যেন লাগছে।” ফারদিন মিটি মিটি হেসে জোহানকে বললো,
– “আরে ভাই বাদদে, নতুন বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেছে।” অর্নব ভিডিও কলে ছিলো। দু’জনের কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
– “থাক ভাই, কষ্ট পাস না। প্রথম প্রথম এমন করবে তারপর তার আমরা ছাড়া গতি নেই।”
– “কে বলছে নেই? বউ বলতেই যেন সে হুঁশ হারিয়ে ফেলছে।” মিম নামাজ পড়ে উঠে ইমানের কাছে এসে দেখলো সে বিছানায় শুয়ে।
হয়তো ঘুমিয়ে আছে? ও এগিয়ে এসে মুচকি হেসে তার গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দিলো।ইমান হঠাৎ তার হাত চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
– “কাছে পেতে চাইছ আমাকে?”
– “কোই?
– কোই না তো? আমি কি এমন কোনো ইঙ্গিত কিংবা ইশারা দিয়েছি আপনাকে?”
– “আমি জানি, তুমি আমাকে কাছে পেতে চাও।”
– “কাল চেয়ে ছিলাম আর সেটা সত্যি। তবে আজ সে ইচ্ছে টা ম’রে গেছে।” ইমান হঠাৎ তাকে টেনে নিজের ওপরে ফেলে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– “কেন?”
– “কি জানি? নতুন করে বাসর ঘর কে সাজাতে বলে ছিল আপনাকে? ওরা আমাকে এ ঘরে আসতে দিতে চাইছিলনা।”
– “ওহ, তাই বুঝি আমার বেগমের গোস্বা হয়েছে?”
– “দেখুন,
আমি এতো শত জানি না।”
– “আচ্ছা, কোনো ব্যাপার না, ঠিক আছে।” তখন ইস্পা দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
ইমান তাকে দেখেও না দেখার ভান করে মিমকে বেশ শক্ত করে’ই জড়িয়ে ধরলো নিজের বুকে। মিম চুপটি করে তার বুকে মিশে রইলো।
ইমান হঠাৎ যত রাজ্যের রোমান্টিক কথাবার্তা বলতে শুরু করলো বউয়ের সাথে। মিম লজ্জায় তার বুকের ওপর থেকে সরে গেলো তার মুখ টা ধরলো চেপে।
ইমান মুখের ওপর থেকে বউয়ের হাতটা সরিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো,
– “মনের মধ্যে এতো জমিয়ে রাখা কথা তোমায় বলবো না, তাহলে বলবো কাকে?” মিম তখন আয়না
‘য় ইস্পার প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো। ও কিছু টা রেগে গিয়েই বললো,
– “আমার মনে হয় আমাদের কক্ষে আপনি আমি ছাড়াও হয়তোবা কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আছে?” ইস্পা তখন এলোমেলো পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো। ইমান তাকে শুনিয়ে বলে উঠলো,
– “হতে পারে। তবে কেউ চাইলেও পারবেনা তোমার জায়গা টা আমার জীবন থেকে কেড়ে নিতে। এতো সহজ না তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া। খুব ভালোবাসি আমি তোমাকে।”
চলবে,,,