ভালোবাসাময় প্রহর পর্ব-০১

0
523

#গল্পের_নাম_ভালোবাসাময়_প্রহর
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্ব:১

~মিস অধরা জাহান,এই চিঠিগুলো কী তোমার দ্বারা লেখা হয়েছে?
রক্তিমের প্রশ্নে অধরা শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে ফেললো। রক্তিম অধরার একদম কাছে গিয়ে বললো,
~উত্তরটা তাড়াতাড়ি দিলে খুশী হবো।
অধরার ভ/য়ে হাত-পা ঘে/মে একাকার অবস্থা রক্তিম অধরার থুতনি ধরে মাথা উঁচু করে বললো,
~কথা না বললে সব চিঠি তোমার বাবার কাছে পৌছে যাবে।
অধরা “বাবার” কথা শুনে কেঁ/পে উঠলো তাই সে আমতা আমতা করে বললো,
~প্লিজ রক্তিম ভাইয়া,আপনি বাবাকে কিছুই বলবেন না আমি লিখেছি চিঠি গুলো কিন্তু দিবা আপুর কথায় সে বলেছিল এসব আমাকে চিঠি গুলো লিখতে।
রক্তিম বাঁ/কা হেসে অধরাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~রুমে চলে যাও ছাদে যেন আর না দেখি।
অধরা আর এক সেকেন্ডও সেখানে দাড়ালো না এক প্রকার দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে পরে অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
~একজন কে হা/তি/য়ার বানিয়ে আমাকে বশ করতে পারবেনা দিবা, আমি একজনেই আ/স/ক্ত হয়েছি সেই একজনকেই আমার চাই। তোমার শা/স্তি খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে পৌছে যাবে দিবা তুমি এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকো।
অধরা ছাদ থেকে নেমে সোজা চলে গেলো নিজ রুমে বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস টানতে লাগলো।অধরার এমন অবস্থা দেখে তার ছোট বোন তন্নি অবাক হয়ে গেলো আর বললো,
~ভু/ত দেখেছিস নাকি তুই আপু এমন করছিস কেন?
অধরা বোনের দিকে একবার তাকিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো আর বললো,
~রক্তিম ভাইয়া,ছাদে গিয়েছিল।
তন্নি ভ্রুকুচকে বললো,
~তো কী হয়েছে?
অধরা তন্নির দিকে তাকিয়ে বললো,
~দিবা আপু যে চিঠি গুলো আমাকে লিখতে বলেছিল সেগুলো সে রক্তিম ভাইয়াকে দিয়েছে।
তন্নির মুখ হা হয়ে গেলো সে আশ্চর্যের চরম সীমানায় এখন যে রক্তিম ভাইয়াকে আমরা সবাই ভ/য় পাই তাকে চিঠি দিয়েছে দিবা আসলেই মেয়েটার সাহস আছে বটে। বোনকে এভাবে হা হয়ে থাকতে দেখে অধরা বললো,
~হা হয়ে আছিস কেন?
তন্নি মুখ বন্ধ করে বললো,
~এই জন্যই শয়/তান মাইয়াটা নাম বলে নাই তোমারে।
অধরা বললো,
~হয়তো কিন্তু আমি রক্তিম ভাইয়াকে সব বলে দিয়েছি এখন সে জানে বাকিটা তার দিবা জানে।
শেষের কথাটা মুখ বা/কি/য়ে বললো অধরা তা দেখে তন্নি শয়/তানি মার্কা হাসি দিয়ে বললো,
~জ্ব/লে রে বন্ধু কারো তো জ্ব/লে।
অধরা তন্নির দিকে ছোট ছোট চোখ করে বললো,
~কঁ/চু তোর জামাইর জ্বলে।
অধরার কথা শুনে তন্নি হা হা করে হেসে উঠলো তন্নির হাসি দেখে অধরার গা জ্ব/লে উঠলো সে ধুপধাপ পা ফেলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।তন্নি গুনগুনিয়ে গান গেতে লাগলো
“প্রেমে পড়েছে মন, প্রেমে পড়েছে মন”
“অচেনা এক মানুষ আমায় পাগল করেছে”

রক্তিমের মুখোমুখি বসে আছে দিবা তার সামনে ছড়িয়ে রাখা হয়েছে চিঠিগুলো দিবা সেগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
~এসব কী রক্তিম?
রক্তিম শার্টের স্লিভ গুলো গুটিয়ে কনুই পর্যন্ত উঠিয়ে বললো,
~মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিস দিবা শাহ।এভাবেই তোকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য ডাকা হবে
দিবা কিছু না বোঝার ভান করে বললো,
~এসব কী বলছে তুমি রক্তিম?
রক্তিমের এবার রা/গ উঠে গেলো সে স/জো/রে টেবিলের উপর আ/ঘা/ত করে বললো,
~নাটক করিস তুই আমার সাথে এগুলো যে তোর কাজ আমি জানি।যাকে দিয়ে করিয়েছিস সেও সব বলে দিয়েছে বাকিটা তুই বল
দিবার মাথা ঘু/রে উঠলো অধরা যে সব কিছু বলে দিয়েছে তা বুঝতে সময় লাগেনি তার।দিবা বললো,
~হ্যা আমি করেছি এসব।
রক্তিম পায়ের ওপর পা তুলে বসে বললো,
~অধরাকে দ্বারা কেন করিয়েছিস তাও আমি জানি।
দিবা চোখ তুলে তাকালো টলটল করছে তার চোখ দুটি সেই অবস্থায় দিবা বলে উঠলো,
~আই লাভ ইউ রক্তিম। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তাই এসব আমি করেছি যাতে অধরা
বাকি কথা রক্তিম আর তাকে বলতে দিলো না সে দাড়িয়ে চিঠিগুলো এক এক করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো আর বললো,
~তোর শা/স্তি কী জানিস আজ থেকে তোর আর আমার সব রিলেশন শে/ষ।
দিবা আ/তঁ/কে উঠলো আর বললো,
~এমন ভাবে বলিস না।
রক্তিম আর দিবার কোনো কথা না শুনে গট গট করে বের হয়ে আসলো দিবা সেখানে বসেই চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
“রক্তিম”পুরো নাম আরাফ হোসেন রক্তিম মায়ের দেওয়া নামটাই সবাই ডাকে সেই ছোট বেলা থেকে বাবা-মায়ের বড় ছেলে রক্তিম,ছোট ভাইয়ের নাম আবরার হোসেন রাত।রক্তিম পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসায় বসেছে ২ বছর ধরে।
অধরা জাহান বাবা-মায়ের বড় মেয়ে সমাজকর্ম বিভাগে অর্নাসের ২য় বর্ষে পড়ছে।অধরার বাবা আর রক্তিমের বাবা ভালো বন্ধু যার দরুন দুই পরিবারেও ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
দুজনের বাসা পাশাপাশি হওয়াই রক্তিমের দেখা অধরা প্রতিদিনই পায় রক্তিমের সাথে অধরার সম্পর্ক জড়তার অধরার জড়তাই সবচেয়ে বেশি সে রক্তিমের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারেনা। এটার কারণ অধরার জানা নেই।রক্তিমকে সে ভ/য়ও পায় বটে কারণ রক্তিম তার শিক্ষকও ছিল ক্লাস ৮এ থাকতে সেসময়ই সে রক্তিমের রা/গ সম্পর্কে অবাগত হয়েছে।

রক্তিম বাসায় এসে নিজ রুমে চলে গেলো শার্টটা খুলে মেঝেতে ছু/ড়ে ফেললো।তারপর ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো শাওয়ার ছেড়ে তার নিচে দাড়িয়ে পরলো পানি তার শরীর বেয়ে পরছে।দুহাত দেওয়ালের মধ্যে ঠেকিয়ে সে চোখ বন্ধ করে একজনের চেহারা মনে করতে লাগলো সেই মানুষটির চেহারা দেখে রক্তিমের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে সে বের হয়ে আসলো আয়নার সামনে দাড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
~যার বিচরণ আমার স্বপ্নে আছে সে কখনো অন্য কারো হতে পারবেনা।
কালো রঙ্গের শার্টটা গায়ে দিতেই দরজা ঠেলে ভিতরে চলে আসলো রাত।তাকে দেখে রক্তিম বললো,
~এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি ভার্সিটি থেকে?
রাত ব্যাগ রেখে বিছানায় বসে বললো,
~মা ফোন দিয়েছিলো অধরাদের বাসায় দাওয়াত আজ।
রক্তিম শার্টের বোতাম লাগিয়ে বললো,
~তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তো আজ কান্ড বাধিয়ে দিয়েছিলো।
রাত বললো,
~কী করেছে কাউকে মে/রে দিয়েছে নাকি?
রক্তিম হালকা হেসে বললো,
~থাক সেসব কথা বাদ দে চল দুজন মিলে কফি খে/য়ে আসি।
রাত বললো,
~ঠিক আছে চলো।
দুভাই মিলে চলে গেলো নিচে মায়ের কাছে আবদার করলো কফি খাওয়ার অতপর কফির সাথে শুরু হলো তাদের আড্ডা।
অধরা রান্নাঘরে কাজ করছে মায়ের সাথে আবার মনে মনে চিন্তা করছে রক্তিমের কথা যদি সে সব বলে দেয় বাবাকে তাহলে কী হবে?তখনই হাতে গরম তা/প লাগতেই সে আ/হ করে উঠলো অধরার মা তার হাত ধরে বললো,
~কাজের সময় তোর ধ্যান থাকে কোথায়?
অধরা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
~আমি ঠিক আছি মা তুমি কাজ করো আমি আসছি মেহমান আসার সময় হয়ে যাচ্ছে।
অধরা রুমে চলে আসলো তন্নি রেডি হচ্ছে অধরাকে চিন্তিত দেখে তন্নি বললো,
~আপু,চিন্তা করিস না রক্তিম ভাই কিছুই বলবেনা।
অধরা বললো,
~তুই কীভাবে জানলি আমি কী ভাবছি?
তন্নি বললো,
~আমি সবই জানি বুঝসো তোমার ওই কা/লো রাত বেস্ট ফ্রেন্ড থেকেও তোমায় বেশি বুঝি।
অধরা হেসে বললো,
~দূর এসব কী বলিস চু/প থাক।
তন্নি বললো,
~কা/লো রাত না আমাবস্যার রাত বলা উচিত।
তন্নির কথা শুনে অধরা হাসতে লাগলে মুখে হাসি রেখেই কার্বাড থেকে কাপড় বের করে চলে গেলো ওয়াশরুম।

রাত:৮টা কলিংবেল বেজে উঠলো অধরা গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেলো রক্তিমের বাবা-মাকে।অধরা হেসে তাদের সালাম দিয়ে বললো,
~আঙ্কেল আন্টি ভিতরে আসুন।
রক্তিমের বাবা-মা ভিতরে প্রবেশ করলো রক্তিমের বাবা বললো,
~সবাই কোথায় মা জননী?
অধরা বললো,
~সবাই আছে আপনি বসুন।
রক্তিমের বাবা-মা সোফায় বসলো অধরা দরজা বন্ধ করে দিতে চায় কিন্তু দরজা আগে বাড়ছে না যেমন মনে হচ্ছে কেউ খুব শ/ক্ত করে তা ধরে রেখেছে তাই সে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই দেখতে পেলো রক্তিম আর রাতকে।রাত অধরাকে দেখে বললো,
~কী রে আমাদের ভিতরে আসতে দিবি না?
অধরা বললো,
~নাহ আসতে দিবো না তুই বাহিরেই থাক।
রাত অধরার হাত সরিয়ে ভিতরে ঢুকে বললো,
~তোর মতো পুঁটি মাছ আমাকে আটকে রাখতে পারবে?তোর এতো শক্তি আছে?
তখনই রক্তিম বললো,
~হাতে অনেক শ/ক্তি আছে চিঠি খুব ভালো লিখতে পারে।
রক্তিমের কথা শুনে রক্তিমের মা বললো,
~কীসের চিঠি?
রক্তিম হেসে অধরার দিকে তাকালো অধরার মুখটা কা/লো হয়ে গেছে রক্তিম কিছু বলবে তার আগেই অধরার মা,বাবা আর তন্নি হাজির হয়।তন্নি এসেই বললো,
~আমাবস্যার রাতও এসেছে।
রাত রে/গে বললো,
~তন্নির বাচ্চা
তন্নি বললো,
~আমার বাচ্চা নেই গো কিন্তু ভবিষ্যৎে হবে।
তন্নির কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো রক্তিম অধরার কাছে গিয়ে কানে ফিসফিস করে বললো,
~চিন্তা ক/রো/না তোমার গোপনীয় আমি রক্ষা করবো।
বলেই রক্তিম চোখ টিপ মা/র/লো অধরা তা দেখে অবাক হয়ে গেলো রক্তিম হালকা হেসে সোফায় গিয়ে বসে পরলো।

চলবে

(ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)