ভালোবাসার অধিকার পর্ব-০৬

0
639

#ভালোবাসার_অধিকার❤❤
লেখা: পূজা
পর্ব- ৬

দ্বীপ ওর সব কাজ শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১২টা বাজতে আর ১৫মি বাকি।
দ্বীপ: ঈশান এখনো আসছে না কেনো? গিয়ে দেখি।
দ্বীপ বিছানা থেকে উঠে ছাদের দিকে রওয়ানা দেয়। গিয়ে দ্বীপ তো ফুল শকড। ঈশানের এক হাত অনু আর অন্য হাত দিয়া ধরে লাফাচ্ছে আর বৃষ্টিতে বিজছে। ঈশানের অবস্থা খারাপ। ওর শরিরে একটু ও শক্তি নেই। লাফাইতে লাফাইতে সব এনার্জি শেষ।
দ্বীপ: এসব কি হচ্ছে(ধমক দিয়ে)
দ্বীপের কথা শুনে সবাই দারিয়ে গেলো। আর ঈশানের শরিরের যেনো প্রান এলো।
ঈশান: ভাই আমায় বাচা। দেখ কি করছে।
দ্বীপ: দিয়া এগুলো কি। ঠান্ডা লেগে যাবে। আর এতো রাতে কিসের বৃষ্টিতে বিজা।
অনু: 😏আমাদের ইচ্ছা।
দ্বীপ: তুমি চুপ থাকো। সব কিছুর মূলে তুমি। এই রাতের বেলা কেউ এমন পাগলামি করে। দিয়া চুপচাপ নিচে যা। ঈশান তুই ও যা।
দিয়া: অনু চল।
অনু: তুই যা।
দিয়া: কিন্তু…..
অনু: আমি এক্ষনি আসছি তোমরা যাও।
দিয়া: ওকে তারাতারি আসিস।
দিয়া চলে গেলো দিয়ার পিছন পিছন ঈশান ও গেলো।
দ্বীপ: তুমি গেলে না কেনো।
অনু: তুমি এখানে দারিয়ে আছো কেনো যাও।
দ্বীপ: চুপচাপ এখান থেকে আসো। বৃষ্টি বারছে।
অনু: আমার ইচ্ছা হলে আমি আসবো। আমি কারো কথায় আসতে বাধ্য নই।
দ্বীপ: এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
অনু: আমি কি তোমায় কিছু বলেছি। না তো। তাহলে এখানে দারিয়ে অযতা কথা বলছো কেনো। তুমি নিচে যাও।
দ্বীপ চাইছিলো না বৃষ্টিতে বিজতে। অনুর কথা শুনে ও খুব ভালোভাবে বুঝতে পারছে ভালো কথায় কাজ হবে না। তাই আর কিছু না বলে অনুর কাছে চলে গেলো।
অনু: একি তুমি বিজছো কেনো।
দ্বীপ: আমার ইচ্ছা।
অনু: হুম।
দ্বীপ: ভালোভাবে বলতেছি আসবে কিনা।
অনু: তুমি যাও। আমি একটু পর আসছি।
দ্বীপ: কেনো। এখানে এখন কি করবে।
অনু: কিছু করবো না। থাকতে ভালো লাগছে।
দ্বীপ: জ্বর এসে যাবে।
অনু: আসবে না আমার অভ্যাস আছে।
দ্বীপ: শেষ বারের মতো বলছি আসবে কিনা। রাত ১২টা বাজে।
অনু: আসবো না। কি করবে😐
দ্বীপ: আমি কিন্তু কোলে তুলে নেবো।
অনু: কিইইই😳
দ্বীপ: এখন তুমি কানে শুনতে পাও না?
অনু: 😐তুমি যাও তো এখান থেকে।
দ্বীপ: তার মানে আমার কোলে উঠতে চাও😜।
অনু: এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না।
দ্বীপ আর কিছু না বলে অনুকে কোলে তুলে নিলো। দ্বীপ অনুকে টাচ্ করতেই অনু বুঝতে পারে দ্বীপের শরির গরম হয়ে আছে।
অনু: এই এই কি করছো। নিচে নামাও। আর তোমার শরির এতো গরম কেনো।
দ্বীপ অনুর কোনো কথা না শুনেই নিচে নিয়ে যায় আর দিয়ার রুমে নিয়ে নামিয়ে দেয়। আর তখনি দিয়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়।
দিয়া: ভাইয়া তুই তো বিজে গেছিস যা ফ্রেস হয়ে নে। নয়তো জ্বর এসে যাবে। তুই তো বৃষ্টির পানি একদম সহ্য করতে পারিস না।
অনু: (ও নো। একটু বিজতেই শরির এইভাবে গরম হয়ে গেলো। সিওর আজ জ্বর আসবে)
দ্বীপ: যাচ্ছি।
দ্বীপ অনুর দিকে একবার তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ঈশান ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসে ছিলো। দ্বীপ কিছু না বলে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে যায়। অনুও গিয়ে ড্রেস চেন্জ করে নেয়। বিছানায় বসে অনু দিয়াকে বলে,
অনু: দিয়া গিয়ে দেখ না ওরা কি করছে।
দিয়া: কেনো?
অনু: আমি দ্বীপের শরির গরম দেখেছি। সিওর জ্বর আসবে।
দিয়া: কিইই? আগে বলবি না। আমি মেডিসিন নিয়ে যাচ্ছি। তুই এক কাজ কর নিচ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।
অনু: ওকে।

দ্বীপ ড্রেস চেন্জ করে এসে বিছানায় ধুপ করে পরে যায়। মাথা ভার হয়ে গেছে। ঈষান দ্বীপকে ঠিক করে শুয়ে দেয়। ওর নিজের ও কেমন জেনো লাগছে।
দিয়া মেডিসিন নিয়ে দ্বীপের রুমে যায় গিয়ে দেখে ঈশান দ্বীপ দুজনই বিছানায় মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে আছে। দিয়া গিয়ে দ্বীপের হাত সরিয়ে মাথায় হাত দিলো যা ভেবেছিলো তাই জ্বর এসে গেছে। এবার গিয়ে ঈশানের মাথায় হাত দিলো। ওর ও শরির কিছুটা গরম।
দিয়া: সিট। দুজনেরই জ্বর। ভাইয়া উঠে এই মেডিসিনটা খেয়ে নে। ঈশান তুমি ও উঠো।
ঈশান: আরে কিছু হয় নি শেরে যাবে।
দিয়া: একদম কথা বলবে না। চুপচাপ উঠে খাও। ভাইয়া তো তাকাতেই পারছে না।
ঈশান: দ্বীপকে মেডিসিনটা দাও। ও তো ছোট বেলা থেকেই বৃষ্টিতে এলার্জি। একটু বিজলেই জ্বর এসে যায়।
দিয়া: হুম। তার আগে তুমি এটা খাও। খেয়ে ভাইয়াকে খাওয়াতে হেল্প করো।
দিয়ার কথায় ঈশান মেডিসিনটা খেয়ে নেয়। আর দ্বীপকে ধরে তুলে। শরির অনেক গরম হয়ে গেছে টাচ্ করা যাচ্ছে না। অনু একটা ছোট পাত্রে ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়। আর দ্বীপের মাথার কাছে বসে।
অনু: আমি জল পট্টি দিচ্ছি।
দিয়া: ওকে। ঈশান দেখি।
দিয়া ঈশানের কপাল টাচ্ করলো ওর ও জ্বর কম না। দিয়া ঈশানকে জলপট্টি দিলো।
ঈশান: অনেক হয়েছে। আর লাগবে না। তোমরা যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পরো। আমি দ্বীপকে দেখছি।
অনু: জ্বর যেহেতু আমার জন্য এসেছে সেটা সারাবো আমিই।
ঈশান: কিন্তু….
অনু: কোনো কিন্তু না। দিয়া তুই গিয়ে শুয়ে পড়। আমি দ্বীপকে দেখছি।
দিয়া: পাগল নাকি। তকে রেখে কিভাবে শুবো।
অনু: আমার কিছু হবে না। একটু পরই আসছি। তুই যা।
দিয়া: ওকে। আমি যাচ্ছি।
অনু: ঈশান তুমি শুয়ে পরো।
দিয়া ওর রুমে চলে গেলো। ঈশান চোখ বন্ধ করে নিলো। অনু দ্বীপের মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। দ্বীপ অনেক কষ্টে চোখ খুলে তাকালো। চোখ অনেক লাল হয়ে গেছে।
অনু: দ্বীপ তোমার কিছু লাগবে। এখন কেমন লাগছে।
দ্বীপ: গিয়ে শুয়ে পরো।
অনু: পাগল নাকি। তোমাকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে শুবো।
দ্বীপ: কেনো?
অনু: কেনো মানে। এখন কোনো কথা বলো না। আমি জলপট্টি দিচ্ছি ভালো লাগবে। সরি আমার জন্য আজ এতো কষ্ট পাচ্ছ।
অনুর চোখ থেকে এক ফুটা জল গিয়ে দ্বীপের হাতে পরলো। দ্বীপ ভালোই বুঝতে পারছে অনু কাদছে।
দ্বীপ: জ্বর এসেছে আমার কষ্ট তুমি পাচ্ছ। কেনো?
অনু দ্বীপের কথা শুনে কিছু বললো না। এর উওর ওর কাছে ও নেই। তবে অনেক খারাপ লাগছে দ্বীপকে এই ভাবে দেখে।
দ্বীপ: আমার কিছু হবে না। যাও গিয়ে শুয়ে পরো।
দ্বীপ চোখ বন্ধ করেই এসব বলছে তাকাতে পারছে না। মাথায় অসম্ভব যন্ত্রনা করছে।
অনু: চুপ। আর একটা ও কথা বলবে না। আমি মাথা টিপে দিচ্ছি। মাথা ব্যাথা করছে তাই না।
অনু দ্বীপের মাথা টিপে দিচ্ছে দ্বীপ আর কিছু বলতে পারলো না। কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। অনুর হাতের ছোয়ায় দ্বীপ ঘুমিয়ে পরে। দ্বীপের মাথা টিপে দিতে দিতে অনু ও এক সময় ঘুমিয়ে পরে।
সকালে,,,
অনুর আগে দ্বীপের ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে দেখে অনু ওর বুকে মাথা রেখে দ্বীপের এক হাত জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে আর ঈশান সাইডে। কেউ উঠে নি। দ্বীপের জ্বর কিছুটা কমেছে।
দ্বীপ: তারমানে ও সারারাত এখানে ছিলো। ঘুমিয়েছে কখন। বাসার কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে।
দ্বীপ অনুর মাথাটা ওর বুক থেকে উঠিয়ে বালিশে রেখে বিছানা থেকে উঠলো তারপর অনুকে কোলে তুলে নিলো ওর রুম থেকে বেরিয়ে দিয়ার রুমে গেলো। দিয়ার সাইডে শুইয়ে দিলো। তারপর নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলো এখনো শরির অনেকটা দুর্বল। ফ্রেস হয়ে আবার বিছানায় শুয়ে পরলো। কিছুক্ষণ পর ঈশানের ঘুম ভাঙ্গলো দ্বীপকে শুয়ে থাকতে দেখে দ্বীপের কপালে হাত রাখলো। কিছুটা গরম। ঈশান হাত রাখতেই দ্বীপ চোখ খুলল।
ঈশান: জেগে আছিস।
দ্বীপ: হুম।
ঈশান: ফ্রেস হয়ে নে।
দ্বীপ: হয়েছি। তুই যা।
ঈশান: ওকে আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
ঈশান উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে।
দিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেলো অনুকে ওর সাইডে দেখে নিশ্চিন্ত হলো। তারপর দিয়া উঠে ফ্রেস হয়ে নিলো। ফ্রেস হয়ে দ্বীপের রুমে গেলো। গিয়ে দ্বীপের মাথায় হাত রাখলো। দ্বীপ তাকালো।
দিয়া: উঠে গেছিস। এখন কেমন লাগছে।
দ্বীপ: ভালো।
দিয়া: ঈশান কোথায়।
দ্বীপ: ওয়াশরুমে।
দ্বীপ এর কথা শেষ হতেই ঈশান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।
দিয়া: তুমি ঠিক আছো।
ঈশান: হুম।
দিয়া: ওকে তোমরা এখানে থাকো। আমি তোমাদের জন্য ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছি।
দিয়া নিচে চলে গেলো। নিজেই ব্রেকফাস্ট রেডি করতে শুরু করলো। এদিকে অনু নিজেকে দিয়ার রুমে দেখে অনেক অবাক হলো।
অনু: আমি এখানে আসলাম কি করে। আমি তো দ্বীপের কাছে ছিলাম।
অনু এসব ভেবেই বিছানা থেকে উঠে দ্বীপের রুমের দিকে পা বারায়। রুমে গিয়ে দেখে দ্বীপ শুয়ে আছে আর ঈশান সোফায় বসে আছে। অনু গিয়ে দ্বীপের মাথায় হাত রাখলো।
অনু: তুমি ঠিক আছো। কষ্ট হচ্ছে না তো।
দ্বীপ: না।
অনু: ওহ। ওকে আমি আসছি।
অনু চলে গেলো ফ্রেস হতে। এখন কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়েছে। কাল রাতে অনেক ভয় পেয়েছিলো। আগে এরকম হবে জানলে দ্বীপের প্রথম কথায়ই নিচে চলে আসতো। দিয়া দ্বীপ আর ঈশানকে ব্রেকফাস্ট খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিলো। তারপর নিজের রুমে গেলো।
দ্বীপ রেডি হচ্ছে। ঈশান বসে আছে। ঈশান শুভর বাসায় যাবে দ্বীপের সাথে যাবে না।
ঈশান: অসুস্থ শরির নিয়ে তর যাওয়াটা কি ঠিক হবে।
দ্বীপ: আমি ঠিক আছি। আর আমি না গেলে হবে না।
ঈশান: মৃনাল সব দেখে নিতে পারবে। আর তর জায়গায় আমি চলে যাই। তুই বাসায় রেষ্ট নে।
দ্বীপ: না। তুই শুভর সাথে যাবি। আমার কিছু হবে না। এখন আসি। বাই।
দ্বীপ রুম থেকে বেরলো অনু ও তখন রুম থেকে বেরিয়েছে।
অনু: কোথায় যাচ্ছ।
দ্বীপ: একটু কাজ আছে।
অনু: মানেটা কি। এই অসুস্থ শরির নিয়ে কেউ কাজ করতে যায়। চুপচাপ রুমে যাও।
দ্বীপ: তোমার কথায় কেনো আমি যাবো। কে তুমি?
অনু দ্বীপের কথায় আর কিছু বললো না। মাথা নিচু করে নিলো ঠিকই তো বলেছে। কে ও? দ্বীপ ব্যাপারটা বূঝতে পারছে অনুর মন খারাপ হয়েছে। তাই বললো,
দ্বীপ: চিন্তা করো না। আমি ঠিক আছি। কাজটা খুব ইমপর্টেন্ট। বিকেলে চলে আসবো।
অনু: ওকে। সাবধানে যেও।
দ্বীপ: হুম। বাই।
দ্বীপ নিচে ওর মা বাবাকে বাই বলে চলে গেলো অভিকে আগেই ফোন করে বলেছিলো রেডি থাকতে ওর বাসার সামনে থেকে অভিকে পিক করবে।
অনু দিয়া ওরা ও ব্রেকফাস্ট করে নিলো। তারপর রেডি হয়ে নিলো সিমির বাসায় যাওয়ার জন্য। দিয়া তিথি মায়রাকে ফোন দিলো ওদের বাসায় আসার জন্য একসাথে বের হবে। অনু রেডি হয়ে দ্বীপের রুমে গেলো ঈশান ও রেডি হচ্ছে শুভর বাসায় যাবে বলে।
অনু: তুমি কোথায় যাবে?
ঈশান: শুভর বাসায়। ওর জন্য মেয়ে দেখতে যাবে।
অনু: ও আচ্ছা সাবধানে যেও। আর জ্বর আছে না গেছে।
ঈশান: গেছে।
অনু: সরি। আমার জন্য সব হলো।
ঈশান: আরে কোনো ব্যাপার না। তুমি তো জানতে না জ্বর চলে আসবে না। আর সেরে ও গেছে। টেনশন করো না। তুমি কোথাও যাবে।
অনু: হুম। সিমির বাসায় ওকে ছেলেপক্ষ দেখতে আসবে।
ঈশান: ওহ। ওকে আমি আসছি। বাই।
অনু: বাই।
ঈশান চলে গেলো শুভর বাসায়। এদিকে মায়রা আর তিথি ও চলে এসেছে।
দিয়া: তাহলে চল।
তিথি: হুম।
ওরা চলে গেলো সিমির বাসায়।

চলবে?🙄🙄