ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০২

0
164

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০২]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম
(কঠোর ভাবে প্রা’প্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য উন্মু’ক্ত)

বাগানে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে নূর কে পৃথক, সেই কলেজে থেকে ফেরার পর এই থেকে এভাবেই দাঁড়িয়ে আছে সে। নূরজাহান চৌধুরী ছেলের রাগ করে বরাবরই ভ’য় পায়,তবে এই বারে একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে ।

” পৃথক কী করছিস এসব? সোনা মায়ের কষ্ট হবে তো? মেয়েটা এই রোদ্দুরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস?”

পৃথক বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো,ট্রি শার্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে বাগানের দিকে পা বাড়ায়।

হঠাৎ কালো মেঘে ঢাকা পড়লো আকাশ, চারিদিকে বাতাস বইছে।হুট করে রুম ঝুম শব্দ করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, সাদা রঙের জামা ভিজে গায়ে লেপ্টে গেল নূরের।
নূরের এমন ভিজে জুবুথুবু অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে উঠলো পৃথক, পুরুষালী কন্ঠ শুনে খনিকের জন্য থমকে যায় নূর। ঘাড় ফিরিয়ে দেখে পৃথক কে, ইশ্ কী মিষ্টি হাসি। পুরুষ হাসলেও যে এত সুন্দর দেখায় তা জানা ছিল না নূরের।
” নূর তোর কী পেয়েছে রে?”

নূর থতমত খায়, ছিঃ কী লজ্জা?তার তো ওয়াশরুম পেয়েছিল, না পারছিল বলতে না পারছিল আটকে রাখতে ছিঃ ছিঃ।
” পৃথক ভাই একদম বিরক্ত করবেন না,যান এখান থেকে।”

পৃথক ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।নূর মাথা নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে,কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে পা দুটো ব্যথা ধরে গেলো তার।
” চল ভেতরে আয়।”

নূর শুনলো তবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। কেন জানি তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে,এই পৃথক চৌধুরী তাকে একটুও ভালোবাসে না।
” কী হলো?শুনতে পাচ্ছিস না?চল ভেতরে।”
” যাবো না আমি আপনার বাড়িতে, আমি আমার বাড়িতে যাবো।”

নূর রাগান্বিত হয়ে পা বাড়ায় নিজের বাড়ি যাওয়ার জন্য তৎক্ষণাৎ পৃথক ওর হাত চেপে ধরে।
” কোথাও যাবি না, ভেতরে আয়।”
” বললাম তো, আমি আপনার বাড়িতে যাবো না।”
” তোর কী মনে হয় নূর এই অবস্থায় আমি তোকে যেতে দেব? শরীরের প্রতিটি ভাঁজ দেখতে পাচ্ছি আমি,সব কিছু স্পষ্ট।”

নূর চমকালো, নিজেকে দেখে সত্যি লজ্জা পায়। সত্যি সাদা জামা গায়ের সাথে লেপ্টে থাকার দরুন সব দেখা যাচ্ছে। লজ্জায় মাথা নীচু করে নিল,পৃথক তার মধ্যে আশ্চর্য এক কাজ করলো।ছাতা ফেলে দিয়ে টুক করে পাঁজা কোলে তুলে নেয় নূর কে।
” পৃথক ভাই।”
আকস্মিক ঘটে যাওয়াতে ভয় পায় নূর।গলা জড়িয়ে ধরে পৃথকের।
” ছাড়ুন ছাড়ুন।”
” হুস মাইয়া,তুই না আমার বউ? এখন স্বামীর কোলে উঠতে এত লজ্জা?”

নূর লজ্জায় বারংবার নুইয়ে পড়েছে।

রুমে নিয়ে গেলো পৃথক নূর কে,তবে অবশ্যই তার রুমে।নূর ভড়কে যায়।যে লোকটা তাকে এই রুমে আসতেই দেয় না সে কী না নিজে গিয়ে এখন নিয়ে এসেছে?বাবা রে!

পৃথক আলমারি থেকে হালকা মেরুর রঙের একটা জামা আর সালোয়ার বের করে নূরের হাতে দেয়।
” গিয়ে চেঞ্জ করে নে।”

নূর অবাক দৃষ্টিতে বলে।
” আপনার আলমারিতে মেয়েদের জামাকাপড়?কেউ গার্লফ্রেন্ড ছিল না কী?যার জন্য এসব কিনে রেখেছিলেন?”

পৃথক জানে নূর ভীষণ পজেসিভ,তাই তাকে একটু রাগিয়ে দিতে বলল।
” হ্যাঁ ছিল।”
” কীঈ?”

পৃথক বা চোখের ভ্রু নাচিয়ে বলল জিজ্ঞেস করলো কী? নূরের প্রচন্ড রাগ হলো, নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে পৃথকের চুল টানতে শুরু করে।
” আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না, আমি আপনার বউ হই।”

পৃথক কঁকিয়ে উঠলো।
” শয়’তা’ন মেয়ে ছাড় আমায়, পৃথক চৌধুরীর চুল টানছিস? ভালো হবে না কিন্তু?”
” ছাড়বো না।”
নূর ছাড়ার বদলে আরো বেশি করে টানতে থাকে,হুট করে পৃথক নূরের ওষ্ঠা আঁক’ড়ে ধরে। মূহুর্তে শান্ত নদী হয়ে যায় নূর, অন্তঃপুরে জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে তা বাইরে থেকে দেখার যো নেই।
পৃথক নূরের চুলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আরো কাছে টেনে নেয়, পুরুষের স্পর্শ পেয়েছে নূর প্রথম বারের মত। মিনিট পাঁচেক পরেই ছেড়ে দেয় পৃথক,নূর মূর্তির মত কিয়ৎক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ছুট লাগালো ওয়াশরুমে। বাঁকা হাসে পৃথক,তার এই পিচ্চি বউ জান কে একটু বেশি ভালোবাসে। শুধু প্রকাশ করে না এই যা, কিন্তু সময় আর না কিছুদিনের মধ্যেই তাকে পার্মানেন্ট ভাবে নিয়ে আসবো।
_______________
ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে পুরো বাড়ি, আজকে চৌধুরী মহলে শাহা কে দেখতে আসছে পাত্রপক্ষ। ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে শাহা,তারও একটি অতীত আছে।সেও একজন কে ভালোবেসে ছিল,তবে কথায় আছে না প্রথম ভালোবাসা ভুল মানুষের সাথেই হয়।শাহার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।
পাত্রের সাথে একা কথা বলার সময় শাহা নিজের সত্যটা স্পষ্ট ভাবেই বলেছে।
” দেখুন সোহান আমি আপনাকে আড়ালে রাখতে চাই না,যেটা সত্য তাই বলব।”

সোহান মৃদু হাসলো।
” সমস্যা নেই, আপনার ভাই অলরেডি আমাকে সবটা জানিয়েছে।”

শাহা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।
“আপনি সব জানেন?”

সোহান হ্যা সূচক মাথা নাড়ল।
” আসলে আমার আপনাকে পছন্দ আর পছন্দ থেকেই বিয়ে করতে চাই পারিবারিক ভাবে।”

শাহা সোহানের এমন আচরণে খুশি হয়।
অবশেষে বাড়ির ছোট মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়,কেউই চাইছিল না এখন বিয়ে দিতে।তবে সোহানের পরিবার অনেক ভালো হওয়াতে কেউ আর অমত করেনি।
__________
” ম্যাম শুনেন?”

নিমু মাত্র রুমে ঢুকে,রিয়াজ বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে।নিমু ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে,তাতেই শেষ রিয়াজ।
” একটু কাছে আসুন ভালোবাসি।”

নিমু লজ্জা পায়, লোকটা একটুও বদলায়নি,সেই আগের মতই আছে।
” ধুর, আপনি একটুও বদলাননি।”

রিয়াজ হেঁ’চ’কা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে নিমু কে।
” বদলাতে চাইও না।”
নিমু হাসলো, আলগোছে জড়িয়ে ধরে রিয়াজ কে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে নূর, কেমন জানি অচেনা লাগছে। আচ্ছা এটা কী পৃথকের ছোঁয়ে দিয়েছে তাই?
নিজেই নিজেকে বার বার দেখছে আর মুচকি হাসছে নূর।কোমড়ে কারো কোমল স্পর্শ পেয়ে শিহরণ বয়ে যায় পুরো অঙ্গে।
“পৃথক ভাই আপনি এখানে?”

পৃথক নে’শা’লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।
টুক করে পাঁজা কোলে তুলে নেয় নূর কে,চোখে চোখে তাকিয়ে আছে একে অপরের দিকে।সব রাগ অ’ভি’মান ভে’ঙে গেছে, বিছানায় শুয়ে নূর কে আলতো ভাবে জড়িয়ে ধরেছে পৃথক।
” বউ জান ভালোবাসি।”

নূর চমকালো, নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না একদম।
” কীঈ বললেন?”

পৃথক কপালে গাঢ় চুম্বন এঁকে বলে।
” ভালোবাসি ভালোবাসি বউ জান।”

নূরের চোখ দুটো চিক চিক করে উঠে, পৃথক কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে। পৃথক বিছানায় শুয়ে বুকে আগলে নেয় নূর কে।
______
মুখে রোদ পড়তেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে নূর,হাতরে দেখে পাশে পৃথক নেই।
” আরেহ উনি চলে গেলো?”

নূর দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে রূপা আহমেদ জিজ্ঞেস করে।
” মা পৃথক ভাই চলে গেছে?”

রূপা আহমেদ মেয়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” কী?পৃথক তো এখানে আসেই নি?”

নূর ভাবুক হয়, আশ্চর্য!তবে কী সে স্বপ্ন দেখলো? এতটা বাস্তব? নিজের উপর বিশ্বাস হচ্ছে না নূরের,সে কাল যা দেখেছে তা সত্য নয়।
মাথা চেপে ধরে নূর, ভীষণ মাথা ব্যথা করছে।

কলেজে যাওয়ার সময় বৃষ্টিতে ভিজে জুবুথুবু অবস্থা নূরের আর শাহার,তারই মধ্যে একজন কে দেখতে পায়।কালো রঙের শার্ট পড়ে ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আছে।নূর অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,শাহা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে।
” কী দেখছিস?”
” ওই যে কী হ্যান্ডসাম ছেলে?”

শাহা নাক মুখ কুঁচকে বলে।
” ভাই জানলে আচ্ছা করে দেবে তখন বুঝবি মজা।”

নূর মুখ বাঁকিয়ে বলে।
” যা তো,তোর ভাই এমনিতেই আমাকে পাত্তা দেয় না। মনটা চায় আকদ ভে’ঙে দি, ভাল্লাগে না।”
” ওরে ওরে মুখে তালা দে নূর,ভাই এসব শুনলে তুই শেষ।”

নূর কিছু বললো না,মুখ ঘুরিয়ে আবার ছেলেটার দিকে দেখল।

“থা’প্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দেব সব মিথ্যা বললে?”

নূর পৃথক কে এভাবে রেগে যেতে দেখে ভয় পায়,রূপা আহমেদ বুঝতে পারছে না পৃথক হঠাৎ এত রাগ কেন করছে?
” আহা কী করেছে ও পৃথক?”

পৃথক নিজের ভাবমূর্তি বজায় রেখে বলে।
” ও কী করেছে তুমি জানো না ফুপি, খুব বাড় বেড়েছে।”

নূর ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
” বেএএএএশ করেছি।”

পৃথক নূর কে টেনে রুমে নিয়ে গেলো, দরজা বন্ধ করে নিল।
“এই তোর কী সমস্যা?তুই কেন এমন করছিস?তুই যেহেতু আমার বউ তাহলে অন্য ছেলে দেখে এত লাফাস কেন?”

নূর ভাবলেশহীন ভাবে বলে।
” ভাল্লাগে তাই।”

পৃথক চ’রম পর্যায়ে রেগে গেলো।
” আমাকে আর ভালো লাগে না?”

নূরের চোখ চিক চিক করে উঠে,সে বুঝতে পারে পৃথক জ্ব’লছে তার রাগ হচ্ছে।
“চিনিস তুই আমাকে? পৃথক চৌধুরী আমি।”

নূর কিছু বললো না, এবার আর পৃথক নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না।
পৃথক চুলের মুঠি ধরে নিজের কাছাকাছি নিয়ে আসে নূর কে, কঁকিয়ে উঠলো নূর।
” আহ্, পৃথক ভাই লাগছে?”
” লাগুক।”
“ছাড়ুন,ব্যথা পাচ্ছি আমি।আজ তোর একদিন কী আমার একদিন।”

নূর বার কয়েক শুকনো ঢুল গিলছে, এখন একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
“পৃথক ভাই আ’ম স্যরি।”

পৃথক দাঁতে দাঁত চেপে সবটা শুনলো,কী একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো, অতঃপর শান্তির শ্বাস ফেলল নূর।
_______________
সন্ধ্যায় নূরজাহান চৌধুরী শাহা কে বলেছে সোহান ওকে ফোন করেছে কয়েক বার, কিন্তু শাহার ফোন বন্ধ আছে।
শাহা কথাটা জানার পর দ্রুত সোহান কে কল করে।
“আসসালামুয়ালাইকুম।”

সোহান মিষ্টি সুরে সালামের উত্তর দেয়।
“ওয়া আলাইকুমস সালাম।”
“আপনি নাকি আমাকে অনেক বার ফোন করেছিলেন? আসলে ফোন প্রবলেম করেছে তাই বন্ধ রেখেছি।”

“বলছিলাম তুমি কী আমার সাথে দেখা করতে পারবে?”

শাহা খনিকের জন্য থমকালো,পরক্ষণেই চ’ট করে হ্যা বলে দিলো।
“হ্যাঁ অবশ্যই, কোথায় আসবো?”
“তোমাকে আসতে হবে না শাহা, আমি এসে নিয়ে যাবো।
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন রেখে দেয় সোহান, শাহা বিছানায় সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে, দুঃখের শেষে মানুষ সুখের মুখ দেখে,এই কথাটা আজ তার সত্যি মনে হচ্ছে।
এত দিন পর এত আনন্দ খুশি যে তার জীবনে সোহান নিয়ে আসবে তা একদমই ভাবতে পারেনি শাহা। অতীতের কালো ছায়া ভুলে যেতে চায় শাহা।

চলবে……….✨।