ভালোবাসার আলিঙ্গন পর্ব-০১

0
259

#ভালোবাসার_আলিঙ্গন
পর্ব [০১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

” ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। আমি আপনার বউ আর আমিই আপনাকে ছুঁ’বো,অন্য কেউ নয়।”

বেশ ঝাঁ’ঝা’লো কন্ঠে কথাটা বলে উঠলো নূর,অপর দিকে দাঁড়িয়ে থাকা সুঠামদেহী পুরুষ পৃথকের কথা গুলো কর্ণকুহ হওয়া মাত্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্রপরির দিকে।কানে গুঁজে রাখা ফোনটা পকেটে রেখে বুকে হাত গুজে দাঁড়ালো পৃথক।
নূরের কথায় পৃথক কিছু বলছে না তাতে রাগ হলো নূরের,সে আবারও চেঁচিয়ে বললো।
” শুনতে পাচ্ছেন আপনি পৃথক ভাই? আমি আপনার বউ,বউ বউ।”

পৃথক ফোঁস করে শ্বাস টেনে বললো।
” এটা তো জানি না এমন নয়, তা রাষ্ট্র কে জানানোর কী হয়েছে?”

নূর নিশ্চুপ, ওদিকে পৃথক ফের বললো।
” এদিকে বলছিস তুই আমার বউ, ওদিকে আবার ভাইও ডাকছিস। আচ্ছা ভাই কী তোর জাতীয় ভাষা?

অষ্টাদশী যুবতী নূরিয়া জান্নাত থম’কালো,ভ’ড়”কালো বটে।যাকে ছোট্ট কাল থেকে ভাই বলে এসেছে তাকে জামাই বা স্বামী বলতে বেশ লজ্জা লাগছে। কিন্তু নিজের অধিকারের বেলায় সে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়বে না।
” পৃথক ভাই আপনি যখন জানেন আমি আপনার বউ তাহলে ওদের কেন বললেন না?”

পৃথক চুপ রইলো,কিয়ৎক্ষণ পূর্বে ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে এসেছিল,আসার সময় নূর বায়না ধরছে তার সাথে যাবে। ফলস্বরূপ তাকেও নিয়ে এসেছে, সবাই জিগ্গেস করেছে কে নূর? কিন্তু বরাবরই প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেছে পৃথক।
” তো কী বলব? বলব মিট মাই ওয়াইফ যে আমাকে ভাইয়া ডাকে।”

নূর কিছু বললো না রেগে মে’গে ফার্মগেট ক্যাফে থেকে বেরিয়ে গেলো।
পৃথক কিছু বললো না সেও উল্টো হাঁটতে লাগলো।

সন্ধায় বাসায় ফিরে চেঁচিয়ে উঠলো নূর।
” মামীঈ এ্যা ভ্যা ও মামী গোঁ।”

নূরজাহান চৌধুরী রান্না ঘর থেকে ছুটে আসেন।
” কী রে সোনা মা কী হয়েছে তোর?”

নূর মেকি কান্নার ভান করে বলে।
” মামী তোমার ছেলে আমাকে বকেছে,তাও আবার একটু না অনেক খানি।”

নূরজাহান চৌধুরী বিস্ময় নিয়ে তাকালো নূরের দিকে।
” কীঈ তোকে বকেছে?আজ আসুক পৃথক দেখাচ্ছি মজা।”

নূর মনে মনে হাসলো।
” দেখ বেডা পৃথক চৌধুরী আমাকে বউ না মানলে এমনি বকা শুনাবো,আজকে আপনার একদিন আর মামীর একদিন হি হি।”

রিয়াজ নূরের মাথায় চা’টি মে’রে বলে।
” কী গোল পা’কাচ্ছিস তুই?”
নূর ধপাস করে সোফায় বসে বলে।
” আর বলো না ভাইয়া তোমার ভাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়নি ওই ফ্রেন্ডদের সাথে, আবার বলে কী না আমি তার বউ না।”
” তাই তুইও এখন ঠিক করেছিস পৃথক কে বকা খাওয়াবি।”
” ইয়েস।”

সন্ধায় যখন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ছে তখন হালকা মেরুর রঙের কুর্তা পড়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে।আড় চোখে তাকায় দেখলো নূর বেশ ভাব নিয়েই সোফায় বসে আছে।
টিভি চলছে,স্টার জলসার একটা সিরিয়াল। হঠাৎ টেবিলের উপর থেকে রিমোট নিয়ে চ্যা’নেল চেঞ্জ করে খেলা দেখতে শুরু করে পৃথক।নূর প্রচন্ড রেগে চেঁচিয়ে উঠলো।
” আপনি এটা বদলেছেন কেন পৃথক ভাই?”

পৃথক বিড়বিড় করে বললো।
” শুরু হয়েছে রাষ্ট্র ভাষা আওড়ানো।
” কী হলো? রিমোট দিন এখুনি।”

পৃথক সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে আওড়াল।
” তুই এখানে কী করছিস? নিজের বাড়ি যা।”

নূর পৃথকের দিকে অ’গ্নি দৃষ্টি নি’ক্ষে’প করে।
“এটা আমার শশুর বাড়ী।”
” এখনো বউ বানাইনি ওকে?”
” জ্বি না, আপনার সাথে আমার আকদ হয়েছে ভুলে গেলেন? আমি বউ।”
” কচু তুই।যা ভাগ এখান থেকে।”

নূর যখন দেখলো সে ঝগড়ায় পারছে না তখনি কেঁদে নূরজাহান চৌধুরী কে ডাকতে লাগল।
” মামীঈঈঈ ও মামী।”

নূরজাহান চৌধুরী দুতলা থেকে ছুটে আসেন।
” কী হয়েছে?”
” দেখো না তোমার ছেলে আমাকে আবার বকছে।”

পৃথক ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
” যেই দেখলি ঝগড়ায় পারছিস না তখনি মা কে দলে টেনে নিলি।”

নূর ভেংচি কা’টে। নূরজাহান চৌধুরী কড়া কন্ঠে বলেন।
“এই পৃথক তুই সোনা মায়ের সাথে এমন করছিস কেন?”

পৃথক দুই গুণ বেশি রাগ দেখিয়ে বললো।
” তোমার সোনা মা কে বলো বাড়ি যেতে না হলে থা’প্পড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দেবো।

নূর ভয় পেয়ে গেল, নূরজাহান চৌধুরী কে জড়িয়ে বললো।
” চললাম মামী, তোমার এই ছেলের সাথে থাকবো না আমি।”

নূর দৌড়ে উপরে শাহার রুমে গেলো।
শাহা জানালার কাছে বসেই ছিল হঠাৎ নূর কে ওমন ভাবে আসতে দেখে চমকালো।নূর গিয়েই আলমারি থেকে কাপড় বের করে ব্যাগে ভরে নেয়

” কী রে নূর এসব ব্যাগে নিচ্ছিস কেন?”
” থাকব না তোর ভাইয়ের সাথে,বেডা খ২০।”
” কী করছে ভাইয়া?”
” কী করেনি সেটা বল?তোর ভাই আমাকে থা’প্পর দেবে বললো এ্যা ভ্যা থাকবো না।”

নূর জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো, ওদিকে পৃথক বেশ আরামছে সোফায় বসে আছে।নূর কে নিচে নামতে দেখে অগোচরে হাসলো।
” ভাবি এক গ্লাস পানি দাও তো।”

নিমু রান্না ঘর থেকে পানি নিয়ে আসে।
” এই নাও ভাই।”
” ভাবিই ভাবা যায় অবশেষে আপদ বিদায় হচ্ছে।”

নিমু মুচকি হাসে,নূর মুখ বাঁ’কালো।
” ভাবিই চললাম।”
” আরেহ নূর রাগ করছিস কেন?পৃথক ভাই তো এমনিই বলেছে ওইসব।”
” না থাকবো না আমি।”

পৃথক ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়।
“আরে না ভাবি আমি এমনি বলিনি,ও আমার মাথা খায় খালি,এই তুই এখনও দাড়িয়ে আছিস কেন?যা বের হো।”

নূর ঠোঁট কা’মড়ে ধরে এই বুঝি কেঁদে দেবে।
_____________
সূর্যের মিষ্টি রশ্মি মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেল নূরের,উঠে বসে সে। জানালার কাছে গিয়ে কপাট খুলে দেয়। স্নিগ্ধ এই সকাল বেশ ভালো লাগে নূরের, সত্যি মনোমুগ্ধকর।

রান্না ঘর থেকে টুকটাক শব্দ শুনা যাচ্ছে,নূর ভেতরে গেলো। রান্না করেছে রূপা আহমেদ,নূর গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে।
‘ মা আজকে কলেজে ভর্তি হবো, তুমি যাবে আমার সাথে?”

রূপা আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলে।
“আজকে অফিসে যেতে হবে মা, এনজিও তে অনেক কাজ।”
” ওহ্, আচ্ছা ঠিক আছে।”
” রাগ করো না নূর, তুমি বরং শাহার সাথে চলে যেয়ো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।”

রূপা আহমেদ মেয়ের মন খুশী করতে বলে উঠে

“দেখো তোমার জন্য বাদামের পায়েস তৈরি করেছি।”
” ওহ্ ওয়াও তাড়াতাড়ি দাও খেয়ে নেব।”

রূপা আহমেদ মেয়ের আনন্দ দেখে খুশি হয়, একমাত্র মেয়ে তার কত আদরের।স্বামী মারা যাওয়ার পর খুবই আদরে পালন করেছে,এসবে সব ধরণের সাহায্য করেছে সাফিন চৌধুরী। নিজের ভাইয়ের থেকেও বেশি বললে চলে। এবং কি নূর কে নিজের বাড়ির বউ করেছে।


রোদে ঝলমলে এই সকালে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে নূর,কলেজে গিয়ে দেখে শাহা আর পৃথক কে। মূহুর্তে চোয়াল শক্ত করে নেয় পৃথক।
নূর কিছু বললো না নিজের মত এগিয়ে গেলো, তৎক্ষণাৎ শাহা এসে জড়িয়ে ধরে নূর কে।
” কী রে কখন থেকে কল করেছি তুই ধরলি না কেন?”

নূর পৃথকের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে।
“এমনি।”

পৃথক ভ্রু কুঁচকালো,নূর পাত্তা দেয় না।পৃথক শাহা কে ডেকে বলে।
” চল তোকে অফিস রুমে নিয়ে যাই।”
” ভাইয়া আমি কী একা যাবো না কী?”
” তো!এখন কী পুরো কলেজ কে তুলে নিয়ে অফিসে যাবো?”
” আরে না আমি বলছিলাম নূর তো আমার সাথেই যাবে।”
” ও পারবে, যেতে হবে না ওর সাথে।ও একাই সব পারে।”

নূর প্রচন্ড রেগে বলে উঠে।
” হ্যাঁ আমি পারব,এত বলতে হবে না যান যান।”

পৃথক শাহা কে নিয়ে চলে গেল,শাহার বেশ মন খারাপ হয় নূর কে রেখে যেতে।
নূর ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, ওদের যাওয়ার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে।
” পৃথক ভাই আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

নূর কিয়ৎক্ষণ পর অফিসে গেলো ভর্তি হতে, কিন্তু সেখানে গিয়ে অবাক হয়।সে অলরেডি ভর্তি হয়ে গেছে, কিন্তু নূর কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না। অতঃপর আন্দাজ করলো এটা পৃথক চৌধুরীর কাজ।
দৌড়ে কলেজের মেইন গেটে এসে দাঁড়ায় নূর,গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৃথক।
“শাহা কোথায়?”

পৃথক গম্ভীর গলায় বলে।
“ওকে বাড়ি যেতে বলেছি, টেক্সি দিয়ে দিয়েছি।”

নূর পৃথকের দিকে তাকিয়ে আছে,লোকটা এত গম্ভীর কেন?সে কী বুঝে না তাকে কেউ ভীষণ ভালোবাসে?হয়তো বুঝে,বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে।

” শুনেন পৃথক ভাই আপনি আমার সাথে খুব রুড ভাবে কথা বলেছেন,তাই এখন স্যরি বলুন ঝটপট।”

পৃথকের কপালে ভাঁজ পড়লো,সে বলবে স্যরি?
” হাস্যকর,তোর কী মনে হয় নূরিয়া জান্নাত আমি তোকে স্যরি বলব?এই পৃথক চৌধুরী স্যরি বলবে?”

নূর রাগলো, নাকের পাটাতন ফুলে উঠে।
” যদি আপনি আমাকে স্যরি না বলেন তাহলে আমি,,
“কী করবি হ্যাঁ?বল বল?”

নূর বুঝতে পারছে না কী করবে? তখুনি দেখলে গেটের কাছে দু তিনটে পাথর পরে‌ আছে সেখান থেকে একটা পাথর নিয়ে পৃথকের শখের গাড়িতে ছু’ড়ে মা’রে।
মূহুর্তে পৃথক প্রচন্ড রকম রেগে চেঁচিয়ে উঠলো।
” নূরের বাচ্চা তুই এটা কী করলি?তুই গাড়ি? আই প্রমিজ আজকে তোর একদিন কী আমার একদিন?

নূর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো পৃথকের দিকে, রাগের বশে কী করে বসলো? এবার কী হবে তার?বার কয়েক শুকনো ঢুল গিলছে সে, তখনই পেট মো’চ’ড় দিয়ে উঠে।
” আমার পেয়েছে।”

চলবে………….✨।