ভালোবাসার উল্টো পিঠে পর্ব-০৮

0
401

#ভালোবাসার_উল্টো_পিঠে
#আট
প্রজ্ঞা জামান দৃঢ়তা

রিদ্ধিমা ফোন হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ বসে রইল। ভাবতে লাগল এই লোকটা তার কাছে কী চায়!

যদি সে তাকে পছন্দ করতো তবে নিশ্চয়ই তার মা হওয়া নিয়ে খুশি হত না। তবে আর কী কারণ থাকতে পারে যার জন্য সে তার পিছু নিয়েছে। ভাবতে ভাবতে দেখল মাহিদ চলে এসেছে। হঠাৎ সবকিছু ভুলে মনে হলো সে মা হতে চলেছে। এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে! মাহিদ রুমে এসে ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে চলে গেল। রিদ্ধি ভাবছে কীভাবে তাকে জানাবে! লজ্জা সংকোচ তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরেছে।

মাহিদ ফ্রেশ হয়ে এসে তার পাশে বসে বলল, “তোমার নাকি শরীর খারাপ?”

“তেমন কিছু না। এখন থেকে তো এমনটা লেগেই থাকবে।”

মাহিদ ভ্রু উঁচিয়ে বলল,”কেন এমনটা লেগে থাকবে?”

রিদ্ধিমা তার দিকে একটা চিরকুট এগিয়ে দিল। মাহিদ সেটা খুলে বলল, “এটা সত্যি?” তার চোখে-মুখে কোনো খুশি দেখা যাচ্ছে না।

“হুম সত্যি।”

মাহিদ তার পাশে এসে বসে বলল, “রিদ্ধি এখনো আমাদের সংসার গোছানো বাকি। এখনই বাচ্চা নেয়া সম্ভব নয়। এখন আমাদের দুজন-দুজনকে সময় দেয়া উচিত। আমাদের সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে এসব ঝামেলা আমি নিতে চাচ্ছি না।”

তার কথা শুনে রিদ্ধির উৎসাহ কমে গেল। সে ভেবেছিল মাহিদ খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। বিয়ের আগে সে সন্তান নিয়ে অনেক উৎসাহী ছিল। কিন্তু এখন! তার মুখে অন্ধকার নেমেছে।

মাহিদ সেটা বুঝতে পেরে রিদ্ধির একটা হাত ধরে বলল, “রিদ্ধি আমাদের উচিত আগে নিজের লাইফ উপভোগ করা। এখনকার সময়ে কেউ বিয়ের সাথে সাথে বেবি নেয় না। আমাদের নিজেদের একসাথে সময় কাটানো দরকার। তারপর না হয় ফ্যামিলি প্লানিং করব।”

রিদ্ধি অবাক হয়ে মাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে, “তুমি কী চাইছো আমি একটা নিষ্পাপ প্রাণকে মেরে ফেলব? প্লিজ মাহিদ তুমি যাই বলো আমি মেনে নেব। কিন্তু আমি প্রাণ হত্যার মতো মহাপাপ করতে পারব না। তাহলে আমার জায়গা জাহান্নামে হবে।”

মাহিদ ধীরে ধীরে গম্ভীর হচ্ছে সে বলল, “রিদ্ধি একবার ভাবো তো একজন বেবি হওয়া মানে কতটা খরচ? আমার অনেক সমস্যা যাচ্ছে। এখন তো আমাকে একটু দাঁড়াতে দাও। তারপর না হয় সব হবে।”

“মাহিদ আমি বুঝি তোমার সমস্যা কিন্তু! এটা তো আমাদের ইচ্ছায় হয়নি। বাই চান্স হয়ে গেছে। মহান আল্লাহর হয়তো এটাই ইচ্ছে। তিনি হয়তো এর সাথে আমাদের জন্য নেয়ামত লিখে রেখেছেন। তুমি কী চাও হাশরের দিনে নিজের সন্তানের কাছে তাকে হত্যা কেন করেছো তা নিয়ে কৈফিয়ত দিতে? আল্লাহ এত বড় গুনাহকারির সাথে থাকেন না।”

মাহিদের রাগ বেড়ে গেল। সে রাগ করে ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেল। অনেকক্ষণ ফোনে কার সাথে যেন কথা বলছে। রিদ্ধির দু’চোখে জল উপচে পড়ছে। সে ভেবেছিল মাহিদ কতটা খুশি হবে। তাদের অংশ পৃথিবীতে আসতে চলেছে। কিন্তু খুশি তো দূর ও তাকে চাইছেই না। কেন যেন রিদ্ধির নিজেকে নিজের কাছে একটা কিট ছাড়া কিছুই মনে হলো না। তার জীবনটা সম্পূর্ণভাবে অনর্থক বলে মনে হচ্ছে। তার মনে হলো ভেতর থেকে কেউ তাকে মা বলে ডাকছে। সে ডাক এত সুন্দর! এত পবিত্র যে সাথে সাথে সে সিদ্ধান্ত নিলো কিছুতেই নিজের সন্তানের কোনো ক্ষতি সে করবে না।

তখনই মাহিদ রুমে ঢুকল। বের হওয়ার সময় যে রাগ ছিল সেটা এখন আর নেই। সে এসে রিদ্ধির গা ঘেঁষে বসে বলল, “স্যরি রিদ্ধি তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। আসলে আমি তোমাকে পরিক্ষা করে দেখছিলাম তুমি আসলে কতটা সিরিয়াস বেবি নিয়ে। ভেবেছিলাম তোমার বয়স কম তুমি বেবি চাইবে না। কিন্তু আমার পরিক্ষায় তুমি একশোতে একশো পেয়েছো। আমাদের সন্তান খুব শীঘ্রই পৃথিবীর আলো দেখবে। ও আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার হবে।”

রিদ্ধি ভেজা চোখে হেসে ফেলল। মনে হলো বুকের উপর থেকে অনেক ভারি একটা বোঝা নেমে গেছে।
বলল, “আই লাভ ইউ সো মাচ মাহিদ।”

মাহিদ রিদ্ধির মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “রিদ্ধি এ সময় আমারও সমস্যা চলছে। আমি ভাবছি তুমি একবার বাসা থেকে ঘুরে এসো। এই সময়টা তোমার একা থাকা ঠিক হবে না। আমি চাইলেও তোমাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারব না। তাই তুমি তোমার বাবার বাসায় আসা যাওয়ায় থাকলে সবার রাগ হয়তো কমে যাবে। তোমার বাবাও আমাকে মেনে নেবেন।”

রিদ্ধির হাসি যেন বাতাসে মিলিয়ে গেল।
“মাহিদ বাবা তোমাকে মেনে নেয়নি। হ্যাঁ আমাকে যখন ইচ্ছে যেতে বলেছেন। কিন্তু যেখানে তোমার জায়গা নেই, সেখানে আমি যেতে পারি না।”

“রিদ্ধি দেখো আমরা তো ভুল করেছি। আমাদের উচিত বড়দের কাছে ক্ষমা চাওয়া। আমার বিশ্বাস তোমাকে দেখলে তোমার বাবা নিজেকে আটকে রাখতে পারবেন না। তার কাছে তুমি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তুমি না থাকায় তিনি অনেক কষ্ট পাচ্ছেন। হয়তো ভাবছেন তুমি তার কাছে নিজে থেকে যাবে। দেখো আমরা যত অপরাধই করি বাবা-মা কখনো ফেলে দিতে পারেন না। আর তোমার বাবা তো তোমায় চোখে হারায়। তুমি কী চাও তিনি আরও কষ্ট পান?”

“কিন্তু মাহিদ তুমি না গেলে, আমি কীভাবে যাই?”

“আমার যাওয়া নিয়ে তুমি ভেবো না। একবার তোমার বাবা তোমাকে ক্ষমা করে দিলে। এবং যখন জানবে তোমার সন্তান পৃথিবীতে আসতে চলেছে। তাহলে তোমায় না শুধু আমায়ও মেনে নেবেন। আমি বলছি তুমি যাও।”

রিদ্ধির অনেক অভিমান জমা ছিল মাহিদের উপর। কিন্তু এখন এসব কথা শুনে সব অভিমান চলে গেছে।
“মাহিদ তুমি খুব ভালো। আমি সবাইকে প্রমাণ করে দেব তোমাকে বিয়ে করে আমি কখনো ভুল করিনি।”

মাহিদ হাসল সেটা কিসের হাসি ঠিক বুঝা গেল না!

রিদ্ধি ভাবল, “এবার আমার জীবনের সবকিছু ঠিক হতে চলেছে। পেটে হাত রেখে ভাবল তুই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তোর আগমনে সব সুন্দর হতে চলেছে। মা তোকে অনেক ভালোবাসে। অনেক।”

মাতৃত্ব কী এতটাই সুন্দর! যা একজন অপরিণত মেয়েকেও ঘায়েল করে নেয়। মাতৃত্বের ক্ষমতা কী এতটাই বেশি যাকে স্পর্শ করার আগেই তার প্রতি অগাধ ভালোবাসা, মায়া জন্মে যায়! মাতৃত্ব কী এতটাই শক্তিশালী যা একজন মেয়েকে নারীতে পরিণত করে!

কিন্তু….

চলবে