ভালোবাসার গুন্ঞ্জন পর্ব-০৪

0
1902

#ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন💜💜
#আইদা_ইসলাম_কনিকা
#পর্বঃ০৪

আদারার জীবনটা আর পাঁচটা মেয়ের মতোন না। ছোট বেলে থেকে তার সাথে এমন করার কারণ হলো আদারার একটা যমজ ভাই হয় তার নাম রাখা হয়ে ছিল আদর। আদারার আর আদরের খবর পেয়ে বাসার সবাই উৎসবে মেতে উঠেছিলো। আদারাকে নিয়ে কারো কোনো সমস্যা ছিলো না আর দুই ভাই বোনপর নাম তারা দুনিয়ায় আসার আগেই ঠিক করে ফেলেছিল শাহাদাত আর আয়শা মিলে…। কিন্তু বেবি হওয়ার সময় কোনো এক কারণে আদরের মৃত্যু হয়ে যায়…। কিন্তু এটার দোষ সাবাই আদারাকে দেয় আদারার চাচি তো আদারাকে দেখে অলক্ষ্মী অপবাদ দিয়ে দেয়, আর আয়শা আদারাকে আপন করে নিতে চাইলেও পরিবারের সবার জন্য তা সে পারেনি আর আদারাও কোনো অভিযোগ করেনি… ছোট বেলে থেকেয় সে ছিল অবহেলার পাত্রী আর আদারার চাচী আদারাকে দেখেতে পারেন তার আরেক কারণ…এইসব ভাবছিল আদারা তখনই কেউ পিছন থেকে আদারার কাঁধে হাত রাখে আদারা পিছন ফিরে দেখে আলফাজ দাড়িয়ে হাতে তারও বিয়ার। আলফাজও পাশে বসে পরে আদারারও নিজের মাথাটা আলফাজের কাঁধে এলিয়ে দিয়ে বলে,
–ভাইয়া আমি কি আদর ভাইয়াকে মেরেছি? তুমিই বলো আমিতে ছোট ছিলাম কিবা বুঝতাম আমি?… আলফাজের চোখের কোণে জল চিকচিক করছে আদারার মাথায় একটা কিস দিয়ে বলে
–ধূর পাগলী, তুই তো ছোট ছিলি।জানিস তোকে যখন বাসায় নিয়ে আসা হলো তখন আমি আর নিঝুম সবে ৬ পরি, তাই দুজন ভাগ করে নিলাম তোর কাজ কিছুসময় নিঝুম তোকে কোলে রাখতো কিছু সময় আমি পাশাপাশি পড়ালেখা, আর মজার বিষয় কি জানিস তুই কান্না করতি না ছোটমা শ তোকে খায়িয়ে দিতো, গোসল, আর ডায়পার চেন্জ.. কিন্তু হ্যা আমিও কিন্তু করেছি। আলফাজ তাকিয়ে দেখে আদারা ঘুমিয়ে গেছে এখান থেকে এখন উঠাও যাবে না একেতো ছাদের শেষ কর্ণার আর আদারা ঘুমিয়ে পরেছে তাই আলফাজ আদারাকে জাগাতে চায় না। আলফাজ ফোনটা বের করে দেখে রাত ৪টা বাজে কিছু সময় পরই আযান হবে থাক ঘুমাক। আযানের ধ্বনি কানে আসতেই আদারা ওঠে পরে ঘুম থেকে নেশাটা এখনো হালকা হালকা আছে মাত্র ৩০মিনিট ঘুমিয়েছে তারপরও সে ওঠে নিজের রুমে চলে যায় আলফাজকে আর কিছু বলে না। আলফাজও চলে যায় নিজের রুমে নামাজ পরে ঘুমিয়ে পরে….
দুপুর ৩টা মানে বিকেলের দিকে আদারার ঘুম ভাঙলো প্রচুর খোদা লেগেছে, লাগারই কথা তাই সে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায় দেখে অনেক গেস্ট চলে এসেছে আর নিঝুম আলফাজ হলরুমে বসে ঝগড়া করছে তার কারণ আলফাজ নিঝুমের জন্য নাকি গিফট আনে নেই।
–আদারা তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে কিচেনে চলে যায় যেয়ে দেখে আয়শা আর কিছু সার্ভেন্ট রান্না করছে আর আইদার চাচি নিঝুমের গুনগান গাইছে মেহমানের কাছে। আদারা একটা সার্ভেন্টকে উদ্দেশ্য কর বলে
–ফ্রিজে কি আছে খাওয়ার মতো? আদারার মা আয়শার খুব খারাপ লাগে নিজের মেয়েটা মা থাকতেও খাবারের জন্য আরেক জন কে জিজ্ঞেস করছে!! আদারার মা একবাটি পায়েশ ফ্রিজ থেকে বের করে আদারার দিকে এগিয়ে দেয়… পায়েশটা আদারার খুব পছন্দের আর ওপরে বেশি করে কিসমিস দেয়া…. আদারা তা দেখে বাটিটা হাতে নিয়ে বলে..
—ধন্যবাদ মিসেস শাহাদত। আয়শা বলে
—একটু মাম্মা বা মামুনি বললে কি হয়রে আদু? আদারা তা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে
—সবার জন্য সব ডাকটা মানায় না আর ধন্যবাদ পায়েশটা আমার মন মতো রান্না করার জন্য… একটু কাজুবাদাম হলে ভালো হতো..দেওয়া যাবে একটু। আয়শা চোখের জলটা মুছে বেশ কয়েকটা কাজুবাদাম ছড়িয়ে দেয় পায়েশে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে মেহমান আসা শুরু হয়েছে আর আদারা রেডি হয়েছে বাহিরে বের হওয়ার জন্য, তখনই আলফাজ নিঝুম এসে আটকায় আর বলে
–আদারা দেখ আজকে আমার বার্থডে, প্লিজ আজকে যাস না। বলে নিঝুম,আলফাজ আদারার হাতে একটা বেগ ধরিয়ে দিয়ে বলে…
–এই নে এটা পরে রেডি হয়ে নিচে আয় তোরা আর হ্যা আদারা তোকে জেনে সাদামাটা না দেখি।আজকে আমার অনেক ফ্রেন্ডরা আসবে দেখি তোকে বিদায় করতে পারি কিনা….। আলফাজের কথায় আদারা ঠোঁট চেপে হাসি দিয়ে মাথা দোলায় এই ২জনের আবদারই সে ফেলতে পারেনা কখনো….। নিচে প্রায় সবাই চলে এসেছে, সাথে রাদ আর মাহিরও নিঝুম আগেই বলেছে মাহির আর রাদ আসবে,বাসার সবাই মাহিরকে চিনে নিঝুমের ফ্রেন্ড হিসেবে আর শাহাদাত শাহামতও চিনে বিজনেসম্যান + নিঝুমের ফ্রেন্ড হিসেবে তাই তাদের আদর আপ্যায়ন একটহ বেশি…. শাহাদাত আর শাহামাতে কোম্পানি টপ 10 এর মধ্যে ৪ নম্বর আছে আর খান গ্রুপ ওফ ইন্ডাস্ট্রি দখল করে আছে 1 নম্বর নম্বর 2 এর আছে আলফাজের নিজের কোম্পানি….। একবাসায় থাকলেও আলফাজ আদারা আর নিঝুমকে ছাড়া কারো সাথে তেমন কথা বলে না গেলো ৩ বছর ধরে। (বাকিটা পরে জানতে পারবেন)
আদারা পরেছে স্কাইব্লু কালারের বারবি গাউন হাইলাইট করা চুলগুলো খোলা, ঠোঁটে ডার্ক পিংক কালারের লিপস্টিক,কানে ডায়মন্ডের ভারি দুল,মুখে হালকা মেকাপ। আর নিঝুম পরেছে পারপাল কালারের গাউন, সাথে চুলগুলো বান করে কার্ল করা, মুখে মেকাপ… দুই বোন নিচে নামছে বোন বললে ভুল হবে দুইটা পরি নিচে নামছে।
রাদ তো হা করে তাকিয়ে আছে, আর মাহিরের হাতে ছিল জুসের গ্লাস যেটা সে আদারাকে আনমনেই নিজের গায়ে ফেলে দেয়… মাহির তাড়াতাড়ি জুসটা ঝারছে কিন্তু নজর তার আদরার দিকে। নিঝুম সবার সাথে কথা বলে রাদে আর মাহিরের দিকে আসে… আর আদারা ব্যাস্ত নিজের ফোন নিয়ে…. নিঝুম আদারাকে নিয়ে রাদ আর মাহিরের সামনে দাঁড়ায়…
রদা আর মাহির নিঝুমকে শুভেচ্ছা জানায়… তখন আদারা কে রাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নিঝুম
–আদারা উনি হচ্ছেন আমার অফিসের বস, আর স্যার ও হচ্ছে আমার বোন…আদারা আফাফ…। রাদ নিজপর হাত বারিয়ে দিয়ে বলে
–হাই আদারা। আদারাও হাত মিলিয়ে হাই বলে…. তারপর নিঝুম মাহিরের কে উদ্দেশ্য করে বলে…
–ও হলো…আদারা মুখ তুলে দেখে মাহির আর ভ্রুকুচকে বলে
–মাহির আহনাফ আবিদ খান…. নিঝুম অবাক হয়ে বলে
–তোরা চিনিস একে অপরকে…. মাহির তো এর আগেও অনেক এসেছে কিন্তু তোর সাথে দেখা হয়নি…আদারা বলে
–উনি কি আমেরিকার প্রধান মন্ত্রী জো-ব্রাইডেন নাকি, যে উনার সাথে দেখা করা লাগবে…তখনই একটা হয়েটার সামনে দিয়ে ডিক্সস নিয়ে যাচ্ছিল আদারা সেখান থেকে একটা গ্লাস তুলে নিয়ে খেতে থাকে। রাদতো অবাক মাহিরকে এতো কিছু বললো কিন্তু সে কিছুই বললো না। মাহির নিঝুমকে বলে তার গায়ে জুস পরেগেছে সেটা পরিষ্কার করবে সে তাই সে নিঝুমকে বলে ওপরে ওয়াশ রুমের দিকে চলে যায়। আদারারও এইসব ভালো লাগছেনা তখনই কিছু বেবি জুসের গ্লাস হাতে দৌড়ে আসে আদারার দিকে আর একটা বেবির হাত থেকে জুস পরে যায় আদারা গায়ে…।বেবিটা বলে
–সরি আন্টি দেখতে পায়নি। অন্য সব বেবিরাও চুপ। বেবিটা বেশ কিউট আর আদারাও বাচ্চা পছন্দ করে তাই সে কিছু বলে শুধু মুচকি হাসি দিয়ে বলে
–ইট’স ওকে বেবি,তোমারতো লাগেনি? বেবিটা মদুইদিকে মাথা নাড়ায় যার মানে না… নিঝুম বলে
–দেখ আদারা তোর আর মাহিরের ব্যাপারটা কত মিল? তোর গায়েও জুস পরে গেলো তারা ২জন একই রকম। আদারা বলে
–এটা একটা Coincidence… ওকে। তুমি থাকো আমি এটা পরিষ্কার করে আসি… বলেই আদারা ওপরে নিঝুম আর তার রুমের দিক যায়…. হাঠাৎই একটা হাত এসে আদারাকে একটা রুমে নিয়ে যায় রুমটা সম্পূর্ণ অন্ধকার….সামনে থাকা ব্যক্তিটার নিশ্বাস উপচে পরছে আদারার মুখে…। ব্যক্তিটা বলে
–বলেছিলাম না আমার সামনে আর আসবে না, তো কেনো চলে আসো…..তখনতো আমি এসেছিলাম তাই মাফ করে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন?… আদারা ব্যক্তিটার হাতে কামড় দিয়ে বলে
–Who the hell are you!!?… ব্যাক্তিটা বলে…
–I am a Mafiya…এটা শুধু তুমি জানো কিন্তু আমার পরিবার বা কেউ জানেনা…. আচ্ছা এখন কেমন হবে বলেতো একটা মাফিয়ার সাথে তোমার #ভালোবাসার_গুন্ঞ্জন ছড়াবে….

চলবে….
গঠনমূলক কমেন্টর আশা করলাম… 🖤🖤