ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি পর্ব-১০

0
947

#ভালোবাসার_রঙিন_প্রজাপতি
#লেখনীতে:সারা মেহেক

১০

উষ্ণ মিষ্টি এক রোদ চোখেমুখে এসে পরতেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই মাথার উপরে স্বাভাবিক গতিতে চলমান সিলিং ফ্যান চোখে পরলো।চোখে এখনও ঘুমঘুম ভাব আছে তবে ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না আর। আবার শরীরে প্রচন্ড আলসেমি এসে বাসা বেঁধেছে।
কিছুক্ষণ আলসেমির সাথে লড়াই করে শোয়া থেকে উঠে বসলাম আমি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম নদী নেই।হয়তো প্রাইভেটে চলে গিয়েছে।
দু হাত দিয়ে চোখ ডলে বালিশের কাছে রাখা চশমাটা চোখে পরে নিলাম।সামনের দেয়ালের দিকে চোখ পরতেই বিস্ময়ে ভ্রু জোড়া উঁচু হয়ে এলো।ঘড়িতে কেবল মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে।মাত্র তিন থেকে চার ঘন্টা ঘুমিয়েছি আমি!আজ যে সারাদিন ঝিমুনিতেই দিন কেটে যাবে তা আর বুঝতে বাকি রইলো না আমার।

ধীরেসুস্থে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমি।রুম থেকে বের হয়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম বড় মামি আর ছোট মামি নাস্তা রেডি করছে।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই বিধায় আমি রাইসা ভাবীর রুমে চলে গেলাম।ভাবী মনযোগ দিয়ে কোরআন পড়ছিলো।আমার উপস্থিতি টের পেয়ে কোরআন শরীফ বন্ধ করে আমার দিকে হাসিমুখে তাকালো।
“এতদিন পর আমার কথা মনে পরলো তোমার?”

আমি অপরাধী চাহনিতে তাকিয়ে বললাম,
“সরি ভাবী, তোমার শরীর ভালো না বলে খুব একটা দেখা করি না।আর যখন দেখা করতে চাই তখন তুমি ঘুমাও।কি একটা জ্বালা না?”

আমার কথা শুনে রাইসা ভাবী ফিক করে হেসে দিলো।বিছানায় বসে কোরআন শরীফ পাশের টেবিলটায় রেখে দিলো।আমাকে সামনে বসতে ইশারা করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো রাইসা ভাবী।ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে পেটে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার ভাতিজিটা খুব জ্বালাতন করছে তো।তার আর তর সইছে না এ দুনিয়াতে আসার।এজন্যই তো আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।এই দুষ্টু মেয়েটার জন্য সারাদিন ঘরে বসে থাকতে হয়।কারোর সাথে অনেকক্ষণ গল্পও করতে পারিনা।”

রাইসা ভাবীর অভিযোগ শুনে আমি নিঃশব্দে হেসে দিলাম।কিছুক্ষণ বাদে জিজ্ঞাস করলাম,
“তাহলে আমার ভাতিজি আসতে চলেছে।আলট্রাসনোগ্রাফি করিয়েছিলে কবে?”

রাইসা ভাবী নিজের ফুলে উঠা পেটের উপর হাত বুলাতে বুলাতে হাসিমুখে বললেন,
“করায়নি তো।”

আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম।আলট্রাসনোগ্রাফি করায়নি।তাহলে কিভাবে বুঝলো বাচ্চাটা মেয়ে?আন্দাজ করে বললো নাকি?আমি কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে জিজ্ঞাস করলাম,
“তাহলে বুঝলে কিভাবে যে এটা মেয়ে?”

রাইসা ভাবী আমার কৌতূহলী কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে আগের মতই বললো,
“তোমার ভাইয়ার মন বলে এটা মেয়ে।সে তো ধরেই নিয়েছে এটা মেয়ে।তার কথায় সায় দিতে দিতে আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছে আমার সোনামণিটা মেয়ে।”

ভাবীর কথায় আমি তৃপ্তিময় এক হাসি দিলাম।কি সুন্দর এ অনুভূতি!বাবা মা হওয়ার অনুভূতি!কত শত স্বপ্ন ঘিরে আছে একে ঘিরে।আর কয়দিন বাদেই এই বাচ্চাকে ঘিরেই পলাশ ভাইয়া আর রাইসা ভাবীর আলাদা সুন্দর স্বপ্নের মত এক জগত হবে।সে সুন্দর সুখী জগতের বাসিন্দা হবে এই তিনজন।

“জানো মিম?ওকে নিয়ে না আমি খুব টেনশনে আছি।”

রাইসা ভাবীর কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই আমি কল্পলোকের দুনিয়া থেকে ফিরে আসি।কিছুটা চিন্তিত সুরে জিজ্ঞাস করলাম,
“টেনশন কেনো?তোমার প্রেগন্যান্সিতে কি কমপ্লিকেশনস আছে অনেক?”

রাইসা ভাবীর চোখেমুখে এবার সুক্ষ্ম এক চিন্তার ছাপ দেখা দিলো।কিছুক্ষণ আগের সেই হাসিখুশি চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ নজরে এলো।কণ্ঠে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করে বললো,
“কমপ্লিকেশনস তো আছেই। সাধারণের চেয়ে একটু বেশি।এজন্য আরো টেনশনে অস্থির হয়ে পরি মাঝেমাঝে। ”

“এত টেনশন করো কেনো ভাবী?টেনশন নামক রোগটা থাকলেও এই সময়ে নিজেকে শক্ত রেখে টেনশন থেকে দূরে থাকতে হবে।ডেলিভারির আর কয়দিনই বা বাকি আছে,এখন টেনশন করলে যদি ডেলিভারি টাইমে সমস্যা হয় তখন?তাই বলছি, টেনশন একদম ঝেড়ে ফেলো।আর কমপ্লিকেশনস তো থাকেই সবার ক্ষেত্রে।কারোর কম কারোর বেশি।এই তো।”

“আমার টেনশন কমপ্লিকেশনস নিয়ে না।আমার টেনশন অন্য জায়গায়?”

“কোন জায়গায়?”

“এই যে,এমন অনেক নিউজ শুনেছি বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মা মারা যায়।আমার ক্ষেত্রে এমনটা হলে আমাদের একসাথে দেখা সব স্বপ্ন ভেঙে যাবে।আমার মেয়েটা মা হারা হয়ে যাবে।কিভাবে সে থাকবে এ দুনিয়ায়?”
এটুকু বলতেই রাইসা ভাবীর গলা ধরে এলো।চোখে নোনাজল টলমল করছে।যেকোনো সময় পরে যেতে পারে।আমার উচিত রাইসা ভাবীকে আপাতত এ দুশ্চিন্তা থেকে দূরে রাখা।এজন্য সান্ত্বনামূলক কথাবার্তা বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
আমি আমার জায়গা ছেড়ে উঠে গিয়ে রাইসা ভাবীর একদম সামনে বসে পরলাম।ভাবীর দু গালে হাত রেখে হাসিমুখে বললাম,
“এই যে আমার মিষ্টি কিউট ভাবীটা।এত নেগেটিভ চিন্তা করো কেনো বলোতো?তুমি কি জানো না এ সময়ে এসব চিন্তা করতে হয়না?আর কান্না করছো কেনো?তুমি কি চাও তোমার মেয়েটা এ দুনিয়াতে এসে বলুক,আমার আম্মুটা আমাকে একদম ভালোবাসে না।আমি পেটে থাকতে সে কান্না করেছে।টেনশন করেছে।সে আমাকে ভালোবাসে না বলেই এমন করছে।সে এমনটা বলুক তাই চাও?”

আমার কথায় রাইসা ভাবী ঠোঁট চেপে ধরে না বোধক মাথা নাড়ালেন।আমি একটু শব্দ করে হেসে বললাম,
“এমনটা চাও না তো কান্না করো কেনো?টেনশন করো কেনো?সব কিছু পজিটিভলি নাও।দেখো,ইনশাআল্লাহ সব ভালো হবে।আমার ভাতিজি সুস্থ সবলভাবে দুনিয়াতে আসবে।আর তার বাবা মার সাথে অনেক খেলাধুলাও করবে।
আচ্ছা আমার ভাতিজির নাম কি?এভাবে ‘ভাতিজি ভাতিজি’ বলে ডাকবো নাকি তাকে?তার সাথে খেলতে গেলে কি বলবো,এই ভাতিজি এভাবে খেলো ওভাবে খেলো?”

আমার কথায় রাইসা ভাবী আবারে ফিক করে হেসে দিলেন।তার চোখের কোনে জমে থাকা নোনাজল টুপ করে পরে গেলো।ভাবী হাসিমুখে বললো,
“তার নাম রাখবে তার চাচ্চু।আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রেখেছে।জন্মের পর তার চেহারা দেখে নামকরণ হবে বলেই আমরা এখনও তার নাম রাখেনি।”

“ও এই কথা।আচ্ছা,ততদিন তাহলে একে ভাতিজি বলেই ডাকবো।
আচ্ছা ভাবী, তুমি এখন একটু রেস্ট নাও।অনেকক্ষণ তো গল্প করলাম।আমি এবার উঠি।”

“আচ্ছা। ”

আমি আর কিছু না বলে রাইসা ভাবীকে শুইয়ে দিয়ে নদীর রুমে চলে আসলাম।
কিছুক্ষণ পর বড় মামি সকালের খাবারের জন্য ডাকলো।নদী নেই বিধায় আমি খেতে চায়নি।কিন্তু বড় মামি তা মানলো না।সে আমাকে জোর করে বসিয়েই ছাড়লো।নদীর বলে আজ ফিরতে দেরি হবে।পড়া শেষে কিছু নোটস এর জন্য সে তার বান্ধবীর বাসায় যাবে এজন্যই দেরি হবে তার।

খাবার খাওয়া শেষে আমি আবারো নদীর রুমে এসে বিছানায় বসলাম।তবে একা নয়,সাথে চিরসঙ্গী হিসেবে ফোনটাও নিয়ে আসলাম চার্জার খুলে।নদী বাসায় না থাকলে আপাতত এই এক কাজ থাকে।বিরক্ত হয়ে যাই মাঝেমাঝে। কবে যে নদী একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে আল্লাহ জানে।অবশ্য সে নিয়ে যাবেই বা কি করে।দুইবেলা প্রাইভেট থেকে ফুরসত পেলে তো!
আগামীকাল শুক্রবার।ভাবছি নদীকে আজ বলবো আমাকে কাল ঘুরতে নিয়ে যেতে।রাজী হবে নিশ্চয়ই।অবশ্য রাজী না হওয়ার কোনো কারন খুঁজে পাচ্ছি না।

এসব নিয়ে আর না ভেবে অলস ভঙ্গিতে বসে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করতে লাগলাম।

“কি ব্যাপার মিম?খোঁজাখবর নেই যে?”
হঠাৎ খুব কাছে কারোর কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলাম আমি।ফলস্বরূপ হাত থেকে ফোনটা বিছানায় পরে গেলো।ফোনটা আবারো হাতে নিয়ে শব্দের উৎস খুঁজতে চোখজোড়া জানালার উপর দিলাম।জানালার বাইরে অর্ণব ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। ঠোঁটের কোনে হাসি আছে,তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু অন্যরকম।কিন্তু সেই অন্যরকম ভাবটা আমি ঠিক ধরে উঠতে পারলাম না।

অর্ণব ভাইয়া আবারো প্রশ্ন করলেন,
“তোমার যে খোঁজখবরই পাওয়া যায়না।ব্যাপার কি?”

অর্ণব ভাইয়ার কণ্ঠে সুক্ষ্ম তবে অস্পষ্ট এক অভিমানের ছাপ শোনা গেলো।অদ্ভুত ব্যাপার।উনার কণ্ঠে এমন অভিমান কেনো?কারোর উপর কি খুব অভিমান করেছেন উনি?হয়তো।
আমি একটু ইনিয়েবিনিয়ে বললাম,
“ব্যাপার নরমাল।আপনার অবস্থা কি?”

“আমার অবস্থা শুনে তুমি কি করবে?এ কয়দিনে খোঁজই নাওনি তো।”

অর্ণব এবারের কথার ভাব শুনে আমি একটু ভড়কে গেলাম।উনার কথাবার্তার ধরনটা খুব একটা ভালো ঠেকছে না আমার কাছে।আমি এখন যেটা ভাবছি, সেটা যদি হয় তাহলে মোটেও ভালো হবে না।এমনটা হলে উনার কাছ থেকে যতটুকু সম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।যেই একটু আধটু কথা হয় তাও বন্ধ করে দিতে হবে।

একটা শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
“আগে নেয়নি বলেই তো আজ খবর নিচ্ছি। কেমন আছেন?”

এতক্ষণ পর অর্ণব ভাইয়ার মুুখে একটু হাসি ফুটলো।তিনি বললেন,
“আমি আছি কোনোরকম।তোমার অবস্থা কি?”

“এই তো ভালো।”

“তুমি…….” অর্ণব ভাইয়াকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে কোথা থেকে যেন আদ্রিশ ভাইয়া টপকালেন।
আদ্রিশ ভাইয়া ভ্রু উঁচিয়ে একবার আমার দিকে তাকিয়ে অর্ণব ভাইয়ার পিঠে চাপড় দিয়ে বললেন,
“কি ব্যাপার দোস্ত?এখানে কি করছিস?”

অর্ণব ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে সেই শিশুসুলভ হাসি দিয়ে বললেন,
“এই তো মিমের সাথে একটু কথা বলছি।”

আদ্রিশ ভাইয়া তা শুনে ঠোঁট উল্টে বললেন,
“বাহ বাহ,ভালোই তো।টাইমা পাসিং চলছে।তো এখানে দাঁড়িয়ে কেনো?বাড়ির ভিতরেও যেতে পারিস।আম্মু,চাচি আর দাদির সাথে একটু দেখা করে আসতি।তাদের অভিযোগ, তুই অনেকদিন তাদের খোঁজাখবর নিস না।”

অর্ণব ভাইয়া এবার অপরাধী কণ্ঠে বললেন,
“আসলেই রে।অনেকদিন দেখা করা হয়না।ফ্যাক্টরির কাজে অনেক ব্যস্ত আছি তো এজন্য।দেখি কাল পরশু দেখা করবো সবার সাথে।”

“তোর ফ্যাক্টরিতে……..” কথাটা সম্পূর্ণ বলতে পারলেন না আদ্রিশ ভাইয়া।তার আগেই উনার ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই উনার ভ্রু জোড়া কুঁচকে আসে।
ফোন রিসিভ না করেই উনি আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবার অর্ণব ভাইয়ার দিকে তাকালেন।ছোট্ট করে হেসে বললেন,
“তোরা কথা বল।আমার ফোন এসেছে।আমি কথা বলে আসি।”
এই বলে আদ্রিশ ভাইয়া অর্ণব ভাইয়াকে ডিঙিয়ে মাঠের দিকে গেলেন।যেতে যেতে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশের মানুষটার উদ্দেশ্যে বললেন,
“হ্যাঁ, মাহা।বলো।”

এবার বুঝতে পারলাম কার ফোন এসেছে।জরুরী মানুষের ফোন আসায় আদ্রিশ ভাইয়া চলে গেলেন।দিয়ে গেলেন আমাকে ছোট্ট এক খারাপ লাগা অনুভূতি।এ খারাপ লাগাটা হুট করেই ধরা পরলো।এর কারনটা ঠিক বুঝতে পারলাম না।অবশ্য বুঝতেও চাইছি না।মাঝেমাঝে কিছু বিষয়ে অবুঝ হওয়া ভালো।

.

দুপুরে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসলাম আমি।প্রচন্ড ঘুম আর আলসেমি জেঁকে ধরলো আমাকে।অবশ্য জানা ছিলো,রাতের সেই অপূর্ণ ঘুমটা আমাকে সারাদিন তাড়া করে বেড়াবে।তখন অর্ণব ভাইয়ার সাথে কথা বলার পরপরই খুব ঘুম পেলো।ঘুমানোর জন্য শুয়েছিলাম ঠিকই তবে ঘুমাতে পারেনি।নদী এসে আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিলো।সেই থেকে এখন অব্দি শুধু হাই তুলে যাচ্ছি।এখন অতিসত্বর না ঘুমালে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসার পরপরই নদী ওয়াশরুমে চলে গেলো।আমি চুল থেকে তোয়ালে খুলে ভেজা চুল নিয়েই বালিশে মাথা দিলাম।তৎক্ষণাৎ মনে পরলো, সদ্য ভেজা চুল নিয়ে বালিশে মাথা রেখে ঘুমানো মানে পুরো বালিশ ভিজিয়ে ফেলা।এমনটা করা মানে মামির ঘাড়ে একটা সমস্যা চাপানো।শুধু শুধু অপরের বাড়িতে এসে এমন সমস্যা তৈরী করার কোনো মানে হয়না।তাহলে ঘুমানোর একটা পথই খোলা রইলো আর তা হলো বসে বসে ঘুমানো।আমি যে ঘুমকাতুরে তাতে এক হাঁটুতে মাথা রেখে বসে ঘুমানো কোনো ব্যাপার না।

এ দুপুরে সামনের নির্জন রাস্তায় মানুষের আনাগোনা থাকে না বললেই চলে।তাই আমি বিছানার সাথে লাগোয়া জানালা অর্থাৎ দক্ষিনের জানালাটা পুরোপুরি খুলে দিলাম।এ ঠান্ডা হাওয়া ঘুমটা ভালো হবে।সাথে ভেজা চুলও পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে।
জানালা খুলে দিয়ে এক হাঁটু বিছানার সাথে লাগিয়ে রেখে অপর হাঁটু ভাঁজ করে ফেললাম।ভাঁজ করা হাঁটুতে দু হাতের তালু উল্টোদিক করে রেখে সেখানে মাথা দিলাম।দক্ষিনের শীতল হাওয়ার দাপটে কিছুক্ষণের মাঝেই চোখজোড়া বুজে এলো আমার।

কতক্ষণ ঘুমিয়েছি তা জানি না।এখনও শরীর মস্তিষ্ক সব যেন ঘুমিয়ে আছে।আলসেমির জন্য চোখজোড়াও খুলতে মন চাইছে না।মন তো চাইছে আরেকদফা ঘুমিয়ে নিতে।আমার অলস মনের সে ইচ্ছাকে পূরণ করতেই আমি আবারো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।চোখজোড়া খোলা হয়নি বলে ঘুমুঘুমু ভাবটা এখনো লেগে আছে।এমতাবস্থায় ঘুম আসতে একদম সময় লাগবে না।
মাত্রই গভীর ঘুমের জগতে পা দিচ্ছিলাম।হঠাৎ মনে হলো কেউ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।এবার সে দূরত্বটা আরেকটু কমে গেলো।তারপর আরেকটু কমে গেলো।কাছেই চলে এসেছে সে।আমার সামনে দিয়ে যে হাওয়া বইছিলো তা ধীরেধীরে কমে আসছিলো বলেই বুঝতে পারলাম আমার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।
খানিকটা বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ধীরেধীরে চোখজোড়া খুলে ফেললাম আমি।অদ্ভুত! সামনে কেউ দাঁড়িয়ে নেই!তাহলে কিছুক্ষণ আগে যে মনে হলো কেউ দাঁড়িয়ে আছে,সেটা কি ভুল মনে হয়েছিলো?
আমি হাঁটু থেকে মাথা তুলে আশেপাশে ভালোভাবে দেখার চেষ্টা করলাম। নাহ, কেউ নেই।তাহলে হয়তো আমি ভুল ভেবেছি।এ নিয়ে আর মাথা ঘামালাম না আমি।

কিছুক্ষণ অলস ভঙ্গিতে বসে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে পরলাম।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষ হতেই এক এক করে সবাইকে দুপুরের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্য ডাকলেন ছোট মামি।নদীকে আশেপাশে দেখতে পেলাম না।হয়ত সে রান্নাঘরে আছে।নদীকে না পেয়ে আমি একাই বেড়িয়ে আসলাম রুম থেকে।
রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি।হঠাৎ মনে হলো দুই মামিকে জিজ্ঞাস করি যে তখন ঐ রুমে কেউ গিয়েছিলো নাকি।
হালকা গলা পরিষ্কার করে আমি বড় মামিকে জিজ্ঞাস করলাম,
“মামি?আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন কি নদীর রুমে কেউ এসেছিলো?”

বড় মামি ভাতে চামচ দিতে দিতে বললো,
“হুম।আমি গিয়েছিলাম।কাজ ছিলো একটু।গিয়ে দেখি তুমি ঘুমাচ্ছো।তাই আর জাগায়নি।”

“সরি মামি,এ টাইমে ঘুমানো উচিত হয়নি।”

বড় মামি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো,
“সরি বলছো কেনো?ঘুমাতেই পারো।সমস্যা নেই তো।আর যে কাজের জন্য এসেছিলাম, তা হয়ে গিয়েছে। ”
এই বলে মামি আমার দিকে ভাতের বাটি তুলে দিয়ে বললো,
“এটা টেবিলে রেখে আসো তো মা।”
আমি হাসিমুখে মামির কাছ থেকে ভাতের বাটি নিয়ে ডাইনিং এ চলে আসলাম।ভেতরে ভেতরে একটু শান্তি পেলাম এই ভেবে যে তখন বড় মামি গিয়েছিলো রুমে।

ডাইনিং এ দুই মামা,মেজ নানু, পলাশ ভাইয়া,আদ্রিশ ভাইয়া আর রাইসা ভাবী বসে আছে।পলাশ ভাইয়া আর আদ্রিশ ভাইয়া ফোনে ব্যস্ত।আমার উপস্থিতি টের পেয়ে আদ্রিশ ভাইয়া ফোন থেকে মাথা তুলে এক নজর আমার দিকে তাকালেন।উনার চাহনি স্বাভাবিক।অবশ্য স্বাভাবিকই হওয়ার কথা।আমি উনার চাহনি নিয়ে আর গবেষণা না করে আবারো রান্নাঘরে চলে এলাম।

®সারা মেহেক

#চলবে