ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি পর্ব-০৯

0
984

#ভালোবাসার_রঙিন_প্রজাপতি
#লেখনীতে:সারা মেহেক

আদ্রিশ ভাইয়ার কণ্ঠ কানে আসতেই আমি আগের চেয়েও আরো শক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম।ওদিকে দু হাত দিয়ে আদ্রিশ ভাইয়ার হাতও সরিয়ে নিতে চেষ্টা করলাম আমি।কিন্তু পারলাম না।উনার শরীরে প্রচন্ড শক্তি।আর সেই সর্বোচ্চ শক্তি দিয়েই উনি আমাকে ঠেকিয়ে রেখেছেন।

“ইশ,একটা মানুষ যে এভাবে ব্যাঙের মত লাফাতে পারে তা আগে জানতাম না।আজ সচক্ষে প্রমাণ দেখা ছাড়া কখনোই এমনটা বিশ্বাসই করতাম না। ”
ফিসফিস করে আদ্রিশ ভাইয়া আমার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বললেন।উনার কথায় রাগ উঠে গেলো আমার।এভাবে একটা মানুষকে ধরলে সে লাফাবে না তো কি করবে?
আদ্রিশ ভাইয়া আবারো ফিসফিস করে বললেন,
“আমি ছেড়ে দিচ্ছি তোমাকে।কিন্তু জোরে কথা বলা যাবে না।আমার মতই ফিসফিস করে কথা বলতে হবে।”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শেষ হওয়া মাত্রই আমি জোরে জোরে মাথা দুলাতে থাকি। যার অর্থ হ্যাঁ।
আমার ইশারা চট করে বুঝে গেলেন আদ্রিশ ভাইয়া।সাথে সাথে আমাকে ছেড়ে দিলেন।উনি ছেড়ে দিতেই আমি বুক ভরে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।এতক্ষণে ঠান্ডা হাওয়া নিতে পেরে পরাণ জুড়িয়ে গেলো।
নিজেকে ঠিকঠাক করে নিয়ে আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে গলার স্বর স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু উঁচু করে বলি,
“আপনি আমাকে এভাবে…..”
আমার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আদ্রিশ ভাইয়া আবারো আমার মুখ চেপে ধরেন।কানের কাছে মুখ নিয়ে আতংকিত স্বরে ফিসফিস করে বললেন,
“বলেছিলাম জোরে কথা না বলতে।তারপরেও এভাবে কথা বলছো কেনো!যদি কেউ জেগে যায়!”

আমার মুখ চেপে ধরায় আবারো দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলো।আমি আদ্রিশ ভাইয়ার হাতের উপর জোরে জোরে থাপরাতে থাকি।ফলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আদ্রিশ ভাইয়া আমার মুখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নেন।
আবারো বুক ভরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।তবে তার আগেই আদ্রিশ ভাইয়া আমার হাত ধরে টানতে টানতে বাড়ির পিছনের উঠোনে নিয়ে আসেন।
চারপাশে চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে।সব দেখা যাচ্ছে তবে আবছা।এই মনে হচ্ছে আশেপাশের সবকিছু নিজেদের মধ্যে কেমন যেন এক রূপালি রঙ ধারণ করেছে। আবার মনে হচ্ছে তারা আলো আঁধারির এক অলিখিত খেলায় মেতে উঠেছে।কি অদ্ভুত পরিবেশের এ রূপটা!

আদ্রিশ ভাইয়া আমাকে এখানে আনার পর পরই আমি ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে নিলাম।এতক্ষণ শুধু গায়ে ওড়না ছিলো।আমাকে ওড়না টানতে থেকে আদ্রিশ ভাইয়া গলা নামিয়ে কিছু একটা বললেন।তবে আমার কান অব্দি তা পৌঁছালো না।

ওড়না ঠিকঠাক করে নিয়ে আমি আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আরেকটু হলে মনে হয় দমবন্ধ হয়ে আমি মরেই যেতাম।আজ আপনি আমাকে মেরেই ফেলতেন।”

এই বলে আমি চোখমুখ কুঁচকে উনার দিকে তাকালাম।চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম উনি নিঃশব্দে হেসে উঠলেন হাসির কি বললাম বুঝলাম না আমি।
আদ্রিশ ভাইয়া খানিক সময় হেসে বললেন,
“এত সহজে মরতে দিতাম নাকি।”

উনার কথার প্রতিউত্তর না দিয়ে আমি রেগে ফুঁসে উঠলাম।তখনকার জাপটে ধরার কথা হুট করে মনে এসে গেলো।আমি রাগান্বিত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে টাচ করেছিলেন কেনো আপনি?তাও আবার এত ক্লোজলি!উত্তর দিন আমাকে।”

আমার প্রশ্ন শুনে আদ্রিশ ভাইয়া খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন।এমন ভাবটা এই প্রথম উনার চেহারায় দেখলাম।উনি কিছু সময় চুপ থেকে বললেন,
“ওভাবে তোমাকে না ধরলে যে তুমি দাদির রুমে চলে যেতে।”

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম,
“তো?নানুর রুমে গেলে কি সমস্যা হতো?”

“সমস্যা হয়ে যেত বলেই তোমাকে আটকিয়েছিলাম।না আটকালে তো সকালে আমার উপর ঝাড়ির বহর বয়ে যেতো।”

“কেনো?”

“দাদি আর আম্মু আমাদের দুই ভাইয়ের রাত জাগা একদম দেখতে পারেনা।আমি কলেজে থাকাকালীন একবার আমি আর ভাইয়া দুই রাত জেগেছিলাম।সেই ঘুম পূরন করতে আমরা সময় নিয়েছিলাম পুরো তিনদিন।এই তিনদিন দিনরাত ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম।এজন্য বাড়িতে কম বকা শুনতে হয়নি।সেই থেকে নিয়ম হলো যে বেশি রাত জাগা যাবে না।সর্বোচ্চ একটা।এর বেশি না। তবে বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে অন্য কথা।
তাহলে বুঝো তুমি দাদির রুমে চলো গেলে কি হয়ে যেত!”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা আমি বুঝতে চাইলাম না। আর যাই হোক,উনি আমাকে ওভাবে ধরবেন কেনো!
আমি আবারো আগের মতই বললাম,
“যা হবার তাই হতো।তাই বলে আপনি আমাকে ওভাবে জাপটে ধরবেন কেনো?”

আমার রাগ হয়তো উনার কাছে কম মনে হচ্ছে।তাই তো সরি বলছেন না উনি।উল্টো স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললেন,
“তুমি যে ব্যাঙের মতো লাফানো শুরু করেছিলে তাতে তোমাকে ওভাবে না টাচ করে উপায় ছিলো না। ”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি কিছু সময় চুপ করে রইলাম।কথাটা ঠিক বুঝলাম না। তবে বুঝতে সময়ও লাগলো না আমার।উনার কথা বুঝতে পারার পর পরই আমি রাগান্বিত স্বরে বললাম,
“আপনার মত চোরের হাত থেকে বাঁচতে আমাকে ওভাবে লাফাতে হয়েছিলো।”
এই বলে আমি কোমড়ে দুই হাত রেখে রাগী চাহনিতে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
এতে উনার যায়আসলো নাকি কে জানে।মুখে কিছু না বলে আদ্রিশ ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।যেন কিছু ভাবছেন বা সন্দেহ করছেন।
কিছুক্ষন এভাবে থাকার পর আদ্রিশ ভাইয়া নিজ স্থানে দাঁড়িয়ে থেকেই আমার দিকে একটু ঝুঁকে সন্দেহের সুরে বললেন,
“কিভাবে?ব্যাঙের মত?”

আমি সহজ স্বীকারোক্তি,
“হুম ব্যাঙের মত।”

এই বলার পর পরই বুঝলাম যে মুখ ফসকে আমি কি বলে দিয়েছি।উফ,উনার কথায় আমি ফেঁসে গেলাম!নিজের কপালে নিজেই চড়াতে মন চাইছে।আমার মুখে আমি কিভাবে লাগাম লাগাবো আল্লাহ জানে।

ওদিকে আমার স্বীকারোক্তি করতে দেরি হলো তবে আদ্রিশ ভাইয়ার হাসতে দেরি হলো না।উনি যথাসম্ভব নিম্ন স্বরে হেসে চলছেন।আর তা দেখে আমার শরীর জ্বালা করা শুরু করলো।খুব অপমানিত বোধ করলাম আমি।
আদ্রিশ ভাইয়া হাসির দমকে উল্টে উল্টে পরছেন যেন।হাসিতে দম আটকে যাবে তারপরেও উনি এখন হাসা ছাড়বেন না।এই হলো উনার অবস্থা।
আদ্রিশ ভাইয়া নিজের হাসির গতি আগের চেয়ে কমিয়ে বললেন,
“ওয়াও মিশমিশ, তুমি তাহলে নিজেকে ব্যাঙ বলে মেনে নিলে।”
এই বলে উনি আবারো আগের গতিতে হাসতে লাগলেন।উনার হাসি একদমই সহ্য হচ্ছে না আমার।বোকার মত তখন যে কেনো মুখ ফসকে ওটা বলে ফেলেছিলাম……..
এই বেয়াদব লোকটা কথা ক্যাচ করতে জানে খুব।আবার নিজের কথার জালে ফাঁসাতেও জানে।
উনার হাসি আমার আর সহ্য হচ্ছে না।আমি এবার রেগে বললাম,
“আমার কথা বাদ দিয়ে আগে নিজের দিকে দেখুন।নিজে তো চোরের মত দরজা দিয়ে ঢুকেছেন।তো এই রাতে আপনার সামনে থাকা ব্যক্তির থেকে আপনি কি আশা করছিলেন?ভেবেছিলেন একদম স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ করবে?মোটেও না আপনার মত এমন চোরকে দেখে যে কেউই লাফিয়ে উঠবে।”

আদ্রিশ ভাইয়া হাসতে হাসতেই বললেন,
“তাই বলে ব্যাঙের মত……”
উনি এবার পেট চেপে হাসতে লাগলেন।

ওদিকে আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।নাহ,এ টপিকে আর থাকা যাবে না।টপিকটা অন্যদিকে ঘুরাতে হবে।
“এতো রাতে আপনি এখানে কি করছিলেন?আর চোরের মতই বা ভিতরে আসছিলেন কেনো?কি চুরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিলেন?”

আদ্রিশ ভাইয়া খুব কষ্টে এবার নিজের হাসি থামালেন।লম্বা কয়েকটা শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বললেন,
“এত প্রশ্ন একসাথে!আচ্ছা সবগুলোরই উত্তর দিচ্ছি।
প্রথমত,আমি এখানপ একটা কাজ করতে এসেছিলাম।আপাতত সেটা গোপন থাকুক।দ্বিতীয়ত…”

উনাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আমি বললাম,
“কি গোপন কাজ?গার্লফ্রেন্ডের সাথে প্রেমালাপ?”

আদ্রিশ ভাইয়া ঠোঁট উল্টে বললেন,
“যা ইচ্ছে ভাবো।
তো দ্বিতীয় নাম্বার প্রশ্নের জবাব হলো,আমি দূর থেকে হালকা অবয়বে ভেবেছিলাম ওটা বোধদয় নদী।এত রাতে বীর সাহসী সেই নারীই ঘুম থেকে জেগে একা একা পানি খেতে আসতে পারে।তাই ভাবলাম ওকে একটু ভয় পাইয়ে দিব।কিন্তু তোমার একটু দূরে এসেই বুঝতে পেরেছি ওটা তুমি।”

আমি ভ্রু উঁচিয়ে সন্দেহের সুরে জিজ্ঞাস করলাম,
“একটু দূর থেকে কিভাবে বুঝলেন ওটা আমি?আমি তো কোনো কথাই বলিনি।তাহলে বুঝলেন কি করে?”

আদ্রিশ ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,
“বুঝেছি একভাবে।ওহ হ্যাঁ,তোমার তৃতীয় প্রশ্নের জবাব হলো,আমি চুরি করতে এসেছিলাম।”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথায় আমি অবাক হয়ে গেলাম।নিজের বাড়িতে সে নিজেই চোর হয়ে চুরি করছে!মারাত্মক ব্যাপারস্যাপার।আমি কণ্ঠে খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করে বললাম,
“নিজের বাড়িতে কি চুরি করতে এসেছিলেন?”

আদ্রিশ ভাইয়া আমার প্রশ্ন শুনে নিঃশব্দে হেসে উঠলেন।আমার দিক থেকে ঘুরে উনি ডান পাশে ফিরে চাঁদের দিকে তাকালেন।কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বললেন,
“নিজের বাড়িতেও চুরি করার মত মহামূল্যবান জিনিস থাকে।সেটাই চুরি করতে এসেছিলাম বলতে পারে।আবার বলতে পারো, কারোর কিছু চুরি করতে এসেছিলাম। ”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা আমাকে কনফিউজড করে দিলো।
“কারোর সেই কিছুটা কি?”

“সেটা নাহয় গোপন থাক।”

উনার কথায় বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে এলো আমার। আমি মনে মনে বললাম,’আরে,সবই যখন গোপন রাখতে মন চাইছে তাহলে এই এতটুকু কথা বলার দরকার কি?শুরুতেই বলতে পারতো,সেটাও নাহয় গোপন থাক।এটাও নাহয় গোপন থাক।গোপনের ভান্ডার খুলে বসে পরলেই তো হয়।’

“সরি, তোমাকে ওভাবে জাপটে ধরার জন্য।”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথায় আমি চমকে উঠলাম।কিন্তু উনাকে এটা বুঝতে না দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম,
“ইটস ওকে।”

আদ্রিশ ভাইয়া আর কিছু বললেন না।আমিও কিছু বললাম না।দুজনের মাঝে কেটে যাচ্ছে নিস্তব্ধ কিছু মূহুর্ত।আমাদের সাথে নিশ্চুপ হয়ে আছে চারপাশের পরিবেশও।এ নিশ্চুপতার মাঝে পরিবেশ যেন কিছু বলছে।কিন্তু কি বলছে বুঝতে পারলাম না। আচ্ছা?আদ্রিশ ভাইয়া কি কিছু বুঝছেন?পরিবেশের এ নিশ্চুপতার মাঝে লুকিয়ে থাকা কথোপকথন কি তিনি শুনছেন?বুঝছেন?হয়ত হ্যাঁ বা হয়তো না।
অতি সন্তপর্ণে নিঃশ্বাস ফেলে আমি ডান দিকে ফিরলাম।আদ্রিশ ভাইয়ার থেকে কিছুটা পিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আমার চোখজোড়া খুঁজছে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা জ্যোৎস্না বিতরণকারী সেই চাঁদটাকে।একটু চেষ্টার পরও যখন সে চাঁদটাকে দেখতে পারলাম না তখন আমি একটু পাশে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিশ ভাইয়ার একদম পিছনে দাঁড়িয়ে পরলাম।এখান থেকে একদম স্পষ্টভাবে রূপালী সেই চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে।প্রায় গোলাকার সেই রূপালী থালায় অঙ্কিত কিছু কলঙ্কের দাগ আমার চোখজোড়া গভীর মনযোগ সহকারে দেখছে।এই কলঙ্কিত রূপালী চাঁদকে দেখে একটা উক্তি মনে পরে গেলো।
“চাঁদের যে কলঙ্ক তা কেবল মুখের উপরে,তার জ্যোৎস্নায় কোনো দাগ পরে না।”
উক্তিটি বলেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
চারপাশে একটু একটু করে আবারো ঝিঝি পোকার শব্দ বেড়ে গেলো।একদম ধীের ধীরে করে জোরালোভাবে শব্দ উৎপন্ন করা শুরু করলো তারা।আর রাতটাকে তখন হঠাৎ-ই খুব গভীর মনে হলো।নিশ্চুপ এ রাতে এই ঝিঝি পোকারই কমতি ছিলো শুধু।ঝিঝি পোকার ডাক যত স্পষ্ট হয় রাত তত গভীর হয়।
রাতের আকাশের সেই রূপালী চাঁদ, মৃদুমন্দ গতিতে বহমান হাওয়া আর ঝিঝি পোকার ডাক সব মিলিয়ে একটা রাত হয়। গভীর রাত।নিশ্চুপ রাত।মন চায় খুব আপন কারোর সাথে এ রাতে জ্যোৎস্না বিলাস করি।এ মূহুর্তে এমনটা করতে খুব মন চাইছে। অবশ্য করছিও।তবে সেই আকাঙ্ক্ষিত আপনজন নেই।আছে অতি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এক অপরিচিত জন।ঠিক অপরিচিত জন নয়।কোথায় যেন পরিচিত একটা অনুভব হয়।দূর সম্পর্কের এ আত্মীয়তা বাদে একটা পরিচিত অনুভব হয়।কারনটা কি জানি না।জানতেও চেষ্টা করছি না।

হঠাৎ দূরে কোথায় কুকুরের ডাকে আমি আমার ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলাম।চোখজোড়া চলে গেলো আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে।উনি আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছেন।তৎক্ষনাৎ সময়ের কথা মনে পরে গেলো।নিশ্চয় রাত প্রায় চারটা বাজে।এত রাত পর্যন্ত বাইরে থাকা ঠিক না।ভিতরে যাওয়া উচিত।বিদ্যুতও চলে এসেছে।নদীর ঘুম ভেঙে গেলে আমাকে পাশে না পেলে কি না কি মনে করে বসে।

আমি দ্রুত বাড়ির ভিতরের দিকে পা বাড়ালাম।পিছন থেকে আদ্রিশ ভাইয়ার কণ্ঠ কানে ভেসে এলো।
“মিশমিশ,আরেকটু থেকে গেলে কি হতো না?এখানে থাকতে কি খুব খারাপ লাগছে?”

আদ্রিশ ভাইয়ার কণ্ঠ শুনে আমি থমকে দাঁড়ালাম।উনার এ কণ্ঠস্বর আমার কানে কেমন যেনো ঠেকলো।কিছুটা অদ্ভুত তবে স্বাভাবিক।
আমি পিছন ফিরে আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“রাত অনেক হয়েছে।আর কতক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো।ঘুম পাচ্ছে তাই শুতে যাচ্ছি।”

“হুম। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।ঘুমানো উচিত।তুমি যাও।”
আদ্রিশ ভাইয়ার এখনকার কণ্ঠস্বর একদম স্বাভাবিক লাগলো।আগের মত সেই কিছুটা অদ্ভুত ভাব আসেনি।
আমি আর কিছু না বলে চুপচাপ নদীর রুমে চলে আসলাম।আমার পিছু পিছু যে আদ্রিশ ভাইয়াও উঠোন চলে এসেছে তা দরজা আটকানোর শব্দেই বুঝতে পারলাম।নদীর রুমের দরজা আটকানোর আগে স্তিমিত আলোয় দেখতে পেলাম আদ্রিশ ভাইয়া ডাইনিং এর কাছে এসে দাঁড়িয়ে হাতে কিছু একটা নিলেন।ডাইনিং এর জানালা দিয়ে আবছা আলোয় এটুকু বুঝতে পারলাম জগ বা গ্লাস হাতে নেননি উনি। কিন্তু কি নিয়েছেন তাও বুঝতে পারলাম না।আদ্রিশ ভাইয়া যে জিনিসটা নিতে এসেছিলেন তা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন।আমিও দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে শুয়ে পরলাম।

®সারা মেহেক

#চলবে