ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি পর্ব-০২

0
1515

#ভালোবাসার_রঙিন_প্রজাপতি
#লেখনীতে:সারা মেহেক

নদীর রুমে বসে বসে ফোন চালাচ্ছি আমি।নদী মাগরিবের আজানের একটু আগে এসে পৌঁছিয়েছে।ফ্রেশ হয়ে নামাজ পরে ঘুমের উদ্দেশ্যে বিছানায় শুয়েছিল ঠিকই।তবে তার আম্মু তাকে ঘুমাতে দেয়নি।কিছু কাজের জন্য রান্নাঘরে গিয়েছে সে।সেই থেকে এখন অব্দি সে রুমে ঢুকেনি।আমিও আর বের হয়নি রুম থেকে।ঐ বেয়াদব লোকটার সামনাসামনি হতে হয় যদি!এই জন্য এখনও রুমেই পরে আছি আমি।
বিরক্ত লাগছে।চরম বিরক্ত লাগছে।কয়েক ঘন্টা হলো আম্মু গিয়েছে আর ঐ বেয়াদব লোকটা এসেছে বাড়ীতে তাতেই এতো অসহ্য লাগছে। বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটাবো তা চিন্তা করেই মাথায় হাত উঠছে আমার।

“মিম আপু,আম্মু রাতের খাবার খেতে ডাকছে। জলদি চলো।”
ওড়না দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে কথাটা বলল নদী।নদীর কথায় ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ঘড়ির দিকে তাকালাম আমি।কাটায় কাটায় নয়টা বাজে।এ বাড়ীর লোকজন এমন সময়েই রাতের খাবার খায়।প্রথমদিন এসেই জানলাম ইদ্রিস মামা এ নিয়ম করেছে।সময়মত সব কাজ করা উনার অভ্যাস। সকালে একদম ঠিকঠাক সময়ে উঠে নামাজ পরবে।এরপর গরম গরম এক কাপ চা খাবে।বাড়ীর আশেপাশে ঘুরে এসে ৮.৩০ এর মধ্যে সকালের নাস্তা করবে।আবারো দুপুরে আর রাতে একদম ঘড়ি ধরে নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাবে। প্রথম দর্শনে মনে হতে পারে ইদ্রিস মামা বেশ রাগী আর কড়া স্বভাবের।কিন্তু একদিন উনার সংস্পর্শে থাকলেই এ ধারনাটা সম্পূর্ণ বদলে যাবে।কারন উনাকে দেখে যতটা কড়া স্বভাবের মনে হয় উনি ঠিক ততটাই নরম স্বভাবের।

এতো দ্রুত রাতের খাবার খাওয়ায় আমার আবার এলার্জি আছে। বাসায় তো রাত এগারোটা এমনকি বারোটার সময়ও রাতের খাবার খাই।সেখানে এখন রাত নয়টার সময় রাতের খাবার খেতে হয়।ফলস্বরুপ ঘুমাতে যাওয়ার আগে পেটে একদল ইদুর এসে মেলা শুরু করে দেয়।আমার নানুবাড়ীতেও একই নিয়ম।সেখানে অবশ্য এর আগেও রাতের খাবার খায়।যা আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর লাগে।
হাতের ফোনটা চার্জে দিতে দিতে নদীকে বললাম,
“চলো নদী।নাকি তুমি রেস্ট নিবে?”

“না না এখন রেস্ট নিব না।একেবারে খেয়েদেয়ে রেস্ট নিব।নয়টা বেজে গিয়েছে অলরেডি।”

এই বলে রুমের ফ্যানটা অফ করে আমার হাত ধরল নদী।আমিও ডাইনিং এর উদ্দশ্যে পা বাড়ালাম।তৎক্ষণাৎ আমার মনে পরে গেল বিকেলে ঐ বেয়াদব লোকটার করা সে অপমানের কথা।নিশ্চয় সেও খেতে এসেছে। হ্যাঁ, নিশ্চয় সে এসেছে। উনার সামনে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।বলা যায় না,সবার সামনে আমাকে কাজের লোক বলে বসবে।আমি মোটেও আবারো অপমানিত হতে চাই না।মোটেও না।

নদীর হাতটা ধরে আমি বললাম,
“নদী,আমার না খেতে ইচ্ছা করছে না।তুমিই যাও।”

আমার কথা শুনে নদী বিস্ময়ে আমার দিকে ফিরে বলল,
“সে কি!খাবে না কেনো?আমার সাথে তো যাচ্ছিলেই।চলো তো আপু।অল্প হলেও খেয়ে আসো।”

“না না।দেখো আমার একটুও খাওয়ার ইচ্ছা নেই।প্লিজ নদী।”

আমার কথা হয়ত নদীর কান অব্দি পৌঁছায়নি।সে আগের মতই আমার হাত ধরে টানতে টানতে রুম থেকে বেড়িয়ে এল।
রুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ঐ বেয়াদব লোকটা মুখোমুখি হতে হলো।ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে এই রুমের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন উনি।আমাদের দেখে কয়েক সেকেন্ড আগের কুঁচকানো ভ্রুজোড়া মূহুর্তে সোজা হয়ে এল।চেহারায় খেলে গেল হাসির রেখা।

“ও মা!!ছোট ভাইয়া তুমি!”

নদীর বিস্ময়ের কণ্ঠস্বরে আমি খানিকটা চমকে গেলাম।সে ততক্ষণে আমার হাত ছেড়ে দিয়েছে।তার হাতজোড়া তো এখন গালে অবস্থান করছে।মানুষ বেশি অবাক হলে যেমন দু গালে হাত দিয়ে অবাক ভঙ্গিটা প্রকাশ করে, নদীও ঠিক তাই করছে।
নদীর বিস্ময়াভিভূত চেহারায় আরো একটু বিস্ময়ের রেখা টেনে দিতেই ঐ বেয়াদব লোক মানে আদ্রিশ ভাইয়া চেয়ার ছেড়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন।উনার এগিয়ে আসা দেখে আমি আমার জায়গা থেকে খানিকটা পিছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আদ্রিশ ভাইয়া মুচকি হেসে নদীকে বললেন,
“বিশ্বাস হয় না আমি এসেছি? ”

নদী না বোধক মাথা নাড়াল।সাথে সাথে আদ্রিশ ভাইয়া নদীর বা হাতে চিমটি কেটে বলল,
“এবার তো বিশ্বাস হয়?”

চিমটি কাটার ফলে নদী জোরে ‘আহ’ বলে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“এতো জোরে চিমটি কাটো কেনো ছোট ভাইয়া?হাত তো না যেন পাথর।”

নদীর কথা শুনে আদ্রিশ ভাইয়া ঠোট উল্টিয়ে নদীর মাথায় গাট্টা মেরে তারই কথার নকল করে বলল,
“হাত তো না যেন পাথর।”

আদ্রিশ ভাইয়া আর নদীর কর্মকাণ্ডে তারা দুজন সহ উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠল।সাথে আমিও হেসে দিলাম।
আমার হাসির আওয়াজটা বোধদয় একটু জোরেই হয়েছিল।তাই তো আদ্রিশ ভাইয়া হাসি থামিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে আমার দিকে তাকালেন।সাথে সাথে আমার হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।মনে পরে গেল সেই অপমানের কথা।না,এই লোকটার মুখোমুখি কিছুতেই হওয়া যাবে না।আর উনার কথায় তো মোটেও হাসা যাবে না।দুনিয়ার সেরা জোকস বললেও না।

নদী আদ্রিশ ভাইয়াকে টেনে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে বলল,
“তুমি কখন এসেছো ছোট ভাইয়া?”
এই বলে নদী বাকি সবার উদ্দশ্যে বলল,
“আমাকে কেউ বলেনি কেন ছোট ভাইয়ার কথা?”

নাদিয়া মামি অর্থাৎ ছোট মামি বললেন,
“তোর ছোট ভাইয়া নিষেধ করেছিল।তোকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।সে কিন্তু আমাদেরও সারপ্রাইজ দিয়েছে।”

নদী অবাক হয়ে বলল,
“সে কি! সবাইকে সারপ্রাইজ দিয়েছে! কখন এসেছে ছোট ভাইয়া?”

প্লেটে ভাত নিতে নিতে আদ্রিশ ভাইয়া বললেন,
“বিকেলে এসেছি।বাড়ীর কাউকে জানায়নি আমি আসছি।সবার সারপ্রাইজড হয়ে যাওয়া মুখ দেখব বলে কাউকে বলেনি।
এবার এত পকপক না করে খেতে বস।”

আদ্রিশ ভাইয়ার হুকুমে নদী সাথে সাথে বসে পরল।ওদিকে আমি সেখানেই ঠায় দাঁড়ীয়ে আছি।এগুনোর সাহস পাচ্ছি না।
হঠাৎ ইদ্রিস মামা আমাকে দেখে বলে উঠলেন,
“কি গো মা?ওখানে দাঁড়ীয়ে আছো কেনো?বসো।”

ইদ্রিস মামার কথা শুনে ডাইনিং এর আট জোড়া চোখ আমার উপর নিবদ্ধ হলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় আমি ভড়কে গেলাম।মেজ নানু নদী আর আদ্রিশ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বলল,
“তোদের দুই ভাইবোনের কথাবার্তার জন্য মেয়েটা ওখানেই দাঁড়ীয়ে আছে।যা নদী ওকে নিয়ে আয়।”

মেজ নানুর কথায় নদী তৎক্ষণাৎ উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে অপরাধী কণ্ঠে বলল,
“সরি সরি আপু।ছোট ভাইয়া আসার খুশিতে আমি তোমাকে ভুলেই গিয়েছিলাম।সরি সরি।”

আমি বিনয়ী হেসে বললাম,
“আরে ইটস ওকে।সমস্যা নেই।চলো এখন।”

নদী হাত ধরে এনে আমাকে তার পাশের চেয়ারে বসালো।এই একটাই চেয়ার খালি ছিল যা একদম আদ্রিশ ভাইয়ার সোজাসুজি।

আমি মাথা নিচু করে খাচ্ছি। প্রস্তুত হচ্ছি আরেকদফা অপমানিত হওয়ার।কখন যেন লোকটা বলে বসে, ‘আম্মু কাজের লোককে তুমি আমাদের সাথে বসে খাওয়াচ্ছ!’এমনটা বললে সবার সামনে আমি কি করে মাথা তুলে তাকাব কে জানে।

“মেয়েটা কে আম্মু?আগে তো কখনও দেখিনি।”
আদ্রিশ ভাইয়ার প্রশ্নে আমি মাথা নিচু করেই চশমার আড়াল দিয়ে উনাকে দেখলাম।আগেকার মতই মাথা নিচু করে গভীর মনযোগ সহকারে খাবার খাচ্ছে।
আদ্রিশ ভাইয়ার প্রশ্নে উনার মা বেশ অবাক হয়ে বলল,
“তোরা এখনও পরিচিত হোস নি!মিম কে না আমি পাঠালাম তোর রুমে বিকেলে।”

মামির কথা শুনে আমি এবার মাথা তুলে আদ্রিশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম।হয়ত এখনই উনি বলে উঠবেন,’ওকে তো আমি কাজের লোক ভেবেছিলাম।’ এমনটা বললে মামা মামি আর নানুর সামনে আমার ইজ্জতটা কতখানি থাকবে তাই চিন্তা করতে লাগলাম।

“না,তখন পরিচিত হইনি।আমি তো ওকে অন্যকিছু ভেবেছিলাম।”

“কি ভেবেছিলি ওকে?”পলাশ ভাইয়া এবার মুখ খুললেন।

আদ্রিশ ভাইয়া এক গাল হেসে বললেন,
“আরে ওসব বাদ দাও।তেমন কিছু না।”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে বড় মামি বললেন,
“তোর দাদির ছোট বোনের মেয়ে।”

আদ্রিশ ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বললেন,
“তাও চিনলাম না।”

“তোর রাফেজা ফুপির বড় মেয়ে।আরে পলাশ ভার্সিটি পরীক্ষা দিতে গিয়ে যাদের বাসায় ছিল।”

আদ্রিশ ভাইয়া বুঝতে পেরে বললেন,
“ওহ আই সি।এতক্ষণে একটু পরিচয় জানলাম।যাই হোক,এর আগে তো কোনোদিন দেখা হয়নি তাই পরিচয় জানাও সম্ভব ছিল না।মেয়েটা নিজের পরিচয় দিবে তো….”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি মনে মনে বললাম,’এহ,পরিচয় দিব….কি পরিচয় দিতাম শুনি।আর পরিচয় না জেনে যাকে তাকে কাজের লোক বানিয়ে দিবে!ফালতু লোক একটা।’

“আরে মিম,এতো আস্তেধীরে খাও কেন।আরো একটু তরকারি নিয়ে জলদি জলদি খাও।”পলাশ ভাইয়া মাছের বাটিটা আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন।আমি মৃদু হেসে মাছের বাটি থেকে একটা মাছ উঠিয়ে খেতে লাগলাম।

.

সকালের সৌন্দর্যের আসলেই তুলনা হয় না।রাতের নিকষ কালো আকাশ ধীরে ধীরে আসমানি রঙ ধারন করে পুরো পৃথিবীকে সকাল নামক এক সময়ের সাথে পরিচয় করায়।যে সকাল হাজারো পাখির মিষ্টি কিচিরমিচির আওয়াজে ভরে উঠে সে সকালে না জাগলে জীবনটাই বৃথা মনে হয়।
আমার মত ঘুমকাতুরে মেয়ে মাসের একদিন একটু ভোরে জেগে উঠলে সে ভোরটাকেই সৌভাগ্যবান বলে মনে হয়।বাহ ভোর সৌভাগ্যবান হয় আমি না।এ কথা ভাবতেই হাসি পেয়ে গেল আমার।

৭.৩০ বাজে।বাড়ীর পিছনের ছোট্ট উঠানটায় প্লাস্টিক এর চেয়ার পেতে বসে আছি আমি।হাতে ফোন আর আশেপােশ মৃদুমন্দ ঠান্ডা বাতাস।আর কি লাগে সময়টাকে উপভোগ করার জন্য!
সকাল সকাল বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে বলেই আজ ঘুম ভেঙেছে আমার।নদী প্রাইভেটে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল তখন।প্রচন্ড গরম লাগায় তীব্র অস্বস্তি নিয়ে চোখ খুলে দেখলাম ফ্যান বন্ধ।নদী বলল বিদ্যুৎ নেই।এটা শুনে বেশ বিরক্তি নিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠলাম আমি।পরে ফ্রেশ হয়ে ফজরের কাজা নামাজ পরে উঠানে এসে বসলাম।

“কি রে নদী,আজকে প্রাইভেট পড়তে যাস নি?”
হঠাৎ একটা পুরুষালী কণ্ঠ কানে ভেসে আসতেই আমি পাশ ফিরে ডানে তাকালাম।নাহ সেখানে কেউ নেই।এবার পাশ ফিরে বামে তাকাতেই দেখলাম বাড়ীর পিছনের ছোট্ট গেটে একজন দাঁড়ীয়ে আছে।হালকা লাল রঙের টিশার্ট আর জিন্সের প্যান্ট পরহিতা এক যুবক দাঁড়ীয়ে আছে।চেহারায় শিশুসুলভ একটা ভাব।তবে মুখে থাকা ঘন দাড়ির ফলে সে শিশুসুলভ ভাবটা কোথাও চাপা পরে আছে।
ছেলেটা আমাকে দেখামাত্রই এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
“ওহ সরি সরি।আমি ভেবেছিলাম নদী এখানে বসে আছে।আসলে বাইরে থেকে তোমার সাইড ভিউ একদম নদীর মত লাগছিল। তাই এমন ভুলটা হয়েছে।সরি এগেইন।”

ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ফোনের স্ক্রিন অন করে আমি মৃদু হেসে বললাম,
“ইটস ওকে। ”

ছেলেটি এবার আমার সামনে এসে দাঁড়ীয়ে বলল,
“তুমি কে?ঠিক চিনলাম না।”

আমি ভদ্রতার হাসি দিয়ে বললাম,
“চেনার কথাও না।এর আগে কখনো আসিনি তো।আমি নদীর দূর সম্পর্কের এক কাজিন হই।”

“ওহ আচ্ছা।নাম কি তোমার?”

আমার উত্তর দেওয়ার আগেই কে যেন বলে উঠল,
“এই চাশমিশের নাম মিম।”
আমি চমকে ডান পাশে ফিরে তাকালাম।কণ্ঠস্বর শুনে যা আন্দাজ করেছিলাম তাই হলো।কণ্ঠস্বরের মািলক আর কেউ নন স্বয়ং আদ্রিশ ভাইয়া।
ঘিয়ে রংয়ের একটা টিশার্ট আর সাদা কালো চেক থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে আছেন উনি।এক হাত সেই প্যান্টের পকেটে।আর অপর হাতে ফোন।দৃষ্টিজোড়া ফোনে নিবদ্ধ।

এতো বুড়ো মানুষের এসব থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরার সায়েন্স আমার মাথায় আসে না।নদীর কাছে শুনেছি আদ্রিশ ভাইয়া এবার ইন্টার্নি শেষ করেছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করেছেন। সেখানেই ইন্টার্নির পাট চুকিয়ে এখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই এত বড় মানুষটা ছোকরাদের মত থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরলে কি আদৌ মানায়?আমার উত্তর হবে ‘না’।
আদ্রিশ ভাইয়াকে দেখে আমার সামনে দাঁড়ীয়ে থাকা ছেলেটা বিস্ময় নিয়ে বলল,
“আরে দোস্ত তুই!কবে আর কখন এলি?”

ছেলেটির কথা শুনে আদ্রিশ ভাইয়া মাথা তুলে মুচকি হেসে দিলেন।উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মুখে সে হাসিটা মানিয়েছে বেশ।এ হাসির দ্বারাই সর্বনাশা এক কাজ হয়ে গেল।না চাইতেও উনার এ হাসি আমার ভাল লেগে গেল।আমি এমনটা মোটেও চাই না।একটুও চাই না।যে লোকটা আমার সাথে রুড ব্যবহার করেছে, আমাকে অপমান করেছে তার হাসি আমার কাছে ভাল লাগা উচিত না।আমি আমার ভাল লাগাটা ফেরত নিলাম।পণ করলাম এ ছোকরা কম বুড়োটাকে পছন্দ করা যাবে না।কিছুতেই পছন্দ করা যাবেনা।

আদ্রিশ ভাইয়া হাতে থাকা ফোনটা প্যান্টের পকেটে রাখতে রাখতে এগিয়ে এলেন।উনার ঠোটের সে মুচকি হাসি ধীরেধীরে বিস্তৃত হচ্ছে। আমি দ্রুত ডান পাশ থেকে মাথা সরিয়ে সামনের দিকে নিলাম।

আদ্রিশ ভাইয়া সেই ছেলেটার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কেমন আছিস অর্ণব? ”

ওহ, তাহলে এই ছেলেটার নাম অর্ণব।আদ্রিশ ভাইয়ার প্রশ্নের জবাবে অর্ণব ভাইয়া চওড়া হেসে বললেন,
“এই তো ভাল আছি।তুই কবে এলি?আর আমার সাথে দেখাও করিস নি তুই!”

“কালকে বিকেলে এসেছি।এইজন্য দেখা করা হয়নি।আজ ভেবেছিলাম দেখা করব।চল ভিতরে চল।”

“আরে না।ফ্যাক্টরি তে যাব।সময় নেই।”

“আরে রাখ তোর সময়।আধ ঘন্টায় কি এমন হয়ে যাবেনে।আম্মুর হাতের চা খাব আর একটু আড্ডা দিব।”

“আচ্ছা চল।তো কি নাম বলেছিলে যেন তোমার?”
শেষের প্রশ্নটি আমার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন অর্ণব ভাইয়া।

অর্ণব ভাইয়ার প্রশ্নে আমি ভদ্রতাসূচক একটু হাসি হেসে বললাম,
“জ্বি ভাইয়া,আমার নাম মিম।”

আমার কথা কানে পৌঁছানো মাত্রই অর্ণব ভাইয়া হুট করে উনার মাথাটা আমার দিকে এগিয়ে আনলেন। চোখজোড়া আধো বন্ধ আধো খোলা রেখে নিজের বাম পাশের বুকে হাত রেখে বললেন,
“আহা,ভাইয়া বলো না গো।বুকে গিয়ে বিঁধে।”

অর্ণব ভাইয়ার কাজে আর কথায় আমি ভড়কে গেলাম।শরীর আপনাআপনি চেয়ারের সাথে একদম লেগে গেল।চোখজোড়া বিস্ময়ে বড় হয়ে এলো আর ঠোটজোড়া আপনাআপনিই খুলে গেল।
আমার মাথা যেন ক্ষণিকের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিল।যখন বুঝতে পারলাম তখন মনের দুয়ারে দুটো বিস্ময়বোধক শব্দ এসে হানা দিল।এটা কি ছিল!সোজাসুজি ফ্লার্টিং!
আমার রিয়েকশন ফানি ছিল নাকি কে জানে।আদ্রিশ ভাইয়া আর অর্ণব ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে একটু শব্দ করে হেসে উঠলেন।
হাসি থামিয়ে আদ্রিশ ভাইয়া অর্ণব ভাইয়ার কাঁধে হাত রেখে বললেন,
“চল রে।কতক্ষণ এখানে দাঁড়ীয়ে থাকবি?”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে অর্ণব ভাইয়া আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে বাড়ীর ভিতরের দিকে সাথে হাঁটা শুরু করলেন।যেতে যেতে অর্ণব ভাইয়া বললেন,
“আর যাই বলিস দোস্ত,চাশমিশটা দেখতে কিন্তু বেশ নরমসরম।”

অর্ণব ভাইয়া কথাটা একটু জোরেই বললেন।ফলস্বরুপ আমি শুনে ফেললাম।উনার কথা শুনেই হয়ত আদ্রিশ ভাইয়া বাড়ীর গেটে ঢুকার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো ঘাড় ঘুরিয়ে নিলেন।আমি সেদিকেই তাকিয়ে ছিলাম।ফলে আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে আমার চোখাচোখি হয়ে গেল।একদম অজান্তে। আমি না চাইতেও।এই না চাইতেও কিছু জিনিস পাওয়া ব্যাপারটা একদম ভাল না।বিশেষ করে এমন ছোটখাট কিছু সর্বানাশা পাওয়া তো একদমই ভাল না।

®সারা মেহেক
#চলবে