ভালোবাসার রঙিন প্রজাপতি পর্ব-০৮

0
932

#ভালোবাসার_রঙিন_প্রজাপতি
#লেখনীতে:সারা মেহেক

হৃদপিন্ডটা প্রচন্ড জোরে লাফাচ্ছে। নিশ্চয় যেকোনো সময় বুকের খাঁচা থেকে বের হয়ে এক দৌড় লাগাবে।দু হাত ঘেমে নেয়ে একাকার।ভয়ের চোটে দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ীয়ে থাকাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য।তবুও বাইরে দিয়ে আমি নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে ঠায় দাঁড়ীয়ে আছি।আর আদ্রিশ ভাইয়া আমার এ মেকি সাহসিকতাকে ভেঙে দিতে উঠে পরে লেগেছেন যেন।তিনি আমাকে পুরোদমে ভিতু প্রমাণ করতে চাইছেন। কিন্তু আমিও কম না।পরবর্তী যেকোনো অপমান থেকে বাঁচতে আজকে নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে হবে,তা জানা আছে আমার।

আমি শুকনো একটা ঢোক গিলে উনার দিকে তাকালাম।কণ্ঠে যথাসম্ভব দৃঢ়তা প্রকাশ করে বললাম,
“আপনার কাণ্ডজ্ঞান কি নেই?আমাকে এভাবে আটকে রাখার মানে কি!”

আদ্রিশ ভাইয়া খানিক হেসে বললেন,
“আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে দাও।তাহলে তোমাকে যেতে দিবো।”

আমি এবার শক্ত কণ্ঠে বললাম,
“আপনার কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নই।আর আপনার প্রশ্নের জবাব আমি দিবোই বা কেনো?”

“দিবে না কেনো?ভয় পাও নাকি?”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে রাগে আমার শরীর রিরি করতে লাগলো।এ নিয়ে দ্বিতীয়বার উনি আমার ‘ভয় পাওয়া’কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।মানুষটা মনে হয় নিশ্চিত জানে, আমি ভিতু ধরনের।কিন্তু উনার সামনে সাহসী হওয়ার নাটক করি। উনি এমন জায়গায় কথা এনে দাঁড় করান যে উনার কথা না মেনে উপায় থাকে না।
আমি এবার চোয়াল শক্ত করে বললাম,
“আমি মোটেও ভিতু নই।আর আপনার প্রশ্নের জবাব দিতেও বাধ্য নই।”

“তাই!সাহসী হলে তো আমার কথা এক চান্সেই মেনে নিতে।এখন মানছো না তার মানে তুমি….”

উনার কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অগত্যা আমাকে বলতে হলো,
“কি প্রশ্ন করবেন করুন।আমার সময় কম।”

আদ্রিশ ভাইয়া বাঁকা হেসে বললেন,
“এতো কিসের বিজিনেস তোমার?”

“আছে কিছু।সব কথা আপনাকে বলবো কেনো? আর প্লিজ আমার থেকে দূরে সরে যান।”

“উঁহু।দূরে যাবো না।তোমার উপর বিশ্বাস নেই।হাত সরিয়ে নিলেই যদি উড়াল ধরো?”

“আমি এমনটা….”

“এ টপিক বাদ দাও।তো,আমার প্রশ্ন হলো,একটু আগে তুমি আমাকে কি বললে আর কেনো বললে?”

আমি উনার কথা বুঝেও না বুঝার ভান করে বললাম,
“কি বললাম একটু আগে?”

“আহহা,প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন করো কেনো?আমি কি প্রশ্ন করেছি তা ঠিকভাবেই জানো তুমি।তারপরেও বলে দিচ্ছি।আমি যখন বাইক পরিষ্কার করছিলাম তখন এখানে দাঁড়ীয়ে হাসতে হাসতে কি বলেছিলে?আর কেনো বলেছিলে?”

এ টপিকটা আর ঘুরানোর কোনো মানে হয় না।যা হবার হবে।আমি লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে সোজাসুজি বলেই ফেললাম,
“আপনাকে বাচ্চা বলেছি।আর কেনো বলেছি, তার জবাব হলো আপনি একটা বাচ্চা তাই।আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শেষ।এবার যেতে দিন আমাকে।”
এই বলে আমি পাশে ফিরলাম।সাথে সাথেই আদ্রিশ ভাইয়া আমার দিকে আরেকটু ঝুঁকে বললেন,
“এতো বড় একটা ছেলেকে তোমার কি বাচ্চা মনে হয়?”

আদ্রিশ ভাইয়ার কাছে আসায় আমি আগের চেয়ে আরেকটু ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করে বললাম,
“অবশ্যই।যার গার্লফ্রেন্ড কথায় কথায় ‘বেবি বেবি’ জিকির করতে ব্যস্ত তাকে বাচ্চা না বলে উপায় আছে নাকি?”

আদ্রিশ ভাইয়া এবার ঢেউ তোলা সুরে বললেন,
“ওহহো,এবার বুঝেছি।তোমার বয়ফ্রেন্ড তোমাকে বেবি বলে ডাকে না বলেই তুমি এভাবে জেলাস হচ্ছো।ঠিক বলেছি না?”

আদ্রিশ ভাইয়ার কথা শুনে আমি থ বনে গেলাম।কোথাকার টপিক উনি কোথায় নিয়ে গেলেন!
আমি খানিকটা রেগে বললাম,
“আমার ওসব ফালতু বয়ফ্রেন্ড নেই।বুঝেছেন?সো এসব জেলাসির কোনো বিষয়ই আসেনা।”

আদ্রিশ ভাইয়া তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললেন,
“মানুষ যে এতো মিথ্যা কেনো বলে বুঝি না।তুমি এতে জেলাস তা সোজাসুজি স্বীকার করলেই তো পারো।”

উনার কথায় এবার আমার খুব রাগ উঠে গেলো।রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে এলো আমার।দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
“আপনি অতিরিক্ত করছেন কিন্তু।আমি তো বললাম ওসব ফালতু রিলেশন ক্যারি করার সময়, ইচ্ছা কোনোটাই নেই আমার।

আর এমন কিছু আমার থাকলেও আমি কখনো তাকে এসব চিপমার্কা ‘বেবি’ বলে ডাকতাম না।আর না তাকে ডাকতে দিতাম।যদি বাই এনি চান্স সে এসব ‘বেবি’ বলে ডাকতো, তাহলে কানের নিচে দু চারটা থাপ্পড় দিয়ে এসে সেখানেই সব শেষ করতাম।যত্তসব ফাউল মার্কা ডাক।”
এই বলে আমি আদ্রিশ ভাইয়ার হাত এক ঝটকায় গাছের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।পিছন ফিরে আদ্রিশ ভাইয়াকে আর দেখলামও না।প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার।কি করে ভাবলেন উনি যে এসব বেবি ডাক শোনার জন্য আমি জেলাস ফিল করবো?বরং যেসব রিলেশনে এই সম্বোধনটা থাকে সে রিলেশন আর যাই হোক টিকে থাকার মত নয়।যেটা ন্যাকামো দিয়েই পূর্ণ সেটা আর যাই হোক খুব একটা ভালো না।দামড়া দামড়া সব ছেলেমেয়ে রিলেশনশিপে থাকার সময় ‘বেবি বেবি’ বলে মুখে ফ্যানা তুলে ফেলে যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লাগে আমার কাছে।

বিরক্তিকর সব।মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো আমার।এ রাগ কমতে কতক্ষণ লাগে কে জানে।
আমার খুব বাজে অভ্যাসগুলোর একটা হলো আমার খুব সহজেই রাগ উঠে যায়।কিন্তু সমস্যা হলো আমি সহজে কারোর উপর রাগ বের করতে পারিনা আর করিও না।তাই রাগে হাত পা কাঁপতে থাকে।চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।কিন্তু যখন রাগটা ঝাড়তে পারি তখন খুব শান্তি অনুভব হয়।এই যেমন এখন আদ্রিশ ভাইয়ার জন্য হওয়া রাগ উনার উপরই ঝাড়লাম।এজন্য শান্তি ফিল করছি এবং খুব শীঘ্রই আমি আবারো শান্ত হয়ে যাব।

নদীর রুমে এসে তোয়ালে আর জামাকাপড় নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম আমি, শাওয়ার নেওয়ার জন্য।

.

আজ নিয়ে দুইদিন হলো আদ্রিশ ভাইয়ার সাথে আমার দেখা হয়না।একেবারে যে দেখা হয়না তা নয়।শুধু খাবার টেবিলে দেখা হয়।কিন্তু কোনো প্রকারের কথাবার্তা হয়না।এ নিয়ে অবশ্য আমার শোক আফসোস নেই।তবে মাঝেমাঝে কোথায় যেন একটা খারাপ লাগা কাজ করে।হুট করে সেটা আবার তীব্র আকার ধারণ করে।এ খারাপ লাগার কারনটা কি তাও জানা নেই আমার।কারন জানার চেষ্টাও করিনি।শুধু এ খারাপ লাগাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাই।মাঝেমাঝে এ খারাপ লাগার একটা কারন অনুমান করি,যা নিতান্তই বোকার মত কাজ।

রাতের খাবারের পর পড়ালেখা শেষ করে নদী একটা জিদ ধরলো।জিদটা হলো,সে নাকি এখন ভুতের মুভি দেখবে।এই রাত ১২টার সময় কোন আক্কেলে সে ভুতের মুভি দেখতে চায় তা বুঝি না।গ্রামাঞ্চলে বাস করে এমন সময়ে ভুতের মুভি দেখতে চাওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।রাতের ঘুম হারাম করা।অন্তত আমার এটা মনে হয়।নদীকে আমি বুঝিয়ে বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি যে এই রাতেরবেলা ভুতের মুভি যেন না দেখে। এর অনেক কুফলও আলোচনা করলাম তার সাথে।কিন্তু সে জেদি মেয়ে।কোনোমতেই আমার কথা শুনলো না।ওদিকে আমি পরলাম চরম সংকটে।এমনিতেই দিনেরবেলা ভুতের মুভি দেখে রাতের আঁধারে নড়তে চড়তে অসুবিধা হয়।সেখানে রাত বারোটা মানে ভয়ংকর কিছু আমার জন্য।
ভুতকে বিশ্বাস করি না আমি।কিন্তু সেই ছোট বেলার ভয় এখনও যায়নি।ছোটবেলায় ‘আহাট’,’শশশশ,ফির কোয়ি হ্যায়’ নামক ভুতের সিরিজ গুলো দেখতাম।আর সারারাত যতক্ষণ না ঘুম আসবে ততক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতাম।ঘুমানোর চেষ্টা করলেও মনে হতো আমার মাথার পিছনে কারোর হাত আছে।কি ভয়ংকর ব্যাপারস্যাপার!

নদী কোন মাটিতে গড়া কে জানে।তার মধ্যে কি ভয় বলতে আদৌ কিছু আছে কি না তাতে যথেষ্ট সন্দেহ হচ্ছে আমার।এত বুঝানোর পরও সে ভুতের মুভি দেখবেই।অগত্যা আমাকেও রাজি হতে হলো।
নদীর ফোনে চার্জ ছিলো না বিধায় আমার ফোনে এখন মুভি দেখা হবে।চার্জার থেকে আমার ফোন খুলে নিয়ে
বিছানায় এসে বসলো সে।আমি আগে থেকেই জানালা বন্ধ করে সেখানে হেলান দিয়ে বসে আছি।রুমে বাতাস যাওয়াআসা করার জন্য নদী তার টেবিলের সামনের জানালাটা খুলে রেখেছে।আমার ইচ্ছা ছিলো সে জানালাটাও বন্ধ করে দেওয়ার।কিন্তু তা আর হলো কি।

প্রায় বিশ মিনিট যাবত ভুতের মুভি খোঁজার পর নদী অতি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একটা মুভি খুঁজে পেলো।২০১৮তে আমার দেখা ‘গ্রাজ’ নামক মুভিটা খুঁজে পেয়ে খুশিতে লাফাতে লাগলো সে।আর আমি থমথমে চাহনিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।কিন্তু এতে তার কোনো যায়আসে নি।
প্রথম যখন ‘গ্রাজ’মুভিটা দেখেছিলাম তখন মা ছেলের সেই গলার আওয়াজ কয়েকদিন পর্যন্ত আমার কানে বেজেছিলো।মনে হতো আশেপাশের সব জায়গায় সে শব্দ শুনতাম।অশান্তি অশান্তি।

পুরোটা মুভি নদী অনেক আগ্রহ সহকারে দেখলো।আর আমি দেখলাম চোখ বন্ধ করে করে।একটু ভয়ংকর সিনগুলো আসলেই চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলতাম।কারন আমার রাতের ঘুম আমার কাছে অতি প্রিয়।তবে নদী বিষয়টা টের পেয়ে গিয়েছিলো কোনোভাবে। তাই তো বেশি ভয়ংকর সিনগুলো সে আমাকে মিথ্যা বলে দেখিয়েছে।সেসব সিন চলমান থাকার পরও নদী আমাকে বলেছে ভুতের সিন শেষ হয়ে গিয়েছে।তার উপর বিশ্বাস করে চোখ খোলার পরই ফেঁসে যেতাম।যেটার জন্য চোখ বন্ধ করে ছিলাম সেটাই দেখতে হলো।আজ যে ঘুমের সময় কতবার আশেপাশে এসব ভুতের অস্তিত্ব অনুভব করবো আল্লাহ জানে।
ফোনের চার্জ দুই পার্সেন্ট হতে হতে মুভিও শেষ হয়ে গেলো।নদী আমার ফোন চার্জে ঢুকিয়ে লাইট অফ করে আমার পাশে শুয়ে পরলো।

“আজ যদি আমি খারাপ স্বপ্ন দেখেছি তো সব দোষ তোমার নদী।”

নদী আমার কথায় শব্দ করে হেসে বলল,
“আরে আপু ওসব কিছু হবে না।”

“তোমার ক্ষেত্রে তুমি গ্যারান্টি দিচ্ছো।কিন্তু আমি তো আমার ক্ষেত্রে তা পারছি না।চোখ বন্ধ করলেই মা ছেলের সে সাদাটে চামড়ার কালো চোখের সিন আমার চোখের সামনে চলে আসছে।আর ঐ শব্দটা তো,উফফ।”

নদী এবার খিলখিল করে হেসে উঠলো।আমার দিকে ফিরে টিপ্পনী কেটে বললো,
“আরে মিম আপু….তুমি এত ভিতু জানতাম না।এতই যখন ভয় লাগছে তখন মনে করবে এসব কিছুই দেখোনি তুমি।”

“হুম,তুমি বললে আর হয়ে গেলো।হাজার মনে করলেও মনে হবে না।আর তুমি তো ভয় পাওয়ার একটা সোর্চ সেই জানালাটা খুলে রেখেছো।”

“ঐ জানালাটা না খুললে খুব গরম লাগতো রাতের বেলা।ওটা খোলা থাকলে যা একটু হাওয়া বাতাস পাস হয়।বিছানার কাছের জানালা তো খোলা রাখা যাচ্ছে না।”

“হুম। তা অবশ্য ঠিক।”

“আচ্ছা আপু।ঘুমিয়ে পরো।আমিও তো ঘুমাবো।কালকে সকালে প্রাইভেট আছে।”

“হুম,এখন ঘুমানোর চেষ্টা করবো।দেখি কতক্ষণ লাগে ঘুম আসতে।”

নদী আর কিছু বললো না।হয়ত সে ঘুমানোর চেষ্টা করছে। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।

কতক্ষণ সময় চলে গিয়েছে কে জানে।আমার ঘুম এখনও আসেনি।এদিক ওদিক ছটফট করতে করতে ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে গিয়েছি।বিদ্যুৎ চলে গিয়েছে প্রায় দশ মিনিট হতে চললো।পুব দিকের জানাল দিয়ে শো শো করে বাতাস ঘরে প্রবেশ করছে।দরজার উপরে থাকা পর্দাটা বাধাহীনভাবে উড়ে চলছে।বারবার ভিতু এ মনটা বলছে পর্দার ওপাশ থেকেই হুট করে ফ্যাকাশে চামড়ার কালো চোখের এক মানুষ আমাকে তার দর্শন দিবে।কি ভয়ানক!
ওদিকে নদী আরামসে ঘুমাচ্ছে। আর এদিকে জানালা দিয়ে আসা বাতাস আমার শরীরে লাগছে না। আবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।ঢোক গিলতেও কষ্ট হচ্ছে। অনেকক্ষণ এ নিয়ে ছটফট করার পরও আর থাকতে পারলাম না আমি।খুব খারাপ লাগছে।মনে হচ্ছে এক গ্লাস পানি না পেলে আমি মারা যাব।
এক গ্লাস পানি খাওয়ার জন্য হাজারো ভয় আর উৎকণ্ঠা থাকার পরও সাহস নিয়ে আমি বিছানা ছেড়ে উঠলাম।সাহসটা মূলত এলো এই ভেবে যে ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট অন করে ডাইনিং থেকে পানি খেয়ে দ্রুত চলে আসবো।
আমি দ্রুত পায়ে ফোনের কাছে এসে ফোনটা অন করার জন্য হাতে নিলাম।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না।অনেক চেষ্টার পরও ফোন অন করতে পারলাম না।হয়ত যথেষ্ট চার্জ হয়নি।কি এক দুর্বিষহ অবস্থা। ওদিকে আমার গলায় শুকিয়ে অবস্থা খারাপ।কিন্তু মনের ভয়ে নড়তে পারছি না।
বেশ কিছুক্ষন ভাববার পর সিদ্ধান্ত নিলাম এসব মনের ভয়কে জয় করেই আমি পানি খেতে যাব।এ ভয়কে জয় না করলে আমি নির্ঘাত মারা পরবো।

লম্বা এক শ্বাস টেনে নিয়ে দরজা খুলে খালি হাতে বেরিয়ে এলাম আমি।এই অন্ধকারে হাতরে হাতরে নদীর ফোন বা চার্জার লাইট কোনোটাই খোঁজা আমার পক্ষে সম্ভব না।তাই খালি হাতেই ডাইনিং এ চলে এলাম আমি।টেবিলের কাছে জগ আর গ্লাস হাতরে নিয়ে পানি ঢেলে খেতে লাগলাম।তবে শান্তিতে না।আমার অবচেতন মন বলছে এই বুঝি আমার কাঁধে কেউ হাত রাখবে।এই বুঝি আমার সামনে হুট করে কেউ চলো আসবে।ভয় নিয়েই পানিটুকু শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম।এখন কাজ হলো সোজা ঘরে ঢোকা।কিন্তু তা হলো না।চোখজোড়া চলে গেলো সেই বাড়ীর পিছনের দরজার দিকে।ডাইনিং দিয়েই বাড়ীর পিছনের উঠোনে যাওয়া যায়।

সেই দরজা খোলা দেখে আমার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে এলো।মুখ দিয়ে আপনাআপনি বেরিয়ে এলো,’এ দরজা খোলা কি করে!’
প্রতিদিন রাতের খাবার খাওয়ার সময় বড় মামি এই দরজাটা তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।আজও আমার চোখের সামনে বন্ধ করা হয়েছিলো।তাহলে এখন খোলা কিভাবে! তাও আবার এত রাতে!বোধদয় রাত তিনটা বাজে।

দরজা খোলা দেখে আমার মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো।দুনিয়ার যত অশুভ চিন্তা আছে সব মাথায় জটলা পেকে যেতে লাগলো।সবার প্রথমে যে অশুভ চিন্তা মাথায় এলো তা হলো,বাড়ীতে চোর ঢুকেছে। আমার এ অশুভ চিন্তাকেই আরো একধাপ এগিয়ে নিতেই দরজায় কারোর অবয়ব দেখতে পেলাম আমি।সাথে সাথে ভয়ে বুকটা ধ্বক করে উঠলো।শ্বাস নিতেও ভুলে গেলাম যেন।হাত পা জমে যেন ঠান্ডা হয়ে এলো।মস্তিষ্কও কাজ করা বন্ধ করে দিলো যেন।
ওদিকে অবয়বটা এগিয়ে আসছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে পা টিপেটিপে সে হাঁটছে।একদম চোরদের মত।তাহলে তো এ নিশ্চিত চোর।এখন আমার কি করা উচিত?মুভিতে যেমন আশেপাশের জিনিসপত্র দিয়ে চোরের মাথায় ফাটিয়ে দেয় অমনটা করা উচিত কি?সেকেন্ডেই আমার মস্তিষ্ক জবাব দিয়ে দিলো,’হুম এমনটাই করা উচিত।’
মস্তিষ্কের কথার যথাযথ আজ্ঞা করতেই আমি পিছে ফিরে ডাইনিং এ আঘাত করার মত হাতিয়ার খুঁজতে লাগলাম।কিন্তু জগ আর গ্লাস বাদে কিছুই পেলাম না।একটা কাটা চামচের খুব অভাব বোধ করলাম আমি।
টেবিল হাতরে কাচের গ্লাস হাতে নিলাম।তবে তার আগেই একটা অঘটন ঘটে গেলো।একটা কাচের গ্লাসের সাথে আরেকটা গ্লাস বারি খেলো।যে কাজটা একদম নিঃশব্দে করতে চেয়েছিলাম আমি সে কাজটা এখন সশব্দে হয়ে গেলো।নিশ্চয় চোরটা তটস্থ হয়ে গিয়েছে।এখন যদি আমার কোনো ক্ষতি করতে চায়!
এখন একটা পথই খোলা তা হলো চিৎকার করতে হবে।আমি ভাবা অনুসারে কাজ করতেও চেষ্টা করলাম।কিন্তু আফসোস, তা হলো না।গলা দিয়ে টু শব্দটুকু বের হলো না।অনেকবার চেষ্টা করার পরও যখন আমি গলা দিয়ে শব্দ বের করতে পারলাম না তখন পিছনে ফিরে মেজ নানুর রুমে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সেখানে গেলে নিজেকে একটু সুরক্ষিত অনুভব করবো।কিন্তু যাওয়ার সময় সাথে কাচের গ্লাসটাও নিয়ে যাওয়া উচিত।নানুর রুমে যেতে যেতে যদি চোরটা উল্টাপাল্টা কিছু করে তাহলে দিব তার মাথায় ধড়াম করে একটা বারি।
এই ভেবে পিছনে ফিরলাম আমি।সাথে সাথেই চমকে উঠলাম আমি।চমকানোর কারন চোরটা একদম আমার সামনে দাঁড়ীয়ে আছে।এখন কোনো ভুতের ভয় না চোরের ভয় আমার ভেতরে জেঁকে বসলো।
চোরের উপস্থিতি টের পেয়ে আমার বুকের ভেতর ধুকপুকানি আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেলো।নড়াচড়া করা মত শক্তি পাচ্ছি না।তবে চেষ্টা করছি গলা দিয়ে আওয়াজ বের করার।
কয়েক সেকেন্ডের চেষ্টায় সর্বপ্রথম আমি নড়তে সক্ষম হলাম।এখনই সুযোগ মেজ নানুর রুমে এক দৌড়ে গিয়ে নিজেকে সেফ রাখা। যেই ভাবা সেই কাজ।আমি গ্লাস টেবিলে রেখে কোনোমতে পা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে দৌড়াতে লাগলাম।কিন্তু আফসোস তা পারলাম না।চোরটা আমাকে পিছন থেকে শক্ত করে জাপটে ধরলো।ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে এলো যেন।আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ছোটাছুটি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম।কিন্তু পারলাম না।এবার আর উপায় না পেয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে চিৎকার করতে নিলাম।তবে তার আগেই চোরটা আমার মুখ চেপে ধরলাম।
ভয়ে আমার কান্না চলে আসছে। শতশত খারাপ চিন্তা মাথায় আসছে। ওদিকে মস্তিষ্ক খারাপ সম্ভভাবনাগুলো ভাবতে লাগলো।আর এদিকে শরীর সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো।কিন্তু পারলো না।এদিকে অঝোর ধারায় আমার চোখ বেয়ে অশ্রু বয়ে যাচ্ছে।কিন্তু চোরের মায়াদয়া হলো না আমার উপর।বড্ড নির্দয় সে।

“হেই মিশমিশ,আমি তো…এতো লাফাচ্ছো কেনো?ভয় পাওয়ার কিছু নেই।আমি এখানে আছি।রিল্যাক্স হও মিশমিশ।”

চোরের কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই চমকে উঠলাম আমি।

®সারা মেহেক

#চলবে