ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০৩

0
1127

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️
#পার্টঃ০৩

সাদু কানে ইয়ারপোড্স গুজে ধৈ ধৈ করে নাচ্ছে।
কারন যেনো কেউ না বুজে যে সে গান ছেড়ে নাচছে।

–” আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাশে আমার বিয়ে হয়ে গেছে মনিরের সাথে।আহা!আমার তো মন চাইতেছে ধুরুম ধুরুম গানে ধরাম ধরাম ড্যান্স দেই। কিন্তু না এতো সহজে ওদের বুজতে দিবো নাহ।ওদের ন্যাকানিচুবানি না খাওয়ালেও আমার নাম সাদিয়া জাহান উম্মি না হুহ্।
মিষ্টার জামাই বি প্রিপেইড ফোর মাই টর্চার।
ভালোবাসি আপনাকে তাই বলে কি এতো সহজেই ক্ষমা করে দিবো। জীবনেও নাহ আমাকে অবিশ্বাস করার ফল আপনি হারে হারে টের পাবেন।”

কথাগুলো বলেই আবারো নাচতে লাগলো।

———————

সাদুর রুমের দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে নূর।ওর পিছে আলিফা,আলিশা আর মিম।
আলিশা বিরক্তি নিয়ে বললো,

–” কতোক্ষন ধরে এভাবে আছিস।কিছু বলছিস ও না আমাদেরকে শুনতেও দিচ্ছিস নাহ।তুই সরবি না উষ্ঠা খাবি।”

–” আমার ফ্লাইং জুতা তোর মুখে চুপ থাক।” রাগীগলা নূরের।

–” তোরে ঠুন্ডা ঝাড়ুর বারি।” মিম বলে উঠে।

আলিফা ভ্রু-কুচকে বললো,

–” এটা সাদুর ডায়লগ তুই নকল করিস কেন?”

–” আমি কোন ডায়লগ বানাতে পারি নাহ।” ঠোঁট উলটে বললো মিম

আলিশা হেসে দিয়ে বলে,

–” মিমের এই জীবন রেখে কি লাভ তার থেকে ভালো মিমকে ডিম বানিয়ে আমরা ওমলেট করে খেয়ে ফেলি।”

–” সালি তোর উপরে ঠাডা পড়বো।”

মিমের কথায় আলিফা বলে উঠে,

–” শকুনের দোয়ায় হাতি মরে নাহ।”

মিম দাঁত কেলালো।
তারপর বলে,

–” তারমানে তুই মানিস তুই যে মিনি হাতি।”

আলিফা গেলো রেগে।সে রাগে ফুসতে ফুসতে গিয়ে মিমের চুল টেনে ধরলো।
মিমও আলিফার চুল টেনে ধরলো। মুহূর্তেই লেগে গেলো তুমুল ঝগরা।
আলিশা আর নূর একে-অপরের দিকে তাকিয়ে মিম আর আলিফাকে ছাড়ানোর চেষ্টায় লেগে গেলো।

এদিকে দরজার বাহিরে এতো চেঁচামেচি শুনে সাদু দ্রুত উঠে দাড়ালো।সে এতোক্ষন মনিরের ছবি দেখতে ব্যস্ত ছিলো।বাহিরে এতো চিল্লাপাল্লা শুনে তাড়াতাড়ি করে দরজা খুললো।
ওমনি ওর উপর হুড়মুড়িয়ে পড়লো নূর,আলিফা,আলিশা আর মিম।

সাদু দিলো এক চিৎকার,,

–” ওরে আল্লাহহহহহ!! আমার কোমড় শেষ গো।চার চারটা হাতি আমার উপর পড়লো গো।”

সাদুর উপড়ে নূর,নূরের উপরে আলিশা আলিশার উপরে মিম আর মিমের উপরে আলিফা।

অন্যদিকে সাদুর এমন বিরাট চিৎকার শুনে মনির,আফরান,নিবির,মেরাজ,আরিফ দ্রুত সাদুর রুমের দিকে দৌড় দিলো।
মনির অস্থির হয়ে বলে,,

–” কি হলো বলতো উম্মি চিৎকার করলো কেনো?”

আফরান চিন্তিত স্বরে বলে উঠে,

–” আমি কি জানি পিকু এরকম করলো কেনো?”

–” আমার বোনের কিছু হলে আমি সবাইকে পশ্চাদে একশটা করে লাথি দিবো।” নিবির বলে উঠলো।

–” তুই আগে নিজেকে সামলা।”

আরিফের কথায় নিবির রাগি চোখে তাকালো।

মেরাজ বললো,

–” এই নূর, আলিফা আর বাকি দুজন কোথায়?”

–” অনেক্ষন যাবত দেখছি নাহ শয়তানগুলোকে।” আরিফ বললো।

–” দ্রুত চল ওখানেই নিশ্চয়ই ঘাপলা আছে।”

মনিরের কথায় সবাই দ্রুত সেদিকে ছুট লাগালো।
এদিকে আলম সিকদার,ফরিদা আলম,আর খোকন মির্জাও এমন চিৎকারে দ্রুত সাদুর রুমের আসে।
সবাই যখন সাদুর রুমের সামনে আসলো।অবাক হয়ে একে-অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
পরক্ষনে সবাই জোড়ে শব্দ করে হেসে দিলো।
ওদের এইভাবে নিচে পড়ে থাকতে দেখে সবাই হাসছে সেই সাথে মিম আর আলিফা চুল ধরে টানাটানি করার কারনে ওদের চুল কাকের বাসার মতো হয়ে আছে।

নূর রাগী গলায় বলে,

–” ভাইয়া তুই হাসবি না-কি আমাকে উঠাবি?”

মনির কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললো,

–” তুই নিচে পড়লি কিভাবে?তার তুই যে ভুটকি আমার বউটা চ্যাপ্টা হয়ে যাবে।”

–” বাবা তোমার ছেলেকে কিছু বলবা?” কাঁদো গলায় বললো নূর।

খোকন মির্জা মুখ টিপে হাসছেন।হাসি থামিয়ে মিথ্যে রাগ দেখিয়ে বলে উঠেন,

–” আহা! মনির কেন ওকে শুধু রাগাচ্ছিস।”

–” ফকিন্নিগুলো উঠবি আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে উঠ।”

সবাই বুজলো আসলেই সাদু সবার নিচে পড়ায় ও ব্যাথা পাচ্ছে।মেরাজ আরিফ আলিফাকে উঠালো,
মেরাজ মিমকে, আলিশা নিজে নিজেই উঠলো।
আফরান উঠাতে গেলে নূর ওকে মুখ ভেংচি কাটে।
আফরানও এটিটিউট সহকারে বলে,

–” আমি তোমাকে উঠাবো এটা ভেবো নাহ।
আমি তো পিকুর কষ্ট হচ্ছিলো তাই ওকে ধরতে গিয়েছিলাম।

তারপর আবার মনিরকে বললো,

–” দোস্ত তুই তোর বোনকে উঠা।”

মনির নূরকে উঠালো।তারপর সাদুকে উঠাতে গেলেই সাদু নিজ থেকেই উঠে দাড়ালো বললো,

–” আমার কারো হেল্প দরকার নেই।স্পেশালি আপনার আর আমার দু ভাইয়ের।”

–” সাদিয়া এটা কেমন ব্যবহার মনির তোর স্বামি।” ফরিদা আলম মেয়েকে ধমকে উঠলেন।

মুহূর্তেই সাদুর রাগ মাথায় উঠে গেলো।সে পাশে টেবিলে রাখা ফ্লাওয়ার ব্যসটা সজোড়ে আছাড় মেরে ভেঙে ফেললো।
রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,

–” আমাকে সম্মান করা শিখাবে না আম্মু।
আমি উনাকে যথেষ্ট সম্মান করতাম।
কিন্তু আম্মু এটা মনে রাখবে অবিশ্বাস এর ভিত্তিতে কোন সম্পর্ক টিকে থাকেনাহ।
আর উনি আমাকে অবিশ্বাস করেছেন।সো এটলিস্ট তুমি এই মুহূর্তে আমাকে উনার সাথে ভালো বিহেভ করতে বলো নাহ।আই কান্ট।”

–” অনেক বুজদার হয়ে গেছিস?থাপড়ে তোর গাল লাল করে দিবো।” রাগী গলা ফরিদা আলমের।

–” সে তুমি আমাকে মারতেই পারো তোমার অধিকার আছে তুমি আমার মা।
কিন্তু আমি যতোক্ষন নিজেকে ঠিক না করতে পারবো ততোক্ষন এটলিস্ট ততোদিন উনি আমার থেকে এরকমই বিহেভ পাবেন।”

ফরিদা আলম রেগে মেয়ের দিকে আগাতে নিলে
মনির দ্রুত উনাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর করূনস্বরে বলে,

–” মামনি আমার মা নেই।
ছোট থেকে তোমাকেই নিজের মা মানি।
তুমি আমার আর নূরের মা।
মামনি তুমি শান্ত হও।তোমার বিপি হাই হয়ে যাবে।
আর ওকে কিছু বলো নাহ।ওর জায়গায় ও ঠিকই আছে।মামনি তুমি চিন্তা করো নাহ।আমি সব ঠিক করে দিবো।”

মনিরের কথায় যেন ফরিদা আলম কিছুটা শান্ত হলেন।
মনির তাকে আসস্ত্ব করে বলে উঠলো,

–“তুমি যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নেও।
আমি সবটা সামলে নিবো।এমনিতেও আজ আমরা সবাই এখানেই আছি।যাও রেস্ট নেও।”

তারপর আবার খোকন মির্জা আর আলম সিকদারকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–” তোমরা দুজনেও যাও।
দাবা খেলছিলে তা খেলো গিয়ে।টেন্সনের কিছু নেই।”

বড়রা চলে গেলো।
এদিকে আরিফ আলিফাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষন করছে। ওর এরকম চাহনীতে আলিফা তেড়ে এসে বলে,

–” কিচ্ছে?এমন করে কি দেখেন হ্যা?
আমি কি এলিয়েন?”

–” এখন এলিয়েন থেকেও কম লাগছো না!” আরিফের আলিফা রাগী গলায় বলে,

–” এই এই কি বললেন?আমি এলিয়েন?এই আমি না আপনার গফ আপনি আমাকে এইসব বলতে পারলেন?যান ব্রেকাপ আপনার সাথে।”

আরিফ দ্রুর জিভে কামড় দিলো।
সে বুজলো ভুল জায়গায় ভুল মানুষকে সে ভুল কথা বলে ফেলেছে।
এখন তার আর রক্ষে নেই।

–” বউ তুমি না ভালো।
বউ রাগ করে নাহ।আচ্ছা সরি তো।
আমি এমনি মজা করেছিলাম।সরি বউ।”

–” গুল্লি মারি আপনার সরির।
থাকেন আপনি।”

আলিফা গটগট পা ফেলে চলে গেলো।এদিকে ওর পিছনে পিছনে আরিফও ছুটলো।
নিবির সেদিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,

–” মেয়ে মানুষ মানেই প্যারা।
এই প্যারা আমি কখনোই নিবো নাহ।
সবসময় প্যারা নাই চিল মুডে থাকবো।
জেচে কি কেউ শয়তান ঘাড়ে তুলতে চায়।”

ওর পাশে দাঁড়ানো ছিলো আলিশা।
নিবিরের কথায় আলিশা ধরাম করে ওর পায়ে দিয়ে দিলো একটা পারা।
এদিকে নিবির ‘আউচ’ বলে পা ধরে লাফাতে লাগলো।

–” মেয়েরা প্যারা।আপনি আমাদের প্যারা বললেন আমি আপনার পায়ে পারা দিলাম।হিসাব বরাবর।
আর আমরা শয়তান তাই নাহ?
আপনি শয়তান,আপনার চৌদ্দ গুষ্টি শয়তান।”

আলিশার কথা সাদু ভ্রু-কুচকে রাগি গলায় বলে,

–” এই তুই আমাকে শয়তান বললি কেন?”

–” আমি তোকে কখন বললাম?” অবাক আলিশা।

–” এইযে এই মাত্র নিবির ভাইয়াকে বললি ‘ আপনি শয়তান,আপনার চৌদ্দ গুষ্টি শয়তান’ তো আমি কি ভাইয়ার গোষ্টির মধ্যে পড়ি তাই নাহ?তাহলে তোর কথা অনুযায়ী আমিও শয়তান।”

সাদুর এক্সপ্লেইন শুনে সবার মাথা ঘুরে যাবার উপক্রম।

মনির টপিক বদলানোর জন্যে বলে,

–” রাত হয়েছে ডিনার করতে চলো।”

সবাই মাথা ঝাকালো আসলেই অনেক রাত হয়েছে।
সবাই সাদুর রুম থেকে বের হয়ে যাবার পর সাদু ধরাম করে দরজা আটকে দিলো।
এদিকে আকস্মিক ঘটনায় সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।

–” এটা কি হলো?”

মিমের প্রশ্নে বিরবির করে মেরাজ বলে,

–” কি আর হবে ডিমের ওমলেট হলো।”

মিন স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

–” কিছু বললেন?”

–” নাহ!”

–” পিকু কি খাবে নাহ?” নিবির বলে উঠে।

আলিশা হতাশ হয়ে বলে,

–” কিভাবে দেখলেন না দরজা আটকে দিলো।”

–” যেমন বজ্জাত ভাই তেমন বজ্জাত বোন।” নূর আড়চোখে আফরানের দিকে তাকিয়ে বললো।

–” তুমি বড় ভালো।এখন এই মুহূর্তে তোমাকে কিছু বলতে চাইছি নাহ।তাই চুপ থাকো এমনিতেও আমার মেরাজ খারাপ।”

নূর ভেংচি কাটলো।মনির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

–” তোরা সবাই নিচে যা।আমি ওকে নিয়ে আসছি।”

–” কিন্তু কিভাবে? ” আফরান জিজ্ঞেস করে।

–” যা তোরা আমি আসছি বললাম নাহ!”

সবাই মনিরের কথায় ডায়নিং এ চলে গেলো।

এদিকে মনির ভাবছে মেয়েটা ওকে কবে বুজবে?
ওর ভালোবাসাটা কি কখনো সে বুজতে সক্ষম হবে নাহ?এইযে মেয়েটার প্রতিটা কথা ওর বুকে ধারালো ছুড়ির মতো আঘাত করে।
অবশ্য এটা ওর প্রাপ্য তাই সে সব মাথা পেতে নিবে।
তবুও সাদুকে ছাড়বে নাহ।ওকে এতো ভালোবাসা দিবে যে পুরনো কষ্ট ও ভুলে যাবে।

#চলবে,,,,,,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।