ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০৪

0
920

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি❤️
#পার্টঃ০৪
গাল ফুলিয়ে বসে আছে আলিফা।
আর এদিকে নানান কথা বলে ওর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে আরিফ।
কিন্তু আলিফা কিছুতেই মানছে নাহ।

–“আলু সোনা রাগ করে নাহ। আমি তো মজা করছিলাম।”

আরিফের কথায় আলিফা চলে যেতে নিলে ওর হাত ধরে হেচঁকা টানে ওকে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
আরিফ আবারো বলে,

–” কি ম্যাম এতো রাগ কেনো হ্যা?”

–” আপনি জানেন নাহ বুজি?আমি জানি তো আমি দেখতে সুন্দর না তাই বলে এভাবে বলবেন।আমি তো আপনাকে জোড় করিনি আমাকে ভালোবাসতে।
এখনো সময় আছে যদি মনে হয় আমার মতো খাটো, মোটা মেয়েকে ভালোবাসা আপনার জন্যে বেমানান তাহলে বলে দিন।
আমি আপনাকে জোড় করে আটকে রাখবো নাহ।
আপনি চাইলেই আমার সাথে ব্রেকাপ করে দিতে পারেন।”

আলিফা কথাগুলো বলার সময় ওর চোখজোড়া ছলছল করে উঠলো।এই বুজি কান্না করে দেবে।
কিন্তু সে আরিফের দিকে তাকাতেই আৎকে উঠলো।আরিফের নাক-চোখ মুখ সব লাল হয়ে আছে রাগে।আলিফা আবারো কিছু বলতে নিবে তার আগেই আরিফ আলিফার কাধে মুখ গুজে দিলো।কেঁপে উঠে আলিফা আরিফের শার্ট খামছে ধরলো।কিন্তু চুমুর বদলে যখন বড়সড় একটা কামড় পেলো।
ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে আলিফা।ধাক্কা দিয়ে আরিফকে সরিয়ে দেয়।
ঘাড়ে হাত দিয়ে সে চোখে টলমলে জল নিয়ে আরিফের দিকে তাকিয়ে।
এতো জোড়ে কামড় দিয়েছে সে মনে হয় মাংস উঠিয়ে ফেলেছে।
আলিফা হাতটা সামনে আনলো দেখে রক্তও বের হয়ে গেছে।
আরিফ আবারো তেড়ে গিয়ে আলিফালে নিজের সাথে চেপে ধরে রাগী গলায় বলে,

–” আমার ভালোবাসাকে তোর সস্তা মনে হয় হ্যা?
তোর রূপ দেখে আমি তোকে ভালোবাসি নাহ।
তোর ভীতরে যে নরম কোমল এক সত্ত্বা আছে আমি তাকে ভালোবাসি।আর কখনো যদি নিজেকে ছোট করে কথা বলিস তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে নাহ।মনে রাখবে এই তুইটা শুধুই আমার।আর তাই নিজেকে হেও কিছু বলতে হলে মনে রাখবি আমি কি করতে পারি।আজকের ডোজটা তো কম হয়ে গেছে।”

আলিফা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছে।
এখনো ঘাড়ে হাত দিয়ে আছে।
আরিফ নিজের চোখ বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো নিজের রাগ কমানোর জন্যে।
আরিফ অনেক শান্ত স্বভাবের, এতোটা রাগ ওর মাজে নেই।ও হাসি খুশি থাকতে ভালোবাসে।কিন্তু একবার রেগে গেলে আর নিজেকে সামলাতে পারে নাহ।যেখানে তো নিজের ভালোবাসার নামে কটু কথা সে সয্যই করতে পারে নাহ।
আরিফ শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো আলিফার দিকে।
মেয়েটা মাথা নিচু করে কাঁদছে।

–” দেখি হাত সরাও।” গম্ভীর আওয়াজে বলে আরিফ।

আলিফা কিছুই বললো নাহ।সেরকমই কান্না করছে।
আরিফ নিজেই ওর হাতটা টেনে সরিয়ে দিলো।আসলেই অনেক জোড়ে কামড় দিয়েছে যে দাঁত ঢেবে গেছে একেবারে রক্তও বের হয়েছে।
আরিফ আলিফাকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।তারপর খুব গভীরভাবে ওই কামড়ের জায়গায় নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিতে লাগলো।
মুহূর্তে যেন আলিফার লোমকূপসহ দাঁড়িয়ে গেলো।
এই স্পর্শ গুলো যে সয্য করার মতো নাহ।
সে দু-হাতে আরিফের পিঠ খামছে ধরলো।ওর কান্না যে কখন থেমে গেছে ও নিজেও জানে নাহ।

আরিফ ঘাড় থেকে ঠোঁট সরিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,

–” আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আলিফা।প্লিজ এইসব আর বলো নাহ যেগুলো শুনলে আমার রাগ লাগে।”

আলিফা সেইরকমভাবেই মাথা নাড়ায়।আরিফ হেসে দেয়।তারপর আরো গভীরভাবে আলিফাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

——————-

–” এই আলিফা গেলো কোথায় রে? সেইযে গেলো রেগে আর কোন খবর নেই।সাদুটাও দরজা আটকে বসে আছে?নূরের ও কোন খোজ নেই।উফফ! সবগুলা যে কি শুরু করলো।” সোফায় বসতে বসতে বলে আলিশা।

মিম ভাবলেশহীনভাবে বলে,

–” আর কোথায় খুজবো ওকে?সব জায়গা খুজেছি।দারা আর একটু খুজি।”

কথাটা বলে মিম, ফুলদানি উঠিয়ে দেখে তার মধ্যে আছে না-কি আবার সোফার নিচে উঁকি দেয় আবার কুশন উঠিয়ে দেখে, নিউজপেপার উঠিয়ে আলিফাকে খুজছে।
এদিকে আলিশা হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এই মেয়ে আলিফাকে এইসব কি উদ্ভব জায়গায় খুজছে।
আলিফা অবাক হয়েই বলে,

–” আর ইউ সিরিয়াস মিম, আলিফা ফুলদানি,কুশন,সোফার নিচে থাকতে পারে? তোর মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে?”

মিম ঠোঁট উলটে বলে,

–” তো আই কিত্তাম?সব জায়গায় খোজা শেষ তাই ভাবলাম এগুলোতেও খুজে দেখি।”

আলিফা মুখ শক্ত করে একটা জোড়পূর্বক হাসি দিয়ে বলে,

–” আমার এই মুহুর্তে তোকে একটা পুরস্কার দিতে ইচ্ছে করছে।”

পুরস্কারের কথা শুনে মিম খু্শিতে গদগদ হয়ে বলে,

–” ওয়াও! পুরস্কার? কি পুরস্কার জলদি দে।”

–” ওয়েট আনতেছি।”

কথাটা বলেই আলিশা কিচেনে গেলো ফ্রিজ থেকে একটা ডিম নিয়ে সেটা সোজা এসে ঠুস করে মিমের কপালে ফুটিয়ে দিলো।
এদিকে মিমের হাসি হাসি মুখটায় অমাবস্যা অন্ধকার ছেয়ে গেলো।

মিম কাঁদো গলায় বলে,

–” এটা কি করলি?”

আলিশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলে,

–” তুই মিম তাই তোকে পুরুষ্কার দিলাম ডিম।”

–” আলিশার বাচ্চা তোকে তো আমি। ”

বলেই মিম পাশের থেকে একটা কুশন নিয়ে আলিশাকে তেড়ে মারতে আসতে নিতেই আলিশা উলটো দিকে ঘুরে দিলো দৌড়।
মিমও ওর পিছে পিছে ছুটপ লাগালো।
এদিকে নিবির আর মেরাজ নিচে আসছিলো।ওদের এভাবে দৌড়াতে দেখে নিবির জিজ্ঞেস করে,

–” আরে হয়েছে কি এইভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?”

আলিশা নিবিরের পিছে লুকিয়ে গেলো।কতোক্ষন এদিক যায় কতোক্ষন ওদিক যায়।
এরকম করতে করতেই উত্তর দেয়,

–” আরে বলিয়েন নাহ।
ওকে আমি একটা কি সুন্দর পুরস্কার দিলাম।তাই জন্যেই আমাকে মারতে চাইছে।”

নিবির ওদের এদিকওদিক যাওয়াতে নিবিরও নড়াচড়া করছে।
সে বলে,

–” আরে আরে তোমরা থামো! আমার সাথে কি শুরু করলে?”

মেরাজ মিমকে দেখে বলে উঠে,

–” তোমার মুখে এমন ডিম দিয়ে মাখামাখি কেন?”

মিম দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

–” এই আলিশা আমার কপালে ডিম ফুটিয়ে দিয়েছে।”

মেরাজ ফিক করে হেসে দিলো।
ওকে হাসতে দেখে মিম রাগী চোখে ওর দিকে তাকালো।

–” আপনিও কি আমার হাতে খেতে চান।”

মেরাজ ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে না বুজালো।
পরক্ষনে আবার হেসে দিলো।
মিম এইবার আলিশাকে ছেড়ে মেরাজকে ধাওয়া করলো।
মেরাজ ও উলটো দিকে ঘুরে ছাদের দিকে চলে গেলো।
মিম ও ওর পিছে গেলো।

–” বাচলাম আমাকে রেখে এখন মেরাজ ভাইয়ার পিছে গিয়েছে।”

নিবির ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,

–” এই তোমরা পাচঁজন ফ্রেন্ড এতো বাদর কেনো?
কি ড্যাঞ্জারাস। ঝামেলা সব কটা।”

নিবির আলিশার দিকে তাকিয়ে দেখে আলিশা ভ্রু-কুচকে ওর দিকে তাকিয়ে।
নিবির জোড়পূর্বক হেসে বললো,

–” হে হে হে না মানি আমি এটা বলছিলাম যে তোমরা অনেক সাহসী।অনেক লক্ষী মেয়ে।”

–” শাকচুন্না,লাল বাঁদর,হনুমান,বিলাতী হাতি,আফ্রিকান গন্ডার,গোলাপী ইদুঁর, মহিষের দাঁত,ছোলা মুরগী,পোল্ট্রি ফারম।
আপনাকে আমি আজ।”

বলেই নিবিরকে ধরতে গেলে নিবির ও ছাদের দিকে দৌড় লাগালো।

–” আপনাকে আমি ছাড়বো নাহ। দাড়ান আপনি।”

আলিশা রেগে মেগে সেও নিবিরকে ধরতে চলে গেলো।

এদিকে মেরাজকে দৌড়াতে দৌড়াতে মিম ছাদের কাছে আসতেই মেরাজ থেমে যাওয়াতে আকস্মিক ও নিজেও ভড়কে গিয়ে দৌড় থামিয়ে দিলো।
মেরাজ দ্রুত নিজের চোখ এক হাতে বন্ধ করে আরেক হাত দিয়ে মিমের চোখ বন্ধ করে দিলো।

–” আরে আরে কি করছেন কি?আমার চোখে হাত দিচ্ছেন কেন?”

–” নো ডোন্ট ওপেন ইউর আইস ওকে! ওখানে রাগ ভাঙানোর প্রসেস চলছে চলো এখান থেকে।”

মেরাজ চোখ থেকে হাত সরিয়ে মিমকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।কিন্তু তখনো ওর চোখ বন্ধ।
এদিকে নিবির ও দৌড়ে ছাদে আসলো।যেহেতু মেরাজ এর চোখ বন্ধ তাই মেরাজ আর নিবির বারি খেলো মাথায়।
আলিশাও ছাদে এসে সামনে তাকাতেই চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকলো।
আসলে আরিফ যখন আলিফাকে গালে চুমু দিচ্ছিলো।আর সেটাই আলিশা দেখে ফেলে।
আলিশা দ্রুত নিজের চোখে হাত দিয়ে উলটো দিকে ঘুরে বললো,

–” নাউযুবিল্লাহ!! ও মা গো টুরু রোমান্স।
আমি কিছু দেখি নি আমি কিছু দেখি।”

এদিকে আকস্মিক আলিশার চিৎকারে আরিফ আলিফা জলদি নিজেদের ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো।
তারপর তাকিয়ে দেখে মিমের চোখ এক-হাত দিয়ে ধরে আছে আর আর এক হাতে মিমের হাত ধরে আছে মেরাজ,নিবির দু-হাতে চোখ ঢেকে আছে।
আলিশা উলটো দিকে ফিরে আছে।
বুজতে বাকি রইলো নাহ এই চারজন ওদের এইভাবে দেখে নিয়েছে।
আলিফা লজ্জায় পারে সাত আসমানে উঠে যেতে তার সাথেই কেন এমন হয় সবসময়? এখন সে কি করবে?”

#চলবে,,,,,,,,