ভালোবাসার শেষ পরিনতি পর্ব-০৩

0
131

#ভালোবাসার_শেষ_পরিনতি
#পর্ব_৩
#লেখক_নাবীল_শেখ

জয়ের কথা শুনে আরিয়ান এবার খুব রেগে যায়। একটা গর্ভবতী মেয়েকে হত্যা করে এখন বলছে কিছুই জানেনা।

আরিয়ান রাগী কণ্ঠে বলল — তোকে থানায় নিয়ে রিমান্ড দিলে সব কথা এমনিতেই বেরিয়ে আসবে।

— স্যার বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানিনা। অনন্তর স্ত্রী যেদিন খুন হয় তখন আমি আমার বাসায় ও ছিলাম না। আমি অফিসের কাজে ছিলাম। আমি ঢাকার বাহিরে গিয়েছিলাম। দেখুন আমার কাছে প্রমাণ আছে। আমি আমার অফিসের কলিগরা মিলে ঢাকার বাহিরে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস না হলে আপনি তাদের সাথেও কথা বলে দেখতে পারেন। আমি বাসায় এসে জানতে পারি অনন্তর স্ত্রী অনন্তর হাতে খুন হয়েছে।

জয় এবার অনেক গুলো ছবি দেখাল। আরিয়ান বুঝতে পারছেনা কিছু। তখন আরিয়ানের মাথায় আসে অনন্তর বাসায় যে মেয়ে কাজ করত তার কথা। ওর কাছে গেলেই তো মনে হয় সব জানতে পারব।

আরিয়ান এবার পুলিশ নিয়ে কাজের মেয়ের বাসায় চলে গেলো। পুলিশ দেখে মেয়েটা ভয় পেয়ে যায়।

— আপনারা কারা? আর আমার বাসায় কেন আসছেন?

— তোমার সাথে আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় কথা আছে।

— জ্বী স্যার বলেন।

— তুমি তো অনন্ত বাসায় কাজ করতে তাইনা?

— জ্বী। আগে করতাম। কিন্তু মালিক ১০ দিন আগে আমাকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। আমাকে বলছে ম্যাডামকে নিয়ে উনি গ্রামের বাড়ি চলে যাবে তাই আমাকে তাদের বাসায় কাজ করতে যেতে না করছে।

মেয়েটার কথা শুনে আরিয়ানের অবাক লাগলো। যেখানে ৫ দিন আগে মেঘলার খুন হলো। তার ঠিক দুই দিন আগে মেঘলাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে অনন্ত। অনন্ত তো বলছে তখন এই মেয়ে তাদের বাসায় কাজ করত! তাহলে কি এই মেয়ে মিথ্যে কথা বলছে?

আরিয়ান তখন মেয়ে টাকে বলল — তুমি কি তোমার স্যার, ম্যাডামের ব্যাপারে কিছু জানো?

— না স্যার, তাদের সাথে তো আমার আর যোগাযোগ হয়নি। মনে হয় তারা গ্রামে চলে গেছে।

আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল — তারা কেউ গ্রামে যায়নি। তোমার ম্যাডামের খুন হয়ে গিয়েছে। আর সেই খুনের দায় অনন্তর উপরে পড়ছে।

আরিয়ানের কথা শুনে মেয়েটি বলল — কি বলছেন এসব স্যার? ম্যাডাম মারা গিয়েছে?

এ কথা বলে মেয়েটা কান্না করে দিল।

— হ্যাঁ। আচ্ছা এখন আমরা আসি দরকার পড়লে আবার আসবো তোমার কাছে। আমি আশাবাদী যে তুমি আমাদের সাহায্য করবে।

— জ্বি স্যার।

আরিয়ান কিছুই বুঝতে পারছেনা। এবার আরিয়ানের সন্দেহ হয় অনন্তর উপরে। অনন্ত কি আরিয়ানকে মিথ্যা গল্প শুনিয়েছে?আরিয়ান এবার নিজের অফিসে চলে গেলো। অফিসে বসে ভাবতে থাকে। এখন সে কি করবে। তখন আরিয়ানের মনে পড়লো হাসপাতালে গেলে তো ক্লিয়ার হওয়া যাবে। অনন্ত সত্যি বলছে নাকি ওরা। আরিয়ান আর অফিসে বসে না থেকে সেই হাসপাতালে চলে গেলো। হাসপাতালে গিয়ে আরিয়ান রিসিভসন অফিসে যায়।

— আপনাদের একটা সাহায্য দরকার?

— কীসের সাহায্য?

— গতসাত দিন আগে মেঘলা নামের কোনো রোগী আপনাদের হাসপাতালে আসছে নাকি?

— আপনাকে কেন বলব? কে আপনি?

আরিয়ানার এবার নিজের কার্ড দেখিয়ে বলল আমি একজন উকিল। একটা খুনের তল্লাশি করতে এসেছি।

— ওয়েট চেক করতে হবে।

রিসিভসন ম্যানেজার এবার চেক করতে থাকে।

— স্যার,

— জ্বি আসছে নাকি এই নামের কেউ?

— জ্বি। গতসাত দিন আগে একটা প্রেগন্যান্ট রোগী এসেছে নাম মেঘলা।

— ঠিক আছে ধন্যবাদ।

আরিয়ান হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চলে আসল।
আরিয়ান নিজের অফিসে চলে যায় আবার। আরিয়ানের কাছে সব কিছুই কেমন ফেকাসে মনে হচ্ছে। অনন্ত যে হাসপাতালের কথা বলছে ওটা তো সঠিক। কিন্তু কাজের মেয়ে টা আর জয়ের ব্যাপারটা! ওরা কি আরিয়ানকের সাথে মিথ্যে কথা বলছে? সব কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান এর আগে অনেক কেইস সমাধান করছে, কিন্তু এই কেইস কেমন যেনো লাগছে। এখানে কে মিথ্যা বলছে আর কে সত্যি বলছে বুঝা মুসকিল।

আরিয়ান রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার বেরিয়ে পড়ে। আরিয়ান আবার চলে গেলো কাজের মেয়েটার বাসায়। বাসায় গিয়ে দরজার মধ্যে টোকা দিতেই মেয়েটা এসে দরজা খুলে দেয়।

— ভিতরে আসেন স্যার।

— আচ্ছা তোমার কাছে আমার কিছু জানার ছিল।

— বলেন স্যার কি জানতে চান?

— আচ্ছা অনন্ত আর মুঘল সম্পর্ক কেমন ছিলো? মানে ওদের মধ্যে কি ঝগড়া ঝামেলা হতো কোনো কিছু নিয়ে?

— স্যার আমি ঐ বাসায় অনেক দিন কাম করছি। কিন্তু কখনও তাদের ঝগড়া করতে দেখি নাই। আমার তো মনে হয় তারা দুজনেই হ্যাপি ছিল। আর স্যার ও খুব ভালো মানুষ। উনি তো সব সময় ম্যাডামের খেয়াল রাখত।

— আচ্ছা ওদের মধ্যে কি কোনো কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে? এমন কিছু কি তোমার চোখে পড়ছে?

— না স্যার। এমন কিছু তো আমি কখনও দেখিনি।

— আসলে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। আরিয়ান আমাকে কি বলল আর কি হচ্ছে। আচ্ছা ঠিক আছে আশি ভালো থেকো। তোমাকে বার বার বিরক্ত করলাম।

— কোনো সমস্যা নাই স্যার।

আরিয়ান বাসা থেকে বের হয়ে জয়কে ফোন দিল।

— হ্যালো স্যার।

— জয় তুমি একটু জরুরী ভাবে আমার সাথে দেখা করো।

— কোথায় আসতে হবে স্যার?

আমি তোমাকে লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি তাড়াতাড়ি আসো।

আরিয়ানের দেওয়া লোকেশনে চলে আসে জয়।

— স্যার হঠাৎ করে আমাকে ডেকেছেন কেন?

— জয় আসলে দিন দিন অনন্তর কেইস টা জটিল হয়ে পড়ছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমার হাতে আর মাত্র আজকের দিন বাকি আছে। কাল অনন্তকে আবার কোর্টে তোলা হবে। আমি এখনও অনন্তকে নির্দোষ করার মতো কোনো প্রমাণ পাইনি। অনন্ত আমাকে যা বলল তাও মিলছেনা।

— স্যার। আমরা অনন্তর বাসায় গিয়ে দেখি কিছু পাই নাকি।

— আমি একবার পুরো বাসা খুজেও কিছুই পেলাম না।

— চলেন আবার যাই।

তারপর দুজনেই আবার অনন্তর বাসায় চলে গেলো। দুজনে মিলে তল্লাশি শুরু করে। আরিয়ান অনন্ত আলমারি খুলে চেক করতে শুরু করে। আলমারির ভিতরে একটা মোবাইল পায় আরিয়ান। আরিয়ান মোবাইল অন করে।

— স্যার কিছু কি পেয়েছেন?

— একটা মোবাইল পেয়েছে। মোবাইলটা মনে হয় মেঘলার৷ মেঘলার সাথে লাস্ট কল হয় এই নাম্বার টা। কার নাম্বার এটা আমাদের খুজে বের করতে হবে।

— আচ্ছা স্যার এই নাম্বারে একটা কল করুন তাহলে কার এই নাম্বার সেটা জানা যাবে।

এবার আরিয়ান মেঘলার নাম্বার থেকে ঐ নাম্বারে ফোন দিল। সাথে সাথে একটা ছেলে ফোন রিসিভ করে।

— মেঘলা তোমার ফোন এতোদিন অফ ছিল কেন? তোমাকে আমি ফোনে পাচ্ছিনা। অনেকের থেকে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি কেউ তোমার খোঁজ দিতে পারেনি। একটা মানুষ কীভাবে এমিন পালটে যেতে পারে? তুমি না বলতে তুমি আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারবেনা। তাহলে এতো দিন হয়ে গেলো একটা বার তো খোঁজ ও নিলে না। কি হয়েছে তোমার মেঘলা? কথা বলো প্লিজ। তোমার জন্য আমার খুব চিন্তা হচ্ছিলো। আমি তোমার একটা ফোন কলের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি সারাক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকি তুমি কখন কল দিবে। কখন একটা টেক্সট করবে। অনেক মিস করছিলাম তোমাকে। মেঘলা তুমি চুপ হয়ে আছো কেন? কথা বলো। অনেক দিন হয়ে গেলো তোমার ভয়েস শুনিনি। মেঘলা চুপ কেন তুমি?

চলবে?