ভালোবাসার শেষ পরিনতি পর্ব-০৫ এবং শেষ পর্ব

0
171

#ভালোবাসার_শেষ_পরিনতি
#পর্ব_৫_ও_অন্তিম
#লেখক_নাবীল_শেখ

মেঘলা ঘুমিয়ে পড়ে। মেঘলা আচরণ কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। আমি সেদিন রাতে আর ঘুমতে পারলাম না। চোখ বন্ধু করে শুয়ে আছি। মেঘলার কথা কানে বাজতে থাকে। হঠাৎ করে মেঘলার ফোন কেপে উঠে। কারণ ফোন ভাইব্রেশনে ছিল। মেঘলা ফোন হাতে নিয়ে জানালার কাছে গিয়ে কথা বলতে শুরু করে। আমি বেশ অবাক হলাম। আমি তাকিয়ে দেখলাম মেঘলা হেসে হেসে কারোর সাথে কথা বলছে। মেঘলা একটু পর পর আমার দিকে তাকায়। আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করি। প্রায় এক ঘন্টার মতো মেঘলা কারোর সাথে ফোনে কথা বলে ঘুমাতে আসে। আমি কিছুই বললাম না। কিছুক্ষণের মধ্যে আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। প্রতিদিন রাতেই মেঘলা এভাবে কারোর সাথে কথা বলতে থাকে। একদিন মেঘলা কথা বলছে আমি মেঘলার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মেঘলা এতো রাতে তোমাকে কে ফোন দিয়েছে? মেঘলা আমার কণ্ঠ শুনে চমকে উঠে আর সাথে সাথে ফোন কেটে দেয়।

— অনন্ত তুমি এখনও জেগে আছো?

— আমারও সেইম প্রশ্ন? তুমি এতো রাতে কার সাথে ফোনে কথা বলছ?

— আমার একটা ফ্রেন্ড কল দিয়েছে তার সাথে কথা বলছিলাম।

– ওহ আচ্ছা! মেয়ে ফ্রেন্ড নাকি ছেলে ফ্রেন্ড?

মেঘলা মুখে একটা বিরক্তিকর চাপ নিয়ে বলল — ছেলে হবে কেন? মেয়ে ফ্রেন্ড এর সাথে কথা বলছি।

— ওহ।

— তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ অনন্ত?

— আরে,কি বলছ তুমি? আমি কেন তোমাকে সন্দেহ করব? রাত হয়েছে ঘুমতে আসো। নাহলে তোমার শরীর খারাপ করবে।

— তুমি যাও আমি আসছি।

আমি আর কোনো কথা না বলে এসে শুয়ে থাকলাম। প্রায় ৩০ মিনিট পার হয়ে গেলো মেঘলা এখনও আসেনি। আমার সন্দেহ বাড়তে শুরু করে। সকালে আমি মেঘলার আগে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। মেঘলার ফোন খুলে নাম্বার চেক করে দেখি কাল রাতে যার সাথে কথা বলছে সেই নাম্বার টা নেই। তখন আমার সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। মেঘলা কি আমার অগোচরে কিছু করছেনা তো? তখন নিজেকে নিজে আবার বললাম। এটা কি করে হতে পারে? মেঘলার পেটে তো আমার সন্তান!

মেঘলা এখন দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। মেঘলা অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় এসে আমকে বলল — অন্তত আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসছি। আমার সন্তান ভূমিষ্ট হবার আগ পর্যন্ত আমাকে অফিস থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে।

মেঘলার কথা শুনে আমি অনেক বেশিই খুশি হয়। নিমিষেই সব ভুলে গেলাম। মনে মনে অনেক খুশি হলাম মেঘলাকে এবার সব সময় আমার পাশে পাবো। মেঘলার দেখা শোনা করতে পারবো। আমি অফিসে গিয়ে মেঘলাকে ফোন দিলে বেশিরভাগ সময় ব্যাস্ত দেখাতো। দেখতে দেখতে মেঘলা আট মাসের গর্ভবতী হয়ে উঠে। মেঘলার কোনো পরিবর্তন নেই। মেঘলার পাশে থাকার জন্য আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম। একদিন মেঘলা ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলো। তখন আমি ফোন রিসিভ করে একটা ছেলের কণ্ঠ শুনে চুপসে গেলাম। বুঝতে আর বাকি রইলনা মেঘলা দিনের পর দিন আমাকে মিথ্যা কথা বলে এসেছে। আমি ফোন কেটে দিয়ে মেঘলার ফোনের কল রেকর্ড চালু করে দিলাম। সব কিছুই হাইড করে।

একদিন পরে মেঘলা ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যেতেই আমি সব কল রেকর্ড আমার ফোনে নিয়ে আসলাম। পরে আমি অন্য একটা রুমে হসে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে সব কল রেকর্ড শুনতে থামি। ওদের কথা শুনে আমি হতবাক হচ্ছি বার বার। আমি বুঝতে পারছি মেঘলা এখন অন্য কারোর প্রতি আসক্ত। মেঘলা দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়ে এসেছে। আরেকটা কল রেকর্ড চালু করতেই শুনলাম তারা নাকি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে। এসব শুনে আমার মাথা আগুন হয়ে গিয়েছে। যাকে এতো বেশি ভালোবাসি সে আমার সাথে এমন করতে পারল? তার জন্য আমি কি না করছি? যখন যা চেয়েছে তখন তা দয়েছি। আমি আর নিজেকে রাগ কন্ট্রোল করতে পারলাম না। মেঘলার কাছে গিয়ে বললাম — মেঘলা এসব কবে থেকে চলছে?

মেঘলা অবাক হয়ে বলল — কোন সব? কি বলছ তুমি?

— তুমি এখন কিছুই বুঝতে পারছো ন? ঐ ছেলেটা কে? যার সাথে সারাক্ষণ ফোনে কথা বলো?

— কোন ছেলে আজব?

অনন্ত এবার কল রেকর্ড চালু করে দেয়। মেঘলা তো ভয় পেয়ে যায়।

— তুমি এসব কই থেকে ফেলে?

— তোমার ফোন থেকে। আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম সেই জন্য তোমার ফোনে কল রেকর্ড চালু করে দিয়েছি। আজ তো ধরা খেয়ে গেলে। কেন করলে এমন মেঘলা? আমার সন্তানের কথা কি তুমি ভাবলেনা একবার ও? তোমার পেটে তো আমার সন্তান বেড়ে উঠছে দিনের পর দিন।

— তোর এই সন্তান আমি শেষ করে দেব। আর আমি তোকে খুব তাড়াতাড়ি ডিভোর্স দিয়ে দেব। তোর সাথে সংসার করলে আমাকে সারাজীবন এভাবেই থাকতে হবে। তুই আমাকে কি দিয়েছিস? কখনও তো ভালো একটা শাড়ি ও এনে দিতে পারিস নি। তোর সাথে থেকে আমি কি করব? অহেতুক আমার লাইফ শেষ। তোর থেকে হাজার গুন ভালো একজনকে আমি পেয়েছি। যে আমার সব স্বপ্ন পুরুন করতে পারবে। তার সেই ক্ষমতা আছে।

— মেঘলা তুমি এসব দেখলে? আমার ভালোবাসা দেখলেনা?

— তোর এতো ভালোবাসা দেখে আমার কি হবে? আমার ভালোবাসার দরকার নেই।

— এই ছিল ভালোবাসার শেষ পরিনতি? আমি সব সময় তোমাকে সুখী রাখার চেষ্টা করছি।

— আমি চাইনা এসব কিছু আর তোর থেকে। আমি কালি তোকে ডিভোর্স দিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে দেব।

এই কথা শুনে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। এবার আমি মেঘলার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দেয়। মেঘলা টাল সামলাতে না পেরে খাটের কোণায় বাড়ি খায় পেটে। সাথে সাথে মেঘলা চিৎকার করতে শুরু করে। আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। আমি তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ঠিক করতে চলে গেলাম। কিন্তু এতো রাতে গাড়ি নেই। কি করব এখন! রাগ করে মেঘলার গায়ে হাত তোলা ঠিক হয়নি। এসব ভাবছি আর নিজেকে গালাগালি দিচ্ছি। গাড়ি না পেয়ে রুমে গিয়ে দেখি মেঘলা আর নেই💔।

মেঘলার শ্বাস নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছ। আমি বুঝতে পারলাম। মেঘলা মারা গেছে। তখন খুব কান্না করছিলাম। আর কোনো উপায় না পেয়ে রাতের বেলায় হাসপাতালে চলে গেলাম। একাই মেঘলার নাম করে ওষুধ নিয়ে আসলাম। কাজের মেয়েকে ফোন দিয়ে বলে দিলাম ও যেনো আমাদের বাসায় না আসে। আমি মেঘলাকে নিয়ে গ্রামে চলে যাবো। নিজেকে ঠিক রাখার চেষ্টা করেও পারছিলাম না। এটা আমি কি করলাম ভাবতেও পারছিনা। আমার হাতে দুইটা প্রাণ শেষ হয়ে গেলো। আমার ভালোবাসার সমাপ্তি আমার হাতে ঘটলো? মেঘলার লাশ ধরে অঝোরে কান্না করছিলাম। পরে আমার শার্টের বোতাম মেঘলার হাতে দিয়ে দিলাম। আসলে আমিও আর বাঁচতে চাইছিলাম না। আত্মহত্যা মহাপাপ না হলে আমি সাথে সাথে আত্মহত্যা করতাম।

তারপর কি হলো আপনারা জানেন। অনন্তর সব কথা শুনে আরিয়ানের চোখে পানি চলে আসল।

আরিয়ান বলল — তুই আমাকে এটা আগে কেন বলিস নি?

– কীভাবে বলব? আমিও আর বাঁচতে চাইনা আরিয়ান। আমার হাতে আমার ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো। আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। নিজের হাতে আমার সন্তানকে শেষ করে দিলাম। আমি বেঁচে থেকে কি করব? তাই মিথ্যা গল্প সাজালাম। আর ঐ চিঠিটাও আমারি ছিল। যেটা তোকে দিয়ে ছিলাম। যাতে সত্যি তা না জানিতে পারিস। কিন্তু তুই জেনেই গেলি।

— অনন্ত এখানে তোর কোনো দোষ নেই। এটা একটা এক্সিডেন্ট। আর মেঘলা তোর সাথে এটা ঠিক করেনি। তোকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই তবে আমি আছি তোর পাশে। তোর লিছুই হবেনা। এখন সব প্রমাণ আমার কাছে আছে তোকে নির্দোষ প্রমাণ করার।

পরের দিম অনন্তকে আদালতে নেওয়া হলো। আরিয়ান সব প্রমাণ পেস করে আদালতে। তারপর আদালত অনন্তকে মুক্তি দিয়ে দেয়।

সমাপ্ত