ভালোবাসার শেষ পরিনতি পর্ব-০৪

0
122

#ভালোবাসার_শেষ_পরিনতি
#পর্ব_৪
#লেখক_নাবীল_শেখ

ছেলেটার কথা গুলো শুনে। আরিয়ান আর জয় অবাক হয়ে রইলো। তারা নিশ্চুপ হয়ে ছেলেটার কথা শুনছে।

— মেঘলা কথা বলছ না কেন? তুমি কি আমার উপরে রাগ করে আছো? কথা বলো মেঘলা।

এবার আরিয়ান বলল — ভাই আমি মেঘলার ফ্রেন্ড বলছি।

ছেলেটা বলল — মেঘলা কোথায় ভাইয়া? আমাকে একটু মেঘলার সাথে কথা বলিয়ে দিবেন?

— আপনি মেঘলার কি হোন!

— আমি মেঘলার বয়ফ্রেন্ড।

কথাটা শুনে আরিয়ান অবাক হয়ে গেলো। মেঘলা বিবাহিত হয়েও তার বয়ফ্রেন্ড আছে? বেপারটা দেখতে হবে। হয়তো এখানেই লুকিয়ে আছে সব কিছুই।

আরিয়ান ছেলেটাকে বলল — আপনি কী মেঘলার বেপারে কিছু জানেননা?

— না মেঘলার সাথে কিছুদিন থেকেই আমার কোনো যোগাযোগ নেই। জানি না কেন মেঘলা এমন করছে।

— আপনার সাথে সরাসরি কথা বলা যাবে? আসলে মেঘলার ব্যাপারে কিছু কথা বলার আছে।

— ঠিক আছে।

আরিয়ান ছেলেটাকে একটা ঠিকানা দিয়ে দেয়। আরিয়ান আর জয় কিছুক্ষণের মধ্যেই ওখানে গিয়ে ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছেলে আরিয়ানের সামনে এসে বলল — আপনারা কি মেঘলার ফ্রেন্ড?

আরিয়ান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল — হ্যাঁ। আমি আরিয়ান।

ছেলেটাও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল — আমি রায়হান আহমেদ। রায়হান গ্রুপের মালিক সাজ্জাদ আহমেদ আমার বাবা।

— ওহ আচ্ছা। চলুন আমরা ওখানে গিয়ে বসি।

এবার তিন জনে মিলে একটা টেবিলের উপরে গিয়ে বসে।

আরিয়ান বলল — রায়হান। নাম ধরেই বলছি কিছু মনে করোনা। তুমি আমার ছোট হবে।

— কোনো সমস্যা নাই।

— ঠিক আছে আমি আগে নিজের পরিচয় দেয়। আমি আরিয়ান চৌধুরী। আমি একজন উকিল।

আরিয়ানের মুখে উকিল কথা শুনে রায়হান একটু ঘাবড়ে যায়।

— রায়হান তোমার সাথে মেঘলার কতোদিনের সম্পর্ক?

— এই তো এক বছর হবে। আগে আমাদের প্রায় সময় দেখা হতো। কিন্তু হঠাৎ করে ৫ মাস ধরে মেঘলা আমার সাথে দেখা করছেনা। এমনি সব সময় ফোনে আমাদের কথা হয়। দেখা করতে বললেই বলে এখন পারবেনা। আমিও জোর করিনা। কিন্তু কয়েকদিন ধরে দেখছি মেঘলার ফোন অফ। খুব চিন্তা হচ্ছিলো আমার ওর জন্য।

— রায়হান আমার মনে হয় তুমি কোনো কিছুই জানোনা হয়তো।

— কি জানিনা আমি? আর আমার মেঘলা কোথায় আছে এখন? আমাকে মেঘলার কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ।

— তুমি মেঘলার কাছে যাবে?

— হ্যাঁ ভাই। মেঘলাকে দেখার জন্য আমার মন চটপট করছে।

— ঠিক আছে চলো।

এবার আরিয়ান রায়হানকে নিয়ে গেলো মেঘলার কবরের সামনে।

— আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসলেন? এটা তো কবরস্থান।

— হ্যাঁ, এখানেই শুয়ে আছে মেঘলা।

আরিয়ানের কথা শুনে রায়হান হতবাক হয়ে গেলো।

— ফাজলামো করছেন? আমার মেঘলা কোথায় সত্যি করে বলুন।

আরিয়ান এবার মেঘলার কবর দেখিয়ে বলল — এটা মেঘলার কবর। কয়েকদিন আগে মেঘলার খুন হয়।

কথা শুনে রায়হানের চোখে পানি চলে আসে। রায়হান এবার হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করে। রায়হানকে কোনরকম ভাবে শান্ত করে আরিয়ান।

— রায়হান শান্ত হও। মেঘলার ব্যাপারে তোমার থেকে আমাদের কিছু জানার ছিল।

— কি জানতে চান?

— আচ্ছা তুমি কি জানতে মেঘলা বিবাহিত? আর মেঘলার মৃত্যুর আগে সে প্রেগন্যান্ট ছিল আট মাসের?

— কি বলছেন এসব আপনি?

— আমি সত্যি কথা বলছি। মেঘলার খুনের দায়ে তার হাসবেন্ড জেলে আছে।

— স্যার আমি তো এসব জানতাম না। আমি তো আজ জানতে পারলাম মেঘলা বিবাহিত। এটা জানলে আমি তো কখনও মেঘলার সাথে সম্পর্ক করতাম না।

— মেঘলা তোমাকে এই ব্যাপারে কখনও কিছুই বলেনি?

— না স্যার। আমাদের তো বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মেঘলার সাথে আমার যেদিন শেষ কথা হয়। তখন মেঘলা আমাকে বলেছিল। সে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আসবে। সে আমাদের কথা বাসায় জানিয়েছে কিন্তু পরিবার নাকি মেনে নিচ্ছে না। আমি বলে ছিলাম আমি তার পরিবারের সাথে কথা বলব। কিন্তু ও আমাকে কথা বলতেও দিলনা। তারপর থেকে আমার আর মেঘলার সাথে কথা হয়নি।

— আচ্ছা এবার বুঝতে পারছি সব কিছুই।

— ধন্যবাদ রায়হান। তুমি আমাদের অনেক বড় একটা উপকার করলে।

— আমি ভাবতেও পারিনি মেঘলা আমার কাছে এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে রাখবে।

আরিয়ান রায়হানকে শান্তনা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়।

জয় আরিয়ানকে বলল — স্যার কিছু বুঝতে পেরেছেন?

— সব এখন পরিষ্কার আমার কাছে। যাইহোক তোমাকে ধন্যবাদ জয়। আমাকে সাহায্য করার জন্য।

— ঠিক আছে স্যার।

এবার আরিয়ান থানায় চলে গেলো। আরিয়ানের কাছে সব কিছুই পরিষ্কার হয়ে গেলো। কে মেঘলাকে খুন করেছে সেটাও এখন সে ক্লিয়ার। আরিয়ান জেলের ভিতরে যায় অনন্তর সাথে দেখা করতে।

— অন্তত। তুই আমার সাথে মিথ্যে কথা কেন বলেছিস?

— কি মিথ্যা বলছি আমি?

— তুই আমাকে আসল ঘটনা কেন বলিস নি?

— আসল ঘটনা মানে বুঝলাম না আরিয়ান।

— তুই নিজে তোর স্ত্রীকে হত্যা করে নিজের মতো করে একটা গল্প সাজিয়ে আমাকে বলে দিয়েছিস? তর স্ত্রীর একটা রিলেশন ছিল তুই আমাকে সেটাও বলিস নি। কেন মিথ্যা কথা বললি আমাকে?

অনন্ত নিশ্চুপ হয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো।

— চুপ না থেকে এবার তুই সত্যি কথা টা বল আমাকে। কি হয়েছিলো আর কেন তুই মেঘলাকে খুন করেছিস?

— আরিয়ান আমি মেঘলাকে খুন করতে চাইনি। আমি তো মেঘলাকে অনেক বেশি ভালোবাসতাম। কিন্তু মেঘলা আমাকে ঠকাল। মেঘলা একটা রিলেশনে জড়িয়ে পড়ে।

— তুই আমাকে সব কিছু খুলে বল।

— ঠিক আছে তাহলে শুন। মেঘলার সাথে আমার বিয়ে হয়। তখন আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক ভালো ভাবেই চলতে থাকে। আমি যে একটা চাকরি করি তার বেতন দিয়ে আমাদের দিন ভালো ভাবেই কাটতে থাকে। কিন্তু আমাদের বিয়ের পর আমাকে মেঘলা বলে সে একটা চাকরি করতে চায়। আমি রাজি ছিলাম না। পরে আবার রাজি হলাম মেঘলার জোরাজোরিতে। প্রথম দুই মাস ঠিক ভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই মেঘলার মাঝে একটা পরিবর্তন দেখতে পাই। মেঘলা আগের থেকে খুব বেশিই বিজি হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে রাত করে বাড়ি ফিরে। আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে বলত কাজের চাপ বেশি। তার কয়েকদিন পরে জানতে পারি মেঘলা প্রেগন্যান্ট। কথাটা শুনে আমি খুব বেশিই খুশি হয়ে ছিলাম। মেঘলাকে তেমন একটা খুশি হতে দেখলাম না। কিন্তু আমি এতোটাই খুশি ছিলাম যে মেঘলার দিকে আমি ভালো করে তাকানোর সময় অব্দি পাইনি। মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলাম তখন। মেঘলা আজ আমি অনেক বেশিই খুশি। তুমি আমার কাছে আজ যা চাইবে তুমি তাই পাবে। তখন মেঘলা আমাকে বলে। সে এখন কিছু চায়না সময় হলে চাইবে। কয়েকদিন কেটে গেলো। মেঘলা দিন দিন কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। বাসায় আসলে আমার সাথে কথা বলে না ঠিক ভাবে। নিজের মতো থাকতে শুরু করে। আমি ভাবতাম হয়তো সে ক্লান্ত। তার বিশ্রামের প্রয়োজন। এসব বলে নিজেকে শান্ত রাখতাম।

একদিব রাতে আমি মেঘলাকে বললাম — মেঘলা কাজের চাপ কি খুব বেশি?

– হ্যাঁ।

— আমি মনে করি তোমার এখন কাজ না করা উচিৎ। দেখ মেঘলা তুমি এই ভাবে কাজ করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তখন আমাদের বাচ্চার ও ক্ষতি হয়ে যাবে। দেখ তুমি এখন একা না। তুমি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসো। আর আমি তো বেকার না। আমি তো একটা জব করছি। তোমার এতো কষ্ট আমার ভালো লাগছেনা। আর তুমিও আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছ।

— অনন্ত তুমি না বলছিলে তোমার কাছে কিছু একটা চাইতে! এখন চাইতে পারি?

— অবশ্যই। বলো কি চাও তুমি?

— অনন্ত আমি এই সন্তান নষ্ট করে দিতে চাই। আমাদের এখন সন্তানের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না। আমরা তো ইচ্ছে করলেই আবার সন্তান নিতে পারি।

মেঘলার কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।

— মেঘলা তুমি কি পাগল হয়ে গেলে? এ কেমন আবদার করলে তুমি? মেঘলা আমি চাই আমাদের সন্তান জন্ম নেক। আর সন্তান দরকার নেই কে বলছে? তুমি কি জানোনা বাচ্চা আমার কতটা ভালো লাগে? আর তুমি কি বলছ এসব?

— আমি জানি তুমি আমার আবদার পুরন করতে পারবেনা। অনেক রাত হয়েছে ঘুমতে হবে।

চলবে?