ভালবাসার শেষ পরিনতি পর্ব-০২

0
151

#ভালবাসার_শেষ_পরিনতি
#পর্ব – ২
#লেখক_নাবীল_শেখ

রাত তখন দুইটা বাজে। হঠাৎ করে কারোর গোঙানির শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। পাশে তাকিয়ে দেখি মেঘলা পেটে হাত দিয়ে কান্না করছে। আমি বুঝলাম না এ সময় মেঘলার পেটে ব্যাথা হওয়ার কারণ কি? এখনও তো বাচ্চা হওয়ার সময় হয়ে আসেনি। আমি মেঘলার কাছে চলে গেলাম।

— মেঘলা কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছ কেন?

— অনন্ত, আমার পেটে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যাথা করছে। আমি আর পারছিনা। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।

আমি তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারকে ফোন দিলাম। কিন্তু ডাক্তার ফোন রিসিভ করছেনা। আমি বার বার ফোন দিতে থাকি। টেনশনে আমার মাথা কাজ করছেনা। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি রাত দুইটা বাজে। আমি আর কোনো কিছু চিন্তা না করে। মেঘলাকে কোলে তুলে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাসপাতালে পৌছে গেলাম আমরা। হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করতে থাকি। কয়েকজন নার্স আর একজন মহিলা ডাক্তার চলে আসে।

— কি হয়েছে?

— ডাক্তার আমার স্ত্রীকে একটু দেখুন।

ডাক্তার মেঘলার অবস্থা খারাপ দেখে মেগলাকে কেবিনে নিয়ে যেতে বলে। ডাক্তার ও ভিতরে চলে যায়। ডাক্তার মেঘলাকে দেখে বাহিরে চলে আসে।
ডাক্তার কে বাহির হতে দেখে আমি তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছে চলে গেলাম।

— ডাক্তার আমার স্ত্রী এখন কেমন আছে?

— দেখুন এতো ভয় পাওয়ার মতো কিছু হয়নি। আসলে উনি হয়তো ভারী কাজ করছে সেই জন্য এমন অবস্থা হইছে। সমস্যা নাই আমি ওনাকে একটা ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছে। ব্যাথা কমে যাবে। আজকে রাত উনি এখানে থাকুক আপনি ওনাকে কাল সকালে নিয়ে যেতে পারবেন। আর হে ওনাকে আর কোনো ভারী কাজ করতে দিবেন না।

এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। আমি এবার মেঘলার কেবিনে চলে গেলাম। মেঘলার কেবিনে গিয়ে দেখি মেঘলা ঘুমিয়ে আছে। আমি মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘলার চোখের কোণে পানি জমে আছে। আমি মেঘলার চোখের পানি মুছে দিলাম। তারপর মেঘলার কপালে একটা চুমু খেয়ে মেঘলার পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার মাথায় কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি মেঘলার হাত আমার মাথায়।

— অনন্ত, তুমি সারারাত এখানেই চিলে?

— হুম।

— তুমি এতো কষ্ট কেন করতে গেলে? তুমি রাতে বাসায় চলে গেলেই হতো।

— তোমাকে একা রেখে যেতে ইচ্ছে করছিল না। আমার কথা বাদ দাও তো, তোমার এখন কেমন লাগছে?

— ভালো লাগছে এখন একটু।

— তোমাকে বলছিনা বাসায় কোনো কাজ করার দরকার নেই। তাহলে তুমি কেন কাজ করতে গেলে? যদি তোমার কিছু হয়ে যায় আমি কি নিয়ে বাঁচব?

— আরে কিছু হয়নি তো আমার। আসলে বাসায় শুয়ে বসে থাকতে থাকতে খুব বোরিং ফিল করছিলাম সেই জন্য একটু রান্না করতে গেছিলাম। তখন হয়তো পেটে চাপ পড়ছে।

— তুমি আর কোনো কিছুতেই হাত দিবে না। বাসায় কাজ করার জন্য তো লোক আছেই।

— ঠিক আছে। আর আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা করতে হবেনা তোমার। আমরা বাসায় কখন যাবো?

একটু পরেই। আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আশি। তুমি একটু অপেক্ষা করো।

— ঠিক আছে।

এবার আমি ডাক্তারের কাছে চলে গেলাম। হাসপাতালে মোট খরচ পাঁচ হাজার টাকা হয়েছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বাসা থেকে কোনো টাকা নিয়ে আসিনি। এখন মেঘলাকে একা রেখে বাসায় যাওয়া ও সম্ভব না। তাই আমার বন্ধু জয়কে ফোন দিলাম।

— কিরে এতো সকাল সকাল ফোন দিলি যে? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?

— দোস্ত। আমি কাল রাতে মেঘলাকে নিয়ে হাসপাতালে আসছি।

— কেন, ভাবীর কি হয়েছে?

— আসলে রাতে পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে গিয়েছে তাই হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এখন একটা সমস্যা হয়েছে।

— কি সমস্যা হয়েছে?

— আমি তো কাল রাতে টাকা নিয়ে আসিনি। তুই একটু আমার বাসায় যা। বাসায় গিয়ে আমার রুমের আলমারিতে টাকা আছে। ওখান থেকে ৬ হাজার টাকা নিয়ে একটু তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আয়।

— আচ্ছা ঠিক আছে। কিন্তু আমি বাসার চাবি আর আলমারির চাবি কই পাবো?

— বাসার চাবি একটা আছে আমাদের বাসায় যে মেয়ে থাকে তার কাছে পাবি। সে হয়তো এতক্ষণে বাসায় চলে আসছে। তুই বাসায় চলে যা। আর আলমারির চাবি আমাদের বিছানার পাশেই পাবি।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

তার কিছুক্ষণ পরে জয় টাকা নিয়ে হাসপাতালে চলে আসছে। আমি মেঘলাকে নিয়ে বাসায় চলে গেলাম হাসপাতালের সব বিল মিটিয়ে দিয়ে।

মেঘলাকে রুমে ভিতরে শুইয়ে দিয়ে আমি মেঘলার জন্য খাবার গরম করতে গেলাম। খাবার গরম করে মেঘলাকে খাইয়ে দিলাম।

— অনন্ত, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তুমি এখন একটু ঘুমিয়ে নাও। রাতে তো ঘুমাতে পারলেনা। আমার জন্য।

— আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

— এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? আমি তো মরে যায়নি।

এই কথা বলতেই আমি মেঘলার মুখ হাত দিয়ে আঁটকে দিলাম।

— এই কথা আর কখনও বলবেনা মেঘলা। আমি তোমাকে ছাড়া কীভাবে থাকব? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে?

মেঘলা এবার আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল — কান্না করছ কেন? আমি তো মজা করছি।

— এমন মজা কখনও করবেনা তুমি আর।

এই ভাবে দু’দিন কেটে গেলো। আগের থেকে এখন আরো বেশিই মেঘলার খেয়াল রাখছি। আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি কাজের মেয়েটা এখনও আসেনি৷ আমি সাথে সাথে মেয়েটার নাম্বারে ফোন দিলাম।

— হ্যালো স্যার।

— আজ তুমি আমাদের বাসায় আসলেনা যে?

— স্যার আমার বাসায় কিছু কাম আছিলো। তাই যাইতে পারিনি।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

এই কথা বলে আমি ফোন কেটে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলাম। রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করতে শুরু করলাম। আজকে বাসায় কেউ নেই। পুরো বাসায় আমি আর মেঘলা। হঠাৎ করে মেঘলার চিতকার শুনে আমি রুমের দিকে চলে গেলাম। রুমের ভিতরে গিয়ে দেখি মেঘলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুই বুঝলাম না। একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ আমার মাথার পিছনে খুব জোরে একটা আঘাত পাই। মনে হলো কেউ আমাকে পিছন থেকে কিছু একটা দিয়ে বাড়ি মারছে। আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি একটা মাস্ক পড়া ছেলে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। ঐদিকে মেঘলা চিৎকার করে কান্না করছে আমাকে যেনো ছেড়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞ্যান ফিরতে দেখি আমার মেঘলার মৃত লাশ আমার সামনে পড়ে আছে সাদা কাপড় মাড়ান অবস্থায়। আর আশেপাশে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ ও চলে আসছে। আমার হাতের মুঠোয় মেঘলার চুল খুজে পায় পুলিশ। আর আমার শার্টের বুতাম পায় মেঘলার হাতে। তারপর আমাকে ধরে থানায় নিয়ে আসে। আমি আমার স্ত্রীর লাশটি নিজের হাতে কবর অব্দি দিতে পারলামনা না।

এসব বলছে আর অঝোরে কান্না করছে অনন্ত। এবার ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বর্তমানে ফিরে আসি।

আরিয়ান বলল — তোর সাথে অনেক বড় অন্যায় হয়ে গিয়েছে। তুই চিন্তা করিস না আমি আছি তোর পাশে, তো কোনো কিছুই হবেনা। আচ্ছা আরিয়ান তোর আলমারিতে কতো টাকা ছিল?

— দুই লক্ষ্য টাকার মতো হবে।

আরিয়ানের মনে এবার সন্দেহ জাগে, টাকা গুলোর জন্য জয় এমন কাজ করেনি তো? আরিয়ান অনন্তের থেকে বিদায় নিয়ে পুলিশ কয়েকজন মিলে অনন্তর বাসায় চলে গেলো আবার। অনন্তর আলমারি খুলে দেখে আলমারিতে কোনো টাকা নেই। আরিয়ানের সন্দেহ বাড়তে থাকে। আরিয়ানা এবার জয়ের বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে দেখে জয় নিজের রুমে বসে আছে। জয় পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে যায়।

আরিয়ান জয়কে বলল — আপনি কি জয়?

— জ্বি, কিন্তু আপনারা আমার বাসায় কেন?

— আপনি কি জানেন আপনার বন্ধু অনন্তর স্ত্রী খুন হয়েছে? আর অনন্ত এখন জেলে?

— জ্বী স্যার শুনেছি। আসলে আমার কাছে ভাবতেও খারাপ লাগছে যে অনন্ত এমন একটা কাজ কি করে করল? অনন্তর সাথে আমার অনেক দিন আগে থেকেই কথা হয়না দেখা হয়না। প্রায় দুই মাস আগে ওর সাথে আনার দেখা হয়েছে।

জয়ের কথা শুনে আরিয়ান একটা হাসি দিয়ে বলল — বাহ! আপনি তো খুব ভালো অভিনয় করতে পারেন। বন্ধুর বউকে হত্যা করে এখন বলছেন আপনার সাথে অনন্তর যোগাযোগ ও নেই।

— আপনি কি বলছেন এসব? আমি কেন অনন্তর স্ত্রীকে হত্যার করব? অনন্ত আমার খুব ভালো বন্ধু।

— হে আর আপনি সেই সুযোগ টাই নিয়েছেন। অনন্ত আপনাকে বিশ্বাস করে টাকা নিয়ে হাসপাতালে যেতে বলছে আর আপনি মাত্র তুই লক্ষ্য টাকার জন্য ওদের দুটি জীবন শেষ করে দিলেন।

— স্যার কি বলছেন এসব? কীসের টাকা আর কীসের হাসপাতাল? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। দেখুন স্যার কোথাও ভুল করছেন। অনন্তর স্ত্রী মারা গেছে ৫ দিন হলো আর অনন্তর সাথে আমার কথা হয়নি দুই মাস হয়েছে।

চলবে?