ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব-৩+৪

0
225

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#পর্ব_০৩
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi

–আমাদের খাদ্যের একটা তালিকা আছে আন্টি,কম আয়রনযুক্ত খাবার আমরা খেতে পারবো।

–বলো,তোমাকে না খাইয়ে আমরা ছারছিনা (মিষ্টির বাবা এগিয়ে এসে)

মিষ্টির বাবা একজন ব্যাঙ্কার।ওনার বস মিষ্টির বাবার থেকে প্রতিভার সম্পর্কে অনেক কথাই শুনেছেন তিনি,প্রতিভার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে তার অনেকদিনের,কিন্তু সময়ের অভাবে হয়ে উঠেনা,আজকে দেখা হয়েই গেলো।

–কিরে মাহমুদ,এটাই সেই প্রতিভাবান মেয়ে নাকি (বস)

–জ্বি স্যার,এটাই প্রতিভা

–দারুণ মিষ্টি দেখতেতো,কেমন আছো মা

–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল,আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ যেমন রাখছেন।আপনি কেমন আছেন। (প্রতিভা)

–আলহামদুলিল্লাহ
তুমি দেখতে ভারি মিষ্টি,তোমাকে দেখলে বুঝা যায়না তুমি এতো জটিল একটা রোগে আক্রান্ত

–জ্বী আঙ্কেল,আমার প্লীহা নেই জন্য বুঝা যায়না ততটা,আমি থ্যালাসেমিয়া রোগে ভুগছি ঠিকই তবে আলফা থ্যালাসেমিয়ায়।আলফা থ্যালাসেমিয়ায় রোগের উপসর্গ ও তীব্রতা অনেকটাই কম,সবার ক্ষেত্রে সব লক্ষন থাকেনা।

–মামনী,তোমার থেকে আমার কিছু জানার ছিল।আসলে আমার ছোট ছেলে,এই ধরো বয়স আড়াই বছর চলছে,জন্মের পর ২বছরের মতো বেশ স্বাস্থবান,সুস্থ ছিল কিন্তু ইদানিং আমার ছেলের এই বয়সেই শ্বাসকষ্টের পরিমাণ তীব্র,ত্বকও ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে,প্রস্রাব হলুদ,বয়স অনুযায়ী দৈহিক বৃদ্ধি খুবই কম, পেট কেমন ফুলে যাচ্ছে। এই বয়সী বাচ্চারা যতটুকু খেলাধুলা করে আমার ছেলে সেখানে একটু হাতপা ছোরাছোরি করলেই হাঁপিয়ে যায়।
আমার সন্দেহ হচ্ছে ও এ রোগে আক্রান্ত কিনা

–ডক্টর দেখিয়েছেন আঙ্কেল?

–আমার ওয়াইফ কিছুতেই ডক্টরের কাছে যেতে দেবেনা,সে কবিরাজে বিশ্বাসী,আমি অনেকবার বলেছি শোনেনি

–আঙ্কেল,এটা সত্যিই চিন্তার বিষয়।
আমার মনে হয় আপনার ছেলের টেস্ট করানো উচিত।দুটি টেস্ট করিয়ে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিতে পারবেন আপনার ছেলে সম্পূর্ণ সুস্থ নাকি থ্যালাসেমিয়া জিন বহন করছে।টেস্ট দুটো হলো সিবিসি টেস্ট এবং হিমোগ্লোবিন টেস্ট।
সিবিসি টেস্ট হলো একটি সামগ্রিক রক্ত পরিক্ষা,এই পরিক্ষায় রক্তে উপস্থিত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কেমন,রক্তকণিকা স্বাভাবিক আছে কিনা প্রভৃতি বুঝতে এই টেস্টটি গুরুত্বপূর্ণ।
হিমোগ্লোবিন টেস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কতো,সাধারণত পুরুষদের জন্য প্রতি ডেসিলিটারে ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম,মহিলাদের জন্য প্রতি ডেসিলিটারে ১২.০-১৫.৫ গ্রাম,আর শিশুদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটারে মিনিমাম ৭-৮গ্রাম।
থ্যালাসেমিয়া দু প্রকারের রয়েছে,বিটা থ্যালাসেমিয়া ও আলফা থ্যালাসেমিয়া।
বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরের অপর নাম কুলিস অ্যানিমিয়া,যেসব নবজাতক বিটা থ্যালাসেমিয়া মেজরে আক্রান্ত তারা জন্মের সময় বেশ স্বাস্থবান থাকে,তবে জন্মের ১ম দুইবছরের মধ্যে বা এরপরে রোগের উপসর্গ দেখা দেয়,বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৬০-৮০মিলিয়ন মানুষ বিটা থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করছে।আপনার কথানুযায়ী লক্ষনগুলো বিটা থ্যালাসেমিয়ার,আপনার বলা লক্ষনগুলে ছারাও আরও কিছু লক্ষন রয়েছে যেমন ধরুন যকৃৎ বড় হয়ে প্লিহার আকৃতি বৃদ্ধি পায়,এর জন্য পেট ফুলে যায়,নাকের হাড় দেবে যায়,মুখের গড়নের পরিবর্তন আসে,দৈহিক বৃদ্ধিও ব্যহত হয়,দিনেদিনে জটিলতা বাড়তেই থাকে।
আমার মনে হয় আপনার ছেলের যত দ্রুত সম্ভব টেস্ট করানো প্রয়োজন,যদিও থ্যালাসেমিয়া রোগের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই,জেনারেলি এটা নিরাময়যোগ্য কোনো রোগ নয় তবে আমরা চাইলে এর প্রতিরোধ করতে পারি,এ রোগের চূড়ান্ত চিকিৎসা হলো বোনম্যারো প্রতিস্থাপন।বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জা কে বলা হয় রক্ত তৈরির কারখানা।বোনম্যারো প্রতিস্থাপন একধরনের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা,রোগির রোগাক্রান্ত অস্থিমজ্জা মানে বোনম্যারো কেমোথেরাপির মাধ্যমে নষ্ট করে ডোনার থেকে বিশেষ ধরনের রক্তকোষ বা স্টেমসেল কালেক্ট করে রোগির শরীরে প্রবেশ করানো হয় অনেকটা ব্লাড ট্রান্সফিউশনের মতো।
থ্যালাসেমিয়া যেহেতু বংশগত রোগ,তাই আপনি আর আন্টিও নিজেদের টেস্ট করিয়ে নেবেন যে আপনারা এ রোগের বাহক কিনা।

–থ্যাঙ্ক ইউ প্রতিভা,এতগুলো ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য,কতো জানো তুমি

–কি করবো বলুন,আমি যেহেতু এ রোগে আক্রান্ত,জানি এর কষ্টটা কতটা তীব্র,সময় পেলে আমি এরোগের যাবতীয় ইনফরমেশন কালেক্ট করার চেষ্টা করি,যাতে আমার দ্বারা আমি নিজের সহ অন্যদেরও উপকারে আসতে পারি।

–আসলেই তুমি একজন প্রতিভাসম্পন্ন মেয়ে প্রতিভা,ভালো থাকো,সুস্থ থাকো দোয়া করি (প্রতিভার মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে লাগলেন)

–আঙ্কেল শুনুন

–জ্বী মা,বলো

–আঙ্কেল আমি আলফা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত,জেনারেলি বিটা থ্যালাসেমিয়ার থেকে আলফা থ্যালাসেমিয়া কম তীব্র।আমাদের আলফা থ্যালাসেমিয়া বিশিষ্ট রোগিদের ক্ষেত্রে রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি প্রকৃতির হয়ে থাকে অন্যদিকে বিটা থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে রোগের তীব্রতা ও প্রকোপ অনেক বেশি,এক-দুই বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে ঠিকমতো চিকিৎসা না করালে এটি শিশুর মৃত্যুর কারণও হতে পারে, তাই প্লিজ যতদ্রুত সম্ভব মনে করে টেস্ট করিয়ে নিয়েন,ভালো থাকবেন।
আসসালামু আলাইকুম

মিষ্টির বাবার বস মুচকি হেসে চলে গেলেন,প্রতিভা বসে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

–আমার বসের কাছে তোমাকে নিয়ে অনেক কথা বলতাম,তাই উনি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন

–এসব কথা রাখো,প্রতিভা বললেনা কি খাবে তুমি? (মিষ্টির মা)

–অনেক কিছুই রয়েছে,এখানে সম্ভবত মিষ্টি,পাউরুটি পাওয়া যাবে তাইনা আন্টি??

–হুম,আছে

–এটা কম আয়রনযুক্ত খাবার,খেলে খুব একটা অসুবিধা হবেনা,আপনি বরং আমাকে একটু মিষ্টি আর পাউরুটি এনে দিতে পারেন

–কমলার জুস খাবে??
এতে তো কম আয়রন রয়েছে?

–ওকে ঠিক আছে।


পরদিন সকাল ১১ঃ০০
প্রতিভা ম্যাডিকেলে ওয়েটিং রুমে বসে আছে,নার্সের সঙ্গে কথা হয়েছে,ডোনারের আসার কথা ছিল ১০টার দিকে,কিন্তু ১১বেজে গেছে এখনও ডোনারের আসার কোনো খবর নেই,অপেক্ষা করতে করতে প্রতিভা এবার সত্যিই ক্লান্ত,বিরক্ত লাগছে এবার।
হঠাৎ ওর সামনে দিয়ে একটা মাস্ক পড়া লম্বা সুঠামদেহি লোক শার্টের ট্রাই খুলতে খুলতে চেম্বারে প্রবেশ করলো,এরকম কত লোক আসছে যাচ্ছে,সবাই ব্লাড ডোনার,কিন্তু অন্য ব্লাডগ্রুপের,দীর্ঘশ্বাস ফেললো প্রতিভা।
এদিকে প্রতিভার মা বারবার মেয়েকে কল করছে রক্ত পেয়েছে কিনা,তিনি একটুব্যস্ত থাকায় আসতে পারেননি,অবশ্য প্রতিভাই ওনাকে সঙ্গে নিয়াসেনি।ব্যাগ থেকে নিজের বাটন ফোন বের করে ওর মা’কে কল ব্যাক করলো প্রতিভা..

–আসসালামু আলাইকুম আম্মু

–ওয়ালাইকুম আসসালাম,রক্ত পেয়েছিস তুই??

–নাহ,আম্মু এখনও ডোনার আসেনি
তুমি এত ঘনঘন কল করোনাতো,ব্লাড পেলে আমিই তোমাকে কল করে জানাবো,চিন্তা করোনা

–চিন্তা হয় রে,বুঝবিনা তুই।আচ্ছা রাখছি।

প্রতিভা কল কেটে ফোন ব্যাগে রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে,আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে আল্লাহ জানে।
এরমধ্যেই নার্স চেম্বারের বাইরে এসে প্রতিভাকে ডাক দিলো..

–মিসঃ প্রতিভা আহাম্মেদ

–জ্বী আমি

–আপনার ডোনার এসে গেছে,আপনি আমার সঙ্গে আসুন।

প্রতিভা নার্সের সাথে টু-বেডের কেবিনে চলে আসলো,নার্স প্রতিভাকে একটা বেডে সুইয়ে দিলো,সবকিছু ঠিকঠাক করতে করতেই একটা ছেলে কেবিনে প্রবেশ করলো,শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে পাশের বেডে বসলেন তিনি।

–ইয়ামিন স্যার,ফ্রেশ হয়ে এসেছেন তো?

–ইয়াহ,তো এই মেয়েটিকেই ব্লাড দিতে হবে তাইতো

প্রতিভা ছেলেটির দিকে একবার তাকিয়েই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে,এটা ওর প্রতিবারের স্বভাভ,ব্লাড ডোনার কোনো পুরুষমানুষ হলে প্রতিভা তার দিকে তাকায়না।

–জ্বি,উনার কথাই বলেছিলাম আপনাকে।
আসলে O- ব্লাড অনেকটাই রেয়ার,প্রতি মাসে ওনার জন্য এই ব্লাড কালেক্ট করা অনেকটাই টাফ হয়ে যায়,তাই উনি ডোনারের নম্বর চেয়েছিলেন।

–ওকে ফাইন,আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে নিব,নাম কি ওনার

–মিসঃ প্রতিভা আহাম্মেদ

–ওও আই সি,ওকে সব ঠিকঠাক করুন।
ডান হাত থেকে ব্লাড নেবেন বুঝলেন

–ওকে স্যার

নার্স ইয়ামিনের ডান হাতে স্যালাইনের সূঁচ ঢুকিয়ে দিলো,একেএকে সবটা সেট করে প্রতিভার হাতে আরেকটা সূচ ঢুকালো,এবার ইয়ামিনের থেকে ব্লাড প্রতিভার শরীরে প্রবেশ করবে,সবটা ঠিকঠাক করে নার্স কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
ইয়ামিনের কেন জানিনা এই প্রতিভা নামের মেয়েটাকে কেমন যেন পরিচিত মনে হচ্ছে,যদিও এখনও মেয়েটির মুখ দেখেনি,তবুও বারবার মনে হচ্ছে এই মেয়েটিকে আগেও কোথাও দেখেছে ও,ইয়ামিন আর চুপ থাকতে পারলোনা,সে এবার ডাক দিলো প্রতিভাকে…..

To be continue….

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#পর্ব_০৪
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi

সে এবার ডাক দিলো প্রতিভা কে।

–হ্যালো,এক্সকিউজ মি,মিস প্রতিভা,হ্যালো

ইয়ামিনের ডাকে প্রতিভা ইয়ামিনের দিকে মাথা ঘুরাতেই ইয়ামিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

–কিছু বলবেন??

–তুমি সেই মেয়েটা না,কিছুদিন আগে রাজশাহী টি-বাঁধে বসে থেকে স্কেচ আর্ট করছিলে?

–জ্বি,কিন্তু কেন?

–আমাকে চিনতে পেরেছো,আমি ইয়ামিন চৌধুরী।

–সরি,আপনাকে তো ঠিক চিনলামনা,আর আমি মাঝেমধ্যেই পদ্মাপাড়ে যাই,একান্ত কিছুটা সময় কাটাতে,কত মানুষের সঙ্গেই তো দেখা হয়,বাচ্চাদের স্কেচ আর্ট করে দিই

–আরে গতমাসে,তুমি আমার আর আমার বন্ধুর দুই মেয়ের স্কেচ বানিয়েছিলে,হাসানোর জন্য আমার বড় বড় দাঁত চোখে চশমা,আর মাথায় শিং একে রাক্ষস বানিয়ে দিয়েছিলে মনে নেই।

এতক্ষণে প্রতিভার মনে হলো,মাসখানেক আগে।আর্ট স্কুলের কিছু বাচ্চাদের নিয়ে প্রতিভা রাজশাহী টি-বাঁধে গিয়েছিলো,মূলত চিত্রঅঙ্কন করতে।বাচ্চাদের বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে দিয়ে তাদেরকে আর্ট করতে লাগিয়ে দিয়ে প্রতিভা একমনে নদীর জলরাশীর দিকে চেয়েছিলো।হঠাৎ চোখ যায় ওর কিছুটা দূরে থাকা বরফওয়ালার দিকে,৩-৪,৬-৭বছরের দুটো বাচ্চা মজা করে বরফ খাচ্ছে,ওদের সঙ্গে একটা লোকও রয়েছে,সেযে বিরক্ত সেটা তার মুখের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ কি মনে করে জানেনা,প্রতিভা বাচ্চাদের আইসক্রিম খাওয়ার দৃশ্য টা আর্ট করতে লাগলো।
বাচ্চাগুলো আরও আইসক্রিম খাওয়ার জন্য জিদ করলে ওদের সঙ্গে থাকা লোকটি ধমক দিলো,৩-৪বছরের বাচ্চাটা মন খারাপ করে কাঁদতে কাঁদতে প্রতিভার এদিকে এগিয়ে আসতেই ড্রয়িং টা ওর চোখে পড়লো।

–আপুই,দেকো দেকো এই আপুটা আমাদের একেছে দেকো (চেচিয়ে)

৬-৭বছরের বাচ্চাসহ ওদের সাথে থাকা লোকটিও ছুটে আসলো,প্রতিভার আর্ট তাদের মনে ধরেছে,বাচ্চাগুলো প্রতিভার সঙ্গে একদম মিশে গিয়েছে,প্রতিভা সুন্দর করে দুটো বাচ্চারই স্কেচ বানিয়ে দিলো,শেষে বাচ্চাদের কথামতো ওদের সঙ্গে থাকা লোকটিরও স্কেচ বানিয়েছিলো তবে ফান করে রাক্ষস রূপে,সেদিন স্কেচটা দেখার পর লোকটির কি রাগি ফেইস,মনে হতেই প্রতিভার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই লোকটিই যে সেই লোক

–কিই,মনে পরেছে?

–হ্যাঁ,আপনাকে একবার সরি বলতে চেয়েছিলাম পরে আর খুঁজে পাইনি,রাগ করেননিতো?আসলে বাচ্চাগুলোকে খুশি করার জন্য ওমন করেছিলাম,ওরা বারবার আপনাকে রাক্ষস আঙ্কেল বলে ডাকছিলো তাই।

–আরে ব্যপার না,আমারও বেশ লেগেছে,ভালো আঁকো কিন্তু তুমি

–ধন্যবাদ,ওই আরকি একটুআধটু পারি,খুব ভালো নয়

–তুমি চাইলে আর্ট নিয়ে অনেককিছু করতে পারো,যেমন ধরো ও..

–আমার মতো মেয়েদের এতটা মানায়না স্যার,নিজের রোজকার জীবন নিয়ে বেশ আছি,বাচবোইবা কতদিন বলুন,আমার আর্টস্কুলের বাচ্চারা,আমার মা,আর আমার কাজ এইতো জীবন,দিব্যি আছি আর কিছু চাইনা। (নিচু স্বরে)

প্রতিভার কথা শুনে ইয়ামিনের মুখের হাসিটা উবে গেলো।

–বিয়ে করতে পারো,ইচ্ছে হয়না?

–হাহ,আমার মতো মেয়েদের জন্য বিয়ে,স্বামি,সংসার এসব নয়,নিছান্তই কল্পনা করা মাত্র,কে শুধু শুধু নিজের জীবনটা নষ্ট করবে বলুনতো,আমরা তো এই পৃথিবীর কিছুদিনের অতিথি মাত্র,আপনাদের মতো কিছু হৃদয়বান মানুষের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকি,পরনির্ভরশীল আমরা।
আজকে আপনি ব্লাড দিলেন,সামনে মাসে আদোও ব্লাড পাব কিনা নিশ্চয়তা নেই,দেখা গেলো ব্লাডের অভাবে সময়ের আগেও মৃত্যু হতে পারে আমার।

—তুমি চাইলে আমি ব্লাড দেব,আমি প্রফেশনাল ব্লাড ডোনার,এটা আমার একটা শখ বলতে পারো

ইয়ামিনের কথা শুনে হেসে দিলো প্রতিভা,

–পাগল আপনি,আপনি কি জানেন আমার প্রতি দেড়মাস অন্তর ব্লাড নিতে হয়,আর একজন ডোনার মিনিমাম ৩মাস পরপর ব্লাড দিতে পারে,রক্তদানের শর্তগুলো পূরণ হয়ে থাকলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি প্রতি ৩-৪মাস পরপর এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে পারবেন,যার পরিমাণ ৪৫০মিলিলিটার।এক ব্যাগ রক্ত শরীরের মোট রক্তের মাত্র ২-৩%,তাই এই পরিমান রক্ত দিলে ডোনারের ক্ষতির কোনো আশংকা নেই,তবে মিনিমাম ৩মাস পরপর,তার আগে নয়।
তাহলে কিভাবে আমাকে ব্লাড দিবেন শুনি?

–হাসিটা সুন্দর,তোমার মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্যই মজা করে বলেছিলাম,প্লিজ ডন্ট মাইন্ড।তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা,আমি ডোনার খুজে বের করবো,যাতে পরের মাসে সে তোমাকে ব্লাড দেয়,আর তার পরের মাসে তো আমি আছিই,i promised you Protibha

–আপনি আমার জন্য এতকিছু কেন করবেন?

–ও তুমি বুঝবেনা,তুমি চাইলে আমরা বন্ধু হতে পারি,যদি চাও তো।
তো পদ্মাপাড়ে আর যাওয় হয়?আমিতো প্রায়ই যাই,তোমাকে দেখিনা যে

–আসলে সময় হয়ে ওঠেনা,আর্ট স্কুল + নিজের কর্মব্যস্ততাসহ অসুস্থতা,সবমিলিয়ে সময় পাইনি।এনিওয়েস,রিম ঝিম, (সেদিনের বাচ্চাদুটোর নাম) ওরা কেমন আছে

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো,এই তো গতকাল বরিশালে ওদের নানির বাড়ি থেকে ঘুরে আসলো,এসেই জিদ ধরেছে তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য,কি একটা অবস্থা বলোতো

–হাহাহা,তাই নাকি,তাহলে তো দেখা করতেই হয়।
কালকে তাহলে নিয়াসবেন ওদের,আপনার বেবিদেরও নিয়াসবেন

–আমি আনম্যারিড

–ওফস,সরি,আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ম্যারিড

–ইট’স ওকে


ব্লাড এবসর্ভ করা হয়ে গেলে নার্স এসে দুজনেরই হাত থেকে সূচ বের করে নিলো,এখন প্রায় এক-দেড় ঘণ্টার মতো ইয়ামিনকে এখানেই রেস্ট নিতে হবে।প্রতিভার লোকটিকে এভাবে রেখে যেতে ইচ্ছে করছিলোনা,এখন অবধি ওকে যেকয়জন ডোনার রক্ত দিয়েছে সবাই মূল্য নিয়েছে অথচ এই ইয়ামিন নামের লোকটি ১পয়সাও নিলোনা,উল্টে নিজের নম্বর দিয়েছে,নেক্সট কখনও যাতে ব্লাড প্রবলেম না হয়,তাই ডোনার খুজে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে,লোকটা আসলেই বন্ধুসুলভ ও ভালো মানসকিতার অধিকারী,এখনকার যুগে এমন মানুষ সহজে পাওয়া যায়না,যেখানে ওর নিজের আত্মীয়রাই ওদের কে দূরে ঠেলে দিয়েছে সেখানে ২দিনের পরিচয়ে এক অপরিচিত ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইয়ামিন বেডে বসে রয়েছে ওর সামনের বেডে প্রতিভা,প্রতিভা এক বোতল পানি ইয়ামিনের দিকে এগিয়ে দিলো।

–নিন পানি খান,রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।আর এইযে রক্ত দেওয়ার পর আপনার হাতে যে স্ট্রিপ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে,অন্তত কয়েকঘন্টা এটি খুলবেননা বুঝছেন,খোলার পর যদি র‍্যাশ বের হয় তাহলে ভালো করে সাবানপানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

–হুম জানি মিসঃসবজান্তা

–আমি আসছি,ওয়েট করুন।

প্রতিভা ম্যাডিকেলে থেকে বের হয়ে বাইরের রেস্টুরেন্ট থেকে মাছের তরকারি,ভাত,দুটো সিদ্ধ ডিম,পানির বোতল কিনে নিলো,আর হাফ কেজি স্ট্রবেরিও কিনে নিয়ে আবার ম্যাডিকেলের ওই কেবিনে আসলো যেখানে ইয়ামিন রয়েছে,এসে দেখে ইয়ামিন বেডটা উঁচু করে সাইডে নিয়ে যাচ্ছে,আর সূচ ফোটানো জায়গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।
প্রতিভা দ্রুত খাবারের প্যাকেট আর পানির বোতল বক্সের ওপর রেখে দিয়ে ইয়ামিনের বামহাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো,ডান হাত টান করে ধরে,যেখানে সূচ ফোটানো হয়েছিলো সেখানে চাপ দিয়ে ধরে হাত উঁচু করে রাখলো,এভাবে প্রায় ৫-৬মিনিট রাখলেই ব্লেডিং বন্ধ হবে।তানাহলে যতক্ষণ ব্লেডিং বন্ধ নাহয় ততক্ষণ এভাবে ধরে রাখতে হবে।

–পাগল নাকি আপনি,আপনি জানেননা রক্তদানের পর ভারিকিছু তুলতে নেই,এমনকি ওই দিন কোনোরূপ এক্সারসাইজ করাও নিষিদ্ধ,আর এরকম করবেননা ঠিক আছে (চিন্তিত হয়ে)

ইয়ামিন কিছু না বলে একদৃষ্টিতে প্রতিভার দিকে চেয়ে আছে,প্রতিভার ফ্যাকাসে মুখটা চিন্তায় জর্জরিত।ব্লেডিং অফ হলে প্রতিভা ইয়ামিনের হাত ছেড়ে দিলো।

–বসুন এবার,আর শুনুন মাথা ঘুরলে বা শারিরীক অস্বস্তি হলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন বা বসে থাকুন,যতক্ষণ না সুস্থ বোধ করছেন বুঝেছেন।

ইয়ামিন মাথা নাড়িয়ে বেডে হ্যালান দিয়ে শুয়ে পড়লো,খাবারের প্যাকেট দেখে সে প্রতিভার দিকে তাকালো..

–এগুলো কি?

–আপনার জন্য এনেছি।
রক্তদানের পর একজন ডোনারের জন্য সর্বোত্তম হলো আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া।আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে চিকেন,ভেড়ার মাংস,মটন,মাছ,ডিম,সবজি হিসেবে মিষ্টি আলু,ব্রকোলি,বিনস,মটরশুঁটি,ফলের মধ্যে তরমুজ,স্ট্রবেরি,শুকনো ফল এছাড়াও পাস্তা,ওটস,ভাত,রুটি ইত্যাদি খেতে পারেন।আপনি যেহেতু প্রফেশনাল ব্লাড ডোনার,আপনি তাহলে নিশ্চয়ই এই বিষয়ে অবগত রয়েছেন।

–হুম জানি

–আমি আপনার জন্য ভাত,মাছের তরকারি,ডিম আর কিছু স্ট্রবেরি কিনে এনেছি,খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

–তোমার এতকিছু আনার কি দরকার ছিল?

–বারে,তখন না আমাকে নিজের ফ্রেন্ড বললেন তো ফ্রেন্ডের জন্য এটুকু করতে পারিনা,নিন খেয়ে নিনতো জলদি জলদি।

ইয়ামিন নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে প্রতিভার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো,

–ওফ সরি সরি,আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে….

To be continue….

((কেমন হচ্ছে জানাবেন,গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন))