ভালোবাসা অবিরাম পর্ব-০৭

0
578

#ভালোবাসা_অবিরাম
#পর্বঃ৭
#আইরাত_বিনতে_হিমি

গাড়ির কোলাহলে ঘুমঘুম চোখে পিটপিট করে তাকাচ্ছে নিলু। গায়ে প্রচন্ড ব‍্যথা হয়তো কালকে বেশিক্ষণ ভেজার কারনে এই অবস্থা।নিলু আস্তে আস্তে সোয়া থেকে উঠে দারলো। ঘুম ঘুম চোখে আশে পাশে তাকাচ্ছে আর ভাবছে সে কথায় ঠিক সেই সময় দরজা নক করার আওয়াজ আসলো তখনই নিলুর মনে পরলো তার বিয়ে হয়ে গেছে আর এখন সে তার স্বামীর ঘরে আছে একটু পর আবার নক করার আওয়াজে নিলু কেপে উঠলো আর বললো….

খুলছি

নিলু বসা থেকে উঠে দরছাটা খুলে দিলো তারপর একটা সস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বললো

আপু তুমি আসো ভিতরে আসো

হ‍্যা আমি কি করছিলে ঘুমাচ্ছিলে নাকি

না আপু ঘুম থেকে উঠে পরেছি। আপু এইসব কি খাবার কেনো রুমে আনসো

কি করবো তাহলে তুমি তো অসুস্থ

অসুস্থর কথা শুনে নিলুর কালকের কথা মনে পরলো সে মনে মনে ভাবলো

আরে আমি তো কালকে ওয়াশরুমে ছিলাম। তাহলে রুমে আসলাম কি করে। আপুকে কি জিঙ্গাসা করবো। না থাক উনি হয়তো নাও জানতে পারে

কি হলো নিলু কি ভাবছো

কিছু না আপু

বলেই হলো কিছু না আমি জানি তুমি কি ভাবছো। ভাবছো তো কি করে এই রুমে আসলে তাই না

হ‍্যা আপু আসলে আমি তো

থাক আর কিছু বলতে হবে না আমি বুঝি। আসলে কালকে তোমাকে ভাই রুমে নিয়ে আসছিলো আর কল করছিলো তোমার জামা চেন্স করায় দেওয়ার জন‍্য আমি তো তোমাকে দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছিলাম। যাইহোক এখন তুমি সুস্থ সেটাই অনেক। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমাকে খাই দিচ্ছি

ঠিক আছে আপু কিন্তু আমি একাই খেয়ে নিতে পারবো

বড় বোন আদর করে খাইয়ে দিতে চাচ্ছে আর তুমি কিনা সেই আদর থেকে সরে যেতে চাচ্ছো এইটা কিন্তু ঠিক না নিলু। আমার কিন্তু অভিমান হবে ভীষন অভিমান হবে বলে দিলাম

ওকে আপু I am sorry তুমিই খায়িয়ে দিও এই দেখো আমি কান ধরছি আর কখনো এমন করবো না

আচ্ছা ঠিক আছে যাও এইবারের মতো মাফ।

এই কথার পর দুজনে এক সাথে উচ্চ স্বরে হেসে উঠলো

ঢাকা থেকে শত মাইল দূরে নির্জন একটা রিসোটে বসে আছে আসফি চৌধুরী আর রিমি দুজনেই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে তাদের নির্জনতা এতোই যে যোনো একটি পাতা পরলেও তার শব্দ শোনা যাবে। নির্জনতা কাটিয়ে আসফি বলে উঠলো

রাগ কি কমছে মেডামের আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যাবে নাকি

রিমি ফ‍্যালফ‍্যাল নয়নে আসফির দিকে তাকিয়ে আছে।তার দৃষ্টিই বলে দিচ্ছে সে শুনতে চায় তাই আসফি বলতে শুরু করলো

দেখো রিমি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু বিয়েটা আমি বাধ‍্য হয়ে করেছি পরিস্থিতিই এমন ছিলো যে আমার কিছু করার ছিলো না তুমি তো জানোই আমি আমার ফ‍্যামিলির অসম্মান হোক এমন কোনো কাজই করতে পারবো না। আর বিয়েটা বড় আম্মু হঠাৎ করেই ঠিক করে আমাকে জানাইছে সব ফাইনাল হওয়ার পর এখন আমি কি করতাম বলো। কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি ঐ মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো জাস্ট কয়েকটা দিন সময় দাও আমি ঐ মেয়েকে সব বোঝায় বলবো। Don’t worry রিমিপরি তোমার আসফিকে কেউ তোমার কাছ থেকে নিতে পারবে না

আর যদি ঐ মেয়ে না মানে

তাহলে তার ব‍্যবস্থাও আছে। সোজা কথায় কাজ না হলে কিভাবে কাজ হাসিল করতে হয় তা আমার খুব ভালো করেই জানা আছে

ওকে ফাইন দিলাম তোমায় একটা সুযোগ দেখি তুমি কি করো। কিন্তু আসফি এরপর যদি অন‍্য কিছু হয় তাহলে কিন্তু আমি সব শেষ করে দেবো

আসফি রিমির হাত ধরে বলে। এতো চিন্তা করছো কেনো আমি তো বল্লাম আমি সব ঠিক করে দেবো। এখন একটু হাসো তো দেখি

রাত ১২ টা চৌধুরী বাড়ির প্রত‍্যেকটা কোনা যেনো নিরবতায় ছেয়ে গেছে। বাড়ির একসাইটের ঘরে রকিং চেয়ারে বসে আছে আশরাফ চৌধুরী একটু একটু পর পর সে দেয়াল ঘরির দিকে তাকাচ্ছে কারণ এখনো বাড়ির ছোট ছেলে আসফি চৌধুরী বাড়ি আসেনি। দুশ্চিন্তায় যেনো ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে রেখা চৌধুরীর তাই তো আর নিজের ঘরে বসে থাকতে পারলো ছুটে চলে আসলো তার বড় জায়ের ঘরে। এসেই বলতে শুরু করলো

দাদাভাই আপনি কি আসফিকে কোথাও পাঠিয়েছেন। ওর কেনো এখনো লেট হচ্ছে ওতো এত দেরি কর‍ে বাসায় ফিরে না

তুমি চিন্তা করো না রেখা হয়তো কোনো ইমার্জেন্সি পড়ে গেছে তাই হয়তো লেট হচ্ছে

তাদের কথার মাঝেই গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো তাদের বুঝতে বাকি রইলো না যে আসফি চলে এসেছে। তাইতো তারা দুজনেই ড্রয়িং রুমে এসে বসলো আসফি মেইন ডোর দিয়ে যখন বাড়ির ভিতরে ডুকছিলো তখন রেখা চৌধুরী বলে উঠলো

দাড়া আসফি এতো রাত উবধি কোথায় ছিলি

ওহ আম্মু কাজ ছিলো হাসপাতালে তাই বড় আব্বু প্লিজ আমম্মুকে একটু বোঝাও তো

আশরাফ চৌধুরী বলল
আসফি তোমার আম্মুর বয়স হয়েছে তাছাড়া তুমি সবে বিয়ে করে বাসায় বউ নিয়ে আসছো তোমার কি মনে হয় না নিলুকে একটু সময় দেওয়া দরকার তোমার। কিভাব্বে নিলু বলো

সরি বড় আব্বু এইটা আমার ভাবা উচিত ছিলো। আসলে emergency এর কারণেই আসতে পারিনি পরবর্তীতে তোমার কথা আমায় মাথায় রাখবো ওকে।

আচ্ছা ঠিকআছে তুমি উপরে যাও তোমার খাবার উপরে দিয়ে আসা হবে

আচ্ছা বড় আব্বু। ওহ মাই মাদার ইন্ডিয়া এত অভিমান।আচ্ছা সরি বাবা আর লেট করবো না কখনো হয়েছে

ঠিকআছে ঠিক আছে তুই উপরে যা আমি তোর খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি

আচ্ছা যাচ্ছি

এই কথা বলে আসফি উপরে চলে গেলো উপরে যেয়ে দেখতে পেলো বিছানায় সুয়ে আছে নিলু। ঐ দিকে সে না তাকিয়ে তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো এতক্ষণ নিলু চুপচাপ সুয়ে সুয়ে আসফির কান্ড দেখছিলো। এখন সে সোয়া থেকে উঠে দাড়ালো এবং চুপচাপ বেলকনিতে চলে গেলো। একটু পর আসফি ওয়াশরুম থেকে বাহির হয়ে আসলো। এসে যখন নিলুকে দেখতে পেলো না তখন সে বেশ অবাক হলো। তাই সে এদিক সেদিক নিলুকে দেখছিলো আর পেয়েও গেলো। তাই আসফিও বেলকনিতে গেলো আর নিলুর পিছনে যেয়ে দারালো। আর নিলুর দৃষ্টি আকর্শণের জন‍্য বললো

এ‍্যাহম এ‍্যাহম

আসফির কাশিতে নিলু পেছনে ঘুরে তাকালো তাতেই তাদের দৃষ্টি মিলে গেলো। আচমকা দৃষ্টি মিলতেই নিলু বেশ লজ্জায় পড়ে গেলো। বিষয়টা আসফি বুঝতে পেরে আসফি বলে উঠলো

দেখুন মিস নিলিমা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি যতদুর জানি তুমি আমার থেকে অনেক ছোট তাই তুমি করেই বললাম

its ok কোনো সমস্যা নাই। বলুন কি বলতে চান

আসলে কথাটা খুব Important মনোযোগ দিয়ে শুনবা হয়তো শুনলে তোমার খুব কষ্ট হবে কিন্তু আমার কিছু করার নাই

জ্বি বলেন আমি শুনছি

আসলে আমি এই বিয়েটা করতে চায়নি এক প্রকার বাদ‍্য হয়েই বলতে পারেন বিয়েটা আমি করছি। আর এই বিয়ে না করার পিছনে কারণ হচ্ছে আমার একটা পছন্দ আছে যাকে আমি খুব ভালোবাসি তাকে ছাড়া আমি কিছু কল্পণাও করতে পারি না। আমি তাকে ভীষণ রকম ভালোবাসি সেও আমাকে ভালোবাসে।

কথাটা শুনে যেনো নিলুর ভেতরে ঝড় উঠে গেলো। তার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো কানের সাইড দিয়ে যেনো বলতা উরে গেলো। সে যেনো মূর্তির মতো হয়ে গেলো চোখ দিয়ে যেনো অঝর ধারায় বৃষ্টি পরতে চাইলো তারপরও নিজেকে শক্ত রেখে নিজের বুকের ভেতর এক বুক কষ্ট লুকিয়ে সে বললো

আমাকে কি করতে হবে বলে দিন আমি করে দেবো

ভেবে বলছেন তো

হুম ভেবেই বলছি

তাহলে আমি কাগজ রেডি করে রাখবো আপনি শই করে দিবেন

কিসের কাগজ

ডিভোর্স পেপার

#চলবে