ভালোবাসি তাই পর্ব-০৬

0
1007

#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৬
#Tanisha Sultana

অভি তেড়ে তানহার দিকে এগিয়ে আসে। তানহা দুইকানে হাত দিয়ে মুখটাকে ইনোসেন্ট করে বলে
“এতো গুলা সরি। আসলে আমার সব জামাকাপড় ভিজে গেছে

অভি তানহার কাছে এসে হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
” এই শার্টটাই পেলে?

“আমি তো আর শার্টটা খেয়ে ফেলবো না। জাস্ট কিছুখন পড়ে থাকবো। তারপর কেঁচে দেবো আপনায়। বাই দা ওয়ে শার্টটা কি আপনার বউ গিফট করছে?

” বউ? ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে বলে অভি।

“আরে আজ সকালে আপনি বউ মনে করে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন।
তানহার কথা শুনে অভির কাশি উঠে যায়। তানহা কেবলার মতো তাকিয়ে আছে।

” আমার কোনো বউ টও নাই। কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলে অভি।

তানহা দাঁত কেলিয়ে বলে
“আমি দেখতে বোকা বোকা হতে পারি কিন্তু আমি প্রচুর চালাক। আপনার বউ আছে। আর সেটা আমি খালামনিকে বলবো। তোমার লুকোচুরি ধরা পড়ে গেছে বাবু
লাস্টের কথাটা সুর টেনে বলে।
অভির রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। এতো কথা কেমনে বলে মেয়েটা। তানহাকে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।
” আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন

ওয়াশরুমে ছেড়ে সাওয়ার অন করে দেয়। সাথে সাথে তানহা ভিজে যায়। অভি বেরিয়ে আসতে নিলে তানহা অভির শার্ট ধরে টান নিয়ে অভিকেও সাওয়ারের নিচে নিয়ে আসে। অভিও ঋিজে যায়। দেয়ালের সাথে লেগে যায় তানহা। আর তানহার সামনে অভি।
“কেমন দিলাম বস? চোখ টিপে বলে তানহা।
অভি কটমট চোখে তাকিয়ে বলে
” এবার শাস্তি ভোগ করো।

বলেই বেরিয়ে এসে দরজা লক করে দেয়। এখন যতখন না বাবা মা বাড়ি আসবে ততোখন এই মেয়েটা এখানেই থাকবে। সাওয়ার অন না করলে তানহার শব্দ বাইরে থেকে শোনা যাবে। শার্ট পাল্টে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে খাটে বসে অভি।
“পাগল হয়ে যাবো আমি
বিরবির করে বলে। ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে তানহা। অভি বেলকনিতে গিয়ে ফোন হাতে নেয়। দেখে একটা মেসেজ এসেছে। ঢাকা ভার্সিটিতে মেনেজমেন্টে অনার্স করার চান্স পেয়েছে তানহা। অভি মাথায় হাত দেয়।
” এবার এই লেজ ছাড়া বাঁদরটা আমার কলেজেও চলে যাবে আমাকে জ্বালাতে।
অভি রুমে এসে একটা শার্ট আর টাওজার নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা একটু খুলে তানহার দিকে এগিয়ে দেয়
“এগুলো নাও

এতোখন ডাকাডাকির পরে অভি দরজা খোলায় ফট করে তানহা জামাকাপড় নেয়। অভি আবার গিয়ে খাটে বসে। তানহা চট করে চেঞ্জ করে বাইরে বের হয় তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে। অভি তানহার দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে। সাদা শার্ট আর ক্রিম কালার টাওজার পড়া লেজ ছাড়া বাঁদর দাঁড়িয়ে আছে। টাওজারের পা অনেক বড় হয়েছে। শার্টের ও হাতা বড় হয়েছে। তানহা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অভি এসে তানহার হাত ধরে। তানহাকে খাটে বসিয়ে নিজে ফ্লোরে বসে পড়ে। তানহা হা হয়ে দেখছে। তানহার বা পাটা ধরে নিজের পায়ের ওপর রাখে। তানহা সরিয়ে নিতে গেলে চোখ গরম করে তাকায়। অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে যায় তানহার ওপর দিয়ে। বুকের ভেতর টিপটিপ করছে। অভি তানহার পায়ের টাওজার গুটিয়ে দেয়।

” এই করলার আবার কি হলো? হঠাৎ এতো কেয়ার? গাঁজা খাইছে মেবি
মনে মনে বলে তানহা। এখন শার্টের হাতা গুটিয়ে দিচ্ছে।

“ক্রাশ টাশ খাইলেন না কি আমার ওপর? যদিও বা আমি ক্রাশ খাওয়ার মতোই মেয়ে। কতো ছেলেরা পেছনে ঘুরে। আমি কিন্তু আপনাকে পাত্তা দেবো না।
অভি তানহার শার্টের কলার ধরে হালকা টান দেয়। তানহা অভির দিকে ঝুঁকে যায়। তানহা বড়বড় চোখ করে তাকায়। অভির গা থেকে কড়া পারফিউমের গন্ধ আসছে। সাথে মুখ থেকে সিগারেটের গন্ধ।

” আর একটা কথা বললে চাপকে দাঁত ফেলে দেবো। কিছুটা ফিসফিস করে বলে অভি। অভির ভয়েস শুনে তানহার শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। দুরে সরে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে

“আমি বুঝতে পারি না আপনার মতো একটা তেতো মানুষকে ওই আপুটা আই মিন আপনার লুকিয়ে রাখা বউ কি দেখে বিয়ে করলো। রোমান্টিক তো আপনি কখনোই না। আর মিষ্টি কথাও বলতে পারেন না। তাহলে? নিশ্চয় ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছেন। ছিনেমার হিরোদের মতো সাদা কাগজে সাইন করিয়ে সেটাকে রেজিস্ট্রি পেপারে বসিয়ে দিয়েছেন।

” সাট আপ
কানে হাত দিয়ে জোরে ধমক দিয়ে বলে অভি। তানহা ছিটকে দুই হাত দুরে সরে যায়। অভি তানহার হাত চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
“সোজা কথা বোঝো না তুমি? তোমাকে চুপ থাকতে বললাম শুনলে না। এবার আমি চুপ করাবো তোমায়।

তোয়ালে দিয়ে তানহার হাত বেঁধে মুখে কসটিপ লাগিয়ে দেয় অভি। তারপর খাটে আধসোয়া হয়ে জোরে শ্বাস টেনে বলে
” ছোটমট সাইকোন বয়ে গেলো এখানে।

তানহা কাঁদো কাঁদো ফেস করে অভির দিকে তাকিয়ে আছে। অভি গোল হয়ে বসে বলে

“এবার আমি বলবো তুমি শুনবা।
তুমি ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছো। তো আমি সেখানেই পড়ি। এবার তোমর ডিসকু মা বর আমার আম্মু এটা জানতে পারলে তোমাকে আমার ফ্লাইটে পাঠিয়ে দেবে আমাকে জ্বালাতে। তো তুমি এবার সবাইকে বলবা তুমি দেবেন্দ্র কলেজে পড়তে চাও। ক্লিয়ার?

তানহা মন দিয়ে শুনলো। তারপর চোখে মুখে হাসি ফুটে ওঠে। এক ঢিলে দুই পাখি। আবিরের স্মৃতি থেকে বাঁচতে দুরেও যাওয়া হবে আবার অভিকে জ্বালানোও হবে।

” কি হলো বলো?

তানহা ইশারায় কসটিপ দেখায়।
“থাক বলতে হবে না। এভাবেই থাকো।
তানহা মনে মনে হাজারটা গালি দেয় অভিকে। প্রচুর খিদে পেয়েছে সকাল থেকে কিচ্ছু খায় নি। আর এখন এখানে বসে আছে বন্দি হয়ে। তানহার চুল থেকে পানি পড়ে অভির বিছানা ভিজে যাচ্ছে। ভালো করে চুলটাও মুছে নি। অভি ফোন দেখছে আর একটু পরপর তানহার দিকে তাকাচ্ছে। কেনো জানি খুব ভালো লাগছে। সাধারণ শার্টে কাউকে এতো ভালো লাগতে পারে?

পাক্কা আধ ঘন্টা পরে কলিং বেল বাজে। অভি দরজা খুলে দেখে মা দাদু, অনিক আর খালামনি এসেছে।
” তানহা কোথায় রে?
খালামনি উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে। অভি দরজার সামনে থেকে সরে গিয়ে বলে
“আমার রুমে

” তোর রুমে তানহা। তাও এখন আসলো না
সন্দেহ নিয়ে খালামনও আর আম্মু এগিয়ে যায়। দাদু ক্লান্ত বলে ওখানেই বসে পড়ে। অনিক মেসেঞ্জারে বেবিটার রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত।

মা আর খালামনি ভ্রু কুচকে তাকায় তানহার দিকে। তানহা ওদের দেখে খুশি হয়।
“তোর এ কি অবস্থা? দৌড়ে গিয়ে হাত আর মুখ খুলে দেয়। তানহা জোরে জোরে শ্বাস নেয়।

” খালামনি তোমার ছেলে একটা রাহ্মস
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে। অভিও রুমে চলে আসে। মা আর খালামনি তাকিয়ে আছে।

“জানো খালামনি তোমার ছেলের বউ আছে

” কিহহহহহ
খালামনি আর মা এক সাথে চিৎকার দিয়ে বলে। অভি কটমট চোখে তাকায়।

“হুমমম আজ সকালে আমি যখন ওনার রুমে এসেছিলাম তখন উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে
কথা শেষ হওয়ার আগেই অভি দৌড় এসে তানহার মুখ চেপে ধরে।
খালামনি আর মা ভ্রু কুচকে তাকায়।
অভি থমথমে গলায় বলে

” ওর মাথায় গন্ডগোল হয়েছে তাই আবল তাবল বলছে
তানহা হাত ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে। অভি কানের কাছে ফিসফিস করে বলে

“জড়িয়ে ধরছিলাম তাই না? একবার ওনারা যাক তারপর বোঝাবো জড়িয়ে ধরা কাকে বলে
অভির কথা শুনে তানহা ছটফট বন্ধ করে ফেলে। তানহার মা অভির মা কে টেনে বাইরে নিয়ে যায় কিছু বলার জন্য। তানহা শুকনো ঢোক গিলে

” কি দরকার ছিলো এতোগুলো কথা বলার। এবার তো পতন নিশ্চিত

চলবে