#ভালোবাসি তাই
#পর্বঃ৭
#Tanisha Sultana
“কান ধরে উঠবস করে সরি বললেও এখন কাজ হবে না
অভি তানহার দিকে তৃঙ্খ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
তানহা চুল ঠিক করতে করতে ভাব নিয়ে বলে
” সরি বলতে আমার বইয়েই গেছে।
অভি তানহার দিকে একটু এগিয়ে আসে। তানহা একটা বালিশ নিয়ে আধশোয়া হয়।
“কাছে আসো কাছে আসো কাছে আসো না
সুর টেনে গানটা গায়। অভি থেমে যায়।
“ক্লোজ আপ দিয়ে ব্রাশ করার কি গুণ। অভি ভাইয়া খালি আমার কাছে চলে আসে।
একটা গান মনে পড়ে গেলো
বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায়,কাছে চায়
অভি দু পা পিছিয়ে যায়। তানহা সোজা হয়ে বসে।
” কি গো আমার খালাতো ভাই দুরে সরে গেলেন কেনো? ওহহ আমি তো ভুলেই গেছি আপনি আমার হাতা গুটিয়ে দিছেন এটা তো খালামনি আর আমার ডিসকু মাকে বলতে হবে।
মাথায় হাত দিয়ে বলে তানহা।
অভি দুই হাত গুঁজে কপালে ভাজ ফেলে বলে
“এটাও বলে দেবে?
“কেনো বলবো না? এতো সুন্দর করে আমার পা টা আপনার পায়ের ওপর দিয়ে গুটিয়ে দিলেন। এটা না বললে তো পৃথিবীর থমকে যাবে। আমার পেটের মধ্যে কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।
“সাট আপ
জোরে ধমক দিয়ে বলে অভি। তানহা কেঁপে ওঠে। বুকে থু থু নিয়ে বলে
” শিশু নির্যাতন করলে কিন্তু আপনার নামে মামলা করবো। পুলিশ আপনাকে ধরে নিয়ে যাবে রিমান্ডে নেমে। জীবনেও বউ পাবেন না। শেষমেশ বউ শূন্যতায় মারা যাবে।
অভি কানে হাত দিয়ে বসে পড়ে।
“জাস্ট ইম্পসিবল
হতাশার সুরে বলে অভি। তানহা অভির ভাব দেখে মুচকি হাসে
” ভালোই দিয়েছি করলাকে। আমাকে বকবি না। এবার মজা বুঝ।
মনে মনে বলে
“প্লিজ তুমি আমার রুম থেকে যাও
দুই হাত জোর করে বলে অভি। তানহা দাঁত কেলিয়ে ভালো করে বসে কোলবালিশ কোলের ওপর রাখে।
” কেনো যাবো?
আপনার রুমটা আমার দারুণ লাগে। মন চায় সারাক্ষণ এখানেই বসে থাকি। বাই দা ওয়ে বউয়ের নাম কি আপনার?
“তানহা শুনছো? না কি এবার আরও প্রশ্ন আছে?
অভি বলে
তানহা হা করে আছে
” মানে আপনার বউয়ের নাম তানহা। আমারও নাম তানহা। ওয়াও এক নামই আমাদের দুজনের। তাহলে আমরা দুজন সই হবো।
“আল্লাহ আমাকে নিয়ে যাও
বিরক্তি হয়ে চোখ বন্ধ করে বলে অভি।
” ও মা কোথায় যাবেন? নিশ্চয় বউয়ের কাছে।
“নাহহ বউয়ের থেকে বাঁচতে চায়। বউ আমার আশেপাশে থাকলে কয়েকদিনে পাবনা মেন্টাল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবে আমাকে।
” কেনো?🥺 আপনার বউ কে? দেখমু আমি?
গালে হাত দিয়ে বলে তানহা। অভি উঠে দাঁড়িয়ে তানহার হাত ধরে টেনে রুম থেকে বের করে দিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর জোরে শ্বাস নেয়।
“এই মেয়েটা আস্ত একটা ইডিয়েট। পাগল করে ছাড়বে আমায়।
তানহা নিজের রুমে গিয়ে জামাকাপড় মেলে দেয় শুকাতে। কাল থেকে ভর্তি শুরু। আজকেই ঢাকা যেতে হবে। সাটিফিকেট সব বাবার বাড়িতে। আবার ওই বাড়িতে যেতে হবে। আবিরকে দেখতে হবে। ভেবেই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তানহা। নিয়তি কি অদ্ভুত। কখন কার জীবনের মোর ঘুরে যায় কেউ বলতে পারে না। তানহার মা তানহার রুমে আসে। তানহা তখন ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে একটা জামা ধরে রেখেছে।
” তানহা
তানহা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে
“তুমি? নিশ্চয় খালামনির পার্লারে এসেছো সাজতে? বয়স হয়েছে তোমার এখন এরকম সাজা ঠিক না।
তানহার মা মুখ বাঁকিয়ে বলে
” কি এমন বয়স হয়েছে? তোর থেকে মাএ তেরো বছরের বড় আমি।
তানহা চুপ করে যায়। মায়ের সাথে কথায় পারা ইম্পসিবল।
“মা আমি আজকেই ঢাকা চলে যাবো
তানহার মা বিজয়ীর হাসি দেয়। কারণ এতোদিন উনি দিন রাত প্রে করেছে যাতে তানহা ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পায় আর অভির কাছাকাছি থাকে। কাছাকাছি থাকলে তবেই তো ভালোবাসার সৃষ্টি হবে।
” তাহলে আমি তোর জামাকাপড় গুছিয়ে দেই।
হাসিমুখে বলে তানহার মা।
“এখানে যা আছে সব ভিজে গেছে। আমাকে ওই বাড়িতে যেতে হবে। ওখান থেকে নিয়ে আসবো।
” আচ্ছা
মায়ের সাথে কথা বলতে বলতে জামা শুকিয়ে যায়। চট করে জামা পড়ে বেরিয়ে পড়ে। বাড়িতে এসে কলিং বেল বাজতেই বাবা দরজা খুলে দেয়।
“তানহা এসেছো?
হাসিমুখে বলে বাবা। তানহা বাবাকে পাশ কাটিয়ে রুমে চলে যায়। কিছু জামাকাপড় গুছিয়ে সাটিফিকেট আর প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে নেয়। ঈদের সালামি আর ড্রেস কেনার টাকা জমিয়ে বারো হাজার টাকা আছে তানহার কাছে। সেটাও নিয়ে নেয়। বেরিয়ে যাওয়ার সময় নজর পড়ে আবিরের রুমের দিকে। আবির তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। একটা মেয়ে খাবার টেবিল সাজাচ্ছে। তানহা মেয়েটার কাছে যায়।
” কি নাম তোমার?
“মায়া
মেয়েটা একটু মিষ্টি হেসে বলে। তানহা মেয়েটার মাথায় হাত বুলায়।
” অনেক ভালো থাকবে তুমি। খুব লাকী তুমি।
মেয়েটা আবিরের বউ। ফুপি আর বাবা ওখানেই ছিলো। তানহার চোখে পানি টলমল করছে।
“আসছি হ্যাঁ। আমি কিন্তু তোমার ননদ।
” হুমম
মেয়েটা ছোট করে বলে।
তানহা মায়ার মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়। মুচকি হেসে বলে
“খুব সুন্দর তুমি। রুপ গুন সব আছে। আমার মতো পাগল না। আমি তো বেশি কথা বলি। যাকে বলো বাচাল। তুমি তো তোমার শাশুড়ীর মনের মতো। দেখে রেখো
বলেই তানহা যেতে নেয়। আবির দৌড়ে আসে তানহার কাছে। তানহা আবিরকে দেখে মুচকি হেসে বলে
” থ্যাক্স। মায়া খুব ভালো। আশা করবো ওর সাথে বাজে বিহেব করবে না।
“তুমি কি আর এখানে থাকবে না?
মাথা নিচু করে বলে আবির
” নাহহহ। আমার লাইফ সেটেল হয়ে গেছে। ফিউচার ব্রাইট হয়ে গেছে। এবার নিজে কিছু করে দেখাবো যাতে অনেকে আফসোস করে। শুধু শুধু এখানে পড়ে থেকে মিষ্টার তুহিন ইসলামের টাকা নষ্ট করবো কেন?
বাবার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলে তানহা।
“তুমি যেখানেই যাও আমার টাকা ছাড়া এক পা চলতে পারবে না। দুনিয়াটা সহজ নয়। মুখ ফুটে বলার আগেই পেয়ে যাও তো তাই মর্ম বুঝো না।
কিছুটা রাগী কন্ঠে বলে তানহার বাবা।
” আমি আপনার টাকা ছাড়াই চলবো। ইটস মাই চ্যালেন্স। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবো। খুব খুব ভালো একটা জব করবো। আপনার থেকে বেশি টাকা ইনকাম করবো আর আবিরের থেকে বেটার ছেলেকে বিয়ে করবো। দেখে নিও
বলেই হুরমুর করে তানহা চলে যায়। আবির রুমে চলে যায়। মায়ার চোখে পানি চিকচিক করছে। অনিশ্চিত একটা সম্পর্কে জড়িয়ে আছে মায়া। যেখানে ভালোবাস তো দুর একটু এটেনশনও কপালে নেই। তানহার বাবা মুচকি হাসে। এটাই তো উনি চেয়েছিলো। তানহা অনেক বড় হোক। আবিরের সাথে বিয়ে হলে তানহার কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যেতো। পড়াশোনা হতো না। এবার তানহাকে দুনিয়া দেখবে। সবাই বলবে তুহিন ইসলামের মেয়ে তানহা ইসলাম। এক নামে চিনবে।
একটা রিকশার জন্য তানহা দাঁড়িয়ে আছে। তখন অভি গাড়ি নিয়ে আসে। তানহার সামনে গাড়ি দাঁড় করায়। তানহা চোখের পানি মুছে ফেলে। হাসিমুখে অভিকে হাই বলে। অভি ঢোক গিলে। এবার আর কানের রহ্মে নেই।
“আমার করলা ভাই চলে এসেছেন? আমি জানতাম আপনি আসবেন।
” চুপচাপ গাড়িতে বসো।
তানহা গাড়িতে বসে। অভি তানহার দিকে তাকায়।
“তুমি এমন কি করে? এতো এতো না পাওয়া নিয়ে সব সময় হাসিখুশি কি করে থাকো? নিজের কপালের ওপর রাগ হয় না? নিজেকে আনলাকী মনে হয় না?
তানহা এক গাল হেসে বলে
” নাহহহ। আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে। আর আবেগ লুকোতে হয়। আমার দুঃখ আমি সব সময় প্রকাশ করলে সবাই বিরক্ত হবে। তাছাড়া শেয়ার করলে তো কেউ কমিয়ে দিতে পারবে না। আর সব থেকে বড় কথা হলো আমি এরকমই
অভি তাকিয়ে আছে তানহার দিকে। তানহা চোখ টিপে বলে
“এভাবে তাকিয়েন না প্রেমে পড়ে যাবেন।
অভি চোখ ফিরিয়ে নেয়।
” লেজ ছাড়া বাঁদর
চলবে