ভালোবাসি তারে পর্ব-০৩

0
7954

ভালোবাসি তারে

৩.
গাড়িতে নিঝুমের পাশে নিঃশব্দে বসল ঝুম। পরক্ষণেই নাক কুঁচকে বলল,
— “আপনি আবারো সিগ্রেট খেয়ে এসেছেন তাই না? ছিঃ!”
নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকালো। হঠাৎ ধমক দিয়ে উঠল,
— “সমস্যা কি? বলেছি না আমার সিগ্রেট নিয়ে একটাও বাজে কথা না বলতে!”

ঝুম সরু চোখে তাকায়। কি সুন্দর কথা! তার সিগ্রেট! শুনলেই তো গা জ্বলে উঠছে ঝুমের। মুখ বাঁকিয়ে ঝুম বলল,
— “কথা বলবেন না তো। সিগ্রেটের বাজে গন্ধে আমার বমি পাচ্ছে।”

নিঝুমের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়। তবে কিছু বলে না। গাড়ির ড্রয়ার থেকে একটা সেন্টারফ্রুট নিয়ে মুখে পুড়ে নেয়। শান্ত মেজাজে বলে,
— “কারো প্রিয় জিনিস নিয়ে এমন আঘাত করা উচিত না।”

জানালার বাহিরে তাকিয়ে ছিল ঝুম। এহেন কথায় ভ্রু কুঁচকে যায় তার। ভাবে, সিগারেটও কি কারো প্রিয় জিনিস হতে পারে? আচ্ছা, নিঝুমের সাথে নিকোটিনের বিয়ে হলে কেমন হয়? সারাজীবন নিকোটিন নিয়েই থাকবে নিঝুম। ব্যাপারটা দারুণ হবে তাই না? নিজের উদ্ভট ভাবনায় মনে মনে হাসে ঝুম। কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর হঠাৎ ঝুম বলে,
— “একটু তাড়াতাড়ি চালান। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো।”
শান্ত গলায় নিঝুমের জবাব,
— “উড়ে উড়ে নিয়ে যাই?”

ঝুম মুখ ফুলায়। আড়চোখে নিঝুমের দিকে তাকায়। চোখাচোখি হতেই দ্রুত দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। নিঝুম আবার বলে,
— “তুমি কোন ইয়ারে?”
— “ইন্টার সেকেন্ড।”
— “কোন বিষয়?”
— “সায়েন্স।”

এমতাবস্থায় নিঝুম অবাক চোখে তাকায়। অবিশ্বাস্য কণ্ঠে বলে উঠে,
— “তোমার মতো গাধা সায়েন্সের স্টুডেন্ট?”

ঝুম রেগে যায়। কটমট দৃষ্টিতে তাকাতেই নিঝুম হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,
— “না মানে, সায়েন্স অনেক টাফ, তাই না? তোমার তো অন্য সাবজেক্ট নেওয়ার উচিত ছিল। ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করতে তাহলে।”

ঝুম বলতে চাইলো, ‘আপনার কি মনে হয়, আমি সায়েন্সে ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করি না? একবার আমার রেজাল্ট দেখে আসুন। তারপর বলবেন।’ কিন্তু না! কথাটা মনের মাঝেই রেখে দিল ঝুম। বরং খোঁচা মারা গলায় বলল,
— “আচ্ছা, আপনার মতো সিগ্রেটখোর ডাক্তার হলো কিভাবে, বলুন তো?”

সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ব্রেক কোষলো নিঝুম। উঁচু গলায় বলল,
— “নামো।”

ঝুম ভীতু চোখে তাকায়। তাকে কি মাঝরাস্তায় নামিয়ে দেবে নিঝুম? মিনমিনিয়ে বলে,
— “মানে?”
— “তোমার বাসা এসে গেছে। নামো।”

নিঝুমের ভারি কণ্ঠ। ঝুম আশপাশ ভালোভাবে দেখে নেয়। একটু সামনেই ঝুমের বাসা দেখা যাচ্ছে। চিন্তার জন্য খেয়ালই করে নি ঝুম। দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে সে। দাঁত বের করে হেসে বলে উঠে,
— “থেংকু ডাক্তার সাহেব।”

পরপরই দৌঁড়ে নিজের বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়। সেদিকে তাকিয়ে আনমনেই মুচকি হাসে নিঝুম। মেয়েটা পাগল! সত্যি পাগল।

______________

সকালে কিছু কাজে কলেজে গিয়েছিল ঝুম। কলেজে যেতেই ঝুমের বান্ধবী স্নিগ্ধা জেঁকে বসে ঝুমের উপর। বাজখাঁই গলায় বলে,
— “তুই কালকে বললি, তুই নাকি একটা ছেলেকে পছন্দ করিস। কাকে? নাম কি?”

ঝুম লজ্জা পায় যেন। আমতা আমতা করে বলে,
— “জমিদারের ছেলে। নিঝুম। ছেলেটার চোখ দু’টো না আমার ভীষণ ভালো লাগে।”

স্নিগ্ধা ভ্রু উঁচিয়ে বলে,
— “চোখ ভালো লাগে বলে, ছেলেটা তোর পছন্দ?”

ঝুম মাথা নাড়ায়। স্নিগ্ধা গভীর ভাবে ঝুমকে পর্যবেক্ষণ করে কিছুক্ষণ। তারপর বলে,
— “তুই যে ছেলেটাকে পছন্দ করিস, ছেলেটা জানে?”
ঝুম হালকা আওয়াজে বলে,
— “না। আমি বুঝতে দেই নি উনাকে।”
— “কেন? সরাসরি বলে দেয় তুই পছন্দ করিস।”
— “উহু! মাথা খারাপ? জমিদারের ছেলে সে। আর আমি সামান্য স্কুল শিক্ষকের মেয়ে। তাছাড়া, যদি রিজেক্ট করে দেয় আমায়? ভয় লাগে তো।”

স্নিগ্ধা হেসে দেয়। নিজের ভয়ের কথা ভেবে ঝুমও একসময় হেসে উঠে সমান তালে।

বাসায় আসার পথে একা একা সরু রাস্তায় হাঁটছিল ঝুম। ভাবছিল, সে কি সত্যি নিঝুমকে পছন্দ করে? নাকি শুধু ওই চোখ জোড়াকে? কি সুন্দর হালকা সবুজ চোখ নিঝুমের। দেখলে শুধু দেখতেই মন চায়। প্রথম দিনই চোখ জোড়া নজর কারে ঝুমের। অথচ সে তখন পাত্তা দেয় নি নিজের ভাবনাগুলোকে। মুচকি হাসে ঝুম। হঠাৎ কেউ পাশ থেকে বলে উঠে,
— “গ্রামের সব জায়গা চেনো তুমি?”

শুনে ঝুম পাশে ফিরতেই চমকে উঠে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়। নিঝুম তার পাশাপাশি হাঁটছে। ঝুমের দিকে তাকাচ্ছে না। দৃষ্টি সামনে রেখে নিঝুম আবারো বলল,
— “চেনো?”

ঝুম চোখ বড় করে তাকায়। দ্রুত উত্তর দেয়,
— “হ্যাঁ৷ কেন?”
— “এমনি। গ্রাম ঘুরবো।”

ঝুম কিছু বলতে গিয়েও বলে না। নিঃশব্দে হাঁটতে থাকে। তারপর হঠাৎ কি মনে করে বলে,
— “আমাদের এখানে একটা ঝর্ণা আছে। যাবেন?”
— “যাওয়া যায়। চলো।”

ঝুম মিনমিনিয়ে বলে,
— “এখন? শুধু আমরা দু’জন?”
ভ্রু কুঁচকে নিঝুম বলল,
— “হ্যাঁ। কেন?”

ঝুম চোখ তুলে নিঝুমের দিকে তাকায়। প্রথমেই নিঝুমের সবুজ চোখ জোড়া সামনে ভেসে উঠে তার। নিঝুম তার দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না ঝুম। চোখ নামিয়ে ফেলে। মৃদু স্বরে বলে,
— “কিছু না।”

_____________

চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা