ভালোবাসি তোকে সুহাসিনী পর্ব-০৩

0
432

#ভালোবাসি_তোকে_সুহাসিনী
#পর্ব৩
#Raiha_Zubair_Ripte

“ ফেসবুকে পিক আপলোড দিয়েছো কেনো? জানো না এখনকার পরিস্থিতি Ai বা ফটোশপ দিয়ে কিসব পিক বানানো হয়। জলদি পিক ডিলেট দাও।”

সুহাসিনী পড়ার টেবিলে বসে বই পড়ছিলো হঠাৎ মেসেজের শব্দে ফোনের লক খুলে দেখে রুদ্রর মেসেজ। অবাক হয় সুহাসিনী। তার চাইতে বেশি হয় মেসেজ টা দেখে। সে তো কোনো পিক আপলোড দেয় নি তাহলে এটা কেনো বলছে রুদ্র তার চেয়ে বড় কথা রুদ্র তার লিস্টে আসলো কি করে? সব চিন্তাকে এক সাইডে রেখে সুহাসিনী রুদ্রকে লিখে পাঠালো,,

” কিসের ছবির কথা বলছেন আমি বুঝতে পারছি না।

রুদ্র সহসা নীলার আইডির স্ক্রিনশট নিয়ে সুহাসিনী কে পাঠায়। সুহাসিনী নীলার আইডিতে তার পিক দেখে চমকায়। আশ্চর্য নীলা তার প্রোফাইলে তার আর নীলার পিক কেনো দিয়েছে। নীলা তো জানে সুহাসিনী এসব পিক টিক ফেসবুকে আপলোড দেওয়া পছন্দ করে না জানার পরেও এমন কাজ করলো!

” আসলে আমি নিজেও জানি না নীলা আমার পিক তার প্রোফাইলে দিয়েছে আপনার মেসেজের শব্দে কেবল আসলাম তাও মেসেঞ্জারে।

কথাটা বলে নীলার বাসায় গেলো সুহাসিনী। নীলা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। সুহাসিনী সোজা নীলার পাশে বসে পিঠে ঠাস করে কি’ল বসায়। ব্যা’থায় আহ শব্দ করে উঠে নীলা। সুহাসিনী নীলার আইডির স্ক্রিনশটের পিক নীলার সামনে ধরে বলে,,

” এটা কি করছিস তুই? আমার পিক কেনো তোর প্রোফাইলে দিছিস এখনই ডিলেট কর।

নীলা ঢোক গিলে।

” সুহা প্লিজ আর একটু সময় থাকুক। রুদ্র ব্যাটা জাস্ট রিকুয়েষ্ট টা এক্সসেপ্ট করুক ট্রাস্ট মি ডিলেট করে দিবো পিক।

” জীবনেও করবে না তোর রিকুয়েষ্ট এক্সসেপ্ট আগে আমার পিক ডিলেট কর জানিস আজকাল ফেসবুকে কি সব হচ্ছে। কয়েকদিন আগে নৌরিন আফরোজ প্রিয়ার সাথে কি হলো। এখন কি তোর ও ভাইরাল হবার শখ জাগছে?

নীলা মুখ টাকে অসহায় করে বলে,,

” ঠিক আছে ডিলেট করে দিচ্ছি। তাহলে কথা দে কাল আমার সাথে যাবি।

সুহাসিনী ভ্রু কুঁচকালো। সন্দিহান হয়ে বলল,,

” কোথায় যাবো?

নীলা মূহুর্তে লজ্জা পাওয়ার ভান করলো। সুহাসিনী বুঝে গেলো।

” দেখ নীলা আমি কিন্তু যাবো না একদম জোর করবি না।

নীলা সুহাসিনীর হাত ধরলো।

” প্লিজ সুহা না করিস না প্লিজ আমার একা যেতে ভয় করে তুই থাকলে সাহস পাই। প্লিজ না করিস না তোকে কাচ্চি খাওয়াবো চাইলে সাথে ফুচকা,কোকাকোলা ও খাওয়াবো।

” আমাকে ঘু’ষ দিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিস?

” না তুই তো এগুলো খেতে পছন্দ করিস তাই ট্রিট দিবো প্লিজ রাজি হয়ে যা।

” নো ওয়ে।

” যা তাহলে পিক ডিলেট দিবো না।

” ফুপি কে তাহলে বলে দিবো তার মেয়ে কিসব করে বেড়ায়।

” প্লিজ সুহা এমন করিস না এই লাস্ট বারের মতো চল আমার সাথে। আর জোর করবো না।

” শেষ বারের মতো কিন্তু আর যাবো না।

” আচ্ছা। আর বলবো না। এই দেখ পিক ডিলেট করে দিছি। কাল সকাল দশ টায় রেডি হয়ে থাকিস।

সুহাসিনী মাথা নাড়িয়ে চলে আসে নিজের বাড়ি। অনলাইনে ঢুকে দেখে রুদ্র কে এক্টিভ দেখাচ্ছে। কিন্তু রুদ্র এড হলো কি করে তার সাথে? সুভা আপু করিয়েছে? হয়তো আপুই করিয়েছে এড। কথাগুলো ভেবে আবার অফলাইনে চলে আসে।

পার্পল কালারের থ্রিপিস পড়ে বস আছে সুহাসিনী নীলাদের বাসায়। নীলার এখনো সাজ কমপ্লিট হয় নি। সেই কখন থেকে নীলা সেজে চলছে থামার নাম নেই। সুহাসিনী তপ্ত শ্বাস ফেললো। নীলার মা নীলিমা নুডলসের বাটি টা সুহাসিনীর দিকে এগিয়ে দেয়। সুহাসিনী ফুপির দিকে তাকায়। নীলিমা বেগম সুহাসিনীর দিকে তাকিয়ে বলে,,

” সুহা নীলা নুডলস বানিয়েছে টেস্ট করে দেখ।

সুহা অবাক হয় নীলা নুডলস বানিয়েছে বিশ্বাস হচ্ছে না। নুডলস এর বাটি থেকে কাটা চামিচ দিয়ে নুডলস নিয়ে মুখে তুলে নেয়। মোটামুটি ভালোই হয়েছে।

” কোথায় যাবি তোরা?

ভরকে গেলো সুহাসিনী। কি বলবে?এর মধ্যে নীলা বের হয়ে আসে রুম থেকে। পড়নে তার শুভ্র রঙের থ্রিপিস। নীলিমা তাকায় মেয়ের দিকে।

” কোথায় যাবি তোরা নীলা?

” এই তো মা সামনে একটু ঘুরতে যাবো। চিন্তা করো না সন্ধ্যা হবার আগেই ফিরে আসবো। আর ভাইয়া ফোন করে বলো না কিন্তু ঘুরতে গেছি বলবে নীলা বই নিয়ে পড়তে বসেছে, টাটা।

কথাটা বলে নীলা সুহাসিনীর হাত ধরে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।

নীলিমা বেগম একা একা বাসায় থেকে কি করবে বড় ছেলে চট্টগ্রাম গেছে ব্যাবসার কাজে আর স্বামী দু বছর হয়েছে মা’রা গেছে। আর নীলা ও বেরিয়ে গেলো তাই সদর দরজা তালা মে’রে ভাইয়েট বাসায় চলে গেলো সময় কাটানোর জন্য।

রেস্টুরেন্টে বসে আছে নীলা,সুহাসিনী আর তাদের সামনে বসে আছে রাতুল। নীলার দৃষ্টি নিচের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। রাতুল হচ্ছে সুহাসিনী দের কলেজের পাশে থাকা ভার্সিটির স্টুডেন্ট। একে ওপরকে পছন্দ করে তারা। সুহাসিনীর বিরক্ত লাগছে নিজকে তাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি মনে হচ্ছে। রাতুল ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে আর নীলা লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছে। সুহাসিনী গলা খাকড়ি দিলো। রাতুল দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। সুহাসিনী নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,,

” নীলা আমি একটু ওদিক টায় যাচ্ছি তোরা কথা বল।

নীলা হাত টেনে ধরে। চোখের ইশারায় বলে যাস না। সুহাসিনী বিরক্ত হয় মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,,

” কাছেই আছি দরকার হলে ফোন দিস চলে আসবো। আর ভাইয়া তো আছেই।

রাতুল ও সুহাসিনীর কথার সাথে তাল মিলিয়ে বলল,,

” হ্যাঁ সুহাসিনী যখন যেতে চাইছে যেতে দাও।

নীলা ছেড়ে দিলো হাত। সুহাসিনী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রেস্টুরেন্টের বাহিরে চলে আসলো। রেস্টুরেন্টের পাশেই একটা ব্রিজ আছে সেখানে গিয়ে দাঁড়ায়। এই মুক্ত খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগছে। মৃদু বাতাস শরীর টাকে ঠান্ডা করে দিচ্ছে।

হঠাৎ কিছু হট্টগোলের আওয়াজ কানে আসতেই সুহাসিনী আশেপাশে তাকায়। কিন্তু কাউকে দেখতে পারছে না। ব্রিজের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে মাথা উঁচু করে নিচের দিকে তাকাতেই দেখে কিছু ছেলে মিলে একটা ছেলেকে এলো’পাতাড়ি মা’রছে। সুহাসিনী ব্রিজ থেকে নেমে গেলো। যেখানে মা’রামা’রি হচ্ছে সেদিকটায় এগিয়ে গেলো। লোকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে অথচ আটকাচ্ছে না। সুহাসিনীর রাগ হলো লোকগুলোর উপর। ভীড় ঠেলে ছেলেগুলোর কাছে আসতেই সুহাসিনীর পা থেমে যায়। রুদ্র কাউকে মার’ছে! বিশ্বাস হচ্ছে না সুহাসিনীর। রুদ্র কেনো এভাবে ছেলে টাকে মা’রছে? কেঁপে উঠলো সুহাসিনী। রুদ্রর ফ্রেন্ড সুহাসিনী কে দেখে ঢোক গিলে রুদ্র কে আটকানোর চেষ্টা করে আর বারবার বলে,, মা’রিস না রুদ্র থেমে যা। কিন্তু রুদ্র সে কথা কানেই নিচ্ছে না। রুদ্রর প্রতি ভয় আরো প্রকোপ হলো সুহাসিনীর। আর দাঁড়ালো না দৌড়ে ছুটে চলে আসলো। এ ছেলেকে সে কিছুতেই বিয়ে করবে না।

রুদ্রর ফ্রেন্ড রবিন রুদ্র কে টেনে ধরলো।

” রুদ্র ব্লান্ডার করে ফেলছিস ঐ দেখ ভাবি।

সহসা রুদ্রর হাত থেমে গেলো। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো সুহাসিনী দৌড়ে চলে যাচ্ছে আর বারবার পেছন ঘুরে তাকাচ্ছে। রুদ্র ওহ্ শিট বলে হাতে থাকা লাঠি নিয়েই সুহাসিনীর পেছন দৌড় লাগালো।

# চলবে?

( ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিবেন। হ্যাপি রিডিং)